ইউটিউব দেখে উত্তর আমেরিকার অন্যতম পুষ্টি ও ঔষধী গুণসমৃদ্ধ ফসল সুপারফুড খ্যাত কিনোয়া চাষে সফল হয়েছেন পঞ্চগড়ের সাবেক সেনা সদস্য আমিনুল ইসলাম আমিন। কম খরচে অধিক লাভজনক হওয়ায় তার দেখাদেশি এ ফসল চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন জেলার অপর চাষিরা। সুপারফুড কিনোয়া ঘিরে প্রান্তিক এ জেলার কৃষি অর্থনীতিতে সম্ভাবনার নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়েছে।
স্বাস্থ্যের জন্য কিনোয়া অনেক উপকারী বলছেন পুষ্টিবিদরা। এদিকে কৃষকদের সব ধরনের কারিগরি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে জেলা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে। পায়েসসহ নানাভাবে রান্না করে খাওয়া যায় এ ফসলটি। তবে স্থানীয়ভাবে বাজারজাত না হওয়ায় শঙ্কায় পড়েছেন কিনোয়া চাষি আমিনুল।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, পঞ্চগড় এরার ৬ একর জমিতে কিনোয়া চাষ হয়েছে। উত্তর আমেরিকার অন্যতম পুষ্টি ও ঔষধী গুণ সমৃদ্ধ ফসল কিনোয়া। পঞ্চগড় সদর উপজেলার গড়িনাবাড়ি ইউনিয়নের চারাখুঁড়ার সাবেক সেনা সদস্য আমিনুল ইসলাম গত বছর এক বিঘা জমিতে কিনোয়ার চাষ করলেও এবার তা বাড়িয়ে করেছেন ১২ বিঘাতে। বাণিজ্যিকভাবে এ ফসলের চাষ করেছেন। অধিক লাভের আশায় একই জমিতে সাথী ফসল হিসেবে লাগিয়েছেন মিষ্টি কুমড়া। বর্তমানে জমিতে পাকতে শুরু করেছে কিনোয়া। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় শীতপ্রধান দেশের ফসল কিনোয়ার ফলনও বেশ ভালো হয়েছে উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে তাই, জেলার অপর চাষিরা ঝুঁকছেন বিদেশি এই শস্যদানা চাষে। কৃষকরা বলছেন, অন্য ফসলের তুলনায় বেশি লাভ পাওয়া যায় কিনোয়া চাষে। প্রতি বিঘা জমিতে চাষাবাদ করতে খরচ হয় মাত্র ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। আর বিঘা প্রতি জমি থেকে ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা বিক্রয় হয় কিনোয়া। ৩ মাসে ফসল ঘরে তোলা যায়। কিনোয়া প্রতি বিঘাতে উৎপাদন হয় ২০০ থেকে ২৪০ কেজি। প্রতি কেজি কিনোয়া ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হয়। লাভজনক হওয়ায় এ ফসল চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন জেলার অপর চাষিরাও।
সরেজমিনে দেখা যায়, কিনোয়া নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষি আমিনুর রহমান আমিন। বর্তমানে তার জমিতে পাঁকতে শুরু করেছে কিনোয়া। জমি থেকে ফসলটি কাটাই মাড়াইয়ে কাজ করতে দেখা গেছে কয়েকজন শ্রমিককে। তারা অধিক পরিপক্ব কিনোয়া কেটে মাড়াইয়ের জন্য স্তূপ করে রাখছিলেন পাশের ফাঁকা জায়গায়।
জানা গেছে, সুপার ফুড কিনোয়া বাংলাদেশে অপ্রচলিত ও নতুন খাবার হলেও ইউরোপ ও আমেরিকাসহ বিশ্বজুড়ে রয়েছে এর চাহিদা। সুপারফুড খ্যাত এই রবিশস্যটিতে রয়েছে হাইপ্রোটিন, মিনারেল, আয়রন, এন্টি অক্সিডেন্ট, পটাশিয়াম, লো গ্লাইসিমিকস ইনডেস্কসহ নানা পুষ্টিকর উপাদান। এর কদর রয়েছে সুপারশপ, রেস্টুরেন্টসহ নামিদামি সব খাবারের দোকানে। পায়েসসহ নানাভাবে রান্না করে খাওয়া যায় খাবারটি। তাই বিশ্ব বাজারে এর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে।
কৃষক আমিনুর রহমান আমিন কালবেলাকে বলেন, চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর কৃষি কাজে মনোনিবেশ করি। ইউটিউব ঘাটাঘাটি করে কিনোয়া চাষে উদ্বুদ্ধ হই। প্রথম বছর এক বিঘা জমিতে এই ফসলের আবাদ করে সাফল্য পাই। তাই এবার পরিধি বাড়িয়ে ১২ বিঘা করেছি। এ বছর ফলন ভালো হয়েছে। বাজারমূল্য ভালো পেলে আগামী বছর চাষের পরিধি আরও বাড়াব।
তিনি আরও বলেন, কিনোয়া অধিক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন একটি ফসল। এতে ভিটামিন সি ব্যাতীত সব ধরনের ভিটামিন বিদ্যমান। কিনোয়ার চাষ পদ্ধতিও সহজ। খরচ একেবারেই কম। তবে, ফসলটি বাজারজাত একটু কঠিন। লোকাল মার্কেটে একদম অপরিচিত একটি ফসল এটি। তবে, অনলাইনে এর ব্যাপক চাহিদা আছে।
পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের চিকিৎসক এসএম মাহবুব উল আলম বলেন, সুপারফুড কিনোয়া ডায়াবেটিসসহ নানা রোগে আক্রান্তদের জন্য ভাতের বিকল্প বেশ উপকারী খাবার বলছেন চিকিৎসকরা। শরীরে বিভিন্ন ভিটামিনের অভাব পূরণ করবে বলেও তারা বলছেন। কিনোয়া হলো হাই-প্রোটিন সম্পন্ন খাবার। এটিকে সুপারফুডও বলা হয়। কিনোয়াতে অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে এবং লাইসিন সমৃদ্ধ, যা শরীরজুড়ে স্বাস্থ্যকর টিস্যু বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুবই উপকারী। কিনোয়া আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম, ভিটামিন-ই, পটাশিয়াম ও ফাইবারের একটি উৎকৃষ্ট উৎস।
পঞ্চগড় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আব্দুল মতিন বলেন, কিনোয়া দক্ষিণ আমেরিকার একটি ফসল। এটিকে সুপার ফুড বলা হয়, অনেকে এটিকে নভোচারীদের খাবার বলেন। কিনোয়া অনেক উপকারী খাবার। এটি আমাদের সুপারশপগুলোতে বিক্রি হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে, আগামীতে কিনোয়ার চাষ আরও বৃদ্ধি পাবে। মাঠপর্যায়ে চাষিদের এই ফসলটি চাষাবাদে প্রয়োজনীয় পরার্মশ দেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন