এক সময় গ্রামবাংলার বাড়ির আঙিনার বাইরে তালগাছের পাতায় পাতায় দেখা যেত বাবুই পাখির দৃষ্টিনন্দন বাসা; কিন্তু গ্রামের পথ ধরে অনেক সময় হাঁটলেও এখন বাবুই ও এর বাসা খুব একটা চোখে পড়ে না। নির্বিচারে গাছ উজাড় এবং এক শ্রেণির শিকারির কারণে বিলুপ্তির পথে প্রকৃতির এই বুননশিল্পীরা। তবে বর্তমানে মেহেরপুরের কিছু এলাকায় বাস্তবে বাবুই পাখির বাসার দেখা মিলছে।
জনশ্রুত আছে, পুরুষ বাবুই এক মৌসুমে ৬টি বাসা তৈরি করতে পারে। অর্থাৎ এরা ঘর-সংসার করতে পারে ৬ সঙ্গীর সঙ্গে। স্ত্রী বাবুই পাখির প্রেরণা পেয়ে পুরুষ বাবুই পাখি কারুকার্যখচিত ও শিল্পসম্মত বাসা খুবই নিপুণভাবে তৈরি করে। স্ত্রী বাবুই ডিম দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পুরুষ বাবুই খুঁজতে থাকে আরেক সঙ্গীকে। তৈরি করতে শুরু করে আরেকটি বাসা। আমন ধান পাকার সময় হলো বাবুই পাখির প্রজনন মৌসুম। এ সময় সাধারণত তারা তাল ও খেজুর গাছের ডালে বাসা তৈরি করতে ব্যস্ত থাকে। ডিম ফুটে বাচ্চা বের হওয়ার পরপরই বাচ্চাদের খাওয়ানোর জন্য স্ত্রী বাবুই ক্ষেত থেকে দুধ ধান সংগ্রহ করে। প্রকৃতির বিরুদ্ধে মানুষের আগ্রাসী কার্যকলাপের বিরূপ প্রভাবই আজ বাবুই পাখি ও এর বাসা হারিয়ে যেতে বসেছে। তবে মেহেরপুরের গ্রামাঞ্চলে কিছু কিছু তাল ও খেজুর গাছে এখন চোখে পড়ছে বাবুই পাখির বাসা। তালগাছই এদের কাছে নিরাপদ জায়গা। সেখানে তারা বাসা বাঁধতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।
মুজিবনগরের গৌরিনগর গ্রামের কৃষক ষাটোর্ধ্ব আলীমদ্দীন বলেন, ‘আমার বাড়ির পাশে একটি তালগাছ ছিল। সেখানে শত শত বাবুই পাখি বাসা বাঁধত। দিন শেষে সন্ধ্যাবেলায় ঝাঁকে ঝাঁকে বাবুই পাখি তাদের নীড়ে ফিরত আর কিচিরমিচির ডাকে পুরো এলাকা মাতিয়ে তুলত। ভোরবেলায়ও তাদের কিচিরমিচির ডাকে ঘুম ভাঙত। কিন্তু এখন তালগাছ না থাকাতে সবই বিলুপ্তির পথে।’
ছহিউদ্দিন ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মহসিন আলী আঙ্গুর বলেন, ‘নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা বাবুই পাখির বাসা কখনো দেখেছে কি না কিংবা দেখলেও চিনবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে।’ তিনি বলেন, ‘চড়ুই পাখি মানুষের বাসায় থাকতে পছন্দ করে, কিন্তু বাবুই পাখি পরিশ্রমী হয় এবং নিজের তৈরি বাসাতে থাকতে পছন্দ করে। এদের বাসাগুলোও দেখতে চমৎকার এবং মজবুত হয়। একমাত্র বাবুই পাখিই এরকম সুন্দরভাবে বাসা তৈরি করতে পারদর্শী। এজন্যই বাবুই পাখিকে প্রকৃতির নিপুণ কারিগর বলা হয়।’
আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ‘দিন দিন তালগাছ ও খেজুর গাছের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। যে কারণে বাবুই পাখি এখন বিলুপ্তির পথে। বৃক্ষ নিধন ও নির্বিচারে পাখি শিকারের কারণে বাবুই পাখির বাসা এখন খুব একটা দেখা যায় না। পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার স্বার্থে পাখি নিধন বন্ধ করার পাশাপাশি পাখিদের অভয়ারণ্য সৃষ্টি করতে হবে।’