ঈদের দিন ৩ ছেলে নিহত, তবুও বিচলিত নন হামাসপ্রধান
ঈদের দিন ইসরায়েলের হামলায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামীদের সংগঠন হামাসের প্রধান নেতা ঈসমাইল হানিয়ার তিন ছেলে ও নাতি-নাতনি প্রাণ হারিয়েছেন। হানিয়ার ছেলেদের লক্ষ্য করে, গাজার উত্তরপূর্বাঞ্চলের শাতি শরণার্থী ক্যাম্পে হামলা চালানো হলে হতাহতের এই ঘটনা ঘটে। এই খবর জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা। ছেলে ও নাতি-নাতনিদের মৃত্যুর বিষয়টি আলজাজিরাকে নিশ্চিত করেছেন হানিয়া নিজে। সংবাদমাধ্যমটিকে এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, ইসরায়েলি হামলায় কয়েকজন নাতি-নাতনিসহ তার তিন ছেলে হাজেম, আমির এবং মোহাম্মদ প্রাণ হারিয়েছেন। তবে সন্তানদের মৃত্যুতেও বিচলিত নন হামাস প্রধান।  আলজাজিরাকে তিনি বলেছেন, শহীদদের রক্ত এবং আহতদের যন্ত্রণার মাধ্যমে ফিলিস্তিনিরা আশা তৈরি করে, ভবিষ্যৎ তৈরি করে, মানুষ ও জাতির জন্য স্বাধীনতা ও মুক্তি তৈরি করে। তিনি আরও বলেন, ঈদ উপলক্ষ্যে আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে শাতি শরণার্থী ক্যাম্পে গিয়েছিলেন তার ছেলেরা। ওই সময় হামলা চালানো হয়। হামাস প্রধান দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, নেতাদের বাড়িঘর ও পরিবারের সদস্যদের ওপর হামলা চালিয়ে হামাসকে থামানো যাবে না।তিনি আরও বলেন, কোনো সন্দেহ নেই এই শত্রুরা প্রতিশোধ, হত্যা এবং রক্তপাতে উদ্বুদ্ধ হয়েছে এবং তারা কোনো আইন মানে না। চলমান যুদ্ধে এখন পর্যন্ত তার পরিবারের ৬০ সদস্য নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন হামাস প্রধান। ইসমাইল হানিয়া আরও বলেন, তার ছেলেদের হত্যার মাধ্যমে যুদ্ধের গতিপথ বদলাবে না এবং হামাস যুদ্ধবিরতির দাবি থেকে একটুও সরে আসবে না। ফিলিস্তিনি  এই নেতা আরও বলেন, যদি ইসরায়েল মনে করে সন্তানদের লক্ষ্য করার মাধ্যমে এই মুহূর্তে হামাসের অবস্থান পরিবর্তন করা যাবে, তাহলে তারা ভ্রান্তিতে আছে। ফিলিস্তিনের সন্তানদের চেয়ে আমার সন্তানদের রক্তের মূল্য বেশি নয়। ফিলিস্তিনের সকল শহীদ আমার সন্তান। গাজার মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, আল শাতি শরণার্থী ক্যাম্পে হানিয়ার ছেলেরা নিহত হয়েছেন। সেখানে বেসামরিকদের বহনকারী একটি গাড়িতে ইসরায়েলি বিমান থেকে হামলা চালানো হয়।ঈসমাইল হানিয়ার পরিবার-পরিজন গাজাতে থাকলেও নিরাপত্তার কারণে তিনি কাতারে বসবাস করেন। সেখান থেকেই দলটির সব কার্যক্রম পরিচালনা করেন ফিলিস্তিনি এই নেতা।  
১০ এপ্রিল, ২০২৪

বর্বরতা গড়াচ্ছে ৬ মাসে
ফিলিস্তিনের অধিকৃত গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার হামলার পাঁচ মাস পূর্ণ হচ্ছে আজ বৃহস্পতিবার। গত বছর ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এ সংঘাতে ধ্বংস্তূপে পরিণত হয়েছে উপত্যকাটি। ইসরায়েলের হামলায় বেড়েই চলেছে ফিলিস্তিনিদের লাশের সারি। সেই সঙ্গে দেখা দিয়েছে দুর্ভিক্ষাবস্থা। পবিত্র রমজান মাস শুরু হওয়ার আগে একটা যুদ্ধবিরতির জন্য চেষ্টা চালাচ্ছেন মধ্যস্থতাকারীরা। কিন্তু হামাস ও ইসরায়েল সরকারের অনড় অবস্থানের কারণে উপত্যকাটিতে স্থায়ী যুদ্ধবিরতির কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে পবিত্র রমজানেও রক্তের খেলায় মেতে উঠবে ইসরায়েল। গ্রন্থনা : ওয়াহেদুজ্জামান সরকার
০৭ মার্চ, ২০২৪

ইসরায়েলের পক্ষ নিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প
ফিলিস্তিন ইসরায়েল যুদ্ধ নিয়ে নীরবতা ভেঙেছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চলমান এ যুদ্ধে ইসরায়েলের পক্ষ নিয়েছেন তিনি। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বিষয়টি স্পষ্ট করেন। বুধবার (০৬ মার্চ) এনবিসি নিউজের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।  ফক্স নিউজের এক সাক্ষাৎকারে ইসরায়েলের পক্ষে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে সাবেক এ মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, হ্যাঁ। সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী এরপর জানতে চান, ইসরায়েল যে কায়দার অভিযান চালাচ্ছে তা তিনি সমর্থন করেন কি না। এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, আপনাকে সমস্যাটা শেষ করতে হবে।  গাজায় ইসরায়েলি হামলা বন্ধের জন্য যখন মার্কিন চাপ বাড়ছে ঠিক তেমন মুহূর্তে এসে সাবেক এ মার্কিন প্রেসিডেন্ট এমন মন্তব্য করলেন।  গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় অব্যাহতভাবে নির্মমতা চালিয়ে আসছে ইসরায়েল। দেশটির সেনাদের হামলায় ফিলিস্তিনের ৩০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতাকামীদের সংগঠন হামাসের হামলায় এক হাজার ২০০ লোক নিহত হয়েছে।  ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় না খেয়ে শিশুরা মারা যাচ্ছে বলেন জানিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান টেড্রোস আধানম ঘেব্রেইসাস। সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে তিনি জানান, গত রোববার আল আওদা ও কামাল আদওয়ান হাসপাতালের পরিদর্শন করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধিদল। গত অক্টোবরের শুরুর পর এবারই প্রথমবারের মতো হাসপাতাল দুটি পরিদর্শনের অনুমতি পেয়েছে সংস্থাটি। খাবার না পেয়ে ১০ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। শিশুদের মাঝে গুরুতর মাত্রার অপুষ্টি দেখা দিয়েছে। ইসরায়েলি হামলায় হাসপাতালের ভবন ধ্বংস হয়ে গেছে। গত রোববার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, কামাল আদওয়ান হাসপাতালে অপুষ্টি ও পানিশূন্যতায় ভুগে অন্তত ১৫ শিশু মারা গেছে। সোমবার ফিলিস্তিনের সরকারি বার্তা সংস্থা ওয়াফা জানিয়েছে, দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফা শহরের একটি হাসপাতালে রোববার ১৬তম শিশুর মৃত্যু হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান বলেন, উত্তর গাজায় অপুষ্টি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। শিশুরা অনাহারে মারা যাচ্ছে। জ্বালালি খাদ্য ও চিকিৎসা সরঞ্জামের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। হাসপাতালের ভবন ধ্বংস হয়ে গেছে। প্রায় ৩ লাখ মানুষ খুব নগণ্য পরিমাণ খাবার ও বিশুদ্ধ পানির ওপর বসবাস করছেন।
০৬ মার্চ, ২০২৪

ইসরায়েলি বর্বরতা রাফাহতে বিমান হামলায় নিহত শতাধিক
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার রাফাহতে সোমবার রাতে ভয়াবহ বিমান হামলা চালিয়েছে দখলদার ইসরায়েলি সেনারা। তাদের এ হামলায় রাফাহতে এক রাতে প্রাণ হারিয়েছেন একশর বেশি মানুষ। ফিলিস্তিন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি (পিসিআরসি) এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, ইসরায়েলিদের হামলায় অনেক ভবন ধসে পড়েছে। ধসে পড়া ভবনে এখন বহু মানুষ আটকা পড়ে আছে। এদিকে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ৭ অক্টোবরের পর থেকে ইসরায়েলি হামলায় ২৮ হাজার ৩৪০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন ৬৭ হাজার ৯৮৪ জন। খবর আলজাজিরা ও সিএনএনের। গত ৭ অক্টোবর হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়। এরপর চার মাসের বেশি সময় ধরে গাজায় বর্বরতা চালাচ্ছে তারা। ইসরায়েলি সেনারা প্রথমে গাজার উত্তরাঞ্চলে হামলা চালায়। ওই সময় তারা সাধারণ মানুষকে দক্ষিণাঞ্চলে চলে আসতে বলে। এরপর দক্ষিণাঞ্চলের খান ইউনিস থেকে সাধারণ মানুষকে রাফাহতে চলে যেতে বলে তারা। ইসরায়েলি বাহিনীর নির্দেশনা ও জীবন বাঁচাতে প্রায় ১৩ লাখ মানুষ রাফাহতে আশ্রয় নেন। কিন্তু এখন সেখানেই হামলা চালানো শুরু করেছে দখলদার ইসরায়েল। এদিকে সোমবার রাফাহ থেকে দুই জিম্মিকে জীবিত উদ্ধারের দাবি করেছে ইসরায়েল। এদিন সকালে দখলদার ইসরায়েলের সেনাবাহিনী এ তথ্য জানায়। এ ব্যাপারে এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি বাহিনী বলেছে, গত ৭ অক্টোবর এই দুজনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যায় ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। এরপর সোমবার রাতে রাফাহতে অভিযান চালিয়ে তাদের উদ্ধার করা হয়। আর এই অভিযানে অংশ নিয়েছিল প্রতিরক্ষা বাহিনী, জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা সিন বেত এবং ইসরায়েলি পুলিশ। যাদের উদ্ধার করা হয়েছে তাদের নামও উল্লেখ করেছে দখলদার ইসরায়েল। উদ্ধারকৃতরা হলেন, ৬০ বছর বয়সী ফার্নান্দো সিমন মারম্যান ও ৭০ বছর বয়সী লুইস হার। তারা দুজনই শারীরিকভাবে সুস্থ আছেন বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। এই দুই ইসরায়েলিকে তেল হাসমোরের সেবা মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

স্কুলশিক্ষার্থীরাও রেহাই পাচ্ছে না জান্তার বর্বরতা থেকে
মিয়ানমারে জান্তা বাহিনীর সাধারণ মানুষ হত্যা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। বিমান হামলা, গুলি করে মানুষ হত্যা, নির্যাতন, বাড়িঘরে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া থেমে নেই। চলমান সংঘাতের মধ্যে জান্তা বাহিনীর বর্বরতা আরও বেড়ে গেছে। এবার এক স্কুলে বিমান হামলা চালিয়েছে সরকারি বাহিনী। মিয়ানমারের কারেনি (কায়া) প্রদেশের একটি স্কুলে গত সোমবারের এ হামলায় ঘটনাস্থলেই চার শিশু নিহত ও ১০ শিশু গুরুতর আহত হয়। এদিকে গতকাল মঙ্গলবার ক্ষমতাসীন জান্তাকে মিয়ানমারের বেসামরিক লোকজনের ওপর হামলা করা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর সংস্থা নিরাপত্তা পরিষদের তিন স্থায়ী সদস্যসহ মোট ৯ সদস্য রাষ্ট্র। খবর ইরাবতীর। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোমবার কারেনি (কায়া) প্রদেশের ডেমোসো টাউনশিপের একটি স্কুলে মিয়ানমারের জান্তা বাহিনী যুদ্ধবিমানের মাধ্যমে বোমা হামলা চালায়। এই হামলায় অন্তত চার শিশু নিহত ও আরও ১০ শিশু গুরুতর আহত হয়। ডেমোসো শহরের একজন স্বেচ্ছাসেবক জানান, সোমবার স্থানীয় সময় সকাল ১০টার দিকে সেখানকার ডাউসিই গ্রামের স্কুলে দুটি যুদ্ধবিমান থেকে বোমাবর্ষণ এবং মেশিনগান থেকে গোলাবর্ষণ করা হয়। ওই এলাকায় জান্তা বাহিনী ও প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে কোনো সংঘর্ষ না হওয়া সত্ত্বেও এ হামলা চালানো হয়। ডাউসিই গ্রামটি ডেমোসো শহরের প্রায় ১০ মাইল পশ্চিমে কারেনি প্রদেশের রাজধানী লোইকাও যাওয়ার রাস্তায় অবস্থিত। এটি এখন আংশিকভাবে কারেনি ন্যাশনাল ডিফেন্স ফোর্সের (কেএনডিএফ) নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ওই স্বেচ্ছাসেবক বলেন, ‘হামলার শিকার স্কুলটিতে কিন্ডারগার্টেন থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের পড়ানো হয়। জান্তা বাহিনীর বিমান হামলা এবং গোলাবর্ষণ থেকে সুরক্ষার জন্য স্কুল কম্পাউন্ডে বোমা আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে। কিন্তু হামলাটি হঠাৎ করেই হয় এবং এই কারণে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার সুযোগ পায়নি শিশুরা।’ তিনি আরও বলেন, বোমা হামলায় বিদ্যালয়ের ৯০ শতাংশ ধ্বংস হয়ে গেছে এবং হামলায় আহত শিশুদের অবস্থা গুরুতর। ইরাবতী বলছে, যুদ্ধের কারণে অন্য এলাকা থেকে বাস্তুচ্যুত লোকরা এই ডাউসিই গ্রামে আশ্রয় নিয়েছিল এবং গ্রামের এই স্কুলে স্থানীয় ও বাস্তুচ্যুত উভয় শিশুরাই পড়াশোনা করত। এ ছাড়া জান্তা বাহিনীর যুদ্ধবিমানগুলো পার্শ্ববর্তী আরেকটি গ্রামেও বোমাবর্ষণ করে। সেই হামলায় হতাহতের সংখ্যা জানা যায়নি। কারেনি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র কো হপোন নাইং বলেন, ‘যুদ্ধবিমানগুলো সকালজুড়ে গ্রামের ওপর দিয়ে উড্ডয়ন করেছে এবং একপর্যায়ে স্কুলে বোমাবর্ষণ করে। মিয়ানমারের এ সংবাদমাধ্যমটি বলছে, অভ্যুত্থানের পর থেকে কারেনি প্রদেশে জান্তা বাহিনী ব্যাপকভাবে বোমা হামলা চালিয়েছে। কারণ এখানকার বাসিন্দারা ক্ষমতাসীন সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করেছিল। মূলত এ সরকারকে তারা অবৈধ বলে মনে করে থাকে। হামলা বন্ধের আহ্বান নিরাপত্তা পরিষদের: এদিকে মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন জান্তাকে বেসামরিক লোকজনের ওপর হামলা করা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর সংস্থা নিরাপত্তা পরিষদের তিন স্থায়ী সদস্যসহ মোট ৯ সদস্যরাষ্ট্র। এ রাষ্ট্রগুলো হলো যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, স্লোভেনিয়া, সুইজারল্যান্ড, ইকুয়েডর এবং মাল্টা। মঙ্গলবার বৈঠক ছিল নিরাপত্তা পরিষদের। সে বৈঠক শেষে একটি যৌথ বিবৃতি দেয় পরিষদ। বিবৃতিতে এই ৯ রাষ্ট্রের স্বাক্ষর ছিল। প্রসঙ্গত, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যরাষ্ট্রের সংখ্যা পাঁচটি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, চীন এবং রাশিয়া; অন্য ১০টি রাষ্ট্র অস্থায়ী। মঙ্গলবারের বিবৃতিতে স্বাক্ষর করা থেকে বিরত ছিল দুই স্থায়ী সদস্য চীন এবং রাশিয়াসহ ছয় সদস্যরাষ্ট্র। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা মিয়ানমারের বেসামরিক লোকজনের প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ২ হাজার ৬৬৯ ধারা অনুযায়ী, মিয়ানমারের সরকারকে বেসামরিকদের ওপর হামলা-গোলাবর্ষণ, ইচ্ছেমতো গ্রেপ্তার ও বন্দি করা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। সেইসঙ্গে মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট এবং স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চিসহ সব রাজনৈতিক নেতাদের অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানাচ্ছি।’ জাতিসংঘে নিযুক্ত মিয়ানমারের দূত ইউ কিয়াও মোয়ে তুন নিরাপত্তা পরিষদের এই বিবৃতিকে স্বাগত জানিয়ে পৃথক এক বিবৃতিতে বলেন, ‘মিয়ানমারের সাধারণ জনগণের পক্ষ থেকে এই বিবৃতির জন্য নিরাপত্তা পরিষদকে আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এর আগে ২০২২ সালেও ২৬৬৯ ধারা মেনে মিয়ানমারে ক্ষমতাসীন সামরিক জান্তাকে সহিংসতা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছিল নিরাপত্তা পরিষদ; কিন্তু যেহেতু এই আহ্বান বাস্তবায়নের জন্য শক্তি প্রয়োগের এখতিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের নেই; তাই জান্তা তাতে কর্ণপাত করেনি। মিয়ানমারের সাধারণ জনগণ মনে করে, নিরাপত্তা পরিষদের ক্ষমতা আরও বাড়ানো প্রয়োজন; যেন যে কোনো আহ্বান বাস্তবায়ন করার মতো শক্তি পরিষদের থাকে। আজ যদি নিরাপত্তা পরিষদের সেই ক্ষমতা থাকত, তাহলে মিয়ানমারের সাধারণ জনগণের জীবন রক্ষা পেত।’
০৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

ইসরায়েলি বর্বরতা গাজায় নিহত ছাড়াল ২৭ হাজার
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলি বর্বর হামলায় নিহতের সংখ্যা ২৭ হাজার ছাড়িয়েছে। আহত হয়েছেন আরও প্রায় ৬৬ হাজার মানুষ। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানায়। এদিকে লোহিত সাগরে যুক্তরাষ্ট্রের একটি কনটেইনার জাহাজে হামলা চালানোর দাবি করেছে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা। হুতিরা জানায়, জাহাজটির নাম কেওআই। এটি যুক্তরাষ্ট্র পরিচালনা করত। খবর আলজাজিরার। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ২৭ হাজার ১৯ জনে পৌঁছেছে। এ ছাড়া এ পর্যন্ত আহত হয়েছে ৬৬ হাজার ১৩৯ জন। এদিকে লোহিত সাগরে যুক্তরাষ্ট্রের একটি কনটেইনার জাহাজে হামলা চালানোর দাবি করেছে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা। হুতিরা জানিয়েছে, জাহাজটির নাম কেওআই, যেটি যুক্তরাষ্ট্র পরিচালনা করত। তবে শিল্প বিষয়ক জার্নাল ট্রেড উইন্ডস একটি সূত্রের বরাতে দাবি করেছে, লোহিত সাগরে এ ধরনের কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি। অবশ্য যুক্তরাজ্যের সমুদ্র নিরাপত্তা সংস্থা আমব্রে জানিয়েছে, এডেন উপসাগরে চলাচলকারী একটি জাহাজ জানিয়েছে, তাদের বোর্ডে একটি বিস্ফোরণ হয়েছে। তবে তারা জাহাজটির নাম জানায়নি। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, হুতিরা কেওআই নামের যে জাহাজটিতে হামলার দাবি করেছে, সেটি লাইবেরিয়ান পতাকাবাহী কনটেইনার জাহাজ। এটি পরিচালনা করে যুক্তরাজ্যের ওশেওনিক্স সার্ভিসেস। এই প্রতিষ্ঠানটি মার্লিন লুয়ান্ডা নামের তেলের ট্যাঙ্কার জাহাজ পরিচালনা করত। যেটি গত সপ্তাহে হুতিদের হামলার স্বীকার হয়েছিল। ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় দখলদার ইসরায়েলের বর্বর হামলার কারণে ইসরায়েলের জাহাজ লক্ষ্য করে নভেম্বরে হামলা চালানো শুরু করে হুতিরা। এই হামলা ঠেকাতে হুতিদের বিভিন্ন অবকাঠামো লক্ষ্য করে যৌথ হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। এর পর থেকে ব্রিটিশ ও মার্কিন জাহাজ লক্ষ্য করেও হামলা চালানো শুরু করে ইয়েমেনের শক্তিশালী এ সশস্ত্র গোষ্ঠী। হুতি বিদ্রোহীদের মুখপাত্র ইয়াহিয়া সারিয়া বুধবার রাতে জানান, যুক্তরাষ্ট্রের কেওআই জাহাজে ‘উপযুক্ত ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে হামলা চালানো হয়েছে।’ তিনি জানান, জাহাজটি দখলকৃত ফিলিস্তিনের বন্দরে যাচ্ছিল। মূলত ইসরায়েলকে কোনো রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না হুতিরা। এ কারণে ইসরায়েল উল্লেখ না করে ইসরায়েলের ভূখণ্ডগুলোকে ফিলিস্তিনের দখলকৃত অংশ হিসেবে অভিহিত করে থাকে তারা।
০২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

গাজায় বর্বরতা থামানোর দাবিতে উত্তাল বিশ্ব
গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতার শততম দিন ছিল গতকাল রোববার। ইসরায়েলি বাহিনীর ধারাবাহিক হামলায় প্রায় মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকাকে। ৭ অক্টোবর থেকে এখানে নিহত হয়েছে প্রায় ২৪ হাজার ফিলিস্তিনি। নিহতদের অর্ধেকই নারী ও শিশু। আহত হয়েছে প্রায় ৬০ হাজার মানুষ। ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে আছে অনেকে। গাজার ২৩ লাখ মানুষের প্রায় সবাই এখন উদ্বাস্তু জীবনযাপন করছে। একরকম না খেয়েই খোলা আকাশের নিচে দিন কাটাতে হচ্ছে তাদের। এতে ব্যাপক মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে উপত্যকাজুড়ে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আহ্বান সত্ত্বেও গাজায় হামলা থেকে সরে আসছে না ইসরায়েলি বাহিনী। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা শুরুর ৯৯তম দিনে যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে উত্তাল হয়ে ওঠে পুরো বিশ্ব। খবর বিবিসি ও আলজাজিরার। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের ৩০টিরও বেশি দেশে শনিবার হাজার হাজার ফিলিস্তিন-সমর্থক বিক্ষোভ করেন। গাজার প্রতি সংহতি জানিয়ে ডাক দেওয়া ‘গ্লোবাল ডে অব অ্যাকশন’-এর (বৈশ্বিক বিক্ষোভের দিন) অংশ হিসেবে রাজপথে নেমে তারা ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডটিতে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি কার্যকরের দাবি জানান। গাজা উপত্যকায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি কার্যকর এবং ইসরায়েলের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সমর্থনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে যুক্তরাজ্যভিত্তিক কয়েকটি সংগঠনের জোটের পক্ষ থেকে গ্লোবাল ডে অব অ্যাকশনের ডাক দেওয়া হয়। এতে সাড়া দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন, যুক্তরাজ্যের লন্ডনসহ বিশ্বের ৩০টি দেশের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ হয়েছে। শনিবার ছিল ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধের ৯৯তম দিন। এদিন এ বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হয়। ওয়াশিংটনে বিক্ষোভকারীদের অনেকে ফিলিস্তিনি পতাকা ওড়াচ্ছিলেন। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে একটি বড় অংশই ছিলেন তরুণ। তাদের অনেকেই ঐতিহ্যবাহী কেফিয়াহ পরেছিলেন। শনিবার ওয়াশিংটনের বিক্ষোভে অংশ নেওয়া লোকজন স্লোগান দেন—‘এখনই যুদ্ধবিরতি কার্যকর করুন’, ‘ফিলিস্তিনকে মুক্ত করুন’, ‘গাজায় যুদ্ধের অবসান করুন’। হোয়াইট হাউস থেকে সামান্য দূরে স্থাপিত একটি মঞ্চে কয়েক ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক আবেগঘন বক্তব্য দেন। গাজায় কীভাবে তাদের বন্ধু ও স্বজনদের হত্যা করা হয়েছে, তার বর্ণনা দেন। এই ফিলিস্তিনিদের মূল নিবাস গাজা উপত্যকায়, তবে এখন তারা মিশিগান, টেক্সাসসহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে থাকেন। ইসরায়েলকে সামরিক ও আর্থিক সহায়তা বন্ধ করে দিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রতি অনুরোধ জানান তারা। বক্তব্য দেওয়া ফিলিস্তিনিদের একজন সমবেত মানুষদের উদ্দেশে বলেন, ‘ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে চাপ দেওয়ার মধ্য দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন সহজেই এসব বেপরোয়া কর্মকাণ্ড থামাতে পারেন।’ গাজায় যুদ্ধবিরতির দাবিতে শনিবার লন্ডনেও বিক্ষোভ হয়। গত ৭ অক্টোবর গাজায় ইসরায়েলি হামলা শুরুর পর থেকে লন্ডনে সপ্তমবারের মতো এ বিক্ষোভ হলো। লন্ডনের বিক্ষোভে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শনিবার সেখানে প্রায় ১ হাজার ৭০০ পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছিল। ২৭ বছর বয়সী স্বাস্থ্যকর্মী মালিহা আহমেদ বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘আমরা ফিলিস্তিনিদের দেখাতে চাই যে, আমরা তাদের সঙ্গে আছি। তারা যেন আমাদের সরকারের বিপক্ষে আওয়াজ তুলতে পারে। ইসরায়েল যা করছে, তা চালিয়ে যেতে দিতে তারা খুব বড় ভূমিকা পালন করছে, যা হচ্ছে, তা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়।’ বিক্ষোভে মালিহার সঙ্গে তার পরিবারের সদস্যরাও অংশ নিয়েছিলেন। দিপেশ কোথার নামে ৩৭ বছর বয়সী এক বিক্ষোভকারী বলেন, ‘বিশ্ব কিছুই করছে না—এটি এভাবে বসে বসে দেখতে থাকাটা অত্যন্ত হতাশার। এ কারণে আমরা ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারের প্রতি আমাদের অসন্তোষ জানাতে এখানে এসেছি।’
১৫ জানুয়ারি, ২০২৪

গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতা থামার লক্ষণ নেই
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বর্বরতা থামার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। তিন মাস ধরে চলা এ যুদ্ধে একবার তিন দফার ৭ দিনের একটি যুদ্ধবিরতি দেখা গেলেও দুপক্ষের অনড় অবস্থানে কারণে নতুন কোনো যুদ্ধবিরতি বা যুদ্ধ থামার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। হামাস বলছে, যুদ্ধ না থামা পর্যন্ত যুদ্ধবিরতির কোনো আলোচনায় যাবে না তারা। অন্যদিকে ইসরায়েল স্থায়ী যুদ্ধবিরতির বিষয়টি নাকচ করে দিয়ে বলেছে, হামাসকে সম্পূর্ণ নির্মূল না করা পর্যন্ত তারা থামবে না। যদিও জিম্মিদের দ্রুত ফিরিয়ে আনার প্রবল চাপ সৃষ্টি হয়েছে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ওপর। তবে নিজ দেশের সব চাপ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আহ্বান উপেক্ষা করে গাজা উপত্যকায় হামলা জোরদার করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় মধ্য গাজায় শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরও ২৮৬ জন। ৭ অক্টোবরের পর থেকে নিহতের সংখ্যা প্রায় ২২ হাজার। খবর আলজাজিরার। ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডে অবিরাম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। টানা তিন মাস চালানো এই হামলায় নিহত হয়েছেন প্রায় ২২ হাজার ফিলিস্তিনি। ইসরায়েলি এই হামলায় ভূখণ্ডটিতে দেখা দিয়েছে মানবিক সংকট। আর এবার গাজা-মিশর সীমান্তের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিজেদের কাছে নিতে চায় ইসরায়েল। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এ ঘোষণা দিয়েছেন। গাজার ‘অসামরিকীকরণ’ নিশ্চিত করতেই এমন পদক্ষেপের কথা জানিয়েছেন তিনি। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী মধ্য ও দক্ষিণ গাজার গভীরে প্রবেশ করে লড়াই চালাচ্ছে। এমন অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু শনিবার বলেন, ইসরায়েলকে অবশ্যই মিশর-গাজা উপত্যকার সীমান্ত করিডোরের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিতে হবে যাতে ওই অঞ্চলের ‘অসামরিকীকরণ’ নিশ্চিত করা যায়। এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তৃতা দেওয়ার সময় নেতানিয়াহু বলেন, ‘ফিলাডেলফি করিডোর বা আরও সঠিকভাবে বলতে গেলে, (গাজার) দক্ষিণের ক্লোজিং পয়েন্ট—অবশ্যই আমাদের হাতে থাকতে হবে। এটি অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। এটি স্পষ্ট, অন্য কোনো ব্যবস্থা নিলে সেটি আমরা যে নিরস্ত্রীকরণ চাই তা নিশ্চিত করবে না।’
০১ জানুয়ারি, ২০২৪

গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতা : ২৪ ঘণ্টায় নিহত ২৫০
গাজা উপত্যকায় গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলা আরও ২৫০ সাধারণ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। এর মধ্যে মাগাজি শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন ১০০ জনেরও বেশি মানুষ। ইসরায়েলি এই হামলায় বহু পরিবার নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল তার হামলা জোরদার করার সঙ্গে সঙ্গে অঞ্চলটিতে গত ২৪ ঘণ্টায় ২৫০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। এর মধ্যে মাগাজি শরণার্থী শিবিরে ১০০ জনেরও বেশি লোককে হত্যা করেছে ইসরায়েল। সোমবার মধ্য গাজা উপত্যকার মাগাজি শরণার্থী শিবিরে এক নারী বলেছেন, ‘আমার পুরো পরিবার চলে গেছে। আমার পাঁচ ভাইয়ের সবাই চলে গেছে। তারা আমার কোনো ভাইকেই ছাড়েনি। … তাদের সবাই মারা গেছেন!’ সোমবার ইসরায়েলি হামলায় নিহত ব্যক্তিদের কাফনে জড়ানো মৃতদেহ স্পর্শ করার জন্য সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়েছিল শতশত ফিলিস্তিনিরা। নিহত এসব মানুষের মধ্যে অনেক নারী ও শিশু ছিল।  গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, মাগাজি ক্যাম্পের একটি আবাসিক চত্বরে ইসরায়েলি হামলায় সাতটি পরিবার নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।  মাগাজির বাসিন্দা জেয়াদ আওয়াদ আলজাজিরাকে বলেছেন, ‘ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বেসামরিক মানুষকে রেহাই দিচ্ছে না। আমার সন্তান আমাকে বলল, ‘আমাকে সাহায্য কর! কি হচ্ছে? আমি শ্বাস নিতে পারছি না।’ ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের মধ্যে চলমান লড়াইয়ের মধ্যে গাজায় ক্রিসমাসের আগের রাতে সবচেয়ে তীব্র বোমা হামলা করা হয়। ইসরায়েলি এই হামলায় বহু ভবন মাটিতে মিশে যায় এবং বহু মানুষ ধ্বংসস্তূপের স্তূপের নিচে আটকে পড়েন। আল জাজিরা বলছে, ইসরায়েলি হামলায় খান ইউনিস, বুরেইজ এবং নুসেইরাতের মতো এলাকায়ও বহু মানুষ নিহত হয়েছে। গত দিনে ইসরায়েলি হামলায় প্রায় ৫০০ মানুষ আহত হয়েছেন। দক্ষিণ গাজার রাফাহ থেকে আল জাজিরার তারেক আবু আজউম বলেছেন, মাগাজিতে হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১০৬ হয়েছে। গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এতে দেশটির ১২০০ মানুষ নিহত হয়েছেন, আর আহত হয়েছেন ৮ হাজার ৭৩০ জন। হামাসের হামলার জবাবে ৭ অক্টোবরই গাজায় পালটা হামলা শুরু করে ইসরাইল। এর পর আড়াই মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও গাজায় নির্বিচার হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরাইলি সেনারা। এ হামলা থেকে মসজিদ, বিদ্যালয়, হাসপাতাল, আশ্রয়শিবির - কিছুই বাদ যায়নি। ইসরাইলি হামলায় গাজায় এখন পর্যন্ত ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৭০ শতাংশই নারী ও শিশু। এ ছাড়া আহত হয়েছেন ৫৩ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। আর উদ্বাস্তু হয়েছেন গাজার ২৩ লাখের মধ্যে ১৮ লাখের বেশি বাসিন্দা।  
২৬ ডিসেম্বর, ২০২৩

গাজায় বর্বরতা ঘিরে অস্থিরতা বাড়ছে বিশ্বে
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের বর্বর হামলাকে কেন্দ্র করে সারা বিশ্বে অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ছে। প্রায় দুই মাস ধরে চলা এ বর্বরতার এখনো কোনো স্থায়ী সমাধান না হওয়ায় বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ছে। একে ঘিরে কোথাও কোথাও প্রতিবাদী ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারীর ওপর হামলার ঘটনা ঘটছে। কেউবা নিজের গায়ে আগুন ধরিয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। প্রতিবাদস্বরূপ কেউবা পর্যটকের ওপর হামলা চালাচ্ছেন। এ ধরনের ঘটনা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে আইফেল টাওয়ারের কাছে শনিবার পর্যটকদের ওপর হামলা চালান এক ব্যক্তি। হামলায় একজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন দুজন। ফরাসি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেরাল্ড ডারমানিন সাংবাদিকদের বলেন, হামলার ঘটনার পরপরই ২৬ বছর বয়সী এক তরুণকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তি ফরাসি নাগরিক। অন্য একটি হামলার পরিকল্পনার দায়ে এ সন্দেহভাজন ব্যক্তির ২০১৬ সালে চার বছরের কারাদণ্ড হয়েছিল। তিনি ফরাসি নিরাপত্তা সংস্থার নজরদারির তালিকায় (ওয়াচ লিস্ট) ছিলেন। তার মানসিক ব্যাধি থাকার কথাও জানা যায়। শনিবার রাতে আইফেল টাওয়ার থেকে কয়েক ফুট দূরে ওই হামলাকারী ছুরি নিয়ে এক পর্যটক দম্পতির ওপর হামলা করেন। এ হামলায় এক জার্মান পর্যটক নিহত হন। পরে হামলাকারীকে পুলিশ ধাওয়া করে। পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে হামলাকারী হাতুড়ি নিয়ে দুই ব্যক্তির ওপর হামলা চালান। ফরাসি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সন্দেহভাজন ব্যক্তি ‘আল্লাহু আকবর’ বলে চিৎকার করেছিলেন। তিনি পুলিশকে বলেন, ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা পরিস্থিতি নিয়ে তিনি ক্ষুব্ধ ছিলেন। আফগানিস্তান ও ফিলিস্তিনে অনেক মুসলমান মারা যাচ্ছেন। এসব বিষয় তিনি মেনে নিতে পারছিলেন না। তাই তিনি এ হামলা চালান। এ ঘটনার পর প্যারিসসহ ফ্রান্সের বড় শহরে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এর আগের দিন শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টায় ইসরায়েলি কনস্যুলেটের বাইরে নিজের গায়ে আগুন দেন ফিলিস্তিনপন্থি এক বিক্ষোভকারী। বর্তমানে তিনি গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। শুক্রবার স্থানীয় সময় দুপুর সোয়া ১২টার দিকে ইসরায়েলি কনস্যুলেটে যান ওই বিক্ষোভকারী। এরপর তিনি পেট্রোল দিয়ে নিজের গায়েই আগুন ধরিয়ে দেন। আটলান্টার পুলিশপ্রধান ড্যারিন শিয়েরবাউম এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তারা এখনো ওই ব্যক্তির পরিচয় শনাক্ত করতে পারেননি। তার অবস্থা গুরুতর। তাকে বাঁচাতে গিয়ে এক নিরাপত্তারক্ষীও আহত হন। ঘটনাস্থল থেকে ফিলিস্তিনের একটি পতাকা উদ্ধার করা হয়। তিনি বলেন, আমাদের ধারণা, কনস্যুলেট ভবন এখন নিরাপদ। আমরা এখানে কোনো হুমকি দেখছি না। এটি উগ্র রাজনৈতিক প্রতিবাদমূলক একটি কাজ। দক্ষিণ-পূর্ব যুক্তরাষ্ট্রে ইসরায়েলের কনসাল জেনারেল আনাত সুলতান-দাদন এবিসি নিউজকে বলেন, আমাদের অফিস ভবনের প্রবেশপথে আত্মহননের চেষ্টার ঘটনা জানতে পেরে আমরা দুঃখিত। এমন ভয়াবহভাবে ইসরায়েলের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করাটা দুঃখজনক। আমরা প্রতিটি জীবনের পবিত্রতা মূল্য দিয়ে থাকি। কয়েক দিন আগে যুক্তরাষ্ট্রের ভারমন্ট অঙ্গরাজ্যের বার্লিংটনে ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত তিন কলেজ শিক্ষার্থীকে গুলি করে আহত করা হয়। বার্লিংটন পুলিশ জানায়, পিস্তল নিয়ে এক ব্যক্তি ওই তিন কলেজ শিক্ষার্থীকে গুলি করেন। তারপর তিনি ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান। কর্তৃপক্ষ বলছে, এ গুলির ঘটনা একটি ঘৃণাপ্রণোদিত অপরাধ হিসেবে সন্দেহ করছেন তদন্তকারীরা। গুলিতে আহত তিন শিক্ষার্থী হলেন হিশাম আওয়ারতানি, কিন্নান আবদেল হামিদ ও তাহসিন আহমেদ। তারা চিকিৎসাধীন। তিনজনের মধ্যে একজনের আঘাত গুরুতর। পুলিশ জানিয়েছে, গুলিতে আহত তিন শিক্ষার্থীর মধ্যে দুজন মার্কিন নাগরিক। অন্যজন যুক্তরাষ্ট্রের বৈধ বাসিন্দা। তাদের সবার বয়সই ২০ বছর। পুলিশের তথ্যমতে, হামলাকালে ভুক্তভোগী দুই শিক্ষার্থী সাদা-কালো রঙের ঐতিহ্যবাহী ফিলিস্তিনি স্কার্ফ কেফিয়্যাহ পরেছিলেন। ফিলিস্তিনপন্থি অলাভজনক সংস্থা ইনস্টিটিউট ফর মিডল ইস্ট আন্ডারস্ট্যান্ডিং জানিয়েছে, হামলাকালে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা আরবি ভাষায় কথা বলছিলেন বলে জানা গেছে। হামলাকারী কোনো কথাবার্তা ছাড়াই তিন শিক্ষার্থীকে নিশানা করে চারটি গুলি করেন। পরে তিনি চিৎকার করতে শুরু করেন। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের হয়রানিও করেন।
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৩
X