জনগণের প্রতিনিধি জমিদার নয়, সেবক : অর্থ প্রতিমন্ত্রী
জনগণের প্রতিনিধি জমিদার নয়, জনগণের কাছে থেকে সেবা করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান এমপি। তিনি বলেন, তৃণমূলের নেতা কর্মীরাই আওয়ামীলীগকে বাঁচিয়ে রেখেছে, তারাই আওয়ামীলীগের প্রাণ। আজ আপনারা শেখ হাসিনার জন্য এসেছেন, বঙ্গবন্ধুকে ভালবেসে এসেছেন, আপনাদের দেখে আমার মনে হচ্ছে আজ আমার ঈদ। শনিবার (২০ এপ্রিল) সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার চাতুরী চৌমহনী বাজারে তৃণমূল আ.লীগের নেতাকর্মীদের ঈদ পুনর্মিলনী ও বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অর্থ প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমার প্রায়াত পিতা আতাউর রহমান খান কাইসার একটা বিষয় শিখিয়ে গেছেন, দেশের চরম মুহুর্তে দেশ ছেড়ে পালানো যাবেনা। আমারও দেশ ছেড়ে পালানোর প্রশ্নই আসেনা, আমাকে অনেক ভয় দেখিয়েছিল, নিজেরাই কোন কাজ করেনা অন্যদেরও করতে দেয়না। শেখ হাসিনা আমাকে শিখিয়েছেন উন্নয়নের রাজনীতি, সরকারি টাকার কাজ যথাযথ হচ্ছে কিনা সেটা জানার দায়িত্ব আপনাদের আছে। সরকারের অর্থ আপনাদের অর্থ, কাজ হচ্ছে কিনা পাহারা দেবেন, নিজেদের মধ্যে ভেদাবেদ সৃষ্টি করবেন না, তাতে দুষ্টরাই লাভবান হয়। তিনি বলেন, বাংলার এই জনপথ বাংলার মানুষের রক্তে গড়া জনপথ, শেখ হাসিনার সঙ্গে থেকে কাজ করব। স্মার্ট বাংলাদেশে আমরা যুক্ত হয়েছি, কেউ আমার ভদ্রতাকে দুর্বলতা যেন না ভাবেন, আমার শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে আপনাদের সঙ্গে থাকব। আপনাদের মাঝে আমি আমার প্রয়াত বাবাকে খোঁজে পাচ্ছি। দক্ষিণ জেলা আ.লীগের সহ সভাপতি আবুল কালাম চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও জিয়া উদ্দিন বাবলু, ওয়াহেদুল আলম ও আজিজুর রহমানের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, দক্ষিণ জেলা আ.লীগের সহ সভাপতি শাহজাদা মহিউদ্দিন। এসময় বক্তব্য রাখেন, সাবেক স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের নেতা ডা. নাছির উদ্দিন মাহমুদ, দক্ষিণ জেলা আ.লীগের শ্রম সম্পাদক খোরশেদুল আলম, উপজেলা আ.লীগের সাবেক সভাপতি কাজী মোজামেল হক, দক্ষিণ জেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার ইসলাম আহমদ, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো. ইদ্রিস, শিকলবাহা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম, কর্ণফুলীর সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী, মঈন উদ্দিন খান পিন্টু, আ.লীগ নেতা নাজিম উদ্দিন সুজন, দক্ষিণ জেলা মহিলা আ.লীগের সহ সভাপতি রেহেনা ফেরদৌস, উপজেলা আ.লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল বাশার, এইচ এম নজরুল ইসলাম, কৃষি বিষয়ক সম্পাদক মো. মাঈনুদ্দিন প্রমুখ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, দক্ষিণ জেলা তাঁতীলীগের সহ সভাপতি আজিজুল হক আজিজ, যুবলীগ নেতা মোজাম্মেল হক, মাহাতাব হোসেন জুয়েল, শাহাদাত হোসেন প্রমুখ।
২১ এপ্রিল, ২০২৪

অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে ঐতিহ্যবাহী জমিদার বাড়ি
বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার কলসকাঠি ইউনিয়নে ইতিহাস ঐতিহ্যের স্মৃতি বিজড়িত জমিদার বাড়িগুলো অযত্ন-অবহেলায়    ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে। প্রভাবশালী জমিদার জানকী বল্লভের বংশধরদের হাতে নির্মিত ১৩টি জমিদার বাড়ি এক সময় এ অঞ্চলের মানুষের ঐতিহ্য বহন করেছে। বাড়িগুলোর নির্মাণশৈলী ও কারুকাজ যে কোনো মানুষকে আকৃষ্ট করে। ১৮ শতকের প্রথম দিকে নির্মিত এসব সুউচ্চ প্রাচীর ঘেরা বিশাল ভবনগুলো বর্তমানে লতাপাতায় ঘেরা জঙ্গলবাড়িতে পরিণত হয়েছে। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর থেকে শুরু হয় এসব জমিদারের দেশ ত্যাগ। বিশেষ করে জমিদার প্রথা বিলুপ্ত হওয়ার পর থেকে জমিদার বংশের পতন ঘটে। ১৯৭১ সালে যুদ্ধে নির্যাতন এড়াতে বাকিরাও ভিটেমাটি ছেড়ে পাড়ি জমান ভারতে। সেই থেকে অযত্নে-অবহেলায় ক্রমেই ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে এসব মূল্যবান ঐতিহাসিক জমিদার বাড়িগুলো। বাকেরগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে মাত্র ৩ কিলোমিটার দূরে গড়ে ওঠা প্রাচীন আমলে নির্মিত এসব প্রাসাদ সরকারিভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করে সাধারণ মানুষের দেখার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হলে সহজেই এলাকাটি হয়ে উঠতে পারে পর্যটকপিপাসুদের জন্য আকর্ষণীয় স্থান। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রতিবছর জগদ্ধাত্রী পূজা উপলক্ষে তিন দিনব্যাপী বিশাল অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সে উপলক্ষে দেশি-বিদেশি হাজার হাজার লোকের আগমনে মুখরিত হয়ে ওঠে এলাকাটি। বরিশাল বিভাগ তথা দক্ষিণ অঞ্চলের মধ্যে একমাত্র কলসকাঠিতেই এ পূজার আয়োজন করা হয়। তাই এ সময় এলাকাটি থাকে উৎসবমুখর। কথিত আছে উপমহাদেশের জগদ্ধাত্রী পূজার বড় আয়োজন হয় এই কলসকাঠীতে। পূজার সময় ভারত, নেপালসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন রাজ্যের লোকজনে পরিপূর্ণ হয়ে উঠে এলাকাটি। এছাড়াও সারা বছর অনেক ভ্রমণপিপাসুর আনাগোনারও কমতি নেই। কৌতূহলী পর্যটকদের আকৃষ্ট করে কলসকাঠি জমিদার বাড়িগুলো। এলাকার সচেতন মহল জমিদার বাড়িগুলো দ্রুত সংস্কারের দাবি জানান।
২৬ জানুয়ারি, ২০২৪

অযত্ম অবহেলায় ধ্বংসের মুখে দিনাজপুরের জমিদার বাড়ি
দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের রতনপুর গ্রামে অযত্ন অবহেলায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে ঐতিহাসিক নিদর্শন। প্রায় তিন বছর আগে উপজেলা প্রশাসন এটি সংস্কার ও প্রত্মতত্ত্ব অধিদপ্তরের অন্তর্ভুক্ত করার আবেদন জানায়। তবে এ বিষয়ে আর কোনো অগ্রগতি হয়নি। ভগ্নদশা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে দোতলা ভবনটি। পুরোনো ইটের দেয়ালে অসংখ্য পরগাছা। ঘরের ভেতরে ময়লা-আবর্জনা। ব্রিটিশ আমলের জমিদার বাড়িটি এখন পরিত্যক্ত। এর প্রধান ফটক থেকে শুরু করে ঘরের দরজা ও জানালার কাঠামো আছে। নেই কোনো কপাট। সেখানে গরু-ছাগল আর বন্যপ্রাণীর অবাধ বিচরণ। উপজেলা সদর থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে এই জমিদার বাড়ির অবস্থান। সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, জমিদারবাড়ির সীমানা প্রাচীর নেই। বাড়ির চত্বরে গরু চরে বেড়াচ্ছে। দরজা জালানার কাঠামো রয়েছে। তবে কোনো কপাট নেই। দোতলায় পশ্চিমের ঘরে শুকনো পাতা ও কাগজ পোড়ানোর চিহ্ন। নিচ তলা থেকে ছাদের বেষ্টনী দেয়াল পর্যন্ত ইট তুলে নেওয়া হয়েছে। বাড়িটির ছাদের নিচের অংশে রয়েছে লোহার গার্ডার। ইট, সুরকি ও রড দিয়ে নিপুণ গাঁথুনির এ দ্বিতল ভবনে রয়েছে ১৪টি ঘর। ঘরের ভেতর ও ছাদে রয়েছে প্রাচীন ঐতিহ্যের অনেক নিদর্শন।  এই জমিদারবাড়ি সম্পর্কে লিখিত কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। তবে শেষ জমিদার যার নামে এই বাড়ি পরিচিত, সেই রুক্ষনি কান্ত সরকারের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল খানপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান আবদুর রউফ (৮০)। কালবেলাকে তিনি জানান, ব্রিটিশ আমলে ভারতের বাঁকুড়ার জমিদার প্রমোদ চন্দ্র মুন্সি খাজনা আদায়ের জন্য রাজকুমার সরকারকে বিরামপুরে পাঠান। কয়েক বছর পর ১৯৩৫ সালে ওই জমিদারের কাছ থেকে রাজকুমার সরকারসহ কয়েকজন বিভিন্ন মৌজায় জমির বন্দোবস্ত নেন। রাজকুমার সরকার অঢেল সম্পত্তির মালিক হন। পরে ১৯৪২-১৯৪৩ সালে তিনি ওই বাড়িটি নির্মাণ করেন। রাজকুমার সরকার মারা যান ১৯৪৫ সালের দিকে। বাবার মৃত্যুর পর সম্পত্তির উত্তরাধিকার হন রুক্ষুনি কান্ত সরকার। আবদুর রউফ আরও বলেন, ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতাযুদ্ধ শুরু হলে জমিদার রুক্ষিনি কান্ত সরকার তার স্ত্রী কণিকা রানি সরকারকে নিয়ে কলকাতার বাড়িতে চলে যান। পরে ১৯৭৩ সালের শেষের দিকে তিনি দেশে আসেন। এ সময় তিনি তার প্রায় ১৩০০ বিঘা জমি বাংলাদেশ সরকারের কাছে রিটার্ন সাবমিট করেন এবং পরের দিন কলকাতায় ফিরে যান। এরপর থেকে স্থানীয় অধিবাসীরা ওই জমি ভোগদখল করতে থাকেন। এর মধ্যে প্রায় ৪০০ বিঘা জমি অর্পিত সম্পত্তির অন্তর্ভুক্ত হয়। পরে তৎকালীন খানপুরের তহশিলদার ওই জমিগুলো ১ নম্বর খাস খতিয়ানে রেকর্ড করেন। ১৯৭৪ সাল থেকে বাড়িটি খানপুর ইউপি অফিস ও ১৯৮০ সাল থেকে খানপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিস হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ২০১৯ সালে জমিদার বাড়ি সংলগ্ন উত্তর পাশে ভূমি অফিসের নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়। তখন থেকেই বাড়িটি ঝুঁকিপূর্ণ ও পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। জমিদারবাড়ি দেখতে আসা মহিলা ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক মশিহুর রহমান কালবেলাকে বলেন, ‘ছুটির দিনে জমিদারবাড়ি দেখতে এসেছি। বাড়িটির কাজ  অনেক সুন্দর। তবে, ভেতরের পরিবেশ খুবই নোংরা। কর্তৃপক্ষ এটি সংস্কারের উদ্যোগ নিলে অনেক পর্যটক ও শিক্ষার্থী আসবেন। তারা জমিদারবাড়ির ইতিহাস জানার সুযোগ পাবেন।’ খানপুর ইউনিয়ানের চেয়ারম্যান চিত্ত রঞ্জন পাহান বলেন, ব্রিটিশ আমলের জমিদার বাড়িটি রতনপুরের ইতিহাস ও ঐহিত্যের নিদর্শন। সরকারি উদ্যোগে এটি সংরক্ষণ করা দরকার। নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে জানাতে এই উদ্যোগ ভূমিকা রাখবে। বিরামপুরের ইউএনও নুজহাত তাসনিম আওন বলেন, জমিদারবাড়িটির প্রত্মতাত্ত্বিক ইতিহাস অনেক সমৃদ্ধ। এটি সংস্কারের জন্য ২০২০ সালে প্রত্মতত্ত্ব অধিদপ্তরে একটি আবেদন পাঠানো হয়েছে। পাঁচ মাস আগে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বিরামপুরে এসেছিলেন। তাকে বিষয়টি আবারও জানানো হয়েছে। প্রত্মতত্ত্ব অধিদপ্তরের অনুমতি পাওয়া গেলে বাড়িটি সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
০১ জানুয়ারি, ২০২৪

ইতিহাসের সাক্ষী শশীলজ
এক সময়ের জমিদারদের রাজত্ব ছিল এই বাংলায়। জমিদারি ওই প্রথা বিলুপ্ত হলেও এখনো রয়ে গেছে তাদের স্মৃতিবিজড়িত অনেক প্রতিষ্ঠান। যা এখন ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে যুগ যুগ ধরে। তেমনই একটি স্থাপনা শশীলজ। এটি জমিদার সূর্যকান্ত মহারাজের একটি কীর্তি। ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের ঠিক বিপরীতেই শশীলজ অবস্থিত। জানা গেছে, মুক্তাগাছার জমিদার সূর্যকান্ত আচার্য চৌধুরী ৯ একর জমির ওপর দ্বিতল ভবন নির্মাণ করেন। দত্তক ছেলে শশীকান্ত আচার্য চৌধুরীর নামে এই ভবনের নাম রাখেন শশীলজ।  ঐতিহাসিক ভবনটি ১৮৯৭ সালের ১২ জুন গ্রেট ইন্ডিয়ান ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত হয়। ১৯০৫ সালে ঠিক একই স্থানে নতুনভাবে শশীলজ নির্মাণ করেন পরবর্তী জমিদার শশীকান্ত আচার্য চৌধুরী। ১৯১১ সালে নবীন জমিদারের প্রয়াসে শশীলজ হয়ে ওঠে অনিন্দ্য সুন্দর, অপরূপ।  জমিদারি প্রথা শেষ হলে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকার জমিদারদের সব ভবন ও সম্পত্তি সরকারের খাসজমি ও ভবন হিসেবে ঘোষণা করে। ১৯৫২ সালে এখানে মহিলা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। বাড়িটির মূল অংশ মহিলা টিচার্স ট্রেনিং কলেজের অধ্যক্ষের কার্যালয় ও দপ্তর হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল। ২০১৫ সালের ৪ এপ্রিল জাদুঘর স্থাপনের জন্য প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর সেটি অধিগ্রহণ করে। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে সংস্কার শেষে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় শশীলজ প্রাসাদ ও জাদুঘর। শশীলজের অর্ধবৃত্তাকার প্রবেশ তোরণের ভেতরে ঢুকতেই চোখে পড়বে ১৬টি গম্বুজের দৃষ্টিনন্দন প্রাসাদটির প্রধান ফটক। মাথার ওপর আছে পুরোনো বিশাল গাছ। প্রধান ফটক পার হতেই আগতদের অভ্যর্থনা জানান গ্রিক দেবী ভেনাসের স্বল্পবসনা স্নানরত মূর্তি। ফটক থেকেই দুই দিকে রাস্তা মিলেছে প্রাসাদের মূল ভবন। মাঝখানে বাগান। এ ছাড়া প্রাসাদের মার্বেল পাথর, কারুকার্য, শৈল্পিক সব জিনিসপত্র চোখে পড়বে।  প্রতিটি ঘরে থাকা ঝাড়বাতি এনে দেয় ভিন্ন অনুভূতি। মদনবাবু রোডে ময়মনসিংহ জাদুঘর স্থানান্তর করে প্রাসাদের তিনটি কক্ষে রাখা হয়েছে। এখানে স্থান পেয়েছে মুক্তাগাছা, গৌরীপুর ও ঈশ্বরগঞ্জের আঠারবাড়ী জমিদার পরিবারের ব্যবহৃত বিভিন্ন আসবাব, পেইন্টিং, তৈজসপত্র, কষ্টিপাথরের বিষ্ণুমূর্তি, প্লাস্টার অব প্যারিস মূর্তি, হাতি, মহিষসহ বিভিন্ন প্রাণীর শিং। প্রাসাদের মূল ভবনের ঠিক পেছনে রয়েছে বিশাল পুকুর। মার্বেল পাথরের পুকুর ঘাটে রয়েছে নারীদের বিশাল স্নানঘর ও সুড়ঙ্গ। ধারণা করা হয়, এই সুড়ঙ্গপথে মুক্তাগাছা যাওয়ার ব্যবস্থা ছিল। ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে সৌন্দর্য ছড়ানো এই শশীলজ দেখতে প্রতিদিনই ভিড় বাড়ছে দর্শনার্থীদের। অবসাদ নিয়ে এখানে প্রবেশ করলেও প্রশান্তি নিয়ে ফেরেন তারা। প্রতিদিন গড়ে ৭০০ দর্শনার্থী আসেন শশীলজে।  ফারজানা তান্নী নামে এক দর্শনার্থী বলেন, শশীলজের সৌন্দর্যে মুগ্ধ না হয়ে উপায় নেই। সবকিছু এত সুন্দর যে, এখানে সময় কাটালেই মনে প্রশান্তি আসে। শশীলজ জাদুঘরের কর্মকর্তা সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, জাদুঘরে প্রতিনিয়ত দর্শনার্থী বাড়ছে। ছুটির দিনে বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনার্থীরা আসেন, বিদেশিরাও ঘুরতে আসেন এখানে। সংস্কার, ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন, দর্শনার্থীদের বসার ব্যবস্থা করতে প্রকল্প হাতে নিয়েছে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর। সেটি বাস্তবায়নের পর দর্শনার্থী আরও বাড়বে বলে আশা করি। যেভাবে যাবেন শশীলজে রাজধানী ঢাকা থেকে ১২২ কিলোমিটার দূরে ময়মনসিংহ নগরের জিরো পয়েন্টের পাশেই শশীলজের অবস্থান। বাসে বা ট্রেনে যেতে পারবেন। রাজধানীর মহাখালী থেকে প্রতিদিন বিভিন্ন পরিবহনে বাস ছেড়ে যায় ময়মনসিংহের উদ্দেশ্যে। শশীলজে প্রবেশ মূল্য জনপ্রতি ১৫ টাকা।  
২১ নভেম্বর, ২০২৩

কুমিল্লায় সংরক্ষণের অভাবে বিলীন হচ্ছে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন
বাংলাদেশের অনেক স্থানেই রয়েছে ঐতিহাসিক অনেক নিদর্শন, যা দেশের বিভিন্ন এলাকায় এখনও ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। তার একটি কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার শশীদল ইউনিয়নের তেঁতাভূমি এলাকার তারেক রাজা চৌধুরী বাড়ি। কালের সাক্ষী হয়ে আজও মাথা উঁচুু করে দাঁড়িয়ে আছে বাড়িটি। বিভিন্ন এলাকা থেকে বাড়িটি দেখার জন্য ঐতিহ্যপ্রেমী মানুষজন ছুটে আসছেন। স্থানীয়দের অভিমত, সংরক্ষণের অভাবে বিলীন হয়ে যাচ্ছে কালের সাক্ষী ওই বাড়িটির প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। ফলে নতুন প্রজন্মের কাছ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে পুরোনো ইতিহাস। সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয়দের থেকে জানা যায়, ওই বাড়িটি তৎকালীন জমিদার তারেক রাজা চৌধুরীর। তারেক রাজা চৌধুরী তেঁতাভূমির জমিদার হিন্দু পরিবার ছেড়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে ছিলেন। তিনি একজন আদর্শ মুসলিম হিসেবে পার্শ্ববর্তী চড়ানলে স্থায়ী বসতি স্থাপন করেছিলেন। পরে একসময় সপরিবারে ভারতে চলে যান। তেঁতাভূমির পরিত্যক্ত ওই জমিদার বাড়ি তারেক রাজা চৌধুরীর বাড়ি নামে আজও পরিচয় বহন করছে।  ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে আছে বাড়িটি। প্রাচীন ওই ভবন সংরক্ষণের অভাবে ইট-সুরকি খসে পড়ছে। খসে যাওয়া দালানটির ইটের ফাঁকে ফাঁকে গজিয়েছে পরজীবী গাছ। জমেছে শেওলার আস্তরণ। বাড়ির বিভিন্ন কামরায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে লোহার সিন্দুক, আসবাবপত্র ও জমিদার পরিবারে ব্যবহারিক নানাসামগ্রী। কোথাও কোথাও খসে পড়ছে পলেস্তারা। বাড়িটির পাশের আরেকটি ভবন সংরক্ষণের অভাবে আগেই বিলীন হয়ে গেছে। ওই পরিত্যক্ত বাড়ির প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন রক্ষণাবেক্ষণের দাবি এলাকাবাসীর। স্থানীয় বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম জানান, তারেক রাজা চৌধুরী জমিদার ছিলেন। তার জমিদারির চিহ্ন আজও বহন করছে বাড়িটি। এই বাড়িটি সংরক্ষণ করলে নতুন প্রজন্মের কাছে ইতিহাস তুলে ধরা যাবে। সংরক্ষণের অভাবে বাড়িটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দা আরিফুর রহমান বলেন, তারেক রাজা চৌধুরী জমিদার বাড়িটি দিন দিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বাড়িটি সংরক্ষণ করা হলে আগামী প্রজন্মের ইতিহাস সম্পর্কে অবগত হবে। ঐতিহ্যপ্রেমী শশীদল ইউপি চেয়ারম্যান আতিকুল ইসলাম রিয়াদ বলেন, ঐতিহ্য ও ইতিহাস দেশের সম্পদ। প্রতিটি জাতি তাদের ঐতিহ্য ও ইতিহাস নিয়ে গর্ববোধ করে। আমাদের এ দেশের বিভিন্ন এলাকায় থাকা পুরোনো স্থাপত্য সংরক্ষণ করা প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব। তেঁতাভূমির ওই জমিদার বাড়িটি সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।
২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
X