বুধবার, ২০ আগস্ট ২০২৫, ৫ ভাদ্র ১৪৩২
রাবিদ মাহমুদ চঞ্চল, আশাশুনি (সাতক্ষীরা)
প্রকাশ : ১৪ মে ২০২৪, ০২:৪২ পিএম
আপডেট : ১৪ মে ২০২৪, ০৪:৫০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

আশাশুনিতে ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা, সংঘাতের শঙ্কা

এবিএম মোস্তাকিম (উপরে - বাঁয়ে), এসএম শাহনেওয়াজ ডালিম (উপরে - ডানে), অ্যাড. শহিদুল ইসলাম পিন্টু (নিচে- বাঁয়ে), আলহাজ গাউসুল হোসেন রাজ (নিচে - ডানে)। ছবি : সংগৃহীত
এবিএম মোস্তাকিম (উপরে - বাঁয়ে), এসএম শাহনেওয়াজ ডালিম (উপরে - ডানে), অ্যাড. শহিদুল ইসলাম পিন্টু (নিচে- বাঁয়ে), আলহাজ গাউসুল হোসেন রাজ (নিচে - ডানে)। ছবি : সংগৃহীত

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে আগামী ২১ মে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। এ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র দখলের আশঙ্কা বিরাজ করছে স্বয়ং প্রার্থীদের মাঝে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী থেকে কর্মী সমর্থকদের মাঝে চলমান বাক যুদ্ধ যে কোনো সময় রূপ নিতে পারে সংঘর্ষে। যতই সময় গড়িয়ে যাচ্ছে ততই উৎতপ্ত হচ্ছে ভোটের মাঠ।

এবারের নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না থাকলেও সরাসরি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকা তিনজন ও স্বতন্ত্র এক প্রার্থী উপজেলা চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন। বিএনপি বা জামায়াতের সমর্থিত কোনো প্রার্থী না থাকায় ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে মনে করছেন এলাকাবাসীর। তবে বিএনপি ও জামায়াত অংশগ্রহণ না করায় যেমন কমতে পারে ভোটার উপস্থিতি তেমনি সংঘর্ষে জড়াতে পারে আওয়ামী ঘরোয়া প্রার্থীরা।

এ উপজেলা বিগত ৩টি নির্বাচনে চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মোস্তাকিম। প্রথম ও দ্বিতীয় মেয়াদে তিনি সতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হলেও সর্বশেষ নির্বাচিত হয়েছেন নৌকা প্রতীক নিয়ে।

মোস্তাকিমের দুর্গে হানা দিতে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করে মাঠে নেমেছেন এস এম শাহনেওয়াজ ডালিম। আশাশুনি উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক এস এম শাহনেওয়াজ ডালিম ছিলেন খাজরা ইউনিয়ন পরিষদের টানা তিনবারের চেয়ারম্যান। প্রথমবার সতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হলেও পরবর্তী দুবার তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হন।

অন্যদিকে আশাশুনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি ও সাবেক আশাশুনি সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাড. শহিদুল ইসলাম পিন্টুও আটঘাট বেঁধে নেমেছেন মাঠে। অ্যাড. শহিদুল ইসলাম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাতক্ষীরায় গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার আইনজীবী। এ জন্য তিনি দলের কেন্দ্র থেকে আশীর্বাদ পাবেন বলে প্রত্যাশা তার নেতাকর্মীদের। তবে শেষ পর্যন্ত শহিদুল ইসলাম পিন্টু মাঠে থাকবেন কি না তা নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে সংশয় রয়েছে।

অপর দিকে এবারের উপজেলা চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হিসেবে নতুন মুখ শিল্পপতি আলহাজ গাউসুল হোসেন রাজ। কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তার সাংগঠনিক সম্পর্ক নেই। তবে সতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে চমক দেখানোর প্রত্যাশা তার নেতাকর্মীদের।

রাজনীতির মাঠে থাকা পোড় খাওয়া ব্যক্তিদের মতে পরিবর্তনের ছোঁয়া আর সুষ্ঠু ভোটে অনুষ্ঠিত হলে রাজ গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্ট হয়ে দাঁড়াতে পারে। এ বি এম মোস্তাকিম, এস এম শাহনেওয়াজ ডালিম, অ্যাড. শহিদুল ইসলাম পিন্টু তিনজনই সরাসরি আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত। ফলে জামায়াতে ইসলামী ও বিএনপির সাধারণ ভোটাররা ভোট দিতে আসলে আওয়ামী বিরোধিতার কারণে সেই ভোটের পাল্লা গাউসুল হোসেন রাজের দিকে ঝুঁকতে পারে বলে মনে করেন ভোটাররা।

দলীয় কোনো ব্যানার, পদপদবি বা প্রতীকের ব্যবহার না থাকলেও সরকার দলীয় দুজন হেভিওয়েট প্রার্থী হলেন আশাশুনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান এ বি এম মোস্তাকিম। অন্যজন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক ও খাজরা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এস এম শাহনেওয়াজ ডালিম। দুজনেই নিজেদের শক্তি সামর্থ্য জানান দিতে মাঠে রয়েছেন। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে তাদের প্রচার, পাল্টাপাল্টি মিটিং ও শোডাউন। বিশেষ করে মোটরসাইকেলে শোডাউন চোখে পড়ার মতো। সব মিলিয়ে এ দুই প্রার্থী ও কর্মী সমর্থকদের মধ্যে চলছে একধরনের স্নায়ু যুদ্ধ। যে কোনো সময় এই টানটান স্নায়ু যুদ্ধ রূপ নিতে পারে সংঘর্ষে।

আশাশুনি উপজেলা আওয়ামী লীগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সাংগঠনিক সম্পাদক কালবেলাকে বলেন, মোস্তাকিম ও ডালিম যেভাবে ফেসবুকসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে একে অপরের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেওয়া শুরু করেছে তাতে উভয়পক্ষের নেতাকর্মীরা যে কোনো সময় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়তে পারে। এখনই দলীয় হাই কমান্ড থেকে বিষয়টি গুরুত্ব না দিলে দলের অভ্যন্তরীণ বিপদ আসন্ন বলেও মনে করেন এই নেতা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, এবারের উপজেলা নির্বাচনে চারজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও মূল লড়াইয়ের মাঠে রয়েছেন বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ বি এম মোস্তাকিম, সদ্য সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান এস এম শাহনেওয়াজ ডালিম ও আলহাজ গাউসুল হোসেন রাজ। সব মিলিয়ে মাঠে ময়দানে ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলেই ধারণা স্থানীয়দের। তবে মাঠ দখলের রাখতে গিয়ে চারজন প্রার্থীর মধ্যে বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও সদস্য সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ডালিমের নেতাকর্মীদের সক্রিয়তা চোখে পড়ার মতো।

আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন সম্পর্কে আশাশুনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শম্ভজিৎ মণ্ডল কালবেলাকে বলেন, আমাদের কেন্দ্রীয় নিদর্শনা রয়েছে ভোট হবে নিরেপক্ষ, কোনো ধরনের সংঘর্ষে না জড়াতে প্রার্থীসহ নেতাকর্মীদের অনুরোধ জানান তিনি।

এদিকে আশাশুনিতে এবার ২৪টি কেন্দ্র খুবই ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে চেয়ারম্যান প্রার্থী অ্যাড. শহিদুল ইসলাম পিন্টু কালবেলাকে বলেন, একজন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও একজন উপজেলা চেয়ারম্যান, দুজন প্রার্থীর আসল চেহারা জনগণের দেখা শেষ। সেকারণে উপজেলাবাসী আগামী নির্বাচনে নতুনকে অবশ্যই মূল্যায়ন করবেন এবং সেই হিসেবে তিনি জয়ের ক্ষেত্রে শতভাগ আশাবাদী। ভোটকেন্দ্রের ঝুঁকি সম্পর্কে তিনি বলেন, আমি ইতোমধ্যে স্থানীয় প্রশাসন, গোয়েন্দা সংস্থাসহ বিভিন্ন দপ্তরে ২৪টি ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের নাম উল্লেখ করে নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য আবেদন করেছি ।

রাজনীতির মাঠে নতুন মুখ হিসেবে প্রথমবারের মতো উপজেলা পর্যায়ে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী শিল্পপতি গাউসুল হোসেন রাজ কালবেলাকে বলেন, এবারের নির্বাচনে ভোটাররা চমক দেখাবে। আস্থাশীল নেতাকে খুঁজে নিতে সচেতন ভোটারদের ভুল হবে না। তবে প্রতাপনগর, আনুলিয়া, খাজরা, কাদাকাটি ও বুধহাটা ইউনিয়নে বেশির ভাগ কেন্দ্র দখল করে ভোট কেটে নেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে উল্লেখ করে রাজ বলেন, আমি দ্রুতই ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোর একটি তালিকা করে জেলা রিটানিং কর্মকর্তার নিকট জমা দিতে প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ আশা করব।

সদ্য সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী এসএম শাহনেওয়াজ ডালিম কালবেলাকে বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু নিরপেক্ষ হলে আমার জয় নিশ্চিত। মানুষ আমাকে ভোট দিতে মুখিয়ে আছে। এখনো পর্যন্ত সব কিছু ঠিক ঠাক চলছে। তবে প্রতাপনগর, আনুলিয়া ও বড়দলের কয়েকটি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে প্রশাসনের লোক বাড়াতে হবে, যেন কেউ ভোট কাটাকাটি সাহস না দেখায়। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে বলে জানান তিনি।

অন্যদিকে নির্বাচনকালীন পরিবেশ ও বর্তমান প্রস্তুতির প্রসঙ্গে এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী চেয়ারম্যান প্রার্থী ও বর্তমান উপজেলার চেয়ারম্যান এ বি এম মোস্তাকিম কালবেলাকে বলেন, আশাশুনির মানুষ আমাকে ভালোবাসে। ইতোপূর্বে আমার দায়িত্ব পালনে মানুষ সন্তুষ্ট হওয়ায় আমাকে তিনবার নির্বাচিত করেছে। আল্লাহর রহমতে ও মানুষের ভালোবাসায় এবার আরও বেশি ভোটে জেতার সম্ভাবনা রয়েছে। খাজরা ইউনিয়নের ভোটকেন্দ্রেগুলো ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছি। এই ইউনিয়ন বাদে অন্যসব ইউনিয়ন ঝুঁকিমুক্ত বলে জানান তিনি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

দুই শিক্ষককে প্রাণনাশের হুমকি প্রদানের ঘটনায় আহমাদুল্লাহর উদ্বেগ

সরকারি কর্মচারীরা দাফনের জন্য পাবেন টাকা

দেড় যুগেও নির্মাণ হয়নি জহির রায়হান মিলনায়তন

দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা, দুই উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি

৫ অভ্যাসে বার্ধক্যেও ভালো থাকবে হৎপিণ্ড

অনশন প্রত্যাহার করল বেরোবি শিক্ষার্থীরা

‘ভুল চিকিৎসায়’ একদিনে দুই শিশুর মৃত্যু

সরকারি কর্মচারীদের জন্য সুখবর

কাভার্ডভ্যানের চাপায় মা-মেয়ের মৃত্যু

মাস্ক পরে হাসপাতালে দীপু মনি

১০

ছাত্র সংসদের দাবিতে ‘আমরণ অনশন’ ঘিরে বিভক্ত বেরোবির শিক্ষার্থীরা

১১

বন্ধুত্ব চাইলে সীমান্ত হত্যা বন্ধ করুন : লায়ন ফারুক

১২

গাজা সীমান্তে ৪০ হাজার সেনা মোতায়েন করল মিসর

১৩

জাজিরা হাসপাতালে দুদকের অভিযান, অনিয়মে জর্জরিত স্বাস্থ্যসেবা

১৪

ডেজার সভাপতি প্রকৌশলী রুহুল আলম, সম্পাদক প্রকৌশলী চুন্নু

১৫

নানা আয়োজনে গাকৃবিতে মৎস্য সপ্তাহ উদযাপন

১৬

বিপিএলের ফিক্সিং ইস্যুতে যা বললেন তামিম

১৭

রাকসু নির্বাচনের মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু বুধবার

১৮

এবার সিলেটের উৎমাছড়া থেকে ২ লাখ ঘনফুট পাথর জব্দ

১৯

জমি রেকর্ড সংশোধনের মামলা দায়েরের শেষ সময় সেপ্টেম্বরে

২০
X