সরকারের দুর্নীতি লুটপাটে অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে
সরকারের সীমাহীন দুর্নীতি-লুটপাটের ফলে দেশের অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে বলে দাবি করেছেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেন, দেশের জনগণ প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আধিপত্যবাদী অপশক্তির ষড়যন্ত্রের করালগ্রাসে প্রিয় মাতৃভূমি আজ চরম হুমকির মুখে। এ দেশের রাষ্ট্র ব্যবস্থায় ইসলাম প্রতিষ্ঠিত না থাকায় সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে, অন্যায় বেড়েছে। তাই ইসলামী সমাজ ব্যবস্থার পক্ষে জনমত গড়ে তুলতে হবে। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের উদ্যোগে গতকাল শনিবার রাজধানীর একটি মিলনায়তনে রুকন (সদস্য) প্রার্থীদের নিয়ে দিনব্যাপী শিক্ষাশিবিরে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় এতে আরও উপস্থিত ছিলেন মহানগর দক্ষিণের নেতা আব্দুস সবুর ফকির, ড. আব্দুল মান্নান, এসএম কামাল উদ্দিন, ড. মোবারক হোসাইন, আব্দুস সালাম, আব্দুস সাত্তার সুমন, শাহীন আহমদ খান, আব্দুর রহিম জীবন, মু. মুজিবুর রহমান, হাবিবুর রহমানসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা।
১২ মে, ২০২৪

ড. এম শামসুল আলম এর নিবন্ধ / দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের রাজনৈতিক অর্থনীতি
স্বাধীনতার পরপরই যে বিষয়টি একটি রাষ্ট্রের মৌলিক বিষয় হিসেবে সংবিধানে প্রাধান্য পায়, তা হলো বাংলাদেশ প্রজাতন্ত্র। অর্থাৎ রাষ্ট্রের মালিক জনগণ। তার প্রাকৃতিক সম্পদের মালিকও জনগণ। প্রাকৃতিক সম্পদের মধ্যে এ দেশে প্রধানত জ্বালানি সম্পদই গুরুত্বপূর্ণ। অন্যান্য খনিজসম্পদ লোহা, রুপা, তামা— এ জাতীয় খনিজ সম্পদ না থাকালেও রয়েছে গ্যাস ও কয়লা। উৎপাদন ব্যয় ও এর বাজারমূল্য বিবেচনায় লাভজনক না হওয়ায় কয়লা উত্তোলনের বিষয়টি অতীতে সামনে আসেনি। কয়লার ব্যবহারও সেভাবে গুরুত্ব পায়নি। তাই জ্বালানি আমদানি ব্যয় সাশ্রয়ের জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদনে দেশজ গ্যাসের ব্যবহার প্রাধান্য পায়। অতঃপর বাপেক্স পুনর্গঠন হয় এবং গ্যাস অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেশীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে তারা পায়।  সংবিধানের ১৪৩ ধারার বিধানমতে প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক প্রজাতন্ত্র। প্রজাতন্ত্রের মালিক ৭ ধারা অনুযায়ী জনগণ। এ হিসেবে প্রাকৃতিক সম্পদের মালিকানা জনগণের হাতে চলে আসে। ১৩ ধারা মতে উৎপাদন যন্ত্র ও বণ্টন প্রণালি চলে আসে রাষ্ট্রীয় মালিকানায়। সেই হিসেবে বিদ্যুৎ উৎপাদন-বণ্টন-বিতরণ ১৯৭২ সালে প্রেসিডেন্সিয়াল অর্ডারের আওতায় রাষ্ট্রীয় মালিকানায় চলে আসে এবং পিডিবি প্রতিষ্ঠিত হয়। অবশ্য ১৯৭৩ সালে পিএসসির আওতায় অগভীর সমুদ্রে তেল অনুসন্ধানের একটি উদ্যোগ নেওয়া হয়। সে উদ্যোগ সফল হয়নি। স্বাধীনতার আগে যেসব গ্যাসক্ষেত্র বিদেশি কোম্পানির হাতে ছিল সেসবই ক্রয়সূত্রে রাষ্ট্রীয় মালিকানায় আনা হয়। ১৯৭৪ সালে পেট্রোলিয়াম অ্যাক্টের আওতায় পেট্রোবাংলা গঠন করে তার মাধ্যমে জ্বালানি সম্পদে রাষ্ট্রীয় মালিকানা সুপ্রতিষ্ঠিত করা হয়। এরপর পেট্রোবাংলাকে অধিকতর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে এর চেয়ারম্যানকে সচিবের মর্যাদা দেওয়া হয় এবং এ পদে আনা হয় জ্বালানি বিষয়ে অভিজ্ঞ ও বিশেষজ্ঞ ড. হাবিবুর রহমানকে। গ্যাস তথা জ্বালানি খাতের এই নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলাকে আমলাতন্ত্রের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করে স্বশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা চলে। ফলে পেট্রোবাংলার শাসন ও প্রফেশনাল ক্ষমতায়ন নিশ্চিত হয়।  অন্যদিকে পরিকল্পনা কমিশনের মাধ্যমে প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা সুসংহত করা হয়। এ পরিকল্পনা কার্যক্রমে রেহমান সোবহান, অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ, অধ্যাপক আনিসুর রহমানের মতো বিদগ্ধ অর্থনীতিবিদদের বিভিন্নভাবে সমবেত করা হয়েছিল। রাষ্ট্র/সরকারপ্রধান হিসেবে বঙ্গবন্ধু এসব বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রক্ষা করতেন, তাদের মতামত নিতেন। মূলত রাষ্টের সকল উন্নয়ন কার্যক্রম পরিকল্পনা কমিশনের অওতায় সুসমৃদ্ধ পরিকল্পনামাফিক যেন হতে পারে, তা নিশ্চিত হয়। এই পরিকল্পনার বিষয়টি সার্বিকভাবে বুদ্ধিজীবী ও বিশেষজ্ঞদের ওপর নির্ভরশীল। প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা এভাবে শুরু হয় এবং এর বাস্তবায়ন এভাবেই চলতে থাকে। এ পকিল্পনায় প্রথমিক জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাত উন্নয়ন বিশেষভাবে গুরুত্ব পায়।  ১৯৭৫ সালে যখন বিয়োগান্তক পথে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হলো, তখন বিভিন্ন ক্ষেত্রে জনস্বার্থবিরোধী নানা পরিবর্তন এসেছে। এর মধ্যে জ্বালানি খাতে আনীত পরিবর্তনগুলো সবচেয়ে মারাত্মক হিসেবে আমাদের কাছে প্রতীয়মান হয়। স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে পেট্রোবাংলার যে ক্ষমতা ছিল, সে ক্ষমতা খর্ব করা হয়। পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান পদে আসীন হতে থাকেন জ্বালানি বিষয়ে অভিজ্ঞ ও বিশেষজ্ঞের পরিবর্তে প্রশাসনিক ক্যাডারের যুগ্ম সচিবরা। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদেও আনা হতে থাকে ক্যাডার সার্ভিসের কর্মকর্তাদের। বিদ্যুৎ খাতেও অনুরূপ ঘটনা ঘটে। পরিকল্পনা কমিশনের নিয়ন্ত্রণ চলে আসে অভিজ্ঞ ও খ্যাতিমান বিশেষজ্ঞের পরিবর্তে সচিবদের হাতে। উন্নয়ন পরিকল্লনা প্রণয়নে জড়িত হন বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কনসালটেন্ট বা কনসালটিং ফার্ম। অর্থায়ন হতে থাকে বিশ্বব্যাংক, এডিবির মতো আর্থিক সংস্থা থেকে।  পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় যেসব উন্নয়ন প্রকল্পে বিদেশি অর্থায়নের বিষয় ছিল, সেসব প্রকল্প কার্যক্রম বিশ্বব্যাংক, এডিবি ও আইএমএফ বিভিন্নভাবে নিয়ন্ত্রণে আনে। সে নিয়ন্ত্রণে পরিকল্পনা কমিশন, মন্ত্রণালয় এবং পেট্রোবাংলা ও পিডিবির মতো সংস্থাকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় আনা হয়। এরা সমন্বিতভাবে তাদের হয়ে তাদের কাজ করতে থাকে। তাতে সরকারের কাঠামোগত চরিত্র বদলে যায়। অর্থনীতি নাকাল হয়। জনস্বার্থ খাবি খায়। পরিকল্পনায় উন্নয়ন প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়নে সরকারি ও বিদেশি আর্থিক সংস্থার অর্থপ্রবাহে অসংগতি ও সমন্বয়হীনতার কারণে বিভিন্ন ধরনের ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয় এবং  প্রকল্প বাস্তবায়ন অদক্ষতা ও ব্যর্থতার শিকার হয়। পাশাপাশি জাতীয় আর্থিক সমৃদ্ধি অর্জনে স্বনির্ভর অর্থনীতি অনুসরণ না করে বিদেশি সাহায্য ও সহযোগিতানির্ভর অর্থনীতি অনুসরণে পরিকল্পনা কমিশন ও অর্থ মন্ত্রণালয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এভাবেই বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত বিদেশি আর্থিক সংস্থার নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য স্বাধীন ও স্বনির্ভর অর্থনীতি নির্মাণ। কোনো স্বাধীন দেশের এ লক্ষ্য অর্জনে মৌলিক নিয়ামক তার প্রাকৃতিক সম্পদ ও এ সম্পদে তার জনগণের মালিকানা এবং ব্যবহারের শতভাগ নিশ্চয়তা। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় আমরা এখনো তা নিশ্চিত করতে পারিনি। তাই জ্বালানি ও বিদ্যুতের রাজনৈতিক অর্থনীতি স্পষ্ট হওয়া জরুরি। পিএসসি সম্পাদনে দর কষাকষিতে অনেক ক্ষেত্রেই জনস্বার্থ রক্ষা করা যায়নি। মাগুরছড়া গ্যাসফিল্ড উন্নয়নে সম্পাদিত পিএসসি চুক্তি বাতিল হওয়ার পর অক্সিডেন্টালের সঙ্গে সম্পাদিত সম্পূরক চুক্তি, এ গ্যাসফিল্ড বিস্ফোরণের ক্ষতিপূরণ না পাওয়া,  ছাতক ও ফেনী গ্যাসফিল্ড প্রান্তিক/পরিত্যক্ত হিসেবে নাইকোর সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি (জেভিএ) এসব ক্ষেত্রে প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্যে বিদেশি কোম্পানির পক্ষে বিদেশি সংস্থা ও সরকারের চাপ ছিল। সে চাপের কাছে সরকারকে নতিস্বীকার করতে হয়েছে। জনস্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে জনগণের প্রতিরোধের মুখে পরিশেষে আইওসি পাইপলাইনে গ্যাস রপ্তানি করতে পারেনি। সাগরের দুটি ব্লকের গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদনের ব্যাপারে আইওসির সঙ্গে সম্পাদিত পিএসসিতে এলএনজি হিসেবে গ্যাস রপ্তানির সুযোগ দিতে হয়েছে। আইওসির গ্যাস কেনা একক ক্রেতা হিসেবে সরকারের জন্য বাধ্যতামূলক হলেও তৃতীয় পক্ষের নিকট সে গ্যাস বেশি দামে বিক্রি করার সুযোগ আইওসি’কে দিতে হয়েছে। সাংগু গ্যাসফিল্ডের গ্যাস তৃতীয় পক্ষের নিকট বেশি দামে বিক্রি করা সম্ভব না হওয়ায় সে গ্যাস তৃতীয় পক্ষ হিসেবে পিডিবিকে দিয়ে ৪.৫০ ডলার দামে কিনিয়ে আইওসিকে লাভবান করতে হয়েছে। অথচ সরকারের পক্ষে একক ক্রেতা হিসেবে ২.৯ ডলার দামে এ গ্যাস কিনেছে পেট্রোবাংলা।  অন্যদিকে গ্যাসের চাহিদা অবদমিত হলে বিদেশি কোম্পানির মালিকানায় গ্যাস ও গ্যাসজাত পণ্য (সার, সিমেন্ট, ইস্পাত)  রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টি হবে।  সেই বিবেচনায় জ্বালানিনির্ভর শিল্পের বিকাশ ও উন্নয়নে বাধা হয়ে দাঁড়ায় বিশ্বব্যাংক ও এডিবির মতো সব আর্থিক সংস্থা। সে বাধা অতিক্রম করা সরকারের পক্ষে সম্ভব হয়নি। ১৯৯০ সালের পরে নতুন সার কারখানা গড়ে ওঠেনি। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ইস্পাত কারখানা টিকে থাকতে পারেনি। ছাতক সিমেন্ট কারখানা মৃতপ্রায়। বিপরীতে বিদেশি মালিকানাধীন রপ্তানিমুখী কাফকোর সারকারখানা ও লাফার্জের সিমেন্ট কারখানা হয়েছে। তাতে আমরা নিরবচ্ছিন্নভাবে কম দামে গ্যাস জোগান দিচ্ছি। উৎপাদিত সিমেন্ট ও সার বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। একদিকে আইওসির নিকট থেকে বেশি দামে গ্যাস কিনে আইওসিকে স্ফীত মুনাফা লাভের সুযোগ দিচ্ছি, অন্যদিকে সার ও সিমেন্ট উৎপাদনে কমদামে লোকসানে গ্যাস দিয়ে বিদেশি মালিকানাধীন রপ্তানিমুখী ওই সব কোম্পানিকে অধিক মুনাফা করার সুযোগ দিয়েছি।  ২০০৫ সালের পর আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দাম বাড়ায় কাফকোর কাছে গ্যাস বিক্রির লোকসান মোকাবিলা করা সম্ভব হয়। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজার দরে কাফকোর কাছ থেকে এ সার কিনে নিতে হয়।  কাফকোকে গ্যাস না দিয়ে একই গ্যাসে নিজেরাই সার উৎপাদন করলে আমরা অধিক লাভবান হতাম। সার আমদানি ব্যয় কমত। বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হতো। কৃষি খাতে ভর্তুতি অনেক কমিয়ে আনা যেত। সার থেকে পাওয়া আর্থিক লাভ কৃষিতে ব্যবহৃত ডিজেল ও বিদ্যুতের ভর্তুকিতে সমন্বয় হতো। কৃষি আর্থিকভাবে সাবলম্বী হতো। একইভাবে সরকারি মালিকানায় ইস্পাত ও সিমেন্ট উৎপাদন হলে উৎপাদন ব্যয় কম হওয়ায় কম দামে আমরা ইস্পাত ও সিমেন্ট পেতাম। তাতে কম খরচে ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন হতো। জীবনযাত্রার ব্যয় নিয়ন্ত্রণ সহজ হতো এবং তা হতো সমৃদ্ধ অর্থনীতি গড়ার ক্ষেত্রে অন্যতম নিয়ামক।  প্রয়োজনীয় সংস্কারের মাধ্যমে উন্নত প্রযুক্তির সম্পৃক্তিতে সার, সিমেন্ট ও ইস্পাত কারখানাগুলো সম্প্রসারণ ও উৎপাদন দক্ষতা বাড়িয়ে লাভজনক করার কোনো উদ্যোগ সরকার নিতে পারেনি। বিশ্বব্যাংক, এডিবি, আইএমএফ তা হতে দেয়নি। বরং ২০০৫ সালে তারা টাটার রপ্তানিমুখী সার, ইস্পাত, কয়লা ও আইপিপি প্রকল্পকে প্রমোট করেছে। সেখানেও অত্যন্ত কম দামে লোকসানে নিরবচ্ছিন্নভাবে ২.১৪ টিসিএফ গ্যাস দিতে হতো। জনগণের প্রতিরোধের মুখে এ প্রকল্প আলোর মুখ দেখেনি।  কথিত বিদেশি বিনিয়োগের নামে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বহুজাতিক ও বিদেশিদের প্রমোট করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় এগুলো এসেছে রাজনৈতিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে। এসব কিছুই এসেছে ১৯৭৫ সালের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর। এগুলোর সবকিছুই সামরিক সরকারের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে প্লান্টেশন হয়েছে। পরে তার ধারাবাহিকতা রক্ষিত হয়েছে। এভাবে বিশেষ করে দেশীয় জ্বালানি নির্ভর শিল্পকে দাতাসংস্থার পরামর্শে বিপদের মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে বেসরকারিকরণের নামে বিদেশি মালিকানাধীন রপ্তানিমুখী জ্বালানিনির্ভর শিল্পকারখানাকে প্রমোট করা হয়েছে।  অন্যান্য উৎপাদনমুখী শিল্প যেমন পাটশিল্পে গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে চূড়ান্ত বিপর্যয় এসেছে। লোকসানের অজুহাতে এ শিল্পকেও বেসরকারিকরণের নামে হঠাৎ এক ফ্যাক্সের সূত্রে বন্ধ করে দেয়া হলো।  যখন এগুলো রিভিউয়ের কথা বলা হলো, তখন জানা গেল পাট মন্ত্রণালয় এসবের কিছুই জানে না। অথচ জুট করপোরেশনের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত/যুগ্ম সচিব)-এর নির্দেশে পাঠানো একটি ফ্যাক্সে এমন অঘটন ঘটে গেল। পাটকল সরকারের হাত ছাড়া হয়ে গেল। অথচ সরকারের কিছুই বলার থাকল না।  প্রতিকারও হলো না।  এই পাটখাতের অনুরূপ বিদ্যুৎ খাতেরও ওই একই অবস্থা। এভাবেই ১৯৯৩ সালে সচিবের সভাপতিত্বে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব ও উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সভায় বিদ্যুৎ খাত সংস্কারের সিদ্ধান্ত হয়। এই সিদ্ধান্তের সূত্রে বিদ্যুৎ খাত বেসরকারিকরণের পথ ধরে দেশি/বিদেশি ব্যক্তি/গোষ্ঠীর হাতে চলে গেল। দেশের সংবিধান, আইন, সরকার, সংসদ, মন্ত্রিপরিষদ ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে বসে রইল।  এভাবেই স্বাধীন দেশে সাংবিধানিকভাবে দেশের সম্পদ ও উৎপাদনব্যবস্থা জনগণের মালিকানায় থাকার যে বাধ্যবাধকতা ছিল, তা লঙ্ঘন করে বা বলা যায় জনগণের কর্তৃত্ব খর্ব করে বেসরকারিকরণের নামে দেশি-বিদেশি ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে বা তুলে দেওয়ার পথ  প্রশস্ত করা হয়েছে।  এ সংস্কার প্রস্তাব ও পরিকল্পনা ছিল বিশ্বব্যাংকের। তাতে অর্থও জুগিয়েছে বিশ্বব্যাংক। ১৯৯৬ সালে আইপিপির আওতায় বিদেশি ব্যক্তি খাত বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ শুরু হলো। সলিসিটেড বিডিংয়ের মাধ্যমে ময়মনসিংহে আরপিসিএনের বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং বাঘাবাড়ীতে ওয়েস্টমন্টের বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ হলো। এসব আইপিপির বিদ্যুৎ কিনতে হলো সরকারি খাতের বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় অপেক্ষা অনেক বেশি দামে। ফলে বিদ্যুৎ খাত আর্থিক ঘাটতির শিকার হলো।  আইপিপির বিদ্যুৎ যে দামে কেনা হয়, সে দাম অপেক্ষা অধিক দামে ২০০৩ সালে ক্ষুদ্র প্লান্টের বিদ্যুৎ ব্যক্তি খাত থেকে কেনা শুরু হলো। সরকারি খাতে বিশ্বব্যংকের আর্থিক সহায়তায় কেবলমাত্র পিকলোড প্লান্ট হতে থাকল। ব্যক্তি খাত বিনিয়োগ আকর্ষনের অজুহাতে সরকারি খাতে নতুন বেজলোড প্লান্ট নির্মাণ না করায় একদিকে চাহিদা বৃদ্ধির বিপরীতে কমদামি বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি হলো না, অন্যদিকে গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ বৃদ্ধি হলো দামি পিকিংপ্লান্ট বিদ্যুৎ ও ব্যক্তি খাত বিদ্যুতে। বিদ্যুতের মূল্যহার সে অনুপাতে বৃদ্ধি না হওয়ায় আর্থিক ঘাটতি আরও বাড়ে। আর্থিক ঘাটতির পাশাপাশি চাহিদা বৃদ্ধির অনুপাতে উৎপাদন/সরবরাহ বৃদ্ধি না হওয়ায় বিদ্যুৎ ঘাটতিও ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে থাকে। ২০০৫ সালে বিদ্যুৎ ঘাটতি সংকটে পরিণত হয়। ২০০৬ সালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির সিদ্ধান্ত মতে ব্যক্তি খাত থেকে ভাড়া প্লান্টের বিদ্যুৎ আরও বেশি দামে কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়।  সে উদ্যোগ জনগণের আপত্তির মুখে সফল হয়নি। তবে জরুরি অবস্থার সুযোগ নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তা বাস্তবায়ন হয়। এ বিদ্যুৎ গ্রিডে আসে। বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধি মোকাবিলা মূলত এই বিদ্যুতের উৎপাদন ও সরবরাহ বৃদ্ধি আজ অবধি অব্যাহত রয়েছে। সেই সঙ্গে পরবর্তী সময়ে দ্রুত ভাড়া প্লান্টের বিদ্যুৎ আগের দাম অপেক্ষা আরও অধিক দামে কেনা হয়েছে। ফলে আর্থিক ঘাটতি আরও বেড়েছে। এ ঘাটতি মোকাবিলায় বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির জন্য বিশ্বব্যাংকের চাপ এখন প্রকট। বিশ্বব্যাংক বিদ্যুাৎ উৎপাদন খাতকে সরকারি খাত থেকে যেমন ব্যক্তি খাতে নিয়ে যেতে তৎপর, তেমন ব্যক্তিখাতের যেন স্ফীত মুনাফা নিশ্চিত হয় সে জন্য বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির ব্যাপারে আরও তৎপর। যে কারণে বাজেটে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ভর্তুকি বাবদ কোনো অর্থ বরাদ্দ নেই।  বিদ্যুৎ সংকট আকস্মিকভাবে দেখা দেয়নি, ধীরে ধীরে পুঞ্জীভূত হয়েছে। এ সংকট অপরিহার্য বা অবশ্যম্ভাবি ছিল না। আবার সংকট মোকাবিলায় ব্যক্তিখাতের ওপর নির্ভর না করে সরকারি খাতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সুযোগ ছিল। তাহলে ব্যক্তি খাতে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করায় গ্যাস স্বল্পতার কারণে সরকারি খাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ রাখার মতো পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হতো না। তাছাড়া তেল-বিদ্যুতের পরিবর্তে গ্যাস-বিদ্যুতে সংকট মোকাবিলা করার সুযোগ ছিল। তা সত্ত্বেও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সরকারি খাতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাস সরবরাহ বৃদ্ধি আদৌ গুরুত্ব পায়নি। বরং গ্যাসের অবৈধ সংযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই সার্বিক বিবেচনায় বলা যায়, বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যক্তি খাতের প্লান্টেশন এবং মুনাফা অর্জনের টেকসই ব্যবস্থা প্রবর্তনের উদ্দেশ্যে আজকের এই বিদ্যুৎ সংকট এবং সংকট মোকাবিলায় ভাড়া-বিদ্যুৎ ও তেল-বিদ্যুৎ। তা না হলে বিদ্যুৎ উৎপাদনে তরল জ্বালানির ব্যবহার ও তার মূল্যবৃদ্ধিকে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির একমাত্র কারণ হিসেবে গণ্য করা হতো না।     বিদ্যুৎ খাত সংস্কারের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছিল, সরকারি খাতের পাশাপাশি এ খাত উন্নয়নে ব্যক্তি খাত বিনিয়োগ নিশ্চিত করা এবং উভয়ের জন্য এ খাতকে প্লেইং ফিল্ড হিসেবে একই রকম লেভেল করা। বাস্তবে দেখা গেল, সরকারি খাতের বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ রেখে ব্যক্তি খাত উৎপাদনে জ্বালানি সরবরাহ করা হয়েছে। আবার ব্যক্তি খাত উৎপাদন করুক না করুক ক্যাপাসিটি পেমেন্ট বাবদ তাকে ঠিকই লাভবান করা হয়েছে। সরকারি খাতের বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করা রেগুলেটরি কমিশনের এখতিয়ারভুক্ত হলেও ব্যক্তি খাতের ক্ষেত্রে নয়। ফলে ব্যক্তি খাত বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় অত্যধিক হয়। সলিসিটেড বিডিংয়ের অজুহাত দেখিয়ে ব্যক্তি খাতকে রেগুলেটরি আওতাবহির্ভূত রাখা হয়। যদিও সরকারি খাতে প্লান্ট নির্মাণ সলিসিটেড বিডিংয়ের আওতায় হয়। তাছাড়া বিদ্যুৎ খাতকে সংস্কারের আওতায় বিভাজিত করে নানা রকম বিতরণ, সঞ্চালন ও উৎপাদন কোম্পানি করা হয়েছে এবং হচ্ছে। যেসব কোম্পানি বাণিজ্যিক বিবেচনায় লাভজনক, শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে তাদের মালিকানা ব্যক্তির হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। অলাভজনক বা লোকসান কোম্পানি/সংস্থা সরকারের হাতে থেকে যাচ্ছে। ভর্তুকি দিয়ে সরকার তা চালাচ্ছে। এভাবেই সংস্কারের আওতায় ব্যক্তিখাত প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনে সরকারি খাতকে প্রান্তিক/বিলুপ্তির দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।  বিদ্যুৎ খাতের অনুরূপ পরিস্থিতি গ্যাস খাতেরও। বলা হয়, গ্যাস খাত উন্নয়নে সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানির বিনিয়োগ সক্ষমতা নেই। তাই পিএসসির আওতায় আইওসির মাধ্যমে স্থলভাগের গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদন করতে হয়। ২০০৮ সালে বিইআরসি’র গণশুনানিতে প্রতীয়মান হয়, সরবরাহকৃত গ্যাসে আইওসির গ্যাসের পরিমাণ ২০০৩ সালে ২০ শতাংশ হলেও ২০০৮ সালে সে পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল ৪৮ শতাংশ। এমতাবস্থায় যদি দেশি কোম্পানির গ্যাসের সরবরাহ বৃদ্ধি না হয়, তাহলে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে না। তাই বিআরসির মাধ্যমে ভোক্তারা প্রতি গ্যাস বিলের সঙ্গে প্রতি মাসের বিলের ১০.৪১ শতাংশ বাড়তি অর্থ দিয়ে গ্যাস উন্নয়ন তহবিল গঠন করে। এ তহবিল ২০০৯ সাল থেকে কার্যকর হলেও ৩ বছর অবধি এ তহবিলের অর্থ কাজে লাগানোর ব্যাপারে মন্ত্রণালয় গড়িমসি করেছে। এরই মধ্যে স্থলভাগের গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদনের জন্য পিএসসি ২০১১ মাধ্যমে আইওসিকে সামনে আনার চেষ্টা চলেছে। আইওসির গ্যাস উৎপাদন বৃদ্ধি চেষ্টাও অব্যাহত থাকে। ইতিমধ্যে সরবরাহকৃত গ্যাসে আইওসির গ্যাসের পরিমাণ ৫৩-৫৪ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। প্রতিবছর গ্যাস উন্নয়ন তহবিলে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা জমা হলেও সরবরাহকৃত গ্যাসে দেশি কোম্পানির গ্যাসের অংশ বৃদ্ধির দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই।  জাতীয় তেল গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদন সংস্থা বাপেক্সের পুঁজি ছিল না। বিনিয়োগ সক্ষমতা ছিল না। তাই আইওসির ‘কামলা’ হিসেবে কাজ করেছে। বাপেক্স নিজেও অনুসন্ধানে যেতে পারেনি। আবার গ্যাস রপ্তানি চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে কোন কোন আইওসি দেশ ত্যাগ করে। পিএসসিভুক্ত গ্যাসফিল্ড অনুসন্ধানে অনেক আইওসি নামেনি। এভাবেই গোটা গ্যাস উৎপাদন ব্যবস্থাকে পঙ্গু করে ফেলা হয়। এ প্রভাব প্রকটভাবে পড়েছে বিদ্যুৎ উৎপাদনে। ১৯৭৫ সালের ধারাবাহিকতায় আজ অবধি গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদনে জনস্বার্থ সম্মত যেসব উদ্যোগ নেওয়া জরুরি ছিল। তার কোনো কিছুই নেয়া হয়নি। বরং সকল পর্যায় থেকে আইওসির স্বার্থ রক্ষার বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্ব পেয়েছে। জনস্বার্থ তছনছ হয়েছে।   ৭৫-এর আগে যে আদর্শ ও রাজনৈতিক কর্তৃত্বের অধীনে রাষ্ট্র পরিচালিত হচ্ছিল এবং যে সব দর্শন-নীতি-পরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমে যাত্রা হয়েছিল, তাতে জ্বালানি সম্পদ ব্যবস্থাপনায় কয়লা প্রাধান্য পায়নি। ৯০ দশকে বিকল্প জ্বালানি হিসেবে গ্যাসের পাশাপাশি কয়লা বিবেচনায় আসে এবং পরিকল্পনায় কয়লা খাত উন্নয়ন প্রাধান্য পায়। তবে বিশেষভাবে লক্ষণীয়, ১৯৬৮ সালে যে মাইনিং রুলস ছিল, সেটি সংবিধান পরিপন্থি। যদিও ১৯৭৪ সালে নতুনভাবে পেট্রোলিয়াম আইন করে তার আওতায় পেট্রোবাংলা সৃষ্টি করে তার ওপর তেল-গ্যাস উন্নয়ন ন্যস্ত করা হয়। কিন্তু কয়লা খাত উন্নয়নের বিষয়টি সামনে আসলেও সংবিধানসম্মত পেট্রোলিয়াম এক্টের অনুরূপ কয়লার ব্যাপারে কোনো অ্যাক্ট তৈরি হয়নি। পেট্রোবাংলার মতো অনুরূপ কোনো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানও তৈরি হয়নি। ওই মাইনিং রুলসের ভিত্তিতে কয়লা খাত উন্নয়নে হাত দেওয়া হয়। তবে ২০০৫ সালে ফুলবাড়ি ও বড়পুকুরিয়া এ দুটি কয়লাখনি যথাক্রমে এশিয়া এনার্জি ও টাটাকে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে রপ্তানির উদ্দেশ্যে রয়্যালটির বিনিময়ে নিজস্ব মালিকানায় কয়লা উত্তোলন করতে দেওয়ার জন্য কয়লানীতি প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। টাটা তাদের বিনিয়োগ প্রস্তাব প্রত্যাহার করলেও এশিয়া এনার্জির প্রশ্নে সে উদ্যোগ এখনো অব্যাহত রয়েছে। ইতিমধ্যেই ১২ বার প্রস্তাবিত কয়লানীতিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। তবে তাতে মৌলিক কোনো পরিবর্তন আসেনি এবং তা সংবিধানসম্মত হয়নি। কয়লা রপ্তানি, উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লাখনি উন্নয়ন, রয়্যালটির বিনিময়ে ব্যক্তি খাত বিনিয়োগকারীর কয়লার মালিকানা লাভ- এসব সুযোগ কয়লানীতিতে কোনো না কোনোভাবে রাখা হয়েছে। ফলে এ কয়লানীতি জনস্বার্থবিরোধী হওয়ায় গণপ্রতিরোধের সম্মুখীন। ওই মাইনিং রুলসের আওতায় ৬ শতাংশ রয়্যালটির বিনিময়ে ১৯৯৪ সালে আনসলিসিটেডভাবে বিএইচপিকে উন্নয়নের জন্য ফুলবাড়ি কয়লাখনি লিজ দেওয়া হয়। পরে এ লিজ এশিয়া এনার্জির নিকট হস্তান্তর হয়।  এশিয়া এনার্জি উন্মুক্ত পদ্ধতিতে এ খনি উন্নয়নের জন্য সরকারের নিকট পরিকল্পনা প্রস্তাব পেশ করে। পরিবেশ ও প্রতিবেশগত কারণে উন্মুক্ত খনি বাংলাদেশে অচল এই কারনে সরকারের কারিগরি বিশেষজ্ঞ কমিটি এ প্রস্তাব নাকচ করে। জনগণের আন্দোলন ও প্রতিরোধের মুখে কয়লানীতি যেমন হতে পারেনি, তেমন এশিয়া এনার্জির ফুলবাড়ি খনি উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রস্তাবও বাস্তবায়ন হতে পারেনি। আন্দোলনের মুখে সরকার ২০০৬ সালে বাংলাদেশে উন্মুক্ত খনি না করার ব্যাপারে ফুলবাড়ির জনগণের সঙ্গে লিখিত চুক্তিতে অঙ্গীকারবদ্ধ রয়েছে। তা ছাড়া এ আন্দোলনে আজকের প্রধানমন্ত্রী তথা তখনকার বিরোধীদলীয় মহাজোট নেত্রীর সমর্থন রয়েছে। তার পরেও এশিয়া এনার্জি এখনো তৎপর। জামালপুর, দিঘিপাড়া ও খালাশপীর খনির কয়লা উত্তোলনের কোনো উদ্যোগ নেই। আজকের বিদ্যুৎ সংকট সমাধানে কয়লা-বিদ্যুতের যদিও বিকল্প নেই। তবে কয়লা খাত উন্নয়নের ব্যাপারে আকার ও অবয়বহীন কোলবাংলা নামের একটি প্রতিষ্ঠান গঠিত হয়েছে। পিডিবির চেয়ারম্যান পদাধিকার বলে তার চেয়ারম্যান। এভাবে পুরো কয়লা খাত এখন প্রহসনের মধ্যে। যদি বিদেশি বিনিয়োগে কয়লা তুলতে হয়, তাহলে রয়্যালটির বিনিময়ে কয়লার মালিকানা তাদের দিতে হবে। সে কয়লা তাদের ইচ্ছামাফিক রপ্তানির সুযোগ দিতে হবে। তা না হলে তারা বিনিয়োগ করবে না। রপ্তানি করতে দিলে বিদ্যুৎ উৎপাদনে চাহিদামাফিক কয়লা পাব না। ফলে আমাদের জ্বালানি নিরাপত্তা বিপন্ন হবে। আমাদের উন্নয়নের অমিত সম্ভাবনা শেষ হয়ে যাবে। আমরা জ্বালানি বুভুক্ষুর মধ্যে আছি, মধ্যেই থেকে যাব। এর পরও এমন অবস্থা থেকে কেন আমরা বেরিয়ে আসতে পারছি না? এসবের কারণ বিশ্বব্যাংকের মতো সাহায্য সংস্থার প্রেসক্রিপশন, তাদের অদৃশ্য প্রেসার এবং তাদের হয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সরকারের মধ্যে যারা কাজ করছেন, তারা ওই সব কার্যক্রমকে মন্থর করেছেন, সুযোগমতো বাধা দিচ্ছেন। রাজনৈতিক যে সক্ষমতা দিয়ে জনগণের অধিকার রক্ষা করা ও অর্থনীতিকে স্বাবলম্বী করার ক্ষেত্রে যে নেতৃত্ব রাজনীতিবিদরা দেবেন, তারা সে সক্ষমতা দ্রুত হারাতে বসেছেন। রাজনৈতিক কর্তৃত্বের জায়গাগুলো হাতছাড়া হচ্ছে। সামরিক শাসন যতদিন চলেছিল রাজনীতিবিদরা বিচ্ছিন্ন ছিলেন। সামরিক শাসকরা অসামরিক জায়গা থেকে যেসব পরামর্শ পেয়েছেন, সব সময় সেগুলো বুঝে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা বলা যায় না, তারা অনেক ক্ষেত্রে বিভ্রান্ত হয়েছেন। তাদের ক্ষেত্রে এটিই সহজ ও স্বাভাবিক। জনগণের সঙ্গে যেহেতু তাদের সম্পর্ক থাকে না, সেহেতু জনস্বার্থ নিয়ে তাদের মাথাব্যথাও থাকে না। গণসন্তোষ-অসন্তোষে তাদের কিছু যায় আসে না। ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসার বিষয়ও তাদের বিবেচনায় থাকে না। ফলে জনগণের কথা বা আস্থা ও তাদের কল্যাণের বিষয়টি তাদের মধ্যে মুখ্য হিসেবে কাজ করে না।  সামরিক শাসনের দীর্ঘ ২০-২৫ বছর রাজনৈতিক সংস্কৃতি নির্বাসনে থাকার কারণে সরকারের রাজনৈতিক সক্ষমতার বিষয়টি আরও বেশি দুর্বল হয়ে পড়ে, গুণগত চরিত্র নষ্ট হয়। সেখানে আমলাতান্ত্রিক তথা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের প্রভাব বাড়ে। এরা বিভিন্নভাবে বিদেশি ঋণদাতা সংস্থার আজ্ঞাবহ দাসে পরিণত হয়। ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্নভাবে তাদের স্বার্থ রক্ষায় প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের ব্যবহার করতে থাকে। সভা-সেমিনার, বিদেশ ভ্রমণের মাধ্যমে তাদেরকে অধীনস্ত করে। বিভিন্ন সংস্থায় তাদের চাকরির ব্যবস্থা করে আরও বেশি কাছে টেনে নেয় এবং তাদের ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত করে প্রজাতন্ত্রের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করার সুযোগ নেয়। ঋণদাতা সংস্থার কথামতো সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে নিয়োগও হয় তাদেরই অনুগতদের।  এমন দুষ্টচক্র থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে পারিনি। এখান থেকে বের হয়ে আসার জন্য সরকারের যে নীতিগত অঙ্গীকার দরকার তাহলো ‘জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাত উন্নয়ন রাষ্ট্রীয় মালিকানায় করব।’ সে অঙ্গীকার না থাকায় এ জায়গায় হাত দিচ্ছে না বা হাত পড়ছে না। বিদেশি ঋণদানকারী সংস্থা বিভিন্নভাবে সরকারকে বেঁধে ফেলেছে। এ জায়গা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য দরকার রাজনৈতিক সক্ষমতা। এটি না থাকলে অর্থনৈতিক সক্ষমতা অর্জন করা যায় না।  বিদ্যুৎ কেনায় কারণে ব্যক্তি খাতকে যে টাকা ক্যাপাসিটি পেমেন্ট দিতে হচ্ছে প্রতিবছর। তা দিয়ে বছরে ১ হাজার মেগাওয়াটরে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যেত। গ্যাস উন্নয়ন তহবিল যথাযথভাবে ব্যবহার করা গেলে বছরে ১০টি কূপ খনন করা যেত। সেখান থেকে গ্যাস আনা গেলে গ্যাসের অভাবে যে বিদ্যুৎকেন্দ্র  চালানো যাচ্ছে না, তা চালানো যেত। বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত জ্বালানি তেলের শুল্ক, ভ্যাট ও করমুক্ত করে উৎপাদন ব্যয় কমিয়ে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে রাখা যেত। সিএনজি খাতের উদ্বৃত্ত অর্থ জ্বালানি অনুসন্ধান ও উৎপাদনে বিনিয়োগ করা যেত। এসবের কোনো কিছুই আমরা করতে পারিনি। কেবল ব্যক্তি খাত থেকে কেনা গ্যাস ও বিদ্যুৎ বিল পরিশোধে ঘাটতি মোকাবিলায় রাষ্ট্রীয় কোষাগারের অর্থ ঢেলে চলেছি। পাশাপাশি বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি বিশ্বব্যাংকের চাপে অব্যাহত রেখেছি। আমাদের অর্থনৈতিক সক্ষমতা ছিল না বা নেই, এমন কথা মানতে রাজি নই। আমাদের রাজনীতি ও অর্থনীতিকে জিটুজি করে ফেলা হয়েছে। আমাদের ইনটেলিকচুয়াল এবিলিটিকে অলস ও নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। আমাদের বিশেষজ্ঞরা, ইঞ্জিনিয়াররা বিদেশি প্রতিষ্ঠানে কাজ করছে। এরা যখন তাদের হয়ে কাজ করে, তখন তারা লাভবান হয়। অথচ আমাদের হয়ে কাজ করলে আমাদের লোকসান হয়। কেন? এ এক অদ্ভূত রহস্য। খাদ্যের জন্য লড়াই সভ্যতার এক প্রাচীনতম ক্ষত। খাদ্যের জন্য লড়ায়ের পাশাপাশি আজকের আধুনিক সভ্যতার জ্বালানি ও বিদ্যুতের জন্য লড়াই এক গভীরতম ক্ষত। এ উপমহাদেশে আমরা এ লড়াইয়ে এগিয়ে আছি। জ্বালানি ও বিদ্যুতের রাজনৈতিক অর্থনীতি পরিষ্কার করার ওপরই নির্ভর করছে এ লড়ায়ের চূড়ান্ত সফলতা। ড. এম শামসুল আলম: জ্বালানি বিশেষজ্ঞ; বর্তমানে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল অনুষদের ডিন 
১২ মে, ২০২৪

সরকারের দুর্নীতি-লুটপাটে অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে : জামায়াত
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, সরকারের সীমাহীন দুর্নীতির ফলে ব্যাংক লুট হচ্ছে, দেশের অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে। দেশের জনগণ তাদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। শনিবার (১১ মে) ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের উদ্যোগে রাজধানীর একটি মিলনায়তনে রুকন (সদস্য) প্রার্থীদের নিয়ে দিনব্যাপী শিক্ষাশিবিরে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, আধিপত্যবাদী অপশক্তির ষড়যন্ত্রের করালগ্রাসে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি আজ চরম হুমকির মুখে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের একমাত্র রক্ষাকবচ হচ্ছে ইসলাম। অথচ এদেশের রাষ্ট্রব্যবস্থায় ইসলাম প্রতিষ্ঠিত না থাকায় সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে, অন্যায় বেড়ে গেছে। এমতাবস্থায় এদেশের মাটি ও মানুষকে রক্ষা করতে জামায়াতে ইসলামীর রুকন প্রার্থীসহ সব জনশক্তিকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। ইসলামী সমাজব্যবস্থার পক্ষে জনমত গড়ে তুলতে হবে। ইসলামের আদর্শের দাওয়াত ঢাকা মহানগরীর প্রত্যেক ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে হবে। আল্লাহর তাওহিদের দাওয়াত নিয়ে এই তিলোত্তমা নগরীর প্রত্যেক অলিগলি মুখরিত রাখতে হবে। মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, জামায়াতে ইসলামীর রুকন প্রার্থীদের নিজেদের সর্বোচ্চ উজাড় করে আন্দোলনকে বিজয়ী করতে প্রচেষ্টা চালাতে হবে। মানুষকে আল্লাহর পথে আহ্বান করা একটি ফরজ ইবাদত। তাই সমাজের সব মানুষের কাছে ইসলামের সু-মহান আদর্শের দাওয়াত পৌঁছিয়ে দিতে হবে। বিশেষ করে নিজেদের আওতাধীন সব ব্যক্তির ওপর দ্বীনের দাওয়াত দেওয়া অবশ্যক। পরিবারের কর্তা তার স্ত্রী-সন্তানদের, প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা তাদের অধীনস্থ কর্মকর্তা কর্মচারীদের, এলাকার মেম্বার-কমিশনার, চেয়ারম্যান, এমপি, মন্ত্রী কিংবা শাসকগণ যার যার অধীনস্থ সবাইকে সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ প্রদান করে ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয়ের জন্য দাওয়াত দেবেন।   সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এদেশে ইসলামী সমাজ বিনির্মাণের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। একটি সুন্দর সমাজ বিনির্মাণের জন্য একদল যোগ্য ও দক্ষ লোকের প্রয়োজন। ফলে সেই দক্ষ ও যোগ্য লোক তৈরির জন্যই আজকে রুকন প্রার্থীদের দিনব্যাপী শিক্ষা শিবিরের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, আমাদের প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশে ইসলামী বিপ্লবকে ত্বরান্বিত করতে একদল দক্ষ, যোগ্য ও আদর্শের জন্য পাগলপারা কর্মী বাহিনী প্রয়োজন। তড়িঘড়ি করে মঞ্জিলে পৌঁছে যাওয়া আমাদের লক্ষ্য নয়। তাই ইসলামী জীবন-বিধান গ্রহণ ও তা বাস্তবায়নের মন মানসিকতা সম্পন্ন কাঙ্ক্ষিতমানের কর্মীবাহিনী গঠন করে আমরা আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছুতে চাই। শিক্ষাশিবিরে আরও উপস্থিত ছিলেন মহানগর দক্ষিণের নায়েবে আমির আব্দুস সবুর ফকির, সহকারী সেক্রেটারি ড. আব্দুল মান্নান, কর্মপরিষদ সদস্য এস এম কামাল উদ্দিন ও ড. মোবারক হোসাইন, আব্দুস সালাম, জামায়াত নেতা আব্দুস সাত্তার সুমন, শাহীন আহমদ খান, আব্দুর রহিম জীবন, মু. মুজিবুর রহমান, হাবিবুর রহমানসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।
১১ মে, ২০২৪

অর্থনীতি উত্তরণে গাঁজা চাষে ঝুঁকছে পাকিস্তান
নানা সংকটে জর্জরিত পাকিস্তান। দেশটি অর্থনৈতিক উত্তরণে পথ খুঁজছে। এজন্য গাঁজা চাষে ঝুঁকছে তারা। এমনকি গাঁজা বাণিজ্যের জন্য ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করছে পাকিস্তান। বুধবার (০৮ মে) আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।  প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তান প্রায় চার বছর আগে শিল্পখাতে গাজা ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে। বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে বিকাশমান বাজারের সুযোগ নিতে চাচ্ছে দেশটি। এজন্য গেল ফেব্রুয়ারিতে প্রেসিডেন্সিয়াল আদেশের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো গাঁজা নিয়ন্ত্রণ ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে পাকিস্তান। ২০২০ সালে দেশটিতে গাজা ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়া হলেও অভ্যন্তরীণ জটিলতায় নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ গঠনের পদক্ষেপ থেমে ছিল।   বিশেষ বিনিয়োগ সুবিধা কর্তৃপক্ষের এক সিনিয়র কর্মকর্তা জানান, আমরা এ উদ্যোগ নিয়ে খুব তৎপর। সবকিছু খুব দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। তিনি বলেন, নতুন জোট সরকার নীতি, উৎপাদনকারী ও বিক্রেতাদের লাইসেন্স প্রদান ও চাষের অঞ্চল নির্দিষ্ট করতে নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ গঠন করেছে। দেশটিতে বিনিয়োগ আকর্ষণ ও অর্থনীতি উত্তরণে সরকারের উদ্যোগ বাস্তবায়ন করে এ বিভাগ। ভারতের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, পাকিস্তান বৈশ্বিক গাঁজার বাজারে প্রবেশ ও উৎপাদনের অনুকূল পরিবেশ সদ্বব্যবহারে আগ্রহী। ২০২২ সালে গাঁজার বৈশ্বিক গাজার বাজার ছিল ২৭ দশমিক দুই বিলিয়ন ডলার। ২০২৭ সালে এ বাজার বেড়ে ৮২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। দেশটি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)এবং অন্যান্য বিদেশি ঋণ সহায়তা পেতে রফতানি আয় ও কর বাড়ানোর উদ্বোগ নিচ্ছে।  পাকিস্তান ও আফগানিস্তান সীমান্তে গাজার উন্মুক্ত চাষ ও বিক্রি হয়ে থাকে। ঔষধি এ গাছটি উত্তর ও পশ্চিম পাকিস্তানে চাষের পরিবেশ রয়েছে। ১৯৭০ এর দশকে স্থানীয় গাজার দোকানগুলো বেশ জনপ্রিয় ছিল। কিন্তু ১৯৮০ এর দশকে সামরিক শাসক জেনারেল জিয়াউল জক গাজার ব্যবহার নিষিদ্ধ করেন।  নতুন করে নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ গঠনের ফলে চিকিৎসায় গাজার ব্যবহারের সুযোগ বাড়বে। এছাড়া এ গাছ রশি, কাপড়, কাগজ এবং নির্মাণ সামগ্রীতেও ব্যবহার করা হয়।  দেশটিতে গাজার অপব্যবহার রধে কছোর শাস্তির বিধান করা হয়েছে। এ আইন লঙ্ঘন করলে কোম্পানিকে ২০ কোটি রুপি এবং ব্যক্তিকে এক কোটি রুপি পর্যন্ত জরিমানার বিধার রাখা হয়েছে।  ২০২২ সালে এশীয় অঞ্চলের প্রথম দেশ হিসেবে থাইল্যান্ডে গাঁজাকে বৈধ ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকে দেশটিতে গাজার অপব্যবহার বেড়েছে। তবে পাকিস্তানের এক চিকিৎসকের মতে, পেসক্রিপশনের মাধ্যমে গাজা থেকে ওষুধ বিক্রির ব্যবস্থা করা হলে এটির অপব্যবহার রোধ করা সম্ভব। তিনি বলেন, পেসক্রিপশনের মাধ্যমে বিক্রিকে উৎসাহিত করা প্রয়োজন। কর্তৃপক্ষের উচিত এটি নিশ্চিত করা 
০৮ মে, ২০২৪

তিন বড় সমস্যায় দেশের অর্থনীতি
দেশের অর্থনীতি তিনটি বড় সমস্যায় আবর্তিত। ফলে ক্রমান্বয়ে দুর্বল হচ্ছে আর্থিক খাত। পরিস্থিতির উত্তরণে প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসনের বিকল্প নেই। এজন্য দরকার রাজনৈতিক সদিচ্ছা। এর মধ্যে কয়েক বছর ধরেই অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ মূল্যস্ফীতি মানুষকে চরমভাবে ভোগাচ্ছে। সিন্ডিকেটের কবল থেকে ভোগ্যপণ্যের বাজারকে মুক্ত করতে না পারলে মূল্যস্ফীতি কখনোই নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। গুলশানের একটি হোটেলে গতকাল রোববার বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) উদ্যোগে এবং এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশের সহযোগিতায় ‘নতুন সরকার, জাতীয় বাজেট ও জনমানুষের প্রত্যাশা’ শীর্ষক একটি নীতি সংলাপে এসব কথা বলেন বিশিষ্টজন। সংলাপটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহযোগিতায় চলমান জনসম্পৃক্ত সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের আওতায় বাস্তবায়িত হচ্ছে। সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো ও নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য সংলাপে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুনের সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য দেন বিরোধীদলীয় উপনেতা আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, জাতীয় সংসদের লাইব্রেরি কমিটির সদস্য এ. কে. আজাদ, নাগরিক প্ল্যাটফর্মের কোর গ্রুপের সদস্য ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী এবং সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান। ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, খুবই জটিল রাজনৈতিক ও আর্থসামাজিক পরিস্থিতি বিরাজমান। ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিও জটিল। বাজেট সামনে রেখে আমরা সামাজিক ও সরেজমিন মতামত নিয়েছি। অর্থনীতিতে সমস্যার ত্রিযোগ ঘটেছে। এর মধ্যে বড় সমস্যা হচ্ছে অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ মূল্যস্ফীতি। এটা গ্রাম কিংবা শহর এবং খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের জন্য সত্য। সেহেতু প্রথম সমস্যা হচ্ছে অনিয়ন্ত্রিত মুদ্রাস্ফীতি, যা মানুষের বিশেষ করে নিম্ন আয়ের জীবনমানকে আঘাত করছে। দ্বিতীয়ত, দেশি ও বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপ। সরকার বিদেশি উৎস থেকে যে টাকা নেয়, তার চেয়ে দেশীয় উৎস থেকে দ্বিগুণ টাকা ঋণ নেয়। এটার দায়-দেনা পরিস্থিতি ভিন্ন একটা ইঙ্গিত বহন করছে। তৃতীয় সমস্যা হচ্ছে সাম্প্রতিক সময়ে প্রবৃদ্ধির যে ঊর্ধ্বমুখী ধারা ছিল, সেই ধারায় শ্লথকরণ হয়েছে। এর সঙ্গে কর আহরণ সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, দেশে মূল্যস্ফীতি এখনো ১০ দশমিক ১০ এর কাছাকাছি, যা মানুষের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস করছে। পিছিয়ে পড়া মানুষের ভোগ, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের ওপর মূল্যস্ফীতি সরাসরি প্রভাব ফেলছে। এসব কারণে বাল্যবিবাহ বেড়ে যাচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে বিশ্বে মূল্যস্ফীতি কমছে, কিন্তু সেই সুফল বাংলাদেশে দেওয়া যাচ্ছে না। জিপিডি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জিডিপির ৩৭ শতাংশ সরকারি ঋণের পরিমাণ এবং ব্যক্তি খাতে ঋণ ৫ শতাংশ। সবমিলিয়ে ৪২ শতাংশ ঋণ রয়েছে। এর ফলে বিনিময় হারের ওপর চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। টাকার অবমূল্যায়ন হচ্ছে। এতদিন বলতাম বাংলাদেশ কখনো বিদেশি ঋণ অনাদায়ি করেনি, কিন্তু এখনকার পরিস্থিতিতে সরকার ঋণের টাকা দিতে পারছে না, যার পরিমাণ অন্তত ৫ শতাংশ। আর জিডিপি হার ৪ শতাংশ, কিন্তু প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭ শতাংশের ওপরে। সেটা অর্জন করতে বাকি সময়ে জিডিপি হার হতে হবে ১০ শতাংশে ওপরে, যার বাস্তবায়ন অসম্ভব। কারণ বিনিয়োগযোগ্য সম্পদ কমে এসেছে, অন্যদিকে ব্যক্তি খাত কিংবা বিদেশি বিনিয়োগ আসছে না। গবেষণার সারাংশ উল্লেখ করে দেবপ্রিয় বলেন, মানুষ তিনটি বিষয়ের ওপর জোর দিয়েছে। প্রথমত, শোভন কর্মসংস্থান, দ্বিতীয়ত, মানসম্মত শিক্ষা এবং সর্বশেষ সামাজিক সুরক্ষা। চার নম্বরে এসেছে পিছিয়ে পড়া মানুষের বৈষম্য কমিয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজব্যবস্থা। বাজেট পিছিয়ে পড়া মানুষদের জন্য হতে হবে সংবেদনশীল, তাদের গুরুত্ব দিতে হবে। পরিবেশ ও জলবায়ুর বিষয়টি গুরুত্ব দিতে হবে। আমার কথা—বাজেট যাই হোক, তার বাস্তবায়ন যেন যথাযথ হয়। যার কাছে দুই টাকা যাওয়ার কথা সেটা যেন তার কাছে যায়। আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, ভারত এমনকি শ্রীলঙ্কাও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে। কিন্তু বাংলাদেশ তা পারছে না, প্রায় দুই বছর ধরে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের কাছাকাছি রয়েছে। দেশে মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতির অন্যতম কারণ হচ্ছে ভোগ্যপণ্যের বাজার মাত্র পাঁচ থেকে ছয়জন নিয়ন্ত্রণে থাকা। এ সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে না। তিনি বলেন, কভিডের সময় যখন বিশ্বব্যাপী উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়, তখনো আমাদের অর্থনীতির চাকা সচল ছিল। তাহলে কভিডের পর অর্থনীতিতে এমন কী পরিবর্তন হলো যে, অর্থনীতি ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে পড়ছে। সিপিডিকে সেটি খতিয়ে দেখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সবচেয়ে ঝুঁকিতে আছে দেশের ব্যাংক খাত। ১০টি ব্যাংক মার্জ করা হচ্ছে। এসব দুর্বল ব্যাংকের টাকা কোথায় গেছে? এসব টাকা দেশ থেকে পাচার হয়ে গেছে। ব্যাংকগুলোর ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেই। আর্থিক খাতে যে অব্যবস্থাপনা চলছে তার জন্য দরকার প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন। সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, বাজেট বাস্তবায়নে মিতব্যয়ী হওয়ার প্রচুর সুযোগ আছে। সরকারি কাজের অধিকাংশেই অপচয় হচ্ছে। সেটি কমাতে প্রধানমন্ত্রীও বিভিন্ন সময়ে পরামর্শ দিয়েছেন। এ কে আজাদ এমপি বলেন, যতদিন সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে দুর্নীতিমুক্ত করা না যাবে ততদিন বরাদ্দ বাড়িয়েও কোনো কাজে আসবে না। তার নির্বাচনী এলাকার উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, একটি রাস্তা সংস্কারের জন্য স্থানীয় প্রতিনিধি তিন লাখ টাকা চেয়েছেন, এক লাখ টাকা দিতে চাইলেও তিনি নিতে চাননি। পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই রাস্তা ৩০ হাজার টাকা দিয়েই সংস্কার সম্ভব। সরকারি টাকার এ ধরনের অপচয় রোধের পাশাপাশি নাগরিকদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সরকারি হাসপাতালকেও দুর্নীতিমুক্ত করার পরামর্শ দেন তিনি।
০৬ মে, ২০২৪

তরুণদের কাজে লাগাতে পারলেই অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে : তাজুল ইসলাম
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, বাংলাদেশের জনসংখ্যার যে বিশাল তরুণ জনগোষ্ঠী রয়েছে তাদের কর্মক্ষমতাকে কাজে লাগাতে পারলেই আমাদের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে। শনিবার (৪ মে) ঢাকার কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। তাজুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের যে অর্থনৈতিক উন্নতি হয়েছে উদ্যোক্তারাই পারে তাকে শক্তিশালী ভিতের ওপর প্রতিষ্ঠিত করতে। কারণ উদ্যোক্তারা শুধু নিজে স্বাবলম্বী হয় না তারা সমাজের আরও দশজনকে স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ তৈরি করে দেয়। মন্ত্রী বলেন- গুগল, ফেসবুক, মাইক্রোসফট ও টেসলার মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্যোক্তারা ছিল বলেই আজ সারা বিশ্বে আমেরিকা নেতৃত্ব করতে পারছে। বিশ্ব অর্থনীতিতে সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত হতে হলে বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদেরও বিভিন্ন নতুন নতুন ধ্যান-ধারণা নিয়ে কাজ করে সেগুলোর সঠিক বাস্তবায়ন করতে হবে। স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, একসময়ের খাদ্য ঘাটতির বাংলাদেশ আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্বে খাদ্যের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। বিএনপি আমলে বিদ্যুৎ উৎপাদন মাত্র ১৬০০ মেগাওয়াট ছিল, বর্তমানে বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে দেশের প্রান্তিক মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিয়েছে সরকার। এ ধরনের বিভিন্ন উদ্যোগ টেকসই করার জন্য অর্থনৈতিকভাবে আমাদের আরও সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্যে করে মন্ত্রী বলেন, উদ্যোক্তা হতে গেলে সবচেয়ে বড় যে গুণাবলি নিজের মধ্যে ধারণ করতে হবে তা হচ্ছে আত্মবিশ্বাস এবং কোনো বাধাতেই হাল না ছেড়ে দেওয়ার মনোবৃত্তি। উদ্যোক্তা হিসেবে নিজের ব্যবসা দাঁড় করাতে গেলে নানা রকমের প্রতিবন্ধকতা আসবে। সামনে এগিয়ে যাওয়ার দৃঢ় বিশ্বাসই একজন উদ্যোক্তার অন্যতম পুঁজি যা তাকে কখনোই পরাজিত হতে দিবে না। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন, জারা মাহবুব, আমেরিকান অ্যাম্বাসির ইকোনমিক ইউনিট চিফ জোসেফ গিবলিন, গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী ইয়াসির আজমান, স্টার্টআপ বাংলাদেশ ম্যানেজিং ডিরেক্টর সামি আহমেদ। উল্লেখ্য, নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বাংলাদেশের ৬৪ জেলা, ৪৯২টি উপজেলা ও ৫০টি দেশ থেকে সাড়ে ১২ লাখ তরুণ-তরুণীকে টানা ৯০ দিনব্যাপী ২৬টি ব্যাচে অনলাইনে উদ্যোক্তা তৈরির কর্মশালার টানা ২৩০০তম দিন উপলক্ষ্যে এ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।
০৪ মে, ২০২৪

বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর মীরসরাই / দেশের অর্থনীতি পাল্টে দেবার এক অদম্য রূপকল্প : তবে...
বাংলাদেশের প্রথম পরিকল্পিত এবং সর্ববৃহৎ শিল্পনগর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরী মীরসরাই। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মীরসরাই থেকে ১০ কি.মি. পশ্চিমে এবং চট্টগ্রাম শহর থেকে ৬০ কি.মি, উত্তরে অবস্থিত এই শিল্প নগরী। চট্টগ্রামের মীরসরাই, সীতাকুণ্ড, ফেনীর সোনাগাজী এবং নোয়াখালির কিছু অংশ ছুঁয়ে যাওয়া এই শিল্প নগরীর বিস্তৃত প্রায় ৩৫ হাজার একর জায়গা জুড়ে। সন্দীপের ১৩ হাজার একর এবং নোয়াখালির কোম্পানীগঞ্জের পাঁচ হাজার জায়গাও ভবিষ্যতে এই শিল্পনগরীর সাথে যুক্ত হবে বলে জানিয়েছে বেজা। সাগরের বুকে জেগে ওঠা চরে বিশাল শিল্পাঞ্চল তৈরির মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার দিকে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ। এই শিল্পনগরীর ধারণা আমাদের ধারণারও অতীত।  বিশাল এই এলাকা বালি দিয়ে ভরাট করে তৈরি হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন সড়ক এবং শিল্পকারখার অবকাঠামো। বিগত সাত বছরের কর্মযজ্ঞে এই শিল্পাঞ্চলে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১৫১টি প্রতিষ্ঠানকে। বিনিয়োগ এসেছে প্রায় ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের। পর্যায়ক্রমে এই শিল্পনগরীতে ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ হবে বলে দৃঢ়তার সাথে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সংশ্লিষ্টরা।  দেশি বিদেশি বেশ কয়েকটি শিল্প কারখানা ইতোমধ্যে উৎপাদন শুরু করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য এশিয়া পেইন্ট, বার্জার, এ সি আই, বি এস আর এম, বসুন্ধরা ক্যামিক্যাল, ভারতীয় মার্কো ইত্যাদি। এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন (ইপিজেড) ৪৩টি গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠান তৈরির কাজ শুরু করেছে। কিছু ভবনের নির্মাণ কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। এসব কিছুর জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রাখতে দ্রুত এগিয়ে চলছে পাওয়ার স্টেশন নির্মাণ কাজ। বেশ কয়েকটি দৃষ্টিনন্দন সড়কের কাজ শেষ হয়েছে। আরও সড়ক তৈরির কাজ অব্যাহত রয়েছে।  ফেনীর সোনাগাজি থেকে মীরসরাইয়ে অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘেঁষে তৈরি হবে মেরিন ড্রাইভ, যা এখান থেকে কক্সবাজারের মেরিনড্রাইভ এর সাথে যুক্ত হবে। এতে যোগাযোগ হবে যেমন সহজ ও অবারিত তেমনি পর্যটনের জন্য হবে আকর্ষণীয়। চট্টগ্রাম, নোয়াখালি, ফেনী জেলা সংযুক্ত এই বিশাল এলাকায় অর্থনৈতিক সম্ভাবনার সাথে সাথে যোগাযোগ ও পর্যটনের অপার সম্ভাবনার দরজা খুলে যাবে। শিল্প কারখানা তৈরির কর্মযজ্ঞ, দৃষ্টিনন্দন সড়ক, নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ,অপরূপ প্রাকৃতিক দৃশ্য-সবমিলে অত্যাধুনিক এই শিল্প অঞ্চলের প্রতি বিশেষ আকর্ষণ আজ সবার। বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরী হবে দেশের প্রথম পরিবেশ শিল্প শহর বা ‘সবুজ’ শিল্প শহর। এখানে জ্বালানি ব্যবস্থাপনা এবং বর্জ্য ব্যবস্থনার সঙ্গে থাকবে সামঞ্জস্য।  সাগরের তীরঘেঁষা এই মীরসরাই শিল্পনগরীতে নির্মাণ হবে একটি নৌবন্দর। যার সম্ভাব্যতার কাজ শেষ হয়েছে। দুই বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগে জাপানের একটি কোম্পানি এই বন্দর নির্মাণ করবে। এখানে ছোট ও মাঝারি ধরনের জাহাজ ভিড়তে পারবে । আগামী এক দশকের মধ্যে এটি হবে একটি মেগাসিটি। এখানে থাকবে বিমানবন্দর, ডজন খানেক ৫ তারকা হোটেল। এছাড়াও স্কুল-কলেজ, অত্যাধুনিক হাসপাতাল,ফায়ার স্টেশন, নিরাপত্তার জন্য পুলিশ স্টেশন। ব্যাংকিং খাত সহজ করার জন্য দেশি বিদেশি ব্যাংকগুলোর থাকবে পূর্ণ সুযোগ সুবিধা। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক লাগোয়া মীরসরাইয়ে এই শিল্প নগরীর তীর ঘেঁষে থাকছে মেরিনড্রাইভ, যা ফেনীর সোনাগাজী থেকে শুরু হবে এবং কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভের সাথে সংযুক্ত থাকছে। এর সাথে যুক্ত হবে রেল যোগাযোগ। শিল্প, কর্মসংস্থান, যোগাযোগে, পর্যটনের সমন্বিত এই মহা রূপকল্প দাবিত হচ্ছে সমৃদ্ধ ও স্মার্ট এক বাংলাদেশের দিকে। বাংলাদেশের অর্থনীতিকে পাল্টে দেবার এই বিশাল কর্মযজ্ঞের কেন্দ্রস্থল চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ের ইছাখালি। সমৃদ্ধ জীবন এবং ঐতিহ্যের ধারক ‘ইছাখালি’ একটি ইউনিয়ন হলেও মূলত এর আকারে একে একটি উপজেলা বলা যেতে পারে। এই এলাকার মানুষের পরিচয়ের মধ্যে ফুটে ওঠে আভিজাত্য ও গৌরব। কার কত পরিমাণ ভূমি আছে ,মহিষের বাথান আছে, গরুর খামার আছে, ভেড়া-ছাগলের পাল পাল আছে-এই নিয়েই তাদের পরিচয়। এখানকার স্থানীয় বাজার মাদবার হাঁট, ঝুলনপোল বাজার, আবুর হাঁট, টেকের হাঁট, ভাঙনি, চর শরৎ, ভূইয়া রাস্তার মাথা ইত্যাদিতে ‘ভূমি লর্ড’দের আড্ডা বসে। তাদের আড্ডারি বিষয়বস্তু কে কত মণ ধান পেয়েছে, কত মণ খেসারীর ডাল হয়েছে, কার কত মণ মুগ মশুর, কলাই, ধইন্যা হয়েছে।  তাদের আড্ডায় আরও থাকে মহিষের বাথানে কার কতটি মহিষ আছে, খামারে কতটি গাভি দুধ দেয়, আগামী কোরবানি কতটি ষাড়-বলদ বিক্রি হবে, কার কত শত ভেড়া আছে ইত্যাদি। এর সাথে যুক্ত হয়েছে কার কত তরমুজের চাষা হয়েছে, এ পর্যন্ত কত লক্ষ টাকার তরমুজ বিক্রি হয়েছে। মহিষের দুধ ও দইয়ের জন্য ইছাখালির সুনাম সেই ব্রিটিশ আমল থেকেই। এছাড়াও এখানকার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অন্যতম ভিত্তি স্থানীয় মৎস্য খামার। কার মৎস্য খামারে কত কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে এবং এই পর্যন্ত কত টাকা বিক্রি হয়েছে-এসব হচ্ছে এখানকার মানুষদের আলোচনার অতীব সাধারণ বিষয়। পারস্পরিক দেখা সাক্ষাতের এই আলোচনা ইছাখালির মানুষের প্রাত্যহিক জীবনেরই অংশ। সাধুর চর, চর নিলাক্ষী, চর শরৎসহ এসব এলাকার বিস্তীর্ণ জমির মালিক ইছাখালিসহ আশ-পাশের মানুষ জনের। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হচ্ছে ঠুকতো অজুহাত দেখিয়ে শত শত একর জমি শিল্পজোন গ্রাস করে নিচ্ছে। হুমকির মুখে আছে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ মিঠা পানির মৎস্য জোনটিও।  একসময় ফেনী নদীর করাল গ্রাসে শত শত একর জমি এক সময় বিলীন হয়ে যায়। ১৯৮৩-৮৪ ইংরেজি সনে ফেনী নদীর বুকে তৈরিকৃত মীরসরাই-সোনাগাজী মুহুরীপ্রজেক্ট। এর ইতিবাচক প্রভাবে পলি জমে বিলীন হওয়া এসব জমি চর হিসেবে আবার জেগে ওঠে। পূর্বের মালিকরা জেগে ওঠা চরে তাদের জমির পূন সীমানা নির্ধারণ করে চাষাবাদ শুরু করে । মাইলের পর মাইল সবুজ তৃণ ভূমিতে গড়ে ওঠে শত শত গরু, মহিষ, ভেড়ার খামার। মৌরসি এসব জমিতে কৃষি ভিত্তিক আয়ের অবারিত সুযোগ সৃষ্টি প্রেক্ষিতে এই অঞ্চলের লোকজন চাকুরির প্রতি ছিল সর্বদাই বিমুখ। কৃষিভিত্তিক সমৃদ্ধ অর্থনীতির কারণে ইছাখালি এবং এর পার্শ্ববর্তী এলাকার মানুষজন বরাবরই ছিল আত্মনির্ভরশীল। কিন্তু তাদের মেরুদণ্ড আজ ভেঙে দিচ্ছে এই শিল্পজোন। আরএস, পি এস রেকর্ড ঠিক থাকলেও নদী সিকস্তির কারণে অধিকাংশ এসব জমির বিএস রেকর্ড হয়নি। যার ফলে এসব জমিকে খাস হিসেবে খোঁড়া অজুহাত দেখিয়ে বিনামূল্যে গ্রাস করে নিচ্ছে শিল্পজোন।  অপরদিকে সরকার চড়া দামে এসব জায়গা বিনিয়োগকারীদের কাছে বিক্রি করছে। কিন্তু জমির প্রকৃত মালিক তাদের দিকে কারো কোনো নজর নেই। যার ফলে যারা এক সময় ‘ল্যান্ড লর্ড’ ছিল তারা এখন হয়ে যাচ্ছে ভূমিহীন। ভেঙে পড়ছে সমৃদ্ধ কৃষি অর্থনীতি। বিলীন হয়ে যাচ্ছে এখানকার সংস্কৃতি কৃষি খামার। এদিকে কয়েক হাজার একর জমিতে এখানকার সাধারণ মানুষের উদ্যোগে গড়ে ওঠা মৎস্য জোনের মালিকরাও খুবই দুশ্চিন্তার মধ্যে পড়েছে। একই অজুহাতে এসব মৎস্য জোনও শিল্প জোনের অধিকারে চলে যাচ্ছে।  বঙ্গবন্ধু শিল্প নগরীতে এখানকার স্থানীয় অধিবাসীদের চাকরির ব্যাপক সুযোগ হওয়ার কথা থাকলেও এখন তা হচ্ছে না। যে-সব শিল্প প্রতিষ্ঠান উৎপাদনের গেছে সেই সব প্রতিষ্ঠানে যোগ্যতার ঘাটতি দেখিয়ে স্থানীয়দের চাকরির পথ অনেকটা রুদ্ধ। ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি পাল্টে দেবার মতো এরকম একটা শিল্পনগরী যাদের বুকের উপর প্রতিষ্ঠিত তারাই হয়ত ভবিষ্যতে কাগজ কুড়োবে এবং পান-বিড়ির টং দোকান দিয়ে কোনোমতে বেঁচে থাকার চেষ্টা করবে।  সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সৎ উদ্দেশ্যের প্রতি কারো কোনো সন্দেহ না থাকলেও স্থানীয় ভূমি মালিকদের নিঃশেষ হয়ে যাবার কথা হয়ত যথাস্থানে পৌঁছাচ্ছে না। এখনই উচিত স্থানীয় জমির মালিকদের যথার্থ ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা এবং শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোতে ন্যূনতম অংশীদারিত্বের সুযোগ সৃষ্টি করা।  আবু জাফর সাঈদ: সাবেক সহকারী অধ্যাপক, বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, জেদ্দা
২৮ এপ্রিল, ২০২৪

রাজনীতি ঠিক না থাকায় অর্থনীতি ভয়ংকর : সাবেক গভর্নর
‘দেশের রাজনীতি ঠিক নেই বলেই অর্থনীতির ভয়ংকর অবস্থা’- এমন মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, শুধু অর্থনীতির বিষয়ে কথা বললে বাংলাদেশের সমস্যার সমাধান হবে না। এখানে রাজনীতির বিষয়টা সবচেয়ে বড়। রাজনীতি ঠিক না হলে অর্থনীতি ঠিক হবে না; এটা তো আপনারা দেখতেই পারছেন... ভয়ংকর অবস্থা। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত যদি সঠিক না হয় অর্থনীতি ঠিক হবে না। রাজনীতিটা মেইন। শনিবার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে গ্রন্থ প্রকাশনার এক অনুষ্ঠানে দেশের বর্তমান অবস্থার প্রসঙ্গ টেনে তিনি এরকম মন্তব্য করেন।  জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে অর্থনীতিবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মাহফুজ উল্লাহর লেখা আত্মজীবনী গ্রন্থ ‘আমার জীবন আমার সংগ্রাম’-এর প্রকাশনা উপলক্ষে এই সভা হয়। ৫৯২ পৃষ্ঠার গ্রস্থটির প্রকাশ করেছে ‘বাঙ্গালা গবেষণা’। সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, অর্থনীতির এই টেকনিক্যাল কথাবার্তা গ্রোথ রেইট ৫ পয়েন্ট ৫ হলো না ৫ পয়েন্ট ৭ হলো, তারপরে ইনফ্ল্যাশন ৮ দশমিক ২ হলো না ৮ দশমিক ৩ হলো এগুলো ভেতরে কচকচালি করলে তো সমস্যার সমাধান হবে না। মূল সমস্যা হলো, আমাদের ইনস্টিটিউশনগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে, রাজনীতিটাও অনেকটা ধ্বংসের পথে এবং সেখানে অর্থনীতি কীভাবে ঠিক থাকবে? ছাত্রজীবনে ভালো রাজনীতি ও মানুষের কল্যাণে রাজনীতি না করলে কিন্তু ভবিষ্যতে ভালো মানুষও হবেন না। মূল্যবোধ কিছু থাকতে হয়। আমাদের সময়ে সেসবের কিছু ছিল। মাহবুব উল্লাহ ভাইয়ের তো ছিল সৎভাবে জীবনযাপন করেছেন, অনেক কিছু হতে পারতেন। আমরাও করেছি, আমার বন্ধু আলমগীরও (মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর) সৎভাবে জীবনযাপন করেছেন... একেবারে করেছেন। কিন্তু আমাদের মধ্যে মূল্যবোধগুলো বারবার তাড়া করত... এখনো আমাদের এটা তাড়িত করে মানুষের জন্য চিন্তা, সাধারণ মানুষের জন্য চিন্তা এসব চিন্তার জন্য এখনো আমাদের তাড়িত করে। ওই সময়ের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, অপরদিকে ওই সময়ে আমাদের অনেক বন্ধু-বান্ধব ছিল যারা আমাদের মার দিয়েছে আমাকেও একবার উঠিয়ে নিয়ে গিয়েছিল এনএসএফ নিয়ে গেছে... তাদের সহযোগী যারা তারা এখন প্রগতিশীল রাজনীতিবিদ, তারা এমপি-মন্ত্রী হয়েছেন নাম বলব না। আপনারা অনেকেই জানেন। তারা এখন আমাদের সঙ্গে তর্ক করে তোমরা কী করেছ? অত্যন্ত দুঃখ লাগে বন্ধু মানুষ তো। কিন্তু ইতিহাস তাদের ক্ষমা করেছে কি না জানি মনে হয় না ক্ষমা করেছে। মানুষ নিশ্চয়ই তাদের ক্ষমা করে নাই। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী। অনুষ্ঠানে দর্শক সারিতে বসে আলোচনা শোনেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম, নাজমুল হক নান্নু, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, জহির উদ্দিন স্বপন, আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়াম, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলুসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাংবাদিক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, মানবাধিকার কর্মীসহ অবসরপ্রাপ্ত সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তারা। কবি আবদুল হাই শিকদারের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, নারী নেত্রী শিরিন হক, নিউ এজের সম্পাদক নুরুল কবির, প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান এবং বাঙ্গালা গবেষণা‘র প্রকাশক আফজালুল বাসার প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে লেখক অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহর ছোট ভাই প্রয়াত সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহর ৫ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অধ্যাপক আখতার হোসেন খান। অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ বলেন, দেশ আজকে একটা কঠিন সংকটে পড়েছে। এই সংকট থেকে উত্তরণ কীভাবে হবে সেটা নিঃসন্দেহে ৮/১০টা দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলন দেখে আমরা নিরূপণ করতে পারব না। আমাদেরই আমাদের পথ চয়ন করতে হবে, নিরূপণ করতে হবে, খুঁজে বের করতে হবে এবং এজন্য প্রয়োজন। ১৯০৫ সালে রাশিয়াতে পাঠ্য বিপ্লবের পরে লেনিন বলেছিলেন, এখন প্রয়োজনে প্রতিক্রিয়াশীলদের মধ্যে ঢুকেও আমাদেরকে কাজ করতে হবে। ওই সময়ের জন্য ওটা ছিল একটা মোক্ষম একটা কৌশল যে কারণে ১৯১৭ সাল (রুশ বিপ্লব) হতে পেরেছে। এগুলো আমাদের বুঝতে হবে। তবে এই মুহূর্তে আমাদের লক্ষ্য খুব সীমিত। লক্ষ্যটা হচ্ছে একটা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ চাই, যেই বাংলাদেশে আমরা কথা বলতে পারব, মুক্তভাবে আমাদের মতপ্রকাশ করতে পারব এবং আমাদের দেশের যে সার্বভৌমত্ব যেটা নানা কারণে সেটা কমপ্রোমাইজড হচ্ছে আমি যেটাকে বলি, নিম সার্বভৌম অবস্থা সেই নিম সার্বভৌম অবস্থা থেকে কীভাবে মুক্তি পাবৃএই সবকিছু নিয়ে আমাদেরকে চিন্তা-ভাবনা করতে হবে এবং শুধু চিন্তার মধ্যেই নিবিষ্ট থাকলে হবে না আমাদের পথ বের করে নিতে হবে, আমাদের সেই পথে চলতে হবে সেই পথ হচ্ছে সংগ্রামের, আত্মদানের এবং মানুষ ও দেশকে ভালোবাসার। আজকে আমরা যদি সবাই সেই স্বাধীনতা ও দেশকে ভালোবাসার মঞ্চে কিছু অবদান রাখতে পারি সেটাই যথেষ্ট। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও ব্যাংককের এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির এমিরেটস অধ্যাপক ড. নুরুল আমিন দেশের বর্তমান ভোট ব্যবস্থা প্রসঙ্গে বলেন, এই বাংলাদেশ আমরা ছোট বেলা থেকে দেখছি ভোটের দিনটা ছিল উৎসবের দিন। ’৫৪ সালে আমি ছোট কিন্তু যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনের কথা কিছু কিছু যেন মনে আছে এখন এবং অন্যান্য ইলেকশন। আমার বাবা ইউনিয়ন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ছিলেন, হাইস্কুলের হেড মাস্টার ছিলেন। ভোটের দিনগুলো আমরা দেখতাম ইউনিয়ন পর্যায় থেকে জাতীয় পর্যায়ে এটা যে কীভাবে এখন হারিয়ে গেল? নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করার ফলেই বর্তমানে রাজনৈতিক ও ভোট ব্যবস্থায় এই দুরবস্থা বলে মন্তব্য করেন এই অধ্যাপক। সভাপতির বক্তব্যে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলেন, মাহবুব উল্লাহ ভাইয়ের বইটি একটা রাজনৈতিক দলিল। সাধারণ মানুষের চাওয়া-পাওয়া, আশা-আকাঙ্ক্ষা এই বইতে আছে। আমি মনে করি এই বইটা লেখকের একটা বিরাট অবদান। সবাই বইটি পড়বেন।    
২৭ এপ্রিল, ২০২৪

ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ ও বিশ্ব অর্থনীতি
শুরুটা গত ১ এপ্রিল। সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে অবস্থিত ইরানের কনস্যুলার ভবনে (দূতাবাস) এদিন বোমা বর্ষিত হলে ইরানের তিন ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তাসহ ২৩ জন ঘটনাস্থলে ও পরে হাসপাতালে নিহত হন। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন আধাসামরিক বাহিনী রেভল্যুশন গার্ড কোরের (আরজিসি) অধিনায়ক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. রেজা জাহেদি, যাকে আমেরিকার হাতে প্রাণ হারানো ইরানের আরেক জাঁদরেল জেনারেল কাশেম সোলাইমানের উত্তরসূরি বিবেচনা করা হতো। ব্রিগেডিয়ার জাহিদের একজন বিশ্বস্ত সহকারীও এ বোমাবর্ষণে প্রাণ হারায়। পরবর্তীকালে স্পষ্ট হয়ে যায়, এমন বোমাবর্ষণ মূলত ইসরায়েলের কাজ এবং ইরান এমন হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার প্রকাশ্য হুমকি দেয়। এ ঘটনার ১৩ দিন পর অর্থাৎ ১৩ এপ্রিল রাতে এবং ১৪ তারিখের প্রথম প্রহরে ইরান শুরু করে অপারেশন ‘ট্রু প্রমিজ’ (TRUE PROMISE)। এ সময় ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ করে ইরান তার নিজস্ব ভূখণ্ড থেকেই ধ্বংসাত্মক ড্রোন ও মিসাইল নিক্ষেপ অব্যাহত রাখে। পাঁচ ঘণ্টা ধরে চলা এ আক্রমণের সময় ইসরায়েলের অন্তত ৭২০ স্থান থেকে সাইরেন বাজিয়ে চলমান বিপদের সংকেত এবং নিরাপদ আশ্রয় যাওয়ার নির্দেশনা প্রদান করা হয়। ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনীর মুখপাত্র জেনারেল ড্যানিয়েল হাগারির বক্তব্য মতে, ইরানের এ আক্রমণের সময় কমবেশি ১৭২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ইরানি ভূখণ্ড থেকে ১৭০টি ড্রোন (মতান্তরে ১৮৫টি) ড্রোন, ১২০টি ব্যালিস্টিক মিসাইল ও ৩০টি ক্রুজ মিসাইল নিক্ষিপ্ত হয়। সেনা মুখপাত্রের ভাষ্যমতে, ইসরায়েলি ভূখণ্ডে আসার আগেই যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সহায়তায় ইরান থেকে নিক্ষিপ্ত ক্ষেপণাস্ত্রের অধিকাংশই আকাশে ধ্বংস ও ভূপাতিত করা হয়। অন্যদিকে জর্ডানের আকাশসীমা দিয়ে উড়ে আসা ক্ষেপণাস্ত্র ফ্রান্স ও জর্ডানের সহায়তায় ধ্বংস করা হয়। মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব লয়েড অস্টিনের ভাষ্যমতে, শুধু ইরানই নয়, ইরাক, সিরিয়া এবং ইয়েমেন থেকেও কয়েক ডজন ড্রোন ও মিসাইল ইসরায়েলের দিকে ছোড়া হয়, যা মার্কিন সেনারা আকাশে ধ্বংস করেছে। ইরানের এমন আক্রমণের ফল নিয়ে দুই ধরনের বক্তব্য পাওয়া যায়। ইসরায়েলি ভাষ্যমতে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় দক্ষিণ ইসরায়েলের নেভাটিম বিমান ঘাঁটি সামান্য ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং সাত বছরের একটি বেদুইন মেয়ে আহত হয়। এ ছাড়া ৩১ জন ইসরায়েলি আক্রমণের সময় হুড়োহুড়ি করে আহত বা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়। পক্ষান্তরে ইরান এ আক্রমণকে ১ এপ্রিলের ঘটনার জবাব বলে আখ্যায়িত করেছে এবং তাদের লক্ষ্য পূরণ হয়েছে বলে দাবি করেছে। একই সময়ে তারা এ যাত্রায় আর কোনো আক্রমণ না করার ঘোষণা দিয়েছে। এমতাবস্থায় ইসরায়েলের নেপথ্য শক্তি আমেরিকা, বন্ধুপ্রতিম ইউরোপীয় দেশসমূহ এবং সুহৃদ অন্যান্য বহু দেশের পক্ষ থেকে ইসরায়েলকে শান্ত থাকার এবং প্রতিশোধ না নেওয়ার অনুরোধ করা হয়। তবে তা আমলে নেয়নি ইসরায়েল। ১৯ এপ্রিল সকালে সামরিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ ইরানের ইস্পাহান এলাকায় মিসাইল আক্রমণ করে ইসরায়েল। এতে ইস্পাহানে অবস্থিত ইরানি পারমাণবিক কার্যক্রম পরিচালনার স্থাপনাসমূহ নিরাপত্তায় নিয়োজিত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ছাড়া ইসরায়েলের যেসব সামরিক স্থাপনা থেকে ইসরায়েলের ড্রোন ও মিসাইল হামলা হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়, সেসব সামরিক স্থাপনায়ও কমবেশি আক্রমণ হয়েছে বলে জানা যায়। আপাতদৃষ্টিতে এখানেই থেমে আছে ইরান-ইসরায়েলের সাম্প্রতিক দ্বৈরথ। তবে যে কোনো মুহূর্তে তা আবারও তীব্র শক্তি নিয়ে মাথাচাড়া দিতে পারে বলে আশঙ্কা নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের। কেউ কেউ আবার এ পরিস্থিতিকে মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘমেয়াদে উত্তেজনা ও অশান্তি সৃষ্টি এমনকি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্বাভাসও মনে করছেন। এমন পরিস্থিতি বিশ্ব অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান ব্যক্তি এবং বিশ্ব বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। প্রতিবেশী ভারতের ইকোনমিক টাইমসের দৃষ্টিতে এমন যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে বিশ্বের শেয়ার ও বন্ড বাজার প্রভাবিত হবে। বন্ডের মূল্য নেমে যাবে আর ঋণের সুদ বেড়ে যাবে। প্রবল অনিশ্চয়তার মাঝে অপরিশোধিত তেলের দাম বেড়ে যাবে এবং শেয়ারবাজারে পতন ঘটবে। স্বর্ণ ও ডলারের দামও বেড়ে যাবে। সার্বিকভাবে সামষ্টিক অর্থনীতি বা ম্যাক্রোইকোনমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ইরান পৃথিবীর অন্যতম অপরিশোধিত তেল উৎপাদনকারী দেশ। পৃথিবীর মোট অপরিশোধিত তেলের ৩ শতাংশ (দৈনিক প্রায় ৩ বিলিয়ন ব্যারেল) উৎপাদন ও রপ্তানি করে দেশটি। তদুপরি ইরানের জলসীমায় অবস্থিত হরমুজ প্রণালি ব্যবহার করে বিশ্বের ২০ শতাংশ অপরিশোধিত তেল বিভিন্ন দেশে পরিবহন ও বাজারজাত করা হয়। ভারতের ৬০ শতাংশ অপরিশোধিত তেল পরিবহন করা হয় হরমুজ প্রণালি দিয়ে। অন্যদিকে বিশ্বজুড়ে রয়েছে ইসরায়েলের বিনিয়োগ। ভারতের আদানি বন্দর, সান ফার্মাসিউটিক্যাল, কল্যাণ জুয়েলার্স ও টাইটানের মতো সুবিশাল ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ইসরায়েলের ব্যাপক বিনিয়োগ রয়েছে। আমেরিকাভিত্তিক অর্থ ও বিনিয়োগবিষয়ক তথ্য সংরক্ষণ, প্রচার ও গবেষণা সংস্থা এসঅ্যান্ডপি গ্লোবালের গত ১৪ নভেম্বর তথ্য অনুযায়ী, শুধু মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকা অঞ্চলের ৩ হাজার ৬০২টি শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি কোম্পানিতে ইসরায়েলের উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বিনিয়োগ রয়েছে। অন্যদিকে লয়েডস ব্যাংক ট্রেড নামক অন্য গবেষণা প্রতিষ্ঠানের ভাষ্যমতে, দেশ হিসেবে ইসরায়েল ভূখণ্ড সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ (ডাইরেক্ট ফরেন ইনভেস্টমেন্ট) প্রাপ্তির বিচারে পৃথিবীর ১৫তম স্থান দখল করে আছে। ইউনাইটেড নেশনস কনফারেন্স অন ট্রেড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আনটাড) প্রকাশিত ২০২৩ সালের বিশ্ব বিনিয়োগ প্রতিবেদনমতে, ২০২২ সালে ইসরায়েলে ২৯.২ শতাংশ (২৭৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্বের অস্ত্র, প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ও গোয়েন্দা তথা আড়িপাতা যন্ত্র উৎপাদন ও রপ্তানির ক্ষেত্রে ইসরায়েল শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। বার্তা সংস্থা আলজাজিরার গত ১৭ নভেম্বর প্রতিবেদনে দেখা যায়, ১৩০টি দেশ ইসরায়েল থেকে অস্ত্র, যুদ্ধ সরঞ্জাম ও গোয়েন্দা কার্যক্রমের যন্ত্রপাতি ক্রয় করে থাকে। ২০২২ সালে স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট ২০১৭ থেকে ২০২১ সালের তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে ইসরায়েলকে বিশ্বের ১০তম শীর্ষ অস্ত্র উৎপাদক ও রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে চিহ্নিত করে। অন্যদিকে আমেরিকা ও জার্মানিসহ পৃথিবীর বহু দেশ সরাসরি অস্ত্র উৎপাদন, সামরিক বাহিনীকে আধুনিকায়নসহ প্রতিরক্ষার নানা খাতে ইসরায়েলকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করে। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ইসরায়েল পৃথিবীর বুকে এক অনন্য উদাহরণ। অনেকের দৃষ্টিতে, আমেরিকার সিলিকন ভ্যালির পর প্রযুক্তির বড় ভান্ডার রয়েছে ইসরায়েলে। আমেরিকার পর পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি স্টার্টআপ কোম্পানিও গড়ে উঠেছে ইসরায়েলে। আমেরিকার অন্যতম স্টক মার্কেট ‘নাসডাক’-এ নথিভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে সংখ্যার বিচারে আমেরিকা ও চীনের পর ইসরায়েলের অবস্থান। প্রযুক্তি খাতে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান ইন্টেল, মাইক্রোসফট, অ্যাপেল, আইবিএম, গুগল, সিসকো, ফেসবুক ও মটোরোলার মতো চার শতাধিক কোম্পানি তাদের রিসার্চ ও ডেভেলপমেন্ট সেন্টার খুলেছে ইসরায়েলের বিভিন্ন অঞ্চলে। পৃথিবীর ২৩.২ শতাংশ হীরা ইসরায়েলে আকর্ষণীয় রূপে কাটা হয় বা অলংকরণ করা হয় এবং উজ্জ্বল (পলিশ) করে পৃথিবীময় বাজারজাত করা হয়। আমেরিকার গুগল, ফেসবুক, বাসকিন রবিনস, ডানকিন ডোনাটস, ওরাকল, স্নাপাল, স্টারবাক্স, ওয়ারেন ব্রাদার্স, ক্যালভিন ক্লেইন কিংবা ডেলের মতো জগৎসেরা কোম্পানিগুলোর মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ ইসরায়েলি ইহুদিদের হাতে। ২০২২ সালে গবেষণা প্রতিষ্ঠান ফোর্বস ২৬৭ জন ইহুদি বিলিওনিয়ারের নাম প্রকাশ করে, যারা মূলত বিশ্ব বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করে। একই প্রতিষ্ঠান ২০১৫ সালে দেখিয়েছে, বিশ্বের ৫০ জন শীর্ষ ধনীর মধ্যে ১০ জন (এক-পঞ্চমাংশ) ইহুদি। তাই বলা যায়, তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর বর্তমান বিশ্ব বাণিজ্য ও বিশ্ব অর্থনীতির অনেক কিছুই নির্ভর করবে ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনা, সম্ভাব্য যুদ্ধ কিংবা শান্তি প্রক্রিয়ার ওপর। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিশেষত মধ্যপ্রাচ্যে মধ্যম আয় ও উন্নয়নশীল দেশে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের প্রভাব বিষয়ে ইন্দোনেশিয়ার দৈনিক জাকার্তা পোস্ট সম্প্রতি একটি নিবন্ধন প্রকাশ করেছে। পত্রিকাটির দৃষ্টিতে এমন যুদ্ধের ফলে মুদ্রাস্ফীতি ঘটবে এবং ব্যাংক সুদের হার বেড়ে যাবে। সেইসঙ্গে বাড়বে সরকারি বন্ডের দাম ও বন্ডের ওপর সুদের হার। এর ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিনিয়োগ কমিয়ে মার্কিনিরা খোদ আমেরিকাতেই বিনিয়োগ করবে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে মার্কিন বিনিয়োগ লাভ করা দেশগুলো। তুরস্কের নিউজ এজেন্সি টিআরটি ওয়ার্ল্ড এক বিশ্লেষণে দেখিয়েছে, ইরানের ওপর পশ্চিমা অবরোধ হলে ডলারের বিনিময়ে ইরান আর জ্বালানি রপ্তানি করতে পারবে না। এর ফলে চীনা মুদ্রার বিনিময়ে অপরিশোধিত তেল সংগ্রহ করবে ‘টি পট’ নামে পরিচিত চীনের ছোট ছোট তেল শোধনাগার। সার্বিকভাবে বিশ্বের বুকে জ্বালানি তেল আমদানি ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে চীন। যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে চীনে জ্বালানি তেল সরবরাহ বিঘ্নিত হলে গোটা বিশ্ব অর্থনীতিতে টানাপড়েন শুরু হবে। সুনির্দিষ্টভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিরূপ পরিবেশ সৃষ্টি হবে বিশ্ব অর্থনীতি আক্রান্ত হলে। বাংলাদেশ এখন জ্বালানি তেলনির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল স্তম্ভ তৈরি পোশাক রপ্তানি এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রেরিত বৈদেশিক মুদ্রা। তৈরি পোশাক রপ্তানি আবার সামুদ্রিক জাহাজনির্ভর, যা চলে জ্বালানি তেলের দ্বারা। আর প্রবাসী শ্রমিকদের একটি বিরাট অংশই রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যে। বাংলাদেশের শিল্প খাতের কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতিসহ বিশাল অঙ্কের আমদানিদ্রব্য আসে চীন থেকে। তাই সার্বিক বিচারে তেলের মূল্যবৃদ্ধি ও অশান্ত মধ্যপ্রাচ্য বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। নীতিনির্ধারণী মহলে এসব বিষয় মাথায় রেখে সতর্ক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে এবং একাধিক বিকল্প নিয়ে গবেষণা ও ভাবনা-চিন্তা করতে হবে। লেখক: গবেষক, বিশ্লেষক ও কলামিস্ট ইমেইল: [email protected]
২৭ এপ্রিল, ২০২৪

আ.লীগ লুটপাট করে দেশের অর্থনীতি ভঙ্গুর করেছে : রিজভী
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান দেশকে অর্থনৈতিকভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে রেশনিং ব্যবস্থা তুলে নিয়েছিলেন। আজকে দেশের অর্থনীতিকে লুটতরাজ করে ভঙ্গুর করে ফেলেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার।    তিনি বলেন, প্রতিদিন দ্রব্যমূল্য বেড়েই চলছে। আদা, রসুন ও পেঁয়াজ ডলারের দামে আমদানি করতে হচ্ছে। মানুষ পেটভরে ভাত খেতে পারছে না। আজকে সন্তান বিক্রি করে পেট চালাতে হচ্ছে।  বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ৭ দিন ধারাবাহিক কর্মসূচির প্রথমদিনে তীব্র দাবদাহে অতিষ্ঠ জনসাধারণের মাঝে বোতলজাত পানি, স্যালাইন বিতরণকালে তিনি এসব কথা বলেন।  ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে রফিকুল আলম মজনুর সঞ্চালনায় এতে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আব্দুস সালাম।  অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হক, সহ-অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন, বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন প্রমুখ।   রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রী এখন আবার ডামি উপজেলা নির্বাচন করতে যাচ্ছেন। আজকে সে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতারাও সুযোগ পাচ্ছেন না। মন্ত্রী-এমপিদের ভাই, শালা, ভাগিনা, ভায়রাদের কারণে জিম্মি স্থানীয় জনগণ। প্রতিটি সংসদীয় এলাকায় এমপিরাজ তৈরি হয়েছে। তাও ডামি এমপি। আজকে ডামি এমপির স্ত্রী, শ্যালক, ভাই দিয়ে সৃষ্টি করা হচ্ছে এমপিরাজ। এমপি রাজত্বের কারণে জিম্মি গোটা এলাকা।  তিনি বলেন, আমাদের বিশেষজ্ঞ ও বিজ্ঞানীরা বারবার বলেছেন, কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করবেন না, কিন্তু গণবিরোধী প্রধানমন্ত্রী গণবিরোধী প্রজেক্ট করেছেন। বিশেষজ্ঞদের মতামত উপেক্ষা গলাচিপা, বাউফলে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করছে। রিজভী বলেন, ফরিদপুরে ছাত্রলীগের সভাপতির কাছে দুই হাজার কোটি টাকা, সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর ভাই নাকি ১৫ হাজার কোটি টাকা অর্জন করেছে। এই আলাদীনের চেরাগ কই থেকে আসলো। কানাডা, দুবাই, মালয়েশিয়া এত বাড়ি-ঘরের মালিক কীভাবে হলেন? একসময় আজিমপুর কবরস্থানে যেতে হবে সেটা তারা ভুলে গেছেন।  ওবায়দুল কাদের প্রসঙ্গে রিজভী আরও বলেন, সাংবাদিকরা তার কাছে জানতে চেয়েছেন বিএনপির কর্মসূচির দিন কেন আপনারা পাল্টা কর্মসূচি দেন? তিনি বললেন, বিএনপিকে মানসিকভাবে বাধা দেওয়ার জন্য আমরা পাল্টা কর্মসূচি দেই। এতেই প্রমাণিত হয় যে, ওবায়দুল কাদেরের মানসিক সমস্যা রয়েছে।  ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালাম বলেন, সারাদেশ আগুনে পুড়ছে, মানুষ অভুক্ত আছে। আর প্রধানমন্ত্রী বলে কোনো অসুবিধা নেই। মানুষ খুব ভালো আছে। জনগণের কোনো কষ্টই তাদের গায়ে লাগে না। কারণ, সাধারণ মানুষকে তাদের চোখে পড়ে না। তিনি শুধু দেখেন মুজিব কোট। আজকে এক টাকার কাজ করা হচ্ছে একশ টাকায়। বাকি ৯৯ টাকা খরচ হয় মুজিব কোটের পেছনে। মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু বলেন, সরকারের সবাই এসিতে ঘুমান তাই জনগণের কষ্ট তাদের উপলব্ধি হয় না। এরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়, তাই মানুষের কষ্টে এদের কিছু আসে যায় না। এদের লক্ষ্য শুধু বিএনপিকে দমন করা আর লুটপাট করা। তাই এ থেকে জাতিকে রক্ষা করতে হলে প্রয়োজন ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন।  অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামছুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম আহবায়ক মো. মোহন, হাজী মনির হোসেন, সদস্য দপ্তরের দায়িত্বে সাইদুর রহমান মিন্টু প্রমুখ।
২৫ এপ্রিল, ২০২৪
X