ওয়ানডে সিরিজে দারুন জয়ের পর লঙ্কানদের টেস্টে হারানোর স্বপ্ন নিয়েই সিলেট টেস্ট শুরু করেছিল বাংলাদেশ। এই সিলেটেই গত বছরের নভেম্বরে টেস্টে নিউজিল্যান্ডের মতো দলকে হারিয়েছিল টিম টাইগার্স। সেই হিসেবে লঙ্কানদের বিপক্ষে জয়ের আত্মবিশ্বাস নিয়েই মাঠে নেমেছিল বাংলাদেশ।
তবে সেই আত্মবিশ্বাস মাঠে কোন কাজে আসেনি। তুলনামূলক সহজ উইকেটে রীতিমেতো অসহায় আত্মসমপর্ন করেছে বাংলাদেশের ব্যাটাররা। অথচ একই উইকেটে বাংলাদেশের বোলারদের পাড়ার বোলার বানিয়ে বেধড়ক পিটিয়েছেন দুই লঙ্কান ব্যাটার ধনঞ্জয় ডি সিলভা ও কামিন্দু মেন্ডিস। দুই ইনিংস মিলিয়ে বাংলাদেশের বিপক্ষে দুই শতকে এই দুই ব্যাটার করেন ৪৭৬ রান আর সেখানে বাংলাদেশের সব ব্যাটার মিলে দুই ইনিংসে করেছেন ৩৭০ রান।
সেই হিসেবে বলতে গেলে টাইগার ব্যাটাররা এই দুই লঙ্কানের কাছেই ১০৬ রানে পরাজিত হয়েছে। ব্যাপারটি অবশ্য শুধু এখানে সীমাবদ্ধ নেই সিলেটের এই ব্যাটিং সহায়ক পিচে যেখানে স্বাগতিকদের ব্যাটিং দেখে মনে হয়েছে পিচ পুরোই মাইনফিল্ড। অন্যদিকে একইপিচে স্বাচ্ছন্দে রান করতে পেরেছেন দুই লঙ্কান ব্যাটার ধনঞ্জয় ও কামিন্দু।
ম্যাচের শুরুতে অবশ্য পেসারদের জন্য উইকেটে বেশ সহায়তা ছিল। সেই সহায়তা কাজে লাগিয়ে স্বাগতিকরা প্রথম দিনের প্রথম সেশনে পাঁচ উইকেট তুলেও নেয়। তবে সময় যাওয়ার সাথে সাথে লঙ্কানদের ব্যাট থেকে রান আসতে থাকে। সেই সহায়তা এবং টাইগার পেসারদের লাইন-লেংথ ভুলে বোলিংয়ে সহজেই রান আসতে থাকে। ৫৭ রানে ৫ উইকেট থেকে তাই সহজেই ২৮৮ হয় লঙ্কানদের। জবাবে লঙ্কানদের ইনিংস থেকে শিক্ষা না নিয়ে উইকেট বিলিয়ে আসে টাইগার ব্যাটাররা।
দ্বিতীয় ইনিংসেও দেখা যায় একই চিত্র। এবারো এক ধনঞ্জয় ও কামিন্দুর ব্যাটেই রান পাহাড়ে চাপা পড়ে বাংলাদেশ। শরিফুল-তাইজুলদের নাকানি চুবানি দিয়ে ৪১৮ রান করে বসে লঙ্কানরা। ৫১১ রানের জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংসে দেখা যায় উল্টো চিত্র। যে পিচে লঙ্কানরা হেসে খেলে করে ৪১৮ রান সেই একই পিচে ৪৭ রানেই শেষ ৫ উইকেট। দলের ব্যাটারদের দায়িত্ব জ্ঞানহীন এমন ব্যাটিং দেখে সেই রকম হতাশ বাংলাদেশের দর্শক থেকে শুরু করে ক্রিকেট বোদ্ধারা সবাই।
বাংলাদেশ জাতীয় দলের নির্বাচক আব্দুর রাজ্জাক এরকম হতাশার ব্যাটিং দেখে বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের দিক থেকে যদি বলেন আমার কাছে খুবই অপ্রত্যাশিত মনে হয়েছে এবং মেনে নেওয়ার মতো নয়। এই রকম ব্যাটিং হবে, বিশেষ করে দ্বিতীয় ইনিংসে…ওরা ভালো ব্যাটিং করেছে। ওদের ব্যাটিং দেখার পর আমাদের ব্যাটিং দুইরকম মনে হয়েছে। আমি হতাশ।’
সিলেটের উইকেটের প্রসঙ্গ টেনে দলের ব্যাটারদের নিয়ে রাজ্জাক বলেন, ‘পিচের সমস্যা হবে কেন, আধা ঘণ্টার মধ্যে পিচ কি আকাশ–পাতাল পার্থক্য হয়ে যাবে নাকি। কিছুক্ষণ আগেই ওরা দুজন ১০০ মেরে গেল। ১০ মিনিটের বিরতি থাকে। ১০ মিনিটে উইকেটে কী এমন হলো। আসলে আমাদের অ্যাপ্লিকেশনে কিছু ভুল হয়েছে। আসলে আমাদের ভুল।’
বাংলাদেশের হাতে দ্বিতীয় টেস্টের আগে সময় আছে চার দিন। নতুন ব্যাটিং কোচের চাওয়া থাকবে চট্টগ্রাম টেস্ট শুরুর আগেই উন্নতি। যাতে অন্তত দুই ব্যাটারের রানের চেয়ে দলের রান কম না হয়।
মন্তব্য করুন