ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম
প্রকাশ : ২৬ মার্চ ২০২৪, ০১:০৪ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
ড. মো. আনোয়ারুল ইসলামের নিবন্ধ

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও জাপান

বাংলাদেশের ও জাপানের পতাকা। ছবি : সৌজন্য
বাংলাদেশের ও জাপানের পতাকা। ছবি : সৌজন্য

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বহির্বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো জাপানের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৭১ সালে জাপান ও চীন এশিয়ার অন্যতম শক্তিশালী দেশ হিসেবে বিবেচিত হতো। চীন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানপন্থি নীতি গ্রহণ করলেও জাপান বাংলাদেশের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করে।

জাপান বরাবরই বাঙালির প্রতি সহানুভূতিশীল ছিল। জাপান বাঙালি জাতীয়তাবাদের দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামে সাহায্যের জন্য এগিয়ে এসেছিল। সরকারি নীতির সঙ্গে জাপানের বুদ্ধিজীবী, ছাত্রসমাজ, পত্রপত্রিকাগুলোর ভূমিকা ছিল বাংলাদেশের পক্ষে। পাকিস্তান বাহিনীর গণহত্যা, শরণার্থী সমস্যা, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করা এ সকল বিষয় নিয়ে জাপানে বেশ জনমত তৈরি হয়েছিল। জাপান টাইমস, ইয়েমুরি শিম্বুন, আসাহী শিম্বুন, মেইনিচি শিম্বুনসহ বিভিন্ন জাপানি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন, সম্পাদকীয়, ও নিবন্ধে পূর্ব পাকিস্তানে গণহত্যা, ধ্বংসযজ্ঞ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ আওয়ামী লীগের ন্যায্য দাবির যৌক্তিকতা ফুটে ওঠে।

১৯৭১ সালের মার্চেই জাপানের বহুল প্রচারিত দৈনিক ইয়েমুরি শিম্বুন ঢাকার পরিস্থিতি জানার জন্য সংবাদদাতা হিসেবে ওসামু তাকেদাকে ঢাকায় পাঠানো হয়। জাপানি পত্রিকায় পাকিস্তান সরকার এবং নীতির কঠোর সমালোচনা করা হয়। সাংবাদিক নাওয়াকি উসুই এর মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বাংলাদেশ থেকে সংবাদ সংগ্রহ করে জাপানে পাঠাতেন। যেগুলো জাপানে বাংলাদেশ সম্পর্কে ব্যাপক শিহরন সৃষ্টি করেছিল।

বলা বাহুল্য বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পূর্ব থেকেই পাকিস্তান ছিল জাপানের সাহায্যভুক্ত দেশ। ১৯৬১-১৯৭১-এক দশকে পাকিস্তান জাপানের ওডিএ বা অফিসিয়াল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসিসট্যান্ট প্রোগ্রামের আওতায় মোট বিদেশি সাহায্যের ১৮ ভাগ পেয়েছিল। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানিদের দ্বারা পূর্ব পাকিস্তানে গণহত্যা, নির্যাতন এবং মুক্তিযুদ্ধের কারণে জাপান ১৯৭১ সালের মে মাস থেকে পাকিস্তানে সাহায্য বন্ধ রাখে। শুধু তাই নয় মুক্তিযুদ্ধে ত্বরিত সহযোগিতার কারণে জাপান ঢাকায় কনসাল জেনারেল অফিস বন্ধ করে দেয়। পাকিস্তান সরকার প্রথম থেকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে অভ্যন্তরীণ সংকট এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক-এ অভিমত প্রকাশ করলেও জাপান সরকার তাতে সমর্থন দেয়নি। উপরন্তু পূর্ব পাকিস্তানের জন্য তিনটি জাপানি জাহাজভর্তি চাল অশান্ত পরিস্থিতির কারণে চট্টগ্রাম থেকে ফিরে এলে তা করাচিতে খালাস করতে বলা হলে জাহাজ কর্তৃপক্ষ তা অস্বীকার করে। অবশ্য পরে তা জাকার্তায় এসে খালাস করে।

অন্যান্য দেশের মতো মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতে আশ্রয়রত শরণার্থী সমস্যাটি প্রথমেই জাপানের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়। জাপান অত্যন্ত মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে এ বিষয়ে এগিয়ে আসে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পর থেকে লক্ষ লক্ষ বাঙালি প্রাণভয়ে পূর্ব বাংলা থেকে পালিয়ে ভারতের বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় গ্রহণ করে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের মধ্যরাতে বাঙালি নিধনযজ্ঞ শুরু হলে প্রাণভয়ে ও নিরাপত্তার সন্ধানে লাখ লাখ মানুষ বিভিন্ন পথে পাশের দেশ ভারতের সীমান্তবর্তী গ্রাম ও শহরগুলোতে আশ্রয় নেয়।

শরণার্থীদের সাহায্যের ব্যাপারে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো জাপান অত্যন্ত উদার হস্তে এগিয়ে আসে। শরণার্থী বিষয়ক আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী ১৯৭২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের মাধ্যমে জাপান সরকারের সাহায্যের পরিমাণ ছিল ৫০০০০০০ ইউএস ডলার। বেসরকারি উদ্যোগেও জাপানের অনেক সাহায্য ছিল। জাপান রেডক্রস সোসাইটি, জাপান বেঙ্গল ফ্রেন্ডশিপ সোসাইটি জাপানের রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন শরণার্থীদের সাহায্য করার জন্য। সংগঠনের কর্মীরা বিভিন্ন স্কুল কলেজসহ প্রতিষ্ঠানে ঘুরে অর্থ সংগ্রহ করেছেন। অনেক স্কুলের শিশুরা টিফিনের অর্থ দিয়েও সহযোগিতায় এগিয়ে আসে।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন এইসাকু সাতো (Eisaku Sato)। জাপানের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে তিনি শান্তির পক্ষে ছিলেন। তার রাজনৈতিক দর্শন ছিল love of freedom and devotion to peace' (Jiyu o ai shi, heiwa ni tessuru) | এ কারণে নিক্সন প্রশাসনের সাথে মৈত্রীবদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও তিনি পাকিস্তানের পক্ষাবলম্বন করেননি। তার প্রশাসন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সহায়তা করে। ফলে জাপান বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের জন্য ভারতের সঙ্গে সহযোগিতা অব্যাহত রাখে। জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কোচি আইচি জাপানে নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত ভি এইচ কোয়েলহোকে জাপানের প্রধানমন্ত্রী এইসাকু সাতোর লেখা একটি পত্র হস্তান্তর করে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে লেখা ওই চিঠিতে পূর্ব বাংলা থেকে ভারতে আশ্রয়গ্রহণকারী লাখ লাখ উদ্বাস্তুদের সহযোগিতার কথা বলা হয়। জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কোচি আইচি শরণার্থীদের জন্য সাহায্য বৃদ্ধির নানান উদ্যোগ গ্রহণ করেন। আন্তর্জাতিক সাহায্যের মাধ্যমে তিনি জাপানি ত্রাণ দেওয়ার ব্যবস্থা নেন।

জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কোচি আইচি একজন ঝানু কূটনীতিবিদ ছিলেন। তিনি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শরণ সিং, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এবং রাষ্ট্রপতি ভি ভি গিরির পূর্ব পরিচিত এবং তাদের সঙ্গে সুগভীর সম্পর্ক ছিল। এছাড়াও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাকাও ফুদুকা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রতি গভীর সহানুভূতিশীল ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ভারত ও জাপান উভয় দেশের শীর্ষস্থানীয় রাজনীতিবিদ, মন্ত্রী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা উভয়দেশে প্রতিনিধিদল পাঠান এবং আলোচনা অব্যাহত রাখেন। যেমন ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জাপান সংসদের লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির চার প্রতিনিধিদলের সদস্য ভারতে আসেন। ইয়েশিও সাকুরাচি এই দলের নেতৃত্ব দেন। তারা ভারত সরকারের গুরুত্বপূর্ণ শীর্য পর্যায়ের সাথে বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের বিষয়ে আলোচনা করেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সমর্থন এবং জাপানের স্বীকৃতিদানের জন্য হায়াকাওয়া জাপানের পার্লামেন্টের সদস্যদের নিয়ে একযোগে কাজ করেন।

১৯৭১ সালের জুলাই মাসে জাপানের সোসালিস্ট নেতা কে. নিশিমুরার নেতৃত্বে ভারতে আসেন। তিনি বেশ কয়েকটি রিফিউজি ক্যাম্প পরিদর্শন করেন এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে দেখা করেন। কে.নিশিমুরা পূর্ব পাকিস্তানে সংঘটিত সেনাবাহিনীর পৈশাচিক আক্রমণের তীব্র নিন্দা করেন। এ জন্য তিনি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানকে দায়ী করেন।

জাপানি বুদ্ধিজীবীরা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে একটি সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। প্রফেসর টি. নারা, টি. ফুকিউরা, প্রফেসর এম. কিরিউয়ু, টি. সুজুকি, এম. ইয়ামানাকা, টি. ওয়েমাদা, কি. তাকেনাকা, লে. জে. ফুজিউরা, তাকাশি হায়াকায়া প্রমুখ উল্লেখযোগ্য। জাপানের প্রথিতযশা এই সকল বুদ্ধিজীবীগণ বিভিন্ন বিবৃতি বক্তৃতা ও সম্মেলনের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন। তারা পাকিস্তানিদের গণহত্যা, রিফিউজি সমস্যা এবং স্বাধীন বাংলাদেশকে সমর্থন দানের জন্য আন্তর্জাতিকমহলের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছিল। তবে ওই সময় জাপান প্রবাসী বাঙালি এস্কান্দর আহমেদ চৌধুরি এবং এস এ জালাল এ ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ থেকে জাপানের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত প্রায় ত্রিশজনের মতো ছাত্র অধ্যয়ন করত। এদের সহায়তায় জাপানি বুদ্ধিজীবীরা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা পালনের জন্য বেশ কয়েকটি সভা সমিতি প্রতিষ্ঠা করেছিল। জাপান বেঙ্গল ফ্রেন্ডশিপ অ্যাসোসিয়েশন, জাপান বাংলাদেশ সলিডিটারি ফ্রন্ট, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন ছিল উল্লেখযোগ্য।

জাপানের বিখ্যাত সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকবৃন্দ জাপানে সংগঠিত এই সকল অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে বাংলাদেশ সম্বন্ধে অত্যন্ত ইতিবাচক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। বলা যায় ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সমর্থনকারী জাপানি অধ্যাপক, শিল্পী, সাহিত্যিকদের সংখ্যাই ছিল বেশি। শিক্ষাঙ্গনে জাপানি পণ্ডিত ব্যক্তির মধ্যে পাকিস্তানের সমর্থক পাওয়া দুষ্কর ছিল। এসব পণ্ডিতরা বিভিন্ন বিবৃতি বক্তৃতা ও সম্মেলনের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে দাঁড়িয়ে ছিলেন। বলা বাহুল্য তাদের চিন্তা ও ধ্যানজ্ঞান হয়ে উঠে বাংলাদেশের স্বাধীনতা।

১৯৭১ সালের নয় মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে টোকিওসহ জাপানের গুরুত্বপূর্ণ শহরে অনেকেরই বাসা এবং অফিস হয়ে উঠে বাংলাদেশ সহায়ক কার্যালয়। সব মিলিয়ে জাপান সরকার, জাপানি সংবাদপত্র, বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদসহ বেসরকারি পর্যায়ে প্রায় সর্বস্তরের জাপানি জনগণ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।

ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম: অধ্যাপক, ইতিহাস বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম

[ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দৈনিক কালবেলার সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, দৈনিক কালবেলা কর্তৃপক্ষের নয়। ]
কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

অসাধারণ ক্লপের আবেগঘন বিদায়

বিএনপির হাত থেকে ইসলামকে রক্ষা করতে হবে : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দিবে ঢাবি শিক্ষক সমিতি

চাকরি দেবে নোমান গ্রুপ, আবেদন করুন শুধু পুরুষরা

টাকা নিতে অস্বীকৃতি, পোলিং অফিসারকে মারধর

দীপিকার নাম বদলে দিলেন রণবীর

রাইসির মৃত্যুতে রাষ্ট্রীয় শোক পালনের ঘোষণা পাকিস্তানের

রাইসিকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে, বললেন ইসরায়েলি নেতা

ইরানকে সহযোগিতায় সবকিছু করতে প্রস্তুত পুতিন

চাচিকে গলা কেটে হত্যাচেষ্টায় যুবক গ্রেপ্তার 

১০

রাইসির মৃত্যুতে পাল্টে যাবে ইরানের পররাষ্ট্রনীতি!

১১

প্রাণ গ্রুপে নিয়োগ, আবেদনের বয়স ৪৫

১২

বদলি হবেন রাজউকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও 

১৩

সাড়ে ৭ শতাংশ জমির জন্য গৃহবধূকে হত্যা

১৪

রাইসিকে বহনকারী সেই হেলিকপ্টারের ছবি-ভিডিও প্রকাশ্যে

১৫

রাইসির মরদেহ উদ্ধার, পাঠানো হচ্ছে তাবরিজে

১৬

লিচু চাষে বিপর্যয়, হতাশায় বাগান মালিকরা

১৭

টর্নেডোর আঘাতে লন্ডভন্ড শতাধিক ঘরবাড়ি

১৮

ডিপজলের শিল্পী সমিতির দায়িত্ব পালনে নিষেধাজ্ঞা

১৯

রাইসিকে কেন ভয় পেতেন ইসরায়েলের নেতারা

২০
X