রুবেল মিয়া নাহিদ, মঠবাড়িয়া (পিরোজপুর)
প্রকাশ : ২১ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:০০ এএম
অনলাইন সংস্করণ

সূর্যমুখীর বাম্পার ফলন, তবুও চিন্তায় চাষি

সূর্যমুখী ফুলের মাঠ। ছবি : কালবেলা
সূর্যমুখী ফুলের মাঠ। ছবি : কালবেলা

পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় মাঠগুলোতে দূর থেকে দেখলে মনে হবে যেন বিশাল আকারের হলুদ গালিচা বিছিয়ে রাখা হয়েছে। কাছে গেলে চোখে পড়ে হাজারো সূর্যমুখী ফুল। বাতাসে দোল খেয়ে ফুলগুলো যেন আমন্ত্রণ জানাচ্ছে সৌন্দর্য উপভোগ করতে।

উপজেলায় সূর্যমুখী চাষ করে কাঙ্ক্ষিত ফলন পেয়ে খুশি চাষিরা। উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় সূর্যমুখী চাষ করেছেন ৮৫০ জন কৃষক। মাটি ও আবহাওয়া সূর্যমুখী চাষাবাদের জন্য উপযোগী। কম সময় ও অর্থ ব্যয় করে সূর্যমুখী চাষ করে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

কৃষি বিভাগ সাধারণ কৃষকদের সূর্যমুখী চাষে উদ্বুদ্ধ করতে উদ্যমী কৃষকদের হাত ধরে পরীক্ষামূলকভাবে মঠবাড়িয়ার ১১টি ইউনিয়নের ৪৭৭ হেক্টর জমিতে চাষ করছে। প্রথমবারের মতো উপজেলায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সার ও বীজ প্রণোদনার মাধ্যমে চাষ হচ্ছে সূর্যমুখী ফুলের।

আমড়াগাছিয়া ইউনিয়নের কালিকাবাড়ি গ্রামে ও উপজেলার বিভিন্ন সূর্যমুখী চাষ করা জমিতে গিয়ে দেখা যায়, ফুটে থাকা হলুদ সূর্যমুখী ফুলের সমাহারে এক নয়নাভিরাম দৃশ্যের অবতারণা হয়েছে। চারদিকে হলুদ রঙের ফুলের মনমাতানো ঘ্রাণ আর মৌমাছিরা ছুটছেন এক ফুল থেকে অন্য ফুলে তাতে মুখরিত হয়ে উঠেছে কৃষকের জমি। এটি যেন ফসলি জমি নয়, এ এক দৃষ্টিনন্দন বাগান। তবে সূর্যমুখী ফুল চাষের লক্ষ্য নিছক বিনোদন নয়। মূলত ভোজ্যতেল উৎপাদনের মাধ্যমে খাদ্য চাহিদা মেটাতে এ চাষ করা হচ্ছে। তাই অন্যান্য ফসলের চেয়ে সূর্যমুখী চাষে বেশি লাভের প্রত্যাশা অনেক বেশি।

জানা যায়, সূর্যমুখী ফুলের চাষ করলে ফুল থেকে তেল, খৈল ও জ্বালানি পাওয়া যায়। প্রতি কেজি বীজ থেকে কমপক্ষে আধা লিটার তৈল উৎপাদন সম্ভব। প্রতি বিঘা জমিতে ৭ মণ থেকে ১০ মণ বীজ উৎপাদন হয়। তেল উৎপাদন হবে প্রতি বিঘায় ১৪০ লিটার থেকে ২০০ লিটার পর্যন্ত। প্রতি লিটার তেলের সর্বনিম্ন বাজার মূল্য ২৫০ টাকা। প্রতি বিঘা জমিতে খরচ হয় সর্বোচ্চ সাড়ে ৩ হাজার টাকা। বর্তমানে বাজারে ভোজ্যতেলের আকাশছোঁয়া দাম হওয়ার কারণে চাহিদা বেড়েছে সরিষা ও সূর্যমুখী তেলের।

উপজেলার কৃষক ফজলুল হক (৫৬) প্রায় ২০ শতাংশ জমিতে প্রথমবার সূর্যমুখী চাষ করেছেন। ভালো ফসলও হয়েছে। কিন্তু কপালে চিন্তার ভাঁজ। সূর্যমুখী ফুল পাকতে শুরু করেছে কিন্তু তাঁদের কোনো প্রস্তুতি নেই।

তিনি বলেন, কৃষি অফিস থেকে সুযোগ-সুবিধা পায় না, সহযোগিতা পেলে আশা করছি লাভের মুখ দেখতে পারব। শুনেছি সূর্যমুখীর তেল স্বাদে, গুণে ভালো। দামও অনেক বেশি। তাই এ ফসল নষ্ট হতে দিতে চাই না।

আমড়াগাছিয়া ইউনিয়নের কালিকাবাড়ি গ্রামের কৃষক আব্দুল খালেক (৬৫) বলেন, আমি পাঁচ বছর ধরে জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করছি। এটি খুবই লাভজনক একটি ফসল। কিন্তু চাষের জন্য কৃষি অফিস থেকে বীজ এবং সার পর্যাপ্ত পাচ্ছিনা। এ বছর সূর্যমুখী ফুলের বীজে খুবই সমস্যা হয়েছে। হাইসন-৩৩ বীজে তেমন ফসল পাচ্ছি না।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আমড়াগাছিয়া ইউনিয়নের প্রবাস ফেরত আব্দুল আজিজ তার বাড়ির পাশে ১৯ শতাংশ জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছেন। প্রবাসে থাকা অবস্থায় সূর্যমুখীর তেল খেতেন। সে আগ্রহ থেকে দেশে এসে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেন। এখন পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করেন। তিনি আক্ষেপারে সঙ্গে বলেন আমাদের সঠিক দিক নির্দেশনা দিলে আমরা আরও ভালো মানের ফসল পেতাম।

মঠবাড়িয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান বলেন, সূর্যমুখী এক দিকে মনোমুগ্ধকর ফুল অন্যদিকে লাভজনক ফসল। কৃষকদের বিস্তারিত জানিয়ে সূর্যমুখী আবাদ করার পরিকল্পনা করি। সামান্য পরিমাণ রাসায়নিক সার ও দুবার সেচ দিতে হয় এ ফসলে। তবে মিঠা পানির অভাবে কৃষকরা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। প্রতি একর জমিতে ২১৫-২০ হাজার টাকা খরচ হয়। আর এক একর জমির উৎপাদিত বীজ থেকে ৫০-৬০হাজার টাকা লাভ করা সম্ভব। সূর্যমুখী গাছ জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

চাঁদাবাজির অভিযোগে ২ যুবককে গণপিটুনি

সেই তন্বীর বিরুদ্ধে লড়বেন জান্নাতুন নাহার

দুই বাসের ধাক্কায় প্রাণ গেল হেলপারের

সাংবাদিক বিভুরঞ্জন সরকারের মৃত্যুতে সিইউজে’র শোক

রাজধানীর পান্থপথে দেয়াল ধসে নিহত ১

কালকিনিতে আনিসুর রহমান খোকন / মায়েদের পাশে থাকবে বিএনপি

দিনে কত কাপ চা খাওয়া উচিত, জানালেন বিশেষজ্ঞ

২০২৬ সালের এইচএসসি পরীক্ষার সিলেবাস কেমন হবে, জানা গেল

শান্ত-সৌম্যর বাদ পড়ার কারণ জানালেন গাজী আশরাফ

বিএনপির সঙ্গে বৈঠকে পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী

১০

‘এখন কাউকে ধরতে যৌক্তিক কারণ লাগে না, তবে সত্যের জয় হবে’

১১

হাওরে নৌকা ডুবে নিখোঁজ ২

১২

‘পৃথক সচিবালয় ছাড়া বিচার বিভাগের প্রাতিষ্ঠানিক স্বাধীনতা অর্জন সম্ভব নয়’

১৩

রাতের মধ্যে যেসব জেলায় হতে পারে বজ্রবৃষ্টি

১৪

বেসরকারি সংস্থায় চাকরি, বেতন ৩৮০০০ টাকা

১৫

চট্টগ্রামে শিল্পী সম্মিলন ও আর্ট ক্যাম্পে মিলন মেলা

১৬

যে কারণে এশিয়া কাপ দলে সোহান-সাইফ, জানালেন প্রধান নির্বাচক

১৭

ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ কবে, জানালেন প্রশাসক

১৮

ভারতে মোদির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলেন থালাপতি বিজয়

১৯

‘নির্বাচনে কাজ করবে সাড়ে ৬ লাখ আনসার-ভিডিপি’

২০
X