উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চট্টগ্রামে সীতাকুণ্ড ও মিরসরাইয়ে চেয়ারম্যান প্রার্থী রয়েছেন সাতজন। এর মধ্যে মিরসরাইয়ে পাঁচজন এবং সীতাকুণ্ডে দুজন। নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, অল্পদিনেই ব্যবসা করে টাকার পাহাড় গড়েছেন বেশিরভাগ চেয়ারম্যান প্রার্থী।
মিরসরাই উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন এবার নির্বাচনে অংশ নেননি। যে পাঁচজন চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন তারা হলেন উত্তম কুমার শর্মা (দোয়াত-কলম), এনায়েত হোসেন নয়ন (কাপ-পিরিচ), শেখ মো. আতাউর রহমান (ঘোড়া), ফেরদৌস হোসেন আরিফ (আনারস) ও মো. মোস্তফা (মোটরসাইকেল)।
অন্যদিকে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সীতাকুণ্ড উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ ছেড়ে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন এস এম আল মামুন। এবার সেখানে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন দুজন। তারা হলেন মহিউদ্দিন আহমদ রঞ্জু (দোয়াত-কলম) ও আরিফুল আলম চৌধুরী (আনারস)।
ঠিকাদারিতে কোটিপতি এনায়েত: মিরসরাইয়ের বিএ পাস চেয়ারম্যান প্রার্থী এনায়েত হোসেন একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত। সেখান থেকে বছরে তার আয় ২৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। পাশাপাশি একটি চাকরিও করে আয় করেন বছরে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। ব্যাংকে জমিয়েছেন ৯০ লাখ ৪৭ হাজার ৩৭৩ টাকা। অন্যদিকে বাস, ট্রাক, লঞ্চ, স্টিমার ও মোটরসাইকেল রয়েছে ৬৬ লাখ ৬০ হাজার টাকার। স্বর্ণ রয়েছে প্রায় ৩ লাখ টাকার। অকৃষি জমি রয়েছে ৯৪.৯৪ শতক, যার বর্তমান বাজারমূল্য ২০ লাখ ৪৭ হাজার ৫০০ টাকা।
ঢাকার পূর্বাচলে জমি কিনেছেন আতাউর : ব্যবসা থেকে আতাউর রহমানের বার্ষিক আয় ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। বর্তমানে নগদ রয়েছে ১৪ লাখ ৯৮ হাজার ৮৬২ টাকা। যানবাহন আছে ৫ লাখ টাকা মূল্যের। স্বর্ণ আছে ২০ ভরি, যার দাম দেখিয়েছেন ১ লাখ টাকা। বিএ
বিএড এমএড পাস এই নেতা উত্তরাধিকারসূত্রে যে ২৫ ডিসি জায়গা পেয়েছেন, তার দাম দেখিয়েছেন ১ লাখ টাকা। তবে ঢাকার পূর্বাচলে ৩ কাঠা জমি কিনেছেন তিনি, যার দাম দেখিয়েছেন ৯ লাখ ৬৩ হাজার ৩৩৪ টাকা।
কমিশন ব্যবসায়ী আরিফ, স্ত্রীর আয় স্বামীর কাছাকাছি
এমকম পাস প্রার্থী আরিফের কমিশন ব্যবসা থেকে বছরে আয় ৩ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। স্ত্রী জেলা পরিষদের সংরক্ষিত নারী সদস্য হিসেবে সম্মানী পান ৩ লাখ টাকা। চার মামলায় খালাস পাওয়া এই নেতার নগদ রয়েছে ২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা রয়েছে মাত্র ৫ হাজার টাকা। তবে বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্রে স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ রয়েছে ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা। স্বর্ণ রয়েছে ৩ লাখ টাকার। এ ছাড়া অন্যান্য ব্যবসায়ী মূলধন রয়েছে ১১ লাখ ৬০৯ হাজার টাকার। কৃষিজমির পরিমাণ ১৫.৩৩ শতক। অকৃষি জমি ১২ শতক।
মোস্তফা ব্যবসা করলেও, ভেঙে খান ব্যাংকের টাকা
এইচএসসি পাস মোস্তফার পেশা ব্যবসা। মাকফি এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান থাকলেও সেখান থেকে আয় নেই। তিনি ব্যাংকের টাকা ভেঙে খান। রেমিট্যান্স হিসেবে তার কাছে বছরে আসে ১১ লাখ ৫৮ হাজার ৩৬৩ টাকা। এটাই তার আয়ের মূল উৎস। বর্তমানে তার নগদ ২ লাখ টাকা থাকলেও ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা রয়েছে ৩ লাখ ৮০ হাজার ৪২৬ টাকা। বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্র বা স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ ১৭ লাখ টাকা।
উত্তমের আয়ের মূল উৎস ব্যবসা
স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী উত্তম কুমার শর্মা ব্যবসা করলেও এখনো জায়গাজমি গড়তে পারেননি। তার যে পরিমাণ অকৃষি জমি রয়েছে তার দাম মাত্র ১০ হাজার টাকা। তবে ব্যবসা থেকে আয় ৫ লাখ ৪৭ হাজার ১৭৬ টাকা। এই নেতার নগদ রয়েছে ৬ লাখ ৪৪ হাজার ৪১৪ টাকা। সঞ্চয়পত্র বা স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ ৪ লাখ ৩২ হাজার ৭৬৬ টাকা। স্বর্ণ রয়েছে ৪০ হাজার টাকার। এ ছাড়া বিভিন্ন ব্যবসায় মূলধন রয়েছে ২১ লাখ ৭০ হাজার ৪২১ টাকা।
ব্যাংকে এক টাকাও নেই আরিফুলের
সীতাকুণ্ডের চেয়ারম্যান প্রার্থী আরিফুল বিএ পাস। তার মূল আয় ব্যবসা থেকে। পুরোনো জাহাজের মালপত্র কেনাবেচা করেন। ব্যবসা করলেও ব্যাংকে এক টাকাও জমাতে পারেননি। ব্যবসা থেকে বছরে আয় ৪ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। নগদ রয়েছে ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা। সঞ্চয়পত্রে বা স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ রয়েছে ৪ লাখ ৩২ হাজার ৭৬৬ টাকা। বিয়ের সময় স্ত্রী উপহার পেয়েছেন ৩০ ভরি স্বর্ণ। বিভিন্ন ব্যবসায় মূলধন রয়েছে ২১ লাখ টাকা। ২০ গণ্ডা করে কৃষি ও অকৃষি জমি রয়েছে। বাড়ি রয়েছে ১০ শতক জায়গার ওপর।
মঞ্জুর নগদ অর্থ ও সম্পদ ছাড়িয়েছে কোটি টাকা
এ উপজেলার আরেক বিএ পাস প্রার্থী মঞ্জুর পেশা ব্যবসা। পানামা ট্রেডিং করপোরেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক তিনি। সেখান থেকে বছরে আয় ২৭ লাখ ৭৩ হাজার টাকা। কৃষি খাতে বছরে আয় করেন ৩ লাখ টাকা। বর্তমানে নগদ রয়েছে ৭ লাখ ২৯ হাজার টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা রয়েছে ১৬ লাখ ৪৮ হাজার ৩৭ টাকা। স্বর্ণ রয়েছে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকার। এ ছাড়া কৃষিজমি তিন একর, আর অকৃষি জমি রয়েছে ২৭ লাখ ৭৩ হাজার টাকার।