ঈদের ছুটিতে ঢাকায় বায়ুদূষণ ৯ বছরে সর্বোচ্চ
ঈদের ছুটিতে রাজধানী ছেড়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছুটেছেন এক কোটিরও বেশি মানুষ। সে সময়ে অনেকটা ফাঁকা ঢাকায় সীমিত ছিল যানবাহন চলাচল। নির্মাণকাজ, কলকারখানা আর ইটভাটাও ছিল বন্ধ। তারপরও পাঁচ দিনের ঈদের ছুটিতে এবার সবচেয়ে বেশি বায়ুদূষণ ছিল রাজধানীতেই। গত ৯ বছরের মধ্যে যা ছিল সর্বোচ্চ। ২০১৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত ঈদের আগে-পরে ৭৫ দিনের তথ্য বিশ্লেষণ করে এ তথ্য জানিয়েছে স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)। বিশ্বব্যাপী বায়ুদূষণ পর্যবেক্ষণকারী যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা এয়ার ভিজ্যুয়ালের বায়ুমান সূচক (একিউআই) থেকে প্রাপ্ত ঈদের আগে-পরের পাঁচ দিনের উপাত্ত বিশ্লেষণ করা হয় ক্যাপসের গবেষণায়। কয়েক বছর ধরে ঈদ শুষ্ক মৌসুমের দিকে এগিয়ে আসাই এটির অন্যতম প্রধান কারণ বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। বায়ুদূষণের ছয়টি কারণ চিহ্নিত করেছে ক্যাপস। এগুলো হলো নির্মাণকাজ, ইটভাটা ও শিল্পকারখানা, যানবাহনের ধোঁয়া, আন্তঃদেশীয় দূষণ (নেপাল ও ভারত থেকে আসা দূষিত বাতাস), রান্নাঘরের ধোঁয়া ও শহুরে বর্জ্য। গবেষণায় দেখা যায়, বায়ুমান সূচক বিবেচনায় এ বছর ঈদের ছুটিতে বায়ু ছিল সবচেয়ে দূষিত। ৯ বছরের মধ্যে এবারের ঈদের পাঁচ দিনের গড় বায়ুমান সূচক ছিল ১৯০, যা অস্বাস্থ্যকর অবস্থাকে নির্দেশ করে। বায়ুমান বিবেচনায় ২০১৬ সালের ঈদুল ফিতরে বায়ুদূষণ ছিল সবচেয়ে কম। ওই বছর ঈদের পাঁচ দিনের গড় বায়ুমান সূচক ছিল ৬৭, যা গ্রহণযোগ্য বা সহনীয় বাতাসকে নির্দেশ করে। এবার ঈদের আগের দিন ও ঈদের দিন ঢাকার একিউআই ছিল যথাক্রমে ২০৫ ও ২০৪, যা ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ অবস্থাকে নির্দেশ করে। ৯ এপ্রিল একিউআই ছিল ১৮৬। ঈদের পরের দুদিন ছিল যথাক্রমে ১৭১ ও ১৮৩। সব মিলিয়ে পাঁচ দিনের তিন দিন অস্বাস্থ্যকর ও দুদিন খুব অস্বাস্থ্যকর বাতাসে ঈদ উদযাপন করেছে ঢাকাবাসী। কারণ হিসেবে গত সপ্তাহে ঢাকাসহ সারা দেশের উষ্ণ আবহাওয়া, তাপপ্রবাহ, বাতাসের উচ্চচাপ ও মন্থর গতিবেগ, উচ্চমাত্রার আর্দ্রতা ও একেবারেই বৃষ্টি না হওয়াকে চিহ্নিত করেছে গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি। ক্যাপস আরও জানায়, ২০১৬ থেকে ২০২৪ সালের ঈদ পর্যন্ত ঈদেও আগে-পরের ৭৫ দিনের মধ্যে ঢাকার মানুষ মাত্র ছয় দিন বিশুদ্ধ বায়ু পেয়েছে। মধ্যম মানের বাতাস পেয়েছে ৪১ দিন। সতর্কতামূলক বা সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর বাতাস ছিল ২১ দিন। খুব অস্বাস্থ্যকর বাতাস ছিল দুই দিন। ক্যাপসের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, অন্যবারের তুলনায় এবার কম মানুষ ঢাকার বাইরে গেছে। কম বৃষ্টিপাত, তাপপ্রবাহসহ বেশ কিছু আবহাওয়াগত কারণও রয়েছে। ঈদ ক্রমে শুষ্ক মৌসুমের দিকে এগিয়ে আসায় গত কয়েক ঈদেও বায়ুদূষণ বেশি লক্ষ করেছি। পরিবেশ অধিদপ্তরের বায়ুমান ব্যবস্থাপনার পরিচালক মো. জিয়াউল হক বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, এবার ঈদে ঢাকার বায়ুদূষণ তেমন কমেনি। অন্যতম কারণ বৃষ্টি না হওয়া। আরেকটি বড় কারণ এবার ঈদের ছুটিতেও অনেক ইটের ভাটা পুরোপুরি চালু ছিল। শহরের রাস্তার বর্জ্য পোড়ানোও বন্ধ হয়নি। তিনি আরও বলেন, আগামী ৩০ জুনের মধ্যে এক হাজার ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার পরিকল্পনা হচ্ছে। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থার সঙ্গে আলোচনা হবে দূষণের উৎস নিয়ন্ত্রণের জন্য।
১৭ এপ্রিল, ২০২৪

ঝড়বৃষ্টিতে ঢাকার বাতাসের কী অবস্থা
সকাল থেকেই রাজধানী ঢাকায় বৃষ্টি ঝরছে। এমন পরিস্থিতিতে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরেছে ঢাকার বাতাসে। রোববার (৩১ মার্চ) সকালে ঝড়বৃষ্টির পর শহরটির বাতাসে কিছুটা দূষণ কমেছে। আজ সকাল ৯টার দিকে আন্তর্জাতিক বায়ুমান প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের মানদণ্ড অনুযায়ী, ৮৬ স্কোর নিয়ে বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় ৩২ নম্বর অবস্থানে রয়েছে রাজধানী ঢাকা। দূষিত শহরের তালিকায় ২০১ স্কোর নিয়ে শীর্ষে রয়েছে ভারতের শহর দিল্লি। এ ছাড়া দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা থাইল্যান্ডের চিয়াং মাই শহরের স্কোর ১৭৯। আর ১৭১ স্কোর নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে পাকিস্তানের করাচি শহর, ১৬৬ স্কোর নিয়ে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে ভিয়েতনামের হ্যানয় শহর এবং পঞ্চম অবস্থানে থাকা মেক্সিকোর মেক্সিকো সিটির স্কোর ১৬১।   আইকিউএয়ারের মানদণ্ড অনুযায়ী, স্কোর ৫১ থেকে ১০০ হলে তাকে ‘মাঝারি’ বা ‘গ্রহণযোগ্য’ মানের বায়ু হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ১০১ থেকে ১৫০ স্কোরকে ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ ধরা হয়। স্কোর ১৫১ থেকে ২০০ হলে তা ‘অস্বাস্থ্যকর’ বায়ু। স্কোর ২০১ থেকে ৩০০ হলে তাকে ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ বায়ু ধরা হয়। ৩০১ থেকে তার ওপরের স্কোরকে ‘দুর্যোগপূর্ণ’ বা ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ ধরা হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে দিনের পর দিন ঢাকায় বায়ুদূষণ বেড়েই চলেছে। এর তিনটি প্রধান উৎস হলো- ইটভাটা, যানবাহনের ধোঁয়া ও নির্মাণ সাইটের ধুলো। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য অনুসারে, বিশ্বে বায়ুদূষণের ফলে স্ট্রোক, হৃদরোগ, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ, ফুসফুসের ক্যানসার এবং তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ বাড়ছে।
৩১ মার্চ, ২০২৪

দেশের বায়ুদূষণ বৃদ্ধি পাওয়ায় বাপার উদ্বেগ
সম্প্রতি দেশের বায়ুদূষণ বৃদ্ধি পাওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সভাপতি অধ্যাপক নুরমোহাম্মদ তালুকদার ও সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির। বাপার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সাক্ষরিত এক সংবাদ বিবৃতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। ওই বিবৃতিতে তারা বলেন, সম্প্রতি ‘বায়ুদূষণের দেশ হিসেবে শীর্ষে বাংলাদেশ, নগর হিসেবে দ্বিতীয় ঢাকা’ এই শিরোনামে একটি প্রতিবেদন গত ১৯ মার্চ প্রথম আলোসহ দেশের বিভিন্ন দৈনিক ও জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের ‘বৈশ্বিক বায়ুমান প্রতিবেদন ২০২৩’–এ এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।  প্রতিষ্ঠানটি বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা এই লাইভ বা তাৎক্ষণিক আইকিউএয়ারের সূচক একটি নির্দিষ্ট শহরের বাতাস কতটা নির্মল বা দূষিত, সে সম্পর্কে মানুষকে তথ্য দেয় ও সতর্ক করে। বায়ুদূষণের অন্যতম উপাদান পিএম ২.৫ বা অতিক্ষুদ্র বস্তুকণার উপাদান ধরেই এই বায়ুর মান নির্ণয় করা হয়েছে এ প্রতিবেদনে। ১৩৪টি দেশ ও অঞ্চলের প্রায় ৩০ হাজার নজরদারি স্টেশন থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আইকিউএয়ার প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।  সেখানে দেখা গেছে, ২০২৩ সালে বাংলাদেশের প্রতি ঘনমিটার বায়ুতে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণার (পিএম ২.৫) উপস্থিতি ছিল ৭৯ দশমিক ৯ মাইক্রোগ্রাম। এটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) বেঁধে দেওয়া মানদণ্ডের চেয়ে অন্তত ১৬ গুণ বেশি।  বাপা মনে করে, বিশ্বের দরবারে বাঙালি জাতির জন্য এটি অত্যন্ত অপমান ও লজ্জাজনক ঘটনা। সরকার বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে চরমভাবে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। মাত্রাতিরিক্ত বায়ুদূষণের কারণে দেশে শ্বাকষ্টজনিত রোগীর সংখ্যা ও এ রোগে মৃত্যু ভয়াবহ বৃদ্ধি পেয়েছে।  বায়ু দূষণের কারণগুলোর মধ্যে প্রাকৃতিক ও আবহাওয়াজনিত কারণ, নগর পরিকল্পনায় ঘাটতি, আইনের দুর্বলতা, আইন প্রয়োগের সীমাবদ্ধতা, ভৌগোলিক কারণ এবং জনসংখ্যার ঘনত্ব অন্যতম। রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ও নির্মাণকাজ থেকে ৩০ শতাংশ, ইটভাটা ও শিল্প কারখানা থেকে ২৯ শতাংশ, যানবাহন থেকে ১৫ শতাংশ আন্তঃদেশীয় বায়ুদূষণ থেকে ৯.৫%, গৃহস্থালী ও বা রান্নার চুলার কাজের থেকে ৮.৫% এবং বর্জ্য পোড়ানো থেকে ৮% বায়ুদূষণ ঘটে। বায়ুদূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তন একটি অন্যটির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। জীবাশ্ম জ্বালানির দহন ও শিল্পকারখানায় নির্গত ধোঁয়া প্রচুর পরিমাণে ব্ল্যাক কার্বন, কার্বন ডাই-অক্সাইড, মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড, ক্লোরোফ্লোরো কার্বন ও ওজন নির্গত করে, যা গ্রিনহাউস গ্যাস নামেও পরিচিত। এসব দূষকের মধ্যে ব্ল্যাক কার্বন, কার্বন ডাই-অক্সাইড ও মিথেনকে শর্ট লাইভ ক্লাইমেট পল্যুশন (SLCPs) বা স্বল্প আয়ুর জলবায়ু দূষক বলা হয়। এই গ্যাস এবং দূষকগুলো একদিকে যেমন বায়ুদূষণের জন্য দায়ী, তেমনি জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী। পর পর গত কয়েক বছর ধরে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে কার্যত কোনো পদক্ষে গ্রহণ না করায় আমরা তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করছি। দেশের বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি। বায়ুদূষণ রোধে বাপার সুপারিশ ও দাবিসমূহ- নির্মল বায়ু আইন-২০১৯ দ্রুত প্রণয়ন করতে হবে। নির্মাণকাজের সময় নির্মাণ স্থান ঘেরাও দিয়ে রাখতে হবে ও নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের সময় ঢেকে নিতে হবে। শুষ্ক মৌসুমে সিটি কর্পোরেশন, ফায়ার সার্ভিস, ওয়াসা ও পরিবেশ অধিদপ্তরের সমন্বয়ে দূষিত শহরগুলোতে প্রতি দিন দুই থেকে তিন ঘণ্টা পর পর পানি ছিটানোর ব্যবস্থা করতে হবে। অবৈধ ইটভাটাগুলো বন্ধ করে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার এবং বিকল্প ইটের প্রচলন বাড়াতে হবে। ব্যক্তিগত গাড়ি ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। পরিবেশ ক্যাডার সার্ভিস এবং পরিবেশ আদালত চালু ও কার্যকর করতে হবে।
২৩ মার্চ, ২০২৪

শুধুমাত্র পানি ছিটিয়ে বায়ুদূষণ রোধ সম্ভব নয়
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য তানভীর শাকিল জয় বলেছেন, আগামী ৫ বছরের মধ্যে সরকার পরিবেশ দূষণ ও বায়ুদূষণ রোধে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনবে। শুধুমাত্র পানি ছিটিয়ে বায়ুদূষণ রোধ সম্ভব নয়। আমাদের দীর্ঘমেয়াদি কার্যকর সমাধানের জন্য কাজ করতে হবে। বায়ুদূষণের উৎসগুলোকে বন্ধ করতে হবে। বর্জ্য পুড়িয়ে যেন বায়ুদূষণ না হয়, সেজন্য একে মূল্যবান সম্পদে পরিণত করতে হবে। যার আর্থিক মূল্য থাকবে।Ñফলে মূল্যবান বর্জ্য কেউ পোড়াবে না। গতকাল বুধবার দুপুরে প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের সেমিনার কক্ষে শিশু ও যুব ফোরাম আয়োজিত ‘শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য প্রয়োজন বিশুদ্ধ বাতাস’ শীর্ষক অংশীজন শুনানিতে তিনি এসব কথা বলেন। এ আয়োজনে সহযোগিতা করে বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) এবং ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ। তিনি বলেন, কেউ চাইলে সহজে বায়ুদূষণ নিরসন করতে পারবে না। বায়ুপ্রবাহ কোনো বাধা মানে না। এটি প্রাকৃতিক নিয়মে চলে। জিওপলিটিক্যাল দূষণগুলো নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে এরই মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক পরিবহন পরিহার করে পরিবেশবান্ধব ইলেকট্রিক ভেহিক্যাল ব্যবহার করতে হবে। সরকার ইলেকট্রিক ভেহিক্যাল নিয়ে কাজ শুরু করেছে। এ খাতে ভ্যাট-ট্যাক্স কমানোর প্রক্রিয়া চলছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পরিবহন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মো. হায়দার আলী (যুগ্ম সচিব) বলেন, বায়ুদূষণ রোধে প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ আরও জোরালো হওয়া উচিত। বায়ুদূষণ রোধের জন্য প্রাপ্ত বরাদ্দসমূহ সঠিকভাবে তদারকি ও যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ব্যক্তিগত পর্যায়েও বায়ুদূষণ রোধে কাজ করতে হবে। বসতবাড়ি ও কর্মস্থলের বর্জ্য সঠিক স্থানে এবং সঠিকভাবে নিষ্কাশন করতে হবে। সভাপতির বক্তব্যে বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, নির্মল বায়ু মানুষের অধিকার। কিন্তু ঢাকা শহরের অধিবাসীরা এ থেকে বঞ্চিত। তাই জীবাশ্ম জ্বালানি বন্ধ এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিশ্চিত করা দরকার। আরও বক্তব্য দেন ট্যুরিস্ট পুলিশ হেডকোয়ার্টারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাদিয়া ফারজানা, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট রাশেদুজ্জামান মজুমদার, পরিবেশ উদ্যোগের গবেষণা সমন্বয়ক ইঞ্জিনিয়ার মো. নাছির আহম্মেদ পাটোয়ারী, ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিসের নির্বাহী সমন্বয়কারী সোহানুর রহমান, ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের ডেপুটি ডিরেক্টর (ফিল্ড প্রোগ্রাম অপারেশন) মঞ্জু মারিয়া পালমা, স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মাহমুদা পারভীন প্রমুখ।
২১ মার্চ, ২০২৪

এক বছরের মধ্যেই বায়ুদূষণ কমবে : পরিবেশমন্ত্রী
বিশ্বের অন্যতম দূষিত নগরী ঢাকায় বায়ুদূষণের মাত্রা আগামী এক বছরের মধ্যে অনেকটা কমানো সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী। বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) সচিবালয়ে ওয়াইল্ডলাইফ অলিম্পিয়াড কর্মসূচির উদ্বোধন শেষে এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন পরিবেশমন্ত্রী। দেশ জুড়ে মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের নিয়ে “স্মার্ট তারুণ্য বাঁচাবে অরণ্য” শ্লোগানে প্রথমবারের মতো আয়োজিত হয়েছে ওয়াইল্ডলাইফ অলিম্পিয়াড। মন্ত্রী ওয়াইল্ড লাইফ অলিম্পিয়াড-২০২৪ এর লোগো, পোস্টার, বুকলেট এবং ওয়েবসাইট উদ্বোধন করেন। এসময় মন্ত্রী বলেন, আর কোনও বন্যপ্রাণীকে হারাতে চাই না।  পাঠ্যবই এবং পাঠ্যবইয়ের বাইরে বন্যপ্রাণী ও এদের আবাস্থল সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সচেতন করতে দেশব্যাপী ওয়াইল্ডলাইফ অলিম্পিয়াডের আয়োজন করা হয়েছে। নানা কারণে আমাদের পরিবেশ আজ সঙ্কটাপন্ন। বন্য হাতির দল থেকে শুরু করে পাখি, এমনকি সাগরের তলদেশের প্রাণীরা হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। গত একশো বছরে দেশ থেকে বিলুপ্ত হয়েছে ৩১ প্রজাতির বন্যপ্রাণী। বন্যপ্রাণীদের বিলুপ্তি ও বিপদাপন্ন  হওয়ার ফলে বিঘ্নিত হচ্ছে প্রকৃতির স্বাভাবিক ভারসাম্য, যা মানুষের ওপরেও বিরূপ প্রভাব ফেলছে। বন্যপ্রাণী ও বাস্তুতন্ত্র রক্ষা করা এখন তাই কেবল দরকারি নয়, বরং অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। তাই সকল পেশার মানুষের এগিয়ে আসার পাশাপাশি কিশোর-কিশোরীদেরও সচেতন করতে ওয়াইল্ডলাইফ অলিম্পিয়াড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। অলিম্পিয়াডের রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া উদ্বোধনের পাশাপাশি বন অধিদপ্তরের উদ্যোগে আয়োজিতব্য প্রথম ওয়াইল্ডলাইফ অলিম্পিয়াড এর বিস্তারিত উল্লেখ করেন মন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা ও তাঁর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার দেখানো পথ ধরে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে কার্যক্রম বৃদ্ধির লক্ষ্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অধীনে বন অধিদপ্তর বিভিন্ন সময়ে নানাবিধ কর্মসূচি পালন করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় টেকসই বন ও জীবিকা (সুফল) প্রকল্পের অধীনে দেশের মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমান পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ওয়াইল্ডলাইফ বা বন্যপ্রাণী নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে দেশব্যাপী ৬৪ জেলায় আজ থেকে আরম্ভ হতে যাচ্ছে ওয়াইল্ডলাইফ অলিম্পিয়াড, ২০২৪ এর রেজিস্ট্রেশন। পরিবেশমন্ত্রী জানান, এ বছর সারাদেশে প্রায় লক্ষাধিক শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে ৬৪টি ভেন্যুতে জেলা পর্যায়ের অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত হবে। দুইটি ক্যাটাগরিতে অষ্টম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির সকল মাধ্যমিক, উচ্চ-মাধ্যমিক, কারিগরি, মাদ্রাসা বা সমমান পর্যায়ের যেকোন শিক্ষার্থী স্কুল/কলেজ ক্যাটাগরিতে এই অলিম্পিয়াডে অংশ নিতে পারবে। জেলা পর্যায়ের বিজয়ীদের নিয়ে ঢাকায় আয়োজিত হবে জাতীয় পর্যায়ের অলিম্পিয়াড। বিজয়ীদের জন্য থাকবে লক্ষাধিক টাকার পুরস্কার। ৭ মার্চ, ২০২৪ তারিখ থেকে শুরু হয়ে আগামী ১০ মে, ২০২৪ তারিখ পর্যন্ত www.bfdwlo.org এই ঠিকানায় গিয়ে শিক্ষার্থীরা নিবন্ধন করতে পারবে। জেলা পর্যায়ের অলিম্পিয়াড হবে ১০ মে থেকে ১০ জুলাই পর্যন্ত। জেলা পর্যায়ের সকল অংশগ্রহণকারী ই-সার্টিফিকেট পাবে। জেলা পর্যায়ের বিজয়ীরা টি-শার্ট, বিজয়ী সার্টিফিকেট ও মেডেল পাবে। জাতীয় পর্বের বিজয়ীরা টি-শার্ট, বিজয়ী সার্টিফিকেট ও মেডেল পাবে। জাতীয় পর্বের প্রতি ক্যাটাগরির ১ম, ২য় ও ৩য় বিজয়ী পাবে যথাক্রমে ৫০হাজার, ৩০হাজার  ও ২০ হাজার টাকা।  সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পরিবেশ ও উন্নয়ন) ড. ফাহমিদা খানম, বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক মোঃ আমীর হোসাইন চৌধুরী, টেকসই বন ও জীবিকা প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক গোবিন্দ রায় প্রমুখ।    
০৭ মার্চ, ২০২৪

ঢাকায় বায়ুদূষণের কারণ জানালেন মেয়র তাপস
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেছেন, বাংলাদেশে যে জীবাশ্ম জ্বালানি আমরা ব্যবহার করি সেটি অত্যন্ত নিম্ন মানের এবং আমাদের দেশে বায়ুদূষণের মূল কারণই হলো নিকৃষ্ট মানের জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার। ঢাকা শহরে যে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার করা হয় সেটিতে সালফারের যে মাত্রা তা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের চেয়ে প্রায় ১০ গুণ বেশি। বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর ধানমন্ডি ১ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৬-তলা নতুন ভবন নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। মেয়র শেখ তাপস বলেন, আমরা দেখেছি, ইউরোপের জীবাশ্ম জ্বালানিতে সালফারের পরিমাণ থাকে ১৫ পিপিএম এর নিচে। সেখানে আমাদের দেশে তা ৫০ পিপিএম ঊর্ধ্বে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা ৫০০ পিপিএম ছাড়িয়ে যাচ্ছে। সেগুলো অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর এবং মানুষের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এ থেকে আমরা পরিত্রাণ চাই। সে লক্ষ্যে আমরা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন, পেট্রোবাংলা, মেঘনা পেট্রোলিয়াম, যমুনা পেট্রোলিয়াম, পদ্মা পেট্রোলিয়াম, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় এবং বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে আমরা চিঠি দিব। তারা যেন এর বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়। মেয়র বলেন, 'আমরা চাই না, ঢাকা শহরে এ ধরনের জীবাশ্ম জ্বালানি আর ব্যবহৃত হোক। আমরা চাই, ঢাকা শহরে ব্যবহৃত জীবাশ্ম জ্বালানিতে সালফারের পরিমাণ ৫০ পিপিএম এর নিচে থাকবে। তাহলেই বায়ুদূষণের মূল যে কারণ তা থেকে আমরা পরিত্রাণ পাব। আমাদের নতুন প্রজন্ম স্বাস্থ্যকর পরিবেশে বেড়ে উঠতে পারবে। ধুলোবালি নিয়ন্ত্রণে দক্ষিণ সিটি প্রয়োজনীয় কার্যক্রম চলমান রেখেছে উল্লেখ করে মেয়র শেখ তাপস বলেন, ধুলোবালি নিয়ন্ত্রণের জন্য সূচি অনুযায়ী আমরা কাজ করছি। প্রথমত, আমরা নিয়মিতভাবে মূল সড়কগুলোতে সকাল থেকে পানি দিচ্ছি। দ্বিতীয়ত, আমাদের যে উড়াল সেতু আছে সেগুলো আমরা সাকার যন্ত্র দিয়ে পুরোটা পরিষ্কার করছি। তারপরেও আমরা লক্ষ্য করি, নির্মাণাধীন ভবনসহ নানাবিধ সংস্কার কাজের ফলে ধুলোবালি উৎপন্ন হচ্ছে। আমরা অন্যান্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করছি যেন ভবন নির্মাণকালে অবশ্যই বেষ্টনী দিয়ে সেগুলোকে ঢেকে রাখা হয়। যাতে করে ধুলোবালি বাইরে না আসে।  আমাদের সড়ক, অবকাঠামো নির্মাণের কারণে যে ধুলো উৎপন্ন হয়, সেখানে যে মাটি অপসারণ করা হয় সেগুলো যেন দীর্ঘদিন পড়ে না থাকে সে লক্ষ্যে আমরা ঠিকাদারদের নির্দেশনা দিয়েছি। ধুলোবালি নিয়ন্ত্রণে আমাদের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

ঢাকার বায়ুদূষণ অনেক বেশি, স্বীকার করলেন মেয়র
এবারের শীতেও প্রায়ই বায়ুদূষণে বিশ্বের শীর্ষস্থানে থাকছে রাজধানী ঢাকা। গেল ২০২৩ সাল আট বছরের মধ্যে সবচেয়ে দূষিত বায়ুর বছর ছিল এ নগরী। এ দূষণ রোধে সিটি করপোরেশনের কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দেখা না গেলেও ঢাকার বায়ুদূষণের তীব্রতা স্বীকার করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘ঢাকা শহরে তাপমাত্রা  দিন দিন বেড়েই চলেছে। পাশাপাশি বর্তমানে ঢাকার বায়ুদূষণ অনেক বেশি।’ এ দূষণ রোধে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এলাকায় বায়ুদূষণ ও তাপমাত্রা কমাতে গবেষণার মাধ্যমে কারণ এবং সম্ভাব্য প্রতিকার খুঁজে বের করতে তিনটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তির সিদ্ধান্তও নিয়েছে সংস্থাটি।  বুধবার (১৭ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর গুলশান-২ নগর ভবনের হলরুমে ২য় পরিষদের ২৫তম করপোরেশন সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।  আতিকুল ইসলাম বলেন, আমরা ইতিমধ্যে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি শুরু করেছি। তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে ও বায়ুদূষণ রোধে এটি ভূমিকা রাখবে। তিনটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এই চুক্তির ফলে গবেষণা করে বায়ুদূষণ রোধে এবং তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে আরও কি কি করণীয় সে বিষয় সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হবে। শহরের পরিবেশ রক্ষায় এই সমন্বিত উদ্যোগ ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। তিনটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে সেন্টার ফর অ্যাটমসফরিক পলিউশন স্টাডিজ, ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ, ঢাকা নর্থ কমিউনিটি টাউন ফেডারেশন। ডিএনসিসির সচিব মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিকের সঞ্চালনায় অন্যান্যের সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর খায়রুল আলম, প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগে. জেনা. মুহ. আমিরুল ইসলাম, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এস এম শরিফ-উল ইসলাম, ডিএনসিসির সকল বিভাগীয় প্রধান ও ডিএনসিসির কাউন্সিলরবৃন্দ এবং অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। 
১৭ জানুয়ারি, ২০২৪

সমন্বিত পদক্ষেপে বায়ুদূষণ কমানো সম্ভব
মানুষের জীবনধারণের জন্য অতি প্রয়োজনীয় উপাদান বাতাস আজ দূষিত হয়ে মানুষের অকাল মৃত্যু ছাড়ায় নানারকম রোগব্যাধির সৃষ্টি করছে। বছরের বেশিরভাগ সময়ে ঢাকার বাতাসের এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সে (একিউআই) যা থাকে তা সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য ‘অস্বাস্থ্যকর’। শীতকালের শুরু থেকেই রাজধানী ঢাকায় আরও বেড়ে চলে দূষণের মাত্রা। ঢাকার বাতাসে দূষিত কণাবস্তু উপস্থিতির মাত্রা কখনো বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ডের চেয়ে ২৫ গুণ বৃদ্ধি পায়। বাংলাদেশের অন্যান্য শহরের চেয়ে রাজধানী ঢাকার বায়ুদূষণের মাত্রা সবসময়ে অনেক বেশি থাকে, যা কখনো সহনীয় পর্যায়ের চেয়ে ছয়গুণ পর্যন্ত বেড়ে যায়। বাংলাদেশে এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স নির্ধারণ করা হয় দূষণের পাঁচটি বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে। ঢাকার বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা (পিএম ২৫) দূষণের প্রধান উৎস। ‘স্টেট অব গ্লোবাল এয়ার’-এর মতে, মানবদেহের জন্য দূষণের অসহনীয় উপাদান মাত্রা পিএম-২.৫ নিয়ে বাংলাদেশের প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ বায়ুদূষণের মধ্যে বাস করছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান এনার্জি পলিসি ইনস্টিটিউট ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোর মতে, ঢাকার বায়ুদূষণে সর্বোচ্চ দায়ী নির্মাণকাজ (৩০ শতাংশ)। মানুষের প্রয়োজনে রাজধানীতে গড়ে উঠছে নানা অবকাঠামো। আর এসব নির্মাণকাজে ব্যবহৃত ইট, বালি, সিমেন্ট খোলা ট্রাকে করে এক জায়গা থেকে অন্যত্র স্থানান্তর এবং নির্মাণকাজ চলাকালে অসতর্কতার কারণে বাতাসে ছড়াচ্ছে সূক্ষ্ম বিষাক্ত কণাবস্তু। এরপর বায়ুদূষণের শতকরা হারে রয়েছে ইটভাটা, যা মোট দূষিত পদার্থের ২৯ শতাংশ। রাজধানীর অনতিদূরে আইনের পরিপন্থি ইটভাটা নির্মাণের কারণে ভাটা থেকে লোকালয়ে নির্গত কালো ধোঁয়া বাতাসে প্রতিনিয়ত বিষ ছড়াচ্ছে। নিয়ন্ত্রণহীন মোটরগাড়ির কালো ধোঁয়া ১৫ শতাংশ বায়ুদূষণের কারণ হিসেবে চিহ্নিত। এ ছাড়া গৃহস্থালির কাজ ও অন্যান্য উৎস থেকে বায়ুদূষণের হার ৯ শতাংশ করে। বর্জ্য পোড়ানো থেকেও ৮ শতাংশ বায়ুদূষণ হতে পারে। এসব ধুলোবালির দূষিত অংশ বাতাসের নিম্নস্তরে ২০০-৩০০ ফুট ওপরে অবস্থান করে। রাজধানী ঢাকার বাতাসে মিশ্রিত আছে নানা ধরনের সূক্ষ্ম রাসায়নিক বস্তুকণাসহ কার্বন-ডাইঅক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড, সিসা, নাইট্রোজেন, হাইড্রোকার্বন, বেনজিন, সালফার, অ্যামোনিয়া ও ফটো-কেমিক্যাল অক্সিডেন্টস। এসব ক্ষতিকর উপাদানগুলোর ব্যাপক হারে নিঃসরণ শহরে বসবাসকারী বিশাল জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ। অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও দ্রুত শিল্পায়নের এই অশুভ প্রতিযোগিতায় পড়ে প্রাকৃতিক পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে, লাগামহীনভাবে বেড়ে চলছে দূষণ। ২০২০ সালে হাইকোর্টের দেওয়া নির্দেশনার মধ্যে ছিল— ঢাকা শহরের মধ্যে বালু বা মাটি বহনকারী ট্রাককে ঢেকে পরিবহন করা, নির্মাণ সাইট ঢেকে রাখা, ঢাকার সড়কে পানি ছিটানো, মেগা প্রজেক্টের নির্মাণকাজে পরিবেশ আইন মেনে চলা, কালো ধোঁয়া নির্গমনকারী গাড়ি জব্দ করা ও পুরোনো গাড়ি চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ, অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করে প্রতিবেদন দাখিল, অনুমতি ছাড়া টায়ার পোড়ানো এবং ব্যাটারি রিসাইক্লিং বন্ধ করা, মার্কেট ও দোকানের বর্জ্য প্যাকেট করে সিটি করপোরেশনের হাতে হস্তান্তর। এসব নির্দেশনার অনেকটাই আজও বাস্তবায়িত হয়নি। নির্মাণাধীন নতুন ভবন ও রাস্তাঘাট থেকে উৎপন্ন ধুলোবালি নিয়ন্ত্রণসহ শিল্পকারখানাকে শহর থেকে দূরে স্থাপন, কালো ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণসহ শিল্পবর্জ্যের নিরাপদ অপসারণ নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যক। ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করাসহ যানবাহনে সিসামুক্ত জ্বালানি ব্যবহার নিশ্চিত করা জরুরি। ইটভাটা স্থাপন এবং ভাটায় চিমনি ব্যবহারের মাধ্যমে কালো ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণে যথাযথ নিয়ম মেনে চলার নিশ্চয়তা বিধান আবশ্যক। জীবাশ্ম জ্বালানির বদলে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। বায়ুদূষণ হচ্ছে এক ধরনের ‘সাইলেন্ট কিলার’। বাইরের দূষণ ছাড়াও ঘরের ভেতরের বায়ুদূষণ রোধে যত্নশীল হওয়া প্রয়োজন। ঘরের ভেতরে দূষণে জন্মের প্রথম মাসে বিশ্বে প্রায় পাঁচ লাখ শিশুর মৃত্যু হয়। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুসারে বায়ুদূষণের কারণে স্ট্রোক, হৃদরোগ, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ, ফুসফুসের ক্যানসার, শ্বাসযন্ত্রের তীব্র সংক্রমণের কারণে বাংলাদেশে প্রতিবছর ৮৮ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করে। ইউনিসেফের উদ্যোগে সরকারের রোগতত্ত্ব ও রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআর, আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র এবং আইসিডিডিআর,বি এক গবেষণার ফলাফলে জানায়, বাংলাদেশে সাড়ে তিন কোটির অধিক শিশু শরীরে ক্ষতিকারক সিসা বয়ে বেড়াচ্ছে। সেজন্য শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন বলছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশে অকালমৃত্যুর অন্তত ২০ শতাংশের জন্য দায়ী বায়ুদূষণ। বায়ুদূষণের ফলে শারীরিক ও মানবিক প্রভাব নিয়ে তাদের গবেষণা মতে, রাজধানীতে যে পরিমাণ বায়ুদূষণ হয়, তা বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা নির্ধারিত গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে ১৫০ শতাংশ বেশি। গবেষণা প্রতিষ্ঠান এনার্জি পলিসি ইনস্টিটিউট ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো মতে জানা যায়, ২০২২ সালে বিশ্বে সবচেয়ে বায়ুদূষণকারী বাংলাদেশে বায়ুদূষণের ফলে গড়ে সাত বছর করে মানুষ আয়ু হারায়। বিচ্ছিন্নভাবে কোনো দেশের সংশ্লিষ্ট সংস্থার গৃহীত পদক্ষেপ গ্রহণে বায়ুদূষণ রোধ সম্ভব নয়। এজন্য প্রয়োজন সমন্বিত জাতীয় উদ্যোগ। ঢাকার বাতাস দূষণমুক্ত রাখতে বেশ কিছু আইন থাকলেও এর বাস্তব প্রয়োগ কম। বায়ুদূষণ রোধে নানা ধরনের প্রযুক্তিগত পদক্ষেপ রয়েছে। বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-১৯৯৫-এর ৬ নম্বর ধারার উপধারা (১) মোতাবেক, পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর ধোঁয়া নিঃসরণকারী যানবাহন পরীক্ষা ছাড়া চালানো যাবে না। বিধি লঙ্ঘনকারীকে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা এক বছর কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ড দেওয়ার বিধান রয়েছে। ইটভাটা দূষণরোধ আইন বলছে, জেলা প্রশাসন থেকে লাইসেন্স না নিয়ে ইট প্রস্তুত করলে অনধিক এক বছরের কারাদণ্ড বা ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। বায়ুদূষণ কমাতে দেশে ‘ক্লিন এয়ার অ্যাক্ট’ থাকলেও পরিবেশ অধিদপ্তরের আইন প্রয়োগে বায়ুদূষণ রোধে কম প্রভাব পড়ে। বৃক্ষনিধনের জন্যও রয়েছে আইনগত শাস্তির ব্যবস্থা, যার প্রয়োগ নেই বললেই চলে। দূষিত বাতাস গ্রহণ করে অলক্ষ্যে মানুষ এমনকি গোটা জীবজগৎ মৃত্যুর পথে এগিয়ে যায়। পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের যথাযথ প্রয়োগ সুনিশ্চিত করতে পরিবেশ অধিদপ্তরের কার্যকর ভূমিকা অত্যাবশ্যক। বায়ুদূষণকে স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে সরকারি, বেসরকারি সেবাদানকারী সংস্থাসমূহের সমন্বিত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের বিকল্প নেই।   লেখক: অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ও প্রকৌশলী
০৬ জানুয়ারি, ২০২৪

বায়ুদূষণ রোধে কৃত্রিম বৃষ্টি ঝরাল পাকিস্তান
পাকিস্তানের লাহোরে বায়ুদূষণ মোকাবিলায় প্রথমবারের মতো কৃত্রিম বৃষ্টি ঝরিয়েছে পাঞ্জাবের প্রাদেশিক সরকার। গতকাল শনিবার (১৬ ডিসেম্বর) লাহোরের ১০টি এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে এই বৃষ্টি ঝরানো হয়। পাঞ্জাবের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মুখ্যমন্ত্রী মহসিন নকভি সাংবাদিকদের বলেছেন, লাহোরের অন্তত ১০টি এলাকায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি ঝরানো হয়েছে। বর্তমানে এই কৃত্রিম বৃষ্টির প্রভাব পর্যবেক্ষণ করছে কর্তৃপক্ষ। বায়ুদূষণে বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় প্রায়ই শীর্ষে উঠে আসে লাহোর। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে লাহোরের বায়ুর মানের আরও অবনতি হয়েছে। বায়ুর মান উন্নত করতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া এবং অতিরিক্ত দুদিন স্কুল বন্ধ রাখে পাঞ্জাব সরকার। তবে কোনো কিছুই কাজে না আসায় কৃত্রিম বৃষ্টির কৌশল অবলম্বন করেছে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ। মুখ্যমন্ত্রী মহসিন বলেন, কৃত্রিম বৃষ্টি সৃষ্টির উপকরণ উপহার হিসেবে সংযুক্ত আরব আমিরাত দিয়েছে। প্রায় ১০ থেকে ১২ দিন আগে দুটি বিমানে করে ৪৮টি ফ্লেয়ার নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের কয়েকটি দল পাকিস্তানে আসে। শনিবার রাতের মধ্যেই কৃত্রিম বৃষ্টির প্রভাব মূল্যায়ন হয়ে যাবে বলেও জানান তিনি। এই বৃষ্টির নিরাপত্তার দিকটি নিয়ে লাহোরের জনসাধারণকে আশ্বস্ত করেছেন মহসিন। তিনি বলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতে বছরে এক হাজারের বেশি এই ধরনের বৃষ্টির মিশন পরিচালনা করা হয়। যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারতসহ আরও কয়েক ডজন দেশে একই ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করে থাকে।
১৭ ডিসেম্বর, ২০২৩

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা / বায়ুদূষণ রোধে কার্যকর নবায়নযোগ্য জ্বালানি
বায়ুদূষণ কমাতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার কার্যকর সমাধান হতে পারে বলে মনে করেন পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা। তারা বলেন, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ বাড়িয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের পাশাপাশি বায়ুদূষণ ঘটায়। গতকাল সকালে রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস), বারসিক এবং ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এসব কথা বলেন। সহ-আয়োজক হিসেবে ছিল পরিবেশ উদ্যোগ, ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি), বাংলাদেশ প্রকৃতি সংরক্ষণ জোট (বিএনসিএ) এবং সেন্টার ফর ল অ্যান্ড পলিসি অ্যাফেয়ার্স (সিএলপিএ)। মূল বক্তব্যে ক্যাপসের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বায়ুদূষণ রোধে পাঁচটি সুপারিশ তুলে ধরেন। আইপিডির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, কুইক রেন্টালসহ বিভিন্ন জীবাশ্ম বিদ্যুৎভিত্তিক জ্বালানি কেন্দ্রে সরকার যে পরিমাণ ব্যয় করেছে, নবায়নযোগ্য জ্বালানির উন্নয়নে সে পরিমাণ বিনিয়োগ বা গবেষণা হয়নি। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক মিহির বিশ্বাস বলেন, বিদ্যুৎ বিভাগ ও স্রেডার উচিত নবায়নযোগ্য শক্তিকে প্রসারিত করা। ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের আরবান প্রোগ্রামের টেকনিক্যাল কো-অর্ডিনেটর ডমিনিক সেন্টু গমেজ বলেন, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধির বিকল্প নেই। সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন পরিবেশ উদ্যোগের গবেষণা সমন্বয়ক নাছির আহম্মেদ পাটোয়ারী, বিএনসিএর সদস্য সচিব আনোয়ারুল হক, অ্যাডভোকেট রাশেদুজ্জামান মজুমদার, সিএলপির সেক্রেটারি সৈয়দ মাহবুবুল আলম তাহিন, বারসিকের প্রকল্প পরিচালক কামরুজ্জামান সাগর, সেন্টার ফর গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (সিজিইডি) নির্বাহী পরিচালক আব্দুল ওয়াহাব প্রমুখ।
০৬ আগস্ট, ২০২৩
X