শাবিপ্রবি উপাচার্যের ‘তালেবানি’ বক্তব্যের তীব্র নিন্দা, অপসারণ দাবি
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দেওয়া সাম্প্রতিক এক বক্তব্যকে ‘তালেবানি’ বক্তব্য বলে আখ্যা দিয়েছেন দেশের ৩৪ বিশিষ্ট নাগরিক। তারা এই বক্তব্যের নিন্দা জানিয়ে অধ্যাপক ফরিদউদ্দিন আহমেদের অপসারণ চেয়েছেন।
আজ মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তারা এ দাবি করেন।
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয়, এখানে (বিশ্ববিদ্যালয়) ওপেন কালচার ছিল, ছেলেমেয়েরা যা খুশি, তা-ই করতে পারত। কেউ কিছু বলতে পারত না। কারণ, তাদের বয়স ১৮ বছর। কিন্তু আমি বলেছি, রাত সাড়ে ১০টার মধ্যে হলে ঢুকতে হবে। তারা (শিক্ষার্থী) এটার নাম দিয়েছে তালেবানি কালচার। তালেবানি কালচার নিয়ে আমি খুবই গৌরবান্বিত, এটা নিয়ে থাকতে চাই। আমি ওপেন কালচার চাই না।’
বিবৃতিদাতারা বলেন, ‘তালেবানি কালচার নিয়ে তিনি গৌরবান্বিত এবং এটা নিয়েই তিনি থাকতে চান- এমন বক্তব্য একটি স্বনামধন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ পদে থাকা উপাচার্য কীভাবে সদর্পে উচ্চারণ করেছেন, সেটাই আমাদের জিজ্ঞাসা। বিগত তিন দশকে আফগানিস্তানের তালেবানরা যা করেছে, তা থেকে সংবাদমাধ্যমের যেকোনো পাঠক, শ্রোতা, দর্শকের জানা যে তালেবানি সংস্কৃতির সঙ্গে ধর্ম পালন বা ধর্মবিশ্বাসের কোনো সম্পর্ক নেই। এটি একটি চরম সাম্প্রদায়িক, ধর্মান্ধ ও নারীবিদ্বেষী রাজনৈতিক মতবাদ। এই মতবাদ নারীর সমমর্যাদা, সম্মান, শিক্ষা, কাজের অধিকারসহ সব স্বাধীনতাকে অস্বীকার করে। তালেবানরা ২০২১ সালে নতুনভাবে ক্ষমতা দখলের পর নারীদের শুধু গৃহবন্দী করেছে তা নয়, প্রাথমিক শিক্ষার পর তাদের উচ্চশিক্ষা লাভের অধিকার, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, শিক্ষা, চিকিৎসাসুবিধা এবং বাইরে কাজ করার অধিকার কেড়ে নিয়ে এক ভয়াবহ বৈষম্য-নির্যাতনের পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘উপাচার্যের পদে থাকা একজন দায়িত্বশীল শিক্ষাবিদ হিসেবে এসব তথ্য তার অজানা, তা বিশ্বাস করা যায় না। তাই তিনি যা বলেছেন, তা জেনেশুনে দায়িত্ব নিয়ে বলেছেন বলে মনে করা খুবই যুক্তিসংগত বলে আমরা মনে করি। আর তাকেও আমরা একজন নারীর প্রতি সব ধরনের বৈষম্য, নারীদের অসম্মান ও অমর্যাদা করা কিংবা নারীবিদ্বেষী মতাদর্শের সমর্থক বা উৎসাহদাতা বলেই বিবেচনা করতে পারি। এই উপাচার্য ২০২২ সালেও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের চরিত্র নিয়ে অশালীন মন্তব্য করেছিলেন। তখন জাহাঙ্গীরনগরের ছাত্র-শিক্ষকদের তীব্র প্রতিবাদের মুখে তিনি ভুল স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।’
উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমদের বক্তব্যকে ‘সাম্প্রদায়িক, অশালীন ও নারীবিদ্বেষী’ হিসেবে আখ্যায়িত করে যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে তার অপসারণ দাবি করেন বিবৃতিদাতারা। ভবিষ্যতে সংবিধানে স্বীকৃত নারীর সম-অধিকার ও মর্যাদাকে অসম্মানসূচক আচরণে অভিযুক্ত কোনো ব্যক্তি উপাচার্যের মতো সম্মানীয় ও দায়িত্বশীল পদে নিয়োগ না পান, তার জন্য অবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়ন করার দাবি করা হয়। অধ্যাপক ফরিদউদ্দিন আহমেদের মতো সাম্প্রদায়িক ও নারীবিদ্বেষী ব্যক্তিরা আর কোন কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ পেয়েছেন, তার একটি তালিকা প্রকাশের দাবিও জানানো হয় বিবৃতিতে।
এতে স্বাক্ষর করেন হামিদা হোসেন, সুলতানা কামাল, রাশেদা কে চৌধুরী, খুশী কবির, শিরীন হক, জেড আই খান পান্না, আনু মুহাম্মদ, ইফতেখারুজ্জামান, ফেরদৌস আজিম, সালমা আলী, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, রানা দাশগুপ্ত, শামসুল হুদা, স্বপন আদনান, সুমাইয়া খায়ের, রোবায়েত ফেরদৌস, তাসনীম সিরাজ মাহবুব, নাসরিন খন্দকার, সুব্রত চৌধুরী, কাজল দেবনাথ, তবারক হোসেইন, রাহনুমা আহমেদ, শহিদুল আলম, সারা হোসেন, জাকির হোসেন, মো. আশরাফ আলী, মিনহাজুল হক চৌধুরী, শাহাদাত আলম, শুভ্র চক্রবর্তী, সাইদুর রহমান, নুর খান, জোবাইদা নাসরীন, দীপায়ন খীসা, হানা শামস আহমেদ প্রমুখ।
০১ জানুয়ারি, ১৯৭০