গাজা যুদ্ধ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-কাতারের নীলনকশা
গাজা থেকে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসকে কোনোভাবেই উৎখাত করছে পারছে না ইসরায়েল। তবে এবার ভিন্ন এক জায়গা থেকে সংগঠনটিকে চেপে ধরতে চাইছে ইসরায়েলের পশ্চিমা মিত্র যুক্তরাষ্ট্র। কাতারভিত্তিক হামাসের রাজনৈতিক অফিস নিয়ে নতুন এক চক্রান্তের নীলনকশায় মেতে উঠেছে দেশটি। নিজেদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাতারকেও দলে ভিড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। শনিবার (০৪ মে) ওয়াশিংটন পোস্টের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে জেরুজালেম পোস্ট।  প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষপর্যায় থেকে এমন চাপ আসার পর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে কাতার। যুদ্ধবিরতিতে রাজি না হলে জোরপূর্বক দেশত্যাগে বাধ্য করা হতে পারে বলে কাতারের পক্ষ থেকে হামাসের নেতাদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনজন সিনিয়র কর্মকর্তার বরাতে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাতার কয়েক মাস ধরেই হামাসের শীর্ষ নেতাদের দেশটি থেকে বের করে দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে শুধু দেশ থেকে বহিষ্কারই নয় কাতারে হামাসের রাজনৈতিক অফিসও বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে। কাতার সরকারের এমন পরিকল্পনা সম্পর্কে অবগত একজন কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন। বিগত বছরগুলোতে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে সংঘাতে কাতারকে মধ্যস্থতা করতে দেখা গেছে। তবে গাজায় ইসরায়েলের সাম্প্রতিক আগ্রাসনে কাতার অনেকটা নিস্পৃহ ভূমিকা বজায় রেখেছে। গেল মাসে কাতার জানায়, তারা ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে এই পরোক্ষ আলোচনায় মধ্যস্থতার ভূমিকা থেকে সরে আসতে পারে। রাজনীতিকরা নিজেদের ফায়দা লাভের আশায় কাতারের ভূমিকাকে খাটো করে দেখছে, এমন উদ্বেগ থেকেই নিজেদের অবস্থান পুনর্বিবেচনার কথা জানায় দোহা।  নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন, কাতার যদি মধ্যস্থতার ভূমিকা থেকে সরে আসে তাহলে হামাসের রাজনৈতিক অফিস দেশটিতে রাখার কোনো মানে নেই। বাইডেন প্রশাসনের আশা, হামাসের নেতাদের কাতার থেকে বের করে দেওয়ার হুমকিতে রাজনৈতিক ফায়দা হতে পারে। তবে ওয়াশিংটন পোস্টকে বিশ্লেষকরা বলছেন, এতে আলোচনা প্রক্রিয়া আরও জটিল হবে। কেননা দোহায় হামাসের অফিস থাকা না থাকায় কিছু যায় আসে না। কারণ গাজায় বসে যারা সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, তাদের কাছে হামাসের অফিস কোথায় থাকবে তা কোনো বিষয় নয়। ঠিক একই ধরনের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন কাতারের সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত প্যাট্রিক থিওরোস। তার বিশ্বাস, কাতার থেকে হামাসকে বের করে দেওয়া হোয়াইট হাউসের জন্য একটি দুঃস্বপ্ন হবে। এর ফলে ভবিষ্যত আলোচনার রাস্তাও বন্ধ হয়ে যাবে। এদিকে যুদ্ধবিরতির ব্যাপারে হামাসের চেয়ে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের অনাগ্রহ বেশি বলে দাবি করেছেন গ্রুপটির একজন শীর্ষ কর্মকর্তা হুসাম বাদরান। তার ভাষায়, যুদ্ধ বন্ধের ব্যাপারে আমাদেরই আগ্রহ বেশি।
০৫ মে, ২০২৪

গাজা যুদ্ধ নিয়ে আরব শিক্ষার্থীরা চুপ কেন?
প্যালেস্টাইনের গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার প্রতিবাদে ক্ষোভে উত্তাল বিশ্ব। তার সঙ্গে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে যুক্ত হয়েছে আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ। গত ২০০ দিনেরও বেশি সময় ধরে গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার প্রতিবাদে প্রতিদিনই বিক্ষোভে অংশ নেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়ছে। বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক এ বিক্ষোভ ক্রমেই সংগঠিত রূপ পাচ্ছে। বিশ্বব্যাপী শিক্ষার্থীদের এমন আন্দোলন ১৯৬০ এবং ১৯৭০ সালে আলজেরিয়া ও ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময়ই কেবল দেখা গিয়েছিল। এবার শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলনের শুরুটা হয়েছে প্রথমে অমেরিকার নিউইয়র্ক সিটির কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে। ‘স্টুডেন্টস ফর জাস্টিস ইন প্যালেস্টাইন মুভমেন্ট’ ওই বিক্ষোভের আয়োজক। গত ১৭ এপ্রিল সংগঠনটির সদস্যরা বিশ্ববিদ্যালয়টির আঙিনায় তাবু গেড়ে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করে। তাদের ওই কর্মসূচি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগের ক্লাস নেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে। ফলে কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট বিক্ষোভকারীদের গ্রেপ্তারে পুলিশের প্রতি আহ্বান জানান। পুলিশি বাধায় ক্ষুব্ধ হয়ে অন্য শিক্ষার্থী এবং ফ্যাকাল্টি সদস্যরাও অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেন। এ কারণে, ওই কর্মসূচি অনেকটা অ্যামেরিকান ‘হাইড পার্কে’ রূপ নেয়। নিজেদের মধ্যে কখনো লেকচার দেওয়ার পাশাপাশি মাঝে মধ্যে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে ভাষণও চলতো। আন্দোলনকারীরা নানা স্লোগানের সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের দাবকেহ গান পরিবেশন, নৃত্য, পাঠদান, বিতর্ক এবং পড়াশোনাও করতো। হাতেগোনা কিছু শিক্ষার্থীর শুরু করা এ আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা জানালে আমেরিকার অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও তা ছড়িয়ে পড়ে। ধীরে ধীরে তা রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও চিন্তাশীল সম্পন্ন বিশ্বের নামি-দামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও এর প্রভাব পড়ে। একই সময়ে শিক্ষার্থীদের দাবি দাওয়ার তালিকাও লম্বা হতে থাকে এবং তা যুদ্ধ বিরতিকে ছাপিয়ে যায়। যেসব সামরিক কোম্পানি ইসরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহ করে তাদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব চুক্তি বাতিলের দাবি তোলা হয়। সেই সঙ্গে শান্তি ও মানবাধিকারের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের মূলনীতি অনুসারে ইজরায়েলি সামরিক শিল্প ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্বিবেচনার বিষয়টিও দাবিতে যুক্ত করা হয়। চলমান যুদ্ধ নিয়ে নিরবতা ও অপরাধীদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অব্যাহত রাখার মাঝেই শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলন আমেরিকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। বিশ্বজুড়ে  শিক্ষার্থীরা কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘গাজা সলিডারিটি এনক্যাম্পমেন্টকে’ বীরোচিত কর্মকাণ্ড হিসেবে বিবেচনা করছে।  তারা তাদের সরকারের ওপর গাজা এবং ওয়েস্ট ব্যাংকের নিরীহ ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর দখলদার ইসরায়েলি সেনাদের যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে চাপ সৃষ্টি করছে। যদিও ইসরায়েলের সমালোচনা ও তার অপরাধের বিরুদ্ধে সোচ্চার আন্দোলনকে নস্যাৎ এবং শিক্ষার্থীদের কণ্ঠরোধ করতে প্রথাগত অস্ত্র হিসেবে এ আন্দোলনকে ‘অ্যান্টি-সেমিটিজম’ তথা ইহুদি বিদ্বেষী তকমাও দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তাদের এ অস্ত্র এখন আর কোনো কাজে আসছে না। বিশেষ করে শিক্ষার্থীরা যখন নিশ্চিত করেছে যে, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাদের বিক্ষোভ অব্যাহত থাকবে। তারা ঘোষণা দিয়েছে, তাদের এই আন্দোলন শান্তিপূর্ণ। ফলে, এটি সেই নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং যুদ্ধবিরোধী আন্দোলন, যা আমেরিকার ইতিহাসে অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় হয়ে থাকবে। ১৯৫০ সাল থেকেই আফ্রিকা থেকে ইউরোপ এবং পূর্ব এশিয়া থেকে আরব অঞ্চলের আরব বসন্ত; এসব  ক্ষেত্রে সত্যিকার অর্থেই শিক্ষার্থী আন্দোলন স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের জন্য বিপ্লবের চালিকাশক্তি হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। এর একটি অংশ মার্কসবাদেও দখল করে আছে। শ্রমিক আন্দোলনের মাধ্যমে বিশ্বকে পরিবর্তন করে দিয়েছে। মার্কসবাদীরা যাকে ‘মোটর শ্রমিকদের দুঃখ দুর্দশার ইতিহাস’ হিসেবে গণ্য করে থাকে। শ্রমিক ইউনিয়নগুলোতে রাজনীতিকরণ এবং দুর্নীতির মতো দুর্বলতার কারণে ছাত্র আন্দোলন সমাজ পরিবর্তনে সক্ষম ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। কারণ, এতে রয়েছে যুবকদের প্রাণশক্তি, যারা বিভিন্ন দল ও সুবিধাভোগীদের থেকে রাজনৈতিক স্বাধীনতা পাচ্ছে এবং এই যৌবন তাদেরক ভবিষ্যৎ নির্মাণের কারিগরে পরিণত করছে। অথচ, কোনো এক অজানা কারণে, আমরা আরব দেশগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের তেমন কণ্ঠ শুনতে পাচ্ছি না। অন্তত তাদের দেশের বাইরেও তাদের কণ্ঠ শোনা যায় না। আমার সবচেয়ে কাছের দেশ মরক্কোর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নির্যাতন ও নিপীড়নের ভয়ে সবাই নিশ্চুপ। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং কর্মীরাও ফিলিস্তিনের সমর্থনে জোড়ালো আওয়াজ তুলতে ভয় পাচ্ছেন। অন্যদিকে, যারা গাজায় যুদ্ধাপরাধের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে চান, তাদের কণ্ঠস্বর স্তব্ধ করে দেওয়া এবং ছাত্র আন্দোলন দমন-পীড়নে নানা কৌশলগত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। গত মাসে, জেরুজালেমবিষয়ক ‘ন্যাশনাল ইউনিয়ন অব মরোক্কান স্টুডেন্টসের’ ষষ্ঠ ফোরামে শিক্ষার্থীরা যাতে অংশ নিত না পারে, সেজন্য মরক্কোর আবদেল মালেক এসাদি ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাস বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রসিডেন্ট ক্যাম্পাসে পুলিশ তলব করেন। ‘আল আকসা ফ্লাড : বিজয় ও স্বাধীনতাই জাতির সম্মান ও মর্যাদার প্রতীক’ শীর্ষক স্লোগানে ওই ফোরাম অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু ফোরাম শুরুর আগেই তিনদিনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসিডেন্ট সব ধরনের ক্লাস ও সুবিধা বন্ধ ঘোষণা করেন। এ ছাড়া, মরক্কোর ৩০ টিরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয়, অসংখ্য কলেজ ও উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর অধ্যাপক, শিক্ষক কিংবা ছাত্র, সবার মাঝেই ভয় এবং আতঙ্ক বিরাজ করছে। একটি প্রখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রগতিশীল অধ্যাপক যিনি ন্যায়ের পক্ষে বিশেষ করে ফিলিস্তিনের ব্যাপারে তার অবস্থানের জন্য সুপরিচিত। তিনি আমাকে জানান, ভয়ের কারণে মরক্কোর  বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ফিলিস্তিনের পক্ষে অবস্থান নেওয়া থেকে বিরত থাকছে সবাই। তিনি যে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করছেন, সেটি রাবাতের একটি মর্যাদাপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়। প্রমাণ হিসেবে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তার আলোচনার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। ওই অধ্যাপক প্রসিডেন্টকে গাজা যুদ্ধ নিয়ে একটি শিক্ষা বিষয়ক অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রস্তাব দেন। কিন্তু এমন আয়োজনে রাষ্ট্রের ‘সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ’ অনুমতি নাও দিতে পারে বলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রসিডেন্ট তার আশঙ্কার কথা জানান। বিশেষ করে মরক্কোর সঙ্গে জায়নবাদী গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্কন্নোয়নের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় হলো জ্ঞানের বাতিঘর এবং সমাজের নেতৃত্ব তৈরির কারখানা। মরক্কো হলো সেই দেশ, যার ইতিহাসের  প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলী এমনকি সবচেয়ে অন্ধকারাচ্ছন্ন বছরগুলোতেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং ছাত্ররাই সামাজিক এবং রাজনৈতিক আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তারা দেশের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র এবং সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা পালন করেছেন। কিন্তু গত দুই দশক ধরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রসিডেন্টরা কর্মী বনে গেছেন। তারা এখন কেবল তাদের ব্যক্তি স্বার্থ, পদ-পদবী এবং সামাজিক মান মর্যাদার প্রতিই বেশি মনোযোগী। তারা কর্তৃপক্ষের ইশারার অপেক্ষায় থাকেন, যাতে তাদের বিরাগভাজন হতে না হয়। তবে, কর্তৃপক্ষকে ক্ষুব্ধ এবং অসন্তুষ্ট করতে পারে এমন কণ্ঠস্বর দমনে যেকোনো পদক্ষেপ নিতে তারা কুণ্ঠাবোধ করেন না। এভাবেই তারা তাদের পদ-পদবী রক্ষার মূল্য দেন এবং সব  আশাকে জলাঞ্জলি দিয়ে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে ওঠেন। অন্যদিকে, মরক্কোর জনগণের যেকোনো লড়াই ও সংগ্রামে  দেশটির ছাত্র সমাজ অগ্রভাগে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে।  নাগরিক আন্দোলনে নেতৃত্ব প্রদান এবং রাজনৈতিক দল পরিচালনাসহ মরক্কোর ইতিহাসজুড়ে রয়েছে ছাত্রদের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা এবং তাদের আত্মত্যাগের কাহিনি। যার মাধ্যমে সমাজ ও রাষ্ট্রে পরিবর্তন এবং উন্নয়ন সূচিত হয়েছে। ২০১১ এবং ২০১৬ সালে মরক্কোতে যে আন্দোলন হয়েছিল, তার নেতৃত্বে ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই। ওই আন্দোলন হাজার হাজার তরুণ ও যুবককে আকৃষ্ট করেছিল এবং শিক্ষার সর্বস্তরে ছড়িয়ে পড়েছিল। কিন্তু বর্তমানে পদ্ধতিগত নিপীড়নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কণ্ঠস্বর দমিয়ে রাখা হচ্ছে। গাজায় যুদ্ধাপরাধ যখন অনেক দূর অঞ্চলেও প্রতিবাদের ঢেউ তুলেছে, তখন আমরা আরব অঞ্চলের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জেগে ওঠার জন্য অপেক্ষা করছি। কারণ, এটি একটি গভীর নৈতিক বিষয়। গাজা ট্রাজেডি বন্ধে প্রতিনিয়ত যেসব কণ্ঠস্বর ধ্বনিত হচ্ছে এবং দাবি তোলা হচ্ছে তাতে যদি বিশ্ব কর্ণপাত না করে, তাহলে ভবিষ্যতে মানবজাতির সহাবস্থানের ক্ষেত্রে এ সঙ্কট ভয়ংকর রূপ ধারণ এবং মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে।  মিডল ইস্ট মনিটর অবলম্বনে অনূদিত
০২ মে, ২০২৪

২০০ দিনে গড়াল গাজা যুদ্ধ
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের যুদ্ধ ২০০তম দিনে গড়িয়েছে। ইতিমধ্যে ইসরায়েলি হামলায় ৩৪ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরও ৭৭ হাজারের বেশি মানুষ। বাস্তুচ্যুত হয়ে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন লাখ লাখ ফিলিস্তিনি। এত প্রাণহানি ও ধ্বংসযজ্ঞ সত্ত্বেও গাজায় হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। বিশ্বজুড়ে যুদ্ধ বন্ধের দাবি জোরালো হলেও তা বন্ধের কোনো দৃশ্যমান কোনো লক্ষণ নেই। আলজাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের হামলা কমার কোনো লক্ষণ নেই। ছোট্ট এই উপত্যকার উত্তর, মধ্য ও দক্ষিণ অঞ্চলে দিনরাত বোমা ও স্থল হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েলি বাহিনী। অন্যদিকে গাজা সিটিতে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্য এবং ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। যদিও এই শহরে অভিযান সম্পন্ন করার দাবি করে আসছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। গত ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে প্রবেশ করে নজিরবিহীন হামলা চালিয়ে ১২০০ ইসরায়েলিকে হত্যার পাশাপাশি প্রায় ২৫০ ইসরায়েলি ও বিদেশি নাগরিককে গাজায় বন্দি করে নিয়ে আসে হামাস। একই দিন হামাসকে নির্মূল এবং বন্দিদের মুক্তি নিশ্চিত করতে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী এই সংগঠনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে ইসরায়েল। গত নভেম্বরে সাতদিনের যুদ্ধবিরতি চুক্তির বিনিময়ে ১১০ ইসরায়েলি বন্দিকে হামাস মুক্তি দিলেও এখনো তাদের হাতে শতাধিক বন্দি আছেন। অন্যদিকে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। তাদের অধিকাংশ নারী ও শিশু। এ ছাড়া এ পর্যন্ত ৭৭ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছে। বর্তমানে গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত করতে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে আলোচনা চলছে। এতে মধ্যস্থতা করছে কাতার, মিসর ও যুক্তরাষ্ট্র। রমজানের আগে এই চুক্তি আলোচনায় অগ্রগতি হলেও এখন দুপক্ষের মতবিরোধের কারণে তা স্থবির হয়ে পড়ে আছে।
২৩ এপ্রিল, ২০২৪

গাজা যুদ্ধ : ৬ মাস পার হলেও থামার লক্ষণ নেই
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের যুদ্ধ আজ রোববার (৭ এপ্রিল) ছয় মাস পার হয়ে সাত মাসে গড়িয়েছে। ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় গাজা মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। হাজার হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ঘরবাড়ি ছাড়া হয়েছেন আরও লাখ লাখ মানুষ।  ইসরায়েলি বাহিনী পূর্ণ অবরোধ আরোপ করে রাখায় গাজায় ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এতকিছুর পরও ইসরায়েলের তরফ থেকে যুদ্ধ বন্ধের কোনো লক্ষণ নেই। বিশ্বজুড়ে যেখানে গাজায় যুদ্ধ বন্ধের দাবি জোরালো হচ্ছে সেখানে তেল আবিবের মিত্ররা ইসরায়েলকে যুদ্ধের পক্ষে রাজনৈতিক সমর্থনের পাশাপাশি দেদার মারণাস্ত্র দিয়ে যাচ্ছে। ছয় মাস ধরে ইসরায়েলি হামলায় গাজায় প্রাণহানি ও ধ্বংসযজ্ঞের ভয়াবহ চিত্র একটি প্রতিবেদনে প্রকাশ করেছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা। কত মানুষ হতাহত হলেন? গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, গত ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরুর পর থেকে গাজায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর হাতে অন্তত ৩৩ হাজার ১৩৭ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এ ছাড়া হামলায় ধসে পড়া ভবন ও ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও হাজার হাজার মানুষ নিখোঁজ রয়েছে। তারা সবাই মারা গেছেন বলেই ধারণা করা হচ্ছে। নিহতদের অধিকাংশ নারী ও শিশু। সেভ দ্য চিলড্রেনের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি হামলায় গাজায় ১৩ হাজার ৮০০ জনের বেশি শিশু নিহত হয়েছে। এ ছাড়া ১৭ হাজারের মতো ফিলিস্তিনি শিশু বর্তমানে বাবা-মা ছাড়া বসবাস করছে। অন্যদিকে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৭৫ হাজার ৮১৫ জন আহত হয়েছে। এর মানে হলো গাজায় প্রতি ১০০ জনের মধ্যে চারজন মানুষ আহত হয়েছেন। প্যালেস্টাইন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির তথ্য অনুযায়ী, গাজার প্রায় এক হাজার শিশু তাদের একটি বা দুটি পা হারিয়েছে। এ ছাড়া ইসরায়েলি হামলায় প্রতিদিন শত শত মানুষ হতাহত হচ্ছে। মানুষ কি অনাহারে থাকছেন? গাজায় মানবিক পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য অবনতি হয়েছে। কারণ ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজায় ত্রাণসহায়তা প্রবেশে বাধা দিচ্ছে। তারা ক্ষুধাকে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবাহর করছে। বর্তমানে ২৩ লাখ ফিলিস্তিনি অনাহারে ভুগছে। জাতিসংঘ বলছে, মে মাসের মধ্যে গাজার বিভিন্ন অংশে দুর্ভিক্ষ দেখা দেবে। উত্তর গাজায় পানিশূন্যতা ও অপুষ্টির শিকার হয়ে শিশুদের মৃত্যুর খবর আসছে। এরপরও সেখানে মানবিক ত্রাণসহায়তা প্রবেশে বাধা দিচ্ছে ইসরায়েল। কত মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন? উত্তর গাজা থেকে স্থল অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। তাই যুদ্ধের শুরু থেকে ফিলিস্তিনিদের দক্ষিণে সরে যেতে নির্দেশ দিয়ে আসছে তারা। এরপর থেকে উত্তর গাজায় কেউ তাদের বাড়িতে ফিরতে পারেনি। কেননা গাজা উপত্যকাকে দুই ভাগে ভাগ করে মাঝখানে একটি সামরিক করিডোর স্থাপন করেছে ইসরায়েল। বর্তমানে ১৯ লাখ ফিলিস্তিনি ঘরবাড়ি ছাড়া। এই সংখ্যাটা গাজার মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ। ঘরবাড়ি ছাড়া এসব মানুষের বেশিরভাগ স্কুল ও হাসপাতালের মতো জাতিসংঘের স্থাপনায় আশ্রয় গ্রহণ করেছেন। এসব জায়গায় আশ্রয় নিয়েও ইসরায়েলি হামলা থেকে রক্ষা পায়নি তারা। আশ্রয়কেন্দ্রে ৪০০ জনের বেশি নিহত এবং কমপক্ষে এক হাজার ৪০০ জন আহত হয়েছে। কতটা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে? শুরু থেকেই ইসরায়েলি হামলার প্রধান টার্গেটে পরিণত হয়েছে ছোট এই উপত্যকার বিভিন্ন স্থাপনা। ফলে গাজার বিভিন্ন জরুরি স্থাপনা মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে থাকে ইসরায়েলি সেনারা। ইসরায়েলি এই ধ্বংসযজ্ঞ এতই ভয়াবহ ছিল, যুদ্ধের মাত্র চার মাসে প্রায় সাড়ে ১৮ বিলিয়ন বা এক হাজার ৮৫০ কোটি ডলারের অবকাঠামো হারিয়েছেন ফিলিস্তিনিরা। মঙ্গলবার (৩ এপ্রিল) জাতিসংঘ ও বিশ্বব্যাংকের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য ওঠে এসেছে। প্রতিবেদন বলছে, ইসরায়েলি হামলায় গাজায় চার মাসে যে পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা ২০২২ সালে অধিকৃত পশ্চিম তীর ও গাজার সম্মিলিত জিডিপির ৯৭ শতাংশের সমান। হাসপাতাল সচল আছে কি? আন্তর্জাতিক আইনে যুদ্ধের মাঝে হাসপাতাল সুরক্ষিত রাখার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক আইনের পরোয়া না করে শুরু থেকেই গাজার হাসপাতালে তাণ্ডব চালিয়ে আসছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। গাজার সব হাসপাতাল ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে। বর্তমানে ৩৬টি হাসপাতালের মধ্যে মাত্র ১০টি আংশিকভাবে সচল রয়েছে। তবে এসব হাসপাতালে রোগীদের উপচে পড়া ভিড় লেগেই থাকে। গাজার সবচেয়ে বড় হাসপাতাল আল-শিফা ও এর আশপাশের এলাকায় দুই সপ্তাহ থরে অবরোধ আরোপ করে রাখে নেতানিয়াহু বাহিনী। এই সময় হাসপাতালটি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া অন্তত ৪০০ জন মানুষ নিহত হয়েছে এবং আরও শতাধিক গ্রেপ্তার হয়েছেন।
০৭ এপ্রিল, ২০২৪

গাজা যুদ্ধ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানে বড় পরিবর্তন
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে তোলা একটি প্রস্তাব প্রথমবারের মতো আলোর মুখ দেখেছে। মূলত ইসরায়েলের প্রধান মিত্র ও নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য যুক্তরাষ্ট্র ভেটো না দেওয়ায় সোমবার প্রস্তাবটি পাস হয়েছে। যদিও এর আগে তিনবার যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব ভেটো দিয়ে আটকে দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের এবারের ভোটো প্রদান থেকে বিরত থাকাকে গাজা যুদ্ধ নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসনের নীতিগত অবস্থানে বড় পরিবর্তন হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। আলজাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, সোমবার নিরাপত্তা পরিষদে গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে প্রস্তাবটি উত্থাপন করে পরিষদের অস্থায়ী ১০ সদস্য। ভোটাভুটিতে চার স্থায়ী সদস্য দেশ যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, রাশিয়া ও চীন এবং ১০ অস্থায়ী সদস্য প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে। এ ছাড়া প্রস্তাবে ভোটদান থেকে বিরত থাকলেও কোনো ভেটো দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র। তাই এবারের মতো গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব আলোর মুখে দেখেছে। যুদ্ধবিরতি ছাড়াও গাজায় হামাসের হাতে বন্দি সব ইসরায়েলিকে মুক্তি দেওয়ারও আহ্বান জানানো হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গাজা যুদ্ধ ঘিরে ইসরায়েলি নেতৃত্বের প্রতি প্রেসিডেন্ট বাইডেন যে হতাশ হয়ে পড়ছেন, তা নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপের মাধ্যমে ফুঠে উঠেছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের এই নীতিগত পরিবর্তনকে স্বাগত জানালেও তেমন খুশি হতে পারছেন না ফিলিস্তিনি অধিকারকর্মীরা। তারা বলছেন, ইসরায়েলের প্রতি ওয়াশিংটনের সমর্থনের বিষয়টি ঢেলে সাজাতে হবে। শুধু প্রতীকী পদক্ষেপ ও বাগাড়াম্বর করলেই হবে না। রাজনৈতিক বিশ্লেষক আদম শাপিরো বলেছেন, এটি একটি পরিবর্তন। তবে এর মাধ্যমে ইসরায়েলে মার্কিন অস্ত্র হস্তান্তর বন্ধ হবে না। আর শেষ পর্যন্ত এটিই কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ।
২৬ মার্চ, ২০২৪

১০০ দিনে গড়াল গাজা যুদ্ধ
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যকার যুদ্ধ ১০০ দিনে গড়িয়েছে। ১০০ দিনের এই যুদ্ধে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় প্রায় ২৪ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে হামাসের হামলায় ১২০০ ইসরায়েলির প্রাণ গেছে। তবে এত প্রাণহানি হলেও এই যুদ্ধ এখনো থামার কোনো দৃশ্যমান লক্ষণ নেই। খবর রয়টার্সের। গত ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে প্রবেশ করে নজিরবিহীন হামলা চালিয়ে প্রায় ১২০০ ইসরায়েলিকে হত্যার পাশাপাশি প্রায় ২৫০ ইসরায়েলি ও বিদেশি নাগরিককে গাজায় বন্দি করে নিয়ে আসে হামাস। একই দিন হামাসকে নির্মূল এবং বন্দিদের মুক্তি নিশ্চিত করতে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী এই সংগঠনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে ইসরায়েল। গত নভেম্বরে সাত দিনের যুদ্ধবিরতি চুক্তির বিনিময়ে ১১০ ইসরায়েলি বন্দিকে হামাস মুক্তি দিলেও এখনো তাদের হাতে শতাধিক বন্দি আছেন। হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রথম দিকে ইসরায়েলি বাহিনী উত্তর গাজায় হামলা চালায়। ফলে ইসরায়েলি হামলা থেকে বাঁচতে অধিকাংশ ফিলিস্তিনি দক্ষিণ গাজায় এসে আশ্রয় গ্রহণ করেন। সম্প্রতি দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস শহরে হামলা জোরদার করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। তাদের দাবি, শহরটিতে শক্ত ঘাঁটি গেড়ে বসেছে হামাস। ফলে বর্তমানে অধিকাংশ ফিলিস্তিনি মিসরের সীমান্তবর্তী রাফাহ শহরে আশ্রয় নিয়েছেন। সেখানে খোলা আকাশের নিচে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন তারা। শনিবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ২৩ হাজার ৮৪৩ জন নিহত এবং ৬০ হাজার ৩১৭ জনের বেশি আহত হয়েছেন। নিহতদের অধিকাংশ নারী ও শিশু।
১৪ জানুয়ারি, ২০২৪

অবশেষে গাজা যুদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশে ছড়াল
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় হামাসকে নির্মূলের নামে তিন মাস আগে যুদ্ধ শুরু করে ইসরায়েল। এরপর থেকেই আশঙ্কা করা হচ্ছিল যে এই যুদ্ধ গাজা পেরিয়ে মধ্যপ্রাচ্যর অন্যান্য অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়তে পারে। অবশেষে এই আশঙ্কাই সত্য হলো। ইয়েমেনে সশস্ত্র গোষ্ঠী হুতিদের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের হামলায় যুদ্ধ অন্য অঞ্চলে ছড়াল। শুক্রবার (১১ জানুয়ারি) বিবিবির এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানানো হয়েছে। লোহিত সাগরে বিদেশি জাহাজে হুতিদের হামলার সক্ষমতা খর্ব করতে শুক্রবার ভোরে ইয়েমেনে ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠীটির বিভিন্ন সামরিক স্থাপনায় বিমান হামলা শুরু করার কথা জানায় যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা স্থানীয় সময় ভোরে ইয়েমেনের রাজধানী সানা বিমানবন্দর, তৃতীয় বৃহত্তম শহর তাইজ, লোহিত সাগরের প্রধান বন্দর হোদেইদাহের একটি নৌঘাঁটি ও উপকূলীয় হাজ্জাহ গভর্নরেটের সামরিক স্থাপনায় বিস্ফোরণের কথা নিশ্চিত করেছেন। এসব হামলায় পাঁচ হুতি যোদ্ধা নিহত হয়েছেন। মূলত গত অক্টোবরে গাজা যুদ্ধ শুরু হলে হামাসের প্রতি সমর্থন জানায় হুতি বিদ্রোহীরা। তাদের সমর্থনের অংশ হিসেবে নভেম্বর থেকে লোহিত সাগরে ইসরায়েলগামী ও ইসরায়েল সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন জাহাজে হামলা করে আসছে তারা। তাদের হামলার ভয়ে বিভিন্ন জাহাজ কোম্পানি হয় লোহিত সাগর এড়িয়ে ভিন্ন পথে গন্তব্যে যাচ্ছে নতুবা চুক্তিই বাতিল করে দিচ্ছে। বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, লোহিত সাগরে জাহাজ চলাচল নিশ্চিতে ইয়েমেনে হামলা চালানোর দাবি করা হলেও বিষয়টা শুধু তাই নয়। গাজায় সংগঠিত ঘটনার সঙ্গে এর সরাসরি সংযোগ রয়েছে। এটি গাজা সংকটেরই প্রতিনিধিত্ব করে। যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের হামলা সত্ত্বেও লোহিত সাগরে ইসরায়েলগামী জাহাজে হামলা অব্যাহত রাখার কথা জানিয়েছেন হুতিরা। এমনকি মার্কিন ও ব্রিটিশ হামলার প্রতিশোধ নেওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে গোষ্ঠীটি। ইয়েমেনে হামলার প্রতিবাদে দেশটির রাজধানী সানায় কয়েক লাখ মানুষ বিক্ষোভ করেছেন। এ ছাড়া সিরিয়া ও ইরাকে মার্কিন সেনাদের নিশানা করে যে হামলা হয়ে আসছিল তার পরিমাণ আরও বাড়াতে পারে ইরানপন্থি মিলিশিয়ারা। যদি ইয়েমেন হামলা-পাল্টা হামলা চলতে থাকে; পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে যায় তাহলে ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যকার সর্বাত্মক যুদ্ধ এড়ানো যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। গাজা যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই ইসরায়েলি সেনাদের সঙ্গে সীমান্তে প্রতিদিন গুলি বিনিময় করছে ইরান সমর্থিত এই সশস্ত্র গোষ্ঠীটি।
১৩ জানুয়ারি, ২০২৪

গাজা যুদ্ধ শেষ করতে ইসরায়েলকে সময় বেঁধে দিল যুক্তরাষ্ট্র
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যকার যুদ্ধ তিন মাসে গড়িয়েছে। দিন যত সামনে গড়াচ্ছে গাজায় যুদ্ধবিরতির দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর চাপ ততই বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে গাজায় যুদ্ধ শেষ করতে ইসরায়েলকে সময় বেঁধে দিয়েছে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসন। বৃহস্পতিবার (৭ ডিসেম্বর) মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে এমন তথ্য জানিয়েছে আলজাজিরা। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের খবরে বলা হয়, গত সপ্তাহে তেলআবিবে ইসরায়েলি যুদ্ধকালীন মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। ওই বৈঠকে তিনি বলেন, বাইডেন প্রশাসন মনে করে, এই যুদ্ধ আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে শেষ হওয়া উচিত। এটি আরও কয়েক মাস স্থায়ী হতে পারে না। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন কথার জবাবে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার স্বার্থে ইসরায়েলি কর্মকর্তারা গাজায় স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু ব্লিঙ্কেনকে তারা কোনো নিশ্চয়তা দেননি। গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালিয়ে ১২০০ ইসরায়েলিকে হত্যার পাশাপাশি দুই শতাধিক ইসরায়েলি ও বিদেশি নাগরিককে বন্দি করে গাজায় নিয়ে আসে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এমন নজিরবিহীন হামলার জবাবে হামাসকে নির্মূলের লক্ষ্যে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সরকার। ইসরায়েলি হামলায় গাজায় এরই মধ্যে ১৬ হাজার ২৪৮ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। দেড় মাস ধরে ইসরায়েলি বাহিনীর সর্বাত্মক হামলার পর গত ২৪ নভেম্বর প্রথমবারের মতো চার দিনের যুদ্ধবিরতি কার্যকর করে ইসরায়েল ও হামাস। এরপর দুই দফা এই যুদ্ধবিরতি চুক্তির মেয়াদ বাড়াতে একমত হয় দুপক্ষ। তবে শুক্রবার যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শেষ হলেও চুক্তি বাড়ানো নিয়ে ঘোষণা দেয়নি কোনো পক্ষই। তবে গাজায় যুদ্ধবিরতি আবারও কার্যকর করতে আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছে কাতার।
০৭ ডিসেম্বর, ২০২৩

গাজা যুদ্ধ নিয়ে বৈঠকে বসছে আরব লিগ-ওআইসি
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় যুদ্ধ নিয়ে আলোচনা করতে সৌদি আরবের রিয়াদে বৈঠকে বসছেন আরব লিগ ও ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) নেতারা। আরব ও মুসলিম বিশ্বের প্রধান এই দুই সংগঠনের সম্মেলনের আয়োজন করছে সৌদি আরব। খবর আনাদোলুর। এক বিবৃতিতে সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজা সংঘাত ও এর কারণে সৃষ্ট মানবিক বিপর্যয় নিয়ে শনিবার রিয়াদে আরব লিগের শীর্ষ সম্মেলন হবে। এর পরের দিন রোববার ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সদস্য দেশগুলোর মধ্যে আরেকটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে গত সোমবার ওআইসি জানিয়েছিল, গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলা নিয়ে আলোচনার জন্য ১২ নভেম্বর রিয়াদে একটি জরুরি শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। তবে আরব লিগ ও ওআইসির দুটি শীর্ষ সম্মেলন হলেও আরব-আফ্রিকান শীর্ষ সম্মেলন স্থগিত করেছে রিয়াদ। এই সম্মেলনটি ১২ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। গত ৭ অক্টোবর গাজা থেকে ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। হামাসের হামলার জবাবে গাজায় টানা বিমান হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। অব্যাহত বোমাবর্ষণের মধ্যেই এবার সেখানে বড় ধরনের স্থল হামলা শুরু করেছে ইসরায়েলি সেনারা। অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় টানা এক মাসের অব্যাহত হামলায় নিহত মানুষের সংখ্যা সাড়ে ১০ হাজার ছাড়িয়েছে। তাদের মধ্যে প্রায় অর্ধেক শিশু রয়েছে। এ ছাড়া ইসরায়েলি হামলা থেকে বাঁচতে ঘরছাড়া হয়েছেন ১৫ লাখ ফিলিস্তিনি।
১০ নভেম্বর, ২০২৩

গাজা যুদ্ধ নিয়ে আবারও বৈঠকে বসছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ
ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল যুদ্ধ নিয়ে আবারও বৈঠকে বসবে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ। সোমবার স্থানীয় সময় বিকেল ৩টায় এ বৈঠক হবে। খবর তাসের। গত ৭ অক্টোর ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এখন পর্যন্ত চারবার বৈঠকে বসেছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ। তবে পরিষদের স্থায়ী সদস্যদের ভেটো ও পাল্টা ভেটোর কারণে কোনোবারই কোনো প্রস্তাব পাস হয়নি। একটি সূত্রের বরাত দিয়ে রুশ বার্তা সংস্থা তাস জানিয়েছে, এবারের বৈঠক হবে রুদ্ধদ্বার। চীন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) এই বৈঠকের অনুরোধ করেছে। চীন নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হলেও আরব আমিরাত অস্থায়ী সদস্য। নিরাপত্তা পরিষদের আজকের বৈঠকে উত্তর গাজার জাবালিয়া শরণার্থী শিবির এবং আল-শিফা হাসপাতালের পাশে অ্যাম্বুলেন্সের বহরে ইসরায়েলি হামলা নিয়ে আলোচনা হবে। গত মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) গাজার জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে বোমা হামলা চালায় ইসরায়েল। ইসরায়েলি এই হামলায় অন্তত ৫০ জন নিহত এবং ১৫০ জন আহত হয়েছে। এ ঘটনার পরপর সারা বিশ্বে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নিন্দার ঝড় ওঠে। এ ছাড়া গত শুক্রবার গাজা উপত্যকার আল-শিফা হাসপাতালের পাশে একটি অ্যাম্বুলেন্স বহরে ইসরায়েল বোমা হামলা চালালে ১৫ জন নিহত এবং ৬০ জন আহত হন।
০৬ নভেম্বর, ২০২৩
X