গবাদিপশুর প্রধান খাদ্য হিসেবে বাণিজ্যিকভাবে নেপিয়ার ঘাস চাষে ঝুঁকছেন দিনাজপুরের ফুলবাড়ীর কৃষকরা। মাঠে গোখাদ্যের সংকট ও কম খরচে বেশি লাভের আশায় বিদেশি এ ঘাসের চাষ করছেন তারা। উপজেলায় প্রায় ৫০ হেক্টর জমিতে ঘাস চাষ হয়েছে বলে জানা গেছে।
এ দিকে নিজের গবাদিপশুর খাদ্য চাহিদা মেটানোর পর তা বিক্রি করে আয় করছেন চাষিরা। এ ছাড়া উপজেলা পর্যায়ে ভ্যানে ফেরি করে ঘাস বিক্রির মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করছেন অনেকে। এতে প্রায় সবুজ সোনায় পরিণত হয়েছে ঘাস।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ফুলবাড়ী উপজেলায় ২৮০টি গরুর খামার, ২৫৭টি ক্যাটেনিং খামার, ১১০টি ছাগল খামার ও ২৫টি ভেড়া খামার রয়েছে। এসব গবাদিপশুর খাদ্যের চাহিদার ২৫ ভাগ পূরণ করছে নেপিয়ার ঘাস। নেপিয়ার ঘাস চাষে আগ্রহী করতে প্রাণীর পুষ্টির উন্নয়নে উন্নত জাতের ঘাষ চাষ সম্প্রসারণ ও প্রযুক্তি হস্তান্তর প্রকল্পের অধীনে উপজেলার সাত ইউনিয়নে দুজন করে ১৪ জন খামারিকে ১০ হাজার টাকা করে প্রণোদনা দিয়ে প্রদর্শনী ক্ষেতে ঘাস চাষ করানো হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় উপজেলায় সাড়ে ৮ হেক্টর জমিতে নেপিয়ার ঘাস চাষ করা হচ্ছে।
উপজেলার খয়েরবাড়ী ইউনিয়নের খয়েরবাড়ী বাজার এলাকার নেপিয়ার ঘাস চাষি আজিজুর রহমান সরকার বলেন, শাহী ওয়াল জাতের তিনটি গাভির খাদ্যের জন্য তিনি ২ বছর থেকে ৩৩ শতক জমিতে নেপিয়ার ঘাস চাষ করছেন। এর আগের বছর নিজের গাভির খাদ্য জোগান দেওয়াসহ চাষাবাদের সব খরচ বাদ দিয়ে প্রায় ২৫ হাজার টাকা লাভ করেছেন।
একই এলাকার অপর ঘাস চাষি বারিক হোসেন বলেন, এক বিঘা জমিতে ঘাস চাষ করতে সর্বসাকল্যে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়। মাসে দুই-তিন বার সেচ দিতে হয়। এক বার ঘাস বিক্রি করলেই পুরো টাকা উঠে আসে সঙ্গে কিছু লাভও পাওয়া যায়। একবার ঘাস লাগালে এক থেকে দেড় মাস অন্তর অন্তর ঘাস কাটা যায়। এতে দুই-তিন বছর ঘরে ঘাস পাওয়া যায়। গড়ে এক বিঘা জমিতে বছরে প্রায় ১০ টন কাঁচা ঘাস পাওয়া যায়। গরু পালনকারী হিরেন্দ্র নাথ বর্মন বলেন, তার বাড়িতে তিনটিকে অন্যান্য খাবারের পাশাপাশি দিনে অনেক বেশি নেপিয়ার ঘাস খাওয়াতে হয়। গবাদিপশুর জন্য নেপিয়ার ঘাস খুবই পুষ্টিকর খাবার। এ ঘাস খাওয়ালে অল্প দিনের মধ্যে গরু মোটাতাজা হয় এবং অধিক দুধ পাওয়া যায়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রুম্মান আক্তার বলেন, উপজেলায় একটি পৌর এলাকাসহ সাত ইউনিয়নে প্রায় ৫০ হেক্টর জমিতে নেপিয়ার ঘাস চাষ করা হচ্ছে। এ ঘাস ৪ ফুট থেকে সাড়ে ৬ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। এ বিষয়ে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের দিকনির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. মো. রবিউল ইসলাম বলেন, উপজেলা প্রণিসম্পদ বিভাগ থেকে খামারিদের মধ্যে নেপিয়ার ঘাস চাষে উৎসাহিত করা হচ্ছে। পাশাপাশি আগ্রহী খামারি ও কৃষকদের ঘাস চাষে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে সাড়ে ৮ হেক্টর জমিতে ঘাস চাষাবাদ করা হচ্ছে। এ ছাড়া সাইলেজ তৈরি করলে অনেক ঘাস একসঙ্গে সংরক্ষণ করা যায়। এতে এই প্রযুক্তির মাধ্যমে কাঁচা ঘাস বা খড়ের পুষ্টিগুণ বৃদ্ধি করা হয়। এতে সংরক্ষণের ৪০ দিন পর থেকে বছরের যে কোনো সময় ফাইবারযুক্ত ঘাসের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব।
মন্তব্য করুন