করলা চাষে ভাগ্য ফিরেছে কৃষকের
লালমনিরহাট কালীগঞ্জে কম খরচে অধিক লাভ হওয়ায় দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে করলা চাষ। করলা চাষ করে বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকেও চাষিদের নিরাপদ বিষমুক্ত সবজি চাষে দেওয়া হচ্ছে নানাবিধ পরামর্শ।  কালীগঞ্জ উপজেলার চলবলা ইউনিয়নের সবজি চাষি নুর মোস্তফা (৫৬) দীর্ঘদিন ধরে কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত। অনান্য ফসলের পাশাপাশি চলতি মৌসুমে তিনি নিজের ২০ শতাংশ জমিতে করেছেন করলার চাষ। গত এক মাসেই তিনি ৩০ হাজার টাকার করলা বিক্রি করেছেন। আগামী কয়েক মাসে আরও ৪০ হাজার টাকার করলা বিক্রি করবেন বলে আশা করছেন তিনি। তার মতো এমন আরও অনেক চাষি উপজেলায় এ বছর করলার চাষ করেছেন। করলা চাষি আবুল বাশার বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে ধান, গম, শাকসবজি চাষ করি। কৃষিকাজ করেই আমার জীবন জীবিকা চলে। এ বছর গত এপ্রিল মাসে আমি নিজের ২০ শতাংশ জমিতে উন্নতজাতের করলা চাষ করি। ৩৫ দিন পরে ফলন আসে। প্রথম দিকে স্থানীয় বাজারে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করি। বর্তমানে ৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি করছি। প্রতি সপ্তাহে ২ দিন গড়ে ৪০ থেকে ৫০ কেজি করলা বিক্রি করছি। এই পর্যন্ত ৩০ হাজার টাকার করলা বিক্রি করেছি। এই মৌসুমে আরও ৪০ হাজার টাকার করলা বিক্রি করব বলে আশা করছি। কাকিনা ইউনিয়নের আরেক চাষি সুমন মিয়া বলেন, আমি আমার ১৫ শতাংশ জমিতে চলতি মৌসুমে করলার চাষ করেছি। আল্লাহর রহমতে ভালো ফলন হয়েছে। বাজারে ভালো দামও পেয়েছি। আমার পরিবারের মুখে এখন খুশির হাসি। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, আমার চলবলা ইউনিয়নে প্রায় ৫০ জন কৃষক করলা চাষে সফলতা পেয়েছেন। কম খরচে অল্প পরিশ্রমে অধিক লাভবান হয়েছেন চাষিরা। ফলনের শুরুর দিকে স্থানীয় বাজারে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে করলা। এখন ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। দিন দিন করলা চাষে আগ্রহ বাড়ছে। 
১৩ মে, ২০২৪

যমুনার বুকে ধান চাষ
নদীর নাম ছোট যমুনা, অবস্থান নওগাঁর বদলগাছীতে। তবে সেখানে গেলে এই নামে কোনো নদী দেখতে পাওয়া যাবে না। দেখা যাবে বিস্তীর্ণ ধানক্ষেত। অবাক হওয়ার মতো বিষয় হলেও একসময়ের খরস্রোতা নদী ছোট যমুনা এখন ধানক্ষেতে পরিণত হয়েছে। তাই নদীর পানিও নেই, নেই নৌকাও। যতদূর চোখ যায় শুধু ধান আর ধান। নদীর পানি শুকিয়ে যাওয়ায় জেলার বদলগাছী উপজেলার তেজাপাড়া-কাদিবাড়ি পাশাপাশি দুটি এলাকায় ধান চাষ করেছেন শতাধিক কৃষক। সেই নদীর বুকে কয়েকজনকে ধান কাটতে দেখা যায়। আবার অনেক জায়গা থেকে ধান কেটে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।  কথা হয় কৃষক তসলিম, আফজাল, রফিকুল, শামিম ও মোস্তফার সঙ্গে। তারা জানান, আমরা ৫-৭ জন মিলে বেশকিছু জায়গায় ধান চাষ করেছি। তাই নিজেরাই ধান কাটছি। এই ধান দিয়ে আমাদের সারা বছরের সংসার চলে। অবশ্য বৃষ্টির কারণে পানি জমতে শুরু করেছে। আর কয়েকদিন পর পানিতে ভরে যাবে নদীটি।  তারা আরও জানান, উত্তর দিকের তেজাপাড়া ব্রিজ থেকে দক্ষিণে প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকায় অনেকেই এই নদীর বুকে ধান চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। নদী শুকালে ধান চাষ করা যায়। যা দিয়ে সংসার চলে। নওগাঁর নদী, খাল-বিল দখল ও দূষণের প্রতিবাদে বিভিন্ন সময় রাস্তায় নামা সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন একুশে পরিষদের সভাপতি অ্যাড. ডিএম আব্দুল বারী বলেন, বিভিন্ন নদী, খাল-বিল, প্রাকৃতিক বনায়নে ভরপুর আমাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশ। কিন্তু আমাদের বিরূপ আচরণের কারণে আমরা নিজেরাই প্রকৃতিকে বিভিন্নভাবে ধ্বংস করে ফেলছি। নওগাঁসহ সারা দেশের নদী, খাল-বিল দখল ও দূষণের জন্য সংশ্লিষ্টদের পাশাপাশি জনসচেতনতাও এর জন্য দায়ী। তবে নদী শুকিয়ে গেলে সেখানে ধান চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করা সেটা খারাপ কিছু না। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের অনুমতি নিয়ে চাষ করলে ভালো হয়। এতে অনেকে জীবিকা নির্বাহ করতে পারবে। বদলগাছী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সাবাব ফারহান বলেন, বোরো মৌসুমে উপজেলায় ১১ হাজার ৭৪০ হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছে। এছাড়া নদীর ধারে উল্লেখযোগ্য হারে ধান উৎপাদিত হয়েছে। কারণ নদীর পাশের জমিতে পলির আস্তরণ জমে এবং সেখানে জৈব পদার্থের পরিমাণ বেশি থাকে। তাই সেখানে ধান, সবজিসহ সব ধরনের ফসল ভালো উৎপাদন হয়ে থাকে। নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ফয়জুর রহমান বলেন, ছোট যমুনা নদীসহ কয়েকটি নদী ও খাল পুনঃখননের জন্য আবেদন দেওয়া আছে। অনুমোদন পেলে যে কোনো সময় কাজ শুরু হবে।
১০ মে, ২০২৪

মাশরুম চাষ বাড়ালে বাড়বে পুষ্টি, কমবে দারিদ্র্য
মাশরুম খেতে সুস্বাদু হওয়ার পাশাপাশি এটি শরীরের জন্যও বেশ উপকারী। কম ক্যালোরি ছাড়াও এটি অনেক পুষ্টিতে সমৃদ্ধ। সালাদ, স্যুপ, সবজি এমনকি স্ন্যাকস হিসেবে এটি খাওয়া যায়। মাশরুম টিউমার নিরাময় করে, উচ্চ রক্তচাপ কমায় এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে। বিভিন্ন পরীক্ষায় এটা প্রমাণিত হয়েছে। তবে মাশরুমের এসব গুণাগুণের তেমন প্রচার নেই। ফলে এতদিনেও মানুষের কাছে তেমন কোনো চাহিদা তৈরি হয়নি মাশরুমের। পুষ্টিগুণ বিবেচনায় খাদ্যাভাসে মাশরুম যুক্ত করে প্রত্যেকে গড়ে প্রতিদিন ২৫ গ্রাম করে মাশরুম খেলেও বছরে ১৫ লাখ ৫১ হাজার ২৫০ মেট্রিক টন মাশরুম প্রয়োজন হবে। আর ১০ শতাংশ মানুষও যদি মাশরুম খায়, তাহলে প্রতিদিন ৪৫০ মেট্রিক টন মাশরুম প্রয়োজন হবে। বিভিন্ন পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে যে, শুধু টিউমার, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিক রোগী যদি নিয়মিত ৫০ গ্রাম করে মাশরুম খান, তাহলেও বিপুল পরিমাণ মাশরুম প্রয়োজন হবে। বাংলাদেশে মাশরুম উৎপাদন ও ব্যবহার বৃদ্ধির মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন, দারিদ্র্য হ্রাসকরণ, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। ঢাকার সাভারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউট ও ৩৪টি মাশরুম উপকেন্দ্র বা হর্টিকালচার সেন্টার এবং দেশের ৬৪টি জেলার ১৬০টি উপজেলা ও ১৫টি মেট্রোপলিটন থানায় ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে এ প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হয়। ২০২৭ সাল পর্যন্ত ‘মাশরুম চাষ সম্প্রসারণের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন ও দারিদ্র্য হ্রাসকরণ’ শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হওয়ার কথা রয়েছে। এ প্রকল্পের সামগ্রিক উদ্দেশ্য হলো বাংলাদেশে মাশরুম উৎপাদন ও ব্যবহার বৃদ্ধির মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন, দারিদ্র্য হ্রাসকরণ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা। এ ছাড়া মাশরুম উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য বিশ্বের জনপ্রিয় বিভিন্ন ধরনের মাশরুমের জার্মপ্লাজম সংগ্রহ করা এবং এসব জার্মপ্লাজমের বাংলাদেশে চাষ ও সংরক্ষণ উপযোগী লাগসই ও টেকসই প্রযুক্তি উদ্ভাবন, উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ করা; মান নিয়ন্ত্রণ ও নিশ্চিতকরণের সুযোগ সৃষ্টিপূর্বক উচ্চ গুণগত মানসম্পন্ন মাশরুম ও মাশরুমজাত পণ্য উৎপাদন প্রযুক্তি বা কৌশল সম্প্রসারণ করা; দারিদ্র্য হ্রাসকরণ ও ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির লক্ষ্যে মাশরুম শিল্পোদ্যোক্তা সৃষ্টি এবং চাষের মাধ্যমে আত্মকর্মসংস্থানের মডেল ‘মাশরুম পল্লি’ কার্যক্রম সারা দেশে সম্প্রসারণ করা; মাশরুম ও মাশরুমজাত পণ্যের উৎপাদন ও ব্যবহার বৃদ্ধির মাধ্যমে নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধীসহ সব স্তরের মানুষের খাদ্য, পুষ্টি ও আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নে সহায়তা করা এবং মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে উদ্যোক্তা তৈরি; মাশরুম পল্লি স্থাপন; গবেষণা কার্যক্রম যেমন জার্মপ্লাজম সংগ্রহ ও সংরক্ষণ, প্রযুক্তি উদ্ভাবন; স্পন ও মাশরুম উৎপাদন প্রদর্শনী স্থাপন; ছাদ প্রদর্শনী স্থাপন প্রভৃতি। এ ছাড়া সাধারণের খাবার টেবিলে মাশরুম পৌঁছে দিতে প্রকল্পের প্রচার কার্যক্রম। অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, মাশরুম উৎপাদন বৃদ্ধির নিমিত্তে বিশ্বের জনপ্রিয় বিভিন্ন ধরনের মাশরুমের (যেমন বাটন, ইরিনজি, ব্ল্যাক, চেজনাট, বিপিও ইত্যাদি) ইতোমধ্যে ৮টি জার্মপ্লাজম সংগ্রহ করা হয়েছে। এসব জার্মপ্লাজমের বাংলাদেশে চাষ উপযোগী প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে। বাণিজ্যিকভাবে ইতোমধ্যে অনেকে চাষ শুরু করেছে, যেমন গাজীপুরে ভূঁইয়া মাশরুম ও রাঙামাটিতে সুমেধ চাকমা। দেশে মাশরুমের ব্যাপক প্রচার ও সচেতনতা বৃদ্ধি, ভোক্তা তৈরির লক্ষ্যে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় মাশরুম যুক্ত করতে আঞ্চলিক কর্মশালা, মাঠ দিবস, উঠান বৈঠক, টিভি প্রোগ্রাম, বিলবোর্ড স্থাপন ইত্যাদি করা হয়েছে। প্রকল্পের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য মাশরুমের প্রচার এবং বিপণন একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এরই মধ্যে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় প্রকল্প থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়ে অনেক উদ্যোক্তা মাশরুমের উৎপাদন এবং মাশরুমজাত পণ্য তৈরি করতে শুরু করেছেন। সে পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্পভুক্ত এলাকা, ১৪টি অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালকের কার্যালয়, ৬৪টি জেলার উপপরিচালকের কার্যালয়, বিভিন্ন হর্টিকালচার সেন্টার এবং ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ স্থান যথা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খামারবাড়ি, হর্টিকালচার সেন্টার ফলবীথি আসাদগেট, মেট্রোপলিটন কৃষি অফিস সংলগ্ন স্থানে উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত মাশরুম এবং মাশরুমজাত পণ্য প্রদর্শন ও বিক্রয়ের ব্যবস্থার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ইউনিমার্ট, স্বপ্ন, আগোরা, ফার্স্ট চয়েস ইত্যাদি সুপারশপের সঙ্গে উদ্যোক্তাদের সংযোগ তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। বিপণন ও প্রচার কার্যক্রম জোরদার করতে মাঠ দিবস ও আঞ্চলিক কর্মশালায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ছাড়াও বিভিন্ন অধিদপ্তরের প্রতিনিধি, স্কুল-কলেজের প্রতিনিধি, বাংলাদেশ বেতার, রেস্টুরেন্টের প্রতিনিধিকে যুক্ত করা হয়েছে। স্থানীয় জনগণের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে এবং মাশরুমের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে স্পন ও মাশরুম উৎপাদন প্রদর্শনী স্থাপন করা হয়েছে। এ পর্যন্ত বিভিন্ন জেলায় ১৮০ জন উদ্যোক্তা ও তার আওতায় ৩০ জন করে দলভুক্ত চাষিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। উদ্যোক্তার ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষিত করা হয়েছে, যাতে উদ্যোক্তাকে প্রতিনিয়ত সমর্থন দিতে পারেন। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে কৃষকসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রযুক্তিগত দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে, মাশরুমের গুণাগুণ, সম্ভাবনা ও সুযোগ সম্পর্কে ব্যাপক প্রচারের ফলে দেশে মাশরুমের উৎপাদন ও ব্যবহার বৃদ্ধি পাবে। দারিদ্র্য ও পুষ্টিহীনতা হ্রাস, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, মাশরুম রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টি, নতুন মাশরুম উপকেন্দ্র স্থাপন, পুরোনো উপকেন্দ্র ও মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও দেশে ভূমির ভার্টিক্যাল এক্সপানশন বৃদ্ধি পাবে। এতে মাশরুম চাষে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে গতিশীলতা বৃদ্ধি এবং আমদানি ব্যয় হ্রাসের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে।
০৪ মে, ২০২৪

ইউটিউব দেখে পঞ্চগড়ে ভিনদেশি সুপারফুড কিনোয়া চাষ
ইউটিউব দেখে উত্তর আমেরিকার অন্যতম পুষ্টি ও ঔষধী গুণসমৃদ্ধ ফসল সুপারফুড খ্যাত কিনোয়া চাষে সফল হয়েছেন পঞ্চগড়ের সাবেক সেনা সদস্য আমিনুল ইসলাম আমিন। কম খরচে অধিক লাভজনক হওয়ায় তার দেখাদেশি এ ফসল চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন জেলার অপর চাষিরা। সুপারফুড কিনোয়া ঘিরে প্রান্তিক এ জেলার কৃষি অর্থনীতিতে সম্ভাবনার নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। স্বাস্থ্যের জন্য কিনোয়া অনেক উপকারী বলছেন পুষ্টিবিদরা। এদিকে কৃষকদের সব ধরনের কারিগরি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে জেলা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে। পায়েসসহ নানাভাবে রান্না করে খাওয়া যায় এ ফসলটি। তবে স্থানীয়ভাবে বাজারজাত না হওয়ায় শঙ্কায় পড়েছেন কিনোয়া চাষি আমিনুল। কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, পঞ্চগড় এরার ৬ একর জমিতে কিনোয়া চাষ হয়েছে। উত্তর আমেরিকার অন্যতম পুষ্টি ও ঔষধী গুণ সমৃদ্ধ ফসল কিনোয়া। পঞ্চগড় সদর উপজেলার গড়িনাবাড়ি ইউনিয়নের চারাখুঁড়ার সাবেক সেনা সদস্য আমিনুল ইসলাম গত বছর এক বিঘা জমিতে কিনোয়ার চাষ করলেও এবার তা বাড়িয়ে করেছেন ১২ বিঘাতে। বাণিজ্যিকভাবে এ ফসলের চাষ করেছেন। অধিক লাভের আশায় একই জমিতে সাথী ফসল হিসেবে লাগিয়েছেন মিষ্টি কুমড়া। বর্তমানে জমিতে পাকতে শুরু করেছে কিনোয়া। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় শীতপ্রধান দেশের ফসল কিনোয়ার ফলনও বেশ ভালো হয়েছে উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে তাই, জেলার অপর চাষিরা ঝুঁকছেন বিদেশি এই শস্যদানা চাষে।  কৃষকরা বলছেন, অন্য ফসলের তুলনায় বেশি লাভ পাওয়া যায় কিনোয়া চাষে। প্রতি বিঘা জমিতে চাষাবাদ করতে খরচ হয় মাত্র ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। আর বিঘা প্রতি জমি থেকে ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা বিক্রয় হয় কিনোয়া। ৩ মাসে ফসল ঘরে তোলা যায়। কিনোয়া প্রতি বিঘাতে উৎপাদন হয় ২০০ থেকে ২৪০ কেজি। প্রতি কেজি কিনোয়া ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হয়। লাভজনক হওয়ায় এ ফসল চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন জেলার অপর চাষিরাও। সরেজমিনে দেখা যায়, কিনোয়া নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষি আমিনুর রহমান আমিন। বর্তমানে তার জমিতে পাঁকতে শুরু করেছে কিনোয়া। জমি থেকে ফসলটি কাটাই মাড়াইয়ে কাজ করতে দেখা গেছে কয়েকজন শ্রমিককে। তারা অধিক পরিপক্ব কিনোয়া কেটে মাড়াইয়ের জন্য স্তূপ করে রাখছিলেন পাশের ফাঁকা জায়গায়। জানা গেছে, সুপার ফুড কিনোয়া বাংলাদেশে অপ্রচলিত ও নতুন খাবার হলেও ইউরোপ ও আমেরিকাসহ বিশ্বজুড়ে রয়েছে এর চাহিদা। সুপারফুড খ্যাত এই রবিশস্যটিতে রয়েছে হাইপ্রোটিন, মিনারেল, আয়রন, এন্টি অক্সিডেন্ট, পটাশিয়াম, লো গ্লাইসিমিকস ইনডেস্কসহ নানা পুষ্টিকর উপাদান। এর কদর রয়েছে সুপারশপ, রেস্টুরেন্টসহ নামিদামি সব খাবারের দোকানে। পায়েসসহ নানাভাবে রান্না করে খাওয়া যায় খাবারটি। তাই বিশ্ব বাজারে এর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। কৃষক আমিনুর রহমান আমিন কালবেলাকে বলেন, চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর কৃষি কাজে মনোনিবেশ করি। ইউটিউব ঘাটাঘাটি করে কিনোয়া চাষে উদ্বুদ্ধ হই। প্রথম বছর এক বিঘা জমিতে এই ফসলের আবাদ করে সাফল্য পাই। তাই এবার পরিধি বাড়িয়ে ১২ বিঘা করেছি। এ বছর ফলন ভালো হয়েছে। বাজারমূল্য ভালো পেলে আগামী বছর চাষের পরিধি আরও বাড়াব। তিনি আরও বলেন, কিনোয়া অধিক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন একটি ফসল। এতে ভিটামিন সি ব্যাতীত সব ধরনের ভিটামিন বিদ্যমান। কিনোয়ার চাষ পদ্ধতিও সহজ। খরচ একেবারেই কম। তবে, ফসলটি বাজারজাত একটু কঠিন। লোকাল মার্কেটে একদম অপরিচিত একটি ফসল এটি। তবে, অনলাইনে এর ব্যাপক চাহিদা আছে। পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের চিকিৎসক এসএম মাহবুব উল আলম বলেন, সুপারফুড কিনোয়া ডায়াবেটিসসহ নানা রোগে আক্রান্তদের জন্য ভাতের বিকল্প বেশ উপকারী খাবার বলছেন চিকিৎসকরা। শরীরে বিভিন্ন ভিটামিনের অভাব পূরণ করবে বলেও তারা বলছেন। কিনোয়া হলো হাই-প্রোটিন সম্পন্ন খাবার। এটিকে সুপারফুডও বলা হয়। কিনোয়াতে অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে এবং লাইসিন সমৃদ্ধ, যা শরীরজুড়ে স্বাস্থ্যকর টিস্যু বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুবই উপকারী। কিনোয়া আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম, ভিটামিন-ই, পটাশিয়াম ও ফাইবারের একটি উৎকৃষ্ট উৎস। পঞ্চগড় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আব্দুল মতিন বলেন, কিনোয়া দক্ষিণ আমেরিকার একটি ফসল। এটিকে সুপার ফুড বলা হয়, অনেকে এটিকে নভোচারীদের খাবার বলেন। কিনোয়া অনেক উপকারী খাবার। এটি আমাদের সুপারশপগুলোতে বিক্রি হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে, আগামীতে কিনোয়ার চাষ আরও বৃদ্ধি পাবে। মাঠপর্যায়ে চাষিদের এই ফসলটি চাষাবাদে প্রয়োজনীয় পরার্মশ দেওয়া হবে।
০৩ মে, ২০২৪

সূর্যমুখীর বাম্পার ফলন, তবুও চিন্তায় চাষি
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় মাঠগুলোতে দূর থেকে দেখলে মনে হবে যেন বিশাল আকারের হলুদ গালিচা বিছিয়ে রাখা হয়েছে। কাছে গেলে চোখে পড়ে হাজারো সূর্যমুখী ফুল। বাতাসে দোল খেয়ে ফুলগুলো যেন আমন্ত্রণ জানাচ্ছে সৌন্দর্য উপভোগ করতে। উপজেলায় সূর্যমুখী চাষ করে কাঙ্ক্ষিত ফলন পেয়ে খুশি চাষিরা। উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় সূর্যমুখী চাষ করেছেন ৮৫০ জন কৃষক। মাটি ও আবহাওয়া সূর্যমুখী চাষাবাদের জন্য উপযোগী। কম সময় ও অর্থ ব্যয় করে সূর্যমুখী চাষ করে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষি বিভাগ সাধারণ কৃষকদের সূর্যমুখী চাষে উদ্বুদ্ধ করতে উদ্যমী কৃষকদের হাত ধরে পরীক্ষামূলকভাবে মঠবাড়িয়ার ১১টি ইউনিয়নের ৪৭৭ হেক্টর জমিতে চাষ করছে। প্রথমবারের মতো উপজেলায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সার ও বীজ প্রণোদনার মাধ্যমে চাষ হচ্ছে সূর্যমুখী ফুলের। আমড়াগাছিয়া ইউনিয়নের কালিকাবাড়ি গ্রামে ও উপজেলার বিভিন্ন সূর্যমুখী চাষ করা জমিতে গিয়ে দেখা যায়, ফুটে থাকা হলুদ সূর্যমুখী ফুলের সমাহারে এক নয়নাভিরাম দৃশ্যের অবতারণা হয়েছে। চারদিকে হলুদ রঙের ফুলের মনমাতানো ঘ্রাণ আর মৌমাছিরা ছুটছেন এক ফুল থেকে অন্য ফুলে তাতে মুখরিত হয়ে উঠেছে কৃষকের জমি। এটি যেন ফসলি জমি নয়, এ এক দৃষ্টিনন্দন বাগান। তবে সূর্যমুখী ফুল চাষের লক্ষ্য নিছক বিনোদন নয়। মূলত ভোজ্যতেল উৎপাদনের মাধ্যমে খাদ্য চাহিদা মেটাতে এ চাষ করা হচ্ছে। তাই অন্যান্য ফসলের চেয়ে সূর্যমুখী চাষে বেশি লাভের প্রত্যাশা অনেক বেশি। জানা যায়, সূর্যমুখী ফুলের চাষ করলে ফুল থেকে তেল, খৈল ও জ্বালানি পাওয়া যায়। প্রতি কেজি বীজ থেকে কমপক্ষে আধা লিটার তৈল উৎপাদন সম্ভব। প্রতি বিঘা জমিতে ৭ মণ থেকে ১০ মণ বীজ উৎপাদন হয়। তেল উৎপাদন হবে প্রতি বিঘায় ১৪০ লিটার থেকে ২০০ লিটার পর্যন্ত। প্রতি লিটার তেলের সর্বনিম্ন বাজার মূল্য ২৫০ টাকা। প্রতি বিঘা জমিতে খরচ হয় সর্বোচ্চ সাড়ে ৩ হাজার টাকা। বর্তমানে বাজারে ভোজ্যতেলের আকাশছোঁয়া দাম হওয়ার কারণে চাহিদা বেড়েছে সরিষা ও সূর্যমুখী তেলের। উপজেলার কৃষক  ফজলুল হক (৫৬) প্রায় ২০ শতাংশ জমিতে প্রথমবার সূর্যমুখী চাষ করেছেন। ভালো ফসলও হয়েছে। কিন্তু কপালে চিন্তার ভাঁজ। সূর্যমুখী ফুল পাকতে শুরু করেছে কিন্তু তাঁদের কোনো প্রস্তুতি নেই। তিনি বলেন, কৃষি অফিস থেকে সুযোগ-সুবিধা পায় না, সহযোগিতা পেলে আশা করছি লাভের মুখ দেখতে পারব। শুনেছি সূর্যমুখীর তেল স্বাদে, গুণে ভালো। দামও অনেক বেশি। তাই এ ফসল নষ্ট হতে দিতে চাই না। আমড়াগাছিয়া ইউনিয়নের কালিকাবাড়ি গ্রামের কৃষক আব্দুল খালেক (৬৫) বলেন, আমি পাঁচ বছর ধরে জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করছি। এটি খুবই লাভজনক একটি ফসল। কিন্তু চাষের জন্য কৃষি অফিস থেকে বীজ এবং সার পর্যাপ্ত পাচ্ছিনা। এ বছর সূর্যমুখী ফুলের বীজে খুবই সমস্যা হয়েছে। হাইসন-৩৩ বীজে তেমন ফসল পাচ্ছি না। সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আমড়াগাছিয়া ইউনিয়নের প্রবাস ফেরত আব্দুল আজিজ তার বাড়ির পাশে ১৯ শতাংশ জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছেন। প্রবাসে থাকা অবস্থায় সূর্যমুখীর তেল খেতেন। সে আগ্রহ থেকে দেশে এসে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেন। এখন পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করেন। তিনি আক্ষেপারে সঙ্গে বলেন আমাদের সঠিক দিক নির্দেশনা দিলে আমরা আরও ভালো মানের ফসল পেতাম। মঠবাড়িয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান বলেন, সূর্যমুখী এক দিকে মনোমুগ্ধকর ফুল অন্যদিকে লাভজনক ফসল। কৃষকদের বিস্তারিত জানিয়ে সূর্যমুখী আবাদ করার পরিকল্পনা করি। সামান্য পরিমাণ রাসায়নিক সার ও দুবার সেচ দিতে হয় এ ফসলে। তবে মিঠা পানির অভাবে কৃষকরা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। প্রতি একর জমিতে ২১৫-২০ হাজার টাকা খরচ হয়। আর এক একর জমির উৎপাদিত বীজ থেকে ৫০-৬০হাজার টাকা লাভ করা সম্ভব। সূর্যমুখী গাছ জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।
২১ এপ্রিল, ২০২৪

ময়মনসিংহে চাষ হচ্ছে ১৫০ কেজি ওজনের পাঙ্গাস
ময়মনসিংহে চাষ হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় জাতের মেকং পাঙ্গাস। যার একেকটির ওজন ১২০-১৬০ কেজি। এই জাতের পাঙ্গাস তিনশ কেজির ওপরেও হয়ে থাকে। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণা পুকুরে রয়েছে ১২০ থেকে ১৬০ কেজি ওজনের বিশাল ৫০টি ‘ম্যাকং জায়ান্ট ক্যাটফিস’।  পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কিন্তু মহাবিপন্ন এই মেকং জায়ান্ট পাঙ্গাস নিয়ে স্বপ্ন দেখছেন দেশীয় বিজ্ঞানীরা। তারা বলছেন, এর প্রজনন সফলতা অর্জিত হলে দেশে পাঙ্গাস উৎপাদনে বিপ্লব ঘটবে। বর্তমানে বিএফআরআইয়ের গবেষণা পুকুরে রয়েছে ১৬০ কেজি ওজনের পাঙ্গাস মাছ। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মেকং অববাহিকায় এই প্রজাতিটির প্রাকৃতিক আবাসস্থল মেকং নদীর মূল স্রোত। যেখানে পানির গভীরতা ১০ মিটার বা তার চেয়ে বেশি। এই মাছটি ২০০৫ সালে বিশ্বের অন্যতম সাদু পানির বৃহত্তম মাছের গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড অর্জন করে। কিন্তু অতিরিক্ত আহরণ এবং বাসস্থানের ক্ষতির কারণে এটি এখন বিপন্ন প্রায়। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট জানিয়েছে, পাঙ্গাসের বিপন্নপ্রায় এই প্রজাতিটি ২০০৫ সালে প্রথম একটি বেসরকারি খামারে আনা হয়। সেখান থেকে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৫০টি মাছ সংগ্রহ করে মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট। গত ৬ বছরে এই মাছগুলোর ওজন হয়েছে ১২০ থেকে ১৫০ কেজি পর্যন্ত। যার সর্বোচ্চ ওজন হতে পারে ৩০০ কেজি পর্যন্ত। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক মহাপরিচালক ড. মো.খলিলুর রহমান বলেন, মেকং জায়ান্ট পাঙ্গাস মেকং নদীর একটা মাছ। মেকং নদীর চীন, লাউস, কম্বোডিয়া ও ভিয়েতনাম হয়ে এটাইয়োলো সাগরে পড়েছে। সেই নদী থেকে এই মাছটি নিয়ে এসেছিলেন ত্রিশালের রেনি ফিসারিজের কর্ণধার রেজা আলী। উনি আমাকে ৫০টি মাছ দিয়ে ছিলেন। এ মাছ গবেষণা করে পোনা উৎপাদন করা। রাষ্ট্রীয় এই মাছ গবেষণার আঁতুড়ঘরে এখন ১৭ বছর বয়সী ৫০টি পাঙ্গাস মাছ আছে। যাদের ওজন ১২০ থেকে ১৬০ কেজি। গবেষণা বলছে, এই মাছ তার জীবনকালে ১৭ থেকে ৪০ বছর বয়স পর্যন্ত। এই মাছের চোয়াল ও দাঁত নেই। এটি তৃণভোজী কিন্তু রাক্ষসী নয়। মাছটি পানির নিচে পাথর কিংবা নুড়ি স্তরে থাকতে পছন্দ করে। একটি পরিপক্ব মা মাছ থেকে প্রজনন কালে প্রায় ৬০ থেকে ৮০ লাখ ডিম পাওয়া যায়। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ আসফ উদ দৌলাহ বলেন, কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে পোনা উৎপাদন সম্ভব হলে, এই পোনা মাত্র ১ বছরে ৯ থেকে ১২ কেজি ওজনের হয়। যা দেশি পাঙ্গাসের তুলনায় ৬ গুণ বেশি বাড়ে। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. জুলফিকার আলী বলেন, মেকং জাতের একেকটি পাঙ্গাস তিনশ কেজির ওপরে হয়ে থাকে। আমাদের পুকুরে ৫০টি মেকং জাতের পাঙ্গাস মাছ রয়েছে। সম্ভাবনাময় এই মাছটির কৃত্রিম প্রজননে সফলতা অর্জন সম্ভব হলে চাষি পর্যায়ে পাঙ্গাস উৎপাদনে বাংলাদেশে বিপ্লব ঘটবে। বিস্তর কাজ এখনো বাকি আছে। আমরা মূলত এটি লালন-পালন করে, ডমিস্টিকেশন করে হ্যাচারিতে এর পোনা উৎপাদন করার দিকে বেশি খেয়াল রাখছি। থাইল্যান্ড মাছটির প্রজননে সফলতা অর্জন করলেও বাংলাদেশে এখনো সফলতা আসেনি। তবে আগামী এক দুই বছরের মধ্যে সফলতা অর্জন সম্ভব হতে পারে বলে আশা করি।
১৮ এপ্রিল, ২০২৪

খামারের বিষাক্ত বর্জ্য খালের পানিতে, হুমকিতে কৃষি-মৎস্য চাষ
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সোনাগাজী উপজেলার আমিরাবাদ-নবাবপুর ইউনিয়নে কোনো নিয়মনীতি না মেনে খালের দুই পাশে গড়ে উঠেছে কয়েকশ মুরগির খামার। এসব খামারের বিষাক্ত বর্জ্য ফেলা হচ্ছে খালে। এতে দূষিত হচ্ছে খালের পানি। এ ছাড়াও পানিতে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। প্রতিদিন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ পথচারীদের নাকে কাপড় দিয়ে হেঁটে যেতে হয়। খালের দূষিত পানি দিয়ে চাষাবাদ করতে পারছেন না স্থানীয় কৃষক। দূষিত পানি ছড়িয়ে পড়ছে ফসলের জমিতে। এতে করে ক্ষতি হচ্ছে ফসলের, মৎস্য চাষিরা পড়েছেন বিপাকে। ফলে এসব খামারির বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান স্থানীয় বাসিন্দারা। প্রাণিসম্পদ বিভাগ বলছে, পরিবেশদূষণ না করার জন্য খামারিদের বারবার নির্দেশনা দিলেও মানছেন না তারা। মার্চ মাসের উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় খালে বর্জ্য ফেলার কারণে পানি দূষিত হওয়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। সভার সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুল হাসান এ বিষয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিন। সোমবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, নবাবপুর-আমিরাবাদ ইউনিয়নের কয়েক কিলোমিটার এলাকার খালের দুই পাশে গড়ে উঠেছে কয়েকশ মুরগির খামার। খালের দুই পাশে খালপাড় ভরাট করে গড়ে উঠেছে স্থাপনা। মুরগির বর্জ্যে ও ময়লায় খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় জোয়ারের পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে বহু আগে থেকেই। মুরগির বর্জ্যে দূষিত হয়ে পানি কালো হয়ে এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। দেখা যায়, খালের পাড়ের খামারী পাইপের মাধ্যমে খামারের বর্জ্য খালে দিচ্ছে এবং খাল থেকে একটু দূরের খামারিও মাটির নিচ দিয়ে পাইপের মাধ্যমে বর্জ্য খালে দিচ্ছে। স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, খামারিদের মুরগির বর্জ্যে ভরাট হয়ে গেছে খালটি। কৃষকরা আগে তাদের চাষাবাদে খালের পানি ব্যবহার করতেন। এখন সেটি সম্ভব হয় না। তাদের দাবি, বর্জ্যে দূষিত হয়ে খাল-বিল ও জলাশয়কে বিষের খনিতে পরিণত করেছে। এতে কৃষকরা বৃষ্টির পানির ওপর নির্ভর করেই চাষাবাদ করতে হয়। পূর্ব সফরপুর গ্রামের শিক্ষক একরাম উদ্দিন জানান, খালটির দূষণে প্রচণ্ড দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে এলাকায়। দিনের বেলায় দুর্গন্ধ কিছুটা কম থাকলেও রাতে দুর্গন্ধ বাড়ে। দিনে এবং রাতে প্রচুর মশা দেখা যায়।  মহদিয়া গ্রামের কৃষক আফসার উদ্দিন বলেন, পানিদূষণের আগে খালের পানিতে নানা ধরনের দেশীয় মাছ আসত। এলাকার মানুষ সে মাছ ধরত। এখন দূষণের কারণে মাছে তো দূরের কথা, খালের পানিতে ব্যাঙ বা সাপও থাকতে পারে না। এ ছাড়া বর্ষাকালে খালের পানি উপচে ছড়িয়ে পড়ে ফসলের জমিতে। এতে ফসলের ফলন কমে যাচ্ছে দিন দিন। সাহেবের হাট এলাকার কয়েকজন মুরগির খামারি এলাকাবাসীর অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, খামারের বর্জ্য ও পানি সরাসরি খালে ফেলা হয় না। খালের পানিতে নিয়মিত ওষুধ ও চুন দেওয়া হয়। জৈবসার উৎপাদনের কারণে কিছু গন্ধ হয়। খামারি নুরনবী ও সবুজ জানান, আমরা কয়েকজন খামারি বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট করেছি৷ সবাই যদি বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট করে তাহলে খালের পানিতে এত ময়লা হবে না। যারা বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট করছে না তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের তথ্য মতে সোনাগাজী উপজেলায় ৫২৩টি মুরগির খামার রয়েছে। যার মধ্যে ৮০ শতাংশ খামার আমিরাবাদ-নবাবপুর ইউনিয়নের খালের পাড়ে অবস্থিত। নবাবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জহিরুল আলম বলেন, মুরগির খামারের বর্জ্যে খালের পানি একেবারে দূষিত হয়ে গেছে। এ ব্যপারে উপজেলা পরিষদের মাসিক সভায় একাধিকবার বলা হলেও খামারিদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বছরে এক-দুবার ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কয়েকজন খামারিকে জরিমানা করা হলেও আশানুরূপ কোনো ফল পাওয়া যায়নি। জরিমানার টাকা কম হওয়ায় খামারিরা ভয় পায় না। এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তরে একাধিকবার জানানোর পরেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। আমিরাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজিজুল হক হিরন বলেন, যেসব খামারি বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট না করে খালে বর্জ্য ফেলছে তাদের বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনের নিকট লিখিতভাবে জানিয়েছি। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. নেবু লাল দত্ত বলেন, খামারে বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট এবং খামার বায়োসিকিউরিটির আওতায় নিয়ে আসার জন্য খামারিদের বারবার চিঠি দিয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অনেকেই নির্দেশনা মানছে না। বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট না থাকলে নিবন্ধন বাতিল করা হবে। বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট আছে কিনা জরিপ করা হচ্ছে।  সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্তকর্তা (ইউএনও) কামরুল হাসান জানান, খামারের বর্জ্যে খালের পানির অবস্থা খুব খারাপ। পানির দুর্গন্ধে ওই এলাকার মানুষের খুব কষ্ট হচ্ছে। কৃষকরাও খালের পানি জমিতে ব্যবহার করতে পারছে না। খামারগুলোতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে। পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো ভূমিকা চোখে পড়েনি। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন মাহমুদ লিপটন বলেন, উপজেলা আইনশৃঙ্খলা সভায় এই বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
০৫ এপ্রিল, ২০২৪

দিনাজপুরে নেপিয়ার ঘাসের বাণিজ্যিক চাষ
গবাদিপশুর প্রধান খাদ্য হিসেবে বাণিজ্যিকভাবে নেপিয়ার ঘাস চাষে ঝুঁকছেন দিনাজপুরের ফুলবাড়ীর কৃষকরা। মাঠে গোখাদ্যের সংকট ও কম খরচে বেশি লাভের আশায় বিদেশি এ ঘাসের চাষ করছেন তারা। উপজেলায় প্রায় ৫০ হেক্টর জমিতে ঘাস চাষ হয়েছে বলে জানা গেছে। এ দিকে নিজের গবাদিপশুর খাদ্য চাহিদা মেটানোর পর তা বিক্রি করে আয় করছেন চাষিরা। এ ছাড়া উপজেলা পর্যায়ে ভ্যানে ফেরি করে ঘাস বিক্রির মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করছেন অনেকে। এতে প্রায় সবুজ সোনায় পরিণত হয়েছে ঘাস। উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ফুলবাড়ী উপজেলায় ২৮০টি গরুর খামার, ২৫৭টি ক্যাটেনিং খামার, ১১০টি ছাগল খামার ও ২৫টি ভেড়া খামার রয়েছে। এসব গবাদিপশুর খাদ্যের চাহিদার ২৫ ভাগ পূরণ করছে নেপিয়ার ঘাস। নেপিয়ার ঘাস চাষে আগ্রহী করতে প্রাণীর পুষ্টির উন্নয়নে উন্নত জাতের ঘাষ চাষ সম্প্রসারণ ও প্রযুক্তি হস্তান্তর প্রকল্পের অধীনে উপজেলার সাত ইউনিয়নে দুজন করে ১৪ জন খামারিকে ১০ হাজার টাকা করে প্রণোদনা দিয়ে প্রদর্শনী ক্ষেতে ঘাস চাষ করানো হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় উপজেলায় সাড়ে ৮ হেক্টর জমিতে নেপিয়ার ঘাস চাষ করা হচ্ছে। উপজেলার খয়েরবাড়ী ইউনিয়নের খয়েরবাড়ী বাজার এলাকার নেপিয়ার ঘাস চাষি আজিজুর রহমান সরকার বলেন, শাহী ওয়াল জাতের তিনটি গাভির খাদ্যের জন্য তিনি ২ বছর থেকে ৩৩ শতক জমিতে নেপিয়ার ঘাস চাষ করছেন। এর আগের বছর নিজের গাভির খাদ্য জোগান দেওয়াসহ চাষাবাদের সব খরচ বাদ দিয়ে প্রায় ২৫ হাজার টাকা লাভ করেছেন।  একই এলাকার অপর ঘাস চাষি বারিক হোসেন বলেন, এক বিঘা জমিতে ঘাস চাষ করতে সর্বসাকল্যে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়। মাসে দুই-তিন বার সেচ দিতে হয়। এক বার ঘাস বিক্রি করলেই পুরো টাকা উঠে আসে সঙ্গে কিছু লাভও পাওয়া যায়। একবার ঘাস লাগালে এক থেকে দেড় মাস অন্তর অন্তর ঘাস কাটা যায়। এতে দুই-তিন বছর ঘরে ঘাস পাওয়া যায়। গড়ে এক বিঘা জমিতে বছরে প্রায় ১০ টন কাঁচা ঘাস পাওয়া যায়। গরু পালনকারী হিরেন্দ্র নাথ বর্মন বলেন, তার বাড়িতে তিনটিকে অন্যান্য খাবারের পাশাপাশি দিনে অনেক বেশি নেপিয়ার ঘাস খাওয়াতে হয়। গবাদিপশুর জন্য নেপিয়ার ঘাস খুবই পুষ্টিকর খাবার। এ ঘাস খাওয়ালে অল্প দিনের মধ্যে গরু মোটাতাজা হয় এবং অধিক দুধ পাওয়া যায়। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রুম্মান আক্তার বলেন, উপজেলায় একটি পৌর এলাকাসহ সাত ইউনিয়নে প্রায় ৫০ হেক্টর জমিতে নেপিয়ার ঘাস চাষ করা হচ্ছে। এ ঘাস ৪ ফুট থেকে সাড়ে ৬ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। এ বিষয়ে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের দিকনির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. মো. রবিউল ইসলাম বলেন, উপজেলা প্রণিসম্পদ বিভাগ থেকে খামারিদের মধ্যে নেপিয়ার ঘাস চাষে উৎসাহিত করা হচ্ছে। পাশাপাশি আগ্রহী খামারি ও কৃষকদের ঘাস চাষে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে সাড়ে ৮ হেক্টর জমিতে ঘাস চাষাবাদ করা হচ্ছে। এ ছাড়া সাইলেজ তৈরি করলে অনেক ঘাস একসঙ্গে সংরক্ষণ করা যায়। এতে এই প্রযুক্তির মাধ্যমে কাঁচা ঘাস বা খড়ের পুষ্টিগুণ বৃদ্ধি করা হয়। এতে সংরক্ষণের ৪০ দিন পর থেকে বছরের যে কোনো সময় ফাইবারযুক্ত ঘাসের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব।
৩০ মার্চ, ২০২৪

লবণাক্ত পতিত জমিতে রসুন চাষে কৃষকের মুখে হাসি
খুলনার কয়রা উপজেলার উত্তর বেদকাশী ইউনিয়ন বতুল বাজার গ্রামের রাস্তা দিয়ে গেলে যে কোনো মানুষের নজর পড়ত একটি বিরাণ চারণভূমি। সেই বিরাণভূমির ভেতরে এ বছর জেগে আছে বিনা চাষে আলু, রসুন, সূর্যমুখী ও ভুট্টার গাছ। এ জমিতে আগে কখনো কোনো চাষাবাদ হতো না। কারণ জমিতে জো আসে মধ্য জানুয়ারিতে তখন কোনো ফসল লাগানো যায় না। জানা গেছে, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট সরেজমিন গবেষণা বিভাগ দৌলতপুর খুলনার উদ্যোগে এসিআইএআর প্রকল্পের মাধ্যমে বীজ, সার, কীটনাশক দিয়ে ডিসেম্বর মাসের ১ম সপ্তাহে বিনাচাষে ফসলগুলো লাগানোর উদ্যোগ নেয়। এখন মাঠটি পুরাপুরি সবুজ। ওই গ্রামের কৃষক মো. আলাউদ্দীনের সঙ্গে কথা হলে তিনি কালবেলাকে বলেন, তার এই জমি খালি পড়ে থাকত। সেই জমিতে তিনি বিনাচাষে আলু, রসুন, সূর্যমুখী চাষ করেছে। সে এক বিঘা জমিতে প্রায় ২৫-৩০ মণ রসুন পাবে বলে আশা করছে। যার আনুমানিক মূল্য ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। তার মতে অন্যকোনো ফসল চাষ করে পাওয়া সম্ভব নয়। তার দাবি আগামী বছর সে যেন আরও বেশি সহযোগিতা পেতে পারে। তার খেত দেখতে আসে প্রতিদিন অনেক কৃষক। তারাও আগামীতে এ ধরনের চাষাবাদ করবে বলে জানিয়েছে।  বতুল বাজার গ্রামের কৃষক আল মামুন সানা কালবেলাকে বলেন, তার গ্রামের অধিকাংশ বিল পতিত অবস্থায় পড়ে থাকত। যেখানে গরু ছাগলের অবাধ বিচরণ ছিল এক সময়। এখন সেই বিলে ১২ বিঘা জমিতে স্থানীয় কৃষকরা ফসল চাষ করে সফল হয়েছি। সেই সঙ্গে কৃষি গবেষণার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। তাদের সহযোগিতায় এটা করা সম্ভব হয়েছে। আগামী বছর আরও বেশি আলু, রসুনের বীজ বেশি পাই সেই দাবি জানাই।  কৃষকরা আরও জানান, কয়রায় এই প্রথম বিনা চাষে রসুন আবাদ করেছি। ধান চাষের পরে জমিগুলো ফেলানো থাকত তাই বিনা চাষে রসুন চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন চাষিরা। বিনা চাষে বোনা হলেও সার-কীটনাশক ও শ্রমিক মজুরিসহ আনুষঙ্গিক খরচ এবার বেড়েছে। এবার যদি বাজারমূল্য কম হয় তাহলে লোকসান গুণতে হবে তাদের। তবে ফলন ভালো হওয়ায় আশাবাদী তারা।   সরেজমিন কৃষি বিভাগের বৈজ্ঞানকি সহকারী মো. জাহিদ হাসান কালবেলাকে বলেন, এ বছর আমরা বিনাচাষে আলু, রসুন ও ডিবলিং পদ্ধতিতে সূর্যমুখী ও ভুট্টা চাষ করতে কৃষকদের উৎসাহিত করেছি। এর ভেতর আলু, রসুন ও সূর্যমুখী বেশি ভালো হয়েছে। কৃষকদের রোপণ করা থেকে শুরু করে সার্বক্ষণিক সেবা দিয়ে যাচ্ছি। আশা করি, তারা ভালোই লাভবান হবে। সরেজমিন গবেষণা বিভাগের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. হারুনর রশিদ কালবেলাকে বলেন, আমরা বিনা চাষে আলু, রসুন, সূর্যমুখী, ভুট্টা চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করেছি। দক্ষিণাঞ্চলের অনেক জমি পতিত হয়ে পড়ে থাকে। সেই পতিত জমিকে চাষের আওতায় আনতে সরেজমিনে গবেষণা বিভাগ গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে ও অব্যাহত রেখেছে। এ বছর কয়রার একজন কৃষক রসুন চাষ করে দেড় লাখ টাকা ইনকাম করেছে। এটাই আমার বড় পাওয়া। এ ধরনের ফসল উৎপাদন করতে আগামীতে এই অঞ্চলের কৃষকদেরকে আরও সহযোগিতা করা হবে।
২৯ মার্চ, ২০২৪

‘জলবায়ু সহনশীল মৎস্য চাষ প্রযুক্তি উদ্ভাবনে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে’
জলবায়ু সহনশীল মৎস্যচাষ পদ্ধতি উদ্ভাবনে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী মো. আব্দুর রহমান।  বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর ফার্মগেটস্থ বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) অডিটোরিয়ামে মৎস্য অধিদপ্তর বাস্তবায়নাধীন ‘ক্লাইমেট স্মার্ট এগ্রিকালচার অ্যান্ড ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট (মৎস্য অধিদপ্তর অংশ) শীর্ষক’ প্রকল্পের কেন্দ্রীয় কর্মশালায় এ কথা বলেন তিনি।  মন্ত্রী বলেন, সরকারের গৃহীত উন্নয়নমূলক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে মৎস্য উৎপাদন ও সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে সব স্টেকহোল্ডাদেরে এগিয়ে আসতে হবে। জলবায়ু সহনশীল মৎস্য উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনার জন্য গবেষণার ওপর বিশেষ জোর দিতে হবে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সম্পর্কিত সব প্রকল্প নির্ধারিত সময়ে সম্পন্ন করতে হবে। তিনি বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রিতা হলে টাকার অবমূল্যায়নের ফলে প্রকল্পের খরচ অনেক বেড়ে যায়। প্রকল্প বাস্তবায়নে সঠিক পরিকল্পনা করে সে মোতাবেক কাজ করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী বলেন, জলজ সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার এবং মাছ চাষের আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও আর্থসামাজিক উন্নয়নে ক্লাইমেট স্মার্ট এগ্রিকালচার এ্যান্ড ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আব্দুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ দেশ হওয়ায় বাস্তবতা মেনে আমাদেরকে পলিসি প্রণয়ন করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তন জনিত ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে ভবিষ্যতে প্রকল্পটি দেশের আরও নতুন নতুন এলাকায় সম্প্রসারণ করে দেশব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা করে মৎস্য সেক্টরের উৎপাদন বৃদ্ধিসহ জনসাধারণের জীবনমান উন্নয়ন ও গ্রামীণ জনপদে কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সরকারের গৃহীত উন্নয়নমূলক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে মৎস্য উৎপাদন ও সম্প্রসারণের মাধ্যমে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ার জন্য আহ্বান জানান তিনি। তিনি বলেন, জলজসম্পদের টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত করে মৎস্যসম্পদের সুরক্ষা, সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির করে দরিদ্র জেলে ও মৎস্য চাষিদের জীবনমান উন্নয়ন করা হবে। জলবায়ু সহনশীল ও উপযোগী মৎস্য চাষ পদ্ধতি সম্প্রসারণের মাধ্যমে বিশেষায়িত মৎস্যচাষ পদ্ধতির সম্প্রসারণ, সমাজভিত্তিক মৎস্য চাষ ব্যবস্থাপনার প্রবর্তন, মৎস্যসম্পদ সুরক্ষা ও সংরক্ষণে জনসচেতনতা ও জনসম্পৃক্ততা বৃদ্ধি এবং প্রাকৃতিক জলজ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও উন্নয়নে মৎস্য অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে।  তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকারের মৎস্য সেক্টরে সাফল্য বিশেষ করে মাছ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, জাতীয় অর্থনীতিতে মৎস্য খাতের গুরুত্ব, খাদ্য নিরাপত্তা, জনগণের নিরাপদ পুষ্টির চাহিদা পূরণ এবং গ্রামীণ জনপদে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে এ খাতের অবদানের কথা উল্লেখ করেন তিনি। মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সৈয়দ মো. আলমগীরের সভাপতিত্বে কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসেবে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাং সেলিম উদ্দিন, অতিরিক্ত সচিব এটিএম মোস্তফা কামাল ও অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
২৮ মার্চ, ২০২৪
X