শেকৃবি উপাচার্যের অনিয়ম তদন্তে ইউজিসি
দুই ছেলেকে নিয়োগ দিয়েছেন, ভাগ্নিও পেয়েছেন চাকরি। চাকরির নিশ্চয়তায় বড় ছেলের বউও করেছিল আবেদন, তবে সমালোচনা এড়াতে শেষ পর্যন্ত সরে এসেছেন। রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শহীদুর রশীদ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতি ছাড়াও নিয়োগ, টেন্ডার, একাডেমিক, প্রশাসনিক এবং আর্থিক ক্ষেত্রে দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়ে একাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি)। সেগুলো আমলে নিয়ে শেকৃবি প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছে ইউজিসি। সেখানে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে অভিযোগগুলোর ব্যাখ্যা চেয়েছে ইউজিসি। পাশাপাশি অভিযোগ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত চলমান সব ধরনের নিয়োগ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া অভিযোগ তদন্তে কমিটি গঠন হচ্ছে। জানতে চাইলে ইউজিসি সচিব ড. ফেরদৌস জামান কালবেলাকে বলেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমে শেকৃবির উপাচার্যের দুর্নীতি বিষয়ে বেশকিছু প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। পাশাপাশি ইউজিসিতে লিখিত অভিযোগও এসেছে। সেগুলোকে আমলে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে এবং একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার শেকৃবি রেজিস্ট্রার বরাবর পাঠানো ইউজিসির পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ জামিনুর রহমান স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, শেকৃবির জনবল নিয়োগ, টেন্ডার, একাডেমিক, প্রশাসনিক এবং আর্থিক অনিয়মের বিষয়ে কমিশন কর্তৃপক্ষের কাছে একটি অভিযোগপত্র পাওয়া গেছে। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় এ-সংক্রান্ত প্রকাশিত সংবাদ কমিশনের নজরে এসেছে। অভিযোগগুলোর বিষয়ে আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের দফাওয়ারি বক্তব্য কমিশনে পাঠানোর অনুরোধ করা হলো। নিয়োগ-সংক্রান্ত অভিযোগ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান নিয়োগ কার্যক্রমের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের নিমিত্ত কোন প্রস্তাব সিন্ডিকেটে উপস্থাপন না করার অনুরোধ করা হলো। উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে প্রমাণকসহ লিখিত বক্তব্য পাওয়ার পর কমিশনের সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয়কে জানানো হবে। জানতে চাইলে শেকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া কালবেলাকে বলেন, আমার স্ত্রীর আগের ঘরের ছেলেকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাকে আমি নিয়োগ দিয়েছি বলে মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। ছেলে হামিমের নিয়োগের বিষয়ে বলেন, ওর নিয়োগ বোর্ডে আমি ছিলাম না। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য সেখানে ছিলেন। এ ছাড়া, বোনের মেয়ের নিয়োগের সময়ও আমি বোর্ডে ছিলাম না। কাজেই স্বজনপ্রীতির অভিযোগগুলো মিথ্যা। অন্য অভিযোগগুলোও মিথ্যা দাবি করে তিনি বলেন, যারা আমার কারণে অনিয়ম-দুর্নীতি করতে পারেনি তারাই এসব বলে বেড়াচ্ছে। এগুলোর কোনো ভিত্তি নেই।
১৭ মে, ২০২৪

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অভ্যন্তরীণ র‌্যাঙ্কিং প্রয়োজন : ইউজিসি
দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অভ্যন্তরীণ র‌্যাঙ্কিং ব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর। কমিশনের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শুদ্ধাচার কৌশল কর্মপরিকল্পনার ৩য় ত্রৈমাসিক (জানুয়ারি-মার্চ ২০২৪) অগ্রগতি প্রতিবেদন পর্যালোচনা কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। সোমবার (২৯ এপ্রিল) ইউজিসি অডিটরিয়ামে এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। অধ্যাপক আলমগীর বলেন, দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর র‌্যাঙ্কিংয়ের জন্য বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভর করতে হয়। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের মান যাচাইয়ে অভ্যন্তরীণ কোনো র‌্যাঙ্কিং ব্যবস্থা নেই। ইউজিসি শীঘ্রই বৈশ্বিক র‌্যাঙ্কিংয়ের আদলে অভ্যন্তরীণ র‌্যাঙ্কিং ব্যবস্থা প্রবর্তনের উদ্যোগ নেবে।  তিনি আরও বলেন, আগামীতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কর্মদক্ষতা ও সক্ষমতা মূল্যায়ন করে বাজেট প্রদান ইউজিসি’র কর্মপরিকল্পনায় রয়েছে। এক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ র‌্যাঙ্কিংয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান দেখে বাজেট বরাদ্দ প্রদান করা হবে। এছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ে বাজেট প্রদানে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি বাস্তবায়নের ওপরও গুরুত্ব দেওয়া হবে। পারফরমেন্স বাজেট বাস্তবায়নে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর কারণে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ প্রয়োজনীয় বাজেট পাওয়ার ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়তে পারে।  ইউজিসি সচিব ড. ফেরেদৌস জামানের সভাপতিত্বে কর্মশালায় ২৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শুদ্ধাচার কৌশলের ফোকাল পয়েন্ট/বিকল্প ফোকাল পয়েন্ট এবং ইউজিসি’র সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ অংশ নেন। ড. ফেরেদৌস জামান বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার জন্য বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে এগিয়ে নিতে সংশ্লিষ্ট সকলকে তিনি আন্তরিকভাবে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান।  কমিশনের উপসচিব ও জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলের ফোকাল পয়েন্ট মো. আসাদুজ্জামান অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন।  
২৯ এপ্রিল, ২০২৪

ইউজিসি অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতাদের দায়িত্ব গ্রহণ
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের নবনির্বাচিত নেতারা দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। গতকাল রোববার ইউজিসি অডিটোরিয়ামে এক অনুষ্ঠানে নতুন কমিটি শপথ পাঠ ও দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ইউজিসির চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর প্রধান অতিথি হিসেবে নবনির্বাচিত কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ কমিটির অন্য সদস্যদের শপথবাক্য পাঠ করান। ইউজিসি সদস্য ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন, ড. বিশ্বজিৎ চন্দ, ড. হাসিনা খান এবং ইউজিসি সচিব ড. ফেরদৌস জামান অভিষেক অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন। বিদায়ী কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ জামিনুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে নবনির্বাচিত সভাপতি মো. ওমর ফারুখ, সাধারণ সম্পাদক ড. মো. মুহিব্বুল আহসান ও সদ্য বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক মো. গোলাম দস্তগীর বক্তব্য দেন।
২৯ এপ্রিল, ২০২৪

৩০ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে সতর্ক করল ইউজিসি
দেশের ৩০টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে অভিভাবকদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। একই সঙ্গে পাঁচ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সংস্থাটি। ওই ৩০ বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রপতির নিয়োগ করা উপাচার্য না থাকায় শিক্ষার্থীদের সনদে স্বাক্ষর করার বৈধ কর্তৃপক্ষ নেই। এ ছাড়া অবৈধভাবে ক্যাম্পাস ও শিক্ষা কাযক্রম পরিচালনার দায়ে ৩টি, নির্ধারিত সময় স্থায়ী ক্যাম্পাসে না যাওয়ায় একটি এবং সাময়িক অনুমতির মেয়াদ উত্তীর্ণ ও আদালতে মামলা থাকায় আরও একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে কেউ প্রতারিত হলে এর দায়-দায়িত্ব নেওয়া হবে না বলে জানিয়েছে ইউজিসি। ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক ওমর ফারুখ স্বাক্ষরিত সতর্কীকরণ গণবিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৭৪টিতে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগকৃত উপাচার্য রয়েছেন। ৩০টিতে বৈধ উপাচার্য নেই। ইউজিসি বলছে, অবৈধ ক্যাম্পাস ও অবৈধভাবে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনাকারী ৩ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। এগুলো হলো ইবাইস ইউনিভার্সিটি, আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি ও দি ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা। এ ছাড়া ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে না যাওয়ায় শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ রয়েছে। স্থায়ী সনদের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়া, শুরু থেকে মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্ব, মামলাসহ বিভিন্ন কারণে মিরপুরের সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ওমর ফারুখ বলেন, আশা করি শিক্ষার্থীরা ইউজিসির বিজ্ঞপ্তি ও ওয়েবসাইট দেখে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবে।
০৫ এপ্রিল, ২০২৪

দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা আরও বাড়াতে হবে : ইউজিসি চেয়ারম্যান
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর বলেছেন, দেশের মোট জনগোষ্ঠীর মাত্র ১০ থেকে ১২ শতাংশ উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে। মেধা ও জ্ঞানভিত্তিক প্রজন্ম তৈরির মাধ্যমে ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে একটি উন্নত ও আত্মনির্ভরশীল দেশ হিসেবে রূপান্তর করতে হবে। এ জন্য উচ্চশিক্ষা গ্রহণকারীর সংখ্যা ৭০ শতাংশে উন্নীত করা আবশ্যক। সেক্ষেত্রে দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা আরও বাড়াতে হবে এবং মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। কিশোরগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ‘বিশ্ববিদ্যালয় দিবস’ উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইউজিসি চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন। গুরুদয়াল সরকারি কলেজে অবস্থিত অস্থায়ী ক্যাম্পাসে রোববার (৩ মার্চ) প্রথমবারের মতো এ দিবস উদযাপন করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ড. জেড এম পারভেজ সাজ্জাদ। অনুষ্ঠানে অধ্যাপক আলমগীর বলেন, দেশে ২০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় অস্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে। নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে দ্রুততম সময়ে একাডেমিক ও ভৌত অবকাঠামোর মাস্টারপ্ল্যান তৈরি স্মার্ট ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তিনি বলেন, বর্তমানে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ২ শতাংশের কম। শিক্ষা খাতে এত কম বরাদ্দ দক্ষিণ এশিয়ার কোনো দেশে নেই। এ স্বল্প বাজেট দিয়ে গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করা চ্যালেঞ্জিং। উচ্চশিক্ষার কৌশলগত পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ২০৩০ সালের মধ্যে জাতীয় বাজেটের ৬ শতাংশ শিক্ষা খাতে বরাদ্দ দিতে হবে। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুজ্জামান, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হক সরকারি কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ ও বিশ্ববিদ্যালয়টির সিন্ডিকেট সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আবদুল হক ও গুরুদয়াল সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আ ন ম মুশতাকুর রহমান। স্বাগত বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. ইমান আলী।  বিশ্ববিদ্যালয়টির রেজিস্ট্রার নায়লা ইয়াসমিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে অস্থায়ী ক্যাম্পাসে বর্ণিল অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সকালে জাতীয় পতাকা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা উত্তোলন করা হয়। এরপর ক্যাম্পাস থেকে বর্ণাঢ্য আনন্দর‌্যালি বের হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুর‌্যালে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। এ ছাড়া মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। ২০২৩ সালের ৩ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। গুরুদয়াল সরকারি কলেজের ১০তলা ভবনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পাস করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, গণিত, হিসাববিজ্ঞান ও ইংরেজি বিভাগে ২৪০ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত।  
০৩ মার্চ, ২০২৪

অনিয়ম খতিয়ে দেখতে পবিপ্রবিতে ইউজিসি
সাম্প্রতিক নিয়োগের অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতি খতিয়ে দেখতে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (পবিপ্রবি) বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) তদন্ত কমিটি। বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টা থেকে তিন সদস্য বিশিষ্ট ওই কমিটি তদন্ত শুরু করেন। তিন সদস্য হলেন- কমিটির আহ্বায়ক ইউজিসির সচিব প্রফেসর ড. ফেরদৌস জামান, সদস্য ইউজিসির অর্থ ও হিসাব বিভাগের উপ পরিচালক মো. আব্দুল আলীম ও সদস্য সচিব ইউজিসির পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগের উপ পরিচালক মো. আমিরুল ইসলাম শেখ। তদন্ত কমিটি নিয়োগ সংক্রান্ত যেসব বিষয়ে তদন্ত করে সেগুলো হলো : আর্থিক মঞ্জুরী/অনুমোদন ছাড়া নিয়োগ, বিশ্ববিদ্যালয় আ্যক্ট ভঙ্গ করে নিয়োগ, পদবিহীন নিয়োগ, সংশ্লিষ্ট পদে আবেদন না করেও নিয়োগ ও নিয়োগের মানদণ্ড। প্রাথমিক তদন্ত শেষে দুপুর ২টায় ড. ফেরদৌস জামান সাংবাদিকদের বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে গঠিত আমাদের তদন্ত কমিটির প্রাথমিক তদন্ত শেষ হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাদের প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র সরবরাহ করেছে। আমরা উভয়পক্ষের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি এবং বক্তব্য শুনেছি।  অভিযোগের বিষয়ে সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন এটা বলা কঠিন। আমরা দ্রুত সময়ে আমাদের তদন্ত রিপোর্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দিব। শিক্ষা মন্ত্রণালয় পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের ২৭ ডিসেম্বর পবিপ্রবি শিক্ষক সমিতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পবিপ্রবিতে নিয়োগে অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগের আবেদন করেন। সেই আবেদনের ভিত্তিতে চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ২৮ জানুয়ারি ইউজিসি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন।
২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

ইউজিসি অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃত্বে ওমর ফারুখ ও মহিব্বুল
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি পদে মো. ওমর ফারুখ, সাধারণ সম্পাদক পদে ড. মো. মহিব্বুল আহসান নির্বাচিত হয়েছেন। মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) ইউজিসি অডিটোরিয়ামে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ইউজিসি সচিব ড. ফেরদৌস জামান প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে নির্বাচনের ফল ঘোষণা করেন। ওমর ফারুখ ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের পরিচালক এবং মহিব্বুল আহসান একই বিভাগের উপপরিচালক হিসেবে কর্মরত। ১১ সদস্যবিশিষ্ট এ কার্যনির্বাহী কমিটি আগামী দুই বছরের জন্য দায়িত্ব পালন করবে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন সহ-সভাপতি মো. মোস্তাফিজার রহমান ও মো. আ. মান্নান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইউসুফ আলী খান, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক মোশারফ হোসেন, সাংগঠনিক ও প্রচার সম্পাদক রবিউল ইসলাম, কোষাধ্যক্ষ মোরশেদ আহম্মদ এবং সদস্য এম মারুফ আলম জেমস, মোহাম্মদ নুর ইসলাম চৌধুরী ও মো. আবদুল্লাহ আল মামুন। নির্বাচনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করেন পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক শাহ আমিনুল ইসলাম। নির্বাচন কমিশনার ছিলেন পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের উপ-পরিচালক শিবানন্দ শীল এবং জনসংযোগ ও তথ্য অধিকার বিভাগের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল মান্নান।
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

ইউজিসি অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ওমর সম্পাদক মহিব্বুল
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের কার্যনির্বাহী কমিটির দশম সাধারণ নির্বাচনে ওমর ফারুখ সভাপতি এবং ড. মহিব্বুল আহসান সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন। মঙ্গলবার ইউজিসি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচন হয়। ইউজিসি সচিব ড. ফেরদৌস জামান নির্বাচনের ফল ঘোষণা করেন। ওমর ফারুখ ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের পরিচালক এবং মহিব্বুল আহসান একই বিভাগের উপপরিচালক হিসেবে কর্মরত আছেন। ১১ সদস্যের এ কমিটি আগামী দুই বছর দায়িত্ব পালন করবে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন সহসভাপতি মোস্তাফিজার রহমান ও আঃ মান্নান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ আলী খান, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক মোশারফ হোসেন, সাংগঠনিক ও প্রচার সম্পাদক রবিউল ইসলাম, কোষাধ্যক্ষ মোরশেদ আহম্মদ এবং সদস্য মারুফ আলম জেমস, নুর ইসলাম চৌধুরী ওআবদুল্লাহ আল মামুন। নির্বাচনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্বে ছিলেন পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক শাহ আমিনুল ইসলাম। অন্য নির্বাচন কমিশনার ছিলেন পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের উপ-পরিচালক শিবানন্দ শীল এবং জনসংযোগ ও তথ্য অধিকার বিভাগের উপ-পরিচালক আবদুল মান্নান।
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

সম্পাদকীয় / ইউজিসি বেহাল কেন
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) কাগজে-কলমে দেশের সব সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা হলেও বাস্তবে যে এটি একটি নখদন্তহীন প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে, উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নে সরকার তথা রাষ্ট্রের দীর্ঘ অবহেলা ও উদাসীনতাই তার প্রমাণ। রোববার কালবেলায় প্রকাশিত ‘সুপারিশসর্বস্ব ইউজিসি’ শীর্ষক প্রধান শিরোনামে এ বিষয়ে বিস্তারিত যে চিত্র তুলে ধরা হয়েছে, তা এককথায় দুঃখজনক। প্রতিবেদন অনুসারে, দেশে উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নে একের পর এক সুপারিশ করে যাচ্ছে ইউজিসি। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাদের সুপারিশগুলো আমলে নেয় না সরকার কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। অনেক ক্ষেত্রে বছরের পর বছর একই সুপারিশের পুনরাবৃত্তি করা হয়। আইনি ক্ষমতা না থাকায় এ ক্ষেত্রে শক্ত কোনো পদক্ষেপ নিতে পারে না সংস্থাটি। এ কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ইউজিসি অনেকটা সুপারিশসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। ইউজিসির সর্বশেষ চার বছরের বার্ষিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের জন্য ইউনিভার্সিটি টিচার্স ট্রেনিং একাডেমি, উন্নত গবেষণার জন্য সেন্ট্রাল রিসার্চ ল্যাবরেটরি ও গবেষণার প্রয়োজনীয় ক্ষেত্র চিহ্নিত করতে ন্যাশনাল রিসার্চ কাউন্সিল প্রতিষ্ঠায় তিন বছর ধরে সরকারের কাছে সুপারিশ করে যাচ্ছে ইউজিসি। অত্যন্ত হতাশার কথা, আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় সুপারিশ বাস্তবায়নে নেই কোনো উদ্যোগ। এমন প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানটির তাহলে প্রয়োজনীয়তা আসলে কী? অথচ স্বাধীনতার পরপরই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজ হাতে এ প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেছিলেন বিশাল স্বপ্ন নিয়ে। দেশে একটি জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি গড়ে তুলতে মানসম্মত উচ্চশিক্ষার গুরুত্ব তিনি অনুধাবন করেই প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু করেন। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দ প্রদান, উচ্চস্তরের শিখন-শেখানো পদ্ধতির মানোন্নয়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে সহায়তা প্রদান, সর্বোচ্চ উদ্ভাবনী গবেষণা ও উন্নয়নকে উৎসাহিত করা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সুশাসনসংক্রান্ত বিষয়গুলোর উন্নয়নের দায়িত্বে রয়েছে। এ ছাড়া ইউজিসি উচ্চশিক্ষার নীতিমালা ও আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছানোর লক্ষ্যে মান নিশ্চিতকরণ সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন এবং সে অনুযায়ী সরকারকে পরামর্শ প্রদানেরও দায়িত্ব তাদের। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। কারণ ইউজিসির দায়িত্ব, যা বাস্তবায়নের জন্য সুপারিশ আকারে বিশ্ববিদ্যালয় এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পৌঁছায়, তা আর আলোর মুখ দেখে না। বিশ্ববিদ্যালয় শক্তিশালী ও গুণগত মানসম্পন্ন হোক, এটি চান না আমলা ও রাজনীতিকরা—এমনটা বলছেন শিক্ষাবিদ ও বিশেষজ্ঞরা। তাদের অভিযোগ, আমলারা চান ইউজিসি মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকুক। ফলে ১৯৭৩ সালের আইন সংশোধন করে ইউজিসিকে নির্বাহী ক্ষমতা দেওয়া অতি জরুরি। ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশের মাধ্যমে পরিচালিত চারটি ছাড়া দেশের আর কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য এবং কোষাধ্যক্ষ নিয়োগের নীতিমালা নেই। স্বভাবতই ইউজিসির সুপারিশ বাস্তবায়ন না হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর তাদের নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ই ইউজিসির সিদ্ধান্ত মানতে চাচ্ছে না। ফলে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করার কথা থাকলেও তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। দেশের উচ্চশিক্ষার মান নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের এই ভঙ্গুর দশা কোনোক্রমেই কাম্য নয়। উচ্চশিক্ষা তথা জাতির ভবিষ্যৎ কল্যাণের কথা বিবেচনা করে ইউজিসিকে একটি সত্যিকারের কার্যকর প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করতে সংশ্লিষ্টরা তৎপর হবেন, এটাই প্রত্যাশা।
১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

সুপারিশসর্বস্ব ইউজিসি
দেশে উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নে একের পর এক সুপারিশ করে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাদের সুপারিশগুলো আমলে নেয় না সরকার কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। অনেক ক্ষেত্রে বছরের পর বছর একই সুপারিশের পুনরাবৃত্তি করা হয়। আইনি ক্ষমতা না থাকায় এ ক্ষেত্রে শক্ত কোনো পদক্ষেপও নিতে পারে না সংবিধিবদ্ধ সংস্থাটি। এ কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ইউজিসি অনেকটা সুপারিশসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানে পরিণত হচ্ছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন। ইউজিসির সর্বশেষ চার বছরের বার্ষিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের জন্য ইউনিভার্সিটি টিচার্স ট্রেনিং একাডেমি, উন্নত গবেষণার জন্য সেন্ট্রাল রিসার্চ ল্যাবরেটরি ও গবেষণার প্রয়োজনীয় ক্ষেত্র চিহ্নিত করতে ন্যাশনাল রিসার্চ কাউন্সিল প্রতিষ্ঠার জন্য তিন বছর ধরে সরকারের কাছে সুপারিশ করে যাচ্ছে ইউজিসি। তবে এসব বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনোরকম উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। সম্প্রতি দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইউজিসির ৪৯তম বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে ২০২২ সালে ইউজিসির নিজস্ব কর্মকাণ্ড ছাড়াও সরকারি ও বেসরকারি সব বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম এবং উচ্চশিক্ষার সার্বিক চিত্র উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়ন, শিক্ষার্থীদের জন্য সুযোগ-সুবিধা সম্প্রসারণ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করতে ১৪টি সুপারিশ করেছে কমিশন। এর অধিকাংশই কয়েক বছর ধরে বার্ষিক প্রতিবেদনে তুলে ধরা হচ্ছে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং শিক্ষার প্রতি রাষ্ট্রের মনোযোগ কম থাকায় ইউজিসির সুপারিশ বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না বলে মনে করেন শিক্ষাবিদরা। ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান কালবেলাকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা থাকলেও আমলাদের কারণে অনেক সুপারিশই বাস্তবায়ন হয় না। ইউজিসি সুপারিশ করে; কিন্তু মন্ত্রণালয়ে গিয়ে সেই ফাইল অন্য ফাইলগুলোর মতোই ঠান্ডা ঘরে চলে যায়। আমলারা চান ইউজিসি মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকুক।’ তিনি বলেন, ‘গত ৫০ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা অনেক বেড়েছে, কাজের পরিধিও বেড়েছে; কিন্তু ইউজিসির ক্ষমতা বাড়েনি। সে কারণে ১৯৭৩ সালের আইন সংশোধন করে ইউজিসিকে নির্বাহী ক্ষমতা দেওয়া এখন অতি জরুরি।’ গত কয়েক বছরে ইউজিসির গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশের মধ্যে রয়েছে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ নিয়োগের জন্য খ্যাতনামা শিক্ষকদের ‘পুল’ গঠন, আন্তর্জাতিক আদলে দেশেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর র‌্যাঙ্কিং চালু করা এবং ‘স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যান ফর হায়ার এডুকেশন: ২০১৮-২০৩০’ অনুযায়ী উচ্চশিক্ষায় বরাদ্দ বৃদ্ধিতে সরকারের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ। পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশের মাধ্যমে পরিচালিত চারটি ছাড়া দেশের আর কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য এবং কোষাধ্যক্ষ নিয়োগের নীতিমালা নেই। ইউজিসির সুপারিশে এ-সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ এসব পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থার মতামত গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে। ২০২৩ সালের ৪৮তম বার্ষিক প্রতিবেদনে এ বিষয়টি উঠে আসে। একই প্রতিবেদনে দেশে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য র‍্যাঙ্কিং ব্যবস্থা প্রবর্তন; ইউনিভার্সিটি টিচার্স ট্রেনিং একাডেমি, সেন্ট্রাল রিসার্চ ল্যাবরেটরি ও ন্যাশনাল রিসার্চ কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা; গবেষকদের প্রণোদনাসহ উৎসাহ দেওয়া; বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে একাডেমি-ইন্ডাস্ট্রি সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের সুপারিশ করেছে ইউজিসি। এর আগে ৪৭তম বার্ষিক প্রতিবেদনের সুপারিশেও এ বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত ছিল। পাশাপাশি ওই প্রতিবেদনে উচ্চশিক্ষায় জাতীয় বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানো ও গবেষণায় চৌর্যবৃত্তির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরির সুপারিশ করা হয়। আর ৪৬তম বার্ষিক প্রতিবেদনে গবেষণায় চৌর্যবৃত্তি রোধে নীতিমালা এবং উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারকে ইউজিসির মতামত নেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া আগের তিনটি বার্ষিক প্রতিবেদনে সান্ধ্য কোর্স বন্ধের সুপারিশ থাকলেও এবারের (৪৯তম) প্রতিবেদনে এ বিষয়ে কোনো সুপারিশ করা হয়নি। এর বাইরে ইউজিসির গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে কমিশনের জন্য নতুন অবকাঠামো নির্মাণ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আর্থিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একাডেমিক মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন, তরুণ গবেষকদের জন্য বিশেষ পুরস্কারের (ইয়াং রিসার্চ অ্যাওয়ার্ড) ব্যবস্থা করা, পিএইচডি বৃত্তির আর্থিক পরিমাণ বাড়ানো ইত্যাদি। শিক্ষাবিদরা বলছেন, ইউজিসির সুপারিশ বাস্তবায়ন না হওয়ার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর ইউজিসি তার নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ই ইউজিসির সিদ্ধান্ত মানতে চাচ্ছে না। এর ফলে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করার কথা থাকলেও তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ফলে তাদের শিক্ষায় ঘাটতি থাকছে। অনেক ক্ষেত্রে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সম্পর্কে সমাজে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হচ্ছে। এ ধারণা দূর করতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। আবার জাতীয় উন্নয়ন বা প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সরাসরি ভূমিকা রাখার সুযোগও কাজে লাগানো যাচ্ছে না। ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরী কালবেলাকে বলেন, ‘ইউজিসি যেসব সুপারিশ করেছে, তার সবই যৌক্তিক। সংস্থাটি তাদের অভিজ্ঞতা ও বাস্তবতার আলোকে সুপারিশগুলো করেছে। এগুলো বাস্তবায়ন হলে দেশের উচ্চশিক্ষার মান বাড়বে। বিগত সময়েও ইউজিসি সময়োপযোগী কিছু সুপারিশ করেছিল; কিন্তু আমলাতন্ত্রের চাপের কারণে সেগুলো বাস্তবায়ন হয়নি। এখনো তাই হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘এ পরিস্থিতি থেকে বেরোতে হলে ইউজিসিকে উচ্চশিক্ষা কমিশনে রূপান্তর করা প্রয়োজন, যা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রভাবমুক্ত থাকবে। অর্থাৎ ইউজিসির ক্ষমতায়ন করতে হবে। তার মানে এই নয়, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর অযাচিত নিয়ন্ত্রণ করবে ইউজিসি। এর মানে হলো ইউজিসিকে ক্ষমতা দিলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত হবে।’ সাবেক এ উপাচার্য বলেন, ‘জাতীয় বাজেটে উচ্চশিক্ষায় বরাদ্দ বাড়ানো, গবেষণায় প্রণোদনা দেওয়া ও বরাদ্দ বাড়ানো এগুলোর তো অবশ্যই গুরুত্ব রয়েছে। সামান্য গবেষণা দিয়ে সৃজনশীল কোনো কিছু করা যায় না। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের যুগে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের জন্য গবেষণা লাগবেই। এ খাতে বরাদ্দ না বাড়ালে যুগের সঙ্গে তাল মেলানো যাবে না। শিক্ষার্থীরা যে কোনো বিষয়ে পূর্ণ প্রশিক্ষণ পাবে না। এর ফলে ইন্ডাস্ট্রিগুলো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। তারা বাইরের দেশ থেকে প্রশিক্ষিত জনবল নিয়ে আসছে। এসব কারণে ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া কোলাবোরেশন ঠিকমতো হচ্ছে না। যার ফলে দেশের বিপুল পরিমাণ জনশক্তি উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেও শিক্ষিত বেকার হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘চৌর্যবৃত্তি করেও অনেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি ও পদোন্নতি পাচ্ছে। এটি রোধ করতে হবে। সেজন্য ইউজিসির সুপারিশ অনুযায়ী নীতিমালা করতে হবে। কেউই চায় না বিশ্ববিদ্যালয় শক্তিশালী হোক, গুণগত মানসম্পন্ন হোক। আমলারা চান না, রাজনীতিকরাও চান না। এখানে নিশ্চয়ই তাদের কোনো স্বার্থ রয়েছে।’ এ বিষয়ে ইউজিসি চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর কালবেলাকে বলেন, ‘দেশের সব স্তরে প্রস্তাব বা সুপারিশ বাস্তবায়নে ধীরগতি রয়েছে, এ ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে অগ্রগতি আছে। যেমন চৌর্যবৃত্তি রোধে নীতিমালার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আবার ইউনিভার্সিটি টিচার্স ট্রেনিং একাডেমি, সেন্ট্রাল রিসার্চ ল্যাবরেটরি ও ন্যাশনাল রিসার্চ কাউন্সিল গঠনেও অগ্রগতি আছে। এগুলো আগামী ছয় মাসের মধ্যেই দৃশ্যমান হবে। কিন্তু ইউজিসির সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য সবার আগে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে শিক্ষাকে গুরুত্ব দিতে হবে এবং উচ্চশিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে।’ ইউজিসির সুপারিশ বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোলেমান খান কালবেলাকে বলেন, ‘সুপারিশগুলোর মধ্যে কিছু হয়তো তাৎক্ষণিক বাস্তবায়ন সম্ভব। আবার কিছু সুপারিশের বাস্তবায়ন দীর্ঘ সময়সাপেক্ষ। সে ক্ষেত্রে ঢালাওভাবে ‘আমলাতন্ত্রের চাপে’ সুপারিশ বাস্তবায়ন হচ্ছে না—এটা বলার সুযোগ নেই। তাদের কোন কোন সুপারিশ কতটুকু বাস্তবায়নযোগ্য, তা গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।’
১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪
X