ফের আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন চেয়ারম্যান প্রার্থী, নীরব প্রশাসন
ফের আচরণবিধি লঙ্ঘন করে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছেন কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চেয়ারম্যান প্রার্থী এমদাদুল হক জুটন। শুক্রবার (২০ এপ্রিল) রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তার ব্যক্তিগত প্রোফাইল থেকে তা সরাসরি প্রচার করা হয়। মুহুর্তে তা ভাইরাল হয়ে যায়। যেখানে দেখা যায় কয়েক শতাধিক মোটরসাইকেল বহর নিয়ে উপজেলার বিভিন্ন সড়কে শোডাউন করছে তার সমর্থকরা। যদিও প্রায় এক ঘণ্টা পর ভিডিওটি ফেসবুক থেকে সরিয়ে ফেলা হয়। ভিডিওতে তার সমর্থকদের বলতে শোনা যায়, আজকে (শুক্রবার) আমরা আছি এমদাদুল হক জুটনের নির্বাচনী প্রচারণায়। ইতোমধ্যে আমরা হর্ষি বাজারের দিকে রওনা দিয়েছি। প্রায় এক থেকে দেড় হাজার মোটরসাইকেল নিয়ে আমরা যাত্রা শুরু করেছি। এটা নির্বাচনী প্রচারণা। এ সময় চেয়ারম্যান প্রার্থী এমদাদুল হক জুটনের নামে স্লোগান দিতে শোনা যায়। পরে গাড়ি থেকে নেমে সাধারণ মানুষের মাঝে রঙিন লিফলেট বিতরণ করা হয়। এ বিষয়ে এমদাদুল হক জুটন বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি দেখতেছি বলে ফোন রেখে দেন তিনি। জেলা নির্বাচন অফিসার ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোরশেদ আলম বলেন, এর আগেও আমরা তার নির্বাচনের আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়টি জেনেছি। পরে তাকে মৌখিকভাবে সাবধান করে দিয়েছি। পুনরায় এমন করে থাকলে তার বিরুদ্ধে লিখিতভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।   উল্লেখ্য, আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরুর আগেই আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠেছিল চেয়ারম্যান পদের প্রার্থী এমদাদুল হক জুটনের বিরুদ্ধে। বুধবার (১৭ এপ্রিল) মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ে বৈধতা পেয়েই তিনি রঙিন ব্যানার ব্যবহার ও সমাবেশ করে প্রচারণা করেন। আর এমন প্রচারণার তিনি তার ব্যক্তিগত ফেসবুকে লাইভ করেছেন। ফেসবুক লাইভে দেখা যায়, একটি টেবিল পেতে কয়েকশত মানুষের সামনে তিনি ও তার সমর্থকেরা হ্যান্ড মাইকে বক্তব্য রাখছেন। তার পাশেই টানানো রয়েছে রঙিন ব্যানার। যেখানে তিনি চেয়ারম্যান প্রার্থী ব্যানার টানিয়ে জনগণের কাছে ভোট চাচ্ছেন। জানা গেছে, ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দ ২৩ এপ্রিল। প্রতীক বরাদ্দের পরে প্রার্থীরা আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করতে পারবেন।  তবে সেই আচরণবিধি লঙ্ঘন করে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ে বৈধতা পেয়েই চেয়ারম্যান পদের প্রার্থী এমদাদুল হক জুটন প্রচারণা শুরু করেছেন। ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপের তপশিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ১৫ এপ্রিল, মনোনয়নপত্র বাছাই ১৭ এপ্রিল, রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল ১৮ থেকে ২০ এপ্রিল, আপিল নিষ্পত্তি ২১ এপ্রিল, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২২ এপ্রিল, প্রতীক বরাদ্দ ২৩ এপ্রিল। আর ভোটগ্রহণ হবে ৮ মে।
২০ এপ্রিল, ২০২৪

আচরণবিধি লঙ্ঘন করলেই প্রার্থিতা বাতিল
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ২০২৪-২৫ মেয়াদের দ্বিবার্ষিক নির্বাচনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্বে রয়েছেন খোরশেদ আলম খসরু। গতবারের নির্বাচনে ঘটে যাওয়া নানা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা নিয়ে এবার তৎপর তিনি। এই প্রযোজক নেতা কালবেলার সঙ্গে আলাপে বলেন, গতবার নির্বাচন ঘিরে অরাজকতা ও আলোড়ন দুটিই সৃষ্টি হয়েছিল। তার মধ্যে অর্থ, স্বজনপ্রীতি এমন অনেক কারণই নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করেছিল। বিষয়গুলো মাথায় নিয়েই আমরা কাজ করব। সেসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না হয়। এটি একটি স্পর্শকাতর নির্বাচন। সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে শেষ হয় তার সর্বাত্মক চেষ্টা করব। অতীতে নির্বাচন ঘিরে ব্যক্তিগত আক্রমণ নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, নীতিমালা ও তপশিলে সব উল্লেখ থাকবে। যদি কেউ আচরণবিধি লঙ্ঘন করেন, তার প্রার্থিতা বাতিল করা হবে।
১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

স্বতন্ত্র প্রার্থী ‘টাকা ছিটাচ্ছেন’, অভিযোগ আ.লীগের
রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনে কাঁচি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে ভোটারদের একটি নিদিষ্ট জায়গায় ডেকে নিয়ে মিটিং করার নামে টাকা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) সকাল থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী এনামুলের নিয়ন্ত্রণাধীন বাগমারার মাড়িয়া ইউনিয়নের শিকদারীতে অবস্থিত সালেহা ইমারত কোল্ড স্টোরেজে এই টাকা বিতরণ করা হয়। এমন অভিযোগ তুলে আসনটিতে নৌকার প্রার্থী অধ্যক্ষ মো. আবুল কালাম আজাদের পক্ষে সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী মো. জালাল উদ্দীন বাগমারার সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন।  অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. এনামুল হকের সালেহা ইমারত কোল্ড স্টোরেজে রাজশাহী জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং অফিসারের গণবিজ্ঞপ্তির নির্দেশনা অমান্য করে একটি মিটিং (অনুষ্ঠান) আহ্বানের মাধ্যমে তার সমর্থিত শত শত নেতাকর্মী ও সমর্থকদের জমায়েত করেছেন। সেই মিটিংয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী কাঁচি প্রতীকের সমর্থিত নেতাকর্মী ও সমর্থকদের নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডের সাধারণ ভোটারদের ভোট কেনার জন্য ব্যাপক অর্থ দেওয়া হচ্ছে এবং সেই মিটিংয়ের কার্যক্রম চলমানও রয়েছে। কাঁচি প্রতীকের এই ধরনের মিটিং আহ্বান নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন এবং রাজশাহীর রিটার্নিং কর্মকর্তার গত ৩ জানুয়ারি তারিখের গণবিজ্ঞপ্তি আদেশ ও নির্দেশনার পরিপন্থী। অভিযোগে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন ও রিটার্নিং কর্মকর্তার গণবিজ্ঞপ্তির আদেশ অমান্য করায় কাঁচি প্রতীকের প্রার্থীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়। অভিযোগের বিষয়ে জানতে শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) বিকেলে কাঁচি প্রতীকের প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হকের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এ জন্য তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।  আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী অধ্যক্ষ মো. আবুল কালাম আজাদ এ বিষয়ে বলেন, ‘নির্বাচনী আচারণবিধি লঙ্ঘন করে জমায়েতের মাধ্যমে কাঁচি প্রতীকের প্রার্থী ভোটারদের মধ্যে অর্থ বিলি করছেন। আমরা কর্তৃপক্ষের কাছে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেছি। তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ইতিমধ্যেই এনামুলের ভাড়া করা সন্ত্রাসীরা এলাকার ২-৩টি স্কুলে আগুন দিয়ে কক্ষ পুড়িয়ে দিয়েছে। ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে ককটেল ফেলে রেখে যাচ্ছে। তার উদ্দেশ্য হচ্ছে কিছু একটা ঘটিয়ে নির্বাচন বানচাল করা। কিন্তু কাঁচি প্রতীকের প্রার্থীর এই হীন প্রচেষ্টা ও উদ্দেশ্য সফল হবে না। কেননা, মাঠে শক্ত অবস্থানে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রয়েছে। প্রশাসনই এর সমুচিত জবাব দেবে।’  জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা প্রশাসক ও নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা শামী আহমেদ বলেন, ‘লিখিত অভিযোগ পেয়ে শুক্রবার সকালে বাগমারার ইউএনও, এসিল্যান্ড ও দায়িত্বরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। তবে ভোটারদের মধ্যে টাকা দেওয়ার প্রমাণ হাতেনাতে পাওয়া যায়নি। স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকরা বলেছেন, তারা সেখানে পোলিং এজেন্টদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। কিন্তু এখন তো সেই প্রশিক্ষণেরও সুযোগ নেই। কেননা, গত বৃহস্পতিবার রাত ৮টা থেকে নির্বাচনের সব ধরনের প্রচার-প্রচারণা বন্ধ। আমাদের দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেট ও বিজিবি ঘটনাস্থলে গিয়ে পোলিং এজেন্টদের প্রশিক্ষণের সেই মিটিং তাৎক্ষণিক বন্ধ করে দিয়েছেন। তবে আমরা যদি টাকা দেওয়ার কোনো প্রমাণ পাই তবে সঙ্গে সঙ্গে জেল হয়ে যাবে।  প্রশাসন সর্বোচ্চ সতর্ক ও নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করছে বলেও জানান রিটার্নিং কর্মকর্তা ।
০৫ জানুয়ারি, ২০২৪

আচরণবিধি লঙ্ঘন থামছে না ৪৩৬ শোকজ
নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ তাদের সমর্থকদের এ পর্যন্ত ৪৩৬টি শোকজ ও তলব নোটিশ দিয়েছে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি। এর মধ্যে ঢাকা অঞ্চলে সর্বোচ্চ ১১৬টি এবং সিলেট অঞ্চলে সর্বনিম্ন ১৬টি নোটিশ দেওয়া হয়। এ পর্যন্ত ২৭৩ প্রার্থী ও তাদের সমর্থক অনুসন্ধান কমিটির কাছে সরাসরি অথবা প্রতিনিধির মাধ্যমে লিখিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন। নির্বাচন কমিশন (ইসি) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রেকর্ডসংখ্যক শোকজ, তলব, সতর্ক ও জরিমানার পরও প্রার্থীদের বাগে আনতে পারছে না ইসি। কমিশনের কঠোর অবস্থানের পরও সারা দেশে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের হুমকি-ধমকি, হামলা, পোস্টার ছিঁড়ে ফেলাসহ নানাভাবে আচরণবিধি লঙ্ঘন করে চলেছেন বেপরোয়া প্রার্থী ও তাদের সমথর্করা। এসব অভিযোগে গতকালও কয়েক প্রার্থী এবং তাদের সমর্থককে শোকজ করেছে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি। এ ছাড়া অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে কয়েকজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে ইসিতে প্রতিবেদন পাঠিয়েছে কমিটি। ইসির সংশ্লিষ্ট শাখার তথ্য অনুসারে, তপশিল ঘোষণার পর থেকে গতকাল দুপুর পর্যন্ত যে ৪৩৬টি শোকজ নোটিশ দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে বেশিরভাগই আওয়ামী লীগের প্রার্থী। তাদের মধ্যে অন্তত ৭০ জনই বর্তমান সংসদ সদস্য। পাশাপাশি জাতীয় পার্টির ১৫ জন এবং অর্ধশতাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থীকেও শোকজ করা হয়েছে। নোটিশ পাওয়া অন্যদের মধ্যে আছেন দলের কর্মী-সমর্থক ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও। এই তালিকায়ও ক্ষমতাসীন দলের কর্মী-সমর্থক বেশি। বারবার আচরণবিধি লঙ্ঘনের কারণে দুই প্রার্থীর বিরুদ্ধে আদালতে মামলাও হয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের ওপর হামলার ঘটনা প্রমাণিত হওয়ায় তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ইসির নির্দেশে ঝিনাইদহ-১ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী আব্দুল হাইয়ের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে আদালতে দুটি মামলা হয়েছে। মামলা হয়েছে চট্টগ্রাম-১৬ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর বিরুদ্ধেও। গত বৃহস্পতিবার ক্ষমতাসীন দলের আলোচিত দুই প্রার্থী কুমিল্লা-৬ আসনের আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার ও বরগুনা-১ আসনের ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুকে নির্বাচন কমিশনে ডেকে যথাক্রমে ১ লাখ ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে শেষবারের মতো সতর্ক করা হয়েছে। বেপরোয়া প্রার্থীদের লাগাম টানতে প্রার্থিতা বাতিলেরও চিন্তা করছে কমিশন। এরপরও এসব প্রার্থীকে বাগে আনতে পারছে না কমিশন। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ‘ইবলিশ ও শয়তান’ মন্তব্য করায় গতকাল বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের প্রার্থী ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুকে আবারও কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে কমিটি। বরগুনা-১ আসনের নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান আহমেদ সাইদ এ নোটিশ দেন। নোটিশে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কমিটির কাছে লিখিত বক্তব্য দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রংপুর-১ আসনে জাতীয় পার্টির বহিষ্কৃত মহাসচিব ও বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ স্বতন্ত্র প্রার্থী মসিউর রহমান রাঙ্গাকে আবারও কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে অনুসন্ধান কমিটি। রাঙ্গার বিরুদ্ধে ভোটারদের ভূরিভোজের অভিযোগ উঠেছে। তাকে আজ সোমবার সকাল সাড়ে ১১টায় সশরীরে উপস্থিত হয়ে বা প্রতিনিধির মাধ্যমে তাকে এ বিষয়ে লিখিত ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আবার শোকজ করা হয়েছে পটুয়াখালী-১ আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারকে। ডিসি ও এসপিকে বদলির হুমকি দেওয়ায় লক্ষ্মীপুর-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হাবিবুর রহমান পাবনকে তলব করেছে ইসি। গতকাল তাকে সশরীরে নির্বাচন ভবনে হাজির ও ব্যাখ্যা তলবের চিঠি পাঠিয়েছেন ইসির আইন শাখার উপসচিব মো. আব্দুছ সালাম। এতে তাকে আজ সোমবার বিকেল ৩টায় ইসি সচিবালয়ের ৩১৪ নম্বর কক্ষে সশরীরে উপস্থিত হয়ে ব্যাখ্যার নির্দেশ দেওয়া হয়। বরিশাল-৬ আসনের বাকেরগঞ্জের পৌর মেয়র লোকমান হোসেন ডাকুয়াকে আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়েছে অনুসন্ধান কমিটি। গতকাল বরিশাল-৬-এর নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান সিনিয়র সহকারী জজ মাহাদী হাসান এ নোটিশ দেন। গত ২৬ ডিসেম্বর বাকেরগঞ্জে এক বৈঠকে প্রতিপক্ষ নৌকা সমর্থকদের ৫ মিনিটও মাঠে টিকতে না দেওয়ার হুমকি দেন মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লোকমান হোসেন ডাকুয়া। এ আসনে বাকেরগঞ্জ উপজেলার নিয়ামতি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান কামাল হোসেন তালুকদারকেও ৩ জানুয়ারি সকাল ১১টায় সশরীরে হাজির হয়ে কমিটির কার্যালয়ে ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। এ ছাড়া আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে সিলেট-৫ আসনের প্রার্থী হুছামুদ্দীন চৌধুরী, বগুড়ার চৌধুরী আদর্শ মহিলা ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক আমিনুল ইসলাম হেলাল, সাভারের বনগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আরিফ আহমেদ, ও ফেনীর দাগনভূঞার ১ নম্বর সিন্দুরপুর ইউপি চেয়ারম্যান নূর নবীসহ আরও অন্তত ৩০ জনকে শোকজ ও তলব করা হয়। ইসির সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, এ পর্যন্ত দেওয়া ৪৩৬ নোটিশের মধ্যে ২৭৩টি প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। ইসির অনুমোদন ও নথিতে উপস্থাপন হয়েছে ৫৮টি এবং অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে ১১৬টি প্রতিবেদন। এ ছাড়া আরও ৯৯টির কার্যক্রম চলমান। ঢাকা অঞ্চলে ১১৬টি, রংপুর অঞ্চলে ২২টি, কুমিল্লা অঞ্চলে ৬৪টি, ফরিদপুর অঞ্চলে ১৮টি, চট্রগ্রাম অঞ্চলে ৩৪টি, সিলেট অঞ্চলে ১৬টি, বরিশাল অঞ্চলে ২৭টি, খুলনা ৩০টি, রাজশাহী অঞ্চলে ৬৬টি ও ময়মনসিংহ অঞ্চলে ৪৩টি নোটিশ দেওয়া হয় প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের। কমিশন বলছে, দায়ীদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এরপরও যারা নিয়ন্ত্রণে আসবেন না, তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ সিদ্ধান্তের দিকে যাবে কমিশন। তবে ভোটের সময় আরও ঘনিয়ে এলে আচরণবিধি লঙ্ঘনের মাত্রা কমে আসবে বলেও তারা আশাবাদী।
০১ জানুয়ারি, ২০২৪

আচরণবিধি লঙ্ঘন করে ভূরিভোজ, রাঙ্গাকে দ্বিতীয়বার শোকজ
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুর-১ (গঙ্গাচড়া ও আংশিক সিটি) আসনে জাতীয় পার্টির সাবেক বহিষ্কৃত মহাসচিব ও বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ স্বতন্ত্র প্রার্থী মসিউর রহমান রাঙ্গাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি।  আচরণবিধি লঙ্ঘন করায় শনিবার (৩০ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় সিনিয়র সহকারী জজ ও রংপুর-১ আসনে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান মোছা. আয়শা আক্তার এ নোটিশ প্রদান করেন। মসিউর রহমান রাঙ্গার বিরুদ্ধে আচরণবিধি ভঙ্গ করে ভোটারদের ভূরিভোজ করানোর অভিযোগ পেয়েছে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি। আগামীকাল সোমবার (১ জানুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টায় সশরীরে উপস্থিত হয়ে অথবা প্রতিনিধির মাধ্যমে তাকে এ বিষয়ে লিখিত ব্যাখ্যা প্রদানের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নোটিশে বলা হয়েছে, ‌‌‌‌‌‘আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আপনি (মসিউর রহমান রাঙ্গা) রংপুর-১ আসনে একজন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী হওয়া সত্ত্বেও গত ২৯ ডিসেম্বর শুক্রবার বাদ জুমা আপনার নির্বাচনী এলাকার অন্তর্ভুক্ত দক্ষিণ কোলকোন্দ তাকিয়া শরীফ আলীম মাদ্রাসা মাঠে নির্বাচনী পথসভায় আসা লোকজনের মাঝে (প্রায় ৭ হাজার) একটি গরু ও চারটি খাসি জবাই করে খাবার পরিবেশন করেছেন। আপনার এহেন কার্য দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমের সচিত্র প্রতিবেদন সূত্রে অত্র নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির নিকট গোচরীভূত হয়। এছাড়া একই বিষয়ে জালাল নামক একজন ব্যক্তির স্বাক্ষরিত রিটার্নিং অফিসার বরাবর দাখলীয় অভিযোগপত্র গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার কর্তৃক অত্র নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির নিকট প্রেরণ করা হয়েছে।’ আরও বলা হয়েছে, ‌‘আপনার (মসিউর রহমান রাঙ্গার) এরূপ কার্য সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা-২০০৮ এর বিধি ১০(চ) ধারা লঙ্ঘন করেছে মর্মে অত্র নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির নিকট প্রতীয়মান হয়। আইনভঙ্গের কারণে কেন আপনার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, মর্মে আগামী ১ জানুয়ারি বেলা সাড়ে ১১টায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরে সশরীরে উপস্থিত হয়ে অথবা প্রতিনিধির মাধ্যমে লিখিত ব্যাখ্যা প্রদানের জন্য নির্দেশ দেওয়া হলো।’ এর আগেও গত ২৫ ডিসেম্বর আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগে মসিউর রহমান রাঙ্গাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। তখন তার বিরুদ্ধে আচরণবিধি ভঙ্গ করে রংপুর-৩ আসনের প্রার্থী জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের এবং তৃতীয় লিঙ্গের স্বতন্ত্র প্রার্থী আনোয়ারা ইসলাম রানীকে কটাক্ষ করে বক্তব্য প্রদানের অভিযোগ ওঠে। পরপর দুইবার আচরণবিধি লঙ্ঘন করার অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে মসিউর রহমান রাঙ্গার নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক মমিনুর ইসলামের মুঠোফোন নম্বরে কল দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। প্রসঙ্গত, রংপুর-১ (গংগাচড়া ও রংপুর সিটি কর্পোরেশনের ১ থেকে ৮নং ওয়ার্ড) আসনে ৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে জাতীয় পার্টি থেকে বহিষ্কৃত সাবেক মহাসচিব ও বর্তমান সংসদ সদস্য স্বতন্ত্র প্রার্থী মসিউর রহমান রাঙ্গা ‘ট্রাক’, গংগাচড়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত স্বতন্ত্র আসাদুজ্জামান বাবলু ‘কেটলি’, জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী ও সাবেক সংসদ সদস্য হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ ‘লাঙ্গল’, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির বখতিয়ার হোসেন ‘হাতুড়ি’, তৃণমূল বিএনপির বদরুদ্দোজা চৌধুরী ‘সোনালি আঁশ’, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির হাবিবুর রহমান ‘আম’, বাংলাদেশ কংগ্রেসের শ্যামলী রায় ‘ডাব’, স্বতন্ত্র প্রার্থী মোশারফ হোসেন ‘মোড়া’ এবং আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহীনুর আলম ‘ঈগল’ প্রতীকে লড়ছেন। এই আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৩২ হাজার ২১৯ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ১ লাখ ৬৫ হাজার ৩৫ জন, পুরুষ ১ লাখ ৬৭ হাজার ১৮২ এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ২ জন রয়েছে। এখানকার ১২৩টি ভোটকেন্দ্রের ৬৬৬টি ভোটকক্ষে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন ভোটাররা। এই আসন থেকে আওয়ামী লীগ তাদের দলীয় প্রার্থী প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। ভোটযুদ্ধে এ আসনে ৯ জন নির্বাচনী লড়াইয়ে থাকলেও মূলত ‘লাঙ্গল’ প্রতীকের প্রার্থীর সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ‘কেটলি’ ও ‘ট্রাক’ প্রতীকের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। 
৩১ ডিসেম্বর, ২০২৩

লক্ষ্মীপুর-২ আসনে আচরণবিধি লঙ্ঘন করায় ২ প্রার্থীর কর্মীকে জরিমানা
আচরণবিধি লঙ্ঘন করায় লক্ষ্মীপুর-২ (রায়পুর-সদর একাংশ) আসনের দুই প্রার্থীকে জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। শনিবার বিকেলে ও সন্ধ্যায় তাদের সাজা দেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুনিরা খাতুন। লক্ষ্মীপুরের রায়পুর শহরের লেংড়া বাজার এলাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচনী মাইক্রোবাসে পোস্টার লাগানোর অপরাধে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করে আদালত। একইদিন সন্ধায় উত্তর চরবংশী ইউনিয়নের খাসেরহাট জামে মসজিদের সামনের খালি জায়গায় ৯০ ফুটের পরিবর্তে ১২০ ফুটের পরিমাপে প্যান্ডেল নির্মাণ করে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর মতবিনিময় সভা করা হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালত সেখানে গিয়ে অভিযান চালিয়ে ৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন। ভ্রাম্যমাণ আদালত সূত্রে জানা যায়, সকালে রায়পুরের বিভিন্ন এলাকায় নির্বাচনী পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে যায় উপজেলা প্রশাসন। বিকাল চারটার দিকে পৌরশহরের লেংড়া বাজার এলাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থী সেলিনা ইসলাম (ঈগল প্রতীক) কয়েকজন কর্মী মাইক্রোবাসে পোষ্টার লাগিয়ে মোহড়া দিচ্ছিলেন। খবর পেয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুনিরা খাতুন ঘটনাস্থলে যান এবং ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী জাকির হোসেন ৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন। এদিকে সন্ধা ৬টার দিকে উত্তর চরবংশী ইউনিয়নের খাসেরহাট জামে মসজিদের সামনে আওয়ামী লীগের কর্মী সভার আয়োজন করে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ। তবে মূলত মতবিনিময় সভার নামে আওয়ামী লীগের প্রার্থী অ্যাডভোকেট নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়নের (নৌকা) নির্বাচনী জনসভার আয়োজন করা হয়। সভায় আসা প্রায় তিন হাজার লোকের সমাগম হয়। খবর পেয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুনিরা খাতুন সভাস্থলে যান। এ সময় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কর্মী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আলতাফ মাস্টারকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। অভিযানে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা সহায়তা করেন। সহকারী কমিশনার ভূমি ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুনিরা খাতুন বলেন, আচরণবিধি মেনে সকল প্রার্থী ও তাদের কর্মীদের নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
৩১ ডিসেম্বর, ২০২৩

ইসি কঠোর, আচরণবিধি লঙ্ঘন তবুও থামছে না
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণের আর মাত্র সপ্তাহ খানেক বাকি। শেষ সময়ে এসেও প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না নির্বাচন কমিশন (ইসি)। রেকর্ডসংখ্যক শোকজ, তলব, মামলা ও জরিমানা করার পরও আচরণবিধি লঙ্ঘন থামছে না। কমিশনের রক্তচক্ষুর আড়ালে সারা দেশে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের হুমকি-ধমকি, হামলা, পোস্টার ছিঁড়ে ফেলাসহ নানাভাবে আচরণবিধি লঙ্ঘন করে চলেছেন বেপরোয়া প্রার্থীরা। এসব অভিযোগে গতকালও কয়েক প্রার্থী ও তাদের সমর্থককে শোকজ করেছে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি। এ ছাড়া অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে কয়েকজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে নির্বাচন কমিশনে প্রতিবেদন পাঠিয়েছে কমিটি। ইসি সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা শুরুর আগে ও পরে নানাভাবে আচরণবিধি লঙ্ঘন করে চলেছেন প্রার্থী এবং তাদের সমর্থকরা। প্রার্থী ও সমর্থকদের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ, বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত তথ্যের ভিত্তিতে এবার আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে রেকর্ডসংখ্যক ব্যবস্থা নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে শোকজ, তলব, মামলা ও জরিমানা মিলিয়ে গতকাল পর্যন্ত ২৮০টিরও বেশি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী-এমপিরাও রয়েছেন। সূত্র জানায়, এবার আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচারের আগেই সারা দেশে আচরণবিধি লঙ্ঘনের হিড়িক পড়ে। বিষয়টি নিয়ে শুরুতে কমিশন নীরবতা পালন করে। এ সময় প্রার্থিতা চূড়ান্ত হওয়ার আগে আচরণবিধি দেখা নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না বলে মন্তব্য করেন কমিশনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের কেউ কেউ। এতে সারা দেশে আচরণবিধি লঙ্ঘনের আরও হিড়িক পড়ে। পরে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সুশীল সমাজের সমালোচনার পর নীরবতা ভাঙে কমিশনের। একে একে শোকজ করা শুরু হয় অভিযুক্ত প্রার্থীদের। নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু হলেও আচরণবিধি উপেক্ষা করে অনেক প্রার্থী প্রচারে নামেন। সভা, সমাবেশ ও বক্তৃতায় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী এবং তাদের সমর্থকদের নানা হুমকি-ধমকি দেন প্রার্থী ও সমর্থকরা। এমনকি সাংবাদিকদের ওপর আক্রমণ করতেও দ্বিধা বোধ করেননি কোনো কোনো প্রার্থী। অনেক জায়গায় হামলা ও সহিংসতা চলে একে অন্যের ওপর। নির্বাচনী সহিংসতায় এ পর্যন্ত চারজন নিহত ও বহুসংখ্যক কর্মী সমর্থক আহত হন। ১৮ ডিসেম্বর নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা শুরুর প্রথমদিন থেকে গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত সারা দেশে অর্ধশতাধিক আসনে সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে। এতে মৃত্যু হয়েছে অন্তত তিনজনের এবং দেড় শতাধিক আহত হন। এসব সংঘাতে জড়াচ্ছেন মূলত ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরাই। গতকালও বরিশালে দুই প্রার্থীর সমর্থকের মধ্যে সংঘর্ষে একজন নিহত হন। ইসির সংশ্লিষ্ট শাখার তথ্য অনুসারে, তপশিল ঘোষণার পর থেকে গতকাল দুপুর পর্যন্ত যে ২৮০টি শোকজ নোটিশ দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে আওয়ামী লীগের শতাধিক প্রার্থী রয়েছেন। তাদের মধ্যে আবার অন্তত ৬০ জনই বর্তমান সংসদ সদস্য। পাশাপাশি ৩৫ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জাতীয় পার্টির ১০ প্রার্থীকেও শোকজ করা হয়েছে। শোকজ নোটিশ পাওয়া বাকিদের মধ্যে আছেন দলের কর্মী-সমর্থক ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। এই তালিকায়ও ক্ষমতাসীন দলের কর্মী-সমর্থক বেশি। বারবার আচরণবিধি লঙ্ঘনের কারণে দুই প্রার্থীর বিরুদ্ধে নিয়মিত আদালতে মামলাও হয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের ওপর হামলার ঘটনা প্রমাণিত হওয়ায় তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ইসির নির্দেশে ঝিনাইদহ-১ আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী আব্দুল হাইয়ের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে নিয়মিত আদালতে দুটি মামলা করা হয়েছে। মামলা হয়েছে চট্টগ্রাম-১৬ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর বিরুদ্ধেও। গত বৃহস্পতিবার ক্ষমতাসীন দলের আলোচিত দুই প্রার্থী কুমিল্লা-৬ আসনের আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার ও বরগুনা-১ আসনের ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুকে নির্বাচন কমিশনে ডেকে যথাক্রমে ১ লাখ ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে শেষবারের মতো সতর্ক করা হয়েছে। বেপরোয়া প্রার্থীদের লাগাম টানতে প্রার্থিতা বাতিলেরও চিন্তা করছে কমিশন। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে ব্যবস্থা গ্রহণের এই ধারা শেষ পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। এরপরও এসব প্রার্থীকে বাগে আনতে পারছে না কমিশন। গতকাল আব্দুল হাই ও তার কয়েক সমর্থকের বিরুদ্ধে আবারও মামলার সুপারিশ করে নির্বাচন কমিশনে তিনটি প্রতিবেদন পাঠিয়েছে অনুসন্ধান কমিটি। এ ছাড়া ফরিদপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী শামীম হক, সুনামগঞ্জ-১ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মোয়াজ্জেম হোসেন রতন ও রাজশাহী-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী অধ্যক্ষ মো. শফিকুর রহমানসহ আরও কয়েক প্রার্থীকে শোকজ করা হয়েছে। প্রচারে অস্ত্র প্রদর্শনের অপরাধে বাগেরহাট-৩ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ইদ্রিস আলী ইজারাদারের সমর্থক শেখ মো. আবু সাঈদকে যে কোনো নির্বাচনী প্রচারে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কমিশন বলছে, দায়ীদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এরপরও যারা নিয়ন্ত্রণে আসবেন না, তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ সিদ্ধান্তের দিকে যাবে কমিশন। তবে ভোটের সময় আরও ঘনিয়ে এলে আচরণবিধি লঙ্ঘনের মাত্রা কমে আসবে বলেও তারা আশাবাদী। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল গত বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘ভোটের দিন ঘনিয়ে এলে আচরণবিধি লঙ্ঘনের মাত্রাও কমে যাবে। আর সবাই যে আচরণবিধি ভঙ্গ করছে, ব্যাপারটা তা নয়। তবে রাজনৈতিক সহিংসতা হচ্ছে। আমরা প্রশাসনকে অনুরোধ করেছি, তারা যেন এটি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে এবং ভোটের দিন যেন একটি সহজ-স্বাভাবিক পরিস্থিতি থাকে।’
৩০ ডিসেম্বর, ২০২৩

আচরণবিধি লঙ্ঘন চরমে গেলে প্রার্থিতা বাতিল
নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের কারণে প্রথমে শোকজ, তলব ও মামলা করা হচ্ছে। তাতেও কাজ না হলে কিংবা বিধি লঙ্ঘন চরম পর্যায়ে গেলে তখন প্রার্থিতাও বাতিল হতে পারে। গতকাল মঙ্গলবার নির্বাচন ভবনে নিজ দপ্তরে নির্বাচন কমিশন (ইসি) অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তবে মাঠে স্ট্রাইকিং ফোর্স নামলে পরিস্থিতি অনুকূলে আসবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন। অশোক কুমার বলেন, আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে এ পর্যন্ত আড়াইশ ব্যক্তিকে শোকজ করেছে অনুসন্ধান কমিটি। যার মধ্যে দেড়শ অভিযুক্ত শোকজের উত্তর দিয়েছেন। তিনজনের নামে মামলা করার সিদ্ধান্ত দিয়েছে কমিশন। ইসির এ কর্মকর্তা আরও বলেন, শোকজ, তলব ও মামলায় কাজ না হলে প্রার্থিতা বাতিল হতে পারে। তিনি বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র বলতে কিছু নেই। গুরুত্বপূর্ণ বা অতিগুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র আছে। অতি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে আনসার সদস্যের পাশাপাশি পুলিশের সংখ্যা বেশি থাকে। আর গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে সংখ্যাটা কম হবে। চরাঞ্চল, দুর্গম এলাকা, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্বে সমস্যা হলে সেগুলো অতিগুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করা হয়। এ তালিকা করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
২৭ ডিসেম্বর, ২০২৩

ঝিনাইদহ-১ আসন / নৌকার প্রার্থী আব্দুল হাইসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশ ইসির
আচরণ বিধি লঙ্ঘনের দায়ে ঝিনাইদহ-১ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী আব্দুল হাইসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করার নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। শুক্রবার (২২ ডিসেম্বর) ইসির নির্বাচন পরিচালনা-২ অধিশাখার উপসচিব মো. আতিয়ার রহমান নির্দেশনাটি শৈলকুপার উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে পাঠিয়েছেন। রোববার (২৪ ডিসেম্বর) ঝিনাইদহ জেলা জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কর্মকর্তা মো. রোকনুজ্জামান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। মামলার অন্য দুই বিবাদী হলেন- শৈলকুপা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হাকিম ও সারুটিয়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান মামুন। প্রথম আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে, শৈলকূপার দুধসর ইউনিয়নের ভাটই বাজারে হাটবারের দিনে বিকেল ৪টার দিকে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আব্দুল হাইয়ের অনুসারীরা দেশীয় অস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে মহাসড়কে মহড়া দেয় ও জনগণের মনে ভীতি সঞ্চার করায় নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির প্রতিবেদনের আলোকে আব্দুল হাইয়ের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। দ্বিতীয় আদেশে রয়েছে, একই উপজেলার সারুটিয়া ইউনিয়নের কাতলাগাড়ী বাজারে বিকেল ৪টার দিকে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আব্দুল হাই এর অনুসারীরা মোটরসাইকেলযোগে মিছিল ও সমাবেশ চলাকালে স্বতন্ত্র প্রার্থীর এজেন্টদের উদ্দেশে হুমকি প্রদান ও উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান করায় নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির প্রতিবেদনের আলোকে আব্দুল হাই, উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল হাকিম ও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান মামুনের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী ও তার এজেন্টদের বিরুদ্ধে হুমকি এবং উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়ার মাধ্যমে সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা ২০০৮ এর বিধি ৮(ক), ১১(ক) ও ১২ বিধি লঙ্ঘন করায় তাদের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করার নির্দেশ দেয়। এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ জেলা জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কর্মকর্তা মো. রোকনুজ্জামান জানান, আমরা নির্বাচন কমিশন থেকে পৃথক দুটি নির্দেশনার চিঠি পেয়েছি। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট ধারায় আদালতে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
২৪ ডিসেম্বর, ২০২৩

আচরণবিধি লঙ্ঘন টুকুকে শোকজ নিখিলকে তলব
নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ তাদের সমর্থকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ অব্যাহত রয়েছে। গতকাল বুধবার পাবনা-১ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও সংসদের ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুকে শোকজ করেছে অনুসন্ধান কমিটি। তাকে আগামী দুই কার্যদিবসের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়। ঢাকা-১৪ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিলকে তলব করেছে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি। নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি ও যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ মামুনুর রহমান ছিদ্দিকী তাকে এ-সংক্রান্ত নোটিশ দিয়েছেন। নোটিশে তাকে আগামী ২৩ ডিসেম্বর ১১টায় নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির সামনে সশরীরে উপস্থিত হয়ে ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
২১ ডিসেম্বর, ২০২৩
X