হবিগঞ্জে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ
হবিগঞ্জের মাধবপুরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ফোর লেনে কাজ করার সময় দুর্ঘটনায় গ্যাস লাইনের পাইপ ছিদ্র হয়ে যায়। এতে মাধবপুর উপজেলার সব শিল্প কারখানায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে।  বৃহস্পতিবার (১৬ মে) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়নের শাহপুর এলাকায় ম্যাটাডোর কোম্পানির কাছে এ ঘটনা ঘটে। জানা যায়, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে চলমান ফোর লেন প্রকল্পের নির্মাণাধীন ব্রিজের কাজে ভেকু ব্যবহারের সময় অসতর্কতাবসত গ্যাস লাইনের পাইপ ছিদ্র হয়ে যায়। এতে মাধবপুর উপজেলার সব শিল্প কারখানায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে শিল্প কারখানার উৎপাদনে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়েছে।  জালালাবাদ গ্যাস শাহজিবাজারের ব্যবস্থাপক জুনাইদ আহমেদ সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, আমরা দুর্ঘটনাস্থলে কাজ করছি। আশা করি সন্ধ্যার মধ্যে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক করতে পারব।
১৬ মে, ২০২৪

জালালাবাদ গ্যাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ, মুখ খুললেন ব্যারিস্টার সুমন
জালালাবাদ গ্যাসের সংযোগের নামে গ্রাহকদের কাছ থেকে নেওয়া ১.৩৩ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তুলেছে এলাকাবাসী। এ নিয়ে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট কিছু দপ্তরে লিখিত অভিযোগও দেওয়া হয়েছে। ১ যুগ পার হয়ে গেলেও এর সমাধান না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন স্থানীয়রা। সম্প্রতি হবিগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সৈয়দ সাইদুল হক সুমন মাধবপুরের একটি জনসভায় জলালাবাদ গ্যাসের অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে বক্তব্য দিলে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। ব্যারিস্টার সুমন বলেন, ওই টাকা পেট্রোবাংলার তথা জালালাবাদ গ্যাসের পেটে, না কোনো নেতার পেটে রয়েছে তা খতিয়ে দেখা হবে। তার এলাকায় কোনো অনিয়ম ও দুর্নীতি সহ্য করা হবে না। তিনি দ্রুত জনগণের টাকা জনগণের হাতে ফেরত দেওয়ার আহ্বান জানান। সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাধবপুর উপজেলার বাঘাসুরা ইউনিয়ন ও শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার নুরপুর ইউনিয়নের ২০১০ সালে দেশের স্বনামধন্য শিল্পপ্রতিষ্ঠান (বাদশা গ্রুপ, আরএকে গ্রুপ, স্কয়ার গ্রুপ, প্রাণ-আরএফএল) তাদের নির্মাণকাজ শুরু করে। এমতাবস্থায় বাঘাসুরা ও নোয়াপাড়া ও জগদীশপুর ইউনিয়নের নেতৃস্থানীয় লোকজন জালালাবাদ গ্যাস থেকে আবাসিক সংযোগ নেওয়ার জন্য রিয়াজনগর, মানিকপুর, সুন্দরপুর, হরিতলা, ফতেহপুর, কালিকাপুর গ্রামের স্থানীয় জনতা গণদাবি বাস্তবায়ন পরিষদ নামে একটি প্রতিষ্ঠান করে গ্যাস সংযোগ পাওয়ার জন্য আন্দোলনের ডাক দেয়। এ সময় বিভিন্ন কোম্পানির লাইনে গ্যাসে দেওয়ার কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত হয়, উক্ত এলাকায় গ্যাস সংযোগ দিতে যে টাকা খরচ হবে তা বিভিন্ন কোম্পানি দেবে। সেই সিদ্ধান্ত মোতাবেক বিভিন্ন কোম্পানির কাছ থেকে মোট ১.৩৩ কোটি টাকা তোলা হয়। পরে তা উক্ত এলাকায় আবাসিক সংযোগের জামানত হিসেবে শাহজিবাজার জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেড বরাবরে পে-অর্ডারের মাধ্যমে জমা দেওয়া হয়। এর কিছু দিন পর সরকার ২০১০ সালের ১৩ জুলাই আবাসিক খাতে নতুন গ্যাস-সংযোগ দেওয়া বন্ধ ঘোষণা করে। এরপর থেকে আজ অবধি গ্যাস সংযোগের বিষয়টি ধামাচাপা থাকে। স্থানীয় ইউপি সদস্য শামছুল আলম জানান, যেহেতু টাকা পে অর্ডারের মাধ্যমে জালালাবাদ গ্যাসকে পেমেন্ট করা হয়েছে তাই এটি অস্বীকার করারও সুযোগ নাই। আবার এ টাকা কেউ একা তোলার মতো কোনো সুযোগ নাই। গ্যাসলাইন পেতে স্থানীয়দের নিয়ে গড়ে ওঠা গণদাবি বাস্তবায়ন পরিষদ কমিটির আহ্বায়ক সাইদুর রহমান তালুকদার জানান, আইন করে আবাসিক লাইন বন্ধ করে দেওয়ায় আমরা গ্যাসের লাইন পাচ্ছি না। আমাদের এলাকার ৮৫ লাখ টাকা এরা ফেরত দিচ্ছে না। আমরা সংযোগ না পেলে উচ্চ আদালতে যাব। এ ব্যাপারে জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেডের শাহজীবাজারের আঞ্চলিক কার্যালয়ের আঞ্চলিক কার্যালয় ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী হোসাইন মোহাম্মদ জুনায়েদ জানান, সব টাকা আমাদের ফান্ডে জমা রয়েছে। আত্মসাৎ করার প্রশ্নই আসে না। গ্রাহকরা বিধি মোতাবেক আবেদন করলে সেই টাকা ফেরত পাবে।  তবে এক যুগ ধরে গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন কি না- এ প্রশ্ন করলে কোনো উত্তর দিতে পারেননি তিনি। প্রতিষ্ঠানটির হবিগঞ্জ এলাকার উপমহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ রুহুল করিম চৌধুরী বলেন, পেট্রোবাংলা তথা জালালাবাদ গ্যাস নিয়ে আত্মসাতের ব্যাপারে এমপি মহোদয়ের বক্তব্যটি সত্য নয়। গ্রাহকরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমাদের কাছে আসলে সে টাকা ফেরত দিতে আমরা ব্যবস্থা নিব। অন্যান্য এলাকার অনেক গ্রাহককে আমরা টাকা ফেরত দিয়েছি। সরকারিভাবে গ্যাসের আবাসিক লাইন বিতরণ বন্ধ রয়েছে।
১৪ মে, ২০২৪

সাভারে ৫ শতাধিক গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন
রাজধানীর আশুলিয়া থানার কাশিমপুরের কয়েকটি এলাকায় অভিযান চালিয়েছে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড। অভিযানে প্রায় এক কিলোমিটারে ৫ শতাধিক অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে সংস্থাটি। সোমবার (১৩ মে) দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আশুলিয়ার আওতাধীন গাজীপুরের কাশিমপুরের কাজি মার্কেট, সুরাবাড়ি ও কাশিমপুর এলাকায় এ অভিযান পরিচালনা করেন গাজীপুর জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুমাইয়া মমিন। আশুলিয়া তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী আবু সালেহ মোহাম্মদ খাদেমুদ্দীন কালবেলাকে বলেন, কাশিমপুর থানা ও গাজীপুর জেলা পুলিশের সহযোগিতায় কাশিমপুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় ৪টি পয়েন্ট সিলগালা করে পাঁচ শতাধিক অবৈধ আবাসিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। অভিযানের সময় প্রায় ৩০০ মিটার পাইপ উদ্ধার করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন গাজীপুর জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুমাইয়া মমিন, উপব্যবস্থাপক আনিসুজ্জামান, মো. আব্দুল মান্নান, উপব্যবস্থাপক মো. সাকিব বিন আব্দুল হান্নান, সহকারী প্রকৌশলী মো. আসোয়াত হোসেন ও উপসহকারী প্রকৌশলী মো. সুমন আলী প্রমুখ।
১৩ মে, ২০২৪

পাইপলাইনে গ্যাস, ১০ বছরেও আবেদন করেনি কেউ!
ঝিনাইদহে সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের (এসজিসিএল) পাইপলাইনে প্রাকৃতিক গ্যাস মজুদ থাকলেও গত ১০ বছরে কোনো শিল্প ও কলকারখানা গ্যাসের জন্য আবেদন করেননি। এক সময় ঝিনাইদহের মানুষ এই গ্যাসের জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করেছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা গ্যাসলাইন নির্মাণের জন্য সংসদে দাবিও তুলেছিলেন। কিন্তু যখন গ্যাসের লাইন বসল, লাইনে গ্যাস সরবরাহ শুরু হলো তখন জেলাবাসী নিশ্চুপ রয়েছে।   অথচ সেই প্রাকৃতিক গ্যাস পাইপলাইনের মাধ্যমে ঝিনাইদহে এসেছে ২০১৪ সালে। গ্যাস আসার পর ঝিনাইদহের কোনো জনপ্রতিনিধি সংসদে শিল্পকারখান ও বাসাবাড়িতে গ্যাস সরবরাহের জন্য কথা বলেননি, করেননি কেউ আন্দোলন। ইতোমধ্যে একই লাইনের গ্যাস কুষ্টিয়ার কয়েকটি শিল্পকারখানায় সংযোগ প্রদান করা হয়েছে। এ বিষয়ে গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেডের ঝিনাইদহ টাউন বর্ডার স্টেশনের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা সহকারী ব্যবস্থাপক মীর মোবাশ্বের আলী মিন্টু জানান, ২০০৯ সালে গোটা দক্ষিণাঞ্চলে গ্যাসলাইন স্থাপনের প্রস্তাব পাস হয়। ২০১১ সাল থেকে এ অঞ্চলে জমি অধিগ্রহণ শুরু হয়। জমি অধিগ্রহণ ও ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকদের ৪১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা দেওয়া হয়। কালীগঞ্জ, ঝিনাইদহ ও শৈলকুপার ৫২টি মৌজা থেকে ২৬ ফুট জায়গা নিয়ে মোট ১১৭ একর জমি অধিগ্রহণ গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড। তিনি জানান, ঝিনাইদহ জেলার ওপর দিয়ে ৫২ কিলোমিটার গ্যাসলাইন তৈরি করা হয় এবং ২০১৪ সালে গ্যাস পাইপলাইন তৈরি শেষে পাইপে গ্যাস সরবরাহ করা হয়। এখন পাইপে পর্যাপ্ত গ্যাস মজুদ রয়েছে। গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেডের একটি সূত্র জানায়, ঝিনাইদহের ব্যবসায়ীদের মধ্যে গ্যাস সংযোগ নেওয়ার কোনো ইচ্ছা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। সাধারণ মানুষের মধ্যেও নেই কোনো উচ্চবাচ্য। তবে কুষ্টিয়ার বিআরবি কেবল ও খুলনার কিছু ব্যবসায়ী তাদের কলকারখানায় গ্যাসলাইন নিয়েছে বলে ওই সূত্র জানায়। তথ্য নিয়ে জানা গেছে, সরকারি নির্দেশনা মতো শুধু শিল্প-কলকারখানায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্যাস সরবরাহ দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। সেই সঙ্গে টাউন বর্ডার স্টেশনের পাশে একটি সিএনজি স্টেশনে গ্যাস সংযোগ প্রদানের নিয়ম রয়েছে। সেখান থেকে সাধারণ মানুষ কম টাকায় সিলিন্ডারে ভরে গ্যাস বাসাবাড়িতে ব্যবহার করতে পারবেন। ঝিনাইদহে গ্যাস সংযোগের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেডের খুলনা ও ভেড়ামারার ইনচার্জ সুমন মল্লিক জানান, গ্যাস সরবরাহ করা আমাদের দায়িত্ব না, এই কাজটি করে সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড (এসজিসিএল)। আমার জানামতে, সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি ঝিনাইদহে কাজ শুরু করেছে। তারা ঝিনাইদহ বিসিক, যশোর অভয়নগর, নড়াইল অর্থনৈতিক অঞ্চল ও খুলনা বিসিক এলাকায় গ্যাস সংযোগ প্রদানের জন্য কাজ শুরু করেছে। বিষয়টি নিয়ে সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানির কোনো কর্মকর্তা গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি।  বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহ বিসিকের উপব্যবস্থাপক সেলিনা রহমান জানান, সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানির কর্মকর্তারা ঝিনাইদহে এসেছিলেন। তারা ডিপো করবে বিসিক থেকে অনেক দূরে। সেখান থেকে গ্যাসলাইন বিসিক পর্যন্ত আনতে ব্যবসায়ীদের নিজেদের অর্থ ব্যয় করতে হবে। এতে ব্যবসায়ীরা রাজি হননি। তিনি আরও জানান, আমরা সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানিকে বলেছি, ডিপোটা বিসিকের আশপাশে করতে। নিকটে গ্যাসের ডিপো করা হলে বিসিকের সব ব্যবসায়ীরা গ্যাস নিতে পারবেন। এ ব্যাপারে ঝিনাইদহের মানবাধিকার কর্মী ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের সভাপতি অধ্যক্ষ আমিনুর রহমান টুকু বলেন, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ঝিনাইদহে স্থাপিত বিসিক শিল্পকারখানাসহ বাসাবাড়িতে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করা গেলে বিদ্যুতের ওপর যেমন চাপ কমত, তেমনি মানুষের জীবনমানও আরও উন্নত হতো। ঝিনাইদহে যে প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ লাইন আছে তা তো অনেকেই জানেন না। উল্লেখ্য, ২০০৬ সালে গ্যাস সেক্টর ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট ফেজ-২ এর আওতায় খুলনাঞ্চলে গ্যাস সঞ্চালন লাইন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। এর প্রথম অংশে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা পয়েন্ট থেকে সিরাজগঞ্জ, নাটোরের বনপাড়া ও পাবনার ঈশ্বরদী হয়ে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা পর্যন্ত ১৪১ কিলোমিটার এবং এর দ্বিতীয় অংশে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা থেকে ঝিনাইদহ যশোর হয়ে খুলনা পর্যন্ত ১৬৫ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়।
১২ মে, ২০২৪

গ্যাস সরকারি, বিল যাচ্ছে দালালের পকেটে
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে অবৈধ গ্যাস সংযোগ দিয়ে মাসে কোটি কোটি টাকা বিল আদায় করছে দালালরা। প্রতিটি বাড়ির অবৈধ চুলা হিসেব করে তারা আদায় করছে বিল। এককালীন মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে আবাসিক বহুতল ভবনসহ বিভিন্ন বাড়িতে অবৈধ গ্যাস সংযোগ ও বিল নিচ্ছে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের লোকজন বলে অভিযোগ উঠেছে।  বৃহস্পতিবার (৯ মে) কদমতলী পশ্চিমপাড়া এলাকায় দুপুর ১২টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের অভিযানে বেরিয়ে এসেছে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য। অভিযানে ৪৮টি বাড়ির অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।   অভিযানের নেতৃত্বে থাকা তিতাস গ্যাসের নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা শাখার ম্যানেজার প্রকৌশলী মোস্তাক মাসুদ মোহাম্মদ ইমরান বলেন, অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্নে অভিযান চালানোর সময় কদমতলী পশ্চিমপাড়া এলাকার বিভিন্ন বাড়ির মালিকদের মাধ্যমে বিস্ময়কর তথ্য জানতে পারি। প্রত্যেক বাড়ির মালিকের কাছ থেকে লক্ষাধিক করে টাকা নিয়ে অবৈধ গ্যাস লাইন সংযোগ দিয়েছে কিছু দালাল চক্র। শুধু তাই নয় তারা আমাদের নাম ভাঙিয়ে প্রত্যেক বাড়িতে কয়টি চুলা ব্যবহার করা হয়, সে হিসেব করে মাসে মাসে বিল নিচ্ছে। প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি,তারা স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের লোক। অবৈধ গ্যাস সংযোগ দিয়ে কারা বিল আদায় করছে এমন প্রশ্নের জবাবে মোস্তাক মাসুদ মোহাম্মদ ইমরান বলেন, প্রাথমিকভাবে বাড়ির মালিকদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি, কদমতলী এলাকার জহির, তুহিন, জীবন, আলমগীর, সাইদুর রহমান সাজু, খায়ের, সুমন, দুলাল ও বাবুল ওরফে গ্যাস বাবুল এসব সংযোগ দিয়ে বিল নিচ্ছেন। অভিযানে অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা ৪৮টি বাড়ির মালিক স্বীকার করেছেন তারা প্রতিমাসে বিল নেয়। একই এলাকায় আরও বহু বাড়িতে অবৈধ সংযোগ রয়েছে যা পর্যায়ক্রমে অভিযান চালিয়ে বিচ্ছিন্ন করা হবে।  অবৈধ গ্যাস লাইন ও বিল আদায়কারীদের বিরুদ্ধে কোনো আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে কিনা জানতে চাইলে তিতাসের এ কর্মকর্তা বলেন, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হবে। অবৈধভাবে গ্যাস ব্যবহার থেকে সবাইকে বিরত থাকতে এলাকায় মাইকিং করা হবে। যদি বিরত না হয়, তাহলে সমস্ত এলাকার গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হবে।  অবৈধদের কারণে বৈধ গ্রাহকরা কেন গ্যাস বঞ্চিত হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অভিযান চালাতে গিয়ে দেখা গেছে, কদমতলী পশ্চিমপাড়া এলাকায় শতকরা মাত্র ৫টি বাড়িতে বৈধ গ্যাস রয়েছে। তারাও অনুমোদনের চেয়ে বেশি চুলা ব্যবহার করছে এবং এক দুই বছর ধরে বিল দিচ্ছে না। তাই এমন বৈধ গ্রাহকের জন্য ৯৫ শতাংশ অবৈধদের সুবিধা দিতে পারি না। অবৈধ সংযোগ চক্রের সঙ্গে তিতাস অফিসের কোনো লোক জড়িত থাকার প্রমাণ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথাও বলেন এ কর্মকর্তা।  তিতাসের এ কর্মকর্তার দেওয়া তথ্য মতে এলাকায় হাজার হাজার অবৈধ চুলা ব্যবহার করা হচ্ছে। চুলা হিসেব করে তিতাস কর্তৃপক্ষের অজান্তে প্রতি বাড়ির মালিকের কাছ থেকে মাসে ১০ থেকে ৩০ হাজার টাকা করে অন্তত কোটি টাকা বিল নিচ্ছে চক্রটি।   নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বাড়ির মালিক জানান, তিতাস কর্তৃপক্ষ অভিযান চালিয়ে অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে চলে যাওয়ার পর দালালরা ২০-৩০ হাজার টাকা নিয়ে স্থানীয় মিস্ত্রি দিয়ে রাতের আঁধারে আবার সংযোগ দিয়ে দেয়। এসব বিষয়ে জানতে অভিযুক্তদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তাদের পাওয়া যায়নি। তাদের এসব গোপন তথ্য ফাঁস হয়ে পড়ায় নিজেদের আড়াল করে রেখেছে তারা। কয়েকজনের বাড়িতে গিয়েও পাওয়া যায়নি। মোবাইলে একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ হয়নি। নারায়ণয়গঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মিজানুর রহমান খান রিপন বলেন, এ অপকর্মের সঙ্গে জড়িত যাদের নাম উঠে এসেছে তাদেরকে আমি চিনি না। আমার কোনো লোক এসব কাজে জড়িত নয়।
০৯ মে, ২০২৪

গ্যাস পাইপের ভেতরে ২ ঘণ্টা আটকে ছিলেন সোহাগ
সিরাজগঞ্জ সদরে শিল্পপার্কে গ্যাস সঞ্চালন লাইন স্থাপন করতে গিয়ে পাইপের ভেতরে বালুচাপা পড়ে আটকে পড়েছে মো. সোহাগ নামে এক শ্রমিক। পরে প্রায় দুই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে তাকে উদ্ধার করেন ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। সোমবার (৬ মে) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে উপজেলার সয়দাবাদ ইউনিয়নের মুলিবাড়ী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।  উদ্ধার হওয়া শ্রমিক মো. সোহাগ ভোলা জেলার শশিভুষণ থানার রসুলপুর গ্রামের বাসিন্দা।  সিরাজগঞ্জ ফায়ার সার্ভিন অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন অফিসার আতাউর রহমান কালবেলাকে বলেন, শিল্পপার্কে গ্যাস সঞ্চালন পাইপ স্থাপন করতে গিয়ে পাইপের মাথায় শরীরের অর্ধেক বালুচাপা পরে আটকা পরে সোহাগ। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে ভেকু মেশিন দিয়ে বালি সরিয়ে পাইপের মধ্য থেকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। তিনি বলেন, উদ্ধারের পর সিরাজগঞ্জ বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখান থেকে তাকে বগুড়ায় রেফার্ড করা হয়েছে।
০৬ মে, ২০২৪

ক্ষতিকর নানা গ্যাস ঢাকার বাতাসে উত্তাপ বাড়াচ্ছে
রাজধানী ঢাকায় কয়েক দশক আগেও নগর পরিকল্পনার মানদণ্ড অনুযায়ী পর্যাপ্ত পরিমাণ সবুজ এলাকা ও জলাশয় ছিল। কিন্তু পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে খাল-পুকুর ভরাট, দখল ও ধ্বংস, সবুজ এলাকা নষ্ট করে অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণে কংক্রিটের জঞ্জাল বেড়েছে। নগরীর ভবনের নকশায় পরিবেশ ও জলবায়ুর ধারণা বাদ দিয়ে কাচ নির্মিত ভবন ও এসিনির্ভর ভবনের নকশা তৈরি করা হয়েছে। সঙ্গে নগরীতে কোনো ধরনের বনায়ন করা হয়নি। নগর এলাকায় সরু রাস্তার পাশেই সুউচ্চ ভবন নির্মাণ, সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলো কর্তৃক জলাশয়-জলাধার-সবুজ এলাকা ধ্বংস করা হচ্ছে। ময়লার ভাগাড়, ইটভাটা, যানবাহন ও শিল্পকারখানার ধোঁয়া থেকে সৃষ্ট বায়ুদূষণে নগরের তাপমাত্রা বৃদ্ধির পাশাপাশি বায়ুদূষণে সৃষ্ট অতি ক্ষুদ্র কণার কারণে নগরে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঢাকার বাতাসে উত্তাপ বাড়াচ্ছে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর গ্যাস। ময়লার ভাগাড়, ইটভাটা, যানবাহন ও শিল্পকারখানার ধোঁয়া থেকে তৈরি হচ্ছে গ্যাস। গতকাল শনিবার বাংলামোটরে প্ল্যানার্স টাওয়ারের বিআইপি কনফারেন্স হলরুমে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) উদ্যোগে ‘ঢাকায় তাপদাহ: নগর পরিকল্পনা ও উন্নয়ন ব্যবস্থাপনার দায় ও করণীয়’ শীর্ষক পরিকল্পনা সংলাপে এসব তথ্য উঠে আসে। সংলাপের শুরুতে বিআইপির সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসানের সঞ্চালনায় মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন ইনস্টিটিউটের সভাপতি পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান। প্রতিবেদনে তিনি বলেন, ঢাকা শহরে সবুজ যেমন কমেছে, ঠিক তেমনি গত দুই দশকে বেড়েছে মাত্রাতিরিক্ত ধূসর এলাকা ও কংক্রিটের পরিমাণ, যা নগর এলাকায় তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে মারাত্মক হারে, বাড়ছে আরবান হিট আইল্যান্ডের প্রভাব। ২০১৯ সালে করা বিআইপির গবেষণা অনুসারে, কংক্রিট আচ্ছাদিত এলাকা ১৯৯৯ সালে ছিল ৬৪ দশমিক ৯৯ শতাংশ, ২০০৯ সালে বেড়ে হয় ৭৭ দশমিক ১৮ শতাংশ, আর ২০১৯ সালে এসে দাঁড়িয়েছে ৮১ দশমিক ৮২ শতাংশে। ২০২৩ সালে বিআইপির প্রকাশিত আরেকটি গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ২৮ বছরে রাজধানী ঢাকার সবুজ এলাকা কমে মাত্র ৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে; অন্যদিকে জলাভূমি নেমে এসেছে মাত্র ২ দশমিক ৯ শতাংশে। যদিও নগর পরিকল্পনার মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি আদর্শ শহরে ২৫ শতাংশ সবুজ এলাকা এবং ১০ থেকে ১৫ শতাংশ জলাশয়-জলাধার থাকার কথা। এরই পাশাপাশি ভবনের নকশায় প্রাকৃতিক আলো-বাতাস চলাচলকে ব্যাহত করে দিয়ে আবদ্ধ ঘর, কাচ নির্মিত ঘর ও এসি ব্যবহারকে মাথায় রেখে ভবন নির্মাণের প্রবণতার কারণে মহানগরীতে তাপমাত্রা বাড়ছে। শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসান বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে পুরো পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ১ থেকে ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধির কথা বলা হলেও ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় এ তাপমাত্রা ৫ থেকে ৬ ডিগ্রি বৃদ্ধি পেয়েছে। যার মূল কারণ মূলত ঢাকা শহরের আশপাশের প্রাকৃতিক সম্পদের অপব্যবহার এবং নগরায়ণের নামে চালানো ধ্বংসযোগ্য। তিনি বলেন, ডেল্টা প্ল্যান, জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা এবং অন্যান্য যেসব নীতিমালা রয়েছে, তার যথাযথ চর্চায় নিয়ে আসতে হবে এবং বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটের সঙ্গে সংযোগ রেখে জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। তা ছাড়া বিভিন্ন ধরনের যেসব জলবায়ুকেন্দ্রিক পলিসি অথবা নীতিমালা রয়েছে, সবগুলোকে একসঙ্গে করে একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা অনুসরণ করতে হবে। তা ছাড়া যে কোনো পরিকল্পনা বা মেগা প্রকল্প শুরু করার আগে রাজউকের মাস্টার প্ল্যান অনুসরণ করছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে হবে। সঙ্গে এসব প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কাজে পরিকল্পনাবিদদের যুক্ত করতে হবে। এরই মধ্যে ঢাকা শহরের বায়ুর মানদণ্ড পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় অত্যন্ত নিম্নমানের মন্তব্য করেন বিআইপির ন্যাশনাল অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল লিয়াজোঁ পরিকল্পনাবিদ আবু নাইম সোহাগ। তিনি বলেন, প্রতিনিয়ত নগরায়ণের নামে এসব পার্ক উদ্যান এবং জলাভূমি ভরাট করা হচ্ছে, যা আমাদের ঢাকা শহরে তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে অন্যতম কারণ। তা ছাড়া ঢাকা শহরে এসি ব্যবহারে যে বাণিজ্যিক চিন্তাভাবনা গড়ে উঠেছে, তা থেকে আমাদের যত দ্রুত সম্ভব সরে আসতে হবে। বিআইপির বোর্ড সদস্য পরিকল্পনাবিদ হোসনে আরা বলেন, ঢাকার তাপপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণে এবং তাপ সহনশীল নগর হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে আরবান হিট মিটিগেশন ও ম্যানেজমেন্ট কৌশল নগর পরিকল্পনায় সর্বোচ্চ বিবেচনায় আনতে হবে। পরিকল্পনাবিদ রেদওয়ানুর রহমান বলেন, ঢাকা শহরে পাঁচ থেকে ১০ শতাংশ জনগণ মূলত এসি ব্যবহার করে থাকে, যা আমাদের ঢাকা শহরের তাপমাত্রা পরিবর্তনের অন্যতম প্রধান কারণ পাশাপাশি আমাদের জলবায়ুর ক্ষতি সাধন করছে। পরিকল্পনা সংলাপে ড. আদিল মুহাম্মদ খান ঢাকা মহানগরীর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে বিআইপির পক্ষ থেকে ২৩ দফা প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন। তাদের প্রস্তাবনায় রয়েছে, সবুজ ও জলাশয় এলাকা সংরক্ষণে যথাযথ পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন, জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন, হারিয়ে যাওয়া খালবিল-জলাশয়-জলাভূমি ও সবুজ বাস্তবতার নিরিখে সম্ভাব্যতা যাচাই সাপেক্ষে পুনরুদ্ধার, ধ্বংসকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা, নগর পরিকল্পনা ও ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনার মাধ্যমে সবুজ এলাকা, জলাশয় ও কংক্রিট এলাকার ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে সচেষ্ট হওয়া, নগর এলাকার প্রান্তে সবুজ বেষ্টনী প্রকল্প গ্রহণ, ব্যক্তিগত মালিকানাধীন জলাশয় ও জলাধার রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়ন করা, সরু রাস্তার পাশে সুউচ্চ ভবন নির্মাণ প্রবণতা বন্ধ করা, বেসরকারি আবাসিক প্রকল্পের বিধিমালা সংশোধন করে সবুজ ও জলাশয় এলাকা, পার্ক-উদ্যান-খেলার মাঠ বাড়ানোর যথাযথ উদ্যোগ, বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা প্রস্তাবিত জলকেন্দ্রিক পার্ক, ইকোপার্ক, পার্ক, খেলার মাঠ তৈরিতে দ্রুততম সময়ে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া, বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা, মেগা প্রকল্প ও উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে নগর সংস্থাগুলোর মধ্যে কার্যকর সমন্বয় নিশ্চিত করা, এসির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ ও সীমিত করতে প্রয়োজনীয় নীতিমালা এবং নির্দেশনা প্রণয়ন করা, এনার্জি এফিশিয়েন্ট ভবন ও গ্রিন বিল্ডিং কোড প্রণয়ন করা, ভবনের ডিজাইনে প্রাকৃতিক আলো-বাতাস চলাচল ও এনার্জি এফিশিয়েন্সির বিষয়টিকে প্রাধান্য দেওয়া, প্রান্তিক, নিম্ন আয় ও বস্তি এলাকার মানুষের আবাসন পরিকল্পনা, নগর এলাকায় সবুজ ও জলাশয় রক্ষা করতে কমিউনিটিভিত্তিক সংগঠন সৃষ্টি ও কমিউনিটিভিত্তিক নজরদারি বাড়ানো। ওয়ার্ডভিত্তিক মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন করা, তাপমাত্রা ও তাপপ্রবাহ বিবেচনায় নিয়ে নগর পরিকল্পনা ও ভবনের নকশা এবং নির্মাণ নিশ্চিত করতে পরিকল্পনাবিদ, স্থপতি, প্রকৌশলী, উদ্যানতত্ত্ববিদদের অন্তর্ভুক্তি ও সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীদের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা। এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব থেকে উদ্ধার পেতে ঢাকা মহানগরীর পরিকল্পনা এবং উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা-২০২২-এর সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে এবং এজন্য এসব প্রতিষ্ঠানে পরিকল্পনাবিদসহ প্রয়োজনীয় কারিগরি জনবল বৃদ্ধি করতে হবে।
০৫ মে, ২০২৪

বিআইপির পরিকল্পনা সংলাপ / ঢাকায় কমছে গাছ, উত্তাপ বাড়াচ্ছে কনক্রিট আর ক্ষতিকর গ্যাস
রাজধানী ঢাকায় কয়েকদশক আগেও নগর পরিকল্পনার মানদণ্ড অনুযায়ী পর্যাপ্ত পরিমাণ সবুজ এলাকা ও জলাশয় ছিল। কিন্তু পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে খাল-পুকুর ভরাট, দখল ও ধ্বংস, সবুজ এলাকা নষ্ট করে অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণে কংক্রিটের জঞ্জাল বেড়েছে। নগরীর ভবনের নকশায় পরিবেশ ও জলবায়ুর ধারণা বাদ দিয়ে কাচ নির্মিত ভবন ও এসি নির্ভর ভবনের নকশা তৈরি করা হয়েছে। সঙ্গে নগরীতে কোনো ধরনের বনায়ন করা হয়নি। নগর এলাকায় সরু রাস্তার পাশেই সুউচ্চ ভবন নির্মাণ, সরকারি-বেসরকারি সংস্থাসমূহ কর্তৃক জলাশয়-জলাধার-সবুজ এলাকা ধ্বংস করা হচ্ছে। ময়লার ভাগাড়, ইটভাটা, যানবাহন ও শিল্পকারখানার ধোঁয়া থেকে সৃষ্ট বায়ুদূষণে নগরের তাপমাত্রা বৃদ্ধির পাশাপাশি বায়ুদূষণে সৃষ্ট অতি ক্ষুদ্র কণার কারণে নগরে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঢাকার বাতাসে উত্তাপ বাড়াচ্ছে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর গ্যাস। ময়লার ভাগাড়, ইটভাটা, যানবাহন ও শিল্পকারখানার ধোঁয়া থেকে তৈরি হচ্ছে গ্যাস। শনিবার (৪ মে) বাংলামোটরস্থ প্ল্যানার্স টাওয়ারের বিআইপি কনফারেন্স হলরুমে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি)-র উদ্যোগে ‘ঢাকায় তাপদাহ : নগর পরিকল্পনা ও উন্নয়ন ব্যবস্থাপনার দায় ও করণীয়’ শীর্ষক পরিকল্পনা সংলাপে এসব তথ্য উঠে আসে। সংলাপের শুরুতে বিআইপির সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসানের সঞ্চালনায় মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন ইনস্টিটিউটের সভাপতি পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান।   প্রতিবেদনে তিনি বলেন, ঢাকা শহরে সবুজ যেমন কমেছে, ঠিক তেমনি গত দুই দশকে বেড়েছে মাত্রাতিরিক্ত ধূসর এলাকা ও কনক্রিটের পরিমাণ, যা নগর এলাকায় তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে মারাত্মক হারে, বাড়ছে আরবান হিট আইল্যান্ডের প্রভাব। ২০১৯ সালে করা বিআইপির গবেষণা অনুসারে, কংক্রিট আচ্ছাদিত এলাকা ১৯৯৯ সালে ছিল ৬৪ দশমিক ৯৯ ভাগ, ২০০৯ সালে বেড়ে হয় ৭৭ দশমিক ১৮ ভাগ, আর ২০১৯ সালে এসে দাঁড়িয়েছে ৮১ দশমিক ৮২ শতাংশে। ২০২৩ সালে বিআইপির প্রকাশিত আরেকটি গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ২৮ বছরে রাজধানী ঢাকার সবুজ এলাকা কমে মাত্র ৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে; অন্যদিকে, জলাভূমি নেমে এসেছে মাত্র ২.৯ শতাংশে। যদিও নগর পরিকল্পনার মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি আদর্শ শহরে ২৫ শতাংশ সবুজ এলাকা এবং ১০ থেকে ১৫ শতাংশ জলাশয়-জলাধার থাকার কথা। এরই পাশাপাশি ভবনের নকশায় প্রাকৃতিক আলো-বাতাস চলাচলকে ব্যাহত করে দিয়ে আবদ্ধ ঘর, কাচ নির্মিত ঘর ও এসি ব্যবহারকে মাথায় রেখে ভবন নির্মাণের প্রবণতার কারণে মহানগরীতে তাপমাত্রা বাড়ছে।   শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসান বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে পুরো পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ১ থেকে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধির কথা বলা হলেও ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় এই তাপমাত্রা ৫ থেকে ৬ ডিগ্রি বৃদ্ধি পেয়েছে। যার মূল কারণ মূলত ঢাকা শহরের আশপাশের প্রাকৃতিক সম্পদের অপব্যবহার এবং নগরায়নের নামে চালানো ধ্বংসযোগ্য। তিনি বলেন, ডেল্টা প্ল্যান, জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা এবং অন্যান্য যেসব নীতিমালা রয়েছে তার যথাযথ চর্চায় নিয়ে আসতে হবে। এবং বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট এর সঙ্গে সংযোগ রেখে জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা তৈরি  করতে হবে। তাছাড়া বিভিন্ন ধরনের যেসব জলবায়ুকেন্দ্রিক পলিসি অথবা নীতিমালা রয়েছে সবগুলোকে একসঙ্গে করে একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা অনুসরণ করতে হবে। তাছাড়া যে কোনো পরিকল্পনা বা মেগা প্রকল্প শুরু করার আগে রাজউকের মাস্টার প্ল্যান অনুসরণ করছে কি না তা খতিয়ে দেখতে হবে। সঙ্গে এসব প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কাজে পরিকল্পনাবিদদের যুক্ত করতে হবে।   ইতোমধ্যেই ঢাকার শহরের বায়ুর মানদণ্ড পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় অত্যন্ত নিম্নমানের মন্তব্য করেন বিআইপির ন্যাশনাল অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল লিয়াজোঁ পরিকল্পনাবিদ আবু নাইম সোহাগ। তিনি বলেন, প্রতিনিয়ত নগরায়নের নামে এসব পার্ক উদ্যান এবং জলাভূমি ভরাট করা হচ্ছে যা আমাদের ঢাকা শহরে তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে অন্যতম কারণ। তাছাড়া ঢাকা শহরে এসি ব্যবহারে যে বাণিজ্যিক চিন্তাভাবনা গড়ে উঠেছে তা থেকে আমাদের যত দ্রুত সম্ভব সরে আসতে হবে। বিআইপির বোর্ড সদস্য পরিকল্পনাবিদ হোসনে আরা বলেন, ঢাকার তাপদাহ নিয়ন্ত্রণে এবং তাপ সহনশীল নগর হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে আরবান হিট মিটিগেশন ও ম্যানেজমেন্ট কৌশল নগর পরিকল্পনায় সর্বোচ্চ বিবেচনায় আনতে হবে।   পরিকল্পনাবিদ রেদওয়ানুর রহমান বলেন, ঢাকা শহরে পাঁচ থেকে ১০ শতাংশ জনগণ মূলত এসি ব্যবহার করে থাকে, যা আমাদের ঢাকা শহরের তাপমাত্রা পরিবর্তনের অন্যতম প্রধান কারণ পাশাপাশি আমাদের জলবায়ুর ক্ষতি সাধন করছে।   পরিকল্পনা সংলাপে ড. আদিল মুহাম্মদ খান ঢাকা মহানগরীর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে বিআইপির পক্ষ থেকে ২৩ দফা প্রস্তাবনা  উপস্থাপন করেন। তাদের প্রস্তাবনায় রয়েছে- সবুজ ও জলাশয় এলাকা সংরক্ষণে যথাযথ পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন, জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন, হারিয়ে যাওয়া খাল-বিল-জলাশয়-জলাভূমি ও সবুজ বাস্তবতার নিরিখে সম্ভাব্যতা যাচাই সাপেক্ষে পুনরুদ্ধার, ধ্বংসকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা, নগর পরিকল্পনা ও ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনার মাধ্যমে সবুজ এলাকা, জলাশয় ও কংক্রিট এলাকার ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে সচেষ্ট হওয়া, নগর এলাকার প্রান্তে সবুজ বেষ্টনী প্রকল্প গ্রহণ, ব্যক্তিগত মালিকানাধীন জলাশয় ও জলাধার রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়ন করা, সরু রাস্তার পাশে সুউচ্চ ভবন নির্মাণ প্রবণতা বন্ধ করা, বেসরকারি আবাসিক প্রকল্পের বিধিমালা সংশোধন করে সবুজ ও জলাশয় এলাকা, পার্ক-উদ্যান-খেলার মাঠ বাড়ানোর যথাযথ উদ্যোগ, বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা প্রস্তাবিত জলকেন্দ্রিক পার্ক, ইকোপার্ক, পার্ক, খেলার মাঠ তৈরিতে দ্রুততম সময়ে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া, বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা, মেগা প্রকল্প ও উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে নগর সংস্থাসমূহের মধ্যে কার্যকর সমন্বয় নিশ্চিত করা, এসির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ ও সীমিত করতে প্রয়োজনীয় নীতিমালা ও নির্দেশনা প্রণয়ন করা, এনার্জি এফিশিয়েন্ট ভবন ও গ্রিন বিল্ডিং কোড প্রণয়ন করা, ভবনের ডিজাইনে প্রাকৃতিক আলো-বাতাস চলাচল ও এনার্জি এফিশিয়েন্সির বিষয়টিকে প্রাধান্য দেওয়া, প্রান্তিক, নিম্ন আয় ও বস্তি এলাকার মানুষের আবাসন পরিকল্পনা, নগর এলাকায় সবুজ ও জলাশয় রক্ষা করতে কমিউনিটিভিত্তিক সংগঠন সৃষ্টি ও কমিউনিটিভিত্তিক নজরদারি বাড়ানো। ওয়ার্ডভিত্তিক মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন করা, তাপমাত্রা ও তাপপ্রবাহ বিবেচনায় নিয়ে নগর পরিকল্পনা ও ভবনের নকশা ও নির্মাণ নিশ্চিত করতে পরিকল্পনাবিদ, স্থপতি, প্রকৌশলী, উদ্যানতত্ত্ববিদদের অন্তর্ভুক্তি ও সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীদের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা। এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব থেকে উদ্ধার পেতে ঢাকা মহানগরীর পরিকল্পনা এবং উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা–২০২২ এর সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে এবং এজন্য এসব প্রতিষ্ঠানে পরিকল্পনাবিদসহ প্রয়োজনীয় কারিগরি জনবল বৃদ্ধি করতে হবে।
০৪ মে, ২০২৪
X