কম্পিউটার অপারেটরের সম্পদের পাহাড়
জয়নুল আবেদীন তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী। সাঁটলিপিকার কাম কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে চাকরি করেন স্থাপত্য অধিদপ্তরে। যে বেতন পান, তা দিয়ে কোনোমতে সংসার চলার কথা; কিন্তু হয়েছে তার উল্টো। নিজের ব্যক্তিগত গাড়ির চালককে মাসে যে টাকা বেতন দেন, সে পরিমাণ টাকা তিনি নিজে বেতনও পান না। তার পরও এই চাকরি করেই গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। একাধিক গাড়ি-বাড়ি, ফ্ল্যাট, প্লটসহ রয়েছে অনেক সম্পদ। ময়মনসিংহ জেলার ঈশ্বরগঞ্জ পৌর এলাকার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের হাসেম উদ্দিনের ছেলে তিনি। সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২৭ বছরের চাকরিজীবনে তার রয়েছে একাধিক প্লট, ফ্ল্যাট, পাঁচতলা বাড়িসহ নামে-বেনামে প্রচুর সম্পদ। চড়েন ৪৮ লাখ টাকা দামের টয়োটা প্রিমিও গাড়িতে। ওই গাড়ির চালককে মাসে বেতন দেন ২২ হাজার টাকা। ঢাকায় নিজের নামে তিনটি ও স্ত্রীর নামে দুটিসহ মোট পাঁচটি ফ্ল্যাট রয়েছে। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের পাশে রয়েছে তার পাঁচতলা বাড়ি। ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ পৌরসভার ডাকবাংলোর পাশে আছে কয়েকটি প্লট ও ফসলি জমি। স্ত্রী শাহানা পারভীনের নামে রয়েছে দুটি প্রাইভেটকার। একটি এলিয়ন ও আরেকটি নিউ মডেলের প্রিমিও। অভিযোগ করা রয়েছে, নকশা অনুমোদন থেকে শুরু করে, টেন্ডার, কেনাকাটা সবকিছুতেই হস্তক্ষেপ থাকে তার। আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের দায়ে দুদকসহ সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে একাধিক অভিযোগ হয়েছে তার বিরুদ্ধে। তার নামে-বেনামে যেসব সম্পত্তি রয়েছে এর মধ্যে রাজধানীর আদাবর এলাকায় বেশি। জানতে চাইলে জয়নুল আবেদীন বলেন,Ñআমি সব সম্পদ বৈধভাবে উপার্জন করেছি। চাকরির পাশাপাশি ব্রোকারি করেছি। জমি কেনাবেচার কাজ করে এসব উপার্জন করেছি। তা ছাড়া আমার স্ত্রী তার বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। শ্বশুড়বাড়ি থেকেও অনেক সম্পদ পেয়েছি। একটা মহল আমাকে বেকায়দায় ফেলতে এসব কথা রটাচ্ছে; কিন্তু আমি এসবের তোয়াক্কা করি না। এর আগেও আমাকে দুদক ডেকেছিল। মেট্রোপলিটন পুলিশও ডেকেছে। সরকারি চাকরি করলে কি পাশাপাশি অন্য কিছু আর করা যাবে না? আমি নিয়মিত আয়কর দিই। আয়কর ফাইলে সম্পদের সব বিররণ উল্লেখ করা আছে। তার এক সহকর্মী জানান, অধিদপ্তরের বড় কর্তাদের সঙ্গে জয়নুলের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। এ সম্পর্কের ফলেই নিয়মবহির্ভূত অনেক কাজ সে করে। এই সুবাদে বড় হাউজিং কোম্পানিগুলোর সঙ্গে তার সখ্য তৈরি হয়েছে। বড় বড় কোম্পানির প্রাথমিক স্থাপত্য নকশা সে চুক্তির মাধ্যমে অনুমোদন করিয়ে দেয়। জানা গেছে, স্থাপত্য অধিদপ্তরে সাঁটমুদ্রাক্ষরিক পদে যোগদানের পরই জয়নুল জড়িয়ে পড়েন নানা অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে। সম্প্রতি পদোন্নতি পেয়ে সাঁটলিপিকার কাম কম্পিউটার অপারেটরের পাশাপাশি স্থাপত্য অধিদপ্তরের সার্কেল-৫, বিভাগ ১৫-এর নির্বাহী স্থপতি নুসরাত জাহানের ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে কাজ করছেন। দায়িত্ব পালন করছেন ৪৩/১৩/বি, শ্যামলী হাউজিং, রোড-৬, শেখেরটেক, আদাবর বিল্ডিংয়ের নির্মাণ কমিটির সভাপতি হিসেবেও। এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থাপত্য অধিদপ্তর সার্কেল-৫-এর তত্ত্বাবধায়ক স্থপতি বিশ্বজিৎ বড়ুয়া কালবেলাকে বলেন, এত ছোট চাকরি করে এত বিশাল পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। যদিও আমাদের কাছে তার বিরুদ্ধে এ নিয়ে কোনো অভিযোগও আসেনি। এলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে তিনি দীর্ঘদিন ধরে সুনামের সঙ্গেই চাকরি করছেন। এসব বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, একজন সরকারি চাকরিজীবী তার চাকরির বাইরে কিছু করতে চাইলে তাকে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে। অনুমতি না নিয়ে কিছু করলে তা বেআইনি। আইন অমান্য করে অসামঞ্জস্যপূর্ণ সম্পদ অর্জন করে থাকলে তদন্তের মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থার পাশাপাশি দুর্নীতি দমন আইনে বিচার করতে হবে। যদি বিচার না করা যায়, তাহলে সমাজে এ ধরনের অপরাধীর সংখ্যা বাড়তে থাকবে।
৩০ এপ্রিল, ২০২৪

পাহাড় কেটে চলছে বসতঘর নির্মাণ 
শতাধিক শ্রমিক নিয়ে রাতভর চলে পাহাড় কাটা আর বসতঘর নির্মাণ, দিনে সুনশান নীরবতা। এভাবে দখল করে নিচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দরের পুরাতন সিগন্যাল অফিস ভবন ও পাহাড়ের বিশাল এলাকা। এলাকায় গিয়ে জানতে চাইলে দায়ভার কেউ না নিয়ে একে অপরের ওপর দোষ চাপাতে ব্যস্ত প্রভাবশালীরা। স্থানীয়রা জানান, প্রভাবশীল দুই তিনজন ব্যক্তি এসব কাজ করছে। চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বৈরাগ ইউনিয়নের উত্তর বন্দর দেয়াং পাহাড়ে চট্টগ্রাম বন্দরের পুরাতন সিগন্যাল অফিস দখলে চলছে মহোৎসব। এতে পরিবেশ ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য যেমন নষ্ট হচ্ছে তেমনি পাহাড় ধসে প্রাণহানির সম্ভাবনাও রয়েছে। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে দখলদারদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। জানা গেছে, ব্রিটিশ শাসনকালীন সময়ে আনোয়ারার বৈরাগ ইউনিয়নের উত্তর বন্দর দেয়াং পাহাড়ে তৎকালীন চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ চলাচল ও নিয়ন্ত্রণের জন্য পাহাড়ের চূড়ায় একটি সিগন্যাল অফিস নির্মাণ করেন। সেখান থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হতো বন্দরের জাহাজ চলাচল। পরবর্তীতে কালের বিবর্তনে এসব হারিয়ে গেলেও ব্রিটিশ আমলের ওই ভবন এখনো দাঁড়িয়ে রয়েছে স্বগৌরবে। ওই এলাকা এখনো চট্টগ্রাম বন্দরের মালিকানাধীন এবং বন্দরের একজন নিরাপত্তা কর্মীও রয়েছে সেখানে। কুরিয়ান ইপিজেড (কেইপিজেড) নির্মাণের সময়কালেও বন্দরের ওই জায়গা দখলের বাইরে রাখা হয়। কিন্তু গত এক সপ্তাহ ধরে ওই পাহাড়ের ঢালে নির্মাণ করা হচ্ছে টিনের বসতঘর। এজন্য শতাধিক শ্রমিক নিয়ে রাতভর চলে পাহাড় কাটা ও ঘর নির্মাণকাজ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক ব্যক্তি জানান, বন্দরের নিযুক্ত নিরাপত্তা কর্মী আক্তার কামাল, রাশেদ নুরসহ কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি এখানে পাহাড় কেটে ঘর নির্মাণ করছে। তবে রাশেদ নুর দাবী করেন, তিনি নয়, আবদুল খান নামে এক ব্যক্তি পাহাড় কেটে বসতঘর নির্মাণ করছেন। অপরদিকে আবদুল খান পাহাড় কাটার বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরে অভিযোগ করেছেন বলেও জানান। এভাবে চলে একে অপরের প্রতি দোষ চাপানোর প্রবণতা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দরের স্টেট অফিসার শিহাব উদ্দিন বলেন, আনোয়ারায় দেয়াং পাহাড়ে বন্দরের জায়গা দখল করে ৬০টি ঘর নির্মাণের খবর শুনেছি, কয়েকদিনের মধ্যে বন্দরের ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে ওই জায়গা উদ্ধার করা হবে এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে। আনোয়ারা ইউএনও মো. ইশতিয়াক ইমন বলেন, সরকারি জমি দখল ও পাহাড় কাটার কোনো সুযোগ নেই। বিষয়টি বন্দর কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
২৪ এপ্রিল, ২০২৪

বিরিশিরিতে নয়নাভিরাম সৌন্দর্যে মোড়ানো সাদা মাটির পাহাড়
প্রতিবারের ন্যায় এবারো পবিত্র ঈদুল ফিতরে নেত্রকোনার দুর্গাপুরের সাদামাটির পাহাড়ে ঢল নামে পর্যটকদের। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে তারা ঘুরতে আসেন। সীমান্তবর্তী বিজয়পুরের সাদামাটির পাহাড়, কোহিনূর টিলা, নীল পানির জলরাশি, কমলাবাগান, সীমান্তের জিরো পয়েন্ট এবং সোমেশ্বরী নদীর নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ করেন তারা। বর্তমানে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো থাকায় কোনো ঝক্কি-ঝামেলা ছাড়াই পর্যটকরা সরাসরি দুর্গাপুরে চলে যেতে পারেন। এ জন্য এখানকার পর্যটন ব্যবসা সবসময় চাঙা থাকবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের। ঢাকা থেকে দুর্গাপুরের যাতায়াতের ব্যবস্থার জন্য রয়েছে বাস। ডে-নাইট ভাড়া প্রায় ৪৫০ টাকা। সিলেট থেকে আসার ব্যবস্থা হলো সীমান্ত রাস্তা দিয়ে মোটরসাইকেলে। তার ভাড়া প্রায় ১০০০ টাকা।  ঈদ উপলক্ষে দুর্গাপুরের ওয়াইএমসিএ, ওয়াইডব্লিউসিএ, স্বপ্নপুরী রিসোর্ট, হোটেল সোমেশ্বরী লাক্সারিয়াস, নদী বাংলা গেস্ট হাউস ও স্বর্ণা গেস্ট হাউসসহ বিভিন্ন গেস্ট হাউসে ছিল ২০-৩০% ছাড়। আগে থেকেই গেস্টহাউসগুলোতে বুকিং দিয়ে যেতে পারেন পর্যটকরা। হাউসগুলোর কর্তৃপক্ষ জানান, আগের তুলনায় দুর্গাপুরের বিভিন্ন পর্যটন স্পটের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
১৮ এপ্রিল, ২০২৪

পাহাড় নিয়ে অশান্ত খেলায় মেতেছে সরকার : মঈন খান
বান্দরবানে পাহাড় নিয়ে সরকার আবার কোনো অশান্ত খেলায় মেতেছে কি না, আবার নতুন নাটক করছে কি না এমন প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান। তিনি বলেন, সরকার একসময়ে জুজুর ভয় দেখানোর জন্য দেশে আইএস নাটক করেছিল। দেশ চালায় সরকার, রাষ্ট্রীয় সমস্ত ক্ষমতা তাদের হাতে। আর কুকি চিনকে বিএনপি দূরবীন না মাইক্রোস্কোপ দিয়ে আবিষ্কার করল? আজকে সরকারের ব্যর্থতা প্রমাণিত হয়েছে। মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) রাজধানীর উত্তরায় সদ্য কারামুক্ত বিএনপির ধর্মবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জামালের বাসায় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় মঈন খান জামালের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করে তাদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন। ‘বিএনপি গণতন্ত্রকে বাধাগ্রস্ত করছে’ আওয়ামী লীগ নেতাদের এমন অভিযোগের জবাবে আব্দুল মঈন খান বলেন, সরকারে আছে আওয়ামী লীগ, তাহলে বিএনপি কীভাবে গণতন্ত্রকে বাধা দেয়? এটা কী সম্ভব! এর জবাব আওয়ামী লীগ ভালো দিতে পারবে। বাংলাদেশে আজকে গণতন্ত্র নেই, ক্ষমতাসীনরা একদলীয় শাসন কায়েম করে গণতন্ত্র হরণ করেছে এটা শুধু বিএনপিসহ ৬৩টি সমমনা রাজনৈতিক দলের কথা নয়, আমেরিকা ইউরোপীয়ন ইউনিয়নসহ গণতন্ত্র বিশ্বও একই কথা বলছে। তিনি বলেন, আমরা রাজপথে আছি, একদফার আন্দোলনের শেষ পর্যায়ে রয়েছি। বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে এটাই আমাদের দাবি। আমরা শান্তিপূর্ণ রাজনীতিতে বিশ্বাসী। মানুষের ভোটের অধিকার, কথা বলার অধিকার ও গণতন্ত্রের অধিকার ফিরিয়ে না দেওয়ার আগ পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, ২০১৪ সালে বিনাভোটের নির্বাচন, ২০১৮ সালে দিনে ভোট রাতে করে ২৯৪ আসন দখল করে নেয় এবং ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি প্রহসনের নির্বাচন চলমান আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে মানুষ নীরবে ভোট বর্জন করেছে। কারণ এ নির্বাচনে তাদের ভোট দেওয়ার সুযোগ ছিল না, স্বাধীনভাবে জনপ্রতিনিধি বাছাই করার সুযোগ ছিল না। ড. মঈন খান বলেন, আজকে বাংলাদেশ কেন গণতন্ত্র নেই। গণতন্ত্র না থাকলে তো মুক্তিযুদ্ধের আন্দোলন মিথ্যা হয়ে যাবে। আজকে মুক্তিযুদ্ধের যারা জীবন দিয়েছেন তারা যদি প্রশ্ন করেন, গণতন্ত্র কোথায় তাদের আমরা কী জবাব দেব। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে শক্তি বলে দাবি করে আজকে সেই সরকার কী জবাব দেবে? আজকে আমরা কোন দেশে বাস করছি। দুদিন পর ঈদ। এক মাসের সংযম ও ধৈর্যের পরীক্ষা দিয়ে ঈদ উদযাপন করা হয়। আজকে আমরা কী উদযাপন করছি, কোন পরিস্থিতিতে আমরা বসবাস করছি। কারামুক্ত বিএনপির ধর্মবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জামাল বলেন, ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসের রাতে বাসা থেকে আমাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর থানা ও কারাগারে আমাকে মানসিকভাবে টর্চার করা হয়েছে। বিএনপির নেতাকর্মীদের সেলে মধ্যে আটকে রাখা হতো, বাইরে বের হতে দেওয়া হয়নি। ২৯ ডিসেম্বর জামিন পেলেও জেলগেট থেকে আবারও ২০২৩ সালের জুলাইয়ের পুরোনো মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এখনো বাসার সামনে পুলিশ টহল অব্যাহত রয়েছে।
০৯ এপ্রিল, ২০২৪

গোটা পাহাড় অশান্ত হওয়ার কারণ নেই
বান্দরবানে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) ব্যাংক লুট, অপহরণ ও সশস্ত্র হামলার ঘটনা ঘিরে পাহাড়ের পরিস্থিতি সামাল দিতে যৌথ অভিযান চলছে বলে জানিয়েছেন সরকারের সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, এ ঘটনায় গোটা পাহাড় অশান্ত হওয়ার কোনো কারণ নেই। বান্দরবানের পরিস্থিতি শিগগির ‘নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে’ বলে সরকার আশা করছে। গতকাল শনিবার সচিবালয়ে সাসেক-২ প্রকল্পের একটি রেলওয়ে ওভারপাস, সাতটি ওভারপাস ও দুটি সেতু উদ্বোধন শেষে তিনি সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন। পাহাড়ের ঘটনায় গোয়েন্দা ব্যর্থতা ছিল কি না, প্রশ্নে ওবায়দুল কাদের বলেন, সেখানে যৌথ অভিযান চলছে, আশা করি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে। এটা বিচ্ছিন্নভাবে হচ্ছে, গোটা পাহাড় এখানে ইনভলব নয়। এটা বান্দরবানের রুমা, থানচি এলাকায়; কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট আছে, তারা বম নামে একটা উপজাতি। কেএনএফের সঙ্গে আলাপ-আলোচনাও কয়েকবার হয়েছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, চীন ও ভারত সীমান্তের কাছে চিন স্টেট নামে একটা স্টেট আছে। ওখানে কেএনএফের একটি ঘাঁটি আছে বলে মনে করা হয়। তাদের সঙ্গে আগে আলোচনা হলেও কেন তারা বিদ্রোহ করল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ব্যাপারে তদন্ত চলছে। পরিস্থিতির আর কোনো অবনতি যাতে না হয়, সে ব্যাপারে আমাদের যৌথ অভিযান চলছে। আশা করি, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। মঙ্গলবার রাতে শতাধিক সশস্ত্র ব্যক্তি বান্দরবানের রুমা উপজেলায় সোনালী ব্যাংকে হামলা চালিয়ে ব্যাংকের কর্মকর্তা, নিরাপত্তা রক্ষীসহ অন্তত ২০ জনকে মারধর করে। টাকার পাশাপাশি পুলিশের অস্ত্রও লুট করে। এ সময় তারা ব্যাংকের ব্যবস্থাপক নেজাম উদ্দীনকে অপহরণ করলেও পরে তাকে উদ্ধার করা হয়। পরদিন থানচি উপজেলা সদরে কৃষি ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকে হামলা চালিয়ে টাকা লুট করে একদল সশস্ত্র লোক। বৃহস্পতিবার রাতে থানচিতে পুলিশ ও সশস্ত্র লোকদের মধ্যে ঘণ্টাখানেক গোলাগুলির ঘটনাও ঘটে। এসব ঘটনায় পাহাড়ের সশস্ত্র সংগঠন কেএনএফের নাম এসেছে, যারা পাহাড়ে ‘বম পার্টি’ নামে পরিচিত। এর পেছনে বিদেশি কোনো রাষ্ট্রের ইন্ধন আছে কি না—এ প্রশ্নে কাদের বলেন, ‘বাইরের কার সাপোর্ট পাবে? বাইরে এখন... ইউপিডিএফের কথা বললে, চাকমাদের কথা বললে, সন্তু লারমার কথা বললে, তাদের এই ক্ষুদ্র অংশকে মদদ দেবে? এটা একটা বিচ্ছিন্ন, কোনো ক্ষোভ, তাদের দাবি-দাওয়ার বিষয়ে সংক্ষুব্ধ হয়েও তারা করতে পারে। এর কারণ জানা যাবে শিগগির।’ সেতুমন্ত্রী আরও বলেন, ‘মিজোরামের সঙ্গে কোনো কানেকশন আছে বলে আমার জানা নেই। যদিও মিজোরামে বম অনেক। এর সঙ্গে এখানে সীমান্ত থেকে কোনো বিচ্ছিন্নতাবাদী বা টেররিস্ট সংগঠন মদদ দেবে, এটা আমাদের মনে হয় না।’ বান্দরবানের রুমা ও থানচিতে নিরাপত্তার ঘাটতি ছিল কি না, সেই প্রশ্নে ওবায়দুল কাদের বলেন, এখানে ঘটনা যখন ঘটে গেছে, ওই এলাকা সম্পর্কে যদি আপনার ধারণা থাকে... যদিও আমি পাহাড়ের সর্বত্র অনেক রাস্তা করেছি। এগুলো বিচ্ছিন্ন এলাকা। এটা এখন তদন্ত হচ্ছে, জোর তদন্ত চলছে, সব বেরিয়ে আসবে।
০৭ এপ্রিল, ২০২৪

বন কর্মকর্তাকে খুনের পরেও থামেনি পাহাড় কাটা
বন রক্ষায় অভিযান চালাতে গিয়ে মাটি পাচারকারীদের ডাম্পারের (মিনি ট্রাক) চাপায় খুন হন বনবিট কর্মকর্তা সাজ্জাদুজ্জামান। এ ঘটনার পরও কক্সবাজারের পেকুয়ায় দেদার চলছে মাটি কাটার উৎসব। তবে এবার এ ঘটনায় ৪টি ডাম্পার ট্রাক জব্দ করা হয়েছে।  বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) রাত আড়াইটার দিকে উপজেলার টইটং ইউনিয়নের হাজিবাজার এলাকা থেকে এ গাড়িগুলো জব্দ করা হয়। রাতের আঁধারে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের পাহাড় কেটে মাটি লুট রুখতে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে নেতৃত্ব দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম। জানা গেছে, উপজেলার টইটং ইউনিয়নের রমিজপাড়া এলাকা থেকে গত দু’মাস ধরে রাতের আঁধারে পাহাড়ি লাল মাটি কেটে আসছিল একটি চক্র। বৃহস্পতিবার রাতে ছদ্মবেশে অভিযানে যান ইউএনও। মাটি কেটে আসার সময় আনসার সদস্যরা গাড়ি লক্ষ্য করে অস্ত্র তাক করলে ড্রাইভারকে রেখে পালিয়ে যান অন্যরা। একে একে জব্দ হয় ৪টি মাটি ভর্তি ডাম্পার ট্রাক। আটক হয় ড্রাইভারসহ ৪ জন। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি পেকুয়া যোগদানের পর থেকে মানুষের অসংখ্য অভিযোগ ছিল পাহাড় খেকোরা পাহাড় কেটে মাটি নিয়ে যাচ্ছে। একইসঙ্গে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে তারা। এ কারণে আমরা গত ১৫ দিন ধরে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে আসছি। এখানে যেসব করাতকল রয়েছে এরইমধ্যে ১৮টি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আরও কয়েকটা আছে সেগুলো বন্ধ করা হবে।  তিনি জানান, পাহাড়ে মাটি কাটা বন্ধ করার জন্য আমরা বিভিন্ন ইনফর্মার লাগিয়েছি। এখন থেকে পেকুয়ার কোথাও পাহাড় কাটার খবর আসলেই রাত হোক বা দিন হোক আমরা অভিযানে যাচ্ছি। আটককৃতরা সব ইনফরমেশন দিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে পরিবেশ আইনে মামলা দেব। এর আগে, রোববার রাতে কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার রাজাপালং ইউনিয়নের হরিণমারা এলাকায় সংরক্ষিত বনের পাহাড় কেটে মাটি পাচার করছিল বনদস্যুরা। খবর পেয়ে তা ঠেকাতে গিয়ে ভোর সাড়ে ৩টার দিকে পাচারকারীদের ডাম্প ট্রাকের চাপায় প্রাণ হারান বনবিভাগের বিট কর্মকর্তা মো. সাজ্জাদুজ্জামান সজল।
০৫ এপ্রিল, ২০২৪

পাহাড় নিয়ে নতুন দুশ্চিন্তা
শান্তি আলোচনা চলাকালেই দুটি ব্যাংকের তিনটি শাখায় হামলা হয়েছে। টাকা ও অস্ত্র লুট করার পাশাপাশি অপহরণ করা হয় একটি শাখার ম্যানেজারকে। পাহাড়ি সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টকে (কেএনএফ) এ ঘটনায় দায়ী করছে সরকার। তারা বান্দরবানের ৯টি উপজেলা নিয়ে স্বায়ত্তশাসনের দাবি করে আসছে। কেএনএফ এই হামলা ও অপহরণের মধ্য দিয়ে যতটা না টাকা-অস্ত্র লুট করতে চেয়েছে, তার চেয়ে বেশি নিজেদের অবস্থান ও সক্ষমতার জানান দিতে চেয়েছে বলে মনে করছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, পাহাড়ে এই হামলা সূক্ষ্ম পরিকল্পনার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করেছে কেএনএফ। পুরোপুরি সফল হতে না পারলেও নিজেদের আবার আলোচনায় আনতে পেরেছে তারা, যা নতুন করে দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারে। এই হামলার আগাম তথ্য কারও কাছে না থাকাকে চরম গোয়েন্দা ব্যর্থতা বলছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। পাহাড়ে যাদের অপারেশনাল সক্ষমতা রয়েছে, তাদের হাতেই আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব দেওয়ার দাবি উঠছে। পাহাড়ের নিরাপত্তা বিষয়ে এক্সপার্টরা বান্দরবানে জড়ো হচ্ছেন বলে জানা গেছে। ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায় কেএনএফের সঙ্গে সব ধরনের আলোচনা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে সরকার। এদিকে, গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সোনালী ব্যাংকের রুমা শাখার ম্যানেজার নেজাম উদ্দিনকে উদ্ধার করে র‌্যাব। পুলিশ ও আনসারের লুণ্ঠিত অস্ত্র উদ্ধারে অভিযানের কথা জানিয়েছেন পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্চ ডিআইজি নুরে আলম মিনা। গত মঙ্গলবার রাতে রুমা শহরে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে সোনালী ব্যাংকের শাখায় হামলা চালায় অস্ত্রধারী কেএনএফ সদস্যরা। মসজিদ থেকে রুমা শাখার ম্যানেজার নেজাম উদ্দীন ধরে ব্যাংকে নিয়ে যায় তারা। অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে মুসল্লিদের। ব্যাংক ম্যানেজারের মাধ্যমে ভল্টের টাকা নেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু ম্যানেজারের চতুরায় তা পারেনি অস্ত্রধারীরা। তবে ওই এলাকায় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ ও আনসার সদস্যদের অস্ত্র নিয়ে যায় কেএনএফ সদস্যরা। সঙ্গে অপহরণ করে নেজাম উদ্দীনকে। পরদিন দুপুরে থানচিতে দুটি ব্যাংকের শাখায় হানা দিয়ে কয়েক লাখ টাকা লুটে নেয় তারা। বান্দরবান পুলিশ জানিয়েছে, হামলাকারীরা দুটি এসএমজি ও এর ৬০টি গুলি, ৮টি চীনা রাইফেল ও ৩২০টি গুলি, ৪টি শটগান ও ৩৫টি কার্তুজ নিয়ে গেছে। ব্যাংক লুটে জড়িতদের কঠোর শাস্তির হুঁশিয়ারি দিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গতকাল বলেন, আমরা দেখছি, ব্যবস্থা নিচ্ছি। সব কিছুই করব, আগে সব কিছু জেনে নিচ্ছি। এর পেছনে কারা আছে, কোনো উদ্দেশ্য আছে কি না, কোনো ধরনের নাশকতা কিংবা কোনো পরিকল্পনা আছে কি না—এগুলো দেখে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব। আমরা কোনো ছাড় দেব না। কঠিন ব্যবস্থা নেব। এখানে ভূ-রাজনৈতিক কোনো ব্যাপার আছে কি না জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের কাছে এখনো এ ধরনের কোনো তথ্য নেই। অনেক কিছুই হতে পারে কিন্তু না জেনে, তথ্য না পেয়ে আমরা বলতে পারছি না। পরপর দুদিন ব্যাংকের হামলা, অস্ত্র-টাকা লুট ও ম্যানেজার অপহরণের পর কেএনএফের সঙ্গে সব ধরনের আলোচনা বন্ধ ঘোষণা করেছে জেলা পরিষদের শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি। গতকাল সকালে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সদস্যরা এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন। এর আগে বুধবার শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি এক জরুরি সভা আহ্বান করে। সভায় নেওয়া সিদ্ধান্ত তুলে ধরার জন্য সংবাদ সম্মেলন করা হয়। কেএনএফের সদস্যদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য ২০২৩ সালের ২৯ মে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা মারমার নেতৃত্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সঙ্গে কেএনএফের কয়েক দফা অনলাইনে ও দুই দফা সশরীর বৈঠক হয়েছে। গত বছরের ৫ নভেম্বর ও গত ৫ মার্চ অনুষ্ঠিত সশরীর দুই দফা বৈঠকে দুটি সমঝোতা স্মারকও সই হয়। এতে তারা চাঁদাবাজি, অপহরণ, লুটপাটসহ সব ধরনের সন্ত্রাসী তৎপরতা বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল; কিন্তু প্রতিশ্রুতির পর তারা রুমা ও থানচিতে সোনালী ও কৃষি ব্যাংকে ডাকাতি করে। কমিটি মনে করে, তাদের অতিসাম্প্রতিক ঘটনায় শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির শান্তি আলোচনা বৈঠকসহ সব ধরনের কার্যক্রম প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এ অবস্থায় শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি কেএনএফের সঙ্গে কোনো ধরনের বৈঠক করবে না। কেএনএফ প্রথম আলোচনায় আসে ২০২২ সালের জুন মাসে। তাদের হাতে রাঙামাটির বিলাইছড়িতে ৩ জন নিহত হন। এরপর একের পর এক হত্যা, লুট, অপহরণে নাম আসে কেএনএফের। শুধু ২০২৩ সালেই ৬ সেনা সদস্যসহ ২০ জনের বেশি তাদের গুলিতে প্রাণ হারান। অপহরণের ঘটনা ঘটছিল নিয়মিত। এরই মধ্যে নতুন জঙ্গি সংগঠন জামা’আতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়াকে টাকার বিনিময়ে পার্বত্য এলাকায় আশ্রয়, অস্ত্র সরবরাহ ও প্রশিক্ষণের অভিযোগ ওঠে কেএনএফের বিরুদ্ধে। এই প্রশিক্ষণের জন্য তারা তিন বছর মেয়াদি চুক্তি করেছিল। র্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল-মঈন জানান, জঙ্গিরা পাহাড়ে আশ্রয় নিয়ে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে বিষয়টি জানতে পারার পর আমরা সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় অভিযান শুরু করি। ধারাবাহিক অভিযানে তাদের ট্রেনিং সেন্টার শনাক্ত, বিপুল পরিমাণ অস্ত্রসহ শতাধিক জঙ্গি সংগঠনের সদস্য ও কুকি-চিনের ২০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। আমাদের অভিযানের ফলে অনেকটা কোণঠাসা ছিল। সাম্প্রতিক সময়ে শান্তি কমিটি গঠন করা হয়। তাদের সঙ্গে শান্তি আলোচনা চলছিল। এ কারণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কুকি-চিনের বিরুদ্ধে অভিযান বন্ধ রাখে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্রগুলো বলছে, কেএনএফেএর নেতৃত্ব দিচ্ছেন নাথান লনচও বম। তার বাড়ি রুমার ইডন বমপাড়া। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। ছাত্রাবস্থায় পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষে ২০০৮ সালে কুকি-চিন ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (কেএনডিও) নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১৯ সালের দিকে এই নাম পাল্টে করা হয় কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট। সংগঠনটি রাঙামাটি ও বান্দরবানের যে ৯টি উপজেলা নিয়ে স্বায়ত্তশাসিত রাজ্য গঠনের ঘোষণা দিয়েছে, এর মধ্যে আছে বান্দরবানের রুমা, থানচি, লামা, রোয়াংছড়ি ও আলীকদম উপজেলা; রাঙামাটির সাজেক উপত্যকা, বাঘাইছড়ি, বরকল, জুরাছড়ি ও বিলাইছড়ি উপজেলা। তাদের ঘোষিত রাজ্যে ৫ সম্প্রদায়ের লোকজন বসবাস করতে পারবে। তারা হলো বম, খুমি, খিয়াং, পাংখোয়া ও লুসাই। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, পাহাড়ে এই পাঁচ সম্প্রদায়ের লোকসংখ্যা ২৫ হাজারের বেশি। কেএনএফের সশস্ত্র সদস্য হাজারের বেশি। ব্যাংক তথা বান্দরবানের ওই এলাকাগুলোতে নিরাপত্তার চরম ঘাটতি ছিল বলে মনে করেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি কালবেলাকে বলেন, নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভালো থাকলে এমনটা হতো না। নিরাপত্তা বলতে কিছুই নেই। পুলিশ তো এই ধরনের এলাকায় নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য বিশেষায়িতভাবে প্রশিক্ষিত নয়। কুকি-চিনের উদ্ভব যেখানে হয়েছে, সেখানে দাঁড় করিয়ে দিলেই নিরাপত্তা হয় না। আমি নিজে ওই এলাকায় দায়িত্ব পালন করেছি। সেনাবাহিনীকে উঠিয়ে আনার পর পুলিশ-র্যাব দিয়ে নিরাপত্তা দেওয়া যাচ্ছে না। তারা যে বিষয়ে পারদর্শী, এটা সেই কাজ নয়। উপজেলা শহরে সন্ধ্যায় লাইট বন্ধ করে হামলা করেছে। তাহলে সেটা পুলিশ টের পায়নি কেন। নিরাপত্তা ব্যবস্থা সঠিক থাকলে গোলাগুলি হতো, এত সহজে সন্ত্রাসীরা তাদের কাজ করে চলে যেতে পারত না। পাহাড়ে নিজের অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সামরিক বাহিনী যখন মোতায়েন ছিল, তখন এসব এলাকায় সব সময় সেনাবাহিনী থাকত, কমিউনিটি পেট্রোলিং থাকত। বহু বছর ওখানে থাকার কারণে আমরা গ্রাউন্ড থেকে তথ্য পেতাম। কার ছেলে কোথায় আছে, কী করছে, কার মুভমেন্ট সন্দেহজনক, সব তথ্য আমরা পেতাম। আমাদের গ্রাউন্ড লেভেলে স্ট্রং ইন্টেল ছিল। কে এন এফ এই হামলাকে নতুন করে দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারে বলে মনে করছেন তিনি। বান্দরবানের এই এলাকাগুলোতে সার্বক্ষণিক নজরদারির দরকার। সেজন্য সেনাবাহিনী মোতায়েন করা দরকার বলে জানান তিনি। সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, সার্বক্ষণিক নজরদারির জন্য যা যা করার দরকার তাই সরকারকে করতে হবে। তারা যে রাস্তায় আসে, সেই রাস্তায় যায় না। ফলে সেভাবে প্রস্তুতি রাখা লাগবে। এই ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য সেনাবাহিনীর বিকল্প নেই। আশপাশে কয়েকটি জায়গায় ক্যান্টনমেন্ট আছে। সেনাবাহিনী এই এলাকায় কাজ করে অভ্যস্ত। ফলে এখানে তাদের কাজ করা সহজ।
০৫ এপ্রিল, ২০২৪

সাজেকের পাহাড় কাটা বন্ধের নির্দেশ
রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেকে পাহাড় কাটা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে সাজেকে প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না এবং পাহাড় কাটা বন্ধে ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুলও জারি করেছেন আদালত। ধ্বংসপ্রাপ্ত পাহাড় পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা-ও জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে। পরিবেশ সচিব, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, চট্টগ্রামের ডিসিসহ সংশ্লিষ্টদের চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। এ-সংক্রান্ত রিটের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক-আল-জলিলের বেঞ্চ রুলসহ আদেশ দেন। ‘সাজেকে পাহাড় কেটে সুইমিংপুল’ শিরোনামে গত ২৮ মার্চ একটি জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদন যুক্ত করে ১ এপ্রিল হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে রিট করা হয়। রিটের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল প্রতিকার চাকমা।
০৩ এপ্রিল, ২০২৪

বন ও পাহাড় রক্ষায় রাজধানীতে নাগরিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত
বন কর্মকর্তার হত্যার বিচার, বন ও পাহাড় খেকোদের গ্রেপ্তার এবং বন ও পাহাড় রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া সহ ৫ দফা দাবিতে ২৩টি পরিবেশবাদী, সামাজিক ও নাগরিক সংগঠনের উদ্যোগে নাগরিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) রাজধানীর আগাওগাঁওয়ে বন ভবনের সামনে এ নাগরিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।  এ সমাবেশে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি (বেলা), স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস), পরিবেশ উদ্যোগ, বাংলাদেশ প্রকৃতি সংরক্ষণ জোট, মানবাধিকার উন্নয়ন কেন্দ্র, অরণ্যক ফউন্ডেশন, নাগরিক উদ্যোগ, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট, গ্রিন ভয়েস, গ্রিন সেভার্স, বাংলাদেশ ডিপ্লোমা ফরেস্টার এসোসিয়েশন, বারসিক, উন্নয়ন ধারা ট্রাস্ট, সেন্টার ফর গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেনট (সিজিইডি), পিপল ফর এনিমেল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন, ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস, প্রাক্তন ছাত্র পরিষদ ফরেস্ট সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউট, চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ ফরেস্টার এসোসিয়েশন, আরডিআরএস, পরিবেশ ও জলবায়ু আন্দোলন এবং জন উদ্যোগসহ ২৩টি পরিবেশবাদী, সামাজিক ও নাগরিক সংগঠনের সদস্যরা অংশ নেয়। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সভাপতি অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদারের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবিরের সঞ্চালনায় নাগরিক সমাবেশে বিভিন্ন পরিবেশবাদী, সামাজিক ও নাগরিক সমাজের নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহমুদা পারভীন, বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার, পরিবেশ, নাগরিক উদ্যোগের নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসেন, অরণ্যক ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক রকিবুল হাসান, গ্রিন ভয়েসের সহ-সমন্বয়ক হুমায়ুন কবির সুমন, মানবাধিকার উন্নয়ন কেন্দ্রের মহাসচিব মাহবুল হক, উন্নয়ন ধারা ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক আমিনুর রসুল, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশের পরিচালক গাউস পিয়ারী, আরডিআরএস এর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ, গ্রিন সেভার্সের সভাপতি আহসান রনি, বারসিক এর সমন্বয়কারী জাহাঙ্গীর আলম, পরিজা এর সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ উজ্জল, জন উদ্যোগের তারিক হোসেন মিঠু, সিজিইডি এর সভাপতি, মো. আব্দুল ওহাব ও প্রয়াত সাজ্জাদুজ্জামানের পরিবার (বাবা, মা, বড় ভাই, স্ত্রী ও তার ৮ মাসের কন্যা সন্তান)।   পরিবেশবাদী ও সামাজিক সংগঠনসমূহের মূল বক্তব্যে বলা হয় গত ৩১ মার্চ কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের উখিয়া রেঞ্জের দোছড়ি বন বিটের কর্মকর্তা সাজাদুজ্জামান এর নির্মম অপহত্যায় জড়িতদের অতি সত্বর আইনের আওয়ায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে আজকের পরিবেশবাদী ও নাগরিক সমাজের এই মানববন্ধন কর্মসূচি। গত ৩১ মার্চ দেশের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের উখিয়া রেঞ্জর দোছড়ি বন বিটের কর্মকর্তা সাজাদুজ্জামানের নির্মম মৃত্যুর সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যা দেশের মানুষের বিবেককে নাড়া দিয়েছে। প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী ৩১ মার্চ প্রয়াত সাজাদুজ্জামান ভোররাত সাড়ে ৩টার দিকে কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের উখিয়া রেঞ্জের আওতাভুক্ত রাজাপালং ইউনিয়নের হরিণমারা এলাকায় বনের জমি রক্ষা করতে গিয়ে ভূমি দস্যুদের নির্মমতার শিকার হন। উখিয়া রেঞ্জের হরিণমারা অংশ থেকে পাহাড় কেটে বালু সরবরাহ করার সময় একটি মিনি ট্রাক (ডাম্পার) সাজাদুজ্জামানকে চাপা দিয়ে পালিয়ে যায়। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান তিনি। এ ঘটনায় আহত হন আরও একজন বন কর্মকর্তা। দেশজুড়ে একের পর এক বন, পাহাড় ধ্বংস ও হাতিসহ নানা বন্যপ্রাণী হত্যা এবং বন উজাড় রোধে যখন কিছু সৎ নিষ্ঠাবান মানুষ কাজ করার উদ্যোগ গ্রহণ ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে যায়; তখনি তাদের নানা নির্যাতন ও হত্যার শিকার হতে হয়।  এ সময় নেতারা বলেন, কতিপয় দুর্বৃত্ত, ভূমিদস্যু, পাহাড় ও বনখেকোর আগ্রাসনে প্রায় নিঃষেশিত জাতীয় বনভূমির রক্ষায় সাংবিধানিক প্রতিশ্রুতি অনুয়ায়ী দেশের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নাগরিকদের জন্য দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নির্মম আক্রমণের শিকার হন এ বন কর্মকর্তা। যা তার মাত্র ৮ মাস বয়সের সন্তানকে করেছে অভিভাবকহীন। নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে সাজাদুজ্জামানের অপহত্যার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি ও তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করে তার শোকসন্তপ্ত পরিবার ও সহকর্মীদের আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি। এর আগে গত ২০২০ সালের ৭ আগস্ট মো. ইউসুফ উদ্দীন নামে মহেশখালী বন রেঞ্জ কর্মকর্তা পাহাড় ও বনখেকোর হাতে অপহত্যার শিকার হয়েছিলেন। সে ঘটনার সঠিক ও দৃষ্টান্তমূলক বিচার এখনও হয়নি। পাহাড় ও বনখেকোদের দমন করতে না পারার ক্রমাগত ব্যর্থতা এসব অপরাধীকে দুর্ধর্ষ ও বেপরোয়া করে চলেছে, যার ধারাবাহিকতায় মো. ইউসুফের পর সাজাদুজ্জামানকে আবারও অপহত্যার শিকার হতে হলো। সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদার বলেন, বন, পাহাড় ও পরিবেশ রক্ষা না হলে মানুষ বাঁচতে পারে না। তাই দেশের বন-পাহাড় ও পরিবেশকে বাঁচাতে হবে। মুষ্টিমেয় লোকের হাতে দেশের বন-পাহাড়-নদী জিম্মি। এই জিম্মিদশা থেকে  দেশের বন-পাহাড় ও পরিবেশকে মুক্ত করতে হবে। সাজ্জাদুজ্জামানের হত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এ আন্দোলন চলবে। সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, দেশের সব চেয়ে সুন্দও জেলাটি আজ বন ও পাহাড় খেকোদের দ্বারা ধ্বংসপ্রায়। জামিনে মুক্ত ইউসুফরে হত্যাকারীদের পুণরায় গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠানো এবং সাজ্জাদুজ্জামানের হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করেন। একইসঙ্গে উভয়ের পরিবারের ভরণপোষণের সব দায়িত্ব সরকারকে বহন করার জোর দাবি করেন।  সংহতি বক্তব্যে প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমির হোসাইন চৌধুরী বলেন, আমার কর্মকর্তা তার দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নির্মমভাবে হত্যার শিকার হয়েছে এর সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করছি। আমরা এর মামলা করেছি, একজন আসামি গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। একইসঙ্গে দেশের সকল বনে বন খেকোদের দৌরাত্ম্য বন্ধে আমাদের সকল কর্মচারী-কর্মকর্তা দিগুণ শক্তিতে কাজ শুরু করেছে। আমরা আর কোনো ইউসুফ সাজ্জাদুজ্জামানকে হারাতে চাই না- এজন্য বন রক্ষকদের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম প্রদানের আশাবাদ ব্যক্ত করেন। জাকির হোসেন সংহতি বক্তব্যে বলেন, দেশের দুর্বৃত্তরা আজ লাগামছাড়া। বিচারহীনতায় এর কারণ। কর্তৃপক্ষের নাকের ডগায় এ ধরনের হত্যাকাণ্ড মেনে নেওয়া যায় না। তিনি দ্রুত হত্যাকারীদের শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানান। আলমগীর কবির বলেন, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত অর্থে এর সঙ্গে যারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানান। তার স্ত্রীর চাকরি প্রদান ও সন্তানের ভবিষ্যত নিশ্চিত করার দাবি করেন। তিনি আরও বলেন, এই হত্যাকরীদের গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে প্রয়োজনে আরও বৃহতর কর্মসূচির আহ্বান করা হবে বলে তিনি জানান। অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, সাজ্জাদুজ্জামানকে নির্মমভাবে হত্যার পর উল্লাস করা হয়েছে যা কোন সভ্যসমাজে মেনে নেওয়া যায় না। তিনি হত্যাকারিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দ্রুত বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানান। ঢাল তলোয়ার ছাড়া নিধুরাম সর্দার বানিয়ে বন রক্ষায় ছেড়ে দেওয়া সরকারের চরম ব্যর্থতা। বন রক্ষাকারীদের প্রয়োজনীয় প্রটেকশন ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় অস্ত্র প্রদানের দাবি জানান। বন রক্ষা করতে যারা নির্মম হত্যার শিকার হয়েছে তাদের পরিবারে দায়িত্ব এবং যারা এ কাজে নিয়োজিত তাদের ঝুঁকি ভাতা চালুর দাবি জানান তিনি।    নিহত সাজ্জাদুজ্জামানের বড় ভাই কামরুজ্জামান কাজল বলেন, আমার ভাইকে আর ফিরে পাবো না। কিন্তু আর কোনো ভাইকে যেন এভাবে মরতে না হয়, তার নিশ্চয়তা চাই। হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবি করেন। তার স্ত্রীর চাকরি প্রদান, সন্তানের ভবিষ্যত নিশ্চিত করা ও মামলাটি র‌্যাবের নিকট হস্তান্তরের দাবি জানান তিনি।  সমাবেশ থেকে ৫ দফা দাবি সংবলিত একটি লিফলেট পরিবেশবাদী, সামাজিক ও নাগরিক সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমির হোসাইন চৌধুরী হাতে তুলে দেন বাপা সভাপতি অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদার, বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, বাপার সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির ও ক্যাপসের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার।   নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে দাবিসমূহ সাজাদুজ্জামানকে নির্মম হত্যকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের অতিসত্বর গ্রেপ্তার করে আইনের আওয়ায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা; প্রয়াত মো. ইউসুফ ও সাজাদুজ্জামানের পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদান করা; আহত বন কর্মকর্তার চিকিৎসা নিশ্চিত করা; বনভূমি সুরক্ষায় ভূমিদস্যুদের বাড়তি ঝুঁকিতে থাকা কর্মীদের জন্য সুরক্ষা নিশ্চিত ও নিরাপদ কর্মক্ষেত্র তৈরিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া এবং দেশের বনভূমি, পাহাড় ও নদী রক্ষায় এমন ঘটনার পুণরাবৃত্তি রোধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ।
০২ এপ্রিল, ২০২৪
X