স্বামীকে বাঁচাতে সন্তান বিক্রি করতে চান
স্বামীর সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে যোগাযোগ নেই স্ত্রী রিমি আক্তারের। মুঠোফোনের ভয়েসে শুধু বাঁচানোর আকুতি। লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার পথে দালালের খপ্পরে পড়েন লোকমান হাওলাদার। পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের নলী জয়নগর গ্রামের বাসিন্দা তিনি। জানা যায়, বিদেশে ভালো বেতনে কাজের আশায় যে কোনো উপায়েই হোক স্বপ্নের দেশ ইতালিতে যেতে চেয়েছিলেন তিনি। ১ বছর ৩ মাস আগে বাংলাদেশ থেকে লিবিয়া গিয়েছিলেন তারপর এক দালালের খপ্পরে পড়ে ইতালি যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু ৩ মাস আগে থেকে তার ওপর নেমে আসে টাকার জন্য নির্যাতন। অভাবের সংসার। নুন আনতে পান্তা ফুরায়। দালালদের টাকা দিতে দিতে আজ নিঃস্ব প্রায় পরিবারটি। বসতঘরটিও বিক্রি করার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কঠিন অত্যাচার থেকে মুক্তি পেতে নিজের সন্তানকে বিক্রি করতে চান এই বাবা-মা। এ অবস্থায় সন্তান মানুষ করা কঠিন। তাই কলিজার টুকরা সন্তানকে বিক্রির জন্য মানুষের কাছে কাছে ঘুরছেন। তাদের ছোট্ট একটি ছেলে ও দুটি মেয়ে সন্তান রয়েছে- ওমর (১ বছর ৫ মাস), হাওয়া (৫ বছর), মরিয়ম (৫ মাস)। লোকমান হোসেনের স্ত্রী রিমি আক্তার (২৮) কালবেলাকে জানান, লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার জন্য এর মধ্যে সাড়ে ৭ লাখ টাকা দিয়েছে সিলেটের হবিগঞ্জের শিরু ইসলাম নামে এক দালালকে। আরো ১৫ লাখ টাকা দাবি করেন। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ১১ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে লিবিয়ায় ত্রিপলী জহুরা ঘাট ওসামা ক্যাম্পের একটি রুমে বন্দি করে রেখেছেন। তিনি জানান, সেখান থেকে মুঠোফোনে ভয়েস পাঠিয়ে বাঁচানোর আকুতি জানান পরিবারের কাছে। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি সন্তান ৩ জনকে বিক্রি করে হলেও ওর বাবাকে বাঁচানোর চেষ্টা করতেছি। হবিগঞ্জে গিয়ে আমরা প্রশাসনের কাছ থেকে ভালোভাবে সহযোগিতা পায়নি। আসামিদের গ্রেপ্তার করে তাদের মাধ্যমে লোকমানকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলাম। লোকমান হাওলাদারের মা পারুল বেগম (৫০) কান্না জড়িত কণ্ঠে কালবেলাকে জানান, আমার ছেলেকে জীবিত ফেরত চাই। লোকমানের বাবাও বেঁচে নেই। আমি আমার বসতভিটা বিক্রি করার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। শুধু আমার ছেলেকে বাঁচানোর জন্য। লোকমান হাওলাদারের বড় বোন খাদিজা আক্তার (৩৫) কালবেলাকে জানান, আমাদের পরিবারটি খুব অসহায় থাকার কারণে ঋণ করে লিবিয়াতে গেছে। সেখানে গিয়েও ঠিক মতো বেতন পাচ্ছিলেন না। তাই ভালো থাকার আশায় লিবিয়া থেকে ইতালির উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছিলেন কিন্তু দালালের খপ্পরে পড়ে আজ নিঃস্ব হয়ে গেছে। তার উপর নির্মম নির্যাতন চলে তাই আমরা বাড়ি বিক্রি করে তাকে বাঁচাতে চাই। প্রতিবেশী চান মোল্লা (৫৫) কালবেলাকে জানান, লোকমান আমাদের গ্রামের ছেলে। গ্রামে সংসার চালাতে খুব কষ্ট হচ্ছিল। তাই লিবিয়া গেছে। সেখানেও ঠিক মতো বেতন পাচ্ছিলেন না। তাই ভালো থাকার আশায় ইতালি যাওয়ার পথে দালালের খপ্পরে পড়ে পরিবারটি আজ নিঃস্ব হয়ে গেছে। প্রশাসনের কাছে অনুরোধ রইল ছেলেটিকে জীবিত উদ্ধার করে পরিবারের কাছে ফেরত পাঠানোর। সাপলেজা ইউপি সদস্য কাজল খান (৬০) কালবেলাকে জানান, লোকমান হাওলাদার এক বছর তিন মাস আগে লিবিয়া গেছেন। লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার পথে দালালে খপ্পরে পড়ে। তাকে আটকিয়ে রেখে নির্যাতন করে টাকা দাবি করেন দালালরা। একবার সাড়ে ৭ লাখ টাকা দেওয়ার পরেও মুক্তি মেলেনি আবার ১৫ লাখ টাকা দাবি করেন। তার পরিবার উদ্ধারে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। প্রশাসন এটিকে গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টিকে সমাধান করুক এই প্রত্যাশা করি। এ বিষয় মঠবাড়িয়া থানার ওসি রেজাউল করিম রাজিব কালবেলাকে বলেন, ভুক্তভোগীরা লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। লিখিত অভিযোগ পেয়ে আমরা কাজ শুরু করেছি। প্রথমে ডিবি তদন্ত করে দুজন আসামি গ্রেপ্তার করেন। পরবর্তীতে ডিবি থেকে মামলাটি সিআইডি মানব পাচার শাখায় হস্তান্তর করা হয়।
০৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

সন্তান হত্যার বিচার চেয়ে বাবার আহাজারি
কুড়িগ্রামের চিলমারীতে ছেলেকে হত্যা মামলার দেড় মাসেও এজাহারভুক্ত আসামি গ্রেপ্তার না হওয়ায় সংবাদ সম্মেলন করে বিচার চেয়েছেন বাবা।    বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টায় প্রেস ক্লাব চিলমারীর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন বাবা আব্দুল জলিল। জানা গেছে, গত ১৯ জুলাই ব্রহ্মপুত্র নদে পড়ে নিখোঁজ হওয়ার একদিন পর কলেজছাত্র জোবায়ের হোসেন আমিনের লাশ ভেসে ওঠে। বিকৃত লাশ উদ্ধারের পর পরিবারের পক্ষ থেকে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। নিহত জোবায়ের হোসেন আমিন (১৯) উপজেলার থানাহাট ইউনিয়নের মন্ডলপাড়া গ্রামের আব্দুল জলিলের ছেলে। দিনাজপুর কারমাইকেল কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। নিহতের বাবা আব্দুল জলিল আমিন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, গত ১৯ জুলাই রাত ১টা থেকে রাত ৩টার মধ্যে যে কোনো সময় আমার ছেলে জোবায়ের হোসেনকে হত্যা করে লাশ চিলমারী নৌবন্দরের রমনা ঘাটের বিআইডব্লিউটিএ পল্টুনের নিচে ফেলে দেয়। পরদিন পুলিশ তার মহদেহ উদ্ধার করে সুরতহাল রিপোর্ট করে ময়নাতদন্ত শেষে আমার কাছে হস্তান্তর করেন।  এ ঘটনায় ২১ জুলাই চিলমারী মডেল থানায় ফজলুল হকের ছেলে মো. সাইনান স্বচ্ছ (২১), পিতা মো. ফজলুল হক ও আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে মো. ইউসুফ আহম্মেদ জায়েদসহ (২১) আরও ৬/৭ অজ্ঞাতনামাকে আসামি করে মামলা দায়ের করি। তিনি বলেন, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ করা হয় চিলমারী নৌপুলিশ ফাঁড়ির সিআই মো. নাজমুল হককে। কিন্তু এখন পর্যন্ত মামলার কোনো আসামি গ্রেপ্তার হয়নি। আসামিদের সঙ্গে আমার ছেলের ভালো সম্পর্ক ছিল। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ হতে পারে। তারই জেরে আমার ছেলেকে গত ১৮ জুলাই রাত ১০টার সময় আমার বাড়ির সামনে থেকে মোটরসাইকেলে করে বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাফেরা শেষে চিলমারী বন্দরের রমনা ঘাটে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে হত্যা করে লাশ চিলমারী নৌবন্দরের রমনা ঘাটের বিআইডব্লিউটিএ পল্টনের নিচে ফেলে দেয়।  নিহতের বাবা বলেন, মামলার এজাহারে সুনির্দিষ্টভাবে আসামিদের নাম থাকা সত্ত্বেও পুলিশ এখন পর্যন্ত তাদেরকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। আমি অতি দ্রুত আসামিদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় নিয়ে আসার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।
০৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

আশ্রয়কেন্দ্রে জন্ম নিল শিশু
নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার খিলপাড়া ইউনিয়নের বন্যার্ত এলাকার একটি আশ্রয়কেন্দ্রে জন্ম হলো এক ছেলে নবজাতকের। উপজেলার খিলপাড়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের আশ্রয়কেন্দ্রে বুধবার (২৮ আগস্ট) সকালে এই ছেলে শিশুর জন্ম হয়। এ সংবাদ পাওয়ার পর গত বৃহস্পতিবার চাটখিল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ এহসান উদ্দীন আশ্রয়কেন্দ্রে যান। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার উপস্থিতিতে নবজাতকের নাম রাখা হয় ফাতিন ওয়াহাব। এ সময় নবজাতকের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রয়োজনীয় উপহার সামগ্রী হস্তান্তর করেন এবং নবজাতকটির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। নবজাতক শিশু ফাতিনের বাবা সাইফুল ইসলাম এবং মাতা আকলিমা বেগমের প্রথম সন্তান। বাবা সাইফুল ইসলামের বাড়ি খিলপাড়া ইউনিয়নের শংকরপুর গ্রামে, তিনি পেশায় একজন কৃষক। কেন্দ্রটিতে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা খিলপাড়া ব্লাড ডোনেট ক্লাবের সভাপতি মামুনুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, বাড়িঘর বন্যায় ডুবে যাওয়ায় আমাদের রেসকিউ টিমের মাধ্যমে পরিবারটি খিলপাড়া আশ্রয়কেন্দ্রে যায়। সেখানে উপস্থিত নারী স্বেচ্ছাসেবীদের সহায়তায় গত বুধবার সকাল ৬টায় নবজাতকটির জন্ম হয়। পরবর্তী সময়ে ডাক্তার গিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ব্যবস্থাপত্র দিয়ে যান। চাটখিল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ এহসান উদ্দীন বলেন, এই দুঃসময়ে এটি আমাদের জন্য একটি সুসংবাদ। বন্যার্ত এলাকায় যেন আমাদের প্রসূতি মায়েরা কোনো সমস্যায় না পড়েন, আমরা সেসব দিকে শুরু থেকেই সতর্ক নজর রেখেছি। এরই মধ্যে আমাদের টিমগুলোর মাধ্যমে রেসকিউ করা কয়েকজন মা বিভিন্ন হাসপাতালে সুস্থভাবে সন্তান প্রসব করেছেন। তবে আশ্রয়কেন্দ্রে সন্তান প্রসবের ঘটনা এখন পর্যন্ত এই একটিই। নবজাতক ফাতিন ওয়াহাব ও নবজাতকের মা উভয়ই সুস্থ রয়েছেন। একজন চিকিৎসক প্রতিদিন তাদের স্বাস্থ্যসেবার খোঁজখবর রাখছেন।
৩০ আগস্ট, ২০২৪

আশ্রয়কেন্দ্রে সন্তান প্রসব করলেন গৃহবধূ
কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে ভয়াবহ বন্যায় ঘরবাড়ি হারিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেন সন্তানসম্ভবা এক গৃহবধূ। পরে বুধবার (২৮ আগস্ট) রাতে উপজেলার রায়কোট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে তিনি কন্যা সন্তান প্রসব করেন।  ফারজানা আক্তার নামে ওই গৃহবধূ উপজেলার রায়কোট গ্রামের তাজুল ইসলামের মেয়ে ও পার্শ্ববর্তী চৌদ্দগ্রাম উপজেলার ধনুশ্বরা গ্রামের মহিনের স্ত্রী। ফারজানা জানান, বন্যায় তাদের ঘরবাড়ি সব ডুবে গেছে। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছি। গত বুধবার রাত ১২টার দিকে হঠাৎ প্রসবব্যথা উঠলে আশপাশের মহিলাদের সাহায্যে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। আগেও একটি কন্যা সন্তান রয়েছে তার। মহান আল্লাহর নিকট শুকরিয়া জানান তিনি।  রায়কোট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে দায়িত্বরত মাস্টার আবু ইউসুফ জানান, ভয়াবহ বন্যার কবলে কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলা। জোয়ারের পানিতে ঘরবাড়ি প্লাবিত হওয়ায় আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন তারা। বুধবার রাতে গৃহবধূ ফারজানা আক্তার একটি ফুটফুটে কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। মা-মেয়ে দুজনেই এখন ভালো আছেন।
২৯ আগস্ট, ২০২৪

স্বজনের কান্না / গুলিবিদ্ধ সন্তান নিয়ে দিশেহারা মা
চার মাস আগে হারিয়েছেন স্বামীকে। আবার দুই সন্তানের মধ্যে একজনের দৃষ্টি কেড়ে নিয়েছে গুলি। অন্য সন্তান প্রতিবন্ধী। সবকিছু নিয়ে চরম বিপাকে শরীয়তপুরের নাজমা বেগম। জানা গেছে, স্বামী মোফাজ্জল হোসেন মারা যাওয়ার পর টাকার অভাবে ছোট ছেলে মবিনকে ঢাকার উত্তরায় একটি কম্পিউটারের দোকানে কাজে পাঠান নাজমা। সেখানে গত ১৮ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে মিছিলে যোগ দেন তিনি। মিছিলটি একপর্যায়ে উত্তরা থানার দিকে গেলে শুরু হয় গুলি। এ সময় একটি বুলেট কেড়ে নেয় মবিনের দৃষ্টিশক্তি। শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলার শিধলকুড়া ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বড় শিধলকুড়া গ্রামের মৃত মোফাজ্জল হোসেন ও নাজমা বেগম দম্পতির তিন ছেলের মধ্যে সবার ছোট ছেলে মবিন (১৭)। বাবার মৃত্যুর পর মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে ও প্রতিবন্ধী ভাইকে সুখে রাখতে উত্তরার রাজলক্ষ্মীর পাশে ৩ নম্বর সেক্টর ২ নম্বর রোডের ২৭ নম্বর প্লটে লতিফ এম্পোরিয়ামের মো. ওয়াসিম তালুকদারের ইজি কম্পিউটার সেন্টারে চাকরি নেন। গুলিতে আহত হয়ে ধারদেনা করে প্রায় ২ লাখ টাকা খরচ করে চোখের চারটি অপারেশন করিয়ে রীতিমতো পথে বসে গেছে তার পরিবার। সামনে তার আরও দুটি অপারেশন করাতে হবে, যার খরচ হবে প্রায় লাখের মতো। সরেজমিন দেখা যায়, নাজমা বেগম তার ছোট ছেলে মো. মবিনকে ধরে ঘরের বাইরে বের করছেন। বড় ভাই প্রতিবন্ধী জুলহাস একা একা হাসে আর কী যেন বলার চেষ্টা করে। বাড়িটিতে ঢুকতেই হাতের বাম দিক একটি নতুন কবরের দেখা মিলে। এটি মবিনের বাবার কবর। মবিন কালবেলাকে জানান, প্রতিদিনের মতো ১৮ জুলাই সকালে কাজের জন্য দোকানে যান তিনি। দোকানে ঢোকার কিছু সময় পরই মিছিল বের হয়। তখন মবিন দোকান বন্ধ করে মিছিলে যোগ দেন। মিছিলটি উত্তরা থানার সামনে গেলে, থানা থেকে মিছিলটি লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে থাকে পুলিশ। পুলিশের ছররা গুলিতে তার মাথা ঝাঁঝরা হয়ে যায় এবং একটি বুলেট তার বাম চোখের ওপরের দিক দিয়ে ঢুকে ডান দিক দিয়ে বেরিয়ে যায়। তখন তিনি মাটিতে পড়ে যান। কয়েকজন তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। মবিনের ভাই নাজমুল হুদা পলাশ কালবেলাকে বলেন, ঘটনার দিন আমি বাসাতেই ছিলাম। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে আমার মোবাইল ফোনে কল আসে। আমাকে বলে, আপনি কি মবিনের ভাই পলাশ। আমি হ্যাঁ বলতেই তিনি বলেন, আপনি দ্রুত সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে চলে আসেন। আপনার ছোট ভাই মবিন পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে হাসপাতালে আছে। আমি তখন দ্রুত সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে গিয়ে অনেক খোঁজাখুঁজি করে আমার ভাইকে পাই। তখন ওর পুরো মাথা সাদা কাপড়ে মোড়ানো। এরপর ডাক্তার বললেন, ওকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে গেলে ভালো চিকিৎসা হবে। তখন অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকা মেডিকেল নিয়ে যাই। ওখানে বেশ কয়েকদিন চিকিৎসা শেষে চোখের অপারেশন করাতে ভিশন আই হাসপাতালে নিয়ে যাই। ওখানেও ওর বেশ কয়েকটি অপারেশন হয়। ভিশন আই হাসপাতালে আমাদের ১ লাখ ২০ হাজার টাকা খরচ হয়ে যায়। এখন আমাদের কাছে ওর চিকিৎসার জন্য কোনো টাকা নেই। শুধু বাবার রেখে যাওয়া টিনের ঘর ও একটু জমি শেষ সম্বল। এটি বিক্রি করে দিলে আমার মা ও তিন ভাই মিলে খোলা আকাশের নিচে থাকা ছাড়া উপায় নেই। মবিনের মা নাজমা বেগম বলেন, আমার বড় ছেলেটা প্রতিবন্ধী। ওর দেখা শোনা করতেই হিমশিম খাই। এখন আবার ছোট ছেলের চোখ দুটি নষ্ট হয়ে গেল। আমি এখন দুই প্রতিবন্ধী সন্তানকে নিয়ে কোথায় গিয়ে দাঁড়াব। অভাবের সংসারে কষ্ট করে মেজো ছেলেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করিয়েছি। ওর যদি একটা চাকরি হয় তাহলে অন্তত আমরা খেয়ে পরে বাঁচতে পারব। মবিনের মামা নূর মোহাম্মদ হাওলাদার বলেন, অল্প কিছু দিন আগে ওর বাবা মরে যায়। একটা প্রতিবন্ধী ছেলেসহ তিন সন্তান নিয়ে কোনোরকম সংসার চলছিল আমার বোনের। হঠাৎ ছোট ছেলে মবিন আহত হয়ে প্রতিবন্ধী হয়ে ঘরে পড়ে আছে। মেজো ছেলে একটি বেসরকারি কোম্পানিতে ড্রাইভার হিসেবে কাজ করে। আমরাও গরিব মানুষ, তাদের যে একটু সহায়তা করব তাও পারি না।
১৭ আগস্ট, ২০২৪

সাঈদ এখন সবার ঘরের সন্তান : ড. ইউনূস
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান ড. ইউনূস বলেছেন, আবু সাঈদ এখন এক পরিবারের সন্তান না। বাংলাদেশের যত পরিবার আছে, তাদের সন্তান। হিন্দু পরিবার হোক, মুসলমান পরিবার হোক, বৌদ্ধ পরিবার হোক—সবার ঘরের সন্তান এই আবু সাঈদ। কাজেই আপনারা খেয়াল রাখবেন, কোথাও কোনো গোলোযোগ যেন না হয়। শনিবার (১০ আগস্ট) সকাল ১১টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত আবু সাঈদের বাড়িতে যান তিনি। এ সময় তার সঙ্গে আরও দুই উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন। পরে তার বাবা-মা স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন। একপর্যায়ে তার বাবার হাতে জাতীয় পতাকা হাতে তুলে দেন ড. ইউনূস। এর আগে কবর জিয়ারত করেন তিনি।  ড. ইউনূস বলেন, বাংলাদেশে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সবারই সন্তান আবু সাঈদ। যারা বড় হবে, স্কুল-কলেজে পড়বে, তারা তার কথা জানবে এবং নিজে নিজেই বলবে, আমিও ন্যায়ের জন্য লড়ব। আবু সাঈদ এখন ঘরে ঘরে। ড. ইউনূস আরও বলেন, আবু সাঈদ যেমন দাঁড়িয়েছে, আমাদেরকেও সেভাবে দাঁড়াতে হবে। যারা পার্থক্য করে আমরা তেমন না। আমরা সবাই বাংলাদেশি, আমরা বাংলাদেশেরই সন্তান। আবু সাঈদের মা সবার মা এবং সবার মা আবু সাঈদের মা। কাজেই তাকে রক্ষা করতে হবে, তাদের বোনদের রক্ষা করতে হবে, তাদের ভাইদের রক্ষা করতে হবে। সবাই মিলে এটা করতে হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান বলেন, আমরা সবাই এই মাটিরই সন্তান। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে এই মাটির সন্তানদের রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য। আমরা যেন এটা নিশ্চিত করি। এটা এক বাংলাদেশ, দুই বাংলাদেশ নেই এখানে। এটা আবু সাঈদের বাংলাদেশ, যেখানে কোনো ভেদাভেদ নেই। আপনাদের কাছে অনুরোধ, যে যেখানেই আছেন, সবাইকে রক্ষা করুন। কোনো রকম গোলোযোগ হতে দেবেন না। দুপুরে তিনি আহত ১০ শিক্ষার্থীকে দেখতে রংপুর মেডিকেলে যান। সেখান থেকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে মতবিনিময় সভায় অংশ নেন। 
১০ আগস্ট, ২০২৪

নাহিদের মায়ের প্রশ্ন / সন্তান মা-বাবার কাছে নিরাপদ ডিবিতে কীসের নিরাপত্তা?
কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামসহ পাঁচ সমন্বয়ককে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ডিবি কার্যালয়ে রাখা হয়েছে। ডিবির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সমন্বয়কদের নিরাপত্তার স্বার্থে সেখানে নিয়ে আসা হয়েছে। পরিবার যেন নিশ্চিন্ত থাকে। ডিবির এই আশ্বাসে বিশ্বাস রাখতে পারছে না নাহিদের পরিবার। গতকাল রোববার বিকেলে প্রায় দেড় ঘণ্টা চেষ্টা করে ডিবি কার্যালয়ে যাওয়ার অনুমতি না পেয়ে নাহিদের মা মমতাজ বেগম সাংবাদিকদের বলেন, সন্তান মা-বাবার কাছে নিরাপদ। ডিবি অফিসে কীসের নিরাপত্তা? হাসপাতাল থেকে নিয়ে আসার পর আর যোগাযোগ করা যাচ্ছে না বলে দাবি করেন তিনি। এ সময় নাহিদের মায়ের সঙ্গে দুই ফুফু, এক খালা ও তার স্ত্রী ছিলেন। এর আগে গত শুক্রবার বিকেলে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল থেকে নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ও আবু বাকেরকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই রাতেই ডিবি থেকে জানানো হয়, সমন্বয়কদের নিরাপত্তার কারণে ডিবি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। একই কারণ দেখিয়ে গত শনিবার বিকেলে আরও দুই সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহকে হেফাজতে নেয় ডিবি। এ বিষয়ে গতকাল রোববার দুপুরে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, সেফটি এবং সিকিউরিটির স্বার্থে তাদের আমাদের হেফাজতে এনেছি। পরিবারকে আশ্বস্ত করতে চাই, তারা যেন নিশ্চিন্ত থাকতে পারে। নাহিদের মা বলেন, চিকিৎসাধীন অবস্থায় নাহিদকে তুলে আনা হয়েছে। ডিবি পরিচয়ে নিয়ে আসার পর তার সঙ্গে দেখা বা যোগাযোগ করার সুযোগ দেওয়া হয়নি। হেফাজতে নেওয়া সমন্বয়কদের ছেড়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সব ছেলেকে যেন ছেড়ে দেয় তাদের পরিবারের কাছে। আমরা খুব চিন্তাই আছি। যদি তাদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য হেফাজতে নেওয়ার প্রয়োজন হতো, তাহলে তো পুলিশ হাসপাতালেই তাদের নিরাপত্তা দিতে পারত। নাহিদকে হেফাজতে নেওয়ার পর এখন পর্যন্ত আমাদের কিছু জানানো হয়নি। আমার ছেলের নিরাপত্তার জন্য এখানে আনা হয়েছে, এটা আমরা মানি না। আমি চাই আমার ছেলেকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দিক। আমরা চাই প্রতিটি সন্তানকে তাদের মা-বাবার কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হোক।
২৯ জুলাই, ২০২৪

বাবার পথপানে চেয়ে নিহত কামালের তিন সন্তান
কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালীন সংঘর্ষে রাজধানীর শাহজাদপুর এলাকায় নিহত হন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আই-এর গাড়িচালক কামাল হোসেন সবুজ। ঘটনার পরদিন ২১ জুলাই সকালে ঝালকাঠি সদরের আগরবাড়ি এলাকায় শ্বশুরবাড়িতে কামাল হোসেনকে দাফন করা হয়।  নিহত কামালের বাড়ি ঝালকাঠি সদর উপজেলার বিনয়কাঠি ইউনিয়নের বালকদিয়া গ্রামে। তিনি ওই এলাকার মুনসুর হাওলাদারের ছেলে। নিহত কামালের বিবাহিত জীবনে দুই ছেলে ও তিন বছরের একটি মেয়ে সন্তান রয়েছে। নিহত কামালের শ্যালক রিপন হাওলাদার বলেন, গত ২০ জুলাই সকালে বাড্ডার শাহজাদপুর এলাকার ভাড়া বাসা থেকে নাশতা করতে বের হয়েছিলেন কামাল হোসেন। এ সময় সংঘর্ষ শুরু হলে ঘটনাস্থলেই কামাল নিহত হন। খবর পেয়ে ঢাকায় গিয়ে লাশ নিয়ে বাড়িতে আসি। আমার বোনটি বিধবা হয়ে গেল। ওদের আহাজারি দেখে আমার কান্না ধরে রাখতে পারছি না। কামাল হোসেনের স্ত্রী সাদিয়া বেগম রানু পরিবারের একমাত্র উপার্জন করা ব্যক্তিকে হারিয়ে এখন দিশেহারা। তিন সন্তান নিয়ে ঝালকাঠি শহরে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন। নিহত কামালের অবুঝ ছোট ছেলে বুঝতেই পারছে না সে কী হারিয়েছে।  ঝালকাঠি সদরের আগরবাড়ি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, কামাল হোসেনের অবুঝ ছোট ছেলে বাবার চ্যানেল আইয়ের পরিচয়পত্রটি গলায় ঝুলিয়ে মায়ের পাশে বসে আছে। শিশুটি বারবার বলছে, ‘বাবা ফিরে আসবে।’ অপর দুই ভাইবোন পাশে বসে কান্না করছে। বড় ভাইয়ের বয়স ১৩ বছর, আর ছোট বোনের বয়স মাত্র তিন বছর। কান্নাজড়িত কণ্ঠে কামাল হোসেনের স্ত্রী সাদিয়া বেগম রানু বলেন, আমার স্বামীর মৃত্যুতে সন্তানদের নিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেলাম। এই তিন ছেলে মেয়ে এখন এতিম হয়ে গেল! আমি ওদের নিয়ে কোথায় দাঁড়াব, এখন কে ওদের দেখবে? পরিবারে আর কেউ উপার্জনের মানুষ না থাকায় ছেলেমেয়েদের দেখাশোনার কেউ রইল না‌। মেয়েটি বারবার বাবা বাবা বলে কান্না করছে। এখন আমাদের সংসার চালানোর মতো আর কেউ রইল না। বাকি দিনগুলো কীভাবে চলবে ভেবে উঠেতে পারছি না। তিনি আরও বলেন, ছেলেমেয়েদের নিয়ে ঝালকাঠি শহরে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতাম। এখন আমাদের থাকার জায়গা নেই। আমরা সরকারের কাছে সহযোগিতা চাই, যাতে আমি ছেলেমেয়েদের নিয়ে বেঁচে থাকতে পারি। নিহত কামাল হোসেনের বড় ছেলে ঝালকাঠি সরকারি উচ্চ বালক বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র সামিউল ইসলাম বলে, আমার বাবার আয়ে আমাদের তিন ভাইবোনের লেখাপড়ার খরচসহ সংসার চলত‌‌। এখন আমাদের বাবা নেই, আমাদের খরচ চালাবে কে? আমরা অসহায় হয়ে গেলাম। গত ২০ জুলাই রাতেই কামালের লাশ ঝালকাঠি সদর উপজেলার আগড়বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। পরদিন ২১ জুলাই সকালে আগরবাড়ি বাজার মসজিদের সামনে জানাজা শেষে সকাল ৯টার দিকে পশ্চিম আগরবাড়ি জুমা কোবা মসজিদের কবরস্থানে দাফন করা হয়।
২৯ জুলাই, ২০২৪

‘আমার সন্তান সত্য ও স্পষ্টবাদী’
কাজের খাতিরে পরিবারকে সময় দিতে পারেন না অনেক তারকাই। মাসের পর মাস কাছের মানুষের কাছ থেকে দূরে থাকা শোবিজ আর্টিস্টের জীবনে খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু কখনো কখনো পরিবারকে সময় দিতেই হয়, কেনো বিকল্প থাকে না। নিজের জীবনের তেমনই একটি ঘটনা কালবেলাকে জানিয়েছিলেন অভিনেতা আনিসুর রহমান মিলন। কালবেলার ‘তারাবেলা’ অনুষ্ঠানে এসে নিজের সন্তানের বিষয়ে বেশ কিছু কথা বলেছেন এই অভিনেতা। স্ত্রীর মৃত্যুর পর একাই লালন করতেন তার আট বছরের ছেলে সন্তানকে। আমেরিকায় বেড়ে উঠছে এই তারকাপুত্র। অভিনেতা মিলন বলেন, ‘আট বছর আমি আমার সন্তানকে দিতে পারিনি। আমার স্ত্রীই ওকে বড় করেছে। সন্তানের কাছে আমি আসলে মেহমানের মতো ছিলাম একটা সময়। বছরে বড়জোর তিনবার ও আমাকে দেখতে পেত, তিন মাস। তারপর আর দেখা হতো না। অনলাইন কলে অবশ্য দেখেছে, ভিডিও কলে দেখেছে। ও আমার কাছে সময় প্রাপ্য। সিঙ্গেল ফাদার ইজ আ ভেরি ডিফিকাল্ট জব। এটা মেনে নিতে না পারলে সন্তানের জন্য কিছু করতে পারবেন না। মৃত স্ত্রীর শেষ সময়ের কথাও প্রকাশ করেছেন এই অভিনেতা। বলেছেন, আমার স্ত্রী মৃত্যুর আড়াই মিনিট আগে একটা কথা বলেছিল। কথাটা আমি কাউকে বলিনি। সে আমাকে বলেছিল, আমার ছেলেকে তুমি আমেরিকা থেকে নিয়ে যেও না। আমার ছেলে জন্মেছে এখানে। এখানেই ওকে রেখ। আমি চাই ওর পড়াশোনাটা এখানেই হোক। অভিনেতা আরও বলেন, আমি গিয়েছিলাম এমআর নাইন সিনেমার শুটিংয়ে। আমি থেকে গেছি আমেরিকাতে। সন্তানের কথা চিন্তা করে থেকে গেছি। একা একা সন্তান পালনের ধকলের প্রশ্নে মিলন বলেন, একজন মা কীভাবে যেন সন্তান পালন করতে পারেন। মায়েদের মধ্যে একটা ক্ষমতা আছে। সিঙ্গেল মা তাদের সন্তানদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। এটা তারা কীভাবে করেন জানি না। তবে বাবার ক্ষেত্রে কাজটি কঠিন। স্ত্রীর মৃত্যুর পর সন্তানকে কীভাবে লালন করছেন, সে বিষয়ে জানতে চাইলে অভিনেতা বলেন, আমার ছেলের বয়স তখন আট বছর। পুরো বাসায় তখন আমি ও আমার ছেলে। তখন আমাকে একাধারে বাবা ও মা হতে হয়েছে। সন্তানকে ব্যস্ত রাখার যত ধরনের ব্যস্ততা আছে, সব করতে হয়েছে। প্রতিবন্ধকতা তেমন কিছুই নয়। প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে, আপনি রান্না না জানলে সন্তানকে রান্না করে খাওয়াতে পারবেন না। আমি রান্না জানি না। এ কারণে সন্তানের পছন্দমতো খাবারগুলো তাকে বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে গিয়ে খাওয়াতে হয়। এটা আমার সন্তানের প্রাপ্য। আট বছর ও আমাকে ছাড়া ছিল। বাকি সময় আমাকে নিয়েই থাকবে। সন্তানকে কোন কালচারে বড় করতে চান, এমন প্রশ্নের জবাবে মিলন বলেন, আমার সন্তান বাংলা খুব ভালো বলে। আগে পারত না। ইংরেজিই বলত। আমি সবসময় ওর সঙ্গে বাংলায় কথা বলি, তাই ও নিজেও বাংলা বলে। বছরে আমি একবার ওকে দেশে আনি। এখানে ওর দাদু, ফুপু ও চাচা আছে। এই কালচার বোঝার জন্যই দেশে নিয়ে আসি। আমি কোনো কিছুই ওর ওপর চাপিয়ে দিই না। ওর ভেতরে কোন কালচার ঢুকবে, এটা আমি জানি না। তবে ওর একটি বিষয় ভালো, তা হলো—ভালো ও মন্দের বিষয়ে সে খুব ক্লিয়ার। ও ভালো মন্দের তফাত খুব ভালো বোঝে। আমার সন্তান সত্য ও স্পষ্টবাদী।
২৪ জুলাই, ২০২৪

‘রাজাকারের সন্তান বলে স্লোগান দিতে লজ্জা করে না?’
মধ্যরাতে উত্তাল হয়ে উঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)। স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে ক্যাম্পাস।  মিছিল নিয়ে রাস্তায় নেমে আসেন শিক্ষার্থীরা। স্লোগান দিতে থাকে ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার-রাজাকার’। তাদের এমন বিক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দিয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক। ফেসবুক পোস্টে তিনি বলেন, ‘যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৫ শে মার্চ ছাত্র শিক্ষকদেরকে গণহত্যা করেছে রাজাকাররা, সেই রাজাকারের পক্ষে রাজাকারের সন্তান বলে শ্লোগান দিতে লজ্জা করে না?’  রোববার (১৫ জুলাই) রাত সোয়া ১২টার দিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এক পোস্টে জুনায়েদ আহমেদ পলক এসব কথা লিখেন। বিষয়টি ঘিরে আরও পোস্ট করেন পলক। তিনি লিখেন, ‘তুমি কে? আমি কে? বাঙালি, বাঙালি’, ‘তোমার আমার ঠিকানা পদ্মা-মেঘনা-যমুনা’ স্লোগান লিখে পোস্ট দেন তিনি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করেন এ সংক্রান্ত একটি পোস্টারও।  সবশেষ রাত সোয়া ১টায় ফেসবুক আরেকটি পোস্ট দেন প্রতিমন্ত্রী পলক। লিখেন, ‘একাত্তরের হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার, তোরা যারা রাজাকার এই মুহূর্তে বাংলা ছাড়।’  তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ গভীর রাতে ফেসবুকে দেওয়া এক বার্তায় দাবি করেছেন, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে ‘তুমি নই, আমি নই রাজাকার রাজাকার’ স্লোগান দিয়েছিলেন। অর্থাৎ আমি কিংবা তুমি কেউই রাজাকার নই।  রোববার বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফর পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এক বক্তব্যের জেরে নতুন মাত্রা পেয়েছে চলমান এই আন্দোলন। যার প্রেক্ষিতে রাত ১১টার পর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, ক্যাম্পাস এবং হলগুলোতে মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল, শামসুন্নাহার হল, কবি জসিম উদ্দিন হল, বঙ্গবন্ধু হল, জিয়াউর রহমান হলসহ বিজ্ঞান অনুষদের হলগুলোর কয়েক হাজার শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে বের হয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন। এদিকে, মিছিলে যোগ দেওয়া ঠেকাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হল, মাস্টারদা সূর্যসেন হল, বিজয় একাত্তর হল, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল ও এফ রহমান হলের শিক্ষার্থীদেরকে আটকে রাখার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু অন্যান্য হলের শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে এসে এই হলগুলোর মূল ফটকের তালা ভেঙে আগ্রহী শিক্ষার্থীদেরকে উদ্ধার করে মিছিলে যুক্ত করেন।
১৫ জুলাই, ২০২৪
X