কুমিল্লায় ভূমিকম্পের আতঙ্কে পদদলিত হয়ে শতাধিক গার্মেন্টস শ্রমিক আহত
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে ভূমিকম্পের আতঙ্কে শতাধিক গার্মেন্টস শ্রমিক পদদলিত হয়ে আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে তিনজনকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। শনিবার (২ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার ছুপুয়া এলাকায় আমির শার্ট গামের্ন্টসে এ ঘটনা ঘটে। আহত রোগী, প্রত্যক্ষদর্শী ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, শনিবার (২ ডিসেম্বর) সকাল ৯টা ৩৬ মিনিটে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামসহ আশপাশের এলাকায় ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এ সময় উপজেলার ছুপুয়া এলাকায় অবস্থিত আমির শার্ট নামক একটি গার্মেন্টসের শ্রমিকরা আতঙ্কিত হয়ে এদিক-ওদিক ছুটাছুটি শুরু করে। তাড়াহুড়া করে নামতে গিয়ে পদদলিত হয়ে ও ওপর থেকে লাফ দিয়ে কমপক্ষে শতাধিক শ্রমিক আহত হয়েছেন। এ সময় গার্মেন্টসের গেট বন্ধ থাকার কারণে কেউ বেরিয়ে আসতে পারেনি বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। খবর পেয়ে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসের কর্মী ও স্থানীয় লোকজন আহতদের উদ্ধার করে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে। তার মধ্যে তিনজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া অনেকে বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েছেন। চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. গোলাম কিবরিয়া টিপু জানান, ভূমিকম্পে আতঙ্কে ছুটাছুটি করতে গিয়ে আহত হওয়া ৮০ জন গার্মেন্টস শ্রমিককে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে উন্নত চিকিৎসার জন্য সাহেদা, আয়শা ও অজ্ঞাতনামা এক নারীসহ তিনজনকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আমির শার্ট গার্মেন্টেসের সহকারী ভাইস প্রেসিডেন্ট (এভিপি) কাজী মো. ইউসুফ ও এসভিপি শাহজাহান সাজু জানান, আমির শার্ট গার্মেন্টেসের তিনটি ভবন রয়েছে। তার মধ্যে একটিতে প্রশাসনিক ও অপর দুইটিতে প্রোডাকশনের কাজ চলে। প্রোডকশনের দুটি ভবনের চারটি ফ্লোরে ১৭০০ শ্রমিক কাজ করেন।   তারা বলেন, ভবনে ওঠানামার জন্য আমাদের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রয়েছে কিন্তু ভূমিকম্পের আতঙ্কে ছুটাছুটি করতে গিয়ে আহত হয়েছে। তবে গেট বন্ধ থাকার বিষয়টি তারা অস্বীকার করেন। ফায়ার সার্ভিসের চৌদ্দগ্রাম স্টেশন কর্মকর্তা মেহেদী হাসান জানান, আমির শার্ট গার্মেন্টেসে দুর্ঘটনার খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আহতদের উদ্ধার করে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসি। কতজন আহত হয়েছে তার সঠিক হিসাব এখনো করা হয়নি তবে নিহতের কোনো ঘটনা নাই বলে তিনি জানান।
০২ ডিসেম্বর, ২০২৩

গার্মেন্টস শ্রমিক হত্যার বিচার করতে হবে : বাম জোট
পুলিশর গুলিতে নিহত গার্মেন্টস শ্রমিক হত্যার বিচারের দাবি জানিয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। বুধবার জোটের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়েছে।  বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মো. শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক  রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, বাসদ (মার্কসবাদী)’র কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মাসুদ রানা, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি আব্দুল আলী এক যুক্ত বিবৃতিতে গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরির দাবি মেনে নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান এবং শ্রমিক হত্যার বিচার দাবি করেন। বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, গত কয়েকদিন ধরে গার্মেন্টস্ শ্রমিকরা তাদের মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে রাস্তায় নেমেছেন। ইতিমধ্যে রাসেল হাওলাদার ও ইমরান নামে দুই জন শ্রমিক পুলিশের গুলিতে মারা গেছেন, আরও অনেকেই আহত হয়েছেন। সরকার শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরির দাবির প্রতি কর্ণপাত না করে তার উপর গুলি চালাচ্ছে। তারা বাঁচার মতো মজুরি চাইছে আর সরকারের কাছ থেকে পাচ্ছে গুলি, হামলা।  সম্প্রতি মজুরি বোর্ডের সভায় মালিকরা যে বেতন কাঠামো প্রস্তাব করেছেন তা শুধু অগ্রহণযোগ্যই নয়, এটা শ্রমিকদের জন্য অপমানজনক।  তারা বলেন, গার্মেন্টস শ্রমিকরা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে কম মজুরি পান। শ্রমিকদের নির্মম শোষণের মাধ্যমেই গার্মেন্টস মালিকদের পাহাড়প্রমাণ মুনাফা সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু বেঁচে থাকার মতো মজুরিও তারা গার্মেন্টস শ্রমিকদের দিতে চাইছেন না।
০১ নভেম্বর, ২০২৩

পোশাক শ্রমিকের মজুরি ২৫ হাজার টাকার দাবি
রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২২ থেকে ২৫ হাজার টাকার মধ্যে নির্ধারণের দাবিতে নিম্নতম মজুরি বোর্ডের নিকট স্মারকলিপি দিয়েছে খাতসংশ্লিষ্ট ৬টি শ্রমিক সংগঠন।  বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে শ্রমিক সমাবেশের পর এসব সংগঠন মিছিল নিয়ে বোর্ড কার্যালয়ে যান। সেখানে বোর্ড চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী মোল্লার হাতে স্মারকলিপি তুলে দেন।  এ সময় শ্রমিকরা কার্যালয়ের নিচে দাবি আদায়ের স্লোগান দিতে থাকেন। বোর্ডের পক্ষ থেকে শ্রমিকদের দাবিগুলো যৌক্তিকতার সঙ্গে বিবেচনা করা হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়। বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আয়োজনে কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছে- বাংলাদেশ পোশাকশিল্প শ্রমিক ফেডারেশন; বাংলাদেশ বিপ্লবী গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন; গ্রিনবাংলা গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশন; জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক জোট বাংলাদেশ; জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন এবং বাংলাদেশ সংযুক্ত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন।  নেতারা বলেন, দ্রব্যমূল্য ও জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধিতে বর্তমান বেতন কাঠামোতে শ্রমিকদের সংসার চলে না। বিপরিতে ডলারের দাম বাড়ায় মালিকরা রপ্তানিতে বেশি টাকা আয় কর আয়েশি জীবন কাটাচ্ছেন। কিন্তু শ্রমিকদের জন্য তরা কিছুই করছেনা। যে জন্য পরিবেশ পরিস্থিতি ও প্রতিযোগী দেশের সঙ্গে সমন্বয় করে তৈরি পোশাক শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণের দাবি জানান তারা। নিম্নতম মজুরি বোর্ডের কার্যালয়ে গিয়ে জানা গেছে, শ্রমিক নেতারা স্মারকলিপি জামা দেওয়ার পর বোর্ড সভা শুরু হয়েছে। সেখান মালিক, শ্রমিক ও সরকার পক্ষের সদস্যরা উপস্থিতি ছিলেন।   নেতারা দাবি সম্পর্কে বলেন, বর্তমান বাজারদরের সঙ্গে সংগতি রেখে সপ্তম গ্রেডের সহকারী অপারেটরের মজুরি ২৩ হাজার টাকা নির্ধারণের পাশাপাশি ৭টি গ্রেডের মধ্যে পঞ্চম এবং ষষ্ঠ গ্রেড বিলুপ্তির সুপারিশ করছি। বাকি অন্যান্য গ্রেডে ১০ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ ব্যবধান রেখে নতুন মজুরি কাঠামো প্রণয়ন করার দাবি করছি।  তবে, এ সময় অন্যান্য সংগঠনের পক্ষ থেকে কেউ কেউ নিম্নতম মজুরি ২২, ২৩, ২৪ এবং ২৫ হাজার টাকা নির্ধারণের দাবি জানিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। এ নিয়ে শ্রমিক সংগঠনের মধ্যে মতবিরোধ থাকলেও ২২ থেকে ২৫ হাজার টাকা মধ্যে মজুরির দাবিতে প্রায় সব সংগঠন একমত।  বিভিন্ন দেশের উদাহরণ দিয়ে নেতারা বলেন, চীনে পোশাক শ্রমিকদের বেতন ২৬২ ডলার, ভারতে ১২৮ ডলার, ইন্দোনেশিয়া ১৩৭ ডলার, কম্বোডিয়া ১৯৪ ডলার, মালয়েশিয়া২৫০ থেকে  ২৭৩ ডলার, ফিলিপিন্স ২৪৪ ডলার, ভিয়েতনাম ১৬৮ ডলার, তুরস্ক ৩০৭ ডলার এবং বাংলাদেশ বর্তমান ডলারের মূল্যের ভিত্তিতে সাড়ে ৭৫ ডলার মজুরি পাচ্ছে। যা মেটেই মানবিক নয় বলে তারা দাবি করন। যে জন্য যৌক্তিক পর্যায়ে শ্রমিকদের বেতন নির্ধারণে তারা জোর দাবি জানিয়েছেন।  এ ছাড়া পিস রেট হিসাবে সোয়েটার শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণ ও নিয়োগপত্রে শ্রমিকের গ্রেড উল্লেখ রাখার দাবি করা হয়েছে।  পাশপাশি পিস হিসেবে কর্মরত শ্রমিকদের নির্ধারিত কর্মঘণ্টার পর ওভারটাইমের পিস রেটে  ডাবল নির্ধারণের সুস্পষ্ট বিধান আকারে গেজেট প্রকাশ করার দাবি জানয়েছেন শ্রমিক নেতারা।  আরও পড়ুন : ঋণ বিতরণে ১১ ব্যাংকের এডিআর সীমা লঙ্ঘন পোশাক শ্রমিকরা জানান, বর্তমানে ৪ সদস্যের একটি শ্রমিক পরিবারকে মাসে ১৬ হাজার টাকা খাদ্যবাবদ খরচ দরকার, বাড়িভাড়া বাবদ ১০ হাজার টাকা, ২ সন্তানের পড়ালেখার জন্য ন্যূনতম খরচ ২ হাজার টাকা, চিকিৎসা খরচ ন্যূনতম ২ হাজার টাকা, যাতায়াত খরচ ১ হাজার টাকা, বিনোদন ২ হাজার টাকা, ১ হাজার টাকা মাসিক সঞ্চয়  এবং খাদ্যবহির্ভূত খরচ ১ হাজার টাকা খরচসহ ন্যূনতম ৩৫০০০ টাকা প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমান বেতন কাঠামোতে ৮ হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরি।  তবে মালিকপক্ষ পরিবেশ, পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের চুক্তিভিত্তিক বেতন বাড়িয়েছে বলে জানা গেছে। বর্তমানে কারখানাভেদে শ্রমিকরা নিম্নতম ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা মজুরি পাচ্ছেন বলে মালিক পক্ষ দাবি করছে।
১০ আগস্ট, ২০২৩
X