গাজীপুর পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের সাব স্টেশনে অগ্নিকাণ্ড
গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর কোনাবাড়ী জোনাল অফিসের সাব স্টেশনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট আধ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে এ অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। গাজীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর কোনাবাড়ী জোনাল অফিসের ডিজিএম কামাল হোসেন জানান, কোনাবাড়ী জোনাল অফিসের সাব স্টেশনে বিকট শব্দ হয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। পরে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টার পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিসে খবর দেওয়া হয়। পরে প্রায় আধা ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এতে হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি। তিনি আরও জানান, অতিরিক্ত তাপের কারণে এ  অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আগুনে পাওয়ার ট্রান্সফরমার পুড়ে গেছে। তদন্তের পর ক্ষতির পরিমাণ বলা যাবে। গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল আরেফিন জানান, খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুইটি ইউনিট কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। পরে আধা ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নেভানো হয়। আগুনে পাওয়ার ট্রান্সফরমারসহ বিভিন্ন তার পুড়ে গেছে। অতিরিক্ত তাপের কারণে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
২৫ এপ্রিল, ২০২৪

নারায়ণগঞ্জের গাউছিয়া কাঁচাবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের ভুলতা গাউছিয়া কাঁচা বাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিসের ৪টি ষ্টেশনের ১০ ইউনিট। রোববার (২৪ মার্চ) ভোর রাতে এ অগ্নিকাণ্ডে খবর পাওয়া যায়। এর আগে মধ্যরাতে এ অগ্নিকাণ্ডে ঘটনা ঘটে।  নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের উপ সহকারী পরিচালক ফখরুদ্দিন জানান, খবর পেয়ে আমাদের কাঞ্চন, আড়াইহাজার, ডেমরা ও পূর্বাচল মোট ৪ টি ষ্টেশনের ১০টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। আগুনটি বেশ বড় এবং চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে।  তিনি জানান, প্রাথমিকভাবে আগুনের সূত্রপাত জানা যায়নি। আগুন নেভানোর পর আমরা বিস্তারিত জানাতে পারবো।
২৪ মার্চ, ২০২৪

বিস্ফোরণ, অগ্নিকাণ্ড সমীক্ষা এবং অগ্নি দুর্ঘটনায় করণীয়
ক্রমাগত ঘটতে থাকা বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ড বিধ্বংসী রূপ ধারণ করার পরও যেন ভ্রুক্ষেপ নেই কারও। পুরোটা বছরজুড়ে অগ্নিকাণ্ড সংঘটিত হওয়াই যেন এদেশের জন্য স্বাভাবিক ঘটনা। প্রতিবছর বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ড কেড়ে নিচ্ছে শত শত মানুষের প্রাণ এবং নষ্ট করছে বিপুল পরিমাণ সম্পদ। দেশে যেসব বিস্ফোরণ ঘটেছে, তার অধিকাংশই হয়েছে বাণিজ্যিক ভবনগুলোতে অর্থাৎ একই ভবনের মধ্যে আছে বাণিজ্যিক ব্যবহার, রেস্টুরেন্ট ও আবাসস্থল। নগরায়ন প্রক্রিয়া বৃদ্ধির সাথে সাথে এ ধরনের মিশ্র ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। দেশে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার কারণগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু কারণ হলো রাজউক কর্তৃক নির্ধারিত ভবন কোড না মেনে ভবন নির্মাণ, অগ্নি নিরাপত্তার শিথিল নিয়ম এবং নিয়মিত পর্যবেক্ষণের অভাব।  সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অর্থাৎ ২০১০-২০২২ সালের মধ্যে যেসব ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে তাদের মধ্যে ২০১০ সালের পুরান ঢাকার নিমতলীর নবাব কাটরায় রাসায়নিক দাহ্য পদার্থের গুদামে থাকা কেমিক্যালের প্লাস্টিক ড্রাম গলে গিয়ে বিস্ফোরণ, ২০১২ সালে ঢাকা মহানগরীর উপকণ্ঠে আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুর এলাকায় অবস্থিত তৈরি পোশাক প্রতিষ্ঠান তাজরীন ফ্যাশনের অগ্নিকাণ্ড, ২০১৭ সালের ৩ জানুয়ারি ভোরবেলা গুলশানের ডিএনসিসি মার্কেটে এবং ১৫ মার্চ দিবাগত রাতে মহাখালীর কড়াইল বস্তিতে লাগা অগ্নিকাণ্ড, ২০১৯ সালে রাজধানীর চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ওয়াহেদ ম্যানশনে এবং বনানীর এফআর টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, ২০২১ সালে মগবাজারের ওয়্যারলেস গেটের বিস্ফোরণ এবং ২০২২ সালে চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ডতে কন্টেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণের ঘটনাগুলো আজও মানবমনে বিভীষিকার জন্ম দেয়।  অপরদিকে শুধু ২০২৩ সালেই সারা দেশব্যাপী ঘটে যাওয়া একাধিক বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ব্যাপকভাবে আলোড়ন সৃষ্টি করলেও তেমন কোনো পদক্ষেপ এখনও পর্যন্ত স্পষ্ট নয়। অপরিকল্পিত নগরায়ণ, বিল্ডিং কোডের বিধি লঙ্ঘন এবং অগ্নি নিরাপত্তা সচেতনতার অভাবের কারণে অধিক জনসংখ্যার মেগাসিটিতে বিস্ফোরণ এবং আগুনের ঝুঁকি সর্বত্র লুকিয়ে আছে। ২০২৩ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি ঢাকার গুলশানের মোশারফ জাকের স্কাই লাইন ভবনে লাগা আগুন দুজন নিহত হন এবং আটজন পুরুষ ১২ জন মহিলা এবং একজন শিশুসহ মোট ২১ জনকে  নিকটস্থ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।  একই মাসের ২৬ তারিখে বনানীর কড়াইল বস্তিতে অগ্নি দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়। এই অগ্নিকাণ্ডের ফলে আনুমানিক প্রায় ২০ লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হলেও কোন ধরনের নিহত বা হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। নারায়ণগঞ্জে পরিধানের জন্য তৈরি পোশাক তৈরির একটি কারখানা ৩রা মার্চ বিস্ফোরণে ধ্বংস হয়ে যায় যেখানে সৌভাগ্যবশত কারখানা বন্ধ থাকার কারণে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। বাংলাদেশের পোশাক শিল্পেও অগ্নিকাণ্ড একটি স্থায়ী সমস্যা, যেটি দেশের অর্থনীতিতে একটি প্রধান অবদানকারী হিসেবে ভূমিকা পালন করে আসছে। এরপর ৫ মার্চ ঢাকার সায়েন্স ল্যাব এলাকায় বিস্ফোরণ ঘটে। গুলিস্তান বিস্ফোরণের মাত্র দুই দিন পরে ৭ মার্চ সিদ্দিকবাজারে এবং ৪ এপ্রিল বঙ্গবাজারের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছিল ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের। তার ঠিক ১১ দিন পরেই ১৫ই এপ্রিল আগুন লাগে রাজধানীর অন্যতম প্রধান বাণিজ্যিক ভবন নিউমার্কেটে এবং আগুনে প্রায় ৩৫০ কোটি টাকার মালামাল পুড়ে যায়।  ২০২৪ সাল শুরু হতে না হতেই অগ্নিকাণ্ডের শুভ উদ্বোধন হলো ২৯ ফেব্রুয়ারি বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে আগুন লাগার মধ্য দিয়ে। এই ভবনের পুরোটাই বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত হতো। বৃহস্পতিবার রাতে সংঘটিত এই অগ্নিকাণ্ডে আনুমানিক প্রায় ২০০ কোটি টাকার সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। বেইলি রোডের এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৪৬ জনের মৃত্যু হয়। গ্রিন কোজি কটেজ ভবনটির নিচতলায় ‘চুমুক’ নামের একটি কফি শপ থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়, যা পরবর্তীতে ভবনের অন্যান্য তলায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে থাকে।  প্রতিটি বিস্ফোরণের ঘটনার পরপরই পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, বিস্ফোরক দপ্তর, সিআইডিসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং প্রতিবারই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। বিভিন্ন উৎসের মাধ্যমে বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ড ঘটে থাকলেও প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়ে থাকে পানির ট্যাংকে দীর্ঘদিন জমে থাকা গ্যাস বিস্ফোরণের ফলে, গ্যাস সরবরাহ লাইনে লিকেজ বা ছিদ্র থাকার কারণে, সিলিন্ডার বা বয়লার বিস্ফোরণ, রাসায়নিক বিক্রিয়া, উচ্চতাপে অথবা বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণে এধরনের অগ্নিকাণ্ড ঘটে থাকে। অপরিকল্পিতভাবে ভবন নির্মাণ, নির্মিত ভবনগুলো নিয়মিত পর্যবেক্ষণ না করা, ত্রুটিপূর্ণ বৈদ্যুতিক সংযোগ ও বৈদ্যুতিক যন্ত্রের ব্যবহার, শিথিল অগ্নি নিরাপত্তা বিধি মালা, অতিরিক্ত জনসংখ্যা এবং অগ্নি নিরাপত্তা সচেতনতার অভাবকেই অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে দায়ী করা হয়। বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর ২০১৫ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর সারাদেশে ঘটে যাওয়া সব অগ্নিকাণ্ড এবং এর কারণসহ একটি করে পরিসংখ্যান প্রকাশ করে। বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর থেকে গত ৮ বছরের প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)। গবেষণা থেকে প্রাপ্ত ফলাফল পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০১৬ এবং ২০১৯ সালের কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া প্রতিবছরই পূর্ববর্তী বছর থেকে বার্ষিক অগ্নিকাণ্ডের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এই পরিসংখ্যান পর্যালোচনা থেকে দেখা যায়, বিগত ৯ বছরে সর্বমোট ১,৬২,৪২৬টি অগ্নিকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে এবং অন্যান্য বছরের তুলনায় ২০২২ সালে সর্বাধিক অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। তাই বার্ষিক ক্রমানুযায়ী ২০২২ সাল ১ম স্থানে অবস্থান করছে এবং ২০১৯ ও ২০২১ সাল যথাক্রমে ২য় ও ৩য় স্থানে অবস্থান করছে।  ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২২ সালে শতকরা ০.১২ ভাগ এবং ২০২১ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে শতকরা ১১.৪৪ ভাগ বেশি দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। ২০২২ সালে ২৪১০২ টি, ২০১৯ সালে ২৪০৭৪ টি এবং ২০২১ সালে ২১৬০১ টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ক্যাপস কর্তৃক গবেষণাকৃত প্রাপ্ত ফলাফল পর্যালোচনা করে আরও জানা যায়, শুধু বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণেই ৬০,৫৫৭টি অগ্নিকাণ্ড সংঘটিত হয় যা মোট দুর্ঘটনার শতকরা প্রায় ৩৭ ভাগ। এ ছাড়া চুলার (ইলেকট্রিক, গ্যাস ও মাটির চুলা ইত্যাদি) মাধ্যমে ২৯,৭৮০ টি (১৮%), বিড়ি-সিগারেটের জ্বলন্ত টুকরার কারণে ২৫,১৩৯ টি (১৫%) এবং অন্যান্য বা অজ্ঞাত কারণে ১৬,৮৩০ টি (১০%) অগ্নিকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। অপরদিকে ২০২৩ সালে মাত্র চার মাসের মধ্যেই সারাদেশে ২৩ টিরও বেশি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ক্যাপসের গবেষণায় আরও পরিলক্ষিত হয়, সাধারণত মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে অগ্নিকাণ্ডগুলো বেশি হয়ে থাকে। প্রতিবছর অগ্নিকাণ্ডের জন্য ঝরে যাচ্ছে অগণিত প্রাণ, নষ্ট হচ্ছে কোটি কোটি টাকার সম্পদ, ভেঙে যাচ্ছে হাজারো স্বপ্ন। মা-বাবা, স্বামী-স্ত্রী ও সন্তানদের এবং নিজেদের সহায় সম্পদ হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে হাজারো পরিবার। প্রতিটি অগ্নিকাণ্ডের পর পরই তৈরি হচ্ছে তদন্ত কমিটি গঠিত হচ্ছে কিন্তু সঠিক কারণ নিরূপণ করা অনেক ক্ষেত্রেই সম্ভব হচ্ছে না।  অপরিকল্পিত নগরায়ণ, বিল্ডিং কোডের বিধি লঙ্ঘন এবং অগ্নি নিরাপত্তা সচেতনতার অভাবের কারণে বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি দুই কোটিরও বেশি মেগাসিটির সর্বত্র লুকিয়ে আছে। বাংলাদেশে অগ্নিকাণ্ডের সমস্যা মোকাবেলার জন্য সরকার অগ্নি নিরাপত্তা বিধান প্রতিষ্ঠা এবং প্রয়োগের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল সারাদেশের সব ভবনগুলিতে অগ্নি নিরাপত্তা সরঞ্জাম নিশ্চিত করা এবং উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় নিয়মিত পরিদর্শন করা। কর্তৃপক্ষকে নিরাপত্তার বিষয়টিকে আরও গুরুত্ব সহকারে নিতে হবে এবং আমাদের দুর্যোগ প্রস্তুতি ও প্রতিক্রিয়াশীলতা উন্নত করতে হবে।  অপরিকল্পিতভাবে তৈরিকৃত ভবনগুলোর সেইফটি ট্যাংক এবং পানির ট্যাংকগুলোকে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ না করার ফলে এর ভিতরে গ্যাস জমে যায়। অত্যাধিক গ্যাস জমে গিয়ে বিস্ফোরণ ঘটে থাকে। তাই নিয়মিত এগুলো পর্যবেক্ষণ করতে হবে। নির্ধারিত সময় পর পর গ্যাসের লাইনগুলোতে লিকেজ বা ছিদ্র পরীক্ষা করতে হবে। ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে ভবনটির অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা সন্তোষজনক কিনা তা যাচাই করে ভবন নির্মাণের অনুমতি দিতে হবে। অগ্নিনিরাপত্তায় ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো চিহ্নিত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বৈদ্যুতিক সংযোগগুলো নিয়মিত পরীক্ষা করে দেখতে হবে এবং ত্রুটিপূর্ণ বৈদ্যুতিক সংযোগ ও বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি মেরামত করতে হবে। নিম্নমানের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম স্থাপন করা থেকে বিরত থাকতে হবে। ধূমপান নিষিদ্ধ করতে হবে বা আলাদা কোনো জোন নির্ধারণ করে দিতে হবে। কর্মস্থলের সকলকে অথবা দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রসমূহ চালাতে জানতে হবে এবং প্রয়োজনে কর্তৃপক্ষকে তাদের সকল কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের আগুননির্বাপক যন্ত্রসমূহ পরিচালনার প্রশিক্ষণ দিতে হবে।  আইন অনুযায়ী অগ্নি-নিরাপত্তা সরঞ্জামসমূহ সঠিকভাবে স্থাপন ও নিয়মিত রক্ষনাবেক্ষন করতে হবে। জরুরি বহির্গমনের পথ সবর্দা খোলা ও বাধামুক্ত রাখতে হবে। বহুতল ভবন ও কারখানাগুলোতে প্রত্যেক রুম বা ফ্লোর হতে নিরাপদে বের হবার জন্য একটি বহির্গমন মানচিত্র এমন স্থানে ঝুলিয়ে রাখতে হবে যাতে সবাই তা দেখতে পারে। ভবনে ফায়ার এলার্মের ব্যবস্থা রাখতে হবে। দিয়াশলাই ও গ্যাস লাইটার সর্তকতার সাথে ব্যবহার করতে হবে ও নিরাপদ স্থানে রাখতে হবে। হাতের নিকট প্রচুর পানি, বালি মজুত রাখতে হবে। প্রতিমাসে অথবা ছয় মাস অন্তর অন্তর বাধ্যতামূলক ভাবে অগ্নি-মহড়া অনুশীলন করতে হবে, রাত্রি কালীনও অগ্নি-মহড়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে। পরিবারের সকলকে ও একটি প্রতিষ্ঠানের মোট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ১৮% কে অগ্নি-নিরাপত্তাবিষয়ক প্রশিক্ষণ দিতে হবে। অগ্নি নিরাপত্তা বিধি মালা কঠোরভাবে সবাইকে মানতে বাধ্য করতে হবে। যে কোনো সময় অগ্নিকাণ্ড সংগঠিত হতে পারে তাই সব সময় সতর্ক থাকতে হবে। কোথাও আগুন লাগলে সাথে সাথে বৈদ্যুতিক মূল সংযোগ বিছিন্ন করে দিতে হবে।  অগ্নিকাণ্ডের সময় যতটা সম্ভব ধীর-স্থীর ও শান্ত থাকতে হবে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের জরুরি টেলফোন নম্বরটি সকলের মুখস্ত রাখতে হবে এবং দ্রুত তাদের জানাতে হবে। ফারায় সার্ভিসের গাড়ি আসার পূর্ব পর্যন্ত নিরাপদ দূরত্বে থেকে অবশ্যই আগুন নেভানোর চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। অগ্নি নির্বাপণসামগ্রী ব্যবহার করে আগুন নেভানোর চেষ্টা করতে হবে। বৈদ্যুতিক লাইনে, তৈল জাতীয় আগুনে, কোনো মেশিন বা যন্ত্রে পানি দেওয়া যাবে না। সকলকে সতর্ক করার জন্য ফায়ার এলার্ম বাজাতে হবে বা বিশেষ কোনো সিগন্যাল দিতে হবে। কোনোভাবেই তাড়াহুড়ো করা যাবে না। এতে করে পরে গিয়ে বড় রকম আঘাত পাওয়া, এমন কি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই মাথা ঠান্ডা রেখে কী করতে হবে তা ঠিক করতে হবে। ফ্লোর ধোঁয়াচ্ছন্ন হয়ে গেলে হামাগুড়ি দিয়ে আস্তে আস্তে বের হয়ে আসতে হবে। সম্ভব হলে ভেজা কাপরের টুকরো, রুমাল বা তোয়ালে দিয়ে মুখ ও নাক বেঁধে হামাগুড়ি দিয়ে বের হয়ে আসতে হবে। সাথে সাথে বের হওয়া সম্ভব না হলে গ্যাস মাস্ক পরে অপেক্ষা করতে হবে।  গায়ে বা কাপড়ে আগুন লাগলে কখনই দৌড়ানো যাবেনা, দ্রুত মাটিতে শুয়ে পড়তে হবে এবং দুই হাত মুখমণ্ডলের ওপর রেখে গায়ের আগুন না নেভা পর্যন্ত গড়াগড়ি দিতে হবে। সর্বোপরি জনসাধারণকে অগ্নিকাণ্ড সম্পর্কে সচেতন করা এবং অগ্নিকাণ্ডের সময় নিজেকে রক্ষা করা এবং প্রাথমিকভাবে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার কৌশল শেখানোর মাধ্যমে কিছুটা হলেও অযাচিত অগ্নিকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হতে পারে।  ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার : ডিন, বিজ্ঞান অনুষদ, বিভাগীয় প্রধান, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ; যুগ্ম সম্পাদক, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এবং প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক, স্টামফোর্ড বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)
১৯ মার্চ, ২০২৪

রংপুরের মনসা মন্দিরে রহস্যজনক অগ্নিকাণ্ড
রংপুরের মনসা মন্দিরে রহস্যজনক অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। জেলার বদরগঞ্জ উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের দিলালপুরের এ মন্দিরে সোমবার (১৮ মার্চ ) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এতে মন্দিরের মণ্ডপ, টিনের চাল ও অন্যান্য আসবাবপত্র পুড়ে গেছে। এ ঘটনার পর মনসা মন্দির পরিদর্শন করেছেন উপজেলা চেয়ারম্যান ফজলে রাব্বি সুইট, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজির হোসেন, বদরগঞ্জ থানার ওসি আব্দুল লতিফ ও বদরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র টুটুল চৌধুরীসহ পূজা উৎযাপদ পরিষদের নেতারা।  বদরগঞ্জ উপজেলা পূজা উৎযাপন পরিষদের সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুবোধ কুমার গোবিন্দ কুণ্ড জানান, সন্ধ্যায় মন্দিরে বাতি দেয়া হয়েছে, পূজাও হয়েছে। এরপর সাড়ে ৭টার দিকে হঠাৎ দাউ দাউ করে মন্দিরে আগুন জ্বলে উঠতে দেখেন স্থানীয়রা। পরে তারা আগুন নিভিয়ে ফেলে। এই অগ্নিকাণ্ডে মনসা মণ্ডপ, মন্দিরের ঘর ও আসবাবপত্র পুড়ে গেছে। কে বা কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তা আমরা বুঝতে পারছি না।  তিনি বলেন, এই ঘটনার পর আমরা হিন্দু-মুসলিম সবাই ঘটনাস্থলে আছি। প্রশাসনের লোকজনও আছে। বিষয়টি মীমাংসা হয়ে গেছে। মন্দিরের যা ক্ষতি হয়েছে তা প্রশাসন থেকে সংস্কার করা হবে। বদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাজির হোসেন বলেন, আমরা ঘটনাস্থলে গিয়েছি। সবার সঙ্গে কথা বলেছি। আসলে মন্দিরের বাতি বা বিদ্যুতের শর্ট-সার্কিট থেকে হয়েছে না কি দুষ্কৃতকারীরা আগুন দিয়েছে তা তদন্ত করা হবে। আমরা মন্দির কমিটিকে মামলা দিতে বলেছি, পুলিশ মামলা নিবে, তদন্ত করবে।  তিনি বলেন, আমরা মন্দির কমিটির সঙ্গে কথা বলে আপাতত নগদ ২০ হাজার টাকা সংস্কার বাবদ দিয়েছি, প্রয়োজন হলে আরও দেওয়া হবে।  উপজেলা চেয়ারম্যান ফজলে রাব্বি সুইট বলেন, কোনো সমস্যা নেই। আমরা সম্প্রীতির সঙ্গে দীর্ঘদিন বসবাস করছি। আপাতত কোনো সমস্যা নেই।  বদরগঞ্জ থানার ওসি আব্দুল লতিফ জানান, রাত পৌনে ৮টার দিকে দিলালপুর কাচারিবাজারে অবস্থিত মনসা মন্দিরে অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। আমরা ঘটনাস্থলে গিয়েছি। কে ঘটিয়েছে তা কেউ দেখেনি। মামলা হবে, আমরা মামলা নেব, তদন্ত করব। তদন্তে কেউ দোষী হলে তাকে আইনের আওতায় নেওয়া হবে।  তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত সেখানকার পরিবেশ শান্ত রয়েছে। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা নেই। 
১৯ মার্চ, ২০২৪

বেইলি রোড ট্র্যাজেডি অগ্নিকাণ্ড নয়, হত্যাকাণ্ড
রাজধানীর বেইলি রোডের বহুতল ভবন গ্রিন কোজি কটেজে গত ২৯ ফেব্রুয়ারি, বৃহস্পতিবার রাতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নারী, পুরুষ ও শিশু মিলিয়ে ৪৬ জন মানুষ নাই হয়ে গেছেন। কেউ কেউ গোটা পরিবারশুদ্ধ নাই হয়ে গেছেন। নাই মানে একেবারে নাই। তারা প্রত্যেকে আকাশের তারা হয়ে গেছেন। তাদের এই মৃত্যুতে একেকটি স্বপ্নেরও মৃত্যু ঘটেছে। মর্মান্তিক এই ঘটনার পর চলছে নানান বিচার-বিশ্লেষণ। সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর-অধিদপ্তর, পরিদপ্তর একে অন্যের ওপর দায় চাপিয়ে নিজেদের ত্রুটিগুলো আড়াল করার চেষ্টা করছে। কিন্তু যারা মারা গেছেন তারা আমাদের রাষ্ট্র ও সরকারের গোটা ব্যবস্থাপনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে গেছেন। কেন এবং কীভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করে গেছেন সেই প্রসঙ্গে পরে আসছি। অনেকেই বলছেন, আহারে এমন একটা দুর্ঘটনা ঘটল যে, এক নিমিষেই চোখের সামনে সব শেষ হয়ে গেছে। কিছুক্ষণ আগেও যেখানে লোকে লোকারণ্য ছিল, গমগম করছিল, আনন্দ-উল্লাসে সবাই মেতেছিল, পুরো ভবন ছিল ঝলমলে। কিন্তু মুহূর্তেই সেখানে পৃথিবীর তাবৎ অন্ধকার নেমে এসেছে। মৃত্যুপুরীতে রূপ নিয়েছে আলোকজ্জ্বোল বহুতল ভবনটি। যেটি এখন পুড়ে যাওয়া কঙ্কাল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এটিকে প্রায় সবাই দুর্ঘটনা হিসেবে ব্যাখ্যা করলেও আমার কাছে এটি স্রেফ একটি ‘পরিকল্পিত’ ও ‘দায় দায়িত্বহীন’ হত্যাকাণ্ড। হ্যাঁ, ঠিকই বলছি, এটি একেবারেই একটি হত্যাকাণ্ড। এমন হত্যাকাণ্ডের ঘটনা আমাদের এই দেশে, এই শহরে আরও বেশ কয়েকবার ঘটেছে। কামাল আতার্তুক অ্যাভিনিউয়ের এফআর টাওয়ার, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে একটি গার্মেন্টস কারখানা কিংবা মহাখালী খাজা টাওয়ার। শুধু এগুলোই নয়, নিমতলী, চুড়িহাট্টা ট্র্যাজেডির ক্ষত এখনো শুকোয়নি। এরকম আরও অনেক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা আছে। বর্ণনা দিলে শুধু তালিকা দীর্ঘ হবে আর হাহাকার বাড়বে। এসব ঘটনার বেশিরভাগেরই এখন পর্যন্ত বিচার হয়নি। ঘটনা ঘটার পর তাৎক্ষণিকভাবে কয়েকদিন তোড়জোড় চলে। মামলা হয়, কিছু লোককে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। তারপর আরেকটি ঘটনার ভিড়ে পেছনের ঘটনা হারিয়ে যায়। মানবসৃষ্ট দুর্ঘটনার শিকার হয়ে নিরীহ সাধারণ মানুষের প্রাণ গেলেও যাদের কারণে এই দুর্ঘটনা এবং এত এত মৃত্যুর ঘটনা ঘটে তারা থাকেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাদের টিকিটির নাগালও পাওয়া যায় না। গত শনিবার (২ মার্চ) সংসদে দেওয়া বক্তব্যে তৎকালীন গৃহায়ন ও পণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, এফআর টাওয়ারের অগ্নিকাণ্ডের পর বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে রাজধানীর ঢাকার ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করার পাশাপাশি এফআর টাওয়ারের ঘটনায় দায়ীদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় নেওয়ার উদ্যোগ ছিল গুরুত্বপূর্ণ। ওই ঘটনায় ৬২ জনকে দায়ী করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে দেখা গেছে, অনেককেই মামলা থেকে মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। এমনকি চূড়ান্ত অভিযোগপত্রে অনেকের নাম বাদ দেওয়া হয়। আর মামলার কার্যক্রম তো আজও শুরু হয়নি। এবার আসা যাক বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডকে দুর্ঘটনা না বলে কেন হত্যাকাণ্ড বলছি। যে ভবনটিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে সেখানে ১০টি রেস্টুরেন্ট ছিল। শহরের নামিদামি এসব রেস্তোরাঁ কোনো রকম নিয়কানুন না মেনেই শুধু কাঁচা টাকা কামানোর জন্য যেনতেনভাবে ব্যবসা করে আসছিল। ভবন ঠিক আছে কি না? এটিতে রেস্তোরাঁ ব্যবসা চালানোর মতো অবস্থায় ছিল কি না? এসবের কোনো কিছুই পরোয়া করেননি ব্যবসায়ীরা। তারা শুধু নিজেদের ব্যবসার কথা চিন্তা করেছেন। তাই এটিকে হত্যাকাণ্ড বললে খুব বেশি অতিরঞ্জন হবে না। শুধু ব্যবসায়ীরাই নয়, এই হত্যাকাণ্ডের দায় এড়াতে পারবেন না সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা। প্রথমত, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এই ভবনটি অনুমোদন দিয়েছে আবাসিক ভবন হিসেবে। সেটি কীভাবে বাণিজ্যিক হয়ে গেল? এই প্রশ্নের জবাব রাজউককেই দিতে হবে। ভবনটি নির্মাণের পর সেটি কীভাবে ব্যবহার হচ্ছে তার খোঁজ-খবর নেওয়ার দায়িত্ব রাজউকের। না হলে ধরে নিতে হবে, তারা সেটি করেনি বা করে থাকলেও সুযোগ-সুবিধা নিয়ে বিষয়টি দেখেও না দেখার ভান করেছে। গ্রিন কোটি কটেজে যে এত রেস্তোরাঁ গড়ে উঠেছে সেটি কিন্তু আড়ালে, গোপনে হয়নি। এর জন্য সিটি করপোরেশন থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিতে হয়েছে। ট্রেড লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা কি ভবনটি পরিদর্শন করে ট্রেড লাইসেন্স দিয়েছেন, কিংবা কী ব্যবসা করবেন সে বিষয়ে জেনে লাইসেন্স দিয়েছেন কি না? লাইসেন্স দেওয়ার সময়ই তাদের নিশ্চিত করা দরকার ছিল যে, যিনি লাইসেন্স নিচ্ছেন তিনি ভবনটিতে কীসের ব্যবসা করবেন? যদি রেস্তোরাঁর ব্যবসা করেন তাহলে ভবন পরদির্শন করে তবেই ট্রেড লাইসেন্স দেওয়া উচিত ছিল। আপাতদৃষ্টিতে মনে হওয়াটা স্বাভাবিক যে, সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ কোনো রকম সরেজমিন তদন্ত না করেই লাইসেন্স দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, লাইসেন্স দেওয়ার পরও তারা পরিদর্শন করেননি। না হলে এত বড় দুর্ঘটনা ঘটরার সুযোগই তৈরি হতো না। তাই মানবসৃষ্ট এই হত্যাকাণ্ডের দায় কোনো ভাবেই এড়াতে পারবেন না সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা। আর ফায়ার সার্ভিস। তাদের তরফ থেকে বলা হয়েছে, ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে তিনবার এই ভবন কর্তৃপক্ষকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা আমলে নেননি। এটা খুবই হাস্যকর। কারণ ফায়ার সার্ভিসের এই ক্ষমতাটুকু আছে যে, কোনোভবন ঝুঁকিপূর্ণ হলে তারা সেটি সিলগালা করতে পারবেন। তিনবার নোটিশ দেওয়ার পরও যখন কর্তৃপক্ষ কানে নেয়নি, তখন ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ ভবনটি সিলগালা করে দিলে আজ এত প্রাণ অকালে ঝরে যেত না। এই জায়গা থেকে ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষও কোনোভাবে দায় এড়াতে পারে না। এসব কিছু বিবেচনায় নিলে বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ড যে ‘হত্যাকাণ্ড’ সে বিষয়ে কারও মনে কোনো সন্দেহ থাকার কথা নয়। তাই এমন মানবসৃষ্ট হত্যাকাণ্ড বন্ধে সরকারকে কঠোর হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। বিশেষ করে এফআর টাওয়ার থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানী ঢাকার যেসব বহুতল ভবনে আগুন লেগেছে, সেগুলোর জন্য প্রকৃত দায়ীদের (তারা যতই ক্ষমতাশালী হোক না কেন) আইনের আওতায় এনে দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক বিচার নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে এরকম ঘটনা রোধ করা যাবে না। বরং বারংবার এমন ঘটনা ঘটবে, মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হবে। আর আমরা শুধু সব শেষ, সব শেষ বলে হাপিত্যেশ করব। লেখক: সাংবাদিক ও লেখক
১০ মার্চ, ২০২৪

বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডে বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের সংবাদ সম্মেলন
বেইলি রোডে ‘গ্রিন কোজি কটেজ’ শপিংমলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সংবাদ সম্মেলন করেছে বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট।  বুধবার (৬ মার্চ) দুপুরে বাস্থই প্রাঙ্গণে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে ‘অগ্নি নিরাপত্তা ও জীবনের সুরক্ষা’ নিয়ে নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন বক্তারা। সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, গত ২৯ ফেব্রুয়ারি বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ শপিংমলে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি এবং দুর্ঘটনায় আহতদের দ্রুত আরোগ্যলাভ কামনা করছি। এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হবে এবং সংশ্লিষ্ট সকল দায়ী ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তারা বলেন, এই অগ্নিকাণ্ডের পরের দিন সকালেই বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের একটি প্রতিনিধিদল ঘটনাস্থল সরেজমিনে পরিদর্শন করে। পরিদর্শনকালে উপস্থিত ছিলেন বাস্থই সভাপতি, সহ-সভাপতি (জাতীয় বিষয়াদি), সাধারণ সম্পাদক, সহ-সাধারণ সম্পাদক ও সম্পাদকগণ (সদস্যপদ)। জননিরাপত্তার স্বার্থে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটির গুরুত্ব বিবেচনা করে সরকার ইতোমধ্যেই একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত একটি জাতীয় সংগঠন যা দেশের পেশাজীবী স্থপতিদের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করছে। এর পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন নীতিনির্ধারণে প্রয়োজনীয় সহায়তাও প্রদান করছে। বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট, এই দুর্ঘটনার বিষয়ে পর্যবেক্ষণ এবং ভবনে অগ্নিনিরাপত্তা বৃদ্ধির উপায় সম্পর্কে জনসাধারণের অবগতি ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ সেবা প্রদানের লক্ষ্যে আজকের এই সংবাদ সম্মেলনটির আয়োজন করেছে। সংবাদ সম্মেলনে বাস্তুই‍’র পক্ষ হতে উপস্থিত ছিলেন- বাস্থই সভাপতি স্থপতি প্রফেসর ড. খন্দকার সাব্বির আহমেদ, সহ-সভাপতি (জাতীয় বিষয়াদি) স্থপতি প্রফেসর মুহাম্মদ আলী নকী, সহ-সভাপতি (আন্তর্জাতিক সম্পর্ক) স্থপতি খান মো. মাহফুজুল হক সাধারণ সম্পাদক স্থপতি নবী নেওয়াজ খান, সম্পাদক (পেশা) স্থপতি মো. নাজমুল হক বুলবুল এবং সম্পাদক (পরিবেশ ও নগরায়ন) স্থপতি সুজাউল ইসলাম খান সহ অন্যান্য নির্বাহী পরিষদের সদস্যগণ। বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ শপিংমলে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে প্রাথমিকভাবে নিম্নের পর্যবেক্ষণগুলো বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট জনসাধারণের কাছে উপস্থাপন করেন- ১. অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটির নির্গমন পথ বাধা মুক্ত ছিল না বলে প্রতীয়মান হয়। বিশেষ করে সিঁড়িগুলোতে গ্যাস সিলিন্ডার এবং অন্যান্য মালামাল সংরক্ষিত ছিল। ২. ভবনটির সিঁড়ির ফায়ার রেটেড ডোর পরিলক্ষিত হয়নি। এর ফলে অগ্নিকাণ্ডের ধোঁয়া অতি দ্রুত এক ফ্লোর থেকে পুরো ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। ৩. প্রাথমিকভাবে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত ঘটে ভবনের নিচতলার পশ্চাত অংশে, যেখানে দমকল বাহিনীর কর্মীরা সহসা পৌঁছাতে পারেননি এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে অগ্নিনির্বাপন করতে সক্ষম হননি। উল্লেখ্য, ভবনের নিচতলার পশ্চাত অংশে কোনো নির্গমন পথ ছিল না। ৪. ভবনটিতে অগ্নিপ্রতিরোধের জন্য প্রয়োজনীয় শনাক্তকরণ এবং অগ্নিনির্বাপনের ব্যবস্থা ছিল খুবই অপ্রতুল। ৫. ভবনটিতে গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবস্থাপনা যথাযথ ছিল না। ৬. ভবনটি রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) অনুমোদিত নকশা অনুযায়ী নির্মিত হয়েছিল কিনা কিংবা অকুপেন্সি সার্টিফিকেট নেওয়া হয়েছিল কিনা তা তদন্তের দাবি রাখে। এই মর্মান্তিক ভয়াবহতার পুনরাবৃত্তি রোধকল্পে করণীয় বিষয়সমূহ তুলে ধরেছেন প্রতিনিধিদল- ১. আইনি কাঠামো এবং আইনের প্রয়োগ : বাংলাদেশ স্থপতি ইনসটিটিউট, অগ্নিনিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে, ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ২০০৮, বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড ২০২০ এবং বাংলাদেশ অগ্নিনিরাপত্তা আইন ২০১৪ তে দেওয়া আইনগুলো পর্যবেক্ষণ করে এই অভিমত দেয় যে, এই তিন সূত্রে উল্লিখিত আইনসমূহ জননিরাপত্তার ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত। তবে আইনের সঠিক প্রয়োগ এবং বাস্তবায়নের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব সুস্পষ্ট। এ বিষয়ে দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা একান্ত প্রয়োজন। ২. ভবনের ব্যবহার পরিবর্তন বিষয়ে : একটি ভবনের আয়ু সাধারণত ৫০ বছর পর্যন্ত ধরা হয়। ভবনের আয়ুষ্কালে শহর ও সমাজের পরিবর্তন অতি স্বাভাবিক, তাই ভবনের অনুমোদিত ব্যবহারও বদলাতে পারে। অতি দ্রুত বর্ধনশীল, ঘনবসতিপূর্ণ এই নগরে প্রয়োজনীয় সামাজিক পরিসর এবং চিত্তবিনোদনের সুযোগ অতি সীমিত যা ভবনগুলোর ব্যবহারের উপর প্রভাব ফেলে। এই পরিস্থিতিতে ভবনের ব্যবহার পরিবর্তনের সুযোগ রয়েছে। বিদ্যমান আইনের সঙ্গে সমন্বয় করে যথাযথ প্রক্রিয়ায় এ পরিবর্তন করা প্রয়োজন। ঢাকায় কোন ভবনের ব্যবহার পরিবর্তন করার জন্য বিভিন্ন সরকারি সংস্থার অনুমতি প্রয়োজন হয়, যার মধ্যে রাজউক, সিটি করপোরেশন, ফায়ার সার্ভিস, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ইত্যাদি রয়েছে। প্রয়োজনে ভবন ব্যবহার পরিবর্তন করার পদ্ধতিটি ডিজিটাল করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। ৩. ভবনের অগ্নিপ্রতিরোধ ব্যবস্থাপনায় আধুনিক অগ্নিনিরাপত্তা কৌশলের ব্যবহার : বর্তমানে অগ্নিনিরাপত্তা কৌশল নির্ধারণ একটি অত্যন্ত পরিশীলিত বিজ্ঞান। একটি ভবনে ব্যবহৃত নির্মাণ উপকরনের দাহ্যতা সম্পর্কে তথ্যাদি Material Safety Data Sheet এর মাধ্যমে স্থপতি, প্রকৌশলী এবং সকল অংশীজন অবগত থাকেন। প্রতিটি ভবনের ধারণ ক্ষমতা অনুযায়ী Life Safety Plan বা জীবন রক্ষা নকশাও করা হয়। অগ্নি নিরাপত্তার জন্য ভবনের ধারণ ক্ষমতা, ব্যবহারের প্রকৃতি অনুযায়ী পৃথকীকরণের জন্য ভবনে ব্যবহৃত নির্মাণ উপকরণের দাহ্যতা বিবেচনা করা হয়। তবে আমাদের দেশে এসবের অনেক কিছুই বেশ ব্যয়বহুল। কিছু নির্মাণ উপকরণের Material Safety Data Sheet ও অনুপস্থিত। অতি ঘনবসতিপূর্ণ এই নগরের সু-উচ্চ ভবনগুলোতে অগ্নিনিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য এসব উপকরণের সাশ্রয়ী মূল্য ও মান নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন। ফায়ার সার্ভিসসহ সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থাগুলোর দক্ষতা ও সক্ষমতা এবং সমন্বিত ব্যবস্থাপনা এখন অপরিহার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। ৪. NFPA এর সূত্রমতে পৃথিবীর ৫০% অগ্নিকাণ্ডের সূচনা রান্নাঘর থেকেই হয়। একে বিশেষ বিবেচনায় নিতে হবে। রান্নাঘরের ব্যবহারগুলোকে কম্পার্টমেন্টালাইজড করে ধোঁয়া, আগুন ও ক্ষতিকর গ্যাসকে সীমাবদ্ধ করা যায়। এ ছাড়া কমার্শিয়াল কিচেনের জন্য আলাদা অনুমোদন প্রক্রিয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। ৫. অগ্নি নিরাপত্তা বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি, বছরে একাধিক নির্দিষ্ট দিনে শহরের সকল ভবনে ফায়ার ড্রিল করা, অগ্নিদুর্যোগ মোকাবিলার জন্য প্রতিটি ওয়ার্ডে প্রয়োজনীয় সংখ্যক কমিউনিটি ভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবক দল গঠন এবং মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যক্রমে এ সম্পর্কিত অধ্যায় সংযোজন করা যেতে পারে। ৬. অগ্নিনিরাপত্তায় ব্যবহৃত আমদানিকৃত উপকরণের শুল্ক ও কর সর্বক্ষেত্রে কমানো, মূল্য নির্ধারণ করা এবং দেশি শিল্প খাতকে তা উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনে প্রনোদণা দেওয়া যেতে পারে। ভবনে ইন্টেরিয়র ডিজাইনে যে সকল নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করা হয় তা কতটুকু ফায়ার রেটিং সম্পন্ন তার বিস্তারিত তথ্য ওই নির্মাণ সামগ্রীসমূহে উল্লেখ করার জন্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এবং আমদানিকারকদের নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ৭. বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট মনে করছে যে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নেতৃত্বে সংশ্লিষ্ট সংস্থা এবং পেশাজীবী ইনস্টিটিউটের অংশীজনদের সমন্বয়ে ভবনের অগ্নি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য একটি জাতীয় টাস্ক ফোর্স গঠন করার এখনই উপযুক্ত ও সঠিক সময়। ৮. রাজউক এলাকাসহ সারা দেশে স্থপতিদের স্বাক্ষর জাল করে নকশা অনুমোদন করার বিষয়টি মহামারি আকার ধারণ করেছে। নকশা প্রণয়নের ন্যূনতম যোগ্যতা নেই এমন অসাধু চক্র এই কাজে জড়িত। ফলস্বরূপ বিপুল, মতান্তরে অধিকাংশ ভবন অনুমোদিত হচ্ছে যার নকশা প্রকৃতপক্ষে এমন ব্যক্তির দ্বারা প্রণীত, যার অগ্নি নিরাপত্তা ও জীবন সুরক্ষা বিষয়ে ন্যূনতম কোনো জ্ঞান নেই। অতিসত্বর এই অসাধু চক্রকে প্রতিহত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ ছাড়া স্থপতি আইন প্রণয়ন করতে হবে। ৯. বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থা এবং জনগণের সঙ্গে যুগপৎভাবে কাজ করতে আগ্রহী যেন এই মর্মান্তিক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পুনরাবৃত্তি না ঘটে। এ লক্ষ্যে ইনস্টিটিউট যে কোনো ধরনের ভবনের অগ্নিনিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জনসেবামূলক পরামর্শ প্রদানের জন্য একটি হেল্পডেস্ক খোলার উদ্যোগ নিয়েছে। ভবনের মালিকগণ এই হেল্পডেস্ক থেকে ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে প্রাথমিক পরামর্শ গ্রহণ করতে পারবেন। সংবাদ সম্মেলনে তারা সকলের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, যথাযথ নিয়মানুযায়ী ভবন নির্মাণ ও ব্যবস্থাপনা করে ভবিষ্যতে এই জাতীয় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা রোধে সকলে সচেষ্ট থাকবেন। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট পূর্বে পুরান ঢাকার চুড়িহাট্টা ও বনানী এফ আর টাওয়ারের অগ্নিকাণ্ড নিয়েও প্রতিক্রিয়া জানাতে অনুরূপ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছিল। বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট ভবন নির্মাণের জন্য প্রণীত ‘ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ২০০৮’ ও ‘বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড ২০২০’ প্রণয়নের কার্যক্রমের অন্যতম সক্রিয় অংশীজন এবং বর্তমান ‘ড্যাপ ২২-৩৫’ এর প্রয়োজনীয় সংস্কারে সচেষ্ট।
০৬ মার্চ, ২০২৪

‘চট্টগ্রামে চিনিকলের আগুন বাজারে প্রভাব ফেলবে না’
চট্টগ্রামে চিনিকলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বাজারে কোনো প্রভাব পড়বে না বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু।  বুধবার (৬ মার্চ) সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে প্রতিযোগিতা কমিশন আইন নিয়ে এক কর্মশালায় এমন মন্তব্য করেন তিনি। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, মোট চাহিদার সামান্য পরিমাণ চিনি আগুনে নষ্ট হয়েছে। তবে, কেউ কেউ এই ঘটনাকে সুযোগ হিসেবে নিতে পারে। কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়িয়ে দিলে মিল পর্যায়ে সরকার ব্যবস্থা নেবে। এ সময় তিনি বলেন, নির্ধারিত দামে ভোজ্যতেল বিক্রি হচ্ছে। খেজুরের দামও সমন্বয় করা হবে। বাজারে প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে। কারসাজিকারীদের দৌরাত্ম্য বন্ধে প্রতিযোগিতা আইনের কঠোর বাস্তবায়ন জরুরি। বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, রোজার বাজার সহনীয় করতে নানামুখী উদ্যোগ হাতে নেওয়া হয়েছে। গোষ্ঠীগত বা সিন্ডিকেট করে পণ্যের দাম বাড়ানো যাবে না। সরকারের বিভিন্ন দপ্তর বাজার তদারকি চালিয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে ব্যত্যয় হলে আইনের প্রয়োগ করবে সরকার।  প্রতিমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পরে অর্থনৈতিক ভঙ্গুর দেশকে সমৃদ্ধিশালী করতে বঙ্গবন্ধু কাজ শুরু করেছিলেন। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। দেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যবসা-বাণিজ্যে সুস্থ প্রতিযোগিতা বজায় রাখা দরকার। বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারপারসন প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আনক্টেডের ইকোনমিক অ্যাফেয়ার্স অফিসার এলিজাবেথ গাছুরি এবং বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের সদস্য মো. হাফিজুর রহমান।
০৬ মার্চ, ২০২৪

রেস্তোরাঁয় তাণ্ডব চালাচ্ছে প্রশাসন : মালিক সমিতি
রাজধানীর বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর থেকে ঢাকা জুড়ে রেস্তোরাঁয় প্রশাসন তাণ্ডব চালাচ্ছে বলে দাবি করছে বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি। গত ২৯ ফেব্রুয়ারির ঘটনার পর থেকে ৪২টি রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেওয়াসহ বুল ডুজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন, সমিতির মহাসচিব ও মুখপাত্র ইমরান হাসান। এর প্রতিকারে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কোনো সহযোগিতা না পেয়ে তারা প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাতের অপেক্ষায় আছেন। পরিস্থিতি শান্ত না হলে প্রধানমন্ত্রীর কোছে রেস্তোরাঁর ছবি জমা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সমিতির নেতারা। মঙ্গলবার (৫ মার্চ) রাজধানীর পুরানা পল্টন আল রাজি কমপ্লেক্সে সমিতির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির নেতারা এসব কথা বলেন। এসময় অগ্নিকাণ্ডে ৪৬ জনের প্রাণহানীর ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করে সমিতির পক্ষ থেকে আগামী ৭ মার্চ বৃহস্পতিবার প্রতিটি রেস্তোরাঁয় কালো পতাকা উত্তলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। রেস্তোরাঁ মালিকরা দাবি করছেন, দেশের রেস্তোরাঁ খাতকে ধ্বংস করতে এবং করপোরেট প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণে নিতে একটি চক্র উঠে পড়ে লেগেছে। এর আগে একই প্রক্রিয়া বেকারি শিল্পকে ধ্বংস করে তাদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয়েছে। সংগঠিত অগ্নিকাণ্ডে সৃষ্ট সংকট থেকে উত্তরণে একটি কার্যকরি টাস্কফোর্স গঠনের দাবি জানিয়েছে রেস্তোরাঁ সমিতি। দক্ষ ও সৎ প্রকৌশলীদের সমন্বয়ে গঠিত টাস্কফোর্সটি আগামী ৩ থেকে ৬ মাসের মধ্যে রেস্তোরাঁ খাতে নিয়ম শৃঙ্খলা (কমপ্লায়েন্স) আনতে উদ্যোগ নিবে। এ ছাড়া সামনের দিনে রেস্তোরাঁ করার পূর্বেই যথাযথ কর্তৃপক্ষ যাচাইবাছাই করে রেস্তোরাঁর অনুমোদন দেওয়ার জন্য সংবাদ সম্মেলন থেকে দাবি জানানো হয়েছে। এসময় সমিতির সভাপতি ওসমান গনি, সহসভাপতি শাহ সুলতান খেকন, ১ম যুগ্মমহাসচিব ফিরোজ আলম সুমন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। ইমরান হাসান বলেন, বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডের দায় কেউ এড়াতে পারে না। পুরো ভবনটি ছিল অনিয়মে ভরা। তবে এর থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের সমাধানের পথ বের করতে হবে। আমরা দেখেছি, তৈরি পোশাক খাতে রানা প্লাজার ঘটনার পর সারা বিশ্ব ও ক্রেতারা নড়েচড়ে বসেছিল। পোশাক খাতের সেই দুর্দিন এখন আর নেই। তারা একর্ড ও এলায়েন্সসহ দেশি ও আন্তর্জাতিক সংস্থাকে সঙ্গে নিয়ে সমস্যার সমাধান করেছে। আজ বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্প বিশ্বে নিরপদ কর্মক্ষেত্রের দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে। আমরা চাই সে রকম একটি নিয়ম ও নিরাপদ রেস্তোরাঁ গড়ে তুলতে। প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকার নিরাপদ খাদ্য বাস্তবায়নে এবং নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিয়তার স্বার্থে সরকার হোটেল রেস্তোরাঁ খাতের সবাইকে বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সদস্যপদ বাধ্যতামূলকভাবে গ্রহণ করার জন্য গেজেট প্রকাশ করেছে। যা বাস্তবায়নের কোনো উদ্যোগ নেই। সরকারের গেজেট নির্দেশনা ও প্রজ্ঞাপন মোতাবেক হোটেল রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীদের ট্রেড লাইসেন্স প্রদান, নবায়নসহ ব্যবসায় সমস্যা নিরসনের লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। যাতে রেস্তোরাঁ ভবন, ক্রেতার জীবন নিরাপদ থাকে এবং নিরাপদ খাদ্য বাস্তবায়ন সহজ হয়। ইমরান হাসান বলেন, দেশের রেস্তোরাঁ খাতে ৪ লাখ ৮১ হাজার রেস্তোরাঁ এবং ৩০ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মরত রয়েছে। এ খাতের ৯৫ ভাগ কর্মী অদক্ষ। দেশের ৪৯৫টি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট রয়েছে সেখানে হোটেল ব্যবস্থাপনা বিষয় চালু করে দক্ষ জনবল তৈরি করা জরুরি। বহু বছর থেকে রেস্তোরাঁ খাতে সমস্যা নিয়ে সরকারি দপ্তর, সংস্থা, কর্তৃপক্ষের শরণাপন্ন হয়েও কোনো সহযোগিতা পাইনি। মনিটরিংয়ের নামে শুধু হয়রানি চলছে। এ পরিস্থিতিতে সরকার কর্তৃক উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন  একটি টাস্কফোর্স গঠন করা প্রয়োজন। যার মাধ্যমে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে সঠিক তথ্য বের হয়ে আসবে। সঙ্গে সঙ্গে রেস্তোরাঁ খাতের জন্য সুনির্দিষ্ট একটি গাইডলাইনও তৈরি হবে।
০৫ মার্চ, ২০২৪

বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ড : ‘লোকবল সংকটের অজুহাতে দায় এড়াতে পারে না রাজউক’
রাজউক লোকবল সংকটের অজুহাতে দুর্ঘটনার দায় এড়াতে পারে না বলে জানিয়েছেন দেশের ৪৮ জন বিশিষ্ট নাগরিক। বেইলি রোডে আগুনে প্রাণহানির ঘটনায় শোক জানিয়ে এ কথা বলেন তারা।  রোববার (৩ মার্চ) বিশিষ্ট নাগরিকরা বলেন, একের পর এক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে, কিন্তু সেই সব দুর্ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত, বিচার বা প্রতিকার মানুষ আজও পাননি। এমন অব্যবস্থা, বিচারহীনতা, প্রতিকারবিহীন অবস্থা অব্যাহতভাবে চলতে পারে না। অগ্নিকাণ্ডে ২০১০ সালে নিমতলীতে ১২৪ জন, ২০১৯ সালে চকবাজারে ৭১ জন ও বনানীর এফআর টাওয়ারে ২৭ জন প্রাণ হারান। এ ছাড়া হাসেম ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ, তাজরীন ফ্যাশনসহ এর আগে যেসব ঘটনা ঘটেছে, তা থেকে বেইলি রোডের দুর্ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন ভাবার উপায় নেই। আগের দুর্ঘটনাগুলোরই ধারাবাহিকতা। তারা বলেন, আগের দুর্ঘটনাগুলো থেকে জানা যায়, এসব দুর্ঘটনার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের এবং রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্তব্যে চরম অবহেলাই মূলত দায়ী। বেইলি রোডে দুর্ঘটনার শিকার ভবনটিকে রাজউক শুধু বাণিজ্যিক ব্যবহারের শর্তে অনুমোদন দিয়েছিল। ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ ভবনটিকে অগ্নিকাণ্ডের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে তিনবার নোটিশ পাঠিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, নোটিশ পাঠানোর পর কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। নাগরিকদের প্রশ্ন, শুধু নোটিশ দিয়েই কি ফায়ার সার্ভিসের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়? তাদের আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ারও ক্ষমতা রয়েছে, তা তারা কেন করল না? নাগরিকরা বলেন, নকশা অনুযায়ী ভবন হয়েছে কি না, তা রাজউকের তদারক করার কথা। কিন্তু লোকবল নেই, এই অজুহাতে রাজউক কোনো অবস্থায় দায় এড়াতে পারে না। দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে কর্তৃপক্ষ কী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল, তা মানুষকে জানানো, জবাবদিহি করা এখন সময়ের দাবি। বেইলি রোডের ঘটনাসহ সব দুর্ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানান তারা।  ভবনসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা খতিয়ে দেখা এবং সিটি করপোরেশন, রাজউকসহ বিভিন্ন সরকারি কর্তৃপক্ষের অবহেলা, ব্যর্থতা শনাক্ত করা, উচ্চ আদালতের নির্দেশনার বাস্তবায়ন তদারকি, দায়ীদের শাস্তি প্রদান, অগ্নিদুর্ঘটনা প্রতিরোধ নীতিমালা প্রণয়ন ও তার বাস্তবায়ন, ভুক্তভোগীদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া দাবি করেন বিবৃতিদাতারা। বিবৃতিদাতারা হলেন- মানবাধিকারকর্মী ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামাল, নিজেরা করির সমন্বয়ক খুশী কবির, মানবাধিকারকর্মী হামিদা হোসেন, সাবেক মন্ত্রিপরিষদের সচিব আলী ইমাম মজুমদার, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জেড আই খান পান্না, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত, বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, সেন্ট্রাল উইমেন ইউনিভার্সিটির উপাচার্য পারভীন হাসান, বিএনডব্লিউএলএর নির্বাহী পরিচালক সালমা আলী, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক ফারুখ ফয়সাল, আলোকচিত্রী ও সমাজকর্মী শহিদুল আলম, অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (এএলআরডি) নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, মানবাধিকারকর্মী মো. নুর খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন, নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জোবাইদা নাসরীন, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, নারীপক্ষের সদস্য শিরিন হক, ব্লাস্টের অনারারি নির্বাহী পরিচালক সারা হোসেন, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফিরদৌস আজিম, সাংস্কৃতিক কর্মী অরূপ রাহী প্রমুখ।
০৩ মার্চ, ২০২৪

বেঁচে ফেরাদের বর্ণনা / মরে যাব ভেবে ফোনে বিদায় নিয়েছিলাম
পড়াশোনা শেষ করে চাকরি নিয়ে বিদেশেই থিতু হওয়া যে কোনো প্রবাসীর ক্ষেত্রে দেশের প্রতি টানটা অন্যরকম। ফেলে যাওয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কিংবা বন্ধুদের সান্নিধ্যে যেতে সবসময়ই মনপ্রাণ ব্যাকুল থাকে। থাকে পরিবারের সঙ্গে মহামিলনের অপেক্ষা; কিন্তু এসবের কোনো একটি সুন্দর মুহূর্ত বা অভিজ্ঞতায় যদি মৃত্যু যন্ত্রণা স্পর্শ করে, তবে সেই বেড়ানো আর ভালোলাগা চিরদিনের মতো রূপ নেয় আতঙ্কে। স্মৃতিকাতর না হয়ে সারাটা জীবন সেই ট্রমার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। তাদেরই একজন আবরার ফারদিন। মাত্র কয়েকদিন আগেই দেশে বেড়াতে এসেছিলেন চীন প্রবাসী এই সফটওয়ার প্রকৌশলী। বৃহস্পতিবার রাতে বন্ধুদের নিয়ে খেতে গিয়েছিলেন বেইলি রোডে। সেখানেই আগুনের বিভীষিকার মুখোমুখি হন। চোখের সামনে মৃত্যু দেখে বাবা-মা এবং আত্মীয়স্বজনদের ফোন দিয়ে বলেন, ‘আর বাঁচব না।’ একসময় নিজেকে জীবিত আবিষ্কার করেন হাসপাতালের বিছানায়। শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটটে চিকিৎসাধীন ফারদিন বর্ণনা দেন সেই বিভীষিকাময় মুহূর্তের। ওইদিনের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অসুস্থ দাদাকে রক্ত দিয়ে বাসায় যাচ্ছিলাম। তখন ফোন দিই দুই বন্ধু মেহেদী হাসান ও উম্মে হাবিবা সুমাইয়াকে। ওরা সম্পর্কে স্বামী-স্ত্রী। ওদেরকে ফোন দিয়ে বলি যে, আমি দেশে এসেছি। তারপর বাসায় যাওয়ার আগে ওদের সঙ্গে দেখা করতে যাই। রক্ত দেওয়ার কারণে শরীর একটু ক্লান্ত লাগছিল। তাই আমরা তিনজন বেইলি রোডের ওই ভবনের তিন তলায় খানাস রেস্টুরেন্টে খেতে যাই। যাওয়ার কিছুক্ষণ পরই রেস্টুরেন্টে দৌড়াদৌড়ি শুরু হয়। তখন আমরা উঠে গিয়ে দেখি বাইরে ধোঁয়া। পুরো বিল্ডিং ঘুটঘুটে অন্ধকার। চারদিকে শুধু ধোঁয়ার কারণে চোখ জ্বলছিল এবং নিঃশ্বাস নেওয়া যাচ্ছিল না। তখন আতঙ্কে সিঁড়ি দিয়ে ৫ তলা পর্যন্ত যাওয়ার সময় আমি আমার দুই বন্ধুকে হারিয়ে ফেলি। তিনি বলেন, যারা ওপরে ছিলেন তারা বারবার চিৎকার করে বলছিলেন ওপরে আসবেন না। ওপরে অনেক আগুন। তখন আমি নিচে নামার পর দুই তলায় একদম আগুনের সামনে গিয়ে পড়ি। আর বন্ধুদের খুঁজে না পাওয়ায় আবার সিঁড়ি বেয়ে ওপরের দিকে উঠছিলাম। অনেক মানুষের দৌড়াদৌড়ির মধ্যে একসময় আমি ধাক্কা খেয়ে নিচে পড়ে যাই। ধোঁয়ায় এবং আঘাতে আমি অনেকক্ষণ নিচেই পড়েছিলাম। অন্ধকারে অনেকেই আমার ওপর দিয়ে দৌড়ে চলে যাচ্ছিল। আমি কিছুটা শক্তি নিয়ে ছাদে যাই। সেখানে যাওয়ার পর আমি একদম শুয়ে পড়ি। ছাদের ওপর আগে থেকেই থাকা কয়েকজন আমার মাথায় পানি দেয়। এরপর আমার অবস্থা কিছুটা ঠিক হয়। তখন আমি বাসার সবাইকে ফোন দেই। আমার বাবা-মা, মামা-মামি, চাচা সবাইকেই ফোন দিই। তাদের সবাইকে জানাই এখানে কী হচ্ছে। আমি আসলে আমার জীবনের আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম। তাই সবাইকে ফোন করে শেষ বিদায় নিয়ে ফেলেছিলাম। ছাদে একটা নামাজ পড়ার জায়গা ছিল। সেখানে তওবা করে জীবনের শেষ হিসেবে নামাজ পড়েছিলাম। ছাদে তখন ৫০-৬০ জনের মতো ছিল। সবাই আতঙ্কে ছিল। আমি আর এক আপু মিলে ছাদে থাকা বিভিন্ন কাগজপত্র নিচে ফেলে দিচ্ছিলাম, যেন ছাদে আগুন না বেড়ে যায়। কারণ আগুন ধীরে ধীরে ছাদের মুখে চলে এসেছিল। আমরা ছিলাম পেছনের দিকে। আর পুরো ছাদ একদম তপ্ত হয়ে গিয়েছিল। আমরা আশপাশের ভবনগুলোর দিকে তাকিয়ে চিৎকার করছিলাম , আমাদের একটু পানি দেন, পানি দেন। চোখ জ্বলছিল আমাদের। তখন ফায়ার সার্ভিসের একটি দল এসে ছাদের দিকে পানি দেয়। তখন আমরা আমাদের শরীরটা একটু ভিজিয়ে নিই। ফারদিন বলেন, ফায়ার সার্ভিস ছাদের দিকে পানি ছিটানোর পর ছাদের আগুন একটু নিয়ন্ত্রণে আসে। এরপর ফায়ার সার্ভিসের একজন উদ্ধারকর্মী এসে যন্ত্রপাতি দিয়ে একটা দরজা কেটে আমাদের বের করে। এরপর ক্রেন দিয়ে ধীরে ধীরে সবাইকে নামানো হয়। শুরুতে বয়স্ক, নারী এবং বাচ্চাদের নামানো হয়। এরপর আমরা সবাই নামি। নিচে নামার পর আমার তখন সেন্স ছিল না। যখন টের পাই আমি বেঁচে আছি, তখন দেখি আমি হাসপাতালে। আগুন লাগার পর প্রায় ৪ ঘণ্টা আমরা ওই বিভীষিকার মধ্যে ছিলাম। বেঁচে আছি সেটাই এখন অবিশ্বাস্য লাগছে। হাসপাতালে ফারদিনের পাশের দুই বেডেই চিকিৎসাধীন ওই ঘটনার সময় হারিয়ে যাওয়া দুই বন্ধু মেহেদী হাসান ও উম্মে হাবিবা সুমাইয়া। তারা সবাই ভেবেছিলেন কেউ বোধ হয় বেঁচে নেই; কিন্তু দুর্ভাগ্য কিংবা সৌভাগ্যক্রমে তাদের আবার দেখা হয় হাসপাতালে। মেহেদী হাসান বলেন, ফারদিনকে খুঁজে না পেয়ে আমরা ৩ তলায় পাঞ্জাবির শোরুম ইলিয়নের ওয়াশরুমে গিয়ে ঢুকি। সেখানে পানি থাকার কারণে আমি এবং আমার স্ত্রী সেখানে আশ্রয় নিই। প্রায় ২ ঘণ্টা সেখানে আটকে ছিলাম। বাসায় ভাইয়াকে ফোন দিয়ে ঘটনা জানিয়ে বলেছিলাম আমাদের উদ্ধার করার ব্যবস্থা করো। আমরা ইলিয়নের ওয়াশরুমে আটকে আছি। একপর্যায়ে অপেক্ষা করতে করতে তো জীবনের আশাই ছেড়ে দিয়েছিলাম। আমার ওয়াইফ যেন সেন্সলেস না হয় সেজন্য বারবার তার মাথায় পানি দিচ্ছিলাম। পরে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন আমাদের উদ্ধার করেন। আমাদের যদি মোবাইল ফোনটা কেটে যেত তাহলে আমাদের হয়তো উদ্ধার করাই সম্ভব হতো না। কারণ আমরা ছিলাম একদম পেছনের দিকে। ভাগ্যগুণে বেঁচে গেলাম। হাসপাতালে কথা হয় পাঠাও ফুড ডেলিভারিম্যান ফরিদুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি খানাস রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার আনতে গিয়ে আগুনে আটকা পড়েন। ফরিদুল বলেন, জীবনে এমন মুহূর্তের সম্মুখীন হইনি। বাঁচব যে সেটা ভাবতেই পারিনি। আমি মারা গেলে হয়তো আমার পরিবারটাই শেষ হয়ে যেত। ওপরওয়ালার দোয়ায় বেঁচে ফিরেছি। কারও জীবনে যেন এমন মুহূর্ত না আসে।
০৩ মার্চ, ২০২৪
X