ভুয়া জন্মসনদ ব্যবহার / ভিকারুননিসার আরও এক ছাত্রীর ভর্তি বাতিল
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের আজিমপুর শাখায় প্রথম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর ভর্তিতে ভুয়া জন্মসনদ ব্যবহার করা হয়েছে। ভর্তির সময় বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের নজর এড়িয়ে গেলেও পুন:যাচাইয়ে ধরা পড়ে। এরপর ওই শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল করা হয়। ভিকারুননিসা সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির আজিমপুর শাখায় একজন শিক্ষার্থীর প্রথম শ্রেণিতে ভর্তিতে বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠে। এরপর ওই শিক্ষার্থীর মা ভর্তি বাতিলের আবেদন জানান। আবেদনের প্রেক্ষিতে ভারপ্রাপ্ত শাখা প্রধান সাবনাজ সোনিয়া কামালের কাছে যাচাই-বাছাইয়ের পরও কিভাবে ভুয়া জন্মসনদে শিক্ষার্থী ভর্তি হল তার কারণ জানতে চান ভিকারুননিসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কেকা রায় চৌধুরী। এর জবাব দেন ভারপ্রাপ্ত শাখা প্রধান। সেখানে তিনি প্রথম শ্রেণিতে ভর্তিতে একজন শিক্ষার্থীর জন্মসনদে ভুল থাকায় অধ্যক্ষের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। সাবনাজ সোনিয়া কামালের সেই লিখিত জবাব থেকে জানা গেছে, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি তাকে সাতটি আবেদনপত্রের জন্ম নিবন্ধন সনদ আবার যাচাইয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। পুনঃযাচাইয়ে ছয়টি জন্ম নিবন্ধন সনদে কোনো ভুল তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে একটি জন্ম সনদে গরমিল খুঁজে পাওয়া যায়। ওই জন্মসনদে উল্লেখ করা সংখ্যা ব্যবহার করে অনলাইনে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায় নি। এরপর ওই শিক্ষার্থীর অভিভাবককে ডেকে পাঠানো হয়। তিনি জন্মসনদ যে দোকান থেকে প্রিন্ট করে বের করেছেন, সেই দোকান থেকে অনলাইন কপি দুই দিনের মধ্যে দিয়ে যাবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন। সে অনুযায়ী দুই দিন পর একটি জন্মসনদ জমা দিয়ে ভারপ্রাপ্ত শাখা প্রধানকে সেটির অনলাইন কপি যাচাই করতে বলেন। কিন্তু আগে ও পরে জমা দেওয়া জন্মসনদের কপিতে সবকিছু মিল থাকলেও জন্মসাল মিল ছিল না। এরপর শাখা প্রধান ওই অভিভাবকের কাছে প্রতারণা করার কারণ জানতে চান। ওই অভিভাবক তাকে জানান, কম্পিউটার অপারেটর জন্মসনদে ভিন্ন একটি তারিখ বসিয়ে নতুন একটি সনদ তাকে দেয়। কিন্তু তিনি এটি পরে বুঝতে পারেন। এই টেম্পারিংয়ের বিষয়ে তার কোনো পূর্বধারণা ছিল না। তারপর ওই অভিভাবক ভর্তি বাতিলের আবেদন জানান। লিখিত জবাবে সাবনাজ সোনিয়া কামাল আরও জানান, ভর্তির জন্য কাগজপত্র জমা নেওয়ার সময় তাদের অসাবধানতার কারণে বিষয়টি নজর এড়িয়ে যায়। ছাত্রীটি ভর্তির জন্য মনোনীত হয় এবং ভর্তিও হয়। পুনঃযাচাইয়ের জন্য সাতটি আবেদনপত্র যাচাইয়ে ভুলটি ধরা পড়ে। তাই যাচাই কমিটি এই ভুলের জন্য ক্ষমা প্রার্থণা করেন। জানতে চাইলে ভিকারুননিসার আজিমপুর শাখার ভারপ্রাপ্ত শাখা প্রধান সাবনাজ সোনিয়া কামাল কালবেলাকে বলেন, পুন:যাচাইয়ের মাধ্যমে প্রথম শ্রেণির একজন ছাত্রীর ভর্তিতে ভুয়া জন্মসনদ ব্যবহারের তথ্য পাওয়া গেছে। ওই ছাত্রীর মাকে আমরা ডেকেছি। তিনি জানিয়েছেন, কম্পিউটার অপারেটর এই টেম্পারিং করেছেন। পরবর্তীতে তিনিই ভর্তি বাতিলের আবেদন করেছেন। সে প্রেক্ষিতে ভর্তি বাতিল করা হয়েছে। জানতে চাইলে ভিকারুননিসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কেকা রায় চৌধুরী কালবেলাকে বলেন, প্রথম শ্রেণির একজন ছাত্রীর ভর্তিতে ব্যবহৃত কাগজ যাচাই-বাছাই করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। পরে যাচাই করে আজিমপুর শাখা দেখেছে, সনদটি ভুয়া। ফটোশপ দিয়ে এটি বানানো হয়েছে। এর আগে চলতি শিক্ষাবর্ষে প্রথম শ্রেণিতে ১৬৯ জন ছাত্রীকে বিধিবহির্ভূতভাবে ভর্তি করানোর পর তাদের ভর্তি বাতিল করা হয়। এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই প্রথম শ্রেণিতে জালিয়াতি করে আরও ৩৬ ছাত্রী ভর্তির তথ্য ফাঁস হয়। এসব শিক্ষার্থীদের ভর্তিতে মিথ্যা তথ্যের মাধ্যমে জাল সনদ ব্যবহার করা হয়।
১০ মে, ২০২৪

১৬৯ আসনে ভর্তিতে মাউশির নির্দেশনার অপেক্ষায় ভিকারুননিসা
ভিকারুননিসা নূন স্কুলের পক্ষে আইনজীবী অ্যাডভোকেট রাফিউল ইসলাম হাইকোর্টকে জানিয়েছেন, আদালতের আদেশ অনুযায়ী প্রথম শ্রেণিতে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে ১৬৯ ছাত্রীর ভর্তির বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) নির্দেশনা চাইলেও তা এখনো পাওয়া যায়নি। নির্দেশনার অপেক্ষায় রয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। গতকাল বৃহস্পতিবার বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চকে এ তথ্য অবহিত করা হয়। এর আগে গত ৬ মার্চ প্রথম শ্রেণির ১৬৯ ছাত্রীর ভর্তি বাতিলের পর এসব শূন্য আসনে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে শিক্ষার্থী ভর্তি করে তার তালিকা আদালতে দাখিল করতে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। ১৪ মার্চের মধ্যে এই ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে বলা হয়। ১৬৯ ছাত্রীর ভর্তি বাতিলের প্রতিবেদন অ্যাফিডেভিট আকারে আদালতে দাখিলের পর বুধবার বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এদিকে এই রিট মামলায় ভর্তি বাতিল হওয়া ১৬৯ শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের মধ্যে ৩৬ জন ভর্তি বাতিল আদেশের বিরুদ্ধে চেম্বার আদালতে আবেদন করেছেন। আদালতে স্কুলের পক্ষে আইনজীবী অ্যাডভোকেট রাফিউল ইসলাম ও রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাইনুল হাসান ছিলেন। প্রসঙ্গত, গত ৪ মার্চ ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রথম শ্রেণির ১৬৯ ছাত্রীর ভর্তি বাতিল করে স্কুল কর্তৃপক্ষ। চলতি বছর ভিকারুননিসায় প্রথম শ্রেণিতে বিধিবহির্ভূতভাবে ১৬৯ জন শিক্ষার্থীকে ভর্তি করা হয়েছিল। যাদের জন্মসাল ছিল ২০১৫ ও ২০১৬ সাল। কিন্তু মাউশি প্রজ্ঞাপন দিয়ে বলেছিল, ২০১৭ সালে জন্মসনদ রয়েছে এমন শিক্ষার্থীরাই প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির আবেদন করতে পারবে। কিন্তু এই ১৬৯ শিক্ষার্থীর অভিভাবক ২০১৫ ও ২০১৬ সালের জন্মসনদ দিয়ে তাদের সন্তানদের ভর্তির জন্য আবেদন করেন। পরে তদন্তে বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় ২০১৫ সালে জন্মগ্রহণকারী ১০ জন এবং ২০১৬ সালে জন্মগ্রহণকারী ১৫৯ জন শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল করা হয়। এর আগে ভিকারুননিসা স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তিতে অনিয়ম হয়েছে উল্লেখ করে এই বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে মাউশির মহাপরিচালক বরাবর একটি আবেদন দেন পারভীন আক্তার নামে এক অভিভাবক। কিন্তু আবেদন নিষ্পত্তি না করায় হাইকোর্টে রিট করেন তিনি।
১৫ মার্চ, ২০২৪

বাতিল নয়, ভর্তি বহাল চায় ভিকারুননিসার ১৬৯ ছাত্রীর অভিভাবকরা
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ১৬৯ জন ছাত্রীর ভর্তি বাতিল না করে বরং ভর্তি বহাল রাখার দাবিতে মানববন্ধন করছেন সেই শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা। রোববার (১০ মার্চ) সকাল ৯টায় ভিকারুননিসার মূল শাখার সামনে এই মানববন্ধন শুরু হয়। মানববন্ধনে অভিভাবকরা বলেন, আমরা ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের সকল নির্দেশনা যথাযথ নিয়মে মেনে ভর্তির আবেদন করি। কর্তৃপক্ষ তা যাচাই-বাছাই করে ভর্তি বিষয়ে অনুমতি প্রদান করে। ভর্তি হয়ে বাচ্চারা ৬ মার্চ পর্যন্ত ক্লাসও করেছে। কিন্তু হঠাৎ করে আদালতের রায় আসে ২০১৫ ও ২০১৬ সালে জন্ম নেয়া ১৬৯ ছাত্রীর ভর্তি বাতিল করতে হবে।  এ ব্যাপারে আমরা আগে থেকে কিছুই জানতাম না। প্রতিষ্ঠান থেকেও কিছু অবহিত না করে হঠাৎ করেই ভর্তি বাতিল করে আমাদের জানানো হয়। এখন আমরা বাচ্চাদের নিয়ে কোথায় যাব? তাই আমরা চাই, বাতিল না করে ভর্তি যেন বহাল রাখা হয়। মানববন্ধনে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়ান। সেখানে লেখা রয়েছে- মাউশির ভুলের মাশুল আমরা কেন ভোগ করব, আমি আমার স্কুলে যেতে চাই, আমরা এখানেই পড়ব, আমাদের প্রিয় স্কুলে আমরা ফিরে যেতে চাই ইত্যাদি। এ সময় তারা সমস্যা সমাধানে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন। বেলা পৌনে ১১টায় মানববন্ধন কর্মসূচি শেষ হয়।
১০ মার্চ, ২০২৪

সেই ১৬৯ শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল করল ভিকারুননিসা
অবশেষে অবৈধভাবে ভর্তি হওয়াপ্রথম শ্রেণির ১৬৯ শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল করেছে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজকর্তৃপক্ষ। তারা সবাই চলতি বছরের জানুয়ারিতে ভর্তি হয়েছিল। ভিকারুননিসার এক জ্যেষ্ঠ শিক্ষক বিষয়টি নিশ্চিত করে কালবেলাকে বলেন, ভর্তি বাতিলের বিষয়টি তাদের অভিভাবকদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, অবৈধভাবে ভর্তি শিক্ষার্থীদের ভর্তি বাতিল করে আজ বুধবার হাইকোর্টকে জানানোর নির্ধারিত তারিখ রয়েছে। তার আগেই এসব শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল করল ভিকারুননিসা। এর আগে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ভিকারুননিসা স্কুল কর্তৃপক্ষকে ১৬৯ জন শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল করতে চিঠি দেয় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। মাউশির চিঠিতে বলা হয়, ভিকারুননিসায় প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির ক্ষেত্রে বয়সের ঊর্ধ্বসীমা (নিজেদের নির্ধারিত) অনুসরণ না করে ১ জানুয়ারি ২০১৭ সালের আগে জন্মগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের ভর্তি করাটা ছিল বিধিবহির্ভূত। এ অবস্থায় ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে প্রথম শ্রেণিতে বিধিবহির্ভূতভাবে ভর্তি হওয়া ২০১৫ সালে জন্মগ্রহণকারী ১০ জন এবং ২০১৬ সালে জন্মগ্রহণকারী ১৫৯ জনসহ মোট ১৬৯ জন শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল করে জরুরিভিত্তিতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরকে জানাতে অনুরোধ করা হলো। ভিকারুননিসার বিভিন্ন শাখায় ১৬৯ শিক্ষার্থীকে ভর্তিতে অনিয়মের অভিযোগ তুলে দুই শিক্ষার্থীর অভিভাবক স্কুল কর্তৃপক্ষ বরাবর আবেদন করেন। সাড়া না পেয়ে তারা হাইকোর্টে রিট করেন। গত ২৩ জানুয়ারি হাইকোর্ট ১০ দিনের মধ্যে বিষয়টি নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন। সে অনুযায়ী ভিকারুননিসা স্কুল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেয় মাউশি।
০৬ মার্চ, ২০২৪

সেই ১৬৯ শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল করল ভিকারুননিসা
অবশেষে অবৈধভাবে ভর্তি হওয়া‌ প্রথম শ্রেণির ১৬৯ জন‌ শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল করেছে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ‌ কর্তৃপক্ষ। তারা চলতি বছরের জানুয়ারিতে ভর্তি হয়েছিল। ভিকারুননিসার একজন জ্যেষ্ঠ শিক্ষক বিষয়টি নিশ্চিত করে কালবেলাকে বলেন, ১৬৯ জন শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল করা হয়েছে। ওই শিক্ষার্থীদের ভর্তি বাতিলের বিষয়টি আজ তাদের অভিভাবকদের স্কুল থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।  জানা গেছে, অবৈধভাবে ভর্তি শিক্ষার্থীদের ভর্তি বাতিল করে বুধবার (৬ মার্চ) হাইকোর্টকে জানানোর নির্ধারিত তারিখ রয়েছে। তার আগেই এসব শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল করল ভিকারুননিসা স্কুল কর্তৃপক্ষ। এর আগে, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ভিকারুননিসা স্কুল কর্তৃপক্ষকে ১৬৯ জন শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল করতে চিঠি দেয় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। তাদের ভর্তি বাতিল করে মাউশিকে জানাতে বলা হয়। মাউশির চিঠিতে বলা হয়, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃক ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির ক্ষেত্রে বয়সের ঊর্ধ্বসীমা (নিজেদের নির্ধারিত) অনুসরণ না করে ১ জানুয়ারি ২০১৭ সালের পূর্বে জন্মগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের ভর্তি করাটা ছিল বিধিবহির্ভূত। এ অবস্থায়, ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে প্রথম শ্রেণিতে বিধিবহির্ভূতভাবে ভর্তি হওয়া ২০১৫ সালে জন্মগ্রহণকারী ১০ জন এবং ২০১৬ সালে জন্মগ্রহণকারী ১৫৯ জনসহ মোট ১৬৯ জন শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল করে জরুরিভিত্তিতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরকে অবহিত করার জন্য অনুরোধ করা হলো। প্রসঙ্গত, ভিকারুননিসা নূন স্কুলের বিভিন্ন শাখায় ১৬৯ শিক্ষার্থীকে ভর্তিতে অনিয়মের অভিযোগ তুলে দুই শিক্ষার্থীর অভিভাবক স্কুল কর্তৃপক্ষ বরাবর আবেদন করেন। সাড়া না পেয়ে ওই দুই অভিভাবক হাইকোর্টে রিট করেন। গত ২৩ জানুয়ারি হাইকোর্ট ১০ দিনের মধ্যে বিষয়টি নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন। সে অনুযায়ী ১৬৯ শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল করতে ভিকারুননিসা স্কুল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেয় মাউশি।
০৫ মার্চ, ২০২৪

ভিকারুননিসা ঘিরে কোচিং হাব
ব্যাচভিত্তিক প্রাইভেট কিংবা কোচিং সেন্টারে পড়িয়ে বেতনের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি আয় করেন ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষকরা। এ কারণেই এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একেকটি শাখা কেন্দ্র করে বিস্তৃত কোচিং হাব তৈরি করেছেন তারা। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ভিকারুননিসার চারটি শাখার আশপাশে গড়ে উঠেছে তিন শতাধিক কোচিং ও ব্যাচে পড়ানোর সেন্টার। অভিযোগ আছে, স্কুলের বাইরে এসব প্রতিষ্ঠানে না পড়লে ছাত্রীদের সঙ্গে বিরূপ আচরণ করেন শিক্ষকরা। আবার প্রাইভেটের নামে প্রায়ই ঘটছে যৌন হয়রানির ঘটনা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণে ২০১২ সালে একটি নীতিমালা জারি করে সরকার। ওই নীতিমালা অনুযায়ী, কোনো শিক্ষক নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীকে কোচিং করাতে পারেন না। তবে প্রতিষ্ঠান প্রধানের অনুমতি নিয়ে অন্য প্রতিষ্ঠানের সর্বাধিক ১০ শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়াতে পারেন। ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধিকাংশ শিক্ষকই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এ নীতিমালা মানছেন না। প্রতিষ্ঠানটির বেশ কয়েকজন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান হলেও প্রতিষ্ঠানটির সব শিক্ষক ক্লাসে ঠিকমতো পড়ান না। বরং পরীক্ষায় ভালো নম্বরের লোভ দেখিয়ে শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের সময়ই কোচিং ও ব্যাচে প্রাইভেট পড়ার পরামর্শ দেন তারা। কেউ কেউ আবার চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়েও ছাত্রীদের নিজের প্রতিষ্ঠানে নেওয়ার চেষ্টা করেন। ছাত্রীরাও নিরুপায়। কারণ, নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট না পড়লে পরীক্ষার খাতায় নম্বর কম দেওয়া হয়—এমন একটি ধারণা দীর্ঘদিন ধরে চালু রয়েছে। জানা গেছে, বাড়তি আয়ের পাশাপাশি এই কোচিং ও প্রাইভেট অনেক শিক্ষককে ক্ষমতাবানও করে তোলে। এর মধ্যে মূল শাখার কলেজ শিক্ষক ফারহানা খানম পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশকে ব্যাচে প্রাইভেট পড়ান। এতে ফারহানা খানমের প্রভাব এতটাই বেড়েছে যে, প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বডির নির্বাচনে কেউ তার বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে সাহস পান না। যার ফলে তিনি বারবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কলেজ শাখার শিক্ষক প্রতিনিধি হচ্ছেন। ভিকারুননিসার একজন শিক্ষক কালবেলাকে বলেন, ‘আগে চাকরিতে যোগ দেওয়ার এক থেকে দেড় বছর পর শিক্ষকরা কোচিং বা ব্যাচে পড়ানো শুরু করতেন। কিন্তু খণ্ডকালীন শিক্ষকরাও শুরু থেকেই কোচিং ও ব্যাচ পড়ান। মূলত কোচিং করিয়ে টাকা কামানোর জন্যই তারা ভিকারুননিসায় খণ্ডকালীন শিক্ষক হয়ে আসেন।’ তিনি বলেন, ‘বেশিরভাগ শিক্ষকই প্রাইভেট ব্যাচে পড়ান। এমনো শিক্ষক আছেন, যারা সকাল থেকে ব্যাচে পড়ানো শুরু করেন। মাঝে ক্লাস করিয়ে আবার বিকেল থেকে শুরু করে রাত অবধি ব্যাচে পড়ান। এ ছাড়া কিছুসংখ্যক শিক্ষক কোচিংয়ে পড়ান। গণিত ও ইংরেজির পাশাপাশি বিজ্ঞান এবং বাণিজ্যের বিশেষায়িত বিষয়গুলোর জন্যই শিক্ষকদের কাছে বেশি শিক্ষার্থী প্রাইভেট পড়তে যায়।’ ব্যাচে প্রাইভেট পড়ানোর বিষয়ে কথা বলার জন্য ড. ফারহানা খানমের সঙ্গ যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ কালবেলাকে বলেন, ‘নীতিমালা অনুযায়ী কোনো শিক্ষক নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীকে কোচিং করাতে পারেন না। কিন্তু অনেক প্রতিষ্ঠানেই এটি মানা হচ্ছে না। মাউশির পক্ষে দেশের লাখ লাখ শিক্ষক কোথায় কোচিং বা ব্যাচে পড়াচ্ছেন, তার খোঁজ রাখা অসম্ভব। এজন্য প্রতিষ্ঠান প্রধানকেই দায়িত্ব নিতে হবে। তিনি কোনো দৃশ্যমান ব্যবস্থা নিলে মাউশির পক্ষে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া সহজ হবে।’ ভিকারুননিসা ঘিরে তিন শতাধিক কোচিং ভিকারুননিসার চারটি শাখার আশপাশে কোচিং ও ব্যাচ পড়ানোর সেন্টার রয়েছে তিন শতাধিক। এর মধ্যে ধানমন্ডি শাখা ঘিরে ৯টি, আজিমপুরে ৩৩টি, বেইলি রোডে মূল শাখায় দুই শতাধিক এবং বসুন্ধরা শাখার আশপাশে পঞ্চাশের বেশি কোচিং সেন্টার ও প্রাইভেট ব্যাচ গড়ে উঠেছে। এসব কোচিং সেন্টার ও ব্যাচের অধিকাংশ শিক্ষার্থীই ভিকারুননিসার। রাজধানীর গ্রিন রোডের গ্রিন কর্নার পরিচিত কোচিং হাব হিসেবে। এখানে অর্কিড এডুকেয়ার, তাকওয়া কোচিং, প্রতিভা বিকাশ কোচিং, নলেজ কর্নার ছাড়াও রয়েছে একাধিক প্রাইভেট ব্যাচ। সব মিলিয়ে অন্তত ৯টি কোচিং ও প্রাইভেট ব্যাচ রয়েছে এখানে। যেখানে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই ভিকারুননিসা ধানমন্ডি শাখার। গ্রিন কর্নার গলির একটি কোচিং সেন্টারের পরিচালক কালবেলাকে বলেন, ‘এখানে চারশ’র মতো শিক্ষার্থী আছে, যার বেশিরভাগই ভিকারুননিসার। এর বাইরে ওয়াইডব্লিউসিএ স্কুলের কিছু শিক্ষার্থী পড়ে। প্রতিটি বিষয়ের জন্য নেওয়া হয় ১ হাজার ৬০০ টাকা করে। তবে ভিকারুননিসার কোনো শিক্ষক এখানে পড়ান না।’ ভিকারুননিসার আজিমপুর শাখার পাশের ১০৩ নম্বর ভবনে চলে কোচিং ও প্রাইভেট ব্যাচ। সেখানে গোল্ডেন টাচ, প্রত্যাশা একাডেমিক কোচিং ছাড়াও কয়েকটি প্রাইভেট ব্যাচে পড়ানো হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গোল্ডেন টাচ একাডেমিক কোচিং। ভবনটির দ্বিতীয় তলায় ওই কোচিংয়ের রয়েছে ছয়টি কক্ষ, প্রতিটিতে ১২টি করে বেঞ্চ। প্রত্যেক বেঞ্চে তিনজন করে শিক্ষার্থী বসতে পারেন। এই ভবনের ভেতর দিয়ে আরেকটি ভবনে যেতে হয়। সেই ভবনের তৃতীয় তলায় ব্যাচে গণিত পড়াতেন আজিমপুর শাখার শিক্ষক মুরাদ হোসেন। সম্প্রতি যৌন হয়রানির অভিযোগে দায়ের করা মামলায় তিনি এখন জেলে। এ ছাড়া ওই ভবনে রয়েছে বিসিএ কোচিং। ভবনের দ্বিতীয় তলায় নিজের বাসায় প্রতিদিন দুটি করে ব্যাচ পড়ান ভিকারুননিসার আজিমপুর শাখার ইংরেজির শিক্ষক আলী আনোয়ার। বিসিএ ক্যাডেট একাডেমির পরিচালক মশিউর রহমান কালবেলাকে বলেন, ‘নতুন শিক্ষাক্রমের কারণে কোচিংয়ে শিক্ষার্থী কমে গেছে। ভিকারুননিসার বেশিরভাগ শিক্ষার্থী এখন শ্রেণিশিক্ষকের প্রাইভেট ব্যাচে অথবা নামকরা একটি কোচিং সেন্টারের চানখারপুল শাখায় পড়েন।’ বিসিএতে কোচিং করা ১৫০ জনের মধ্যে ৭০ থেকে ৮০ জনই ভিকারুননিসা বলে জানান তিনি। আজিমপুর শাখার কাছেই চায়না গলি। সেখানে গুরুকুল, কমপ্লিট কমার্স, উদয় ক্যাডেট অ্যান্ড একাডেমিক কোচিং, মেধাবিকাশ একাডেমিক অ্যান্ড সেরা স্কুল ভর্তি কোচিং, হানিফস এডুকেয়ার, আতিক একাডেমি, ডিভাইন সায়েন্স একাডেমি, সাফওয়ানস এডুকেয়ার, ভার্টেক্স, একিউ ক্যাডেট একাডেমি, কনফিডেন্স টিচিং কেয়ার, সাকসেস একাডেমিক কেয়ার, এএইচডি লার্নিং পয়েন্ট, সন্ধান একাডেমিয়া সেন্টার, ইয়থ, আইডিয়াল ক্যাডেট কোচিং অ্যান্ড একাডেমিক কেয়ার, অনন্যা কোচিং সেন্টার, গণিত চর্চা কেন্দ্রসহ কোচিং সেন্টার ও প্রাইভেট ব্যাচ রয়েছে অন্তত ৩৩টি। ভিকারুননিসার মূল শাখার আশপাশে কোচিং-টিউশনের বিশাল হাব। বইঘর গলি, খন্দকার গলি ও কালীমন্দির গলিতে এগুলোর অবস্থান। ভিকারুননিসা শিক্ষকদের পাশাপাশি নটর ডেম, মতিঝিল আইডিয়ালের শিক্ষক এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোচিং হাব গড়ে তুলেছেন। গত বৃহস্পতিবার সরেজমিন দেখা গেছে, বইঘর গলির ৬৩/এ নম্বর বাড়িতে বিটপ একাডেমিক অ্যান্ড অ্যাডমিশন কেয়ার ও প্রজ্জ্বল ইংলিশ ভার্সন একাডেমিক কেয়ারে শিক্ষার্থীরা কোচিং করছেন। এ ভবনেই ভিকারুননিসার পাঁচ শিক্ষক ব্যাচে পড়ান। তারা হলেন, সহকারী অধ্যাপক সীমা সারমিন ও মোরশেদা আইরিন এবং প্রভাষক সুমন ফকির, মোছা. শাহানাজ বেগম ও মো. শরিফুল ইসলাম। সব মিলিয়ে এই ভবনে কোচিং ও ব্যাচ আছে ১২টি। এখানে কোচিং সেন্টারের এত জনপ্রিয়তা যে, কোচিং রুম ভাড়া দেওয়ার বিজ্ঞাপনও চোখে পড়বে। পাশেই ৬৩/ডি বাড়িতে তানভীর আইসিটি কেয়ারসহ কোচিং ও ব্যাচ তিনটি। ৬৩/সি নম্বর বাড়িতে এমআইটি কোচিং বাদেও ব্যাচে পড়ান আরও চারজন। ৬৪ নম্বর বাড়িতে পড়ান ভিকারুননিসার গভর্নিং বডির কলেজ শাখার শিক্ষক প্রতিনিধি ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. ফারহানা খানম। এখানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি বলে জানিয়েছেন এলাকার বাসিন্দারা। এই ভবনেই ভিকারুননিসার প্রভাষক মো. মেহেদী হাসানসহ অন্য প্রতিষ্ঠানের মোট পাঁচজন শিক্ষক ব্যাচে পড়ান। একইভাবে বইঘর গলি, খন্দকার গলি ও কালীমন্দির গলিতে কোচিং ও প্রাইভেট ব্যাচ আছে দুশর বেশি। এ ছাড়া বসুন্ধরা শাখায় অধিকাংশ শিক্ষকের বাসায় রয়েছে মিনি কোচিং সেন্টার। শিক্ষকদের বাসা ওই শাখার আশপাশের বিভিন্ন ব্লকে। বাসার ভেতরে একটি রুমে হোয়াইট বোর্ড ঝুলিয়ে সেখানে বেঞ্চ, টেবিলসহ ক্লাসরুমের আদলে গড়ে তুলেছেন কোচিং সেন্টার। সেখানেই প্রতিদিন পাঁচ থেকে আটটি ব্যাচ পড়ানো হয়। প্রতি ব্যাচে পড়ে ২০ থেকে ৪০ শিক্ষার্থী। সকালে শুরু হয়ে বিরতি দিয়ে রাত ১০টা পর্যন্ত চলে কোচিং ক্লাস। এমন মিনি কোচিংয়ের সংখ্যাও পঞ্চাশের বেশি। খণ্ডকালীন শিক্ষকরা আবার যৌথভাবে বাড়িভাড়া নিয়ে প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পড়ান। গণিত, বাংলা, ইংরেজি ও পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষকদের বাসায় এমন মিনি কোচিং সেন্টার বেশি। এসব কোচিংয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যাও কম নয় বলে জানা গেছে। ভিকারুননিসার মূল শাখার একজন শিক্ষক কালবেলাকে বলেন, ‘শিক্ষকদের এই কোচিং বাণিজ্যের জন্য অনেক ক্ষেত্রে অভিভাবকরাও দায় এড়াতে পারেন না। কারণ, প্রত্যেকেই নিজের সন্তানকে ক্লাসে সবার আগে দেখতে চান। এজন্য তারা স্কুলের বাইরে কোচিং কিংবা ব্যাচে পড়াতে ব্যাপক উৎসাহী, যার অনৈতিক সুযোগ নেন কিছু শিক্ষক।’ এদিকে শিক্ষক মুরাদ হোসেন সরকারের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ সামনে আসার পর শিক্ষকদের কোচিং বা প্রাইভেটে পড়ানো নিষিদ্ধ করেছে ভিকারুননিসা স্কুল কর্তৃপক্ষ। প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কেকা রায় চৌধুরী কালবেলাকে বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে কোচিং প্রাইভেট বন্ধের নির্দেশনা দিয়েছি। এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে তদারকি করা হবে।’ কোচিং-প্রাইভেট ঘিরে যৌন হয়রানি ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বসুন্ধরা শাখার বাংলার শিক্ষক পরিমল জয়ধর স্কুলের পাশে একটি বাড়িতে কোচিং করানোর সময় দশম শ্রেণির এক ছাত্রীকে প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করেছিলেন ২০১১ সালে। ওই ঘটনার ভিডিও ফাঁস হলে দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। ছাত্রী ধর্ষণের সেই মামলায় ২০১৫ সালে পরিমলকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত। ২০২২ সালের বসুন্ধরা শাখার ইংরেজির শিক্ষক আবু সুফিয়ানের বিরুদ্ধে দুই ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠে। তদন্তে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় ওই শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। সর্বশেষ কয়েক দিন আগে আজিমপুর শাখার গণিতের শিক্ষক মুরাদ হোসেন সরকারের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলেছেন একাধিক ছাত্রী। এর পরিপ্রেক্ষিতে গঠিত তদন্ত কমিটি অভিযোগের সত্যতা পায়। পরে আন্দোলনের মুখে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। একজন অভিভাবকের দায়ের করা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। দুই দিনের রিমান্ড শেষে এখন তিনি কারাগারে আছেন। নতুন আইনে আসছে নিষেধাজ্ঞা শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রস্তাবিত ‘শিক্ষা আইন’-এর খসড়ায় বলা হয়েছে, কোনো প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক তার নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীকে কোচিং সেন্টারে পাঠদান বা প্রাইভেট পড়াতে পারবেন না। আইনটির খসড়া চূড়ান্ত করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
০৩ মার্চ, ২০২৪

মুরাদের ল্যাপটপে ভিডিও পাওয়া গেছে : পুলিশ 
রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের আজিমপুর শাখা ক্যাম্পাসের শিক্ষক মোহাম্মদ মুরাদ হোসেনের বিরুদ্ধে ছাত্রী নিপীড়নের প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন। বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান তিনি।  ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন বলেন, আসামি মুরাদের অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ও ল্যাপটপ জব্দ করে কিছু অডিও ভিডিও ক্লিপ পাওয়া গেছে।  তিনি বলেন, একজন শিক্ষকের কাছ থেকে এ ধরনের আচরণ কেউ আশা করে না। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি একজন বাদী লালবাগ থানায় আসেন। তিনি অভিযোগ করেন, গত বছর তার মেয়ে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় গণিতের শিক্ষক মুরাদ হোসেনের ব্যক্তিগত কোচিং সেন্টারে প্রাইভেট পড়ত। তখন মুরাদ ওই ছাত্রী ও তার সহপাঠীদের সঙ্গে কুরুচিপূর্ণ আচরণ করেন। গত বছরের ১০ মার্চ দুপুর ১২টার দিকে কোচিং শেষে অন্য সহপাঠীদের ছুটি দিয়ে কৌশলে ওই মেয়েকে আটকে রাখা হয়। পরে তার সঙ্গে ‘খারাপ’ আচরণ করেন মুরাদ। এ ছাড়া প্রায়ই তার শরীরে তিনি হাত দিতেন। পরে বাদী জানতে পারেন, শিক্ষক মুরাদ আরও অন্তত দুই শিক্ষার্থীর সঙ্গে একই আচরণ করেছেন। অনেক ছাত্রী এমন পরিস্থিতির শিকার হয়েছে। ওই শিক্ষার্থী জিন্স প্যান্ট পরিধান করে কোচিংয়ে উপস্থিত হলে অভিযুক্ত শিক্ষক এসব পোশাক না পড়ে ঢিলেঢালা সেলোয়ার কামিজ পরে আসতে বলতেন। তিনি আরও বলেন, এর আগে গত ৭ ফেব্রুয়ারি মুরাদ হোসেনের বিরুদ্ধে স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে ছাত্রীদের যৌন হয়রানির অভিযোগ করা হয়। স্কুল কর্তৃপক্ষ অভিযোগ তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে। তদন্ত কমিটি তাকে বরখাস্তের সুপারিশ না করে বদলির সুপারিশ করে। পরে শনিবার মুরাদকে প্রত্যাহার করে অধ্যক্ষের কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়। এতে সন্তুষ্ট না হয়ে রোববার মুরাদের শাস্তির দাবিতে ছাত্রীরা আজিমপুর ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করে। মামলার পর ২৬ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে আমরা আসামিকে গ্রেপ্তার করি।  খন্দকার মহিদ উদ্দিন বলেন, ভুক্তভোগী আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ২২ ধারায় সাক্ষ্য দিয়েছেন। তদন্ত শেষ করে আসামিকে বিচারের আওতায় আনা হবে। যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা অনেক তথ্য পাচ্ছি। আসামি এসব অভিযোগ এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে।
২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

যৌন হয়রানির অভিযোগে ভিকারুননিসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা
যৌন হয়রানির অভিযোগে রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক মুরাদ হোসেন সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। সোমবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর লালবাগ থানায় এ মামলা করা হয়।  অভিযুক্ত মুরাদ ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজের আজিমপুর শাখার গণিতের শিক্ষক। সালাম হক নামের এক অভিভাবক তার বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করেছেন। মামলা নম্বর ১৭/৩৮। মামলার আবেদনে বলা হয়, আমার মেয়ে বর্তমানে ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজের আজিমপুর দিবা শাখায় ৮ম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। ২০২২ সালে আমার মেয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে অধ্যয়নকালীন সময়ে মুরাদ হাসান সরকার শ্রেণিতে গণিতের ক্লাস নেওয়ার সময় তার ব্যক্তিগত বসার ডেস্ক ছেড়ে চেয়ার টেনে নিয়ে আমার মেয়ের বসার বেঞ্চের সামনে নিকটে বসতো। আমার মেয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণির ক্লাস ক্যাপ্টেন ছিল এবং গণিতে মেধাবী ছিল। যে কোনো গণিত প্রতিযোগিতায় মেয়ের দিকে বিবাদী বেশি মনোযোগ দিত এবং আমার মেয়ের ব্যক্তিগত বইয়ের পিছন দিকে মেয়ের নাম লিখত। প্রায় সময় বিবাদী আমার মেয়ের মেধার বিষয়ে প্রশংসা সুলভ কথাবার্তা বলে মেয়েকে বিবাদীর ব্যক্তিগত কোচিং সেন্টারে পড়ার জন্য আগ্রহ সৃষ্টি করত। সেই প্রেক্ষিতে আমার মেয়ে গত বছর ৭ম শ্রেণিতে পড়ার সময় বিবাদীর ব্যক্তিগত কোচিং সেন্টারে ভর্তি হয়।  কোচিং চলাকালীন প্রায় সময় আমার মেয়েসহ তার সহপাঠীদের সাথে কুরুচিপূর্ণ প্রাপ্ত বয়স্কদের কৌতুক শুনাতো। আমার মেয়ে স্কুলে নাচ করতো এবং সেই নাচের ভিডিও বিবাদী ঘুমানোর আগে দেখতো বলে আমার মেয়েকে প্রায়ই বলত। গত বছরের ১০ মার্চ বেলা আনুমানিক সাড়ে ১২টার সময় কোচিং শেষে আমার মেয়ের সহপাঠীরা চলে যাওয়ার সময় বিবাদী আমার মেয়েকে কৌশলে ডেকে বসিয়ে রেখে বিবাদীর উল্লিখিত কোচিং সেন্টারে দুপুরের খাবারের পর রান্নাঘর থেকে পানি আনার কথা বলে এবং হঠাৎ করে পিছন থেকে বিবাদী আমার মেয়েকে জড়িয়ে ধরে মুখে চুম্বন করে। এতে আমার মেয়ে অস্বস্তি বোধ করলে বিবাদী মেয়েকে বলে, আমি তোমাকে বাবার মতো জড়িয়ে ধরে চুম্বন করেছি। এটা কাউকে বলবে না।  মামলার আবেদনে আরও বলা হয়, পরবর্তীতে বিবাদী প্রায় সময়ই কোচিং শেষে কৌশলে রেখে আমার মেয়েকে জড়িয়ে ধরে চুম্বন করতো এবং শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে হাত দিত। এভাবে দিনের পর দিন চলতে থাকে এবং বিভিন্ন স্পর্শ কাতর স্থানে পোশাকের উপরে এবং ভিতরে হাত ঢুকিয়ে স্পর্শ করে চাপ দিত। মেয়ে জিন্স ও টি শার্ট পরে কোচিং সেন্টারে আসলে বিবাদী সেগুলো পরিধান না করে ঢিলেঢালা সেলোয়ার কামিজ পড়ে আসার জন্য বলত। এ বিষয়ে জানতে চাইলে লালবাগ থানার ওসি খন্দকার হেলাল উদ্দিন কালবেলাকে বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে একটি মামলার আবেদন করা হয়েছে। এটি দ্রুতই মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হবে। পরবর্তীতে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  
২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

যৌন হয়রানির অভিযোগে ভিকারুননিসা শিক্ষক বরখাস্ত
যৌন হয়রানির অভিযোগে রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের আজিমপুর শাখার গণিতের শিক্ষক মুরাদ হোসেন সরকারকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তবে তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্তে একটি শক্তিশালী কমিটি গঠন করা হবে। সোমবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডি বিষয়টি নিয়ে এক অনলাইন সভা ডাকে। সেখানেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বডির একজন সদস্য এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি কালবেলাকে জানান, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান সবার সাথে আলোচনা করে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। একইসঙ্গে অধিকতর তদন্তের জন্য তিনি কমিটি গঠন করে দেবেন বলে জানিয়েছেন, সেখানে স্কুলের কেউ থাকবে না। সভায় ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডির সব সদস্য, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার অফিসের একজন জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার, এডিসি (শিক্ষা ও আইসিটি) প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কেকা রায় চৌধুরী কালবেলাকে বলেন, অভিযুক্ত শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি অধিকতর তদন্তের জন্য ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার অফিস থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ / তদন্তে মিলেছে শিক্ষক মুরাদের যৌন হয়রানির সত্যতা
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের আজিমপুর শাখার গণিতের শিক্ষক মুরাদ হোসেন সরকারের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে তদন্ত কমিটি। কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর মুরাদ হোসেনকে অধ্যক্ষ কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানা গেছে। শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কেকা রায় চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশ থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।  অফিস আদেশে মুরাদ হোসেন সরকারকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে, ‘আপনি মোহাম্মদ মুরাদ হোসেন সরকার ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের আজিমপুর দিবা শাখায় জ্যেষ্ঠ শিক্ষক হিসেবে কর্মরত। আপনার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। শিক্ষার পরিবেশ স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে এবং এ বিষয়ে বিধি মোতাবেক আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করার লক্ষ্যে আপনাকে ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে অধ্যক্ষ কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হলো। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ আদেশ বলবৎ থাকবে।’  এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কেকা রায় চৌধুরী কালবেলাকে বলেন, গভর্নিং বডির চেয়ারম্যানের অনুমোদনক্রমে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে সবাই মিলে বসে এ বিষয়ে বিস্তারিত (নতুন) সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এর আগে শিক্ষক মুরাদ হোসেন সরকারের বিরুদ্ধে শিশুশিক্ষার্থীদের প্রাইভেট কোচিংয়ে নিয়ে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। মুরাদ হোসেনের যৌন হয়রানি ও নিপীড়নের বিচার চেয়ে গত ৭ ফেব্রুয়ার ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের আজিমপুর শাখার প্রধান সাবনাজ সোনিয়া কামালের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন কয়েকজন অভিভাবক। সেখানে তারা সন্তানদের সঙ্গে ঘটা যৌন হয়রানির ঘটনার বিবরণ দিয়ে অভিযুক্ত মুরাদের যথোপযুক্ত শাস্তি দাবি করেন। সেই অভিযোগপত্র যায় ভিকারুননিসার অধ্যক্ষের কাছে। পরদিন অধ্যক্ষ তিন সদস্যের প্রাথমিক তদন্ত কমিটি গঠন করেন। কমিটির আহ্বায়ক আইসিটি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মমতাজ বেগম। সদস্য পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. ফারহানা খানম ও ইংরেজি প্রভাতী শাখার শাখাপ্রধান শামসুন আরা সুলতানা। কমিটি তাদের প্রতিবেদন অধ্যক্ষের কাছে জমা দেয় গত বৃহস্পতিবার রাতে। তার ভিত্তিতেই মুরাদ হোসেন সরকারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪
X