ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২১ নভেম্বর ২০২৩, ১১:৪০ এএম
অনলাইন সংস্করণ

ইতিহাসের সাক্ষী শশীলজ

মুক্তাগাছার জমিদার সূর্যকান্ত আচার্য চৌধুরী শশীলজ নির্মাণ করেন ।  ছবি : সংগৃহীত
মুক্তাগাছার জমিদার সূর্যকান্ত আচার্য চৌধুরী শশীলজ নির্মাণ করেন । ছবি : সংগৃহীত

এক সময়ের জমিদারদের রাজত্ব ছিল এই বাংলায়। জমিদারি ওই প্রথা বিলুপ্ত হলেও এখনো রয়ে গেছে তাদের স্মৃতিবিজড়িত অনেক প্রতিষ্ঠান। যা এখন ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে যুগ যুগ ধরে। তেমনই একটি স্থাপনা শশীলজ। এটি জমিদার সূর্যকান্ত মহারাজের একটি কীর্তি।

ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের ঠিক বিপরীতেই শশীলজ অবস্থিত। জানা গেছে, মুক্তাগাছার জমিদার সূর্যকান্ত আচার্য চৌধুরী ৯ একর জমির ওপর দ্বিতল ভবন নির্মাণ করেন। দত্তক ছেলে শশীকান্ত আচার্য চৌধুরীর নামে এই ভবনের নাম রাখেন শশীলজ।

ঐতিহাসিক ভবনটি ১৮৯৭ সালের ১২ জুন গ্রেট ইন্ডিয়ান ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত হয়। ১৯০৫ সালে ঠিক একই স্থানে নতুনভাবে শশীলজ নির্মাণ করেন পরবর্তী জমিদার শশীকান্ত আচার্য চৌধুরী। ১৯১১ সালে নবীন জমিদারের প্রয়াসে শশীলজ হয়ে ওঠে অনিন্দ্য সুন্দর, অপরূপ।

জমিদারি প্রথা শেষ হলে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকার জমিদারদের সব ভবন ও সম্পত্তি সরকারের খাসজমি ও ভবন হিসেবে ঘোষণা করে। ১৯৫২ সালে এখানে মহিলা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। বাড়িটির মূল অংশ মহিলা টিচার্স ট্রেনিং কলেজের অধ্যক্ষের কার্যালয় ও দপ্তর হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল। ২০১৫ সালের ৪ এপ্রিল জাদুঘর স্থাপনের জন্য প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর সেটি অধিগ্রহণ করে। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে সংস্কার শেষে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় শশীলজ প্রাসাদ ও জাদুঘর।

শশীলজের অর্ধবৃত্তাকার প্রবেশ তোরণের ভেতরে ঢুকতেই চোখে পড়বে ১৬টি গম্বুজের দৃষ্টিনন্দন প্রাসাদটির প্রধান ফটক। মাথার ওপর আছে পুরোনো বিশাল গাছ। প্রধান ফটক পার হতেই আগতদের অভ্যর্থনা জানান গ্রিক দেবী ভেনাসের স্বল্পবসনা স্নানরত মূর্তি। ফটক থেকেই দুই দিকে রাস্তা মিলেছে প্রাসাদের মূল ভবন। মাঝখানে বাগান। এ ছাড়া প্রাসাদের মার্বেল পাথর, কারুকার্য, শৈল্পিক সব জিনিসপত্র চোখে পড়বে।

প্রতিটি ঘরে থাকা ঝাড়বাতি এনে দেয় ভিন্ন অনুভূতি। মদনবাবু রোডে ময়মনসিংহ জাদুঘর স্থানান্তর করে প্রাসাদের তিনটি কক্ষে রাখা হয়েছে। এখানে স্থান পেয়েছে মুক্তাগাছা, গৌরীপুর ও ঈশ্বরগঞ্জের আঠারবাড়ী জমিদার পরিবারের ব্যবহৃত বিভিন্ন আসবাব, পেইন্টিং, তৈজসপত্র, কষ্টিপাথরের বিষ্ণুমূর্তি, প্লাস্টার অব প্যারিস মূর্তি, হাতি, মহিষসহ বিভিন্ন প্রাণীর শিং। প্রাসাদের মূল ভবনের ঠিক পেছনে রয়েছে বিশাল পুকুর। মার্বেল পাথরের পুকুর ঘাটে রয়েছে নারীদের বিশাল স্নানঘর ও সুড়ঙ্গ। ধারণা করা হয়, এই সুড়ঙ্গপথে মুক্তাগাছা যাওয়ার ব্যবস্থা ছিল।

ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে সৌন্দর্য ছড়ানো এই শশীলজ দেখতে প্রতিদিনই ভিড় বাড়ছে দর্শনার্থীদের। অবসাদ নিয়ে এখানে প্রবেশ করলেও প্রশান্তি নিয়ে ফেরেন তারা। প্রতিদিন গড়ে ৭০০ দর্শনার্থী আসেন শশীলজে।

ফারজানা তান্নী নামে এক দর্শনার্থী বলেন, শশীলজের সৌন্দর্যে মুগ্ধ না হয়ে উপায় নেই। সবকিছু এত সুন্দর যে, এখানে সময় কাটালেই মনে প্রশান্তি আসে।

শশীলজ জাদুঘরের কর্মকর্তা সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, জাদুঘরে প্রতিনিয়ত দর্শনার্থী বাড়ছে। ছুটির দিনে বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনার্থীরা আসেন, বিদেশিরাও ঘুরতে আসেন এখানে। সংস্কার, ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন, দর্শনার্থীদের বসার ব্যবস্থা করতে প্রকল্প হাতে নিয়েছে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর। সেটি বাস্তবায়নের পর দর্শনার্থী আরও বাড়বে বলে আশা করি।

যেভাবে যাবেন শশীলজে

রাজধানী ঢাকা থেকে ১২২ কিলোমিটার দূরে ময়মনসিংহ নগরের জিরো পয়েন্টের পাশেই শশীলজের অবস্থান। বাসে বা ট্রেনে যেতে পারবেন। রাজধানীর মহাখালী থেকে প্রতিদিন বিভিন্ন পরিবহনে বাস ছেড়ে যায় ময়মনসিংহের উদ্দেশ্যে। শশীলজে প্রবেশ মূল্য জনপ্রতি ১৫ টাকা।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

জাকসু নির্বাচন / ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা, মনোনয়ন পেলেন শেখ সাদী-বৈশাখী

সব কালো চক্রান্ত থেকে রক্ষা করার মালিক আল্লাহ : আরএস ফাহিম

রোজার আগে নির্বাচন, ভোটের ৬০ দিন আগে তপশিল : আখতার আহমেদ 

‘কেউ তো জানে’ আসছে এনটিভির পর্দায়

মসজিদুল হারামে এ সপ্তাহে জুমা পড়াবেন শায়খ সুদাইস

৬ বছরেও শেষ হয়নি কাজ, আশ্রয়কেন্দ্র এখন মাদকসেবীদের আখড়া

জার্সিতে নাম পাল্টালেন হলান্ড

ডিবি কার্যালয়ে লতিফ সিদ্দিকী

ছাত্র সংসদ নির্বাচনে সেনাবাহিনীর সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ নেই : আইএসপিআর

আগামী সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা ইসির 

১০

২০ মাসের ব্যবধানে পানিতে দুই ভাইয়ের মৃত্যু, বাকরুদ্ধ পরিবার

১১

হঠাৎ মিষ্টি খেতে মন চায়, এটা কীসের ইঙ্গিত?

১২

ভারতের হয়ে খেলার আশা ছেড়ে দিয়েছেন শামি

১৩

যথাযথ প্রক্রিয়ায় পুশইন করা হচ্ছে, দাবি বিএসএফ ডিজির 

১৪

সিজারের ৬ মাস পর পেট থেকে বের করা হলো গজ

১৫

৫ দিন কোথায় কেমন বৃষ্টি থাকবে, জানাল আবহাওয়া অফিস

১৬

জাকসু নির্বাচনের প্যানেল ঘোষণা করল ছাত্রদল

১৭

পাকিস্তানের পাঞ্জাবে ভয়াবহ বন্যায় মৃত্যু ১৫

১৮

১৭ কোটি টাকার জীবনরক্ষাকারী ওষুধ এনে প্রশংসায় ভাসছেন ইন্টার্ন চিকিৎসক 

১৯

গয়েশ্বরের বিরুদ্ধে দুদকের মামলার রায় ৪ সেপ্টেম্বর

২০
X