পাখি ডাকার খেলা
জনি বাইনোকুলারে কী যেন দেখছে।
মিনু বলল, জনি কী খুঁজছ?
—একটা পাখি। নীলচে কালো রঙের। লাল লাল চোখ।
—পাখি কেন দেখছ?
—পাখি দেখা একটা মজার খেলা। পাখির নাম, পাখির রং সব জানা যায়। তুমিও দেখবে নাকি।
মিনুও বাইনোকুলার দিয়ে পাখিটা দেখছে।
মিনু বলল, আহা পাখিটা উড়ে গেল। আর তো দেখছি না।
—পাখিটার নামও জানা হলো না। জানলে ডায়েরিতে লিখে রাখা যেত।
এমন সময় মুকুল এলো। মুকুলের সঙ্গে তার ভাগ্নে রবি।
মুকুল বলল, ও আমার ভাগনে রবি। দূরের গ্রাম থেকে বেড়াতে এসেছে। তোমাদের সঙ্গে খেলতে চায়।
জনি বলল, খুব মজা হবে। সবাই মিলে পাখি খুঁজব।
সবার সঙ্গে রবির পরিচয় করিয়ে দিল মুকুল।
রবি বলল, তোমার হাতে ওটা কী জনি? জীবনেও দেখিনি।
—এটা বাইনোকুলার। দূরের জিনিস দেখা যায়। এই নাও। তুমিও দেখো। ওই যে আমগাছে তাকাও।
রবি বাইনোকুলারে চোখ রাখল। সামনে হাত বাড়াল।
রবি বলল, আমটা আমার সামনে। পাড়তে পারছি না কেন?
জনি বলল, আমটা তোমার সামনে নেই। দুরবিন দিয়ে দূরের জিনিস কাছে দেখা যায়। তবে ধরা যায় না।
মিনু বলল, আমরা এটা দিয়ে পাখি দেখছি।
রবি বলল, এত যন্ত্রপাতি দিয়ে কষ্ট করে দেখার কী দরকার। আমি ডাকলেই তো পাখি চলে আসে।
মিনু-জনি তো অবাক।
ওরা বলল, তুমি পাখি ডাকতে পারো? কী দারুণ। আমাদের শেখাবে?
রবি মুখে হাত দিয়ে বিশেষ কায়দায় কাকের মতো বলল, কা কা কা। অনেকগুলো কাক উড়ে এলো।
মিনু বলল, আরে! অবাক ব্যাপার তো। একসঙ্গে এত কাক কখনো দেখিনি। অনেক রকম কাকও আছে দেখছি। বড় কাক, ছোট কাক।
রবি ডাকল কিচির কিচির মিচির মিচির, কিকসি মিকসি চিচির চিচির।
ফুড়ুত করে একটা পাখি এলো।
মিনু বলল, এটা চড়ুই পাখি।
জনি বলল, পাখিটাকে একটু দাঁড়াতে বলো। আমি লিখে রাখি। বাদামি ধূসর রঙের পাখি। কার্টুনের মতো নড়াচড়া করে। চাল আর শস্য দানা এদের প্রিয় খাবার।
মিনু বলল, কিন্তু লাল চোখের সেই কালো পাখি তো এটা না।
রবি আবার ডাকল, কু-উ... কু-উ।
উড়ে এলো আরেকটা পাখি। রবি বলল, এটার নাম কোকিল।
জনি বলল, এটা তো সেই পাখি। নীলচে কালো রং। লাল লাল চোখ। আমি এখনই লিখে রাখছি কোকিলের নাম।
মিনু বলল, দেখো দেখো কী দারুণ ছড়ানো লেজও আছে।
জনি বলল, এবার আমাদের শেখাও রবি।
রবি বলল, আমার মতো করে বলো, কু-উ... কু-উ।
জনি বলল, কু-উউউ... কু-উউউ।
উড়ে এলো দুটো কোকিল। জনি মহা খুশি।
মিনু বলল, এবার আমি ডাকব।
মিনু ডাক দিল, কুককুরুক... কুককুরুক।
ডাক শুনে দৌড়ে এলো একটা মোরগ।
মোরগের পিছু পিছু দৌড়ে এলো রাজন। রাজন হাঁপাচ্ছে। জিরিয়ে নিয়ে বলল, আমি সারা দিন ডাকলেও কথা শোনে না। আর তোমরা ডাকতেই ছুটে চলে এলো! কী আজব ঘটনা বলো দেখি!
মিনু আর জনি বলল, আরে আমরা অনেক মজার একটা খেলা শিখেছি।
এবার জনি ডাক দিল টুইট টুইট টুইট। উড়ে এলো টুনটুনি।
রবি বলল, টুনটুনির ডানার রং সবুজ। ডায়েরিতে জলদি লিখে রাখো জনি।
এদিকে পাখির ডাক শুনে ছুটে এলো খামারি রাসু। রাসুকে আসতে দেখে পাখিরা উড়ে গেল।
রাসু বলল, কত পাখির ডাক শুনলাম। পাখি কোথায়? পাখি তো দেখছি না।
মিনু বলল, রবি আমাদের নতুন বন্ধু। ও ডাকলে পাখিরা আসে। আমরাও শিখছি পাখি ডাকার খেলা।
রাসু বলল, বাহ! চমৎকার। ডাকো ডাকো! আমার তো অনেক অনেক পাখি দরকার। অতিথি পাখিদেরও ডাকো! আমার কাছে একটা ব্যাগও আছে। তোমরা পাখিদের ডাক দাও। তোমাদের অনেক অনেক চকলেট দেব।
রবি, জনি আর মিনুরা একে অন্যের দিকে তাকাল।
রবি বলল, আপনি পাখি শিকারি?
রাসু হেসে বলল, আহা! শিকারি কেন বলছ। আমি টুকটাক পাখি ধরি আর বিক্রি করি। এতে কিছু আয় রোজগার হয়। হে হে! ডাকো ডাকো! জলদি ডাকো। আমার তর সইছে না!
জনি বলল, তার আগে আমরা একটু শলাপরামর্শ করে নিই।
রাসু খুশিতে পেটে হাত বোলানো শুরু করেছে।
মিনু, জনি আর রবি কানে কানে বুদ্ধি করল। রবি মাথা নেড়ে বলল, আমি জানি কীভাবে এ পাখিকে ডাকতে হবে।
সেই পাখিটাকে কী বলতে হবে সেটা তাকে বলে দিল মিনু আর জনি।
রবি মুখে হাত গোল করে জোরসে বলল, কিঁ-ই-ই-ক, কিঁ-ই-ই, ক্যাঁ-অ্যাঁ-ক!
রাসু হাসিমুখে তাকিয়ে রইল আকাশে। অনেক ওপর থেকে নেমে আসছে একটা পাখি। পাখিটা আরেকটু নামতেই চোখ বড় বড় হয়ে গেল রাসুর। চিৎকার করে বলল, ও বাবা গো! এ তো বাজপাখি! আমাকে তাড়া করছে কেন! বাঁচাও!
রবি আবার মুখ গোল করে কিঁ কিঁ-ই-ক শব্দ করে পাখিটাকে কী যেন বলল।
জনি আর মিনু প্রশ্ন নিয়ে তাকাতেই বলল, ওকে বলে দিয়েছি, পাখি শিকারিদের দেখলেই যেন তাড়া করে।
এরপর বাজপাখির তাড়া খেয়ে রাসু কোথায় যে লুকাল; সহসা সে আর পাখি শিকার করবে বলে মনে হলো না।
০৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪