রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২২ থেকে ২৫ হাজার টাকার মধ্যে নির্ধারণের দাবিতে নিম্নতম মজুরি বোর্ডের নিকট স্মারকলিপি দিয়েছে খাতসংশ্লিষ্ট ৬টি শ্রমিক সংগঠন।
বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে শ্রমিক সমাবেশের পর এসব সংগঠন মিছিল নিয়ে বোর্ড কার্যালয়ে যান। সেখানে বোর্ড চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী মোল্লার হাতে স্মারকলিপি তুলে দেন।
এ সময় শ্রমিকরা কার্যালয়ের নিচে দাবি আদায়ের স্লোগান দিতে থাকেন। বোর্ডের পক্ষ থেকে শ্রমিকদের দাবিগুলো যৌক্তিকতার সঙ্গে বিবেচনা করা হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আয়োজনে কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছে- বাংলাদেশ পোশাকশিল্প শ্রমিক ফেডারেশন; বাংলাদেশ বিপ্লবী গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন; গ্রিনবাংলা গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশন; জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক জোট বাংলাদেশ; জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন এবং বাংলাদেশ সংযুক্ত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন।
নেতারা বলেন, দ্রব্যমূল্য ও জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধিতে বর্তমান বেতন কাঠামোতে শ্রমিকদের সংসার চলে না। বিপরিতে ডলারের দাম বাড়ায় মালিকরা রপ্তানিতে বেশি টাকা আয় কর আয়েশি জীবন কাটাচ্ছেন। কিন্তু শ্রমিকদের জন্য তরা কিছুই করছেনা। যে জন্য পরিবেশ পরিস্থিতি ও প্রতিযোগী দেশের সঙ্গে সমন্বয় করে তৈরি পোশাক শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণের দাবি জানান তারা।
নিম্নতম মজুরি বোর্ডের কার্যালয়ে গিয়ে জানা গেছে, শ্রমিক নেতারা স্মারকলিপি জামা দেওয়ার পর বোর্ড সভা শুরু হয়েছে। সেখান মালিক, শ্রমিক ও সরকার পক্ষের সদস্যরা উপস্থিতি ছিলেন।
নেতারা দাবি সম্পর্কে বলেন, বর্তমান বাজারদরের সঙ্গে সংগতি রেখে সপ্তম গ্রেডের সহকারী অপারেটরের মজুরি ২৩ হাজার টাকা নির্ধারণের পাশাপাশি ৭টি গ্রেডের মধ্যে পঞ্চম এবং ষষ্ঠ গ্রেড বিলুপ্তির সুপারিশ করছি। বাকি অন্যান্য গ্রেডে ১০ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ ব্যবধান রেখে নতুন মজুরি কাঠামো প্রণয়ন করার দাবি করছি।
তবে, এ সময় অন্যান্য সংগঠনের পক্ষ থেকে কেউ কেউ নিম্নতম মজুরি ২২, ২৩, ২৪ এবং ২৫ হাজার টাকা নির্ধারণের দাবি জানিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। এ নিয়ে শ্রমিক সংগঠনের মধ্যে মতবিরোধ থাকলেও ২২ থেকে ২৫ হাজার টাকা মধ্যে মজুরির দাবিতে প্রায় সব সংগঠন একমত।
বিভিন্ন দেশের উদাহরণ দিয়ে নেতারা বলেন, চীনে পোশাক শ্রমিকদের বেতন ২৬২ ডলার, ভারতে ১২৮ ডলার, ইন্দোনেশিয়া ১৩৭ ডলার, কম্বোডিয়া ১৯৪ ডলার, মালয়েশিয়া২৫০ থেকে ২৭৩ ডলার, ফিলিপিন্স ২৪৪ ডলার, ভিয়েতনাম ১৬৮ ডলার, তুরস্ক ৩০৭ ডলার এবং বাংলাদেশ বর্তমান ডলারের মূল্যের ভিত্তিতে সাড়ে ৭৫ ডলার মজুরি পাচ্ছে। যা মেটেই মানবিক নয় বলে তারা দাবি করন। যে জন্য যৌক্তিক পর্যায়ে শ্রমিকদের বেতন নির্ধারণে তারা জোর দাবি জানিয়েছেন।
এ ছাড়া পিস রেট হিসাবে সোয়েটার শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণ ও নিয়োগপত্রে শ্রমিকের গ্রেড উল্লেখ রাখার দাবি করা হয়েছে।
পাশপাশি পিস হিসেবে কর্মরত শ্রমিকদের নির্ধারিত কর্মঘণ্টার পর ওভারটাইমের পিস রেটে ডাবল নির্ধারণের সুস্পষ্ট বিধান আকারে গেজেট প্রকাশ করার দাবি জানয়েছেন শ্রমিক নেতারা।
আরও পড়ুন : ঋণ বিতরণে ১১ ব্যাংকের এডিআর সীমা লঙ্ঘন
পোশাক শ্রমিকরা জানান, বর্তমানে ৪ সদস্যের একটি শ্রমিক পরিবারকে মাসে ১৬ হাজার টাকা খাদ্যবাবদ খরচ দরকার, বাড়িভাড়া বাবদ ১০ হাজার টাকা, ২ সন্তানের পড়ালেখার জন্য ন্যূনতম খরচ ২ হাজার টাকা, চিকিৎসা খরচ ন্যূনতম ২ হাজার টাকা, যাতায়াত খরচ ১ হাজার টাকা, বিনোদন ২ হাজার টাকা, ১ হাজার টাকা মাসিক সঞ্চয় এবং খাদ্যবহির্ভূত খরচ ১ হাজার টাকা খরচসহ ন্যূনতম ৩৫০০০ টাকা প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমান বেতন কাঠামোতে ৮ হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরি।
তবে মালিকপক্ষ পরিবেশ, পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের চুক্তিভিত্তিক বেতন বাড়িয়েছে বলে জানা গেছে। বর্তমানে কারখানাভেদে শ্রমিকরা নিম্নতম ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা মজুরি পাচ্ছেন বলে মালিক পক্ষ দাবি করছে।
মন্তব্য করুন