প্রাণ-প্রকৃতি / ওই ফিরেছে বাবুই পাখি
এক সময় গ্রামবাংলার বাড়ির আঙিনার বাইরে তালগাছের পাতায় পাতায় দেখা যেত বাবুই পাখির দৃষ্টিনন্দন বাসা; কিন্তু গ্রামের পথ ধরে অনেক সময় হাঁটলেও এখন বাবুই ও এর বাসা খুব একটা চোখে পড়ে না। নির্বিচারে গাছ উজাড় এবং এক শ্রেণির শিকারির কারণে বিলুপ্তির পথে প্রকৃতির এই বুননশিল্পীরা। তবে বর্তমানে মেহেরপুরের কিছু এলাকায় বাস্তবে বাবুই পাখির বাসার দেখা মিলছে। জনশ্রুত আছে, পুরুষ বাবুই এক মৌসুমে ৬টি বাসা তৈরি করতে পারে। অর্থাৎ এরা ঘর-সংসার করতে পারে ৬ সঙ্গীর সঙ্গে। স্ত্রী বাবুই পাখির প্রেরণা পেয়ে পুরুষ বাবুই পাখি কারুকার্যখচিত ও শিল্পসম্মত বাসা খুবই নিপুণভাবে তৈরি করে। স্ত্রী বাবুই ডিম দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পুরুষ বাবুই খুঁজতে থাকে আরেক সঙ্গীকে। তৈরি করতে শুরু করে আরেকটি বাসা। আমন ধান পাকার সময় হলো বাবুই পাখির প্রজনন মৌসুম। এ সময় সাধারণত তারা তাল ও খেজুর গাছের ডালে বাসা তৈরি করতে ব্যস্ত থাকে। ডিম ফুটে বাচ্চা বের হওয়ার পরপরই বাচ্চাদের খাওয়ানোর জন্য স্ত্রী বাবুই ক্ষেত থেকে দুধ ধান সংগ্রহ করে। প্রকৃতির বিরুদ্ধে মানুষের আগ্রাসী কার্যকলাপের বিরূপ প্রভাবই আজ বাবুই পাখি ও এর বাসা হারিয়ে যেতে বসেছে। তবে মেহেরপুরের গ্রামাঞ্চলে কিছু কিছু তাল ও খেজুর গাছে এখন চোখে পড়ছে বাবুই পাখির বাসা। তালগাছই এদের কাছে নিরাপদ জায়গা। সেখানে তারা বাসা বাঁধতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। মুজিবনগরের গৌরিনগর গ্রামের কৃষক ষাটোর্ধ্ব আলীমদ্দীন বলেন, ‘আমার বাড়ির পাশে একটি তালগাছ ছিল। সেখানে শত শত বাবুই পাখি বাসা বাঁধত। দিন শেষে সন্ধ্যাবেলায় ঝাঁকে ঝাঁকে বাবুই পাখি তাদের নীড়ে ফিরত আর কিচিরমিচির ডাকে পুরো এলাকা মাতিয়ে তুলত। ভোরবেলায়ও তাদের কিচিরমিচির ডাকে ঘুম ভাঙত। কিন্তু এখন তালগাছ না থাকাতে সবই বিলুপ্তির পথে।’ ছহিউদ্দিন ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মহসিন আলী আঙ্গুর বলেন, ‘নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা বাবুই পাখির বাসা কখনো দেখেছে কি না কিংবা দেখলেও চিনবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে।’ তিনি বলেন, ‘চড়ুই পাখি মানুষের বাসায় থাকতে পছন্দ করে, কিন্তু বাবুই পাখি পরিশ্রমী হয় এবং নিজের তৈরি বাসাতে থাকতে পছন্দ করে। এদের বাসাগুলোও দেখতে চমৎকার এবং মজবুত হয়। একমাত্র বাবুই পাখিই এরকম সুন্দরভাবে বাসা তৈরি করতে পারদর্শী। এজন্যই বাবুই পাখিকে প্রকৃতির নিপুণ কারিগর বলা হয়।’ আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ‘দিন দিন তালগাছ ও খেজুর গাছের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। যে কারণে বাবুই পাখি এখন বিলুপ্তির পথে। বৃক্ষ নিধন ও নির্বিচারে পাখি শিকারের কারণে বাবুই পাখির বাসা এখন খুব একটা দেখা যায় না। পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার স্বার্থে পাখি নিধন বন্ধ করার পাশাপাশি পাখিদের অভয়ারণ্য সৃষ্টি করতে হবে।’
০৯ মে, ২০২৪

ঝড়ের কবলে হাজারো চড়ুই পাখি, আশ্রয় দিলেন ইউপি চেয়ারম্যান
ঝোড়ো হাওয়ার কবলে পড়ে মাটিতে ছটফট করছিল হাজারো চড়ুই পাখি। পরে এসব চড়ুই পাখি উদ্ধার করে নিজ কার্যালয়ে নিয়ে আশ্রয় দিয়ে রক্ষা করেন কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা মিঠামইনের সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শরীফ কামাল। রোববার (৫ মে) সন্ধ্যায় উপজেলার সদর ইউনিয়ন ভবনে এমন চিত্র দেখা যায়। জানা গেছে, কালবৈশাখী ঝড়ের কবলে পড়ে কয়েক হাজার পাখি পরিষদের সামনের কাঁঠাল গাছে আশ্রয় নেয়। রোববার সন্ধ্যায় হঠাৎ কালবৈশাখী ঝড় শুরু হলে প্রচণ্ড বাতাসের কারণে ইউনিয়ন পরিষদের সামনের কাঁঠাল গাছে থাকা হাজারও চড়ুই পাখি মাটিতে পড়তে থাকে। পরে ইউপি চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট শরীফ কামাল গাছ থেকে পড়ে যাওয়া পাখির জন্য নিচে পাটের ছালার চট বিছিয়ে দেন। নিচে পড়ে যাওয়া পাখিগুলো বালতিতে করে ইউনিয়ন পরিষদের নিজ কক্ষে নিয়ে আসেন। পরে সুস্থ হলে পাখিগুলো ছেড়ে দেন তিনি। মিঠামইন সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শরীফ কামাল কালবেলাকে বলেন, ঝড়ের সময় গাছ থেকে চড়ুই পাখিগুলো পড়তে থাকে। এগুলো দেখে অনেক কষ্ট লাগে। তাই গাছের নিচে পাটের ছালার চট বিছিয়ে দেই। যে পাখিগুলো গাছ থেকে পড়ে গেছে তা তুলে এনে পরিষদের আমার বসার কক্ষে আশ্রয় দিয়েছি। কম করে হলেও পাখির সংখ্যা হাজারের মতো হবে। ঝড় কমলে আস্তে আস্তে সে পাখিগুলো ওড়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছি।
০৬ মে, ২০২৪

কথা শুনে শালিক পাখিও
গাছের ডালে ডালে ঘুরে বেড়ানো পাখিকে চাইলেই পোষ মানানো যায় না। তাইতো শখের বসে অনেকে খাঁচায় পাখি পালন করে থাকেন। বিভিন্ন সময় পাখিকে পোষ মানানোর মতো জটিল কাজটিও করে দেখিয়েছেন অনেকে। এমনকি এ প্রাণীটিকে কথাও শিখিয়েছেন কেউ কেউ। তেমনি গাং শালিক পাখিকে পোষ মানিয়ে তাক লাগিয়েছেন কুড়িগ্রামের উলিপুরের এক ওষুধ ব্যবসায়ী। আনোয়ারুল হক (৪২) নামের ওই ওষুধ ব্যবসায়ী উলিপুর পৌরসভাধীন ৭নং ওয়ার্ডের রামদাস ধনিরাম এলাকার ডা. ওয়ালিউল্লার পুত্র। শালিক পাখির পোষ মানা দেখে চোখ আটকে যায় এলাকাবাসী ও পথচারীদের। আনোয়ারুল হক পৌরসভার তেঁতুলতলা এলাকায় ওষুধ ব্যাবসার পাশাপাশি খাবার হোটেলও পরিচালনা করেন। সরেজমিনে দেখা যায়, আনোয়ারুল হকের ওষুধের দোকানঘরে শালিক পাখিটি একটি খাঁচায় রয়েছে। সেখানে বসে খুনসুটি করছে। আনোয়ারুল হক দোকান ঘরে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই পাখিটি উড়ে এসে তার হাতে ও ঘাড়ে বসল। পাখি তার ভাষায় অনেক অভিযোগ দিল আনোয়ারুলকে। আনোয়ারুল তাকে অনেক আদর করে হাতের মধ্যে করে নিয়ে বসল তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। তাদের মধ্যে ভালোবাসা দেখে হতবাক এলাকাবাসী ও পথচারীরা। আনোয়ারুল হক জানান, একদিন তার স্ত্রীকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে এমএ পরীক্ষার জন্য রংপুর কারমাইকেল কলেজে নিয়ে যান। সেখানে উক্ত বিভাগের একাডেমিক ভবন থেকে এক মাস বয়সী শালিক পাখিটি উপরের সানসেট থেকে মাটিতে পড়ার উপক্রম হয়। তা দেখে বাচ্চাটির ওপর অনেক মায়া লেগে যায় আনোয়ারুলের। সেখান থেকে বাচ্চাটিকে উদ্ধার করে বাসায় নিয়ে আসেন। প্রায় এক বছর ধরে খাঁচায় বন্দি রেখে বাচ্চাটিকে বিভিন্নভাবে সেবা ও চিকিৎসার মাধ্যমে বড় করে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে পোষ মানান তিনি। পাখিটিকে ভালোবেসে প্রতিদিন নিজ হাতে খাবার খাওয়ান, গোসল করিয়ে দেন। এখন শালিক পাখিটি শতভাগ পোষ মানিয়েছেন বলে জানান তিনি। পোষ মানা পাখিটির নাম দেওয়া হয়েছে মিঠু। আনোয়ারুল হক পাখিটিকে মিঠু বলে ডাক দিলেই খাঁচা থেকে বেরিয়ে এসে হাতে ও ঘাড়ের ওপরে বসে পড়ে। সে এখন অনেক কথা বলতে শিখেছে। আনোয়ারুল জানান আমি শীষ দিলে সেও শীষ দেয়। আল্লাহ কথাটি বলতে শুরু করেছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের ডাক শিখেছে। তিনি আরও বলেন, এখন শালিক পাখিটির বয়স মাত্র এক বছর। যেভাবে কথা বলতে শুরু করেছে কিছুদিনের মধ্যে সকল প্রকার কথা শেখাতে পারব বলে জানান তিনি। এদিকে প্রতিদিন পোষ মানা শালিক পাখিটিকে দেখতে এলাকার অনেক লোক আসেন। এমনকি পথচারীরাও দেখতে ভিড় করেন। শালিক পাখিটি প্রতিদিন বিভিন্ন তরকারির ঝোল দিয়ে ভাত, ডিম ভাজি, লুডুলস ও চানাচুর খেয়ে থাকেন। পোষ মানা শালিক পাখিটিকে দেখতে আসা দর্শনার্থীদের মধ্যে আব্দুর রশিদ (৪৫), নুরুল হুদা (৪৭), নুর আলম (৪২), আব্দুল মালেক (৫৬) ও এনামুল হক (৪৩) সহ আরও অনেকে বলেন, শালিক পাখির সঙ্গে আনোয়ারুল হকের মিতালি এলাকায় চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে। প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকার লোক দেখতে আসেন। পাখিটির নাম দেওয়া হয়েছে মিঠু। মিঠু এখন অনেক ধরনের কথা বলতে চেষ্টা করেছে। অনেক ধরনের ডাকাডাকি করে যা দেখে আমাদের অনেক ভালো লাগে। উভয় উভয়ের প্রতি এত ভালোবাসা যা প্রশংসনীয়। এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা রেজয়ানুল হক জানান, শালিক পাখি একটি বন্যপ্রাণী। অন্যান্য প্রাণীর মতো সাধারণ মানুষের কাছে পোষ মানে। এ ছাড়া মানুষ যে কথাগুলো বলে তাদের অনুসরণ করে দু-একটা কথা মুখস্থ করে বলতে পারে। মানুষের মত সবগুলো কথা বলতে পারে না বলে জানান তিনি।
০৬ এপ্রিল, ২০২৪

শখের বশে পাখি পালনে ভাগ্য বদল মোস্তফার
খাঁচায় কয়েক জোড়া কবুতর দিয়ে শখের বসে শুরু করেছিলেন পাখি পালন। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই পাখির সংখ্যা বাড়ায় শখ বদলে রূপ নেয় ব্যবসায়। তারপর থেকে তাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। স্বপ্নচূড়ায় পৌঁছাতে দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ার পাখি খামারি গোলাম মোস্তফা। খামারি গোলাম মোস্তফা (৩৮) উপজেলার শশীদল ইউনিয়নের তেঁতাভূমি এলাকার বাসিন্দা। বর্তমানে বাড়ির বিশাল খামারের পাশাপাশি তার রয়েছে দুটি পাখির দোকান। বেকারত্ব ঘুচিয়ে বাণিজ্যিকভাবে পাখি পালনে তার সফলতার গল্প এখন বেকার যুবকদের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।  জানা গেছে, দেশি-বিদেশি পাখি পালন করে এখন সফলতার সিঁড়ি খুঁজে পেয়েছেন মোস্তফা। এখন বাণিজ্যিকভাবে পাখি পালন ও বিক্রি করছেন তিনি। নিজের বেকারত্বের অভিশাপ ঘুচে সফল হওয়ার গল্প শোনান খামারি গোলাম মোস্তফা। তিনি বলেন, শখের বসে খাঁচায় পাখি পোষার ইচ্ছে হয়। তারপর গত ২১ সালের শুরুর দিকে খাঁচায় কয়েক জোড়া কবুতর নিয়ে পাখি পোষা শুরু করি। পরে কবুতরের সংখ্যা বাড়ায় কবুতরসহ পাখির খামার করার পরিকল্পনা মাথায় আসে। পরিকল্পনা মতে খামার স্থাপন করে পাখি ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ি। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে প্রতিমাসে পাখি বিক্রি করে আমার আয় হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। নানা প্রতিবন্ধকতা জয় করে আমি এগিয়ে যেতে চাইছি আমার কাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন-চূড়ার দিকে। শখের বসে খাঁচায় পাখি পালন শুরু হলেও এখন আমি পুরোদমে বাণিজ্যিকভাবে সফলতার সঙ্গে পাখির ব্যবস্থা করছি। এ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে এবং এ উপজেলা ছাড়িয়ে আশপাশের উপজেলা ও আশপাশের জেলা থেকেও পাখি কিনতে অনেকেই আসছেন। চেষ্টা এবং শ্রম থাকলে সফলতা আসবেই। আমি তার জ্বলন্ত উদাহরণ।  সম্প্রতি তার পাখির খামার ও দোকানে গিয়ে দেখা গেছে, তার সংগ্রহে বর্তমানে পাকিস্তানি ব্লু সিরাজি, ব্লাক কিং, মুবভাই, এক্সিবিশন হোমার, পাকিস্তানি হাই-ফ্লামিং, ড্যানিশ টাম্বলার, জার্মান আউল, ক্যাপাচিনো, ময়না ঠোঁট ও মালটেসসহ নানা জাতের কবুতর রয়েছে। কবুতরের পাশাপাশি আছে বাজরিকা, ফিঞ্চ, মুনিয়া, কোয়েল, ডায়মন্ড টিয়া, ডায়মন্ড ডোভ কোকাটল, লাভবার, প্রিন্স, বাজরিগার, ডায়মন্ড ঘুঘু, টাইগার মুরগি, তিতির, জাবাসহ প্রায় ৫০-৬০ জাতের পাখি। এ ছাড়াও তার খামারে ও দোকানে রয়েছে খরগোশ, একুরিয়াম ও সামুদ্রিক নানা ধরনের সৌখিন মাছ। খামার ও দোকানের এসব পাখির অনবরত কিচিরমিচির শব্দে চারপাশ মুখরিত থাকে। সঠিক পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণে ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানোর পর তা বড় করা হয়। এরপর বয়স অনুযায়ী বিভিন্ন দামে বিক্রি করা হয়। এসব পাখিকে খাবার হিসেবে চিকন চাল, কাউন, চিনা, খুদ ও সূর্যমুখী ফুলের বীজ খাওয়ানো হয়। বর্তমানে খরচ বাদে গোলাম মোস্তফা মাসে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় করছেন। ব্যবসায় পরিসর আরও বাড়ানোর পরিকল্পনাও আছে তার।  স্থানীয় বাসিন্দা লোকমান হোসেন বলেন, মফস্বল শহরে এ রকম পাখির দোকান পেয়ে পাখিপ্রেমীরা সহজেই নানা জাতের পাখি ও কবুতর অনায়াসেই সংগ্রহ করতে পারছে।আমিও তার কাছ থেকে পাখি কিনি। পাখির ব্যবসায় সে সফল। পাখি ক্রেতা আনোয়ারুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, আগে আমি এসব পাখি কুমিল্লা বা ঢাকা থেকে সংগ্রহ করতাম। এখন ব্রাহ্মণপাড়ায় পাখির দোকান হওয়ায় আমাদের মতো পাখি প্রেমীদের জন্য ভালো হয়েছে। আমি প্রায়ই মোস্তফা ভাইয়ের কাছ থেকে কবুতর ও পাখি নেই। তার কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পেয়ে আমিও বাড়িতে ছোট পরিসরে পাখির খামার করার পরিকল্পনা করছি। এদিকে পশু-পাখি পালনে উদ্যোক্তাদের সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়ার কথা জানিয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. ইজমাল হাসান কালবেলাকে বলেন, অল্প পুঁজি ও স্বল্প পরিসরে পাখি পালন করা সম্ভব। মোস্তফার মতো উপজেলার অনেক যুবক পশু এবং কবুতর ও নানা জাতের পাখি পালন করে স্বাবলম্বী হতে চাইলে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে তাদের সার্বিক সহযোগিতা করা হবে। 
১২ মার্চ, ২০২৪

কুমিল্লায় আবাস গেড়েছে পরিযায়ী পাখি শামুকখোল
পরিযায়ী পাখি শামুকখোল দুই যুগ আগেও কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় সহজে দেখা যেত না। গ্রীষ্ম মৌসুমে কোথাও কোথাও এদের দেখা যেত। তবে খাদ্যাভাব না থাকায় এবং উপযুক্ত পরিবেশ ও প্রজনন সুবিধার কারণে এই পাখিটি এখন উপজেলার অনেক এলাকার আনাচে কানাচে ও ক্ষেতখামারে দেখা মিলছে।  স্থানীয়রা বলছেন, পাখিগুলো এখন আর পরিযায়ী নয় বরং এরা এই উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বাসা বেঁধেছে। যে কারণে এই উপজেলায় বেড়েছে শামুকখোলের সংখ্যা। যার ফলে উপজেলার বিভিন্ন ফসলি মাঠে এই পাখির দেখা পাওয়া যাচ্ছে।  স্থানীয়রা জানান, এক সময় এই উপজেলায় শামুকখোল মূলত গ্রীষ্মকালে দেখা যেত। যে কারণে এই পাখিটিকে যাযাবর বা পরিযায়ী পাখি বলা হতো। সে সময় এরা প্রজনন শেষে একটা নির্দিষ্ট সময় পর এই এলাকা ছেড়ে চলে যেত। তবে গত কয়েকবছর ধরে শামুকখোল এই উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করতে শুরু করেছে। প্রতিদিন ফসলি মাঠে ও উন্মুক্ত আকাশে পাখিগুলোর ঝাঁকবেধে ওড়াউড়ির দৃশ্য এই উপজেলার প্রাকৃতিক পরিবেশকে আরও সমৃদ্ধ করে তুলেছে। পাখিগুলো মাঠে মাঠে গিয়ে ও অল্প জল আছে এমন জলাশয়ে গিয়ে শামুক খুলে খায়। পাখিগুলো এই পরিবেশের সঙ্গে নিজেদের মিলিয়ে নিয়েছে।  শামুকখোল পাখির বৈজ্ঞানিক নাম Anastomus oscitans। এই পাখির ঠোঁটের সঙ্গে অন্যকোনো পাখির ঠোঁটের মিল নেই। শামুকখোল পাখির উপরের অংশের সঙ্গে নিচের অংশে বেশ ফাঁকা। এরা এই বিশেষ ধরনের ঠোঁট দিয়ে শামুক তুলে শামুকের ঢাকনা খুলে ভেতরের নরম অংশটুকু খায়। শামুক খোলার এই শৈল্পিক কৌশলের কারণেই এই পাখিটির নামকরণ করা হয়েছে শামুকখোল। তবে স্থানীয়রা এই পাখিকে শামুককাচা নামেই চেনে। জানা গেছে, শামুকখোল পাখি খুবই নিরীহ প্রজাতির একটি পাখি। এরা স্বজাতির মধ্যে কখনো মারামারি করে না। এরা শব্দ করে ডাকতেও পারে না। এদের বাহ্যিক চেহারা দেখে স্ত্রী-পুরুষ নির্ণয় করা যায় না। দেখতে এদের একরকমই দেখা যায়। এদের গায়ের রঙ সাদাকালো। তবে বয়স্ক পাখিদের গায়ের রঙ অনেকটা কালচে রঙের হয়ে থাকে। এরা দুটি বাসা বাঁধে, তবে মূলত স্থায়ী বাসা একটিই হয়। তবে প্রজননের সময় ছাড়া এরা বাসাতে অবস্থান করে না। অন্যসময় এরা জলাশয়ের আশপাশের গাছের উঁচু ডালে খোলা অবস্থায় থাকতে পছন্দ করে। এদের জলচর পাখি বলা হলেও অন্যান্য জলচর পাখিদের মতো এরা পানিতে সাঁতার কাটে না। স্থানীয় বাসিন্দা আক্তারুজ্জামান কালবেলাকে বলেন, শামুকখোল পাখিগুলো ভোরবেলা দলবেঁধে ওড়াউড়ি করে বিভিন্ন ফসলি মাঠে গিয়ে খাবার সন্ধান করে। এরা বেশিভাগ শামুক খায়। এ ছাড়া এরা ছোট মাছ, কাঁকড়া, ব্যাঙ খেয়ে জীবন ধারণ করে। প্রতিদিন পাখিগুলোর দলবেঁধে ওড়াউড়ির দৃশ্য দেখতে ভালোই লাগে। স্থানীয় আরেক বাসিন্দা উপজেলার সীমান্তবর্তী দর্পণারায়ণপুর এলাকার শাহজাহান কালবেলাকে বলেন, গত কয়েকবছর ধরে শামুকখোল পাখিদের সচরাচর চোখে পড়ছে। এর আগে এই পাখিগুলো এই এলাকায় তেমন একটা দেখা যেত না। বক পাখির মতো পাখিগুলো ক্ষেতখামারে ও অল্প জল আছে এমন জলাশয়ে ওড়াউড়ি ও বসে থাকতে দেখা যায়। পাখিগুলো গাছের উঁচু ডালে বসবাস করে।  চান্দলা মডেল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. অপু খান চৌধুরী কালবেলাকে বলেন, বাংলাদেশে অন্য দেশ থেকে নানা জাতের অতিথি পাখি আসে। কোনো কোনো পাখি শীতকালে ও কোনো কোনো পাখি গরমকালে আসে। শামুকখোল পাখিও অতিথি পাখি। তবে বসবাস উপযোগী পরিবেশ পাওয়ায় ধিরে ধিরে পাখিগুলো এই এলাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করতে দেখা যাচ্ছে। এতে পরিবেশের সমৃদ্ধির দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা হিসেবে পাখিগুলোর প্রতি আমাদের সজাগ দৃষ্টি রাখা জরুরি।  উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা পাখিপ্রেমী ডা. আবু হাসনাত মো. মহিউদ্দিন মুবিন কালবেলাকে বলেন, পাখি প্রকৃতির সম্পদ। পাখি পরিবেশ ও আবহাওয়ার ওপর নির্ভর করে তাদের আবাসস্থল তৈরি করে থাকে। শামুকখোল একটি পরিযায়ী পাখি। এই পাখি বাংলাদেশে গ্রীষ্মকালে দেখা যায়।  তবে এই উপজেলায় গত কয়েক বছর ধরে শামুকখোল পাখির বিচরণ লক্ষ্য করা গেছে। এতে বোঝা যাচ্ছে পাখিগুলো এই এলাকার পরিবেশের সঙ্গে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিয়েছে, তাই পাখিগুলোকে এই এলাকায় আবাসস্থল তৈরি করে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে দেখা যাচ্ছে।
০৬ মার্চ, ২০২৪

পাখি রক্ষার বার্তা নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মেলা
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) দিনব্যাপী পাখি মেলার আয়োজন করা হয়েছে। সোমবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী চত্বরে এ মেলা শুরু হয়। বার্ড কনজারভেশন ক্লাব বিকেল ৫টা পর্যন্ত এ মেলার আয়োজন করে। আয়োজক সূত্রে জানা যায়, মেলায় বিভিন্ন পাখির শতাধিক ফটোফ্রেম এবং স্টাফিং করা ৩০টি পাখি দেখানো হচ্ছে। মূলত পাখি সম্পর্কে জানানো এবং পরিবেশে পাখির গুরুত্ব তুলে ধরতে এই মেলার আয়োজন করা হয়েছে। এ ছাড়া শিশুদের মধ্যে পাখির চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতাও অনুষ্ঠিত হয়।  বার্ড কনজারভেশন ক্লাবের সদস্য ও রাজী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ডিজিএম হাসনাত রনি বলেন, প্রকৃতি থেকে পাখি কমে যাচ্ছে। শিশুরা পাখি চিনতে পারছে না, পাখি সম্পর্কে জানতে পারছে না তাই পাখি সম্পর্কে বিস্তারিত জানানোর জন্য এই মেলার আয়োজন করা হয়েছে। প্রকৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো পাখি, তাদের রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। তিনি আরও বলেন, আমাদের পাঁচটি টিম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়াচ্ছে। যারা যত বেশি পাখি চিনতে পারবে তাদের মধ্যে পুরস্কার দেওয়া হবে। মেলার সার্বিক আয়োজনের ব্যাপারে প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও মেলায় আয়োজকদের একজন ড. সালেহ রেজা বলেন, রাজশাহী অঞ্চলে পাখি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আমরা ২০১০ সালে বার্ড কনজারভেশন ক্লাব প্রতিষ্ঠা করি। তারপর থেকে প্রতি বছর বিভিন্ন পাখির ছবি দিয়ে আলোকচিত্রী প্রদর্শনী করে থাকতাম। গত দুই বছর ধরে এমন মেলার আয়োজন করে আসছি। এতে শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষের মধ্যে আমরা পাখির রক্ষার বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি।
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

পদ্মার বুকে জেগে ওঠা ডুবোচর যেন অতিথি পাখির মিলনমেলা
মানিকগঞ্জের ৭টি উপজেলার মধ্যে অন্যতম পদ্মা-অধ্যুষিত উপজেলা হরিরামপুর। পঞ্চাশ দশক থেকে অনবদ্য পদ্মার ভাঙনের সঙ্গে অনবরত লড়াই করে জীবনযাপন করছে উপজেলার ভাঙনকবলিত ৯টি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ। বর্ষায় পদ্মার ভয়ংকর রূপে দিশেহারা পদ্মাপাড়ের জনগণ। আবার বর্ষার পানি চলে যেতে না যেতেই পদ্মার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে জেগে ওঠে ডুবোচর৷ এতে তা প্রাকৃতিক নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমিতেও পরিণত হয়। প্রকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে এসব চরাঞ্চলে বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনার্থীদের আগমন ঘটে। শুধু মানুষই নয়, শীতের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পদ্মার বুকে জেগে ওঠা নতুন চরে প্রকৃতির প্রেমে পড়ে দলবেঁধে ছুটে আসে নানা প্রজাতির অতিথি পাখি। পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত হয়ে ওঠে পদ্মার চর। সুদূর হিমালয় থেকে সাইবেরিয়ার তীব্র ঠান্ডা থেকে মুক্তি পেতেই একটু উষ্ণতার সন্ধানে হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে অতিথি পাখিরা ছুটে আসে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের হাওর-বাঁওড় ও জেগে ওঠা নদীর চরে। শুধু শীতের সময়ই বাংলাদেশে এসব পাখির দেখা মেলে। সে জন্যই আমাদের দেশে এদেরকে বলা হয়ে থাকে অতিথি পাখি। পাখিগুলো দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনই চোখজুড়ানো তাদের খুনসুটি। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রতি বছরই হরিরামপুরের বিভিন্ন পয়েন্টে পদ্মার মাঝে অনেক এরিয়াজুড়ে নতুন নতুন ডুবোচর জেগে উঠলে এসব অতিথি পাখির আগমন ঘটে। এতে করে বালু বাতান, জোড়ালী, কাদা খোঁচা, বাবু বাতানসহ নানা প্রজাতির অতিথি পাখির দেখা মিলে এ চরগুলোতে। কখনো জলে ডুবসাঁতার দিচ্ছে, কখনোবা ঝাঁক বেঁধে মুক্ত আকাশের নীলে উড়ে বেড়াচ্ছে তারা। উপজেলার আন্ধারমানিক এলাকার ট্রলার ঘাট থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে গেলেই চোখে পড়ে পদ্মায় জেগে ওঠা নতুন চর অতিথি পাখির মিলনমেলা। সন্ধ্যার গোধূলি আভায় যেন পাখিদের কিচিরমিচির বেড়ে যায়। সূর্য ডোবার সঙ্গে সঙ্গেই পাখিরা দলবেঁধে মিলিয় যায় দূরে কোথাও। আবার ভোরে সূর্যের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই নেমে পড়ে নদী কিংবা বিল বাঁওড়ে। স্থানীয়দের দাবি, প্রতি বছরই এলাকায় নতুন নতুন চর জেগে ওঠে এবং বিদেশি এসব পাখির আনাগোনাও দেখা যায়। অনেকেই নৌকা নিয়ে চরে গিয়ে খুব কাছে থেকে পাখিদের সৌন্দর্য উপভোগ করেন। অনেকে শখের বশে শিকারও করেন৷ তাই এ সময়টা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটু খোঁজখবর রাখা উচিত। প্রকৃতির এ সৌন্দর্য আমাদের দেশের অতিথিদের যেন কেউ ধ্বংস না করতে পারে। হরিরামপুর থানার ওসি শাহ্ নূর এ আলম বলেন, অতিথি পাখি আমাদের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। এদের ধ্বংস করা মানেই পরিবেশকে ধ্বংস করা। অতিথি পাখিরা যেন মুক্ত আকাশে, খালে, বিলে, হাওর-বাঁওড়ে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারে, সেদিকে আমাদের সবাইকে দৃষ্টি রাখতে হবে। পাশাপাশি সৌখিনতার বশেও যেন পাখি শিকার না করে সে জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সবসময় তৎপর রয়েছে।
১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

বইমেলায় ‘বাঙালির ফিনিক্স পাখি শেখ হাসিনা’ 
অমর একুশে বইমেলা ২০২৪ উপলক্ষে প্রকাশিত হয়েছে ইঞ্জিনিয়ার ফকর উদ্দিন মানিকের নির্বাচিত কলাম নিয়ে ‘বাঙালির ফিনিক্স পাখি শেখ হাসিনা’। এটি তার রচিত প্রথম একক গ্রন্থ। গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে এডিটোরিয়াল হাউস। বইটির মুদ্রিত মূল্য ২২০ টাকা। বই মেলায় এটি পাওয়া যাচ্ছে সাহিত্য বিলাসের ৩৭৮, ৩৭৯ ও ৩৮০ নং স্টলে। বইমেলা থেকে ২৫ শতাংশ এবং শিক্ষার্থীরা ৩০ শতাংশ ছাড়ে সংগ্রহ করতে পারবেন বইটি। একজন লেখক, গবেষক, কলামিস্ট, উপস্থাপক ও সংগঠক হিসেবে ইঞ্জিনিয়ার ফকর উদ্দিন মানিক সুপরিচিত। প্রাতিষ্ঠানিক জীবনে তিনি বিতর্ক, আবৃত্তিসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও সেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বিভিন্ন সময়ে দেশের শীর্ষস্থানীয় দৈনিকসহ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় সম্পাদকীয় পাতায় প্রকাশিত হয়েছে তার অসংখ্য লেখা। এ ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক অনুষ্ঠানে উপস্থাপক এবং সমসাময়িক বিষয় নিয়ে আয়োজিত বিভিন্ন টকশোতে আলোচক হিসেবে উপস্থিত থেকে ইতিবাচক বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখেন। মানিক বলেন, ‘লেখালেখির অভ্যাসটা আমার দীর্ঘদিনের। আমি কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র হওয়ায় সাধারণত প্রোগ্রামিং ল্যাবে কম্পিউটার স্ক্রিনের সামনে বাইনারি লজিক চিন্তা করতে করতে আমার সময় কেটেছে। এমন অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে অধিকাংশ সময় আমি ল্যাব থেকে বের হয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণকেন্দ্র টিএসসির চায়ের দোকানে ঢুকে পড়তাম। গরম ধোঁয়া উঠা তিতা স্বাদের কালো বর্ণের তরলে চুমুক দিতে দিতে শুদ্ধপ্রাণ অগ্রজ, প্রিয় অনুজ ও বন্ধুদের সঙ্গে চায়ের কাপে ঝড় উঠত সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বেশিরভাগ সময়ের সেই গল্পগুলোর সুচিন্তিত চিন্তার বহিঃপ্রকাশ হতো আমার নামে বিভিন্ন পত্রিকার সম্পাদকীয় পাতায়। এভাবেই আমার কলাম লেখার হাতেখড়ি।’  মানিক আরও বলেন, ‘বাঙালির ফিনিক্স পাখি শেখ হাসিনা’ গ্রন্থটির নাম মূলত একটি পত্রিকার সম্পাদকীয় পাতায় প্রকাশিত আমার লেখা কলাম ‘মুকুট ধন্য হয় যে মণিতে, সেই মণি শেখ হাসিনা’ থেকে নেওয়া হয়েছে। এই গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত লেখাগুলো সমসাময়িক রাজনীতি, সামাজিক সমস্যা, আর্থসামাজিক উন্নয়ন, পররাষ্ট্রনীতি, রোহিঙ্গা ও ভূ-রাজনীতিসহ নানা বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত বিভিন্ন পত্রিকার পাতায় প্রকাশিত কলামগুলোর সংগ্রহ।
০৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

পাখি ডাকার খেলা
জনি বাইনোকুলারে কী যেন দেখছে। মিনু বলল, জনি কী খুঁজছ? —একটা পাখি। নীলচে কালো রঙের। লাল লাল চোখ। —পাখি কেন দেখছ? —পাখি দেখা একটা মজার খেলা। পাখির নাম, পাখির রং সব জানা যায়। তুমিও দেখবে নাকি। মিনুও বাইনোকুলার দিয়ে পাখিটা দেখছে। মিনু বলল, আহা পাখিটা উড়ে গেল। আর তো দেখছি না। —পাখিটার নামও জানা হলো না। জানলে ডায়েরিতে লিখে রাখা যেত। এমন সময় মুকুল এলো। মুকুলের সঙ্গে তার ভাগ্নে রবি। মুকুল বলল, ও আমার ভাগনে রবি। দূরের গ্রাম থেকে বেড়াতে এসেছে। তোমাদের সঙ্গে খেলতে চায়। জনি বলল, খুব মজা হবে। সবাই মিলে পাখি খুঁজব। সবার সঙ্গে রবির পরিচয় করিয়ে দিল মুকুল। রবি বলল, তোমার হাতে ওটা কী জনি? জীবনেও দেখিনি। —এটা বাইনোকুলার। দূরের জিনিস দেখা যায়। এই নাও। তুমিও দেখো। ওই যে আমগাছে তাকাও। রবি বাইনোকুলারে চোখ রাখল। সামনে হাত বাড়াল। রবি বলল, আমটা আমার সামনে। পাড়তে পারছি না কেন? জনি বলল, আমটা তোমার সামনে নেই। দুরবিন দিয়ে দূরের জিনিস কাছে দেখা যায়। তবে ধরা যায় না। মিনু বলল, আমরা এটা দিয়ে পাখি দেখছি। রবি বলল, এত যন্ত্রপাতি দিয়ে কষ্ট করে দেখার কী দরকার। আমি ডাকলেই তো পাখি চলে আসে। মিনু-জনি তো অবাক। ওরা বলল, তুমি পাখি ডাকতে পারো? কী দারুণ। আমাদের শেখাবে? রবি মুখে হাত দিয়ে বিশেষ কায়দায় কাকের মতো বলল, কা কা কা। অনেকগুলো কাক উড়ে এলো। মিনু বলল, আরে! অবাক ব্যাপার তো। একসঙ্গে এত কাক কখনো দেখিনি। অনেক রকম কাকও আছে দেখছি। বড় কাক, ছোট কাক। রবি ডাকল কিচির কিচির মিচির মিচির, কিকসি মিকসি চিচির চিচির। ফুড়ুত করে একটা পাখি এলো। মিনু বলল, এটা চড়ুই পাখি। জনি বলল, পাখিটাকে একটু দাঁড়াতে বলো। আমি লিখে রাখি। বাদামি ধূসর রঙের পাখি। কার্টুনের মতো নড়াচড়া করে। চাল আর শস্য দানা এদের প্রিয় খাবার। মিনু বলল, কিন্তু লাল চোখের সেই কালো পাখি তো এটা না। রবি আবার ডাকল, কু-উ... কু-উ। উড়ে এলো আরেকটা পাখি। রবি বলল, এটার নাম কোকিল। জনি বলল, এটা তো সেই পাখি। নীলচে কালো রং। লাল লাল চোখ। আমি এখনই লিখে রাখছি কোকিলের নাম। মিনু বলল, দেখো দেখো কী দারুণ ছড়ানো লেজও আছে। জনি বলল, এবার আমাদের শেখাও রবি। রবি বলল, আমার মতো করে বলো, কু-উ... কু-উ। জনি বলল, কু-উউউ... কু-উউউ। উড়ে এলো দুটো কোকিল। জনি মহা খুশি। মিনু বলল, এবার আমি ডাকব। মিনু ডাক দিল, কুককুরুক... কুককুরুক। ডাক শুনে দৌড়ে এলো একটা মোরগ। মোরগের পিছু পিছু দৌড়ে এলো রাজন। রাজন হাঁপাচ্ছে। জিরিয়ে নিয়ে বলল, আমি সারা দিন ডাকলেও কথা শোনে না। আর তোমরা ডাকতেই ছুটে চলে এলো! কী আজব ঘটনা বলো দেখি! মিনু আর জনি বলল, আরে আমরা অনেক মজার একটা খেলা শিখেছি। এবার জনি ডাক দিল টুইট টুইট টুইট। উড়ে এলো টুনটুনি। রবি বলল, টুনটুনির ডানার রং সবুজ। ডায়েরিতে জলদি লিখে রাখো জনি। এদিকে পাখির ডাক শুনে ছুটে এলো খামারি রাসু। রাসুকে আসতে দেখে পাখিরা উড়ে গেল। রাসু বলল, কত পাখির ডাক শুনলাম। পাখি কোথায়? পাখি তো দেখছি না। মিনু বলল, রবি আমাদের নতুন বন্ধু। ও ডাকলে পাখিরা আসে। আমরাও শিখছি পাখি ডাকার খেলা। রাসু বলল, বাহ! চমৎকার। ডাকো ডাকো! আমার তো অনেক অনেক পাখি দরকার। অতিথি পাখিদেরও ডাকো! আমার কাছে একটা ব্যাগও আছে। তোমরা পাখিদের ডাক দাও। তোমাদের অনেক অনেক চকলেট দেব। রবি, জনি আর মিনুরা একে অন্যের দিকে তাকাল। রবি বলল, আপনি পাখি শিকারি? রাসু হেসে বলল, আহা! শিকারি কেন বলছ। আমি টুকটাক পাখি ধরি আর বিক্রি করি। এতে কিছু আয় রোজগার হয়। হে হে! ডাকো ডাকো! জলদি ডাকো। আমার তর সইছে না! জনি বলল, তার আগে আমরা একটু শলাপরামর্শ করে নিই। রাসু খুশিতে পেটে হাত বোলানো শুরু করেছে। মিনু, জনি আর রবি কানে কানে বুদ্ধি করল। রবি মাথা নেড়ে বলল, আমি জানি কীভাবে এ পাখিকে ডাকতে হবে। সেই পাখিটাকে কী বলতে হবে সেটা তাকে বলে দিল মিনু আর জনি। রবি মুখে হাত গোল করে জোরসে বলল, কিঁ-ই-ই-ক, কিঁ-ই-ই, ক্যাঁ-অ্যাঁ-ক! রাসু হাসিমুখে তাকিয়ে রইল আকাশে। অনেক ওপর থেকে নেমে আসছে একটা পাখি। পাখিটা আরেকটু নামতেই চোখ বড় বড় হয়ে গেল রাসুর। চিৎকার করে বলল, ও বাবা গো! এ তো বাজপাখি! আমাকে তাড়া করছে কেন! বাঁচাও! রবি আবার মুখ গোল করে কিঁ কিঁ-ই-ক শব্দ করে পাখিটাকে কী যেন বলল। জনি আর মিনু প্রশ্ন নিয়ে তাকাতেই বলল, ওকে বলে দিয়েছি, পাখি শিকারিদের দেখলেই যেন তাড়া করে। এরপর বাজপাখির তাড়া খেয়ে রাসু কোথায় যে লুকাল; সহসা সে আর পাখি শিকার করবে বলে মনে হলো না।
০৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

হারিয়ে যাচ্ছে প্রকৃতির নিপুণ কারিগর বাবুই পাখি
‘বাবুই পাখিরে ডাকি বলিছে চড়াই, কুঁড়ে ঘরে থেকে করো শিল্পের বড়াই। আমি থাকি মহাসুখে অট্টালিকার পরে, তুমি কত কষ্ট পাও রোদ-বৃষ্টি ঝড়ে।’ কবি রজনীকান্ত সেনের ‘অমর’ কবিতাটি এখন তৃতীয় শ্রেণির বাংলা বইয়ের পাঠ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত। শুধু পাঠ্যপুস্তকের কবিতা পড়েই শিক্ষার্থীরা বাবুই পাখির নিপুণ শিল্পের কথা জানতে পারলেও বাস্তবে তার দেখা মেলা ভার। আগের মতো গ্রামগঞ্জে এখন আর চোখে পড়ে না বাবুই পাখির দৃষ্টিনন্দন সেই বাসা। বন উজার আর এক শ্রেণির শিকারির কারণে বিলুপ্তির পথে প্রকৃতির এই বুনন শিল্পীরা।  এক সময় গ্রাম-অঞ্চলে সারি সারি উঁচু তালগাছে বাবুই পাখির দৃষ্টি নন্দন বাসা দেখা যেত। এখন তা আর সচরাচর চোখে পড়ে না। খড়, তালপাতা, ঝাউ ও কাশবনের লতাপাতা দিয়ে বাবুই পাখি বাসা বাঁধে। বাসা দেখতে যেমন আকর্ষণীয় তেমনি মজবুত। প্রবল ঝড়েও তাদের বাসা পড়ে না। পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে আরও ফুটিয়ে তোলে বাবুই পাখি আজ আমরা হারাতে বসেছি। পুরুষ বাবুই এক মৌসুমে ৬টি বাসা তৈরি করতে পারে। আমন ধান পাকার সময় হলো বাবুই পাখির প্রজনন মৌসুম। এমসয় সাধারণত তারা তাল ও খেজুর গাছের ডালে বাসা তৈরি করতে ব্যস্ত থাকে। ডিম ফুটে বাচ্চা বের হওয়ার পরপরই বাচ্চাদের খাওয়ানোর জন্য স্ত্রী বাবুই ক্ষেতে থেকে দুধ ধান সংগ্রহ করে। প্রকৃতির বিরুদ্ধে মানুষের আগ্রাসী কার্যকলাপের বিরুপ প্রভাবই আজ বাবুই পাখি ও তার বাসা হারিয়ে যেতে বসেছে। তবে দেশের গ্রামগঞ্জের কিছু কিছু অঞ্চলের তাল ও খেজুর গাছে এখনও চোখে পড়ে বাবুই পাখির বাসা। তবে তালগাছেই তাদের একমাত্র নিরাপদ জায়গা। সেখানে তারা বাসা বাঁধতে সাচ্ছন্দ্য বোধ করে।  হরিপুর উপজেলার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন অক্সিজেনের সভাপতি মোজাহেদুর ইসলাম ইমন বলেন, প্রকৃতিক পরিবেশের ভারসম্য রক্ষাসহ সারা জেলাকে সবুজ বলয় তৈরি করার লক্ষ্যে আমরা পাকা সড়কসহ রাস্তার ধারে বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষ রোপণসহ দুই হাজার তাল গাছের চারা রোপণ করেছি। এগুলো এক সময় বজ্রপাতের হাত থেকে আমাদের পরিবেশকে রক্ষা করবে এবং বাবুই পাখিকে টিকিয়ে রাখতে আমরা যদি গ্রাম-গঞ্জসহ সারা দেশেই রাস্তার ধারে বা পতিত জমিতে সমন্বিতভাবে তালগাছ রোপণের উদ্যোগ গ্রহণ করি, তাহলে আমরা ফিরে পাবো কবি রজনীকান্ত সেনের ওই কবিতার বাস্তবতা আর গ্রামগঞ্জের হারিয়ে যাওয়া পূর্বের ঐতিহ্য।  ভবান্দপুর গ্রামের মনজুর আলম (৭০) নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, আমার বাড়ির পাশে একটি তাল গাছ ছিল সেখানে শত শত বাবুই পাখি তাদের বাসা বাঁধত। দিনশেষে সন্ধ্যাবেলায় ঝাঁকে ঝাঁকে বাবুই পাখি তাদের নীড়ে ফিরত আর কিচিরমিচির ডাকে পুরো এলাকা মাতিয়ে তুলত। ভোরবেলায় তাদের কিচিরমিচির ডাকে ঘুম ভাঙত। তালগাছ না থাকায় এখন এসব প্রায় বিলুপ্তির পথে কোথায় গেল এসব দিন।
২৭ জানুয়ারি, ২০২৪
X