শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১
মিল্টন সমাদ্দার গ্রেপ্তার : আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করল মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ
‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার’ আশ্রমের চেয়ারম্যান মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেপ্তার করায় তাৎক্ষণিক আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ কর্মসূচি পালন করেছে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। বুধবার (১ মে) রাতে সংগঠনটির মহানগর উত্তর শাখার নেতাকর্মীরা এই কর্মসূচি পালন করেছেন। এর আগে বুধবার (১ মে) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ডিবি পুলিশের একটি দল ঢাকার মিরপুর থেকে মিল্টনকে গ্রেপ্তার করে। তার আগে গত ২৫ এপ্রিল ‘মানবিক মুখোশের আড়ালে ভয়ংকর মিল্টন সমাদ্দার’ এবং ‘জীবনের ধাপে ধাপে প্রতারণা’ শিরোনামে দুটি সংবাদ প্রকাশ করে দৈনিক কালবেলা। এরপরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাকে নিয়ে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। মুখ খুলতে শুরু করেন ভুক্তভোগীরা। এরপর মাঠে নামেন ডজন ডজন সাংবাদিক। উঠে আসে তার একের পর এক ভয়ংকর প্রতারণার আর অপকর্মের তথ্য।  সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিল্টন সমাদ্দারের সেবামূলক কর্মকাণ্ডের রয়েছে ব্যাপক প্রচারণা। যেখানে দেখা যায়, অসহায়-দুস্থ মানুষের সেবায় তিনি গড়ে তুলেছেন ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার’ নামের একটি বৃদ্ধাশ্রম। রাস্তা থেকে অসুস্থ ও ভবঘুরেদের কুড়িয়ে ওই বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রয় দেন, করেন সেবা-শুশ্রূষা। জনসেবামূলক এসব কর্মকাণ্ডের স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন সরকারি-বেসরকারি নানা পুরস্কারও। তবে ভালো কাজ যতটুকু করেছেন, প্রচার করেছেন তার চেয়েও কয়েক গুণ। মানুষের কিডনিসহ বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কেটে বিক্রির মতো ভয়ংকর অপকর্মের পাশাপাশি রয়েছে বহু অভিযোগ।   অনুসন্ধানে মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠে এসেছে তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-    মিল্টন সমাদ্দারের দাবি, আশ্রমে বৃদ্ধদের চিকিৎসা দেওয়া হয় না। কিন্তু অনুসন্ধানে দেখা যায়, তার আশ্রমে চিকিৎসার খরচ বাবদ প্রতিমাসে ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকা খরচ হয়; যা অস্বাভাবিক। আবার আশ্রমে চিকিৎসা না দেওয়ার দাবি করলেও তিনি ডাক্তারদের জন্য ৬০ লাখ টাকার বিলাসবহুল গাড়ি কিনেছেন বলেও অভিযোগ আছে।  আশ্রমের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত প্রায় ৯০০ মরদেহ দাফন করা হয়েছে বলে দাবি করেন মিল্টন। এসব মরদেহ রাজধানীর মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থান, রায়ের বাজার বুদ্ধিজীবী কবরস্থান ও আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে বলে দাবি তার। তবে কালবেলার অনুসন্ধানে উঠে আসে মিল্টনের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে সব মিলিয়ে ৫০টি মরদেহ দাফন করা হয়েছে। এ ছাড়া রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে ১৫টির মতো মরদেহ দাফনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। কিন্তু আজিমপুর কবরস্থানে ওই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত কোনো মরদেহের দাফন হয়নি। তবে মিল্টন সমাদ্দারের দাবি অনুযায়ী ৯০০ মরদেহ দাফন করা হলে বাকি ৮৩৫টি মরদেহ কোথায় দাফন করা হয়েছে, তার কোনো সুদুত্তর পাওয়া যায়নি। এসব মরদেহ আবার বেশিরভাগ সময় রাতে দাফন করা হয়েছে না রহস্যের জন্ম দিয়েছে। তাছাড়া দাফন করা মৃতদেহের পেটে আবার কাঁটাছেঁড়ার দাগ থাকার অভিযোগও রয়েছে।  আশ্রমে যাদের মৃত্যু হয়েছে তাদের ডেথ সার্টিফিকেট মিল্টন নিজেই তৈরি করেছেন বলে অভিযোগ আছে। ডাক্তারের সীল-সাক্ষর জাল করে এসব করা হয়েছে বলে অনুসন্ধানে উঠে আসে। আবার মৃতদেহের শরীরে কাঁটাছেঁড়ার দাগ থাকার বিষয়ে মসজিদ কর্তৃপক্ষ প্রশ্ন তুললে বিনামূল্যে সেখানে গোসল (মৃতদের) করানো বাদ দেন মিল্টন। পরে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা করে খরচ করে আশ্রমের মধ্যে মৃতদেহ গোসল করানো হতো বলে জানা গেছে।  মিল্টন সমাদ্দারের আশ্রমে এক বৃদ্ধকে রেখে আসেন মিরপুরের দারুস সালাম থানার বঙ্গবন্ধু পরিষদের সহ-সভাপতি রনি মল্লিক। তবে সেই বৃদ্ধের ভাগ্যে কী ঘটেছিল সেই উত্তর পাননি রনি মল্লিক। রনির অভিযোগ, বৃদ্ধের বিষয়ে জানতে চাইলে উল্টো আমাকে নির্যাতন করা হয়। তার ধারণা বৃদ্ধকে হয়তো বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। মিল্টন সমাদ্দার হোমকেয়ার নামের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে আয় করে ৬৬ লাখ টাকা বৃদ্ধাশ্রমে দান করেছেন বলে সাক্ষাতকার দিয়েছেন। কিন্তু বাস্তবে তার হোমকেয়ারের কোনো সার্ভিস নেই। শুধু লাইসেন্স আছে। এছাড়া তিনি সব সময় দুটি আশ্রমের কথা বলে এসেছেন। তবে একটি আশ্রমের তথ্য সব সময় গোপন রেখে এসেছেন অভিযোগ আছে।    এছাড়া আশ্রমে চর্টার সেল বানিয়ে মানুষকে নির্যাতন, বরিশালে চার্চ দখল করতে মন্ত্রণালয়ের নামে ভুয়া চিঠি তৈরি, চাকরি দেয়ার কথা বলে টাকা হাতিয়ে নেওয়া, শিশু পাচার বা বিক্রি, সাঈদী, মামুনুল হকের মতো লোকদের মুক্তির মিথ্যা প্রচারণা ইত্যাদি নানা অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।  প্রসঙ্গত, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক কোটি ষাট লাখের বেশি অনুসারী রয়েছে মিল্টন সমাদ্দারের। অভিযোগ রয়েছে এই বিশাল অনুসারীদের কাজে লাগিয়ে তার মূল টার্গেট ছিল বিভিন্ন মানবিক কাজ প্রচার করে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করা।
০২ মে, ২০২৪

মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন
সাধারণ মানুষের আবেগকে পুঁজি করে আশ্রয়ের নামে ৯০০ অসহায় অজ্ঞাত মানুষের কিডনি ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পাচারের অভিযোগ তুলে মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।  শনিবার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর মিরপুর পল্লবীতে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ, ঢাকা মহানগর উত্তর আয়োজিত মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে এ দাবি জানানো হয়। এ সময় বক্তারা বলেন, মিরপুর এলাকায় চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ারের নামে মিল্টন সমাদ্দার বাঙালি জাতির আবেগের সঙ্গে খেলা করেছে। সে এই শিশু ও বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রয় নেওয়া অসহায় ও নিরপরাধ সাধারণ মানুষের কিডনিসহ বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিক্রি করেছে। আমরা এই কুলাঙ্গারের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। পাশাপাশি এই কুলাঙ্গারকে দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানাই। তারা অভিযোগ করে জানান, মিল্টন সমাদ্দার বাঙালি জাতির আবেগকে কাজে লাগিয়ে দেশ ও বিদেশে থাকা বিভিন্ন প্রবাসীদের কাছ থেকে চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ারের নামে বিপুল পরিমাণে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। সে একজন প্রতারক, আমরা চাই দ্রুত তাকে যেন গ্রেপ্তার করা হয়।   মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ, ঢাকা মহানগর উত্তরের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী এবং পল্লবী থানা যুবলীগের নেতাকর্মীরা। এর আগে গত ২৫ এপ্রিল কালবেলার প্রিন্ট ভার্সনে ‘মানবিক মুখোশের আড়ালে ভয়ংকর মিল্টন সমাদ্দার’ শিরনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। কালবেলার পাঠকদের জন্য সংবাদটি হুবহু তুলে ধরা হলো- মিল্টন সমাদ্দার। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীদের কাছে পরিচিত একটি নাম। মানবতার সেবক হিসেবে তার পাঁচটি ফেসবুক পেজে অনুসারী (ফলোয়ার) সংখ্যা প্রায় ২ কোটি। অসহায় মানুষের জন্য গড়ে তুলেছেন ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার’ নামের বৃদ্ধাশ্রম। রাস্তা থেকে অসুস্থ কিংবা ভবঘুরেদের কুড়িয়ে সেখানে আশ্রয় দেন। সেসব নারী, পুরুষ ও শিশুকে নিয়ে ভিডিও তৈরি করে প্রায়ই তাকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করতে দেখা যায়। মানুষের অসহায়ত্ব তুলে ধরে তাদের জন্য বিত্তবানদের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেন। তার আবেদনে সাড়াও মেলে প্রচুর। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ১৬টির বেশি নম্বর এবং তিনটি ব্যাংক হিসাবে প্রতি মাসে প্রায় কোটি টাকা জমা হয়। এর বাইরে অনেকেই তার প্রতিষ্ঠানে সরাসরি অনুদান দিয়ে আসেন। মানবিক কাজের জন্য এখন পর্যন্ত তিনটি রাষ্ট্রীয় পুরস্কারও পেয়েছেন মিল্টন সমাদ্দার। এ পর্যন্ত সব ঠিকঠাকই ছিল। কিন্তু এটাই মিল্টনের আসল চেহারা নয়। মানবিকতার আড়ালে তিনি যা করেন, তা গা শিউরে ওঠার মতো। যেই প্রতিষ্ঠানের জন্য এত পরিচিতি, সেই আশ্রম ঘিরেই ভয়াবহ প্রতারণার জাল বিস্তার করেছেন মিল্টন। প্রকৃতপক্ষে যে কয়জনকে লালন-পালন করছেন, প্রচার করছেন তার চেয়ে কয়েক গুণ। লাশ দাফন করার যে হিসাব দিচ্ছেন, তাতেও আছে বিরাট গরমিল। সবচেয়ে ভয়ংকর হলো, মিল্টনের বিরুদ্ধে রয়েছে অসহায় মানুষকে আশ্রয় দেওয়ার নামে তাদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিক্রির অভিযোগ। মিল্টন সমাদ্দারের ব্যক্তি জীবনেও নৈতিকতা বা মানবিকতার বালাই নেই। কিশোর বয়স থেকেই ছিল অর্থের লোভ। প্রতিবেশী, চিকিৎসক কিংবা সাংবাদিকরা বিভিন্ন সময় তার কাছে শারীরিক লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন। এমনকি নিজের জন্মদাতা পিতাকেও বেধড়ক মারধরের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। হিসাব মেলে না মরদেহের, অভিযোগ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ চুরির: মিল্টন সমাদ্দারের ফেসবুক পেজ ঘেঁটে দেখা যায়, তার আশ্রমে সব সময় আড়াইশ থেকে তিনশ অসুস্থ রোগী থাকেন। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে রাস্তায় যারা মারা যান, তাদের দাফন করেন মিল্টন। আবার তার আশ্রমে অবস্থানকালেও অনেকে মারা যান। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত প্রায় ৯০০ মরদেহ দাফন করেছেন বলে মিল্টন দাবি করেন। মিল্টন জানান, যাদের দাফন করা হয়েছে, তাদের মধ্যে ৬০০ জন তার আশ্রমে মারা গেছেন। আর বাকি ৩০০ মরদেহ রাস্তা থেকে এনে তিনি দাফন করেছেন। এসব মরদেহ রাজধানীর মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থান, রায়ের বাজার বুদ্ধিজীবী কবরস্থান ও আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে বলে দাবি তার। তবে কালবেলার অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্য বলছে ভিন্ন কথা। সরেজমিন মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে গিয়ে জানা যায়, মিল্টন সমাদ্দারের প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে সেখানে সব মিলিয়ে ৫০টি মরদেহ দাফন করা হয়েছে। এসব মরদেহের ডেথ সার্টিফিকেট কালবেলার হাতে রয়েছে। এ ছাড়া রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে ১৫টির মতো মরদেহ দাফনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। তবে আজিমপুর কবরস্থানে ওই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত কোনো মরদেহের দাফন হয়নি বলে কালবেলাকে নিশ্চিত করেছেন সেখানকার দায়িত্বরতরা। তাহলে মিল্টন সমাদ্দারের দাবি অনুযায়ী ৯০০ মরদেহ দাফন করা হলে বাকি ৮৩৫টি মরদেহ কোথায় গেছে? ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার’ আশ্রমে অবস্থানকালে কারও মৃত্যু হলে তার সার্টিফিকেট দেন মাহিদ খান নামের একজন চিকিৎসক। তবে তার স্বাক্ষর এবং সিলের সঙ্গে বিএমডিসির নিবন্ধন নম্বর উল্লেখ নেই। বিএমডিসির বিধি অনুযায়ী চিকিৎসকের স্বাক্ষর এবং সিলে নিবন্ধন নম্বর উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক। বিস্তারিত জানার জন্য বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে মোহাম্মদ আব্দুল মাহিদ খান নামে একজন চিকিৎসকের সন্ধান পাওয়া যায়। কমফোর্ট হাসপাতালে তার চেম্বার রয়েছে। তবে সরেজমিন ওই হাসপাতালে গিয়ে উল্লেখিত চিকিৎসকের দেখা মেলেনি। অনুসন্ধানে জানা গেছে, মিল্টন সমাদ্দারের দক্ষিণ পাইকপাড়া আশ্রমের কাছেই বায়তুর সালাম জামে মসজিদ। এই মসজিদে এক সময় তার প্রতিষ্ঠানে নিয়ে আসা মরদেহ বিনামূল্যে গোসল করানো হতো। তার মানবিক কাজে উদ্বুদ্ধ হয়ে মসজিদ কর্তৃপক্ষ তাকে এই সুবিধা দিয়েছিল। তবে গোসল করানোর সময় দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা প্রায় প্রতিটি মরদেহের বিভিন্ন স্থানে কাটাছেঁড়ার দাগ শনাক্ত করেন। করোনার সময় এ বিষয়ে মিল্টন সমাদ্দারকে প্রশ্ন করে মসজিদ কর্তৃপক্ষ। এরপর তিনি ওই মসজিদে মরদেহ পাঠানো বন্ধ করে দেন। মিল্টন সমাদ্দারকে দীর্ঘদিন ধরে চেনেন স্থানীয় একটি মাদ্রাসার পরিচালক তোফাজ্জল হোসেন। তিনি কালবেলাকে বলেন, ‘মিল্টন এক সময় বাসা ভাড়া শোধ করতে পারতেন না। এখন তিনি এগুলো করে কোটি কোটি টাকার মালিক। দামি গাড়িতে চড়েন। আড়ালে মানুষের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ চুরি করেন। আমাদের বায়তুর সালাম মসজিদে ওর মরদেহ ফ্রি গোসল করিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিছু মরদেহ গোসল করানোর পর দেখা যায়, সবগুলোর শরীরে কাটা দাগ। এ বিষয়ে মিল্টনকে প্রশ্ন করা হলে তিনি মরদেহ পাঠানো বন্ধ করে দেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘রাস্তা থেকে মানুষ তুলে আনার পর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। যাদের কিডনিসহ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ ভালো থাকে, তাদের যথাযথ চিকিৎসা করানো হয়। তাদের জন্য ভালো খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করেন। এরপর সুস্থ হলে তাদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নেওয়া হয়। সুস্থ মানুষ কিন্তু কিছুদিন পরে দেখি মারা যান।’ তিনি আরও বলেন, ‘বারেক চাচা মরদেহ গোসল করাতেন। চাচা বলেছেন, তিনি একবার ওর আশ্রমে গিয়ে এক ব্যক্তিকে সুস্থ সবল দেখে এসেছেন। এর দু-তিন দিন পরই মসজিদে গোসল করানোর জন্য ওই ব্যক্তির মরদেহ আসে। ওই লাশের শরীরেও পেটের দিক দিয়ে কাটা দেখা যায়। এরপর বারেক চাচাও মরদেহ গোসল করাতে অস্বীকৃতি জানান।’ অনেক খোঁজাখুঁজির পর দক্ষিণ পীরেরবাগ আমতলা বাজারে গিয়ে সন্ধান মেলে সেই বারেক চাচার। মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে তাকে ফোন করা হলে তিনি নিচে নামছেন জানিয়ে বাসার নিচে অপেক্ষা করতে বলেন। কিন্তু এরপরই ফোন বন্ধ করে দেন। কয়েক ঘণ্টা পর ইন্টারকমে ফোন করে একজন লোক মারা গেছেন বলা হলে তিনি নিচে নামেন। তবে আশ্রম থেকে আসা মরদেহ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি স্পষ্ট করে কিছু বলতে রাজি হননি। বারেক নামের এই ব্যক্তি বলেন, ‘আমি আগে তার মরদেহ গোসল করাতাম। এখন করাই না।’ এর কারণ জানতে চাইলে কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি বয়স্ক মানুষ। তার সঙ্গে আমার দীর্ঘদিন ধরে কোনো যোগাযোগ নেই।’ ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার’-এ কাজ করেছেন—এমন একজন বলেন, ‘কোনো রোগী অসুস্থ হলে সরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয় না। এখানে রেখেই চিকিৎসা করা হয়। কারণ, তিনি চান না কেউ পুরোপুরি সুস্থ হোক। এটা তার ব্যবসা।’ ওই ব্যক্তির কথার মিল পাওয়া যায় মৃতদের ডেথ সার্টিফিকেটেও। যতজনকে দাফন করা হয়েছে, তাদের প্রত্যেকের ডেথ সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ারের প্যাডে। একটি আশ্রমে এত মানুষের মৃত্যুর বিষয়টি অবহিত করে মন্তব্য চাওয়া হলে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশিদ ই মাহাবুব কালবেলাকে বলেন, ‘এত মানুষ মারা যাওয়া অস্বাভাবিক। তার মানে উনার এখানে প্রোপার চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই। তা ছাড়া উনি কতজনকে হাসপাতালে রেফার করেছেন, সেটাও খতিয়ে দেখতে হবে। উনার এখানে তো সবাই মারা যেতে পারে না। কেউ বেশি অসুস্থ হলে তাকে হাসপাতালে পাঠাতে হবে, চিকিৎসা করাতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘আশ্রম হসপিটালাইজড হলে সেখানে স্পেশালাইজড চিকিৎসক কে আছেন, সেটা দেখতে হবে। থাকলেও তিনি নিয়মিত যান কি না, সেটাও দেখতে হবে। প্রোপার চিকিৎসা হলে এত মানুষ মারা যাওয়ার কথা নয়।’ আর্থিক হিসাবে চরম অস্বচ্ছতা: সাধারণ মানুষের দানের টাকায় পরিচালিত অলাভজনক সামাজিক প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন দেয় সরকারের সমাজসেবা অধিদপ্তরে আওতাধীন জেলা সমাজসেবা কার্যালয়। মিল্টন সমাদ্দারও তার চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ারের অনুমোদন সমাজসেবা থেকে নিয়েছেন। তবে সমাজসেবা অধিদপ্তরের নিয়ম অনুযায়ী প্রতি বছর নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান দিয়ে অডিট এবং দুই বছর পরপর নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি নবায়নের কথা থাকলেও তিনি সেটি করেন না। মিল্টন সমাদ্দারের পাঁচটি ফেসবুক পেজে বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের ১৬টি নম্বর দেওয়া রয়েছে। এ ছাড়া তিনটি বেসরকারি ব্যাংকে খোলা হিসাবের মাধ্যমে চলে আর্থিক লেনদেন। এসব মোবাইল ব্যাংকিং এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বরে লেনদেনের তথ্য সংগ্রহ করে কালবেলা। এতে দেখা যায়, প্রতি মাসে কোটি টাকার মতো জমা হয়। তবে মিল্টনের আশ্রমে থাকা সর্বসাকল্যে ৫০ জন মানুষের দেখাশোনার জন্য এই বিপুল পরিমাণ টাকা ব্যয় হয় কি না—সেই প্রশ্ন উঠেছে। সরেজমিন মিল্টনের আশ্রম পরিদর্শন করে দেখা যায়, বিভিন্ন বিষয় প্রচার-প্রচারণার জন্য মিল্টনের রয়েছে ১৬ জনের একটি দল। এরা বিভিন্ন মানবিক গল্পের ভিডিও তৈরি করেন। এরপর সেসব ভিডিও ফেসবুকে দিয়ে মানুষের কাছ থেকে অর্থ নেন। শুধু তাই নয়, তার পাঁচটি ফেসবুক পেজ নিয়মিতভাবে ডলার খরচ করে বুস্ট করা হয়। এজন্য গত এক সপ্তাহেই ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা ব্যয় করা হয়েছে বলে হিসাব পাওয়া গেছে। একাধিক ব্যক্তিকে মারধর, জমি দখলের অভিযোগ: মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে নিজস্ব লাঠিয়াল বাহিনী দিয়ে একাধিক ব্যক্তিকে মারধরের প্রমাণ মিলেছে কালবেলার অনুসন্ধানে। তার আশ্রমের ভেতরে রয়েছে নিজস্ব বন্দিশালা। সেখানে আছে লাঠিসোটা, পাইপসহ মারধরের নানা উপকরণ। চুন থেকে পান খসলেই তার লাঠিয়াল বাহিনী হামলে পড়ে। সর্বশেষ গত ঈদুল ফিতরের আগের দিন ১০ এপ্রিল সাভারের কমলাপুর এলাকার বাহেরটেকে নিজের কেনা জমি দেখতে গিয়ে বেধড়ক মারধরের স্বীকার হন মো. সামসুদ্দিন চৌধুরী নামের ৬৫ বছর বয়সী এক ব্যক্তি। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন মেয়ে এবং মেয়ের জামাই। বাধা দিতে গিয়ে মারধরে স্বীকার হন তারাও। মারধরে মেয়ের জামাই ফয়েজ আহমেদের হাতের লিগামেন্ট ছিঁড়ে যায় এবং সামসুদ্দিন চৌধুরীর একটি চোখ নষ্ট হয়ে যায়। সামসুদ্দিনের মেয়ে সেলিনা বেগমও মারধরের হাত থেকে রক্ষা পাননি। স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এলে প্রায় এক ঘণ্টা পর তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। ওই দিনের ঘটনা সম্পর্কে ভুক্তভোগী সেলিনা বেগম কালবেলাকে জানান, ‘আমাদের জমি সে কম দামে ক্রয় করতে চেয়েছে। জমি না বিক্রি করায় সে আমাদের ওপর ক্ষিপ্ত ছিল। মিল্টন সরকারি রাস্তায় বাঁশ দিয়ে বেড়া দিয়ে রেখেছে। যে কারণে আমাদের গাড়ি যাচ্ছিল না। পরে সরকারি রাস্তায় বেড়া দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে তার লোকজন আমাদের ওপর হামলা চালায়। প্রায় ২০ থেকে ২৫ জন লোক লাঠিসোটা নিয়ে এসে বেধড়ক মারধর করে। এরপর আমার বাবা আর স্বামীকে মিল্টনের আশ্রমের ভেতরে নিয়ে একটি রুমের মধ্যে আটকে রাখে। সেখানে অনেক লাঠিসোটা, পাইপ ও ছুরি ছিল। পাইপ দিয়ে একজনের পর একজন করে পেটাতে থাকে। মিল্টন নিজেও একটু পরপর এসে মারধর করে। আমি তখন মিল্টনের পায়ে ধরে আমার স্বামী ও বাবাকে ছেড়ে দিতে বললে আমাকেও বেধড়ক মারধর করা হয়। পরে লোকজন এগিয়ে এলে আমাদের ছেড়ে দেয়।’ এ ঘটনায় মিল্টন সমাদ্দারকে প্রধান আসামি করে সাভার মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে ভুক্তভোগী পরিবার। ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পুলিশ পরিদর্শক (ইন্টেলিজেন্স) আব্দুল্লাহ বিশ্বাস কালবেলাকে বলেন, ‘মারধরের ঘটনায় চারজন আহত হয়েছেন। মামলার তদন্ত চলছে। আমরা মিল্টন সাহেবের কাছে সিসিটিভি ফুটেজ চেয়েছি। এখনো দেয়নি।’ গার্মেন্টসে চাকরি খোঁজার নাম করে গত শুক্রবার সারাদিন সাভারের বাহেরটেক এলাকা ঘুরে ভয়ংকর সব তথ্য পাওয়া গেছে। পুরো এলাকাজুড়ে মিল্টন সমাদ্দার এক আতঙ্কের নাম। তার ভয়ে নিজের বাড়িতে যান না স্থানীয় খ্রিষ্টানপাড়ার অনেক মানুষ। তাদের মধ্যে একজন হেমন্ত রোজারিও। মিল্টনের আশ্রমের পাশে তার একটি জমি রয়েছে। স্থানীয় এক ব্যক্তির কাছ থেকে তিনি ওই জমি ক্রয় করেছেন। পরে মিল্টন সমাদ্দার জমিটি কিনে নিতে চান। তবে তিনি বিক্রি করতে রাজি হননি। এক পর্যায়ে জটিমি জোর করে দখলে নিয়ে স্থাপনা তৈরি করেন মিল্টন। বাধা দিতে গিয়ে হেমন্ত রোজারিও মারধরের শিকার হন। মিল্টন নিজে তাকে মারধর করে। এরপর স্থানীয় লোকজনের বাধায় ওই স্থাপনা ভেঙে ফেলা হলেও এখনো ভয়ে-আতঙ্কে নিজের জমিতে যেতে পারেন না। গত শুক্রবার দুপুরে হেমন্তের বাড়িতে গিয়ে তার চোখেমুখে ভয় ও আতঙ্কের ছাপ দেখা যায়। তার মা, বোন ও স্ত্রীর অবস্থাও একই রকম। হেমন্ত রোজারিও কালবেলাকে বলেন, ‘আমি ওই জমি কিনেছি। আমি গরিব মানুষ। মিল্টন সাহেব আমার জমি কিনতে চাইছে। আমি বেচি নাই। আমার জমি জোর করে দখল করে একটা ঘর বানাইছে। বাধা দেওয়ায় আমারে ধইরা মারছে। পরে আমারে বলছে, তুই ওই জমিতে আসবি না। এলে তোরে মাইরালামু।’ নন্দন রোজারিও নামের আরেক ব্যক্তি বলেন, ‘উনাকে এখানে আশ্রম বানাতে আমরাই সাহায্য করেছি। উনি আমার জায়গায় জিনিসপত্র রেখে আশ্রমের কাজ করেছে। ভালো কাজ করে বলে আমরা কিছু বলি নেই। পরে দেখি এসবের আড়ালে তার অন্য উদ্দেশ্য। তিনি এখানকার খ্রিষ্টানদের জমি দখলের উদ্দেশ্যে এসেছেন। কেউ জমি বেচতে না চাইলেই তার উপরে নেমে আসে নির্যাতন। ওর লোকজন তাকে মারধর করে।’ এর আগে কল্যাণপুরের কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতাকেও মারধর করেছেন মিল্টন সমাদ্দার। এরপর উল্টো তাদের বিরুদ্ধেই চাঁদাবাজির মামলা করেন। এ ছাড়া নুর আলম মানিক নামের এক ব্যক্তি নিজের বোনকে আনতে গিয়ে মারধরের শিকার হন। নিরুপায় হয়ে তিনি জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন করেন। পরে পুলিশ এসে তাকে আশ্রম থেকে উদ্ধার করে। সেই সময়ের একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, পুলিশের সামনেই মিল্টন সমাদ্দার ওই ব্যক্তিকে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল করছেন। নুর আলম মানিক কালবেলাকে বলেন, ‘আমার বোনের মানসিক সমস্যা ছিল। আমি ফেসবুকে আমার বোনের ভিডিও দেখে চিনতে পেরে তাকে আনার জন্য মিল্টনের আশ্রমে যাই। আমি জুতা পায়ে দিয়ে তার আশ্রমের ভেতরে ঢোকায় সে আমার গায়ে হাত তোলে। আমাকে তার লোকজন বেধড়ক মারধর করে। জুতা ছিল মূলত উসিলা। সে আসলে আমার বোনকে দিতে চাইছিল না। এটি তার একটা ব্যবসা।’ এ ছাড়া মিল্টনের বিরুদ্ধে একাধিকবার হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসকদের মারধরেরও অভিযোগ রয়েছে। মিল্টনের মারধরের হাত থেকে রক্ষা পায়নি তার জন্মদাতা পিতাও। ২০০১ সালে নিজের পিতাকে বেধড়ক মারধর করেন মিল্টন। সেই ঘটনার জেরে তাকে গ্রাম থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল বলে এলাকাবাসীরা জানান। বরিশালের উজিরপুরের বৈরকাঠি গ্রামের শাহাদাত হোসেন পলাশ কালবেলাকে বলেন, ‘মিল্টন সমাদ্দার তার নবাবাকে বেধড়ক মারধর করে। এ কারণে তাকে গ্রাম থেকে বের করে দেওয়া হয়। পরে সে পালিয়ে ঢাকায় গিয়ে ওঠে। এখন শুনতাছি, উনি নাকি মানবতার ফেরিওয়ালা। এটা শুনে আমরা আশ্চর্য হয়েছি।’ সাংবাদিকদের সঙ্গে বেপরোয়া আচরণ: সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে গণমাধ্যম কর্মীরাও একাধিকবার মিল্টনের তোপের মুখে পড়েছেন। গত ১১ এপ্রিল শ্যামলীর রিং রোডে সেন্ট্রাল মেডিকেলের গেটের সামনে অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তিকে পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিক মিল্টন সমাদ্দারকে বিষয়টি জানান। ফোন পেয়ে আসেন মিল্টন সমাদ্দার। এরপর ওই ব্যক্তিকে গাড়িতে তোলার সময় নিউজ করার জন্য ভিডিও করতে গিয়ে মিল্টনের তোপের মুখে পড়েন একটি অনলাইন পোর্টালের প্রতিবেদক। সে সময় তাকে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল করা হয়। পরে এ বিষয়ে জানতে চেয়ে ফের তোপের মুখে পড়েন অন্য একটি নিউজপোর্টালের অপরাধ বিভাগের প্রধান। হোয়াটসঅ্যাপে তাকে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল এবং হুমকি-ধমকি দিয়ে মেসেজ করেন মিল্টন সমাদ্দার। আশ্রিতদের হিসাব অতিরঞ্জিত: গত রোববার কল্যাণপুরের অফিসে মিল্টন সমাদ্দারের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। সে সময় তিনি জানান, তার আশ্রমে বর্তমানে ১৩০ জন নারী, ১২৬ জন পুরুষ, ৪২ জন প্রতিবন্ধী শিশু, মানসিক ভারসাম্যহীন মায়েদের ৬ জন সন্তান এবং তৃতীয় শ্রেণিতে পড়া ৭টি শিশু রয়েছে। তার হিসাবে সব মিলিয়ে আশ্রিতের সংখ্যা দাঁড়ায় ৩১১ জন। তবে পরিচয় করে গোপন গত শুক্রবার সাভার এবং রোববার পাইকপাড়ার আশ্রম এলাকা ঘুরে মিল্টন সমাদ্দারের দেওয়া হিসাবের সঙ্গে বাস্তবতার মিল পাওয়া যায়নি। গার্মেন্ট কারখানায় চাকরি খোঁজার কথা বলে সাভারের ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার’-এর সামনের একটি চায়ের দোকানে ঘণ্টাখানেক অবস্থান করেন এ প্রতিবেদক। সে সময় আশ্রমের দ্বিতীয় তলায় ৩ জন, তৃতীয় তলায় ২ জন এবং চতুর্থ তলায় ৩ থেকে ৪ জনকে দেখা যায়। স্থানীয়রা জানান, আশ্রমে সর্বোচ্চ ২৫-৩০ জন থাকতে পারেন। এ ছাড়া পাইকপাড়ার আশ্রমে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে ২০ জনের মতো লোক আছেন। বরিশালে চার্চ দখল: বরিশালে ‘চন্দ্রকোনা খ্রিষ্টান মিশনারি চার্চ’ দখল চেষ্টার অভিযোগ রয়েছে মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে। দখলের উদ্দেশ্যে তিনি ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সিল-স্বাক্ষর জাল করে চার্চের নতুন কমিটি গঠন করে বরিশাল জেলা প্রশাসকে একটি চিঠি দেন। ওই কমিটিতে সভাপতি করা হয় মিল্টন সমাদ্দারকে। কমিটির বাকি সদস্যদের প্রায় সবাই মিল্টনের পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়স্বজন। তবে এ বিষয়ে কিছুই জানতেন না চার্চের দায়িত্বরত যাজকরা। পরে তারা ধর্ম মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করলে মন্ত্রণালয় থেকে তাদের জানানো হয়, এ ধরনের কোনো চিঠি ইস্যু করা হয়নি। এরপর তারা কোর্টে মামলা করলে কোর্ট জালিয়াতি করে চার্চ দখল করতে চাওয়া ব্যক্তিদের ওই চার্চের সীমানায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেন। সরেজমিন বরিশালে গিয়ে ওই চার্চের যাজকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মিল্টন সমাদ্দার চার্চ দখল করে সেখানে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বানাতে চেয়েছিলেন। তাতে ব্যর্থ হওয়ায় যাজকদের মারধরের মতো ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছেন। হেনসন দানিল হাজরা নামে আরেক সহকারী যাজক কালবেলাকে বলেন, ‘চার্চ দখল করার জন্য আমাকে গুম করে যাজকদের নামে মামলা দিয়েছিল মিল্টন। মামলায় আমি গুম হয়ে গেছি দেখানো হয়। আসামি করা হয় আমার সহকর্মীকে। আমার বাবাকে ম্যানেজ করে মিল্টন এ কাজ করেন। তারা আমাকে গুম করে ফেলতে চেয়েছিল; কিন্তু পারেনি। পরে আমি পালিয়ে এসপি অফিসে হাজির হয়ে জানাই, আমি গুম হইনি।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মিল্টন ও তার বড় ভাই মোল্লা বাড়ির ব্রিজের ওপরে মসজিদের পাশে আমাকে একবার বেধড়ক মারধর করেন।’ অন্য আরেক যাজক কালবেলাকে বলেন, ‘এই চার্চ দখল করার জন্য মিল্টন সমাদ্দার আমাদের শারীরিক-মানসিক নির্যাতন করেছেন। মারধর করেছেন। আমাদের নামে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতিসহ একাধিক মামলা দিয়ে হয়রানি করেছেন। যদিও সব মামলাই কোর্টে মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। আমাদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।’ চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার নিয়ে নানা অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামাল কালবেলাকে বলেন, ‘সারা দেশে এমন ৬৯ হাজার সংগঠনের নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে। একটি বিশেষ প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে সবকিছু জানা আসলে সম্ভব হয় না। তবে যেসব অভিযোগ উঠেছে, সে বিষয়ে আমরা খতিয়ে দেখব।’ সার্বিক বিষয়ে জানার জন্য গতকাল বুধবার চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ারের চেয়ারম্যান মিল্টন সমাদ্দারকে ফোন করা হলে তিনি কালবেলাকে বলেন, ‘সাভারে আমার আশ্রমে বর্তমানে ২৫৬ জন লোক আছে।’ মরদেহ দাফনের হিসাবে গরমিল সম্পর্কে একাধিকবার প্রশ্ন করা হলেও তিনি কোনো সদুত্তর দেননি। আর্থিক হিসাবে অসংগতি, জমি এবং চার্চ দখলের অভিযোগ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘আমি চিনি না। আপনি সাংবাদিক কি না, সেটা আমি কীভাবে বুঝব?’ তিনি আরও বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে রিপোর্ট করেন। আমার কোনো সমস্যা নাই, সারা দেশের মানুষ জানুক। তবে সেটা প্রোপার ইনভেস্টিগেশন করে করেন।’
২৭ এপ্রিল, ২০২৪

ঢাবিতে মুক্তিযুদ্ধ ও মুজিবনগর সরকারবিষয়ক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) সম্প্রীতি বাংলাদেশ-এর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার উদ্যোগে ‘মুক্তিযুদ্ধ, মুজিবনগর সরকার ও সম্প্রীতির বাংলাদেশ’ শীর্ষক একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।  সোমবার (২২ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয়ের আর সি মজুমদার আর্টস অডিটরিয়ামে এ সভা আয়োজিত হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার প্রধান অতিথি ছিলেন। সম্প্রীতি বাংলাদেশ-এর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. বিমান চন্দ্র বড়ুয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে অংশগ্রহণ করেন সম্প্রীতি বাংলাদেশ-এর আহ্বায়ক পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়, ফার্মেসি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. ফিরোজ আহমেদ, বাংলাদেশ বুদ্ধিস্ট ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ভিক্ষু সুনন্দ প্রিয়, অধ্যাপক ড. চন্দ্রনাথ পোদ্দার, ড. সোমেন ভারতিয়া (আসাম), ড. রীতা চৌধুরী (আসাম), অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. অসীম সরকার এবং সম্প্রীতি বাংলাদেশ-এর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য-সচিব অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন। প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার বলেন, বাংলাদেশ শান্তি ও সম্প্রীতির দেশ। এই সম্প্রীতি বিনষ্ট করার জন্য স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি তৎপর রয়েছে। এই অপশক্তিকে মোকাবিলা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণ ও দূরদর্শী নেতৃত্বে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে এগিয়ে আসার জন্য তরুণ প্রজন্মসহ সকলের প্রতি তিনি আহ্বান জানান। অন্যান্য বক্তারা মহান মুক্তিযুদ্ধ, মুজিব নগর সরকার এবং স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, বঙ্গবন্ধুর বলিষ্ঠ আন্দোলন-সংগ্রাম, অপরিসীম ত্যাগ-তিতিক্ষা এবং অসাম্প্রদায়িক নেতৃত্বের কারণে আমরা স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ পেয়েছি। তাঁরা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে সকলের মধ্যে শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
২২ এপ্রিল, ২০২৪

বুয়েটে কমিটি দেওয়ার ঘোষণা মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) কমিটি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। গতকাল শনিবার সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল এবং সাধারণ সম্পাদক আল মামুন স্বাক্ষরিত যৌথ বিবৃতিতে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, খুব শিগগির বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্মরা বুয়েটে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের কমিটি দিয়ে কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে বুয়েট প্রশাসনকে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে বাধ্য করবে। বুয়েটকে জামায়াত-শিবির ও জঙ্গীদের অভয়ারণ্য হতে দেবে না মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। বিবৃতিতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা বুয়েট শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ রাব্বীর আবাসিক হলের সিট বাতিলের সিদ্ধান্ত অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়। এসব দাবি না মানলে বুয়েট ঘেরাওসহ কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। এতে আরও বলা হয়, ২০২২ সালে বুয়েটে ছাত্রলীগের সাবেক নেতৃবৃন্দ আয়োজিত ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা সভায় উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বাধা দিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অবমাননাকারীদের এখনো বিচার হয়নি। বাধা দানকারীরা কখনোই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে না। তাদের ভিন্ন উদ্দেশ্য রয়েছে। নেতারা আরও বলেন, বুয়েটে স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের ১৯৬২ সালের পাকিস্তানি অধ্যাদেশ বাতিল করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নতুন আইন প্রণয়ন করে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের স্বৈরতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে। এই অধ্যাদেশের মাধ্যমে বুয়েট প্রশাসন কর্তৃক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ অযৌক্তিক, ভিত্তিহীন ও সংবিধান পরিপন্থি। প্রকৃতপক্ষে এ ধরনের সিদ্ধান্ত দ্বারা বুয়েটে প্রতিক্রিয়াশীল জামায়াত-শিবির-জঙ্গিগোষ্ঠীর এজেন্ডা বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এরই মধ্যে বুয়েট নিষিদ্ধ জঙ্গিগোষ্ঠী হিযবুত তাহরীর ও জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে।
৩১ মার্চ, ২০২৪

পাকিস্তান আমলে কীভাবে ভালো ছিলেন প্রশ্ন মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রীর
‘বাংলাদেশের চেয়ে পাকিস্তানের আমলেই ভালো ছিলাম’ নির্বাচনের আগে দেওয়া বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এ বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী বলেন- পাকিস্তান আমলে কোন সুযোগে আপনারা ভালো ছিলেন তার নাম বলেন।  শনিবার (৩০ মার্চ) সকালে টাঙ্গাইল আশিকপুর বাইপাস নগরজলফৈ এলাকায় কাদেরীয়া বাহিনীর মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক জাদুঘর পরিদর্শনকালে এ প্রতিক্রিয়া জানান মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক। মন্ত্রী বলেন, গত দশ দিন ধরে পেঁয়াজ, তেল, ডালসহ বেশকিছু নিত্যপণ্যের দাম কমছে। আর এ সময়ে এটাই তাদের সহ্য হচ্ছে না। তাদের মতে, ১৬০ টাকা কেজি পেঁয়াজের দাম থাকা উচিত ছিল। আর সেই পেঁয়াজ আজ ৫০-৬০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।  মন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশের মানুষ ভালো থাকুক, সুখে থাকুক, শান্তিতে থাকুক এটি বিএনপি চায় না। বঙ্গবন্ধুর যে স্বপ্ন ছিল শোষণমুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত সমাজ তৈরি করা। সেটি যেন না করতে পারে এ জন্য আজ ভারতের পণ্য বর্জনের আন্দোলন করছে তারা। ৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর এ দেশকে আবার মিনি পাকিস্তান বানিয়েছিল তারা। এ সময় টাঙ্গাইল-৪ আসনের সংসদ সদস্য লতিফ সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী ও টাঙ্গাইল-৫ আসনের সংসদ সদস্য মো. ছানোয়ার হোসেনসহ আরও অনেকেই।
৩০ মার্চ, ২০২৪

বুয়েটে কমিটি দেওয়ার ঘোষণা মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ রাব্বীর হলের সিট বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানানোর পাশাপাশি বুয়েটে শীঘ্রই কমিটি দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। শনিবার (৩০ মার্চ) সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও সাধারণ সম্পাদক আল মামুন স্বাক্ষরিত এক যৌথ বিবৃতিতে এই ঘোষণা দেয়া হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, খুব শীঘ্রই বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্মরা বুয়েটে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের কমিটি দিয়ে কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে বুয়েট প্রশাসনকে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে বাধ্য করবে। বুয়েটকে জামাত-শিবির ও জঙ্গীদের অভয়ারণ্য হতে দিবে না মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। বুয়েট শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ রাব্বীর হলের সিট অন্যায় ভাবে বাতিল করার অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। এতে বলা হয়, বিগত ২০২২ সালে বুয়েটে ছাত্রলীগের সাবেক নেতৃবৃন্দ কর্তৃক আয়োজিত ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা সভায় উদ্দেশ্যেপ্রণোদিতভাবে বাঁধা দিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অবমাননা কারীদের এখনও বিচার হয়নি। জাতির পিতার শাহাদাত বার্ষিকীর আলোচনা সভায় বাঁধা প্রদানকারীদেরকে চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতসহ বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের স্বৈরতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। জাতির পিতার শাহাদাত বার্ষিকীর আলোচনা সভায় বাঁধা প্রদানকারীরা কখনোই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে না। এদের ভিন্ন উদ্দেশ্য রয়েছে।  বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, বুয়েটে স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের ১৯৬২ সালের পাকিস্তানি অধ্যাদেশ বাতিল করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নতুন আইন প্রণয়ন করে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের স্বৈরতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে। এই অধ্যাদেশের মাধ্যমে বুয়েট প্রশাসন কর্তৃক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ অযৌক্তিক, ভিত্তিহীন ও সংবিধান পরিপন্থী। বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ এহেন স্বৈরতান্ত্রিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে এধরনের সিদ্ধান্ত দ্বারা বুয়েটে প্রতিক্রিয়াশীল জামাত-শিবির-জঙ্গিগোষ্ঠীর এজেন্ডা বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে বুয়েটে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীর ও জামাত-শিবিরের সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে।  বিবৃতিতে আরও বলা হয়, অবিলম্বে বুয়েট শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ রাব্বীর হলের সিট অন্যায়ভাবে বাতিল করার অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হবে। অবিলম্বে বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের ঘোষণা প্রত্যাহার করতে হবে। বুয়েট ছাত্রশিবির কমিটির সকল জঙ্গি এবং এদের লালন-পালনকারী জড়িত শিক্ষকদের চিহ্নিত করে বহিষ্কারসহ আইনের আওতায় এনে বিচার করতে হবে। অন্যথায় বুয়েট ঘেরাওসহ কঠোর কর্মসূচী ঘোষণা করবে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।
৩০ মার্চ, ২০২৪

বুয়েটে কমিটি দিবে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ
বুয়েট শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ রাব্বীর হলের সিট বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানানোর পাশাপাশি বুয়েটে খুব শিগগিরই কমিটি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। শনিবার (৩০ মার্চ) সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও সাধারণ সম্পাদক আল মামুন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই ঘোষণা দেয়। এতে বলা হয়, খুব শিগগিরই বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্মরা বুয়েটে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের কমিটি দিয়ে কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে বুয়েট প্রশাসনকে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে বাধ্য করবে। বুয়েটকে জামাত-শিবির ও জঙ্গিদের অভয়ারণ্য হতে দিবে না মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। বুয়েট শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ রাব্বীর হলের সিট অন্যায় ভাবে বাতিল করার অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আল মামুন কালবেলাকে বলেন, বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ। যে প্রতিষ্ঠানে জাতির পিতাকে অবমাননা করা হয় সেই প্রতিষ্ঠান কারা চালায়। বুয়েট প্রশাসনের মুখোশ ইতোমধ্যে জাতির সামনে উন্মোচিত হয়েছে। শোকাবহ আগস্টে এরা অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে বঙ্গবন্ধুকে অবমাননা করেছে কিন্তু বিচার হয়নি। নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন ছাত্রশিবিরের ক্যাডাররা জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা সভায় বাঁধা দিয়ে লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত সংবিধানকে লঙ্ঘন করেছে। এদের দ্রুত চিহ্নিত করে বহিষ্কারসহ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বুয়েট প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালনের মধ্য দিয়ে তাদের প্রকৃত চরিত্র জাতির সামনে উন্মোচিত করেছে। বুয়েটে স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের ১৯৬২ সালের পাকিস্তানি অধ্যাদেশ বাতিল করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নতুন আইন প্রণয়ন করে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের স্বৈরতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের কেন্দ্রীয় সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ‘জামাত-শিবির জঙ্গি সংগঠনগুলো সবসময় রাজনীতি করে অন্ধকারে। বুয়েট প্রশাসন এসব প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীকে প্রকাশ্য রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছে। ভবিষ্যতে এরা আবার রগকাটার রাজনীতি শুরু করবে। মুক্তমনা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী শিক্ষার্থীদের হত্যা করার পথ সুগম করে দিয়েছে বুয়েট প্রশাসন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী জামাত-শিবির-জঙ্গিরা এতদিন প্রকাশ্য রাজনীতি করার সুযোগ পেত না। এখন তারা প্রকাশ্য খুন ও রগকাটার রাজনীতি শুরু করার পরিকল্পনা শুরু করেছে। হলগুলোকে জামাত-শিবিরের অভয়ারণ্য পরিণত করার ষড়যন্ত্র চলছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিজ হাতে গড়া সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে ধ্বংস করার জন্য গভীর চক্রান্ত চলছে। বুয়েট এখনও পাকিস্তানি অধ্যাদেশে পরিচালিত হচ্ছে। তিনি বলেন, অবিলম্বে বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের ঘোষণা প্রত্যাহার করতে হবে। বুয়েট ছাত্রশিবির কমিটির সব জঙ্গি এবং এদের লালন-পালনকারী জড়িত শিক্ষকদের চিহ্নিত করে বহিষ্কারসহ আইনের আওতায় এনে বিচার করতে হবে। অন্যথায় বুয়েট ঘেরাওসহ কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।
৩০ মার্চ, ২০২৪

ড. মো. আনোয়ারুল ইসলামের নিবন্ধ / বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও জাপান
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বহির্বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো জাপানের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৭১ সালে জাপান ও চীন এশিয়ার অন্যতম শক্তিশালী দেশ হিসেবে বিবেচিত হতো। চীন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানপন্থি নীতি গ্রহণ করলেও জাপান বাংলাদেশের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করে।  জাপান বরাবরই বাঙালির প্রতি সহানুভূতিশীল ছিল। জাপান বাঙালি জাতীয়তাবাদের দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামে সাহায্যের জন্য এগিয়ে এসেছিল। সরকারি নীতির সঙ্গে জাপানের বুদ্ধিজীবী, ছাত্রসমাজ, পত্রপত্রিকাগুলোর ভূমিকা ছিল বাংলাদেশের পক্ষে। পাকিস্তান বাহিনীর গণহত্যা, শরণার্থী সমস্যা, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করা এ সকল বিষয় নিয়ে জাপানে বেশ জনমত তৈরি হয়েছিল। জাপান টাইমস, ইয়েমুরি শিম্বুন, আসাহী শিম্বুন, মেইনিচি শিম্বুনসহ বিভিন্ন জাপানি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন, সম্পাদকীয়, ও নিবন্ধে পূর্ব পাকিস্তানে গণহত্যা, ধ্বংসযজ্ঞ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ আওয়ামী লীগের ন্যায্য দাবির যৌক্তিকতা ফুটে ওঠে।  ১৯৭১ সালের মার্চেই জাপানের বহুল প্রচারিত দৈনিক ইয়েমুরি শিম্বুন ঢাকার পরিস্থিতি জানার জন্য সংবাদদাতা হিসেবে ওসামু তাকেদাকে ঢাকায় পাঠানো হয়। জাপানি পত্রিকায় পাকিস্তান সরকার এবং নীতির কঠোর সমালোচনা করা হয়। সাংবাদিক নাওয়াকি উসুই এর মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বাংলাদেশ থেকে সংবাদ সংগ্রহ করে জাপানে পাঠাতেন। যেগুলো জাপানে বাংলাদেশ সম্পর্কে ব্যাপক শিহরন সৃষ্টি করেছিল। বলা বাহুল্য বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পূর্ব থেকেই পাকিস্তান ছিল জাপানের সাহায্যভুক্ত দেশ। ১৯৬১-১৯৭১-এক দশকে পাকিস্তান জাপানের ওডিএ বা অফিসিয়াল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসিসট্যান্ট প্রোগ্রামের আওতায় মোট বিদেশি সাহায্যের ১৮ ভাগ পেয়েছিল। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানিদের দ্বারা পূর্ব পাকিস্তানে গণহত্যা, নির্যাতন এবং মুক্তিযুদ্ধের কারণে জাপান ১৯৭১ সালের মে মাস থেকে পাকিস্তানে সাহায্য বন্ধ রাখে। শুধু তাই নয় মুক্তিযুদ্ধে ত্বরিত সহযোগিতার কারণে জাপান ঢাকায় কনসাল জেনারেল অফিস বন্ধ করে দেয়। পাকিস্তান সরকার প্রথম থেকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে অভ্যন্তরীণ সংকট এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক-এ অভিমত প্রকাশ করলেও জাপান সরকার তাতে সমর্থন দেয়নি। উপরন্তু পূর্ব পাকিস্তানের জন্য তিনটি জাপানি জাহাজভর্তি চাল অশান্ত পরিস্থিতির কারণে চট্টগ্রাম থেকে ফিরে এলে তা করাচিতে খালাস করতে বলা হলে জাহাজ কর্তৃপক্ষ তা অস্বীকার করে। অবশ্য পরে তা জাকার্তায় এসে খালাস করে।  অন্যান্য দেশের মতো  মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতে আশ্রয়রত শরণার্থী সমস্যাটি প্রথমেই জাপানের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়। জাপান অত্যন্ত মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে এ বিষয়ে এগিয়ে আসে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পর থেকে লক্ষ লক্ষ বাঙালি প্রাণভয়ে পূর্ব বাংলা থেকে পালিয়ে ভারতের বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় গ্রহণ করে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের মধ্যরাতে বাঙালি নিধনযজ্ঞ শুরু হলে প্রাণভয়ে ও নিরাপত্তার সন্ধানে লাখ লাখ মানুষ বিভিন্ন পথে পাশের দেশ ভারতের সীমান্তবর্তী গ্রাম ও শহরগুলোতে আশ্রয় নেয়।  শরণার্থীদের সাহায্যের ব্যাপারে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো জাপান অত্যন্ত উদার হস্তে এগিয়ে আসে। শরণার্থী বিষয়ক আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী ১৯৭২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের মাধ্যমে জাপান সরকারের সাহায্যের পরিমাণ ছিল ৫০০০০০০ ইউএস ডলার। বেসরকারি উদ্যোগেও জাপানের অনেক সাহায্য ছিল। জাপান রেডক্রস সোসাইটি, জাপান বেঙ্গল ফ্রেন্ডশিপ সোসাইটি জাপানের রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন শরণার্থীদের সাহায্য করার জন্য। সংগঠনের কর্মীরা বিভিন্ন স্কুল কলেজসহ প্রতিষ্ঠানে ঘুরে অর্থ সংগ্রহ করেছেন। অনেক স্কুলের শিশুরা টিফিনের অর্থ দিয়েও সহযোগিতায় এগিয়ে আসে।  বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন এইসাকু সাতো (Eisaku Sato)।  জাপানের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে তিনি শান্তির পক্ষে ছিলেন। তার রাজনৈতিক দর্শন ছিল love of freedom and devotion to peace' (Jiyu o ai shi, heiwa ni tessuru) | এ কারণে নিক্সন প্রশাসনের সাথে মৈত্রীবদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও তিনি পাকিস্তানের পক্ষাবলম্বন করেননি। তার প্রশাসন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সহায়তা করে। ফলে জাপান বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের জন্য ভারতের সঙ্গে সহযোগিতা অব্যাহত রাখে।  জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কোচি আইচি  জাপানে নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত ভি এইচ কোয়েলহোকে জাপানের প্রধানমন্ত্রী এইসাকু সাতোর লেখা একটি পত্র হস্তান্তর করে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে লেখা ওই চিঠিতে পূর্ব বাংলা থেকে ভারতে আশ্রয়গ্রহণকারী লাখ লাখ উদ্বাস্তুদের সহযোগিতার কথা বলা হয়। জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কোচি আইচি শরণার্থীদের জন্য সাহায্য বৃদ্ধির নানান উদ্যোগ গ্রহণ করেন। আন্তর্জাতিক সাহায্যের মাধ্যমে তিনি জাপানি ত্রাণ দেওয়ার ব্যবস্থা নেন।  জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কোচি আইচি একজন ঝানু কূটনীতিবিদ ছিলেন। তিনি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শরণ সিং, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এবং রাষ্ট্রপতি ভি ভি গিরির পূর্ব পরিচিত এবং তাদের সঙ্গে সুগভীর সম্পর্ক ছিল। এছাড়াও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাকাও ফুদুকা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রতি গভীর সহানুভূতিশীল ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ভারত ও জাপান উভয় দেশের শীর্ষস্থানীয় রাজনীতিবিদ, মন্ত্রী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা উভয়দেশে প্রতিনিধিদল পাঠান এবং আলোচনা অব্যাহত রাখেন। যেমন ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জাপান সংসদের লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির চার প্রতিনিধিদলের সদস্য ভারতে আসেন। ইয়েশিও সাকুরাচি  এই দলের নেতৃত্ব দেন। তারা ভারত সরকারের গুরুত্বপূর্ণ শীর্য পর্যায়ের সাথে বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের বিষয়ে আলোচনা করেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সমর্থন এবং জাপানের স্বীকৃতিদানের জন্য হায়াকাওয়া জাপানের পার্লামেন্টের সদস্যদের নিয়ে একযোগে কাজ করেন।  ১৯৭১ সালের জুলাই মাসে জাপানের সোসালিস্ট নেতা  কে. নিশিমুরার নেতৃত্বে ভারতে আসেন। তিনি বেশ কয়েকটি রিফিউজি ক্যাম্প পরিদর্শন করেন এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী  ইন্দিরা গান্ধীর  সঙ্গে দেখা করেন। কে.নিশিমুরা পূর্ব পাকিস্তানে সংঘটিত সেনাবাহিনীর পৈশাচিক আক্রমণের তীব্র নিন্দা করেন। এ জন্য তিনি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানকে দায়ী করেন।  জাপানি বুদ্ধিজীবীরা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে একটি সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। প্রফেসর টি. নারা, টি. ফুকিউরা, প্রফেসর এম. কিরিউয়ু, টি. সুজুকি, এম. ইয়ামানাকা, টি. ওয়েমাদা, কি. তাকেনাকা, লে. জে. ফুজিউরা, তাকাশি হায়াকায়া প্রমুখ উল্লেখযোগ্য। জাপানের প্রথিতযশা এই সকল  বুদ্ধিজীবীগণ বিভিন্ন বিবৃতি বক্তৃতা ও সম্মেলনের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন। তারা পাকিস্তানিদের গণহত্যা, রিফিউজি সমস্যা এবং স্বাধীন বাংলাদেশকে সমর্থন দানের জন্য আন্তর্জাতিকমহলের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছিল। তবে ওই সময়  জাপান প্রবাসী বাঙালি এস্কান্দর আহমেদ চৌধুরি এবং এস এ জালাল এ ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ থেকে জাপানের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত প্রায় ত্রিশজনের মতো ছাত্র অধ্যয়ন করত। এদের সহায়তায় জাপানি বুদ্ধিজীবীরা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা পালনের জন্য বেশ কয়েকটি সভা সমিতি প্রতিষ্ঠা করেছিল। জাপান বেঙ্গল ফ্রেন্ডশিপ অ্যাসোসিয়েশন, জাপান বাংলাদেশ সলিডিটারি ফ্রন্ট, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন ছিল উল্লেখযোগ্য।  জাপানের বিখ্যাত সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকবৃন্দ জাপানে সংগঠিত এই সকল অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে বাংলাদেশ সম্বন্ধে অত্যন্ত ইতিবাচক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। বলা যায় ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সমর্থনকারী জাপানি অধ্যাপক, শিল্পী, সাহিত্যিকদের সংখ্যাই ছিল বেশি। শিক্ষাঙ্গনে জাপানি পণ্ডিত ব্যক্তির মধ্যে পাকিস্তানের সমর্থক পাওয়া দুষ্কর ছিল। এসব পণ্ডিতরা বিভিন্ন বিবৃতি বক্তৃতা ও সম্মেলনের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে দাঁড়িয়ে ছিলেন। বলা বাহুল্য তাদের চিন্তা ও ধ্যানজ্ঞান হয়ে উঠে বাংলাদেশের স্বাধীনতা।  ১৯৭১ সালের নয় মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে টোকিওসহ জাপানের গুরুত্বপূর্ণ শহরে অনেকেরই বাসা এবং অফিস হয়ে উঠে বাংলাদেশ সহায়ক কার্যালয়। সব মিলিয়ে জাপান সরকার, জাপানি সংবাদপত্র, বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদসহ বেসরকারি পর্যায়ে প্রায় সর্বস্তরের জাপানি জনগণ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম: অধ্যাপক, ইতিহাস বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম 
২৬ মার্চ, ২০২৪

ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ (ঢাবি) সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মৌলবাদী শক্তির ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি ধর্মভিত্তিক রাজনীতি স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। শুক্রবার (২২ মার্চ) সংগঠনটির সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও সাধারণ সম্পাদক আল মামুন স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিবৃতিতে এ প্রতিবাদ জানানো হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, প্রতি বছর রমজান মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইফতারকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের মাঝে এক ধরনের উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করে। বিভিন্ন বিভাগ, শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সংগঠন ও টিএসসিভিত্তিক বিভিন্ন সংগঠন কর্তৃক ইফতারের আয়োজন আমাদের মাঝে আনন্দ, সম্প্রীতি এবং অসাম্প্রদায়িকতার প্রতীক হিসেবে কাজ করে। এবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল স্থানে শিক্ষার্থীরা প্রতিবারের ন্যায় সুষ্ঠুভাবে ইফতার আয়োজন করছে। কিন্তু সাম্প্রতিককালে একটি স্বার্থান্বেষী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী ইফতারকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করার চেষ্টা করছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে নিষিদ্ধ ঘোষিত সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রশিবিরের সদস্যরা বিভিন্ন নামে বেনামে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য ধর্মীয় মোড়কে বহিরাগত শিবির ক্যাডারদের সাথে নিয়ে গণ ইফতারের মতো অস্বাভাবিক রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করছে যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৌলিক নীতি ও আদর্শ পরিপন্থি। দেশের প্রচলিত আইন ও সংবিধান পরিপন্থি। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, প্রতিবছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীরা উৎসবমুখর পরিবেশে ইফতার আয়োজন করে থাকে যেখানে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মচারীসহ বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সকলের অংশগ্রহণ থাকে যা নষ্ট করার জন্য সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী অপশক্তি গভীর ষড়যন্ত্র করছে। নিজেদের রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি জামায়াত-শিবির ধর্মকে পুঁজি করে ঢাবিসহ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য পরিবেশ ধ্বংস করার গভীর ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। এরা সবসময় ধর্মকে রাজনীতিতে অপব্যবহার করে নিজেদের রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করে। ধর্মচর্চার নির্ধারিত জায়গা হলগুলোর মসজিদে ধর্মচর্চা না করে ভিন্ন উদ্দেশ্যে ঢাবি ক্যাম্পাসে সংস্কৃতি চর্চার জায়গাগুলোতে ধর্মীয় মোড়কে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড পরিচালিত করার চেষ্টা করছে। নেতারা বলেন, মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের দাবি, গণ-ইফতারের নামে ঢাবিসহ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নাশকতা ও অস্থিতিশীল করার সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি দিতে হবে। অবিলম্বে ঢাবিসহ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে। ধর্মভিত্তিক সংগঠনের রাজনীতির নামে ধর্মের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে। প্রশাসনকে আরও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। অন্যথায় ঢাবিসহ দেশব্যাপী সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।
২২ মার্চ, ২০২৪

শাবিপ্রবিতে ইফতার ইস্যু নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম কাউন্সিলের বিবৃতি 
পবিত্র রমজান মাসে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) ক্যাম্পাসে ইফতার পার্টি নিষিদ্ধ করে ১০ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষের দেওয়া আদেশকে দুরভিসন্ধিমূলক বলেছে মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম কাউন্সিল। সোমবার (১১ মার্চ) এক বিবৃতিতে সংগঠনের সভাপতি শহিদুল ইসলাম কবির উপরোক্ত কথা বলেন। তিনি বলেন, মুসলিম প্রধান বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন অনুষ্ঠান নির্দ্বিধায় আয়োজন করা হলেও মাহে রমজানে ইফতার পার্টি আয়োজনকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে কোন কারণে? শহিদুল ইসলাম কবির বলেন, হযরত শাহজালাল ইয়ামেনী রহঃ এর নামে প্রতিষ্ঠিত শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইফতার পার্টি নিষিদ্ধ করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামী কৃষ্টি কালচার নিষিদ্ধের প্রথমিক কার্যক্রম শুরু করা হলো কিনা তা দেশব্যাপী বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষের নিকট জানতে চায়। মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম কাউন্সিল সভাপতি বলেন, মুসলিম প্রধান বাংলাদেশের একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন সিদ্ধান্ত ইসলাম বিরোধী গোষ্ঠীর চক্রান্ত ছাড়া আর কিছুই নয়। তিনি অবিলম্বে এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করার দাবি জানান।
১১ মার্চ, ২০২৪
X