মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে মীর্জাপুর চা বাগানে ম্যানেজার ও অফিসে হামলার ঘটনা ঘটেছে। কিছু উত্তেজিত চা শ্রমিক এমনটি ঘটায় বলে জানা যায়। এতে ব্যবস্থাপক, ডেপুটি ব্যবস্থাপক, সহকারী ব্যবস্থাপক ও কয়েকজন গার্ড আহত হয়েছেন।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার (৯ মে) বিকেল ৪টা থেকে চা বাগান বন্ধ ঘোষণা করেছেন মালিক পক্ষ।
মির্জাপুর চা বাগানের ব্যবস্থাপক সাইদুজ্জান জানান, মির্জাপুর চা বাগানের পঞ্চায়েত নেতা দেশান্ত কানুর ভাই একটি মামলায় পলাতক রয়েছেন। তার ভাইয়ের কাজটি বদলি কাউকে দেওয়ার জন্য দেশান্ত কানু তাদের অনুরোধ করেন। কিন্তু তার ভাইয়ের অনুমতি ছাড়া অন্য কাউকে এ কাজে বদলি দেওয়া যাবে না জানালে তিনি উত্তেজিত হয়ে যান। একই সঙ্গে তিনি বাগানের প্রভিডেন্ট ফান্ড নিয়ে শ্রমিকদের উত্তেজিত করে তোলেন। আগে শ্রমিকদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা মাসে কাটা হতো। এখন বিভিন্ন বাগানে সাপ্তাহে কাটা হচ্ছে। এই হিসেবে তাদের বাগানেও তা সপ্তাহে কাটা শুরু করেন। ইতোমধ্যে প্রায় ৩০ ভাগ শ্রমিক তা দিয়েও দিয়েছেন।
তিনি বলেন, সপ্তাহে বা মাসে এখানে শ্রমিকদের কোনো লোকসান নেই। বরং তাদের জন্য এটি ভালো। এই বিষয়টিকে সামনে এনে সাধারণ শ্রমিকদের বিভ্রান্ত করে দেশের প্রথম শ্রেণির একটি চা বাগানকে অশান্ত করার পাঁয়তারা করা হয়। এ প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে কিছু শ্রমিক নিয়ে তাদের গাড়ি ও অফিসে হামলা করা হয়। এতে তিনি নিজেও আহত হয়েছেন। এ ছাড়াও আহত হয়েছেন ডেপুটি ম্যানেজার জুলকার নাঈম, সহকারী ম্যানেজার আব্দুল খালেক ও আরও দুইজন গার্ড।
এ বিষয়টি শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশ ও মালিক পক্ষকে অবগত করা হলে মালিক পক্ষ তাদের আক্রমণের সিসিটিভির ফুটেজ দেখে বৃহস্পতিবার বিকেলে বাগান বন্ধ ঘোষণা করেন মালিক পক্ষ। এ প্রেক্ষিতে শুক্রবার সকালে বাগানে কোনো কাজ হয়নি।
তিনি বলেন, শ্রমিকরা আমাদের সন্তানের মতো। আমরা তাদের সুখে-দুঃখে সব সময় পাশে থাকার চেষ্টা করি। কিন্তু তাদের দ্বারা আমরা আক্রান্ত হবো এটা ভাবতেও পারিনি।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সহসভাপতি বিজয় হাজরা জানান, ছোটখাটো বিষয় নিয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে ম্যানেজমেন্টের একটি ঝামেলায় চা বাগান কর্তৃপক্ষ শ্রম আইনের ১৩ ধারায় বাগান লে-আউট করেছেন। একটি কাজের বদলি ও আরও কিছু ছোট বিষয় নিয়ে এ ঝামেলা হয়। বাগান ম্যানেজমেন্ট শ্রমিকদের আটকে রাখে। এ সময় কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে। তবে এই বিষয়টি সমাধানের জন্য শ্রম অধিদপ্তর ও মালিক পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। কাছাকাছি সময়ের মধ্যে একটি সমাধান আসবে।
এ ব্যাপারে চা শ্রমিক ইউনিয়নের অপর নেতা পরেশ কালিন্দি বলেন- শ্রমিক, ম্যানেজমেন্ট ও বাগান মালিক প্রত্যেকেরই উদ্দেশ্য বাগানের উন্নয়ন অব্যাহত রাখা। এরা প্রত্যেকেই এক পরিবারভুক্ত। চা বাগানের কোনো ক্ষতি হলে এটা বাগানের যেমন ক্ষতি, তেমনি শ্রমিকদেরও। একটি ঘটনা ঘটেছে। দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করছেন তারা।
এ ব্যাপারে দেশান্ত কানুর মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
শ্রীমঙ্গল থানার ওসি বিনয় ভুষণ রায় জানান, ঘটনার খবর পেয়ে শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশের টিম দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এখন পরিবেশ শান্ত রয়েছে এবং চা বাগানে তাদের কড়া নজরদারি রয়েছে।
মন্তব্য করুন