সম্পাদকীয় / স্বস্তির বৃষ্টি ও বজ্রপাত আতঙ্ক
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টি হয়েছে। জনজীবনে নেমেছে ক্ষণিক স্বস্তি, তবে এ মাসেও তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অফিসের কর্তারা। কয়েক বছর ধরে বিরূপ আবহাওয়া মোকাবিলা করছে বাংলাদেশ। গত ৩১ মার্চ থেকে বৃহস্পতিবার (২ মে) পর্যন্ত টানা ৩৩ দিন দেশের পশ্চিম ও মধ্যাঞ্চলের ওপর দিয়ে তাপপ্রবাহ চলমান ছিল। বৃহস্পতিবার সকালে চট্টগ্রামসহ দেশের কিছু এলাকায় বৃষ্টি হয়। রাত সাড়ে ৮টার পর বৃষ্টি হয় রাজধানীর কিছু এলাকায়ও। তবে তা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজার, যাত্রাবাড়ী, ডেমরা ও শনির আখড়া এলাকায় সাত-আট মিনিটের মতো সামান্য বৃষ্টি ঝরেছে। রাত ১২টার দিকে বজ্রসহ বৃষ্টি শুরু হয় মিরপুর, শ্যামলী এলাকায়। রাত ১টার দিকে নিউমার্কেট, কারওয়ান বাজারসহ ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় মুষলধারে বৃষ্টি হয়। তবে কোথাও কোথাও বৃষ্টি হলেও তাপপ্রবাহের ধারাবাহিকতা দ্রুতই চলে যাবে না বলে মনে করেন আবহাওয়া অফিসের কর্তারা। তারা বলছেন, উপমহাদেশে যে তাপবলয় সৃষ্টি হয়েছে, তা প্রশমনে বড় ধরনের বৃষ্টি দরকার। আগামীকাল (রোববার) থেকে এমন বৃষ্টি হতে পারে। এরপর তাপমাত্রা খানিকটা কমতে পারে। বিশ্বের আবহাওয়া ও জলবায়ুবিশেষজ্ঞরা গত বছরই বলেছিলেন, ২০২৪ সাল অপেক্ষাকৃত উষ্ণ হতে পারে। এর পেছনে দায়ী প্রশান্ত মহাসাগরের জলবায়ু পরিস্থিতি ‘এল নিনো’। গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে এল নিনো সক্রিয় হয়। এপ্রিলের মাঝামাঝি এটি নিষ্ক্রিয় হতে শুরু করে। স্প্যানিশ শব্দ এল নিনোর অর্থ হলো ‘লিটল বয়’ বা ‘ছোট ছেলে’। পূর্ব ও মধ্যাঞ্চলীয় প্রশান্ত মহাসাগর এলাকায় সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণতা যখন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উষ্ণ থাকে, তখন তাকে এল নিনো বলা হয়। আর এর বিপরীত অবস্থার নাম ‘লা নিনা’, যার অর্থ ‘লিটল গার্ল’ বা ‘ছোট মেয়ে’। পূর্ব ও মধ্যাঞ্চলীয় প্রশান্ত মহাসাগর এলাকায় সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণতা যখন স্বাভাবিকের চেয়ে কম থাকে, তখন তাকে লা নিনা বলা হয়। তবে এল নিনো নিষ্ক্রিয় হলেও তাপ কমতে আরও দেরি হতে পারে বলে মনে করেন আবহাওয়াবিদরা। তাদের মতে, গ্রীষ্ম মৌসুমে এবার উপমহাদেশ জুড়ে আবহাওয়া আগের চেয়ে তপ্ত থাকবে। আবার বর্ষা মৌসুমে লা নিনার সক্রিয়তার কারণে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টি হতে পারে। অন্যদিকে অত্যন্ত দুঃখের সংবাদ এই যে, দেশের পাঁচ জেলায় বজ্রপাতে মারা গেছেন ১১ জন। আহত হয়েছেন আরও ৯ জন। এর মধ্যে কুমিল্লার চান্দিনা, সদর দক্ষিণ, দেবিদ্বার ও বুড়িচং উপজেলায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দুই কৃষকসহ চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এদিন বজ্রপাতে রাঙ্গামাটিতে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে এবং সাতজন আহত হয়েছেন। অন্যদিকে সাজেকের লংথিয়ানপাড়ায় বাড়ির উঠানে কাজ করার সময় বজ্রপাতে এক ত্রিপুরা গৃহিণীর মৃত্যু হয়েছে। কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার ছড়িপাড়ায় দুই শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। মৃতরা হলেন দিদারুল ইসলাম ও মো. আরমান। স্থানীয় মগনামা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, ভোরে কোদাইল্লাদিয়া এলাকায় লবণক্ষেতে কাজ করার সময় বজ্রপাতে দিদার ঘটনাস্থলেই মারা যান। রাজাখালী ইউপি চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, সকালে মাঠে কাজ করার সময় বজ্রপাতে আরমান মারা যান। খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলায় আম কুড়াতে গিয়ে বজ্রপাতে এক স্কুলশিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। নিহত ইয়াসিন আরাফাত উপজেলার ইব্রাহিমপাড়ার বাসিন্দা। সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার দীঘিরপাড়া পূর্ব ইউনিয়নে বিকেলে বোরো ধান কাটার সময় এক কৃষকের মৃত্যু ও দুজন আহত হয়েছেন। বলাবাহুল্য, প্রকৃতি ও পরিবেশ ভারসাম্যহীন হওয়ায় এমনটি ঘটেছে। তাই আমাদের বেঁচে থাকার প্রয়োজনেই প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষায় বিশেষভাবে নজর দিতে হবে।
০৪ মে, ২০২৪

এক রাতে ১০ হাজার বজ্রপাতের রেকর্ড!
ভয়ংকর এক রাত কাটিয়েছে চীনের বিশেষ স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হংকংয়ের বাসিন্দারা। এক রাতে প্রায় ১০ হাজার বজ্রপাত হয়েছে অঞ্চলটিতে। সেখানকার আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত এসব বজ্রপাত হয়েছে। এই সময়ে আতঙ্কে ঘর থেকে বের হতে পারেননি কেউ। আবহাওয়া দপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার স্থনীয় সময় রাত ৯টা থেকে মুষলধারে ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয় হংকংয়ে। সেই সময় থেকে বুধবার বেলা ১১টা পর্যন্ত হংকংয়ে মোট ৯ হাজার ৪৩৭টি বজ্রপাত রেকর্ড করা হয়েছে। অধিকাংশ বজ্রপাত আঘাত হেনেছে দ্বীপের পূর্বাঞ্চলের এলাকাগুলোতে। টানা বজ্রপাতের জেরে দ্বীপটির পূর্বাঞ্চলের বেশ কয়েকটি বহুতল ভবনের ছাদে আগুন ধরেছে। ব্যাপক ঝড়বৃষ্টির কারণে হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ফ্লাইট পরিচালনা বাধাগ্রস্ত হয়েছে।  আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত হংকংয়ে ঝোড়ো আবহাওয়া অব্যাহত থাকবে। হংকংয়ের জলবায়ু অনুযায়ী, এই মাসটি বর্ষার আগমনী মাস। তাই বৃষ্টির শঙ্কায় হংকংয়ের বাসিন্দারা বাড়ি থেকে বের হলে আলাদা প্রস্তুতি নিয়ে বের হন। চীনের দক্ষিণাঞ্চলীয় গুয়াংডং প্রদেশে একটি মহাসড়কের অংশ ধসে অন্তত ২৪ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরও ৩০ জন। কয়েকদিনের বৃষ্টিপাতের পর গুয়াংডংয়ের মেইঝো শহর এবং ডাবু কাউন্টির মধ্যকার ওই মহাসড়কের ধসে পড়ে। বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মহাসড়কের ধসে পড়া অংশে ২০টি গাড়ি আটকে পড়ে। তবে স্থানীয় লোকজন দ্রুত তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। আহত ৩০ জনকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। সংবাদমাধ্যমে আসা ছবিতে দেখা গেছে, বিধ্বস্ত যানবাহনগুলো একটি গভীর গর্তে পড়ে আছে। উদ্ধারকারীরা সেখানে পড়ে থাকা গাড়িগুলোকে উদ্ধারের চেষ্টা করছে।  
০২ মে, ২০২৪

খরতাপ ও বজ্রপাত সহনীয় দৃষ্টিনন্দন তালসড়ক
‘তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে, সব গাছ ছাড়িয়ে, উঁকি মারে আকাশে’ রবিন্দ্রনাথ ঠাকুরের আকাশ ছুঁই ছুঁই সারি সারি তালগাছের সেদৃশ্য এখন আর গ্রামবাংলায় তেমন চোখে পড়ে না। বরেন্দ্র অঞ্চলে চৈত্র ও বৈশাখ মাসে যেন রুক্ষ হয়ে ওঠে প্রকৃতি। এরই মধ্যে রুক্ষ ভূমিতে প্রশান্তি ও শোভা বর্ধনকারী হয়ে উঠেছে তালগাছগুলো। খরতাপ ও বজ্রপাত সহনীয় পর্যায়ে রাখতে নওগাঁর নিয়ামতপুরের বিভিন্ন সড়কে লাগানো হয়েছে তালগাছ। স্থানীয় এরকম একটি সড়ক তালসড়ক হিসেবেই পরিচিতি পেয়েছে মানুষের মাঝে। তালগাছ শুধু যে উচ্চতায় সব গাছকে ছাড়িয়ে যায়, বিষয়টি এমন নয়। এ ছাড়াও বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গেও তালগাছ জড়িয়ে আছে ওতপ্রোতভাবে। আশির দশকে তালগাছের পাতা দিয়ে তালপাখার বাতাস না হলে মন জুড়াত না। বর্তমানে এসবের ব্যবহার কমেছে। কিন্তু আজও তালের পিঠা, গুড়ের পায়েস কিংবা তালের রুটি না খেলে বাঙালির মন জুড়ায় না। আর বজ্রপাতের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনতে তালগাছের তো কোনো বিকল্পই নেই। তাই বিভিন্ন সড়কের পাশে, বাড়ির পাশে, জমির ধারে লাগানো হচ্ছে তালগাছ।  সবুজ মাঠের বুক চিরে নিয়ামতপুর উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে হাজিনগর ইউনিয়নের ছোট্ট একটি গ্রাম ঘুঘুডাঙ্গা। মজুমদার মোড় থেকে ঘুঘুডাঙ্গা গ্রাম পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার রাস্তার দুই ধারে প্রায় ৬০০টি তালগাছ দাঁড়িয়ে আছে। বৃক্ষপ্রেমী ও ভ্রমণপিয়াসীরা আসেন ঘুঘুডাঙ্গা তালসড়কে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলে যাচ্ছে প্রকৃতি। আকাশে মেঘ জমলে মানুষ আতঙ্ক হয়ে পড়ে। উঁচু গাছ না থাকায় বজ্রপাতে মানুষের প্রায় মৃত্যু হচ্ছে। পরিবেশ থেকে তালগাছ হারিয়ে যাওয়ায় এ বজ্রপাত বেড়ে গিয়ে মানুষের মৃত্যু হচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তন, মাটির ক্ষয়রোধ, অনাবৃষ্টি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করতে তালগাছ রোপণের গুরুত্ব অপরিসীম। সাধারণত বজ্রপাত বেশি আঘাতহানে উঁচু গাছে। এ দিক থেকে তালগাছ বজ্রপাতের ঝুঁকি কমায়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নিয়ামতপুর হাজিনগর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান এবং বর্তমান নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও নওগাঁ-১ আসনের সংসদ সদস্য সাধন চন্দ্র মজুমদার ১৯৮৩ সালে পরিষদের দায়িত্ব পালনকালে হাজিনগরের মজুমদার মোড় থেকে ঘুঘুডাঙ্গা পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার রাস্তার দুই ধারে প্রায় ৭০০টি তাল বীজ রোপণ করেন। বেশ কিছু গাছ বিভিন্নভাবে মারা গেলেও এখনো প্রায় ছয়শ তালগাছ বেঁচে আছে। সংসদ সদস্য সাধন চন্দ্র মজুমদারের রোপিত সেই তালগাছগুলো বর্তমানে এক পায়ে দাঁড়িয়ে আছে। আজ সেই তালগাছগুলো বর্তমানে ৫০ থেকে ৬০ ফিট লম্বা হয়ে কালের সাক্ষী হয়ে রাস্তার দুই ধারে শোভাবর্ধন করে আসছে। এই তালগাছগুলো প্রতিদিন দেখতে অনেক দর্শক ও বৃক্ষপ্রেমীরা দেখতে আসেন। স্থানীয় সূত্রে ও বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) সূত্রে জানা যায়, বরেন্দ্র অঞ্চলে তালগাছসহ অন্যান্য বড় বড় গাছ হারিয়ে যাওয়ায় বজ্রপাত বেড়ে গিয়েছে। বজ্রপাত বেড়ে যাওয়ায় কৃষকরা মাঠে-ঘাটে কাজ করতে গিয়ে মারাও যাচ্ছেন। উপজেলার হাজিনগর ইউনিয়নের ঘুঘুডাঙ্গা গ্রামের ফারুক বলেন, গত কয়েক বছর থেকে এ সড়কটি তালতলি হিসেবে পরিচিত পেয়েছে। দূর-দুরান্ত থেকে মানুষ প্রতিদিনই দেখতে আসছে। তালতলিতে অস্থায়ীভাবে কয়েকটি দোকান হওয়ায় বেশ কয়েকজনের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। বৃক্ষপ্রেমী মোস্তাকিন হোসেন বলেন, ফেসবুক ও ইন্টারনেটে এ জায়গাটির কথা শুনেছি। তবে কখনো আসা হয়নি। সময় করে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ছুটে আসা। জায়গাটি অনেক সুন্দর। হাজিনগর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক বলেন, রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় তাল গাছের ছায়ায় এক অন্যরকম প্রশান্তি অনুভব করি। সড়কের দুই পাশে দেখা মিলবে সবুজের ফসলের ক্ষেত। এটি একদিকে যেমন পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করছে অন্যদিকে এ জায়গাটি পর্যটকদের কাছে এখন বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে পরিণত হয়েছে। উপজেলা চেয়ারম্যান ফরিদ আহমেদ বলেন, গ্রামে এখন তেমন তালগাছ দেখা যায় না। এখানে একসঙ্গে অসংখ্য তালগাছ এবং নির্মল পরিবেশ দেখে সত্যি মুগ্ধ হয়। তালগাছ শুধু সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য নয়, এখন প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
২১ মার্চ, ২০২৪

ঝড়-তুফান থেকে হেফাজতের দোয়া
মহান আল্লাহতায়ালা নানাবিধ আপদ-বিপদ ও বালা-মুসিবত দিয়ে বান্দাকে পরীক্ষা করেন। আর সব রকম বিপদ-আপদ থেকে পরিত্রাণ পেতে বিভিন্ন দোয়া ও জিকির-আজকার কোরআন-হাদিসে এসেছে। ঝড়-তুফান, মেঘের গর্জন, অধিক বৃষ্টির অনিষ্ট এবং বজ্রপাত থেকে হিফাজত থাকারও রয়েছে দোয়া। ঝড় তুফানের সময়ের দোয়া   ঝড়-তুফানের সময় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই দোয়াগুলো বেশি বেশি পাঠ করতেন— اللَّهُمَّ حَوَالَيْنَا وَلاَ عَلَيْنَا উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা হাওয়ালাইনা ওয়ালা আলাইনা’ অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমাদের থেকে ফিরিয়ে নাও, আমাদের ওপর দিও না।’ (বুখারি) এ ছাড়াও নবীজি এই দোয়াটিও পাঠ করতেন— اللهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ خَيْرَهَا، وَخَيْرَ مَا فِيهَا، وَخَيْرَ مَا أُرْسِلَتْ بِهِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا، وَشَرِّ مَا فِيهَا، وَشَرِّ مَا أُرْسِلَتْ بِهِ উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আস্আলুকা খায়রাহা ওয়া খায়রা মা ফিহা-ওয়া খায়রা মা উরসিলাতবিহি; ওয়া আউজুবিকা মিন শাররিহা ওয়া শাররি মা ফিহা ওয়া শাররি মা উরসিলাতবিহি।’ অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট এর মঙ্গল, এর মধ্যকার মঙ্গল ও যা নিয়ে তা প্রেরিত হয়েছে, তার মঙ্গল প্রার্থনা করছি এবং আমি আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি এর অমঙ্গল হতে, এর মধ্যকার অমঙ্গল হতে এবং যা নিয়ে তা প্রেরিত হয়েছে, তার অমঙ্গল হতে।’ মেঘের গর্জনের সময় এই দোয়া   হজরত আব্দুল্লাহ ইবন যুবাইর (রা.) যখন মেঘের গর্জন শুনতেন তখন কথা বলা বন্ধ করে দিতেন এবং কোরআনুল কারিমের এ আয়াত তিলাওয়াত করতেন— سُبْحَانَ الَّذِي يُسَبِّحُ الرَّعْدُ بِحَمْدِهِ، والـمَلائِكَةُ مِنْ خِيْفَتِهِ উচ্চারণ : ‘সুবহানাল্লাজি ইউসাব্বিহুর রা`দু বিহামদিহি ওয়াল মালাইকাতু মিন খিফাতিহি’ অর্থ : ‘পাক-পবিত্র সেই মহান সত্তা—তার প্রশংসা পাঠ করে বজ্র এবং সব ফেরেশতা, সভয়ে।’ (মুয়াত্তা) হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেছেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মেঘের গর্জন শুনলে বা বিদ্যুতের চমক দেখলে সঙ্গে সঙ্গেই এই দোয়া করতেন— اللَّهُمَّ لا تَقْتُلْنَا بِغَضَبِكَ ، وَلا تُهْلِكْنَا بِعَذَابِكَ ، وَعَافِنَا قَبْلَ ذَلِكَ উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা লা- তাক্বতুলনা- বিগজাবিকা ওয়া লা-তুলহিকনা- বিআ’জা-বিকা, ওয়া আ’-ফিনা- ক্বাব্লা জা-লিকা।’ অর্থ : ‘হে আমাদের প্রভু! তোমার ক্রোধের বশবর্তী হয়ে আমাদের মেরে ফেল না আর তোমার আজাব দিয়ে আমাদের ধ্বংস করো না। বরং এর আগেই আমাদের ক্ষমা ও নিরাপত্তার চাদরে আবৃত করে নিও।’ (তিরমিজি) বৃষ্টির দোয়া বৃষ্টি আল্লাহর রহমতের নিদর্শন। কিন্তু কখনো আবার বৃষ্টি আজাবেও রূপ নিতে পারে। বৃষ্টির কারণে ও প্রাকৃতিক বৈরিতার কারণে অনেকে কষ্টে পড়তে পারেন।  নানা ধরনের অসুবিধাও তৈরি হতে পারে। হজরত আয়েশা (রা.) বলেছেন, যখন আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হতো এবং ঝোড়ো বাতাস বইত—তখন রাসুল (সা.)-এর চেহারায় চিন্তার রেখা ফুটে উঠত। এই অবস্থা দেখে তিনি এদিক-সেদিক পায়চারী করতেন এবং এই দোয়া পাঠ করতেন— اللهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ خَيْرَهَا، وَخَيْرَ مَا فِيهَا، وَخَيْرَ مَا أُرْسِلَتْ بِهِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا، وَشَرِّ مَا فِيهَا، وَشَرِّ مَا أُرْسِلَتْ بِهِ উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা খাইরাহা ওয়া খাইরা মা-ফিহা ওয়া খাইরা মা-উরসিলাত বিহি, ওয়া আউজুবিকা মিন শাররিহা ওয়া শাররি মা-ফিহা ওয়া শাররি মা-উরসিলাত বিহি।’ অর্থ : ‘হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে এ বৃষ্টির কল্যাণ কামনা করছি, এ বৃষ্টিতে যেসব কল্যাণ রয়েছে সেগুলো কামনা করছি এবং এই বৃষ্টির মাধ্যমে প্রেরিত কল্যাণ প্রার্থনা করছি। আর এ বৃষ্টি ও বৃষ্টির মাধ্যমে প্রেরিত সব রকম অকল্যাণ ও বিপদাপদ থেকে পরিত্রাণ চাই।’ এরপর যখন বৃষ্টি হতো—তখন মহানবী (সা.) শান্ত হতেন। আয়েশা (রা.) আরও বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করেছি, লোকজন মেঘ দেখলে বৃষ্টির আশায় আনন্দিত হয়ে থাকে, আর আপনি তা দেখে চিন্তিত হয়ে পড়েন?’ এর জবাবে রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমি এ ভেবে শঙ্কিত হই—বৃষ্টি আমার উম্মতের ওপর আজাব হিসেবে পতিত হয় কি না। কেননা আগের উম্মতদের ওপর এ পদ্ধতিতে (বৃষ্টি বর্ষণের আকারে) আজাব পতিত হয়েছিল। ’ (বুখারি, হাদিস : ৩২০৬; মুসলিম, হাদিস : ৮৯৯; তিরমিজি, হাদিস : ৩৪৪৯) বজ্রপাত থেকে রক্ষার দোয়া   আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন বজ্রের আওয়াজ শুনতেন তখন এ দোয়া করতেন— اللَّهُمَّ لاَ تَقْتُلْنَا بِغَضَبِكَ وَلاَ تُهْلِكْنَا بِعَذَابِكَ وَعَافِنَا قَبْلَ ذَلِكَ উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা লা-তাক্বতুলনা বিগাজাবিকা, ওয়া লা-তুহলিকনা বিআজা-বিকা; ওয়া আ-ফিনা-ক্বাবলা জা-লিকা।’ অর্থ : ‘হে আল্লাহ, আপনি আমাকে আপনার গজব দিয়ে হত্যা করে দেবেন না এবং আপনার আজাব দিয়ে ধ্বংস করে দেবেন না। এসবের আগেই আপনি আমাকে পরিত্রাণ দিন।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩৪৫০) আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল (সা.) বজ্রপাতের শব্দ শুনলেই পাঠ করতেন, ‘সুবহানাল্লাজি ইয়ুসাব্বিহুর রা’অদু বিহামদিহি।’ ইবনে আবি জাকারিয়া থেকে বর্ণিত অন্য রেওয়ায়েতে আছে তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি বজ্রের আওয়াজ শুনে এ দোয়া পড়বে, ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি’, সে বজ্রে আঘাতপ্রাপ্ত হবে না।’ (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা : ২৯২১৩)  
০৮ ডিসেম্বর, ২০২৩

ওড়িশায় দুই ঘণ্টায় ৬১ হাজার বার বজ্রপাত
ভারতের পূর্বাঞ্চলের রাজ্য ওড়িশায় দুই ঘণ্টার মধ্যে ৬১ হাজার বার বজ্রপাতের ঘটনা ঘটেছে। এতে বজ্রপাতের কবলে পড়ে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ১২ জনের। এতে আহত হয়েছেন আরও ১৪ জন। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়ার।  সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর) রাজ্যের বিশেষ ত্রাণ কমিশনার (এসআরসি) সত্যব্রত সাহু এ তথ্য নিশ্চিত করেন। স্থানীয় সময় গত শনিবার এই বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। ভারতের আবহাওয়া বিভাগ (আইএমডি) জানায়, ওড়িশায় ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চরম আবহাওয়ার সতর্কতা জারি হয়েছে। আরও বজ্রপাত হতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া বঙ্গোপসাগরে সক্রিয় একটি ঘূর্ণিঝড় সঞ্চালন পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। এর প্রভাবে ওড়িশাজুড়ে ব্যাপক বৃষ্টিপাত হতে পারে। সপ্তাহের শেষের দিকে বৃষ্টির তীব্রতা বাড়তে পারে। নিহতের মধ্যে ৪ জন খুরদা জেলার, ২ জন বালাঙ্গির এবং আঙ্গুল, বৌধ, ঢেনকানাল, গজপতি, জগৎসিংহপুর ও পুরীর ১ জন করে মারা গেছেন।  এ ছাড়া গজপতি ও কান্ধমাল জেলায় বজ্রপাতে আটটি গবাদিপশু মারা গেছে।
০৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

বজ্রপাত রোধের সব প্রকল্প আকাশকুসুম
চলতি বছর সারা দেশে বজ্রপাতে প্রাণ হারিয়েছেন দুই শতাধিক মানুষ। অন্তত গত দশ বছরে বজ্রপাতে এ মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমানুপাতিক হারে বাড়ছে। ২০১৬ সালে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বজ্রপাতকে ‘দুর্যোগ’ ঘোষণা করে সরকার। এরপর এ দুর্যোগ ঠেকাতে উঠেপড়ে লাগে কয়েকটি মন্ত্রণালয়। নেওয়া হয় একের পর এক প্রকল্প। কিছুদিন পর সেই প্রকল্প ব্যর্থ হলে ফের নেওয়া হয় নতুন প্রকল্প। এভাবে প্রকল্প নেওয়া আর ব্যর্থতার মধ্যে কিছু মানুষের আর্থিক ভাগ্যের পরিবর্তনও ঘটে। এদিকে নিত্যনতুন প্রকল্পের ভিড়ে গচ্চা যাচ্ছে শত শত কোটি টাকা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চতর গবেষণা এবং দেশের বাস্তবতার নিরিখে প্রকল্প হাতে নিতে হবে। পাশাপাশি কেবল বড় প্রকল্পের দিকে না ঝুঁকে সচেতনতা বৃদ্ধির দিকেও নজর বাড়াতে হবে।
২৫ জুন, ২০২৩
X