বিএনপির ভোট বর্জনের রাজনীতি আত্মহননমূলক
বিএনপির উপজেলা নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্তকে আত্মহননমূলক রাজনীতি বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকার পাঁচ দেশে সরকারি সফর শেষে মঙ্গলবার দেশে ফিরে গতকাল বুধবার মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন তিনি। বিএনপির নির্বাচন বর্জন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, যারা বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত তারা দেশের সংসদ, সিটি করপোরেশন, উপজেলা এমনকি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও অংশ নিতে পারেন না। তাদের কাছে আমার প্রশ্ন, কোনো নির্বাচনেই যদি অংশ নিতে না পারেন, তবে আর কেন বিএনপির রাজনীতি করবেন। গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রে চলমান বিক্ষোভে পুলিশের নিপীড়নের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আমরা দেখেছি, আমাদের এখানে হিরো আলমকে বা কোনো মেয়র পদপ্রার্থীকে কেউ ঘুসি মারলেও তারা (যুক্তরাষ্ট্রে) বিবৃতি দেয়, আর তাদের সেখানে বিক্ষোভ দমন করতে পুলিশ যেভাবে বলপ্রয়োগ করছে, হাজারও শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে; এ নিয়ে তারা কী বলবেন, সেটাই আমার প্রশ্ন। এ দিন সংবাদ সম্মেলনে ২৪ এপ্রিল থেকে ৬ মে পর্যন্ত পাঁচ দেশে সরকারি সফরের বিস্তারিত তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি থাইল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, গাম্বিয়া ও যুক্তরাজ্যে সফরকালে মন্ত্রী ও বিভিন্ন সংস্থাপ্রধানের সঙ্গে বৈঠকের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সাংবাদিকদের জানান।
২১ ঘণ্টা আগে

বিএনপির নির্বাচন বর্জনের রাজনীতি আত্মহননমূলক : পররাষ্ট্রমন্ত্রী
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের মতো বিএনপির উপজেলা নির্বাচনও বর্জনের সিদ্ধান্তকে আত্মহননমূলক রাজনীতি বলেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ ড. হাছান মাহমুদ।   এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকার পাঁচ দেশে সরকারি সফর শেষে মঙ্গলবার দেশে ফিরে বুধবার (৮ মে) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির উপজেলা নির্বাচন বর্জন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।  পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, যারা বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত তারা দেশের সংসদ, সিটি করপোরেশন, উপজেলা এমনকি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও অংশ নিতে পারেন না। বিএনপির নেতা-কর্মীদের কাছে আমার প্রশ্ন- কোনো নির্বাচনেই যদি অংশ নিতে না পারেন, তবে আর কেন বিএনপির রাজনীতি করবেন। উপজেলা পর্যায়ে নির্বাচন হলেও বিএনপি ঢাকা শহরে লিফলেট বিতরণ করছে- এমন প্রশ্নে হাছান মাহমুদ বলেন, এগুলো তাদের লোক-দেখানো কর্মসূচি। কখন যে তারা উপজেলা নির্বাচন বর্জনের লিফলেট বিতরণ করতে দূতাবাসগুলোতে চলে যায়, সেটিই দেখার বিষয়, কারণ তারা তো কথায় কথায় বিদেশি দূতাবাসে ধরনা দেয়।  সাংবাদিকরা এ সময় 'ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বরোচিত হামলা ও গণহত্যার বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিদ্যাপীঠগুলোতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে যুক্তরাষ্ট্রের আইনরক্ষা বাহিনীর হামলা নিয়ে' মন্তব্য জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'শুধু যুক্তরাষ্ট্রে নয়, ইউরোপজুড়ে ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ নিয়ে বিক্ষোভ হয়েছে, হচ্ছে। আর আমরা দেখেছি, আমাদের এখানে হিরো আলমকে বা কোনো মেয়র পদপ্রার্থীকে কেউ ঘুষি মারলেও তারা (যুক্তরাষ্ট্রে) বিবৃতি দেয়, আর তাদের ওখানে বিক্ষোভ দমন করতে পুলিশ যেভাবে বলপ্রয়োগ করছে, হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, শিক্ষকরাও রেহাই পাচ্ছেন না- এ নিয়ে তারা কি বলবেন সেটিই আমার প্রশ্ন।' এ দিন সংবাদ সম্মেলনে ২৪ এপ্রিল থেকে ৬ মে পর্যন্ত পাঁচ দেশে সরকারি সফরের বিস্তারিত তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।  প্রধানমন্ত্রীর সাথে ২৪ থেকে ২৭ এপ্রিল থাইল্যান্ড সফরে অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীদের জন্য ভিসা অব্যাহতি চুক্তি, জ্বালানি, পর্যটন ও শুল্ক সহযোগিতাবিষয়ক তিনটি সমঝোতা স্মারক এবং মুক্ত বণিজ্য চুক্তির আলোচনা শুরুর লেটার অব ইন্টেন্ট স্বাক্ষরের পর ২৮ থেকে ২৯ এপ্রিল অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় 'হিউম্যানিটি এট দ্য ক্রসরোডস : অটোনোমাস উইপনস সিস্টেমস অ্যান্ড দ্য চ্যালেঞ্জ অব রেগুলেশন' শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দেন মন্ত্রী হাছান মাহমুদ। পাশাপাশি ভিয়েনায় অস্ট্রিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলেকজান্ডার শ্যালেনবার্গের সাথে বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও অস্ট্রিয়ার বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং দ্বৈত কর এড়ানোর প্রস্তাবিত চুক্তি দ্রুত স্বাক্ষর নিয়ে আলোচনা, ইন্টারন্যাশনাল এটমিক এনার্জি এজেন্সি'র (আইএইএ) মহাপরিচালক রাফায়েল মারিয়ানো গ্রোসির সাথে  সাক্ষাতে পারমাণবিক শক্তির অ-প্রসারণ এবং শান্তিপূর্ণ ব্যবহার নিয়ে আলোচনা এবং অস্ট্রিয়া আওয়ামী লীগের নিজস্ব কার্যালয় উদ্বোধনের কথা জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।  ৩ থেকে ৫ মে পশ্চিম আফ্রিকার গাম্বিয়ার রাজধানী বানজুলে ১৫তম ওআইসি শীর্ষ সম্মেলনে দেশের প্রতিনিধিত্বের কথা তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।  তিনি বলেন, উদ্বোধনী অধিবেশনে আমি ফিলিস্তিনে যুদ্ধাপরাধের জন্য দায়ীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছি। আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গাম্বিয়া মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে মামলা দায়ের করেছে, আমরা তাদের সহায়তা দিচ্ছি। ওআইসি সম্মেলন সমাপনীতে আমরা রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলায় সহযোগিতার জন্য ওআইসি সদস্যদের আহ্বান করেছি। ব্রিফিংয়ে সম্মেলনের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার ১০ জন মন্ত্রী ও সংস্থাপ্রধানের সাথে বৈঠকের সংক্ষিপ্ত চিত্র তুলে ধরেন মন্ত্রী।  এর আগে এদিন দুপুরে বাংলাদেশ সফররত যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তরের ইন্দো-প্যাসিফিকবিষয়ক মিনিস্টার অব স্টেট অ্যান-মেরি ট্রেভেলিয়ান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে হাছান মাহমুদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।  বৈঠক বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, অ্যান-মেরি ট্রেভেলিয়ান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতির প্রশংসা করেছেন এবং মেট্রোরেলেও ভ্রমণের আগ্রহ ব্যক্ত করেন।  যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের অবদানের কথা তুলে ধরে মিনিস্টার অব স্টেট ট্রেভেলিয়ান দু'দেশের বাণিজ্য সম্পর্কে সন্তোষ ব্যক্ত করে এর আরও সম্প্রসারণে জোর দেন। বৈঠকে পূর্বসম্মতির ভিত্তিতে যুক্তরাজ্য থেকে এয়ারবাস কেনা, অভিবাসন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনসহ দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার কথা জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
০৮ মে, ২০২৪

প্রতিশোধের রাজনীতি দেশকে বিপর্যয়ের খাদে নিপতিত করবে : ইসলামী আন্দোলন
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব প্রিন্সিপাল হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব প্রদানকারী ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল হিসাবে টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার পরও নিজেদের জনপ্রিয়তার প্রতি ন্যূনতম আস্থা নেই। ফলে ডামি নির্বাচন দিয়ে তাদেরকে ক্ষমতায় আসতে হয়। ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করতে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিতে হয়। এটা সরকারের জন্য লজ্জার।  তিনি বলেন, দেশকে সম্ভাব্য বিপর্যয় থেকে রক্ষা করতে এখন সরকারকে একটা অবাধ, নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের রাজনৈতিক ঝুঁকি নিয়ে তাদের জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতার প্রমাণ দেওয়া দরকার। অন্যথায় সরকারের প্রতিহিংসা-প্রতিশোধের রাজনীতি দেশকে অনিবার্য বিপর্যয়ের খাদে নিপতিত করবে। মঙ্গলবার (৭ মে) বিকেলে পুরানা পল্টনস্থ ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।  সভায় উপস্থিত ছিলেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব মুহাম্মদ আমিনুল ইসলাম, ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম, সহকারি মহাসচিব মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ, সাংগঠনিক সম্পাদক কেএম আতিকুর রহমান, প্রচার সম্পাদক মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম, দফতর সম্পাদক মাওলানা লোকমান হোসাইন জাফরী, সংখ্যালঘু বিষয়ক সম্পাদক শায়খুল হাদীস মকবুল হোসাইন, অধ্যাপক সৈয়দ বেলায়েত হোসেন, জিএম রুহুল আমিন, অধ্যাপক নাসির উদ্দিন খান, হাফেজ মাওলানা নূরুল করীম আকরাম, মাওলানা আরিফুল ইসলাম, আব্দুল আউয়াল মজুমদার। ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব বলেন, মানুষের নাগরিক ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধভাবে জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে। কর্তৃত্ববাদী দুঃশাসন রাজনৈতিক দল ও জনগণকে এক কাতারে নিয়ে এসেছে।  তিনি সম্প্রতি সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আওয়ামী লীগের পরিবর্তে কারা দেশ চালাবে তা দেশের জনগণই নির্ধারণ করবে।  তিনি বলেন, আমরা দেশে ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্কে বিশ্বাসী। এই সম্পর্ক নষ্ট করতে একটি পক্ষ সবসময় সচেষ্ট থেকেছে।  
০৭ মে, ২০২৪

দেশে গঠনমূলক রাজনীতি চর্চার সুযোগ নেই
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী বলেছেন, একটি দেশ উন্নত হতে হলে সেখানে মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও মেধাবীদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের দেশে গঠনমূলক রাজনীতি চর্চার সুযোগ নেই। দেশে এখন ফ্যাসিবাদী শাসন চলছে। নতুন সৃষ্টিশীল রাজনীতি বিকশিত হওয়ার পথে এটা বিরাট অন্তরায়। গতকাল শনিবার আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি) উদ্যোগে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ‘জনআকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ ঘোষণার স্মৃতিচারণ ও উদ্যোক্তাদের পুনর্মিলনী’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ৫ বছর আগে ঘোষিত হয় জনআকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ নামে রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম। যার মাধ্যমে পরবর্তী সময়ে গড়ে ওঠে নতুন রাজনৈতিক দল এবি পার্টি। শনিবার ছিল জনআকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ গঠনের পঞ্চম বর্ষ এবং সে উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এবি পার্টির আহ্বায়ক এএফএম সোলায়মান চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও প্রচার সম্পাদক আনোয়ার সাদাত টুটুলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন লেখক ও মানবাধিকার কর্মী রুবী আমাতুল্লাহ, অভিনেত্রী ও সংগঠক আরজুমান্দআরা বকুল, এবি পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক তাজুল ইসলাম, সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু, দপ্তর সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন রানা, যুবপার্টির আহ্বায়ক এবিএম খালিদ হাসান, কেন্দ্রীয় সহকারী সদস্য সচিব এম আমজাদ খান প্রমুখ। অনুষ্ঠানে আরও স্মৃতিচারণ করেন এবি পার্টির সেলিম খান, নারায়ণগঞ্জ জেলার শাহজাহান ব্যাপারী, গাজীপুরের মাসুদ জমাদ্দার রানা, ঢাকা মহানগরীর সফিউল বাসার, কেফায়েত হোসেন তানভীর, আব্দুল হালিম নান্নু, শাহিনুর আক্তার শীলা, রফিকুল ইসলাম, সাবেক ছাত্রনেতা রিপন মাহমুদ প্রমুখ।
২৮ এপ্রিল, ২০২৪

রাজনীতি টিকিয়ে রাখতে কেউ কেউ কিশোরদের ব্যবহার করছে
রাজধানীর চার এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা বেশি বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, এলাকায় রাজনীতি টিকিয়ে রাখতে কেউ কেউ কিশোরদের ব্যবহার করছে। গতকাল শনিবার দুপুরে এফডিসিতে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির আয়োজনে ‘কিশোর গ্যাং প্রতিরোধে রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও সামাজিক আন্দোলন নিয়ে ছায়া সংসদ’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। ডিএমপি কমিশনার জানান, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, যাত্রাবাড়ী ও উত্তরা—এই চারটি এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা বেশি। এসব গ্যাংয়ের মদতদাতাদের তালিকা করা হয়েছে। ঢাকার ৫০টি থানা এলাকার মধ্যে ১০টি এলাকায় কিশোর গ্যাং সদস্যদের অপরাধ লক্ষ করা যায় বলে জানান তিনি। কিশোর গ্যাংয়ের সঙ্গে জড়িত কাউন্সিলদের নাম এসেছে গণমাধ্যমে। এ বিষয়ে কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না, এ প্রশ্নের জবাবে হাবিবুর রহমান বলেন, কাউন্সিলদের কিছু অনুসারী রয়েছে, যাদের বয়স ১৮ বছরের ওপরে। এলাকায় রাজনীতি টিকিয়ে রাখতে কেউ কেউ কিশোরদের ব্যবহার করছে। সরাসরি কোনো কাউন্সিলর কিশোরদের নিয়ে অপরাধ করার জন্য গ্যাং তৈরি করেছেন—এমন তথ্য পাইনি আমরা। তিনি বলেন, কাউন্সিলদের সহযোগী এমন কেউ কেউ আছেন, তারা কিশোরদের নিয়ে চলাফেরা করেন। এই কিশোরদের বেশিরভাগই ছিন্নমূল, যারা রাস্তায় কাজ করে। বেশিরভাগের বাবা নেই; মা থাকলেও দেখা যায় অন্যের বাসায় কাজ করেন। এসব বিষয়েও পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে। এ বিষয়ে রাজনৈতিক উপনেতা-পাতি নেতাদের বিভিন্ন সময় থানায় ডেকে শাসানোও হয়। ডিএমপি কমিশনার বলেন, আজকের কিশোররাই আগামী দিনের নেতৃত্ব দেবে। ৯ থেকে ১৮ বছর বয়সী কেউ অপরাধ করলে আমরা তাকে কিশোর অপরাধী বলছি। এই বয়সী কিশোররা দলবদ্ধভাবে অপরাধ করলে তাকে বলছি ‘কিশোর গ্যাং’। আজকের কিশোর-তরুণরা আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। এজন্য তাদের নিয়ে ‘কিশোর গ্যাং’ শব্দ বলতে চান না বলেও উল্লেখ করেন তিনি। কিশোর অপরাধ নির্মূলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গাফিলতি আছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার বলেন, কোনো গাফিলতি নেই। অভিযোগ এলে সঙ্গে সঙ্গে মামলা নেওয়া হয় এবং জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হয়। সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, কিশোর গ্যাংয়ের সঙ্গে জড়িতরা বেশিরভাগই নষ্ট রাজনীতির শিকার। অনুষ্ঠানে বিচারক হিসেবে ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, সাংবাদিক জি এম তসলিম, সাংবাদিক জিয়া খান, সাংবাদিক অনিমেষ কর ও সাংবাদিক কাওসার সোহেলী।
২৮ এপ্রিল, ২০২৪

এবি পার্টির স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানে বক্তারা / দেশে গঠনমূলক রাজনীতি চর্চার সুযোগ নেই
বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী বলেছেন, একটি দেশ উন্নত হতে হলে সেখানে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও মেধাবীদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের দেশে গঠনমূলক রাজনীতি চর্চার সুযোগ নেই। দেশে এখন ফ্যাসিবাদী, আগ্রাসী শাসন চলছে’, নতুন সৃষ্টিশীল রাজনীতি বিকশিত হওয়ার পথে এটা বিরাট অন্তরায়। শনিবার (২৭ এপ্রিল) আমার বাংলাদেশ পার্টি-এবি পার্টির উদ্যোগে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ‘জনআকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ ঘোষণার স্মৃতিচারণ ও উদ্যোক্তাদের পুনর্মিলনী’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। পাঁচ বছর আগে স্বাধীনতার ঘোষণা পত্রের মূলনীতি সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের ভিত্তিতে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের অভিপ্রায়ে ঘোষিত হয় জনআকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ নামক রাজনৈতিক প্লাটফর্ম। যার মাধ্যমে পরবর্তীতে গড়ে ওঠে নতুন রাজনৈতিক দল আমার বাংলাদেশ পার্টি-এবি পার্টি। শনিবার ছিল জনআকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ গঠনের ৫ম বর্ষ এবং সে উপলক্ষে স্মৃতিচারণ ও পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এবি পার্টির আহ্বায়ক এএফএম সোলায়মান চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও প্রচার সম্পাদক আনোয়ার সাদাত টুটুলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন লেখক ও মানবাধিকার কর্মী রুবী আমাতুল্লাহ, অভিনেত্রী ও সংগঠক আরজুমান্দআরা বকুল, এবি পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক তাজুল ইসলাম, সদস্যসচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু, দপ্তর সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন রানা, যুবপার্টির আহ্বায়ক এবিএম খালিদ হাসান, কেন্দ্রীয় সহকারী সদস্যসচিব এম আমজাদ খান প্রমুখ। প্রধান অতিথির বক্তব্যে দিলারা চৌধুরী বলেন, নতুন রাজনৈতিক উদ্যোগ জনআকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ ঘোষণার দিন আমি উপস্থিত ছিলাম। সকল প্রতিকূলতা ও সমস্যা সামনে রেখে জনআকাঙ্ক্ষা থেকে শুরু করে এবি পার্টি আজ যে পর্যায়ে এসেছে তাতে তাদের সাধুবাদ জানাতে হয়। স্বাধীনতার ঘোষণা পত্রের মূল বক্তব্যের আলোকে এই দেশকে একটি ওয়েলফেয়ার স্টেটে পরিণত করার যে চ্যালেঞ্জ এবি পার্টি গ্রহণ করেছে সেটাও অনেক কঠিন। সভাপতির বক্তব্যে সোলায়মান চৌধুরী বলেন, জনআকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ নামে রাজনৈতিক উদ্যোগের সঙ্গে যখন আমি যুক্ত হয়েছিলাম তখন আসলে অনেক কিছুই পরিষ্কার ছিল না। সবকিছু বুঝতে ও গুছিয়ে উঠতে আমাদের ছয় মাস লেগেছে। সেই সময় প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আমরা অফিসে বসতাম কখন একজন মানুষ অফিসে এসে নতুন রাজনৈতিক উদ্যোগ সম্পর্কে জানতে চাইবে সেজন্য অপেক্ষা করতাম। আপনাদের সহযোগিতায় আজ পার্টির প্রায় চল্লিশ জেলায় কমিটি হয়েছে। আমাদের এখন মাঠপর্যায়ে সংগঠন শক্তিশালী করতে অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে। রুবী আমাতুল্লাহ বলেন, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার কাজ কখনো ইসলামবিরোধী হতে পারে না। কিন্তু বাংলাদেশের অনেকের মধ্যেই রাজনীতি ও ধর্ম নিয়ে ভুল ধারণা রয়েছে। রাজনীতি মানুষের মুক্তির জন্য লড়াই যা এবি পার্টি করছে। যা শুরু হয়েছিল জনআকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ নামক প্লাটফর্ম ঘোষণার মধ্য দিয়ে। সেই ঘোষণার দিন আমি তাদের শুভ কামনা জানাতে উপস্থিত ছিলাম। তাদের ভালো কাজের সঙ্গে সামনেও আমার সমর্থন থাকবে ইনশাআল্লাহ। মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, রাজনৈতিক উদ্যোগের শুরুতেই বেশিরভাগ মানুষ আমাদের সামাজিক সংগঠন গড়ে তোলার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু আমরা বিভিন্ন বিষয় পর্যবেক্ষণ করে দেখেছি সামাজিক সংগঠনকে দিনশেষে রাজনৈতিক সংগঠনে পরিণত করা যায় না। যার ফলে আমরা প্রথমে জনআকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ নামক রাজনৈতিক প্লাটফর্ম গঠন করে এক বছর সারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করে আমার বাংলাদেশ পার্টি-এবি পার্টি গঠন করি। এটা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় পাওনা যে শূন্য থেকে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করতে পেরেছি। তিনি জনআকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ গঠনের সময় উদ্যোক্তা যারা ছিলেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।  অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম বলেন, জনআকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশের ঘোষণা ছিল আমাদের জীবনের বিরাট চ্যালেঞ্জ। যখন একটি গ্রুপ দলবদলের ঘটনাকে ধর্ম বদলের মতো চিন্তা করে। যখন প্রকাশ্যে আমাদের জাহান্নামি, কাফের ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে দলকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি। একসময় এই রাষ্ট্র মেরামতের কাজও আমরাই করব ইনশাআল্লাহ। অনুষ্ঠানে আরও স্মৃতিচারণ করেন এবি পার্টি ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্যসচিব সেলিম খান, নারায়ণগঞ্জ জেলা সমন্বয়ক শাহজাহান ব্যাপারী, যুবপার্টি গাজীপুরের আহ্বায়ক মাসুদ জমাদ্দার রানা, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম সদস্যসচিব সফিউল বাসার, কেফায়েত হোসেন তানভীর, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল হালিম নান্নু, যুবপার্টি ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব শাহিনুর আক্তার শীলা, কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম সদস্য রফিকুল ইসলাম, সাবেক ছাত্রনেতা রিপন মাহমুদ প্রমুখ।
২৭ এপ্রিল, ২০২৪

রাজনীতি ঠিক না থাকায় অর্থনীতি ভয়ংকর : সাবেক গভর্নর
‘দেশের রাজনীতি ঠিক নেই বলেই অর্থনীতির ভয়ংকর অবস্থা’- এমন মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, শুধু অর্থনীতির বিষয়ে কথা বললে বাংলাদেশের সমস্যার সমাধান হবে না। এখানে রাজনীতির বিষয়টা সবচেয়ে বড়। রাজনীতি ঠিক না হলে অর্থনীতি ঠিক হবে না; এটা তো আপনারা দেখতেই পারছেন... ভয়ংকর অবস্থা। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত যদি সঠিক না হয় অর্থনীতি ঠিক হবে না। রাজনীতিটা মেইন। শনিবার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে গ্রন্থ প্রকাশনার এক অনুষ্ঠানে দেশের বর্তমান অবস্থার প্রসঙ্গ টেনে তিনি এরকম মন্তব্য করেন।  জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে অর্থনীতিবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মাহফুজ উল্লাহর লেখা আত্মজীবনী গ্রন্থ ‘আমার জীবন আমার সংগ্রাম’-এর প্রকাশনা উপলক্ষে এই সভা হয়। ৫৯২ পৃষ্ঠার গ্রস্থটির প্রকাশ করেছে ‘বাঙ্গালা গবেষণা’। সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, অর্থনীতির এই টেকনিক্যাল কথাবার্তা গ্রোথ রেইট ৫ পয়েন্ট ৫ হলো না ৫ পয়েন্ট ৭ হলো, তারপরে ইনফ্ল্যাশন ৮ দশমিক ২ হলো না ৮ দশমিক ৩ হলো এগুলো ভেতরে কচকচালি করলে তো সমস্যার সমাধান হবে না। মূল সমস্যা হলো, আমাদের ইনস্টিটিউশনগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে, রাজনীতিটাও অনেকটা ধ্বংসের পথে এবং সেখানে অর্থনীতি কীভাবে ঠিক থাকবে? ছাত্রজীবনে ভালো রাজনীতি ও মানুষের কল্যাণে রাজনীতি না করলে কিন্তু ভবিষ্যতে ভালো মানুষও হবেন না। মূল্যবোধ কিছু থাকতে হয়। আমাদের সময়ে সেসবের কিছু ছিল। মাহবুব উল্লাহ ভাইয়ের তো ছিল সৎভাবে জীবনযাপন করেছেন, অনেক কিছু হতে পারতেন। আমরাও করেছি, আমার বন্ধু আলমগীরও (মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর) সৎভাবে জীবনযাপন করেছেন... একেবারে করেছেন। কিন্তু আমাদের মধ্যে মূল্যবোধগুলো বারবার তাড়া করত... এখনো আমাদের এটা তাড়িত করে মানুষের জন্য চিন্তা, সাধারণ মানুষের জন্য চিন্তা এসব চিন্তার জন্য এখনো আমাদের তাড়িত করে। ওই সময়ের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, অপরদিকে ওই সময়ে আমাদের অনেক বন্ধু-বান্ধব ছিল যারা আমাদের মার দিয়েছে আমাকেও একবার উঠিয়ে নিয়ে গিয়েছিল এনএসএফ নিয়ে গেছে... তাদের সহযোগী যারা তারা এখন প্রগতিশীল রাজনীতিবিদ, তারা এমপি-মন্ত্রী হয়েছেন নাম বলব না। আপনারা অনেকেই জানেন। তারা এখন আমাদের সঙ্গে তর্ক করে তোমরা কী করেছ? অত্যন্ত দুঃখ লাগে বন্ধু মানুষ তো। কিন্তু ইতিহাস তাদের ক্ষমা করেছে কি না জানি মনে হয় না ক্ষমা করেছে। মানুষ নিশ্চয়ই তাদের ক্ষমা করে নাই। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী। অনুষ্ঠানে দর্শক সারিতে বসে আলোচনা শোনেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম, নাজমুল হক নান্নু, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, জহির উদ্দিন স্বপন, আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়াম, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলুসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাংবাদিক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, মানবাধিকার কর্মীসহ অবসরপ্রাপ্ত সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তারা। কবি আবদুল হাই শিকদারের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, নারী নেত্রী শিরিন হক, নিউ এজের সম্পাদক নুরুল কবির, প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান এবং বাঙ্গালা গবেষণা‘র প্রকাশক আফজালুল বাসার প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে লেখক অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহর ছোট ভাই প্রয়াত সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহর ৫ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অধ্যাপক আখতার হোসেন খান। অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ বলেন, দেশ আজকে একটা কঠিন সংকটে পড়েছে। এই সংকট থেকে উত্তরণ কীভাবে হবে সেটা নিঃসন্দেহে ৮/১০টা দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলন দেখে আমরা নিরূপণ করতে পারব না। আমাদেরই আমাদের পথ চয়ন করতে হবে, নিরূপণ করতে হবে, খুঁজে বের করতে হবে এবং এজন্য প্রয়োজন। ১৯০৫ সালে রাশিয়াতে পাঠ্য বিপ্লবের পরে লেনিন বলেছিলেন, এখন প্রয়োজনে প্রতিক্রিয়াশীলদের মধ্যে ঢুকেও আমাদেরকে কাজ করতে হবে। ওই সময়ের জন্য ওটা ছিল একটা মোক্ষম একটা কৌশল যে কারণে ১৯১৭ সাল (রুশ বিপ্লব) হতে পেরেছে। এগুলো আমাদের বুঝতে হবে। তবে এই মুহূর্তে আমাদের লক্ষ্য খুব সীমিত। লক্ষ্যটা হচ্ছে একটা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ চাই, যেই বাংলাদেশে আমরা কথা বলতে পারব, মুক্তভাবে আমাদের মতপ্রকাশ করতে পারব এবং আমাদের দেশের যে সার্বভৌমত্ব যেটা নানা কারণে সেটা কমপ্রোমাইজড হচ্ছে আমি যেটাকে বলি, নিম সার্বভৌম অবস্থা সেই নিম সার্বভৌম অবস্থা থেকে কীভাবে মুক্তি পাবৃএই সবকিছু নিয়ে আমাদেরকে চিন্তা-ভাবনা করতে হবে এবং শুধু চিন্তার মধ্যেই নিবিষ্ট থাকলে হবে না আমাদের পথ বের করে নিতে হবে, আমাদের সেই পথে চলতে হবে সেই পথ হচ্ছে সংগ্রামের, আত্মদানের এবং মানুষ ও দেশকে ভালোবাসার। আজকে আমরা যদি সবাই সেই স্বাধীনতা ও দেশকে ভালোবাসার মঞ্চে কিছু অবদান রাখতে পারি সেটাই যথেষ্ট। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও ব্যাংককের এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির এমিরেটস অধ্যাপক ড. নুরুল আমিন দেশের বর্তমান ভোট ব্যবস্থা প্রসঙ্গে বলেন, এই বাংলাদেশ আমরা ছোট বেলা থেকে দেখছি ভোটের দিনটা ছিল উৎসবের দিন। ’৫৪ সালে আমি ছোট কিন্তু যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনের কথা কিছু কিছু যেন মনে আছে এখন এবং অন্যান্য ইলেকশন। আমার বাবা ইউনিয়ন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ছিলেন, হাইস্কুলের হেড মাস্টার ছিলেন। ভোটের দিনগুলো আমরা দেখতাম ইউনিয়ন পর্যায় থেকে জাতীয় পর্যায়ে এটা যে কীভাবে এখন হারিয়ে গেল? নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করার ফলেই বর্তমানে রাজনৈতিক ও ভোট ব্যবস্থায় এই দুরবস্থা বলে মন্তব্য করেন এই অধ্যাপক। সভাপতির বক্তব্যে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলেন, মাহবুব উল্লাহ ভাইয়ের বইটি একটা রাজনৈতিক দলিল। সাধারণ মানুষের চাওয়া-পাওয়া, আশা-আকাঙ্ক্ষা এই বইতে আছে। আমি মনে করি এই বইটা লেখকের একটা বিরাট অবদান। সবাই বইটি পড়বেন।    
২৭ এপ্রিল, ২০২৪

বন্দনা করা ছাড়া জাতীয় পার্টির রাজনীতি নেই: ফিরোজ রশিদ
জাতীয় পার্টির একাংশের নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশিদ বলেছেন, বন্দনা করা ছাড়া জাতীয় পার্টির সামনে আর কোনো রাজনীতি নেই। একমাত্র বন্দনা করে সংসদে ঢোকা ও নিজের কিছু আখের গোছানো। অনেক ছোট দলের কথাও গুরুত্বসহকারে ছাপানো হয়। কারণ তাদের রাজনীতি আছে। এ জন্য জনগণ আমাদের ওপর মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। কাজী ফিরোজ রশিদ বলেন, জাতীয় পার্টির ওপর মানুষের আস্থা নেই। তারা এক গ্রুপ থেকে আরেক গ্রুপে যেতে পারবে, কিন্তু আস্থার সংকট আছে। আমরা স্থানীয় সংসদ নির্বাচন বয়কট করিনি। কাউকে বলিও নাই। যদি কারও ইচ্ছা থাকে তারা করবে। স্থানীয় সংসদ নির্বাচনে মার্কা দিয়ে কোনো হানাহানিতে যেতে চাই না। তিনি বলেন, আগামীতে বড় রাজনৈতিক দলের বাইরে কেউ টিকতে পারবে না। স্বাধীনভাবে রাজনীতি করার কোনো সুযোগ থাকবে না। একটি দল ছাড়া অন্য দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা কঠিন। এ সময় জাপা নেতা সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, আমরাই মূল স্রোত। দেখতে থাকুন, অচিরেই বুঝতে পারবেন লাঙল কার। রওশন এরশাদের নেতৃত্বে আমরা আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাব। এ সময় জাপা মহাসচিব মহাসচিব কাজী মামুনুর রশিদ ও পার্টির সিনিয়র নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
২৬ এপ্রিল, ২০২৪

বুয়েটে হিযবুত ও শিবিরের কর্মকাণ্ড নিয়ে সংবাদ প্রকাশই শুধু সমস্যা!
'বুয়েটে শিবির ও হিযবুত বলে কিছু নেই', 'বুয়েটের শিবির-হিযবুত সব গুজব', 'ছাত্র রাজনীতি ফেরাতে সরকার গুজব করছে', 'আসলে বুয়েটের সামনের বাজেটে ভাগ চায় বলে হিযবুত-শিবির নিয়ে নাটক করছে ছাত্রলীগ'- এমন অসংখ্য গুজব ঘুরে বেড়াচ্ছে বুয়েট কেন্দ্রীক বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপ, পেজ ও কিছু সাবেক বুয়েটিয়ানদের প্রফাইলে।  বুয়েটে হিযবুত-শিবিরের কার্যক্রম নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় গণমাধ্যমকেও আক্রমণ করছেন তারা। এখন বুয়েটে হিযবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণের ফুটেজ গণমাধ্যমে প্রকাশ্যে আসার পর তারা প্রশ্ন তুলেছেন, এই ফুটেজ গণমাধ্যমের কাছে গেল কীভাবে? মূল ঘটনায় না থেকে তারা ঘটনা ভিন্নদিকে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছেন। তবে কী বুয়েটে জঙ্গিবাদকে অস্বীকার করার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে অবাধে হিযবুত তাহরীর ও শিবিরের কার্যক্রম চালাতে তৎপর হয়ে উঠেছে একটি গোষ্ঠী? সোমবার রাতে হঠাৎ করেই ফেসবুকে আটকে যায় আমার চোখ। অনেকগুলো গণমাধ্যমে একে একে প্রকাশ হতে থাকে প্রিয় বুয়েট ক্যাম্পাসকে ঘিরে হিযবুত তাহরীরের কার্যক্রমের জ্বলজ্যান্ত প্রমাণ। দেখা যায়, বুয়েটের সিভিল বিল্ডিংয়ে দুই তরুণ হিযবুত সদস্য কীভাবে লুকোচুরি খেলে ক্লাসরুম গুলোতে পৌঁছে দিচ্ছে লিফলেট। সেই সঙ্গে আরও একবার আতকে উঠি এটা ভেবে যে, বুয়েটের নিরাপত্তা কোথায়? যদি লিফলেটের বদলে অন্য কিছু থাকত, যা শিক্ষার্থীদের জীবন বিপন্ন করত? তখন বুয়েট কর্তৃপক্ষ কাদের কাছে জবাবদিহীতা করতো এবং কাকে শাস্তি আওতায় আনত? নাকি তখনও বুয়েটে জঙ্গি তৎপরতা নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় সাংবাদিকদেরকেই উল্টো নিন্দা জানাতেন? যে কোনো সমস্যার টেকসই সমাধান করতে আগে সমস্যাটিকে সুস্পষ্টভাবে চিহ্নিত করতে হয়। তারপর তা সমাধানে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করতে হয়। কিন্তু বুয়েট কর্তৃপক্ষ ও কিছু শিক্ষার্থীদের কার্যক্রম দেখে মনে হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়টিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা জঙ্গিবাদ ও মৌলবাদী গোষ্ঠির কার্যক্রমকে অস্বীকার করতে পারলেই তারা রক্ষা পায়। কিন্তু এভাবে অস্বীকার করার মাশুল বাংলাদেশকে এক সময় দিতে হয়েছে। সেই ইতিহাস থেকে বুয়েট কর্তৃপক্ষ ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত। বাংলাদেশের এক সময়ের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলা ভাই ও জেএমবির কার্যক্রম অস্বীকার করে বলেছিলেন, ‘দেয়ার ইজ নো বাংলা ভাই। সব মিডিয়ার সৃষ্টি।’ চোখ বন্ধ করে রাখা এই বুয়েটিয়ানরাও বলছেন ‘কোথায় হিযবুত তাহরীর, কোথায় শিবির? সব মিডিয়ার সৃষ্টি।‘ ছাত্র রাজনীতির গুজব ছড়িয়ে গত মাসের শেষের দিকে বুয়েটে শুরু হয় অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বর্জন। গত ২৮ মার্চ মধ্যরাতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি বুয়েটে প্রবেশ করে ছাত্রলীগের কমিটি দিচ্ছে এমন গুজব ছড়িয়ে প্রতিষ্ঠানটিতে উত্তেজনা সৃষ্টি করা হয়। এ সময় ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগে এক শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার ও তার সঙ্গে থাকা অন্যান্য শিক্ষার্থীদের খুঁজে বের করে বহিষ্কারের দাবি জানানো হয়। সেইসঙ্গে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ বহালের দাবিও জানানো হয়। শেষমেশ বিষয়টি গড়ায় হাইকোর্ট পর্যন্ত। যেখানে উচ্চ আদালতের পক্ষ থেকে বলা হয়, বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি চলতে বাধা নেই। এমন পরিস্থিতিতে ঈদের ছুটির আগেই বুয়েট প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপাচার্য ড. সত্য প্রসাদ মজুমদার আদালতের রায়ের কপি হাতে পাওয়ার পর আইনি লড়াইয়ে যাবার ঘোষণা দেন। এরপরেও ঈদের পর বুয়েট ক্যাম্পাস খোলার পর কিছু শিক্ষার্থী পরীক্ষা বর্জনের জন্য কথা বলতে শুরু করে। কিন্তু যেই বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে আদালতে ও আইনি প্রক্রিয়ায়, সেখানে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বন্ধের যৌক্তিকতা কী? আইনি লড়াই চলমান অবস্থায় পরীক্ষা বর্জনের জন্য কেনো কিছু শিক্ষার্থী বারবার উস্কানি প্রদান করছেন? কারা এই মেধাবী শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে তাদের সেশনজটের ফাঁদে ফেলছে? ২০১৯ সালে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হলেও সেখানে কার্যক্রম চালিয়ে গেছে জামায়াতে ইসলামের ছাত্রসংগঠন ছাত্রশিবির ও হিজবুত তাহরীর। এরইমধ্যে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে চলমান আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীদের ইমেইল দিয়েছে নিষিদ্ধ উগ্রবাদী সংগঠন হিজবুত তাহরীর।    শিক্ষার্থীদের ইমেইলে একাধিকবার উগ্রবাদী বার্তা ও রাজনীতি বন্ধের বার্তা দিয়ে মেইল করার পর নিজেদের ফেসবুক পেজের একটি ভিডিওর কিউআর কোড স্টিকার আকারে ছাপিয়ে পলাশীর মোড় থেকে শুরু করে বুয়েটের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে দিচ্ছে উগ্রবাদী গোষ্ঠীটি। শুধু তাই নয় বুয়েটে হিজবুতের লিফলেট বিতরণের ভিডিও সম্প্রতি প্রকাশ্যে এসেছে। বুয়েটে আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে আন্দোলনের শুরুর দিকে বুয়েটে জামায়াতে ইসলামির ছাত্র সংগঠন শিবির ও নিষিদ্ধ সংগঠন হিজবুত তাহরীরের কার্যক্রম নিয়ে কোনো আপত্তির কথা জানানো হয়নি। কিন্তু গণমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের চাপের মুখে তারা এই বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে বাধ্য হয়।  তবে আন্দোলনকারীদের একটি অংশের পক্ষ থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই দুই সংগঠনের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে তেমন কোনো লেখা বা দাবি চোখে পড়েনি। বুয়েট কর্তৃপক্ষ এ নিয়ে কোনো কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও বলেনি। এখন তাদের কার্যক্রম দেখলে মনে হবে ‘ছাত্র রাজনীতি বন্ধ হলেই বুয়েট ঠিক হয়ে যাবে। জঙ্গিবাদ ও মৌলবাদ কোনো সমস্যাই নয়।‘ কিন্তু এই জঙ্গিবাদ ও মৌলবাদের খপ্পরে পড়েই নিহত হয়েছিল বুয়েটের ০৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী রেশাদ। ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতে ইসলামের তাণ্ডবের রাতে নিহত ১১ হেফাজত কর্মীর একজন সে। এই জঙ্গিবাদ ও মৌলবাদের কারণেই নিহত হতে হয়েছিল আরিফ রায়হান দীপকে। এই জঙ্গি মৌলবাদী শক্তির নির্দেশেই আরিফ রায়হান দীপকে হত্যা করেছে বুয়েটের অপর শিক্ষার্থী হেফাজতে ইসলাম সমর্থক মেজবাহ। এই মৌলবাদী গোষ্ঠীর আক্রমণের শিকার হয়ে বুয়েটের প্রাক্তন ছাত্রনেতা ও গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম সংগঠক তন্ময় আহমেদ মূমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। এখনো ১৩০টি সেলাই নিয়ে বেঁচে আছেন এই বুয়েট শিক্ষার্থী। এর আগে ২০০২ সালে ছাত্রদের সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হয়েছিলেন আরেক মেধাবী বুয়েটিয়ান সাবেকুন নাহার সনি। এক আবরার ফাহাদ হত্যার জন্য বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ হলে এতগুলো হত্যার জন্য যে মৌলবাদী গোষ্ঠী দায়ী তার বিরুদ্ধে আওয়াজ কেন উঠছে না? নাকি পরিকল্পিতভাবে শিক্ষার্থীদের ভুল পথে পরিচালিত করছে একটি গোষ্ঠী? এভাবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের রাজনীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে ব্যস্ত রেখে নিজেদের মৌলবাদী কার্যক্রমকে গতিশীল করতে চাইছেন কারা? বুয়েটকে কেন্দ্র করে আরও একবার গুজব প্রচারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে একটি গোষ্ঠী। মানবাধিকারের নামে তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে কলঙ্কিত করছে। সোচ্চার নামক ফেসবুক পেজ থেকে এবং ওয়েবসাইট থেকে সরাসরি একজনের বক্তব্য প্রচার করা হচ্ছে যিনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে ‘প্রহাসনের বিচার’ বলে মন্তব্য করেছেন এবং সেটি প্রচার করছে স্বয়ং ‘সোচ্চার’। শুধু তাই নয়, মৌলবাদী গোষ্ঠী জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন শিবিরের কার্যক্রমের প্রমাণকে অস্বীকার করার পাশাপাশি বুয়েটে শিবির সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীদের নিয়ে পরিচালিত হয়েছে ‘বুয়েট সাংবাদিক সমিতি’ নামের কো-কারিকুলার ক্লাব! এই সাংবাদিক সমিতির মাধ্যমেই বুয়েটের হলরুম ব্যবহার করে ছাত্রলীগ কমিটি দিচ্ছে বলে গুজব ছড়িয়ে দেওয়া হয়। বুয়েট সাংবাদিক সমিতির শীর্ষ পদের ৬ শিক্ষার্থীসহ বুয়েটের বর্তমান ২৪ জন এবং বুয়েটের সাবেক ও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও ১০ জন শিক্ষার্থী রাষ্ট্র বিরোধী ষড়যন্ত্রের অপরাধে টাঙ্গুয়ার হাওরে আটক হন। এ সময় তারা কেনো আটক হয়েছে, সেটি নিয়েও আওয়াজ তোলার চেষ্টা করে বুয়েটের কিছু বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থী। কিন্তু সুনামগঞ্জের জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দ যখন গ্রেপ্তারকৃতদের শিবির কর্মী বলে নিশ্চিত করেন, তখন সাধারণ শিক্ষার্থীদের আরেকটি অংশ সাম্প্রদায়িক রাজনীতি সংশ্লিষ্টতার জন্য এদের শাস্তির দাবি জানান। কিন্তু শিবির সংশ্লিষ্ট হবার পরও গ্রেপ্তারকৃত ছাত্রদের বহিষ্কার বা হল থেকে বের করে দেওয়া নিয়ে কেনো কথা বলে না বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং ‘ছাত্রলীগ’ ট্যাগ দিয়ে অন্য শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারের দাবি জানানোরা?  আর ‘ছাত্রলীগ করে’ বললেই হল থেকে বহিষ্কার করা যাবে, কিন্তু শিবির সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ থাকলেও বিষয়টি আদালতে প্রমাণ হয়ে আসতে হবে তারপর সবাই ব্যবস্থা নেবে, এমন দ্বিচারিতা কেন? শিবির ও মৌলবাদী শক্তির কারণে বুয়েটে হতাহতের সংখ্যা অনেক বেশি হবার পরও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে এতো কুণ্ঠাবোধ কেন? ছাত্র রাজনীতি করলেই কেউ রসাতলে যাবে, এমন ভাবার কারণ নেই। এখনও যারা বাংলাদেশের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তারা ছাত্র রাজনীতি করেই উঠে এসেছেন। যারা ছাত্র জীবনে রাজনীতি করেন, তারা পরে অন্য পেশায়ও নেতৃত্বের পর্যায়ে থাকেন। বুয়েটের যেই র‍্যাংকিং নিয়ে শিক্ষার্থীদের এত গর্ব, সেই র‍্যাংকিং অর্জনে যেই প্রশাসন ও শিক্ষকরা নেতৃত্ব দিয়ে এসেছেন, তারা প্রত্যেকেই ছাত্র রাজনীতি চলমান থাকা অবস্থায় বুয়েটের শিক্ষার্থী ছিলেন। এমনকি কেউ কেউ সরাসরি রাজনীতিতে যুক্তও ছিলেন। বিগত ৫ বছর শুধু বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ ছিল। তার আগেও বুয়েট সেরা মেধাবীদের স্থান ছিল। এটা অস্বীকার করবার কোনো উপায় আছে কি? তখন বুয়েটের যা অর্জন তা কী কিছুই নয়? বুয়েটে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে ইফতার করালে হুমকি ও র‍্যাগিংয়ের মুখে পড়তে হয়। বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধে ম্যুরাল থাকে অবহেলায়। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন ওঠে বুয়েট কি এখন জঙ্গিবাদ আর সাম্প্রদায়িকতার নিরাপদ বিচরণক্ষেত্র হয়ে উঠেছে? টাঙ্গুয়ার হাওরে গিয়ে গ্রেপ্তার হওয়া শিবিরের নেতাকর্মীদের ব্যাপারে বুয়েটের একটি গোষ্ঠী নিজেরা নিশ্চুপ থাকছে, সাধারণ শিক্ষার্থীদের একটি অংশ বিষয়টিকে ‘গুজব’ হিসেবে প্রমাণের জন্য উঠে পড়ে লেগেছে।  আর এ কারণেই বুয়েটের বর্তমান শিক্ষার্থীদের জন্য অনেকগুলো প্রশ্ন রেখে গেলাম। নিজেকে নিজে এই প্রশ্নগুলো করে সঠিক উত্তর খুঁজে বের করার চেষ্টা করতে হবে। চোখ-কান খোলা রেখে জঙ্গিবাদ ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে হবে। না হলে নিজেদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য এমন এক বুয়েটকে রেখে যাওয়া হবে, যেখানে বুয়েট হয়ে উঠবে মৌলবাদের আঁতুড়ঘর। তখন কি কিছু করার থাকবে সাবেক বুয়েটিয়ানদের? লেখক প্রকৌশলী কাজী খায়রুল বাশার  বুয়েট '৮৯ ব্যাচ
২৪ এপ্রিল, ২০২৪

অর্থনীতি ভালো অবস্থায় হতাশা রাজনীতি নিয়ে
গত ৫০ বছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক যে উন্নয়ন হয়েছে, তা কোনো প্যারাডক্স বা আপাত স্ববিরোধী বিষয় নয়; বরং স্বাভাবিক নিয়মেই এ উন্নয়ন হয়েছে। বিশিষ্টজনের মতে, বিভিন্ন নিয়ামকের সমন্বয়ের মধ্য দিয়েই চোখে পড়ার মতো এই উন্নয়ন হয়েছে। এখন অর্থনীতি ভালো অবস্থায় আছে, হতাশা তৈরি হয়েছে রাজনীতি নিয়ে। গতকাল বৃহস্পতিবার বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘ফিফটি ইয়ার্স অব বাংলাদেশ-ইকোনমি, পলিটিক্স, সোসাইটি অ্যান্ড কালচার’ শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। বইটি সম্পাদনা করেছেন সিপিডির চেয়ারম্যান ড. রেহমান সোবহান ও অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. রওনক জাহান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো রওনক জাহান। বক্তব্যে রেহমান সোবহান বলেন, ৫০ বছরে বাংলাদেশের সফলতা চোখে পড়ার মতো। এই সময়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন সেক্টরে আর্থসামাজিক উত্তরণ ঘটেছে। এর আগে ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ নিয়ে এ রকম আরেকটি বই করা হয়েছিল। তখন ২৫ বছরের বাংলাদেশর অর্থনীতি নিয়ে এতটা উচ্চাশা ছিল না। সেখানে গার্মেন্টস সেক্টরে কতগুলো ভ্যালু অ্যাড হতে পারে, সে বিষয়ে চিন্তা করা হয়নি। রেমিট্যান্স নিয়ে এত চিন্তাভাবনা করা হয়নি। এখন পরবর্তী ২৫ বছরে এসব পার্থক্য খুঁজে বের করা হয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি ভালো অবস্থায় রয়েছে। প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, দেশে সামষ্টিক ও ব্যক্তিগত উদ্যোগের মিলন হয়েছে। সরকার ও বাজারের মধ্যে এক ধরনের মিথোজীবিতার সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। এটাই উন্নয়নের চালিকাশক্তি। ফলে সম্পদ বা সুশাসনের অভাব দেশের উন্নয়নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। উন্নতি ও দুর্নীতি দুটোই পাশাপাশি এগিয়েছে। সাফল্যের বিপরীতে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা অনেক বেশি। তাদের মতে, এতদিন দেশের উন্নয়নের যেসব চালিকাশক্তি ছিল, সেগুলো যে চিরকাল একইভাবে থাকবে, তা নয়। ২০২৬ সালে বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণ হতে যাচ্ছে। ফলে বিশ্ব বাণিজ্যে বাংলাদেশ এত দিন যেসব সুযোগ-সুবিধা পেয়েছে, সেগুলো আর থাকবে না। বাংলাদেশকে নতুন পর্যায়ে যেতে হবে। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, অর্থনৈতিক চালিকাশক্তির বাইরে আরও কিছু বিষয় দেশের উন্নয়নে প্রভাবকের ভূমিকা পালন করেছে। সেটা হলো, মানুষের ব্যক্তিত্বের বিপ্লব; শত প্রতিকূলতার মধ্যেও টিকে থাকা বা লড়াই করার যে প্রবণতা তৈরি হয়েছে, সেটা। এই প্রবণতার কারণে দেশের মানুষ এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি মনে করেন, ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক অ্যাজেন্ডা রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডায় রূপান্তরিত হবে। সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো রওনক জাহান বলেন, ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ নিয়ে এ রকম আরেকটি বই করা হয়েছিল। তখন ধারণা করা হয়েছিল, বাংলাদেশ রাজনৈতিকভাবে ভালো জায়গায় যাবে। তখন অর্থনীতি নিয়ে অতটা উচ্চাশা ছিল না। এখন রাজনীতি নিয়ে হতাশা তৈরি হয়েছে; বরং অর্থনীতি ভালো অবস্থায় আছে। বিশ্বব্যাংক গ্রুপের বেসরকারি খাতবিষয়ক সাবেক প্রধান সৈয়দ আখতার মাহমুদ অনলাইনে সংযুক্ত হয়ে বলেন, দেশের উদ্যোক্তা ও বাজার, নীতিনির্ধারণ ও গবেষণা, আলোচনা ও সংলাপের পৃথক পৃথক জগৎ গড়ে উঠেছে। এসবের মধ্যে সমন্বয় ছিল বলে উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়েছে। সরকার যে সবকিছু করে দিয়েছে, তা নয়; বরং উদ্যোক্তারাও অনেক কিছু করেছেন। কিন্তু এখন এই সমন্বয় বিনষ্ট হচ্ছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। আগে এই বিষয় যেভাবে কাজ করত, এখন সেভাবে করছে না বলে মনে করেন তিনি। বইটির আরেক লেখক সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশ মধ্যম আয় বা ঋণের ফাঁদে পড়ে কি না। শ্রমঘন শিল্পের ওপর ভর করে এত দিন যে উন্নয়ন হয়েছে, সেখান থেকে পরবর্তী পর্যায়ে যেতে হবে। বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন আপাত স্ববিরোধী বিষয় নয়। প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার ছাড়া কীভাবে উন্নয়ন হলো, সেটা আর এখন আলোচনার বিষয় নয়; বরং উন্নয়ন হওয়া সত্ত্বেও কেন প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার হচ্ছে না, এখন সেটা বুঝতে হবে। বাংলাদেশের প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতার মধ্যে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের বিকাশ হলেও উন্নয়নের পরবর্তী ধাপে এটি আর সেভাবে কাজ করবে না বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সেলিম রায়হান। দুর্নীতি তিনি বলেন, দুর্নীতির ক্ষেত্রে দেশে এক ধরনের স্থিতিশীলতা আছে। এই চক্র ভাঙতে রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন, তা না হলে সংস্কার হবে না। সরকারের রাজস্ব আদায়ের সক্ষমতাও বাড়বে না। দেশের উন্নয়ন নিয়ে যখন কথা বলা হয়, তখন গড় সূচক নিয়ে কথা বলা হয়। এর মধ্য দিয়ে প্রকৃত চিত্র উঠে আসে না বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ এম এম আকাশ। তিনি বলেন, দেশে চরম দারিদ্র্য কমলেও বৈষম্য বাড়ছে। বিশ্বব্যাংকের সূত্রে তিনি বলেন, দেশে যেমন অসমতার হার সবচেয়ে বেশি, তেমনি ধনীদের ধন সঞ্চয়ের হারও অনেক বেশি। সে জন্য ধনী ও গরিবের সূচক পৃথকভাবে দেখার পরামর্শ দেন তিনি। অর্থনীতিবিদ রিজওয়ানুল হাসান বলেন, শিল্প খাতের শ্রমিক ও প্রবাসী শ্রমিকরা অনেক কষ্ট করে দেশের উন্নয়ন অবদান রাখছেন। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই শিল্পশ্রমিকদের প্রকৃত মজুরি কমেছে; অর্থাৎ মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে মজুরি বাড়েনি। যারা বিদেশ থেকে প্রবাসী আয় পাঠাচ্ছেন, তারা নানা ধরনের হয়রানি ও অধিকারহানির শিকার হচ্ছেন।
১৯ এপ্রিল, ২০২৪
X