৪২ রানে ১০ উইকেট হারিয়ে নাটকীয় ধস বাংলাদেশের
বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে সিরিজের নিস্পত্তি হয়েছে আগেই তবে তবুও সফরকারীদের হোয়াইটওয়াশ করার লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের। সেই লক্ষ্যে টস হেরে উড়ন্ত সূচনাও করেছিল বাংলাদেশ। তবে তারপর বিশাল এক নাটকীয় ধস নাজমুল হাসান শান্তর দলের। অথচ প্রথমে তানজিদ হাসান তামিম ও সৌম্য সরকারের ওপেনিং জুটি বাংলাদেশকে স্বপ্ন দেখায় বড় সংগ্রহের। তবে দুই ওপেনার বাদে বাকি সব ব্যাটারের ব্যর্থতা বাংলাদেশকে ১৫০ রানও করতে দেয়নি। শুক্রবার (১০ মে) মিরপুরের শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে সিরিজের চতুর্থ টি-টোয়েন্টিতে টস হেরে উড়ন্ত শুরু করে বাংলাদেশের ওপেনাররা। বিনা উইকেটে ১০১ রানের পর যখন ২০০ রান টার্গেট দেওয়ার কথা সেখানেই নাটকীয় এক ধস। মাত্র ৪২ রানে শেষ ১০ উইকেট হারিয়ে ১৪৩ রানে থামে টাইগারদের ইনিংস। টাইগারদের পক্ষে সর্বোচ্চ ৫২ রান আসে ওপেনার তানজিদ তামিমের ব্যাট থেকে। জিম্বাবুয়ের পক্ষে লুক জঙ্গুয়ে নেন ৩ উইকেট। চট্টগ্রামে সিরিজ জয় নিশ্চিত করলেও পুরো সিরিজ জুড়েই প্রশ্নবিদ্ধ ছিল বাংলাদেশের ব্যাটিং ইউনিট। মিরপুরে ওপেনারদের দুর্দান্ত শুরু অবশ্য কিছুটা হলেও ভরসা দেওয়ার কথা। তবে পরের ব্যাটিং শুধু হতাশাই বাড়াবে। মিরপুরে বাংলাদেশের শেষের কান্ডজ্ঞানহীন ব্যাটিং মহাবিপর্যয় শান্ত-জাকেরদের ব্যাটিং সামর্থ্য নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। জিম্বাবুয়ের সামনে চতুর্থ ওয়ানডেতে বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত টার্গেট দিতে পেরেছে ১৪৪ রানের। ১০ ওভারের মধ্যে ৯০ রান করা দল থেমেছে ১৯.৫ ওভারে। বাংলাদেশের বিপর্যয়ের শুরু দুই ওপেনারের বিদায়ের পর থেকে। নিজের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ফিফটি পূর্ণ করার পর তামিম ৫২ রানে সাজঘরে ফেরেন। একই ওভারে ফেরেন ৩৪ বলে ৪১ রান করা আরেক ওপেনার সৌম্যও। চলতি সিরিজে বাংলাদেশের ব্যাটারদের মধ্যে একমাত্র ছন্দে থাকা হৃদয় আজ ছিলেন ব্যর্থ। সিকান্দার রাজার বলে ১২ রান করে আউট হন তিনি। ১০ মাস পর টি-টোয়েন্টি খেলতে এসে ব্যর্থ সাকিবও। ব্যাটে-প্যাডে বিশাল গ্যাপ দিয়ে বল ঢুকে মাত্র ১ রান করে ফিরেন তিনি । একই ওভারের ফিরেছেন ব্যর্থতার বৃত্তে থাকা অধিনায়ক শান্তও। এরপর ফিরেছেন জাকের আলি (৬)। আসা-যাওয়ার মিছিল দেখে মিরপুরের গ্যালারিতে তখন ভুয়া ভুয়া স্লোগান। এরপর রিশাদ-তাসকিনের ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হয়েছেন তাসকিন। শেষে বাকি কেউ ভালো কিছু করতে না পেরে ১৪৩ রানেই থামে বাংলাদেশ।
১০ মে, ২০২৪

ট্রেনে ভয়াবহ শিডিউল বিপর্যয়
গাজীপুরের জয়দেবপুরে শুক্রবার সকালে ট্রেন দুর্ঘটনা; দুদিন আগে সান্তাহার স্টেশনে যাত্রীদের হাতে মারধরের শিকার হয়েছেন রেলকর্মীরা—এ দুটি ঘটনায় রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের ট্রেনগুলো শিডিউল জটিলতায় পড়েছে। এর মধ্যে গতকাল শনিবার সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা ছিল। রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে দৈনিক ৫৩টি ট্রেন ছেড়ে গেলেও এদিন মাত্র চারটি ট্রেন সঠিক সময়ে ছেড়ে যায়। বাকি অর্ধশত ট্রেনের অধিকাংশ ২ থেকে ৭ ঘণ্টা বিলম্বে যাত্রা করে। একই অবস্থা রাজশাহীতে। রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন থেকে ঢাকা অভিমুখে আন্তঃনগর ট্রেন সিল্কসিটি এক্সপ্রেসের যাত্রার সময় ছিল সকাল ৭টা ৪০ মিনিট। সেই ট্রেন ছেড়ে গেছে দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে। নির্ধারিত সময়ের ৬ ঘণ্টা পর ট্রেনটি নিজ গন্তব্যের উদ্দেশে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন ছাড়ে। গাজীপুরের জয়দেবপুর স্টেশনের এক কিলোমিটার দূরে ছোট দেওড়া এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকা তেলবাহী ওয়াগন ও যাত্রীবাহী টাঙ্গাইল কমিউটার ট্রেনের সংঘর্ষ বাধে। এতে সাড়ে ৩১ ঘণ্টা পর উদ্ধার অভিযান শেষ হলে ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় রুটে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়। তবে বিভিন্ন স্টেশনে শিডিউল বিপর্যয় মারাত্মক রূপ নিয়েছে। রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার সকাল পৌনে ১১টার দিকে স্টেশনের দক্ষিণে আউটার সিগন্যালে টাঙ্গাইল কমিউটার ট্রেনের সঙ্গে তেলবাহী ওয়াগনের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে দুটি ট্রেনের ৯টি বগি লাইনচ্যুত হয়। আহত হন লোকোমাস্টারসহ চারজন। এরপর ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রুটের ট্রেন চলাচল ২ ঘণ্টা বন্ধ হয়ে যায়। পরে বিকল্প আপ লাইন দিয়ে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। বিকেলে রিলিফ ট্রেন ঘটনাস্থলে পৌঁছার পর উদ্ধার তৎপরতা শুরু হয়। রাত-দিন উদ্ধার অভিযানে তেলবাহী ওয়াগনের লাইনচ্যুত চারটি বগি অপসারণ করে পার্শ্ববর্তী স্টেশনে সরিয়ে নেওয়া হয়। এ ছাড়া যাত্রীবাহী টাঙ্গাইল কমিউটার ট্রেনের ক্ষতিগ্রস্ত চারটি বগি রেললাইনের পাশে ফেলে রাখা হয়েছে। গতকাল দুপুর ২টার দিকে ডাবল লাইন চালুর লক্ষ্যে আপ লাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেয় রেল বিভাগ। সেখানে ক্রেন রেখে দুটি ইঞ্জিন গ্যাসের কাটার দিয়ে কেটে আলাদা করা হয়। এর সাড়ে ৩ ঘণ্টা পর আপ লাইনে ফের ট্রেন চলাচল শুরু হয়। এরপর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ডাউন লাইন থেকে দুটি ইঞ্জিন ও ওয়াগনের বগি সরিয়ে ফেলে রেলওয়ে বিভাগের উদ্ধারকারী দল। স্থানীয়রা বলছেন, রেলকর্মীদের গাফিলতির কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে ভয়াবহ শিডিউল বিপর্যয়ে পড়েছেন যাত্রীরা। এ ছাড়া উদ্ধার অভিযান বিলম্বের কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করে তারা বলেন, রেলওয়ের যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি আধুনিক করা প্রয়োজন। উদ্ধারকর্মীদের ঢিলেঢালা ভাবের কারণে উদ্ধার অভিযান দেরি হয়েছে। প্রায় সাড়ে ৩১ ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর ডাবল লাইনে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে নিশ্চিত করে জয়দেবপুর রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. সেতাবুর রহমান জানান, দুর্ঘটনাকবলিত ট্রেনের সব বগি উদ্ধারকাজ সম্পন্ন হয়েছে। সন্ধ্যা ৬টার দিকে ক্ষতিগ্রস্ত বগি ও তেলের ওয়াগন সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আপ লাইন ক্লিয়ার আছে। দুর্ঘটনার পর দায়িত্বে অবহেলার কারণে জয়দেবপুর রেলওয়ের আপঘুণ্টি স্টেশন মাস্টার মো. হাশেম, পয়েন্টম্যান সাদ্দাম হোসেন ও মোস্তাফিজুর রহমানকে বরখাস্ত করা হয়েছে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ও গাজীপুর জেলা প্রশাসন ঘটনাটি খতিয়ে দেখতে পৃথক তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এদিকে কমলাপুর রেলস্টেশনে গতকালের সময়সূচিতে দেখা গেছে, রংপুর এক্সপ্রেস সকাল ৯টা ১০ মিনিটে ছাড়ার কথা থাকলেও বিকেল ৪টায় ঢাকা থেকে ছাড়তে পারেনি। বিকেল পর্যন্ত ট্রেনটির শিডিউল বাতিলও করা হয়নি। এ নিয়ে যাত্রীরা চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন। যারা অনলাইনে টিকিট কেটেছেন, তারা যাত্রা বাতিল করেও টাকা ফেরত পাচ্ছিলেন না। এর আগে সকাল ৬টার রাজশাহী ধূমকেতু এক্সপ্রেস সকাল ৮টায়; ৬টা ১৫ মিনিটের কক্সবাজারগামী পর্যটন এক্সপ্রেস সকাল সাড়ে ৮টায়; ৬টা ৪৫ মিনিটের চিলাহাটিগামী চিলাহাটি এক্সপ্রেস ৯টায়; সকাল ৭টা ১৫ মিনিটের নীলফামারীগামী নীলসাগর এক্সপ্রেস সাড়ে ৯টায়; চট্টগ্রামগামী ৭টা ৪৫ মিনিটের মহানগর প্রভাতী ১০টার দিকে ছেড়ে যায়। রাজশাহী কমিউটার, মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস, কালনী এক্সপ্রেস, উপকূল এক্সপ্রেস ও চট্টলা এক্সপ্রেসের কোনোটিই সময়মতো ছেড়ে যায়নি। রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার আব্দুল করিম জানিয়েছেন, ট্রেনের টাইম শিডিউল নিয়ে তারা এখন খুবই খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে আছেন। গাজীপুরের দুর্ঘটনার কারণেই মূলত শিডিউল বিপর্যয়ে পড়েছে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে। গতকাল ৭টা ৪০ মিনিটের সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ১টা ৪০ মিনিটে ছেড়েছে। এ ছাড়া বনলতা এক্সপ্রেস পৌনে ২ ঘণ্টা বিলম্বে রাজশাহী থেকে ছেড়ে গেছে। এই শিডিউল বিপর্যয় কাটতে আজ রোববার পর্যন্ত সময় লাগতে পারে বলে জানান তিনি। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) অসীম কুমার তালুকদার জানান, গাজীপুরের দুর্ঘটনায় তাদের ট্রেন শিডিউল এলোমেলো হয়ে গেছে। এখন ট্রেনগুলোর ডে-অফ না এলে এই শিডিউল বিপর্যয় কাটানো সম্ভব হচ্ছে না। আর বঙ্গবন্ধু সেতুর কারণেও অনেক দেরি হয়ে যাচ্ছে। যেখানে আগে তিনটি ট্রেন রাখতে পারতেন সেখানে এখন একুট রাখতে পারেন। আরেকটি লাইন দিয়ে একটি ট্রেন ছাড়তে হয়। তবে ২-৩ মাসের মধ্যেই এ সমস্যার সমাধান হবে।
০৫ মে, ২০২৪

কমলাপুরে ট্রেনের ভয়াবহ শিডিউল বিপর্যয়
গাজীপুরের জয়দেবপুরে ট্রেন দুর্ঘটনা ও গত দুই দিন আগে সান্তাহার স্টেশনে যাত্রী কর্তৃক রেলকর্মীদের মারধরের ঘটনা ঘটে। এর পর থেকেই বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের ট্রেনগুলো শিডিউল জটিলতায় পড়েছে। শনিবার (৪ মে) সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা ছিল। রাজধানীর কমলাপুরের ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন থেকে দৈনিক ৫৩টি ট্রেন ছেড়ে গেলেও মাত্র ৪টি ট্রেন সঠিক সময়ে ছেড়ে যায়। বাকি অর্ধশত ট্রেনের অধিকাংশ ২ থেকে ৭ ঘণ্টা  বিলম্বে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। রেলস্টেশনে সময়সূচিতে দেখা গেছে, রংপুর এক্সপ্রেস প্রায় সাত ঘণ্টা বিলম্বে রয়েছে। সকাল ৯টা ১০ মিনিটে এ ট্রেন ছাড়ার কথা থাকলেও বিকেল ৪টায়ও ঢাকা থেকে ছাড়তে পারেনি। বিকেল পর্যন্ত ট্রেনটি বাতিলও করা হয়নি। স্টেশনের ইলেকট্রনিক বোর্ডে বিলম্বে ছাড়ার কথা লেখা ছিল। এ নিয়ে যাত্রীরা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। যারা অনলাইনে টিকিট কেটেছেন তারা যাত্রা বাতিল করে টাকা ফেরত পাচ্ছিলেন না। রেল স্টেশন সূত্র বলছে, লাইন ক্লিয়ার না হওয়ার কারণে জয়দেবপুর হয়ে যে ট্রেনগুলো যাতায়াত করে সেগুলোর বিলম্ব হচ্ছে। গতকাল থেকেই এসব ট্রেন বিলম্বে ছাড়ছে। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার মাসুদ সারওয়ার কালবেলাকে বলেন, উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় সব ট্রেনই ২ থেকে ৩ ঘণ্টা বিলম্বে ছাড়ছে। এখনো লাইন পুরোপুরি ঠিক হয়নি। সকাল থেকে এ রুটে ৮টি ট্রেন ছেড়ে গেছে। আর সবই বিলম্বে চলছে। এদিকে ট্রেন বিলম্বে ছাড়ায় ছুটির দিনেও কমলাপুর স্টেশনে ছিল যাত্রীদের ভিড়। সাধারণত দিনে ৫৩টি ট্রেন কমলাপুর স্টেশন থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছেড়ে যায়। তবে জয়দেবপুর দুর্ঘটনার কারণে গতকাল থেকে সব ট্রেনই দেরি করে ছাড়ছে। এসব ট্রেন ঢাকায় পৌঁছেছেও দেরি করে। এর আগে সকাল ৬টার রাজশাহী ধূমকেতু এক্সপ্রেস সকাল ৮টায়, ৬টা ১৫ মিনিটের কক্সবাজারগামী পর্যটন এক্সপ্রেস সকাল সাড়ে ৮টায়, ৬টা ৪৫ মিনিটের চিলাহাটিগামী চিলাহাটি এক্সপ্রেস ৯টায়, ৭টা ১৫ মিনিটের নীলফামারীগামী নীলসাগর এক্সপ্রেস সাড়ে ৯টায়, চট্টগ্রামগামী ৭টা ৪৫ মিনিটের মহানগর প্রভাতী ১০টার দিকে ছেড়ে যায়। রাজশাহী কমিউটার, মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস, কালনী এক্সপ্রেস, উপকূল এক্সপ্রেস, চট্টলা এক্সপ্রেস এর কোনোটিই সময়মতো ছেড়ে যায়নি। স্টেশনে সরেজমিনে দেখা যায়, সন্তান ও স্বজন নিয়ে কেউ বসে আছেন, কেউবা দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর ক্লান্ত হয়ে শুয়ে পড়েছেন বসার জায়গা না পেয়ে। স্টেশনের ভেতর অনেক যাত্রীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। এ প্রতিবেদকের সামনে ঢাকা স্টেশন ম্যানেজারের কক্ষে রুমে রংপুর এক্সপ্রেসের যাত্রীরা টিকিট রিফান্ডের দাবি নিয়ে আসেন। যাত্রীদের দাবি মেনে তাদের টিকেট রিফান্ড করার প্রক্রিয়াও শুরু হয় বেলা ৪টার পর। এ ঘটনায় রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনে এসে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার আনোয়ার হোসেন কালবেলাকে বলেন, জয়দেবপুর হয়ে উত্তর পশ্চিমের সব ট্রেন বিলম্বে ছেড়ে যাচ্ছে। একটি লাইন দিয়ে এ রুটে ট্রেন চলছে। আজকের মধ্যে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
০৪ মে, ২০২৪

শুরুর বিপর্যয় কাটিয়ে জিম্বাবুয়ের চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহ
জুনের বিশ্বকাপের আগে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ঘরের মাঠের সিরিজ দিয়ে বিশ্বকাপ প্রস্তুতির সিংহভাগ সম্পন্ন করবে বাংলাদেশ। সেই উপলক্ষেই জিম্বাবুয়ের সাথে পাঁচ ম্যাচের সিরিজ আয়োজন। আর সেই সিরিজের প্রথমটিতে অবশ্য বাংলাদেশের শুরুটা ভালোই করে। অবশ্য সেই শুরুটা ধরে রাখতে পারেনি টাইগার বোলাররা। দুর্দান্ত বোলিংয়ে ৪১ রানে জিম্বাবুয়ে ৭ উইকেট হারিয়েও শেষ পর্যন্ত লড়াই করার মতো এক স্কোর পেয়েছে। শুক্রবার (৩ মে) চট্টগ্রামের সাগরিকায় জহুর আহমেদ চৌধুরী ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়ের মধ্যকার প্রথম টি-টোয়েন্টিতে টস হেরে প্রথমে ব্যাটিং করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ১২৪ রানে অলআউট হয় সফরকারী জিম্বাবুয়ে। বাংলাদেশের পক্ষে তাসকিন ও সাইফউদ্দিন সর্বোচ্চ তিনটি করে উইকেট নেন। এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে জিম্বাবুয়ে দল সুযোগ না পেলেও টি-টোয়েন্টি তারা ফেলে দেওয়ার মতো প্রতিপক্ষ নয়। সর্বশেষ দেখাতেও বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজ জিতেছিল আফ্রিকার দেশটি। আজকের ম্যাচেও ভালো শুরু করেছিল সিকান্দার রাজার দল।   শরীফুল ইসলামের করা ইনিংসের প্রথম বলই চার মেরে শুরু করেন জিম্বাবুয়ের ওপেনার জয়লর্ড গাম্বি। দ্বিতীয় ওভারেই অবশ্য আঘাত হানে বাংলাদেশ। শেখ মেহেদি বোল্ড হন আরেক ওপেনার ক্রেইগ আরভিন। পরের ওভারে অবশ্য আবার খরুচে বোলিং শরীফুলের, রান দেন ১৩। জিম্বাবুয়ের ব্যাটারদের ওপর বাংলাদেশের বোলারদের আক্রমণ শুরু হয় ম্যাচের পঞ্চম ওভারে। ১৮ মাস পর দলে ফিরে প্রথম ওভারেই উইকেট নেন সাইফউদ্দিন। ১৭ রান করা গাম্বিকে ফেরত পাঠান এই পেস বোলিং অলরাউন্ডার।  তারপরের আট বল অবশ্য কি হয়েছে তার সঠিক কোন ব্যাখা মনে হয় না জিম্বাবুয়ের কোন খেলোয়াাড় দিতে পারবে। পঞ্চম ওভারে বল হাতে নিয়ে আবার উইকেট পান শেখ মেহেদী। তার ওভারে রান নিতে গিয়ে রানআউট হন ব্রায়ান বেনেত (১৬)। সিকান্দর রাজাকে লিটন দাসের ক্যাচ বানিয়ে মেহেদী তুলে নেন নিজের দ্বিতীয় উইকেট। মেহেদীর মতো তাসকিনও জোড়া উইকেট পান নিজের দ্বিতীয় ওভার করতে এসে। টানা দুই বলে তিনি নেন শন উইলিয়ামস ও রায়ান বার্লের উইকেট। সফরকারীদের সপ্তম উইকেটটি নেন সাইফউদ্দিন। তাতে ৪১ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে রীদিমতো চোখে সর্ষে ফুল দেখা শুরু হয় রোডেশিয়ানদের। যখন মনে হচ্ছিল নিজেদের টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে সর্বনিম্ন স্কোর করবে তারা তখনই ক্লাইভ মাদানদে ও মাসাকাদজা দাড়িয়ে যান। তাদের ৭৫ রানের জুটিতে শতরান পেরোয় জিম্বাবুয়ের। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে অষ্টম উইকেটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের জুটি এটি। সাজঘরে ফেরার আগে ৩৯ বলে ৪৩ রানের ইনিংস খেলেন মাদান্দে। এ ছাড়া ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসে ৩৮ বলে ৩৪ রান করেন মাসাকাদজা। অথচ আর কোনো ব্যাটারই এদিন ২০ রানও করতে পারেননি। চার ব্যাটার আউট হন শূন্য রানে।
০৩ মে, ২০২৪

শিল্প উৎপাদনের প্রবৃদ্ধিতে বড় বিপর্যয়
দেশে চলমান ডলার সংকটের কারণে আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপ করেছে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে অব্যাহতভাবে কমছে দেশের আমদানি ব্যয়। এতে আশঙ্কাজনকভাবে কমছে শিল্পের উৎপাদন। ফলে জিডিপি প্রবৃদ্ধিও কমে যাচ্ছে। চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে দেশের সামগ্রিক জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্ধেকে নেমেছে। এ সময় সবচেয়ে বেশি কমেছে শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি, কমেছে প্রায় তিনগুণ। আর শিল্প খাতের উৎপাদনের প্রবৃদ্ধিতে দেখা দিয়েছে বড় বিপর্যয়। দ্বিতীয় প্রান্তিকে এই খাতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ঋণাত্মক। শিল্প উৎপাদন খাতের এমন বিপর্যয় এর আগে কখনো দেখা যায়নি। মূলত উৎপাদন খাতের বিপর্যয়ের কারণে জিডিপি প্রবৃদ্ধির এমন বেহাল দশা দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের প্রবৃদ্ধির পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। বিবিএসের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হিসেবে দেখা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ২৪ শতাংশ, যা আগের প্রান্তিকে ছিল ৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি কমেছে ৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ। জিডিপি প্রবৃদ্ধির তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, শিল্প খাতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি কমেছে উৎপাদন খাতে। দ্বিতীয় প্রান্তিকে গিয়ে এই খাতে বড় বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, দ্বিতীয় প্রান্তিকে উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ঋণাত্মক শূন্য দশমিক ৪৫ শতাংশ। অথচ তিন মাস আগেও প্রবৃদ্ধি ছিল ১১ দশমিক ৬০ শতাংশ। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে উৎপাদন খাতের প্রবৃদ্ধি কমেছে প্রায় ১২ শতাংশ। অন্যদিকে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের এই সময়ে উৎপাদন খাতের প্রবৃদ্ধি ছিল ১০ দশমিক ৮৮ শতাংশ এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ১৬ দশমিক ০৩ শতাংশ। অর্থাৎ গত অর্থবছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি কমেছে প্রায় ১১ শতাংশ। আর ২০২১-২২ অর্থবছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। অর্থনীতিবিদদের মতে, অর্থবছরের শুরুতে ডলার সংকটের কারণে শিল্পের কাঁচামাল আমদানি নিয়ন্ত্রণ, জ্বালানি সংকট, ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নসহ বৈশ্বিক সংকটের ধাক্কা সামলাতে হয়েছে দেশের শিল্প খাতকে। এ কারণে শিল্পের প্রবৃদ্ধি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমেছে। পাশাপাশি বৈদেশিক এবং ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় উৎপাদন কমে গেছে। এসব কারণেই জিডিপিতে খাতটির প্রবৃদ্ধি কমে গেছে। এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর কালবেলাকে বলেন, শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি কমার মূল কারণ হচ্ছে ডলার সংকটের কারণে আমাদের আমদানি ব্যয় কমাতে হয়েছে। এর ফলে একদিকে উৎপাদন কমে গেছে, অন্যদিকে রপ্তানি আদেশও কমে গেছে। অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, একদিকে আমদানি ব্যয় কমছে, অন্যদিকে বেসরকারি খাতে ঋণের চাহিদা কমে যাচ্ছে। বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার মানেই হচ্ছে বিনিয়োগ কমে যাওয়া। আর বিনিয়োগ কমে গেলে উৎপাদন এবং কর্মসংস্থান কমে যাবে। ফলে জিডিপি প্রবৃদ্ধির কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না। সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, কয়েক বছর ধরে দেশে বিনিয়োগ আসার পরিস্থিতি অনেক খারাপ হয়েছে। ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ ও বৈদেশিক বিনিয়োগ অনেক কমেছে। বিনিয়োগ কমায় শিল্পের উৎপাদনও কমে গেছে। যার প্রভাব পড়েছে শিল্প উৎপাদন খাতের প্রবৃদ্ধিতে। প্রবৃদ্ধি বাড়াতে হলে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে অবশ্যই জ্বালানি এবং বিদ্যুৎ খাতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। সাধারণত উৎপাদনের প্রধান উপকরণগুলোর মধ্যে অন্যতম ভূমিকায় থাকে গ্যাস-বিদ্যুৎ, জ্বালানি তেল এবং বিনিয়োগ। এই খাতগুলোর প্রবৃদ্ধির ওপর নির্ভর করে উৎপাদন খাতের প্রবৃদ্ধি। চলতি অর্থবছরে এই খাতগুলোর প্রবৃদ্ধি তলানিতে নামায় উৎপাদনের ওপর প্রভাব পড়েছে। বিশেষ করে শিল্প উৎপাদন সবচেয়ে বেশি ব্যাহত হয়েছে। এজন্য দায়ী মূলত জ্বালানি খাতের নিম্নমুখী প্রবৃদ্ধি। বিবিএসের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, শিল্প খাতের উৎপাদনের পাশাপাশি তলানিতে রয়েছে বিদ্যুৎ ও গ্যাস খাতের প্রবৃদ্ধি। যদিও প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় দ্বিতীয় প্রান্তিকে কিছুটা উন্নতি হয়েছে। চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে এই খাতে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে শূন্য দশমিক ৩১ শতাংশ, যা তার প্রান্তিকে ছিল ঋণাত্মক ৪৬ শতাংশ। প্রান্তিকের হিসেবে উন্নতি হলেও অর্থবছরের হিসেবে অনেক পিছিয়ে রয়েছে জ্বালানি খাতের প্রবৃদ্ধি। বিবিএসের হিসেবে, ২০২১-২২ অর্থবছরে দ্বিতীয় প্রান্তিকে এই খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৪ দশমিক ১৫ শতাংশ, যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরে হয়েছিল ২ দশমিক ৯৯ শতাংশ। সেখানে চলতি অর্থবছরের প্রবৃদ্ধি শূন্য দশমিক ৩১ শতাংশ। অর্থাৎ আগের অর্থবছরের তুলনা অনেক প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
২৬ এপ্রিল, ২০২৪

ইসরায়েলে ইরানের হামলা / দেশে দেশে বিমানের শিডিউল বিপর্যয়
ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালিয়েছে ইরান। দেশটির ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ফলে মধ্যপ্রাচ্যের দেশে দেশে বিমানের শিডিউল বিপর্যয় ঘটেছে। সোমবার (১৫ এপ্রিল) বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।  প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের ইসরায়েলে হামলার কারণে এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যকার বিমান চলাচলের পথ সংকীর্ণ হয়ে গেছে। এর ফলে বৈশ্বিক বিমান চলাচলে ভয়াবহ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।  শনিবার গভীর রাতে ইসরায়েলে ৩০০ এর বেশি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। দেশটির ছোড়া এসব ড্রোন ক্ষেপণাস্ত্রের বেশিরভাগ ইসরায়েল ও মার্কিন সমর্থিত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে ভূপাতিত করা হয়েছে। দুই দেশের মধ্যকার হামলার ফলে বিমান শিল্পে ভয়াবহ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।  বিমান পরিচালনা সংস্থা কান্তাস, জার্মানির লুফথানসা, ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স এবং এয়ার ইন্ডিয়া জানিয়েছে, গত দুই দিনে ডজনখানেক বিমানের ফ্লাইট বাতিল অথবা ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে।  এয়ারস্পেস ও এয়ারপোর্ট পর্যবেক্ষণ প্রতিষ্ঠান অপসগ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জি বলেন, ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে হামলার পর এটি ছিল বিমান ভ্রমণে সবচেয়ে বড় একক বাধা। জি রয়টার্সকে বলেন, এরপর আমরা এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়নি, হঠাৎ করে কয়েক দেশের আকাশসীমা দ্রুত ধারাবাহিকভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। এর ফলে দেশে দেশে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। তিনি জানান, এমন পরিস্থিতি আরও কয়েক দিন চলমান থাকতে পারে।  তিনি বলেন, এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে চলাচলকারী বিমানগুলোকে ইরানের আকাশসীমা ব্যবহার করতে হয়। তবে দেশটির আকাশসীমা বন্ধের ফলে এগুলোকে তুরস্ক এবং মিসর অথবা সৌদি আরবের দিয়ে বিকল্প পথ ব্যবহার করতে হচ্ছে।  সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, শনিবার ইসরায়েল তাদের আকাশসীমা বন্ধ করে দেয় এবং রোববার সকালে এটি পুনরায় চালু করা হয়। একইভাবে আকাশসীমা বন্ধের পর জর্ডান, ইরাক এবং লেবাননও তাদের আকাশসীমা চালু করেছে।  এমিরেটস এয়ারলাইনস, কাতার এয়ারওয়েজ এবং ইতিহাদ এয়ারওয়েজসহ মধ্যপ্রাচ্যের প্রধান এয়ারলাইন্সগুলো রোববার বলেছে, তারা বেশকিছু ফ্লাইট বাতিল বা ঘুরিয়ে দিয়েছে। তবে আবারও ফ্লাইট চালু করা হবে বলেও জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো।  ইরানের সরকার নিয়ন্ত্রিত বার্তা সংস্থা মেহের নিউজ জানিয়েছে, রাজধানী তেহরানসহ কয়েকটি শহরের বিমানবন্দর থেকে অভ্যন্তরীণ সব ফ্লাইট বাতিল করেছে ইরান। সোমবার পর্যন্ত এসব শহরের বিমানবন্দর থেকে যাত্রীবাহী কোনো বিমান আকাশে উঠবে না বলে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।  ইরান ও ইসরায়েল সংঘাতের শঙ্কায় সতর্কতা অবলম্বন করছে এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশও। ইরাক তার আকাশসীমায় সবধরনের বিমান চলাচল স্থগিত করার কয়েক ঘণ্টা পর আবার আকাশসীমা খুলে দিয়েছে। তবে যে কোনো সময় আবারও আকাশসীমা বন্ধ করা হতে পারে বলে জানিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। ইরাক ও ইসরায়েলের প্রতিবেশী জর্ডান এবং লেবাননও নিজ নিজ আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছিল। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল ইসরায়েলের আকাশসীমা। উল্লেখ্য, শনিবার ইরানের হামলার পরপর তেল আবিব ও পশ্চিম জেরুজালেমসহ ইসরায়েলি শহরগুলোতে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। এ ছাড়া ইসরায়েলের ৭২০টির বেশি জায়গায় বিমান হামলার সাইরেন বাজানোর শব্দ শোনা গেছে। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি বলেছেন, ক্রুজ মিসাইলসহ বেশ কয়েক ডজন ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে ইরান। তাদের হামলায় ২০০টির বেশি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। এদের বেশিরভাগ ইসরায়েলি সীমার বাইরে প্রতিহত করা হয়েছে। ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে একটি সামরিক ঘাঁটিতে কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন আঘাত হেনেছে জানিয়ে আইডিএফের মুখপাত্র বলেন, এতে সামান্য অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া হামলায় একজন আহত হয়েছেন। ইরানের বেশ কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলে আঘাত হানার পর একটি সামরিক ঘাঁটিতে সামান্য ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে উল্লেখ করেন ড্যানিয়েল হাগারি। তবে কোন ঘাঁটিতে কী ধরনের ক্ষতি হয়েছে তা জানাননি তিনি। এ ছাড়া হামলায় কে আহত হয়েছেন, তাও তিনি জানাননি। এদিকে ইসরায়েলকে সমর্থনকারী দেশগুলোকে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইরান। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ রেজা আশতিয়ানি বলেন, যদি কোনো দেশ তাদের আকাশসীমা ইসরায়েলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয় তাহলে আমরা তাদের চূড়ান্ত মোকাবিলা করব। মূলত, চলতি মাসের শুরুর দিকে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানের দূতাবাসে ইসরায়েলি বোমা হামলার জবাবে শত শত ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে এই পাল্টা হামলা করে তেহরান। ইসরায়েল ও ইরানের পাল্টাপাল্টি হামলা মধ্যপ্রাচ্যের উত্তপ্ত পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটাতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশ্লেষকরা। এমনকি দুই চিরশত্রু দেশের মধ্যে সরাসরি যুদ্ধ পর্যন্ত বেধে যেতে পারে বলে সতর্ক করছেন তারা। গত ১ এপ্রিল সিরিয়ার দামেস্কে অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেটে হামলা চালিয়ে দেশটির কয়েকজন সামরিক কর্মকর্তাকে হত্যা করে ইসরায়েল। এ ঘটনার প্রতিশোধ নিতে একের পর এক হুঁশিয়ারি দিয়ে আসছিল ইরান।
১৫ এপ্রিল, ২০২৪

ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল তিব্বত
তিব্বতে ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। শনিবার (১৩ এপ্রিল) দুপুরে ভূকম্পনে কেঁপে উঠে অঞ্চলটি। খবর রয়টার্সের। জার্মান রিসার্চ সেন্টার ফর জিওসায়েন্সের (জিএফজেড) তথ্য বলছে, ৫ দশমিক ৫ মাত্রার কম্পনটি তীব্রভাবে অনুভূত হয়েছে। উৎপত্তিস্থলের গভীরতা ছিল ১০ কিলোমিটার। জিএফজেড আরও জানায়, উৎপত্তিস্থলে প্রাথমিকভাবে ৫ দশমিক ৭ মাত্রায় রেকর্ড করা হয়। এতে তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি। ১৯৫০ সালে তিব্বত চীনের নিয়ন্ত্রণে আসে। বর্তমানে এটি চীন নিয়ন্ত্রিত একটি স্বশাসিত অঞ্চল। রাষ্ট্রীয়ভাবে চীন অঞ্চলটিকে জিজাং বলে পরিচিত করাতে চায়। উল্লেখ্য, বুধবার (৩ এপ্রিল) স্থানীয় সময় সকাল ৮টার দিকে শক্তিশালী ভূমিকম্পে বিপর্যস্ত হয় তাইওয়ান। দেশটির পূর্ব উপকূলে ৭ দশমিক ৪ মাত্রার এ ভূমিকম্প আঘাত আনে। এরপর আরও কয়েক ডজন বার তাইওয়ানের ভূমি কেঁপে (আফটারশক) ওঠে।  এরপর বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ১৬ মিনিটে জাপানে ভূমিকম্প আঘাত হানে। এটি ৬ মাত্রার ভূমিকম্প ছিল।
১৩ এপ্রিল, ২০২৪

লঙ্কান রান পাহাড়ের জবাবে ১৭৮ রানেই শেষ বাংলাদেশ 
চট্টগ্রামে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার টেস্ট সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে বিশ্বরেকর্ড করে রান পাহাড়ে চড়ে বসে সফরকারী লঙ্কানরা। টেস্টের প্রথম ইনিংসে শ্রীলঙ্কার ১১ ব্যাটারের মধ্যে ৬ জনের অর্ধশতকে ৫৩১ রানের বিশাল সংগ্রহ করে ‍ধনঞ্জয় ডি সিলভার দল। একই পিচে খেলে প্রথম ইনিংসে দুইশ রানও করতে পারেনি বাংলাদেশ। টাইগার ব্যাটারদের ব্যাটিং দেখে মনে হয়েছে যেন একদিনের ব্যবধানে ‘ব্যাটিং স্বর্গ’ থেকে পিচ বোলারবান্ধব হয়ে গেছে। সোমবার (০১ এপ্রিল) প্রথম দুই সেশনে বাজে ব্যাটিংয়ের পসরা সাজিয়ে মাত্র ১৭৮ রানে থামে বাংলাদেশের ইনিংস। বাংলাদেশের অধিকাংশ ব্যাটার আউট হয়েছেন বাজে বলে অত্যন্ত দৃষ্টিকটুভাবে। খোঁচা মেরে মাঠ ছেড়েছেন লিটন দাস ও শাহাদাত হোসেন দিপু। আম্পায়ার্স কলে কপাল পুড়ে সাকিব আল হাসান ও মুমিনুল হকের। এদিকে টেস্টের তৃতীয় দিনের খেলা নাইটওয়াচম্যান তাইজুল ইসলামকে নিয়ে ভালোভাবেই শুরু করেন ওপেনার জাকির হাসান। ২৮ রান নিয়ে তৃতীয় দিনের খেলা শুরু করা জাকির প্রথম সেশনের শেষ দিকে হাফসেঞ্চুরিও তুলে নেন। অবশ্য ফিফটি করার পরপরই বিদায় নেন তিনি। অফ স্টাম্প ধেয়ে আসা বিশ্বা ফার্নান্দোর সুইং বলটি ঢুকে স্টাম্প উপড়ে ফেলে জাকিরের। জাকিরের বিদায়ের পর ক্রিজে আসা টাইগার দলপতি নাজমুল হোসেন শান্তও ব্যর্থ হন। মাত্র ১ রান করে প্রবাথ জয়সুরিয়ার বলে উইকেট বিলিয়ে আসেন তিনি। ২ মিনিট পর বিদায় নেন তাইজুল ইসলামও। এরপর ক্রিজে এসে ১৫ রানে ব্যাট করা অবস্থায় আসিথা ফার্নান্দোর ওভারে আম্পায়ার সাকিব আল হাসানকে লেগ বিফোরের আবেদনে আউট দেন, রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি বাংলাদেশ অলরাউন্ডার। রিভিউয়ে দেখা যায়, বল অল্পের জন্য লেগ স্টাম্প ছুঁয়েছে। তিনি মাঠ ছাড়ার পর লিটন কুমার দাস ৩ বল মোকাবিলা করেই স্লিপে ক্যাচ দিয়ে মাঠ ছাড়েন। ক্রিজে এসে প্রথম বলটি ডট খেলেন লিটন, দ্বিতীয় বলে হাঁকান চার। পরের বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে মাঠ ছাড়েন তিনি। খোঁচা মেরে আউট হন শাহাদাত হোসেন দিপুও। ৩৬ বলে ৮ রান করেন তিনি। মেহেদী হাসান মিরাজ করেন ৭ রান। এরপর মুমিনুল হক একাই আশার বাতি হয়ে টিকে ছিলেন। আসিথার বলে আম্পায়ার এলবিডব্লিউ ডাকার পর রিভিউ নেন বাংলাদেশের টেস্ট স্পেশালিস্ট। কিন্তু লাভ হয়নি। ৮৪ বলে ৩৩ রানে থামে তার ইনিংস। ফলোঅনের সুযোগ থাকলেও ৩৫৩ রানের বিশাল লিড নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করছে শ্রীলঙ্কা।
০১ এপ্রিল, ২০২৪

মেন্ডিস-ডি সিলভার রানও হয়নি বাংলাদেশের
ওয়ানডে সিরিজে দারুন জয়ের পর লঙ্কানদের টেস্টে হারানোর স্বপ্ন নিয়েই সিলেট টেস্ট শুরু করেছিল বাংলাদেশ। এই সিলেটেই গত বছরের নভেম্বরে টেস্টে নিউজিল্যান্ডের মতো দলকে হারিয়েছিল টিম টাইগার্স। সেই হিসেবে লঙ্কানদের বিপক্ষে জয়ের আত্মবিশ্বাস নিয়েই মাঠে নেমেছিল বাংলাদেশ। তবে সেই আত্মবিশ্বাস মাঠে কোন কাজে আসেনি। তুলনামূলক সহজ উইকেটে রীতিমেতো অসহায় আত্মসমপর্ন করেছে বাংলাদেশের ব্যাটাররা। অথচ একই উইকেটে বাংলাদেশের বোলারদের পাড়ার বোলার বানিয়ে বেধড়ক পিটিয়েছেন দুই লঙ্কান ব্যাটার ধনঞ্জয় ডি সিলভা ও কামিন্দু মেন্ডিস। দুই ইনিংস মিলিয়ে বাংলাদেশের বিপক্ষে দুই শতকে এই দুই ব্যাটার করেন ৪৭৬ রান আর সেখানে বাংলাদেশের সব ব্যাটার মিলে দুই ইনিংসে করেছেন ৩৭০ রান। সেই হিসেবে বলতে গেলে টাইগার ব্যাটাররা এই দুই লঙ্কানের কাছেই ১০৬ রানে পরাজিত হয়েছে। ব্যাপারটি অবশ্য শুধু এখানে সীমাবদ্ধ নেই সিলেটের এই ব্যাটিং সহায়ক পিচে যেখানে স্বাগতিকদের ব্যাটিং দেখে মনে হয়েছে পিচ পুরোই মাইনফিল্ড। অন্যদিকে একইপিচে স্বাচ্ছন্দে রান করতে পেরেছেন দুই লঙ্কান ব্যাটার ধনঞ্জয় ও কামিন্দু। ম্যাচের শুরুতে অবশ্য পেসারদের জন্য উইকেটে বেশ সহায়তা ছিল। সেই সহায়তা কাজে লাগিয়ে স্বাগতিকরা প্রথম দিনের প্রথম সেশনে পাঁচ উইকেট তুলেও নেয়। তবে সময় যাওয়ার সাথে সাথে লঙ্কানদের ব্যাট থেকে রান আসতে থাকে। সেই সহায়তা এবং টাইগার পেসারদের লাইন-লেংথ ভুলে বোলিংয়ে সহজেই রান আসতে থাকে। ৫৭ রানে ৫ উইকেট থেকে তাই সহজেই ২৮৮ হয় লঙ্কানদের। জবাবে লঙ্কানদের ইনিংস থেকে শিক্ষা না নিয়ে উইকেট বিলিয়ে আসে টাইগার ব্যাটাররা। দ্বিতীয় ইনিংসেও দেখা যায় একই চিত্র। এবারো এক ধনঞ্জয় ও কামিন্দুর ব্যাটেই রান পাহাড়ে চাপা পড়ে বাংলাদেশ। শরিফুল-তাইজুলদের নাকানি চুবানি দিয়ে ৪১৮ রান করে বসে লঙ্কানরা। ৫১১ রানের জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংসে দেখা যায় উল্টো চিত্র। যে পিচে লঙ্কানরা হেসে খেলে করে ৪১৮ রান সেই একই পিচে ৪৭ রানেই শেষ ৫ উইকেট। দলের ব্যাটারদের দায়িত্ব জ্ঞানহীন এমন ব্যাটিং দেখে সেই রকম হতাশ বাংলাদেশের দর্শক থেকে শুরু করে ক্রিকেট বোদ্ধারা সবাই। বাংলাদেশ জাতীয় দলের নির্বাচক আব্দুর রাজ্জাক এরকম হতাশার ব্যাটিং দেখে বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের দিক থেকে যদি বলেন আমার কাছে খুবই অপ্রত্যাশিত মনে হয়েছে এবং মেনে নেওয়ার মতো নয়। এই রকম ব্যাটিং হবে, বিশেষ করে দ্বিতীয় ইনিংসে…ওরা ভালো ব্যাটিং করেছে। ওদের ব্যাটিং দেখার পর আমাদের ব্যাটিং দুইরকম মনে হয়েছে। আমি হতাশ।’ সিলেটের উইকেটের প্রসঙ্গ টেনে দলের ব্যাটারদের নিয়ে রাজ্জাক বলেন, ‘পিচের সমস্যা হবে কেন, আধা ঘণ্টার মধ্যে পিচ কি আকাশ–পাতাল পার্থক্য হয়ে যাবে নাকি। কিছুক্ষণ আগেই ওরা দুজন ১০০ মেরে গেল। ১০ মিনিটের বিরতি থাকে। ১০ মিনিটে উইকেটে কী এমন হলো। আসলে আমাদের অ্যাপ্লিকেশনে কিছু ভুল হয়েছে। আসলে আমাদের ভুল।’ বাংলাদেশের হাতে দ্বিতীয় টেস্টের আগে সময় আছে চার দিন। নতুন ব্যাটিং কোচের চাওয়া থাকবে চট্টগ্রাম টেস্ট শুরুর আগেই উন্নতি। যাতে অন্তত দুই ব্যাটারের রানের চেয়ে দলের রান কম না হয়।  
২৫ মার্চ, ২০২৪

দেশে বড় বিপর্যয় নেমে আসতে পারে : রওশন এরশাদ
সাংবিধানিকভাবে দেশে একটি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে উল্লেখ করে জাতীয় পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান ও সাবেক বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ বলেছেন, নতুন সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই সরকারের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অশনি সংকেত শোনা যাচ্ছে। সরকার যদি তা মোকাবিলা করতে না পারে- তাহলে দেশে বড় বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।  তিনি বলেন, পল্লীবন্ধুর নীতি-আদর্শ, তার চেতনা-প্রেরণা, তার ভাবমূর্তি হচ্ছে জাতীয় পার্টির অস্তিত্ব। সেই অস্তিত্বকে যারা মুছে দিতে চায়-তারা জাতীয় পার্টির পরিচয় দেওয়ার অধিকার রাখে না। শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইস্টিটিউশন মিলনায়তনে দলের এক বর্ধিতসভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সভায় দলের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। এতে ৩৯টি জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং বিভিন্ন জেলার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন বলে আয়োজকরা জানান। পবিত্র মাহে রমজানের কথা উল্লেখ করে রওশন এরশাদ বলেন, দ্রব্যমূল্য এখনই সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। আর রমজানকে সামনে রেখে অসাধু ব্যবসায়ীরা ওঁৎ পেতে বসে আছে। এক্ষেত্রে সরকারের প্রধান কাজ হবে- দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া। এ সময় তিনি আক্ষেপ করে বলেন, এবারের নির্বাচনী ইশতেহারের মলাট থেকে পল্লীবন্ধুর ছবি মুছে ফেলা হয়েছে। জাতীয় পার্টি প্রতিষ্ঠার পর এবার নির্বাচনে পার্টির প্রার্থীদের পোস্টারে পল্লীবন্ধুর ছবি ব্যবহার করতে দেওয়া হয়নি। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী তাঁর নির্বাচনী পোস্টারে বঙ্গবন্ধুর ছবি রেখেছেন। অথচ জাতীয় পার্টির সাবেক চেয়ারম্যানের পোস্টারে পল্লীবন্ধুর ছবি জায়গা পায়নি। এটা জাতীয় পার্টির অগণিত নেতা-কর্মীর মনে আঘাত দিয়েছে, হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে। তারা ভোট কেন্দ্রে যাবার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন।  তৃণমূল নেতাকর্মীদের গেল নির্বাচনে কেন তিনি অংশ নেননি তার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে রওশন এরশাদ বলেন, জাতীয় পার্টির নিবেদিত প্রাণ অনেক নেতা-যাদের ভোটে জয়লাভের সম্ভাবনা ছিল-এমন সব প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। এসব জনপ্রিয় ও যোগ্য নেতা এবং অভিভাবকহীন অসংখ্য নেতাকর্মী ও প্রার্থীদের বিপদে রেখে আমি নির্বাচনে যেতে পারি না। তিনি বলেন, আমার ছেলের আসন যদি কেড়ে নেওয়া হয়, তাহলে আমি কি নির্বাচনে যেতে পারি? নিশ্চয় না। তারপরও আমি সবকিছু মেনে নিতে পারতাম- যদি নির্বাচনে জাতীয় পার্টির ভরাডুবি না হতো। জাতীয় পার্টিকে ধ্বংসের শেষ সীমানায় পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এটা আমি কীভাবে মেনে নেব?  জাপার সাবেক এই প্রধান পৃষ্ঠপোষক বলেন, এই পরিস্থিতি থেকে পার্টিকে উদ্ধারের জন্য আপনারাই প্রথমে উদ্যোগ নিয়েছেন। দলের অগণিত নেতা-কর্মীর একান্ত দাবির মুখে আমি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছি। আজ আপনারা আমার দায়িত্ব গ্রহণকে অনুমোদন দিয়েছেন। আপনারাই জাতীয় পার্টির সকল ক্ষমতার উৎস। আপনারা যেভাবে চাইবেন-পার্টি সেভাবেই পরিচালিত হবে।  জাতীয় পার্টিতে পূর্ণাঙ্গ গণতান্ত্রিক চর্চা হবে উল্লেখ করে রওশন এরশাদ বলেন, তার জন্য আগামী ৯ মার্চ জাতীয় পার্টির দশম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এই সম্মেলনের বিরুদ্ধে অনেক ষড়যন্ত্র হতে পারে। কোনো ষড়যন্ত্র, কোনো বিভ্রান্তিতে আপনারা কান দেবেন না। এ সময় তিনি বলেন, ৯ মার্চের সম্মেলন সফল করতে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। সম্মেলনের জন্য রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বরাদ্দ নেওয়া হয়েছে। পুলিশ প্রশাসনের অনুমতি পাওয়া গেছে। আপনারা সকাল ১০টার মধ্যে প্রত্যেক কাউন্সিলর এবং ডেলিগেটদের নিয়ে সম্মেলন স্থানে উপস্থিত হবেন। ওইদিন আপনারাই জাতীয় পার্টির নেতৃত্ব নির্বাচিত করবেন বলে মন্তব্য করেন রওশন এরশাদ।  জাপা চেয়ারম্যান বলেন, আজ আমার হৃদয় কানায় কানায় ভরে গেছে। আপনারা আমার ডাকে সারা দিয়ে সকল জেলা থেকে অল্প সময়ের মধ্যে এই বর্ধিত সভায় এসে যোগ দিয়েছেন। আপনারা প্রমাণ করেছেন পল্লীবন্ধু এরশাদের জাতীয় পার্টি হারিয়ে যায়নি, হারিয়ে যাবে না। আপনারা পার্টিকে আবার সুসংগঠিত করে পল্লীবন্ধুর স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করবেন।  রওশন এরশাদ বলেন, পল্লীবন্ধু এরশাদ স্বপ্ন দেখেছিলেন নতুন বাংলাদেশ গড়ার। তিনি স্বপ্ন দেখেছেন এ দেশে প্রাদেশিক ব্যবস্থা প্রবর্তনের। তিনি চেয়েছিলেন, নির্বাচন পদ্ধতি সংস্কার করার। তিনি চেয়েছিলেন, পূর্ণাঙ্গ উপজেলা ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে। তিনি চেয়েছিলেন, ৬৮ হাজার গ্রামকে বাঁচিয়ে গোটা বাংলাদেশকে বাঁচাতে। আপনারা কি পল্লীবন্ধুর সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে পারবেন ?  বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বেগম রওশন এরশাদ বলেন, আপনাদের একটি কথা বলতে চাই- আজ আপনাদের পেয়ে আমার মনোবল দ্বিগুণ বেড়ে গেছে। যতদিন বেঁচে আছি আপনাদের মাঝেই বেঁচে থাকতে চাই। পল্লীবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের সংগ্রামই হবে আমাদের সকলের পথ ও পাথেয়। আপনারা ভালো থাকুন। ৯ মার্চ জাতীয় সম্মেলন সফল করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করবেন।  এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন জাতীয় কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, রওশন এরশাদ অনুসারী জাপার মহাসচিব কাজী মামুনুর রশীদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য শফিকুল ইসলাম সেন্টু, সুনীল শুভ রায়, গোলাম সারোয়ার মিলন, ফখরুজ্জামান জাহাঙ্গীর, জাফর ইকবাল সিদ্দিকী, ক্বারী হাবিবুল্লাহ বেলালী, নুরুল ইসলাম মিলন, রফিকুল ইসলাম হাফিজ, এমএ গোফরান, ভাইস চেয়ারম্যান জিয়াউল হক মৃধা, কাশেম সরকার, নুরুল ইসলাম নুরু, জাহাঙ্গীর আলম পাঠান, ইঞ্জিনিয়ার মামুনুর রশিদ, আব্দুল গাফফার বিশ্বাস, শংকর পাল, কেন্দ্রীয় নেতা মাহমুদা রহমান মুন্নী, খন্দকার মাহতাব উদ্দিন, শফিকুল ইসলাম শফিক, খোরশেদ আলম খুশু, ইঞ্জিনিয়ার সিরাজুল হক, ড. আব্দুল্লাহ আল নাসের, শেখ মাসুকুর রহমান, এমএ সাত্তার, আমিনা হাসান, মোল্লা শওকত হোসেন বাবুল, অ্যাডভোকেট মাসুদুর রহমান, মিজানুর রহমান প্রমুখ।
২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪
X