শতকোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি ‘খামোখা’ রেলস্টেশন
সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধাসহ নির্মাণশৈলী ও আধুনিকতা বিবেচনায় দেশের অন্যতম গাজীপুরের কালিয়াকৈরের ‘বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি স্টেশন’। দৃষ্টিনন্দন এ স্টেশন নির্মাণে ব্যয় ৫০ কোটি টাকা। মূল ভবনে অর্ধকোটি টাকা ব্যয় হলেও বিভিন্ন অবকাঠামোসহ সবমিলিয়ে নির্মাণ খরচ হয়েছে প্রায় শতকোটি টাকা। অথচ এ স্টেশনে থামছে মাত্র একটি লোকাল ট্রেন! যাত্রী চাহিদা থাকলেও নেই প্রয়োজনীয় জনবল। স্টেশনের আয়ের চেয়ে ব্যয় অনেক বেশি। মূলত এখন টিকটক ভিডিও বানানো আর ভ্রমণপিপাসুদের বেড়ানোর স্থানে পরিণত হয়েছে রেলস্টেশনটি। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, শুধু ট্রেন থামার জন্যই স্টেশন নির্মাণ হয় না। এর বহুমাত্রিক ব্যবহার রয়েছে। এ ছাড়া এক স্টেশন থেকে আরেক স্টেশনের দূরত্ব বেশি হলে মাঝপথে ক্রসিংয়ের জন্য আরেকটি স্টেশন অনেক কাজে লাগে। যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিকল্পিত বিনিয়োগের অভাবেই দিন দিন রেলের লোকসান বাড়ছে। তাই যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের ব্যবস্থা করে স্টেশনটি লাভজনক করার তাগিদ দিয়েছেন তারা। রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুর ও সাভারের শিল্পাঞ্চলসহ উত্তরবঙ্গের প্রতিদিন ১০ থেকে সর্বোচ্চ ২০ হাজার যাত্রী পরিবহনের উদ্দেশ্য নিয়ে ২০১৮ সালে স্টেশনটির যাত্রা শুরু হয়। অথচ সাড়ে পাঁচ বছর পরও সুনসান নীরব বিলাসবহুল এ স্টেশন। আধুনিক দুটি টিকিট কাউন্টার, সিগন্যাল পদ্ধতি, উন্নত মানের বিশ্রামাগারসহ সবকিছু থাকলেও লোকজন নেই। নষ্ট রয়েছে ইলেকট্রনিক বোর্ড। বিলাসবহুল এ স্টেশনে স্টপেজ মাত্র একটি লোকাল ট্রেনের। যার বরাদ্দকৃত টিকিটের সংখ্যাও মাত্র ২০টি। পরিচালন ব্যয় রয়েছে কমপক্ষে ৫ লাখ টাকা। অথচ মাসে আয় হয় ১০ হাজার টাকারও কম। স্থানীয়রা বলছেন, যাতায়াতের জন্য অনেক যাত্রী প্রতিদিন স্টেশনে এসে ভিড় করেন। তবে ট্রেন না থামায় হতাশ হয়ে ফেরেন তারা। মূলত বিনোদনের জন্য লোকজন আসেন। টিকটক ভিডিও হয়। সামাজিক যোগাযোগের জন্য ভিডিও নির্মাণে দৃষ্টিনন্দন স্টেশনটি সবচেয়ে বেশি কাজে লাগছে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, কারিগরি জটিলতায় স্টেশনটিকে ঘিরে পুরোপুরি সেবা চালু সম্ভব নয়। রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার শাহাদাত আলী কালবেলাকে বলেন, এখানে স্টপেজ দেওয়া মানে ট্রেন গন্তব্যে পৌঁছাতে বিলম্ব হবে। স্টপেজ বাড়লে রেলওয়ের অপারেশনে অনেক সমস্যা তৈরি হয়। তাই আমরা ঘন ঘন স্টপেজ বন্ধের পক্ষে। ভবিষ্যতে স্টেশনটিকে কীভাবে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে কাজে লাগানো যায়, তা দেখা হবে। এমন বাস্তবতাকে রেলওয়ের উন্নয়ন পরিকল্পনাহীনতার চরম পর্যায় বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ড. হাদীউজ্জামান। তিনি বলেন, রেলকে ঘিরে বিক্ষিপ্তভাবে উন্নয়ন হয়েছে। পরিকল্পনায় ত্রুটি ও অপরিকল্পিত উন্নয়নের চূড়ান্ত উদাহরণ হলো এই বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি স্টেশন। তিনি বলেন, যে কোনো স্থাপনা নির্মাণের আগে কেন করা হবে এ বিষয়ে বিষদ গবেষণা হয়। প্রয়োজন থাকলেই কেবল প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে। এখানে স্টেশন নির্মাণ হয়েছে অথচ কোনো কাজে আসছে না—এটা মেনে নেওয়া যায় না। জানা গেছে, সেবা না থাকায় টিন দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে স্টেশনের ভিআইপি বিশ্রামাগারের দরজা। দেখভালের অভাবে নষ্ট হচ্ছে জিনিসপত্র। সংস্কার আর লোকবল সংকটে এখন সারা দেশে ১৩০টি রেলস্টেশন বন্ধ। বিলাসী এ ধরনের রেলস্টেশন বন্ধ থাকায় লোকসান বাড়ছে রেলের। ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বহুল প্রতীক্ষিত ‘বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি স্টেশনে’র উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রেলস্টেশনটি চালুর মাধ্যমে এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের পাশাপাশি শিল্পায়ন ও পর্যটন শিল্পেরও বিকাশ ছিল মূল উদ্দেশ্য। তাই অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত এ স্টেশনের মূল ডিজাইন করা হয় ঢাকা রেলস্টেশনের আদলে। হাইটেক সিটি কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে গাজীপুরের কালিয়াকৈরের গোয়ালবাথান এলাকায় আপাতত ২৩২ একর জমিতে পার্ক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এ পার্কের মাঝ দিয়ে চলে গেছে দেশের উত্তরাঞ্চলে যাওয়ার রেলপথ। পার্কের সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করতে নির্মাণ করা হয় সর্বাধুনিক এ রেলস্টেশন।
১৯ মে, ২০২৪

‘অতিরিক্ত​​​​​​​ ঠান্ডায়’ রেললাইনে ফাটল, ট্রেন চলাচলে ধীর গতি
অতিরিক্ত ঠান্ডায় চুয়াডাঙ্গার জীবননগরের উথলীতে রেললাইনে ফাটল দেখা দিয়েছে। এতে করে ট্রেন চলাচলে সাময়িক ধীরগতি হয়েছে।  মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) দুপুর ১২টার দিকে উথলী-দর্শনা রেললাইনের তেঁতুলতলা-ঘোড়ামারা রেলগেটের মাঝামাঝি স্থানে এ ঘটনা ঘটে। এদিকে রেললাইন মেরামতের কাজ করছে কর্তৃপক্ষ। স্থানীয়রা জানান, ঢাকাগামী চিত্রা এক্সপ্রেস উথলী রেলস্টেশন অতিক্রম করার পর উথলী-দর্শনা রেলপথের উথলী তেঁতুলতলা-ঘোড়ামারা রেলগেটের মাঝামাঝি স্থানে রেললাইনে ফাটল দেখতে পান স্থানীয় এক ব্যক্তি। বিষয়টি রেলপথের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যদের জানান তিনি। পরে আনসার সদস্যরা রেললাইনের ওপর লাল পতাকা টানিয়ে দর্শনা অভিমুখী একটি মালগাড়ি খুলনা অভিমুখী ১৬ ডাউন মহানন্দ মেইল এবং পার্বতীপুর অভিমুখী ২৩ আপ রকেট মেইলকে ধীরগতিতে ঘটনাস্থল অতিক্রম করান। এ বিষয়ে উথলী রেলস্টেশনের স্টেশন মাস্টার আবু সাঈদ জানান, খবর পেয়ে রেললাইন মেরামতের কাজ শুরু করা হয়েছে। অতিরিক্ত ঠান্ডার কারণে এমন ঘটনা ঘটতে পারে। তবে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক আছে।
১৬ জানুয়ারি, ২০২৪

সমুদ্রের শহরে রেলস্টেশন উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের কাছাকাছি নির্মিত দেশের প্রথম এবং এশিয়ার বৃহত্তম দৃষ্টিনন্দন আইকনিক রেলস্টেশন উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ (শনিবার) বেলা ১টায় কক্সবাজার-দোহাজারী রেলপ্রকল্প অনুষ্ঠানস্থল থেকে এটির উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা। রেলওয়ে নেটওয়ার্কের ৪৮তম জেলা হিসেবে যুক্ত হওয়া কক্সবাজার রেল যোগাযোগের উদ্বোধনের পর আইকনিক রেলস্টেশনের টিকিট কাউন্টার থেকে টিকিট কাটবেন প্রধানমন্ত্রী। পরে পতাকা উড়িয়ে হুইসেল বাজানোর মাধ্যমে যাত্রা শুরু হবে এ রুটে ট্রেনের। এরপর প্রধানমন্ত্রী ট্রেনে চড়ে রামু পর্যন্ত ভ্রমণ করবেন। সেখানে সুধী সমাবেশে বক্তব্য দেবেন তিনি। এর আগে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আজ রেলের সঙ্গে কক্সবাজার সংযুক্ত হলো। দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০২ কিলোমিটার রেললাইনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে থাকতে পেরে সত্যি আমি খুব আনন্দিত। একটা কথা দিয়েছিলাম, কথাটা রাখলাম। আজকের দিনটি বাংলাদেশের জনগণের জন্য একটা গর্বের দিন। বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমারের কাছে ঘুমধুম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের জন্য ২০১০ সালে ৬ জুলাই দোহাজারী-রামু-ঘুমধুম রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। মেগা প্রকল্প হিসেবে ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। পরে টেন্ডার হলে দোহাজারী-চকরিয়া এবং চকরিয়া-কক্সবাজার (লট-১ ও লট-২) এই দুই লটে চীনা প্রতিষ্ঠান সিআরসি (চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন) ও দেশীয় প্রতিষ্ঠান তমা কন্সট্রাকশন প্রকল্পের নির্মাণকাজ পায়। কার্যাদেশ দেওয়ার পর ২০১৮ সালে এই মেগা প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। অনুমোদনের ১৩ বছর পর প্রকল্পটির উদ্বোধন হলো। এই ১০২ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এর অর্থায়ন করেছে এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও বাংলাদেশ সরকার।  
১১ নভেম্বর, ২০২৩

নানা সংকটে জামতৈল রেলস্টেশন
নানা সংকটে সিরাজগঞ্জের কামারখন্দের জামতৈল রেলওয়ে স্টেশনটি। এখানকার একমাত্র বিশ্রামাগার বন্ধ, তিনজন টিকেট বুকিং সহকারীর জায়গায় একজন, সরু ফুটওভার ব্রিজে শতশত মানুষ পারাপার, হাতে লিখে টিকেট বিক্রি এমনই নানা সংকট দেখা দিয়েছে। ট্রেন যাত্রী ফজলুল করিম, আলিফ, আয়শা সিদ্দিকা, মোস্তাক আহমেদ বলেন- একই আসনের টিকিট একাধিক যাত্রীর কাছে বিক্রি করা হচ্ছে। ডিজিটাল টিকেটিং সিস্টেম চালু না থাকায় আধুনিক যুগে এসেও হাতে লেখা টিকেট কিনতে হচ্ছে। এতে একই টিকেট একাধিক যাত্রীর কাছে বিক্রির মতো ঘটনা ঘটছে। এতে সাধারণ যাত্রীরা ট্রেনে ওঠার পর ভোগান্তীর স্বীকার হচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে জামতৈল স্টেশনে ডিজিটাল টিকেটিং সিস্টেম চালু ও একই টিকেট একাধিক যাত্রীর কাছে যাতে বিক্রি না হয়, সে ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের নজরদারি কামনা করেন তারা।  জামতৈল রেলওয়ে স্টেশনের বুকিং সহকারী আনোয়ার হোসেন বলেন, আমি গত ৯ সেপ্টেম্বর এই স্টেশনে যোগদান করেছি। এ স্টেশনে তিনজন বুকিং সহকারী থাকার কথা থাকলেও সব দায়িত্ব আমাকে একাই করতে হচ্ছে। যার কারণে সম্প্রতি ভুলবসত একই আসন দুই যাত্রীর কাছে বিক্রির ঘটনা ঘটেছে।  জামতৈল রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার আবু হান্নান জানান, সম্প্রতি জামতৈল স্টেশনে প্ল্যাটফর্ম সম্প্রসারণসহ নানা উন্নয়নকাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। কিন্তু স্টেশনের একমাত্র বিশ্রামাগারের বেহাল অবস্থা। যার কারণে সেটি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রাখা হয়েছে। স্টেশনে এক বছরের বেশি সময় ধরে পরিচ্ছন্নতা কর্মী নেই। যার কারণে স্টেশনের টয়লেট সহ প্ল্যাটফর্ম ও রেললাইনে আবজর্নায় ভরে থাকে। ট্রেনের যাত্রী সুবিধায় প্ল্যাটফর্মে ১০টি বৈদ্যুতিক পাখা লাগানো হয়। কিন্তু ১০টি পাখার একটি সুইচ হওয়ায় অনেক সময় একটি পাখার প্রয়োজন হলেও ১০টি পাখা একসঙ্গে ঘোরানো হচ্ছে। এতে বিদ্যুতের অপচয় হচ্ছে। স্টেশনে অনধিকার প্রবেশ কমানো দরকার। অনধিকার প্রবেশের কারণে ট্রেনের যাত্রীদের মালামাল চুরি, ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। এসব সমস্যা নিয়ে রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বরারর চিঠি পাঠানো হয়েছে।   সিরাজগঞ্জ রেলওয়ের থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান সরকার (পিপিএম) জানান, জামতৈল রেলওয়ে স্টেশনে চুরি ছিনতাই রোধে রাতে পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে। তবে আগের তুলনায় চুরি ছিনতাই অনেক কমেছে।  পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী রেলওয়ে বিভাগের বিভাগীয় প্রকৌশলী-২ বীরবল মণ্ডল জানান, জামতৈল রেলওয়ে স্টেশনের বিশ্রামাগারের সমস্যাগুলো আমার জানা ছিল না। যেহেতু নানা সমস্যার কারণে বিশ্রামাগারটি বন্ধ আছে, দ্রুত সময়ের মধ্যে সমস্যাগুলো সমাধান করে বিশ্রামাগারটি চালুর ব্যবস্থা করা হবে।  পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী রেলওয়ে বিভাগের সেতু প্রকৌশলী আব্দুর রহিম জানান, জামতৈল রেলওয়ে স্টেশন একটি জনগুরুত্বপূর্ণ স্টেশন। এই স্টেশনের ফুটওভার ব্রিজ দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ পারাপার হয়ে থাকে। ফুটওভার ব্রিজটি অনেক সরু ও একসঙ্গে বেশি মানুষ পারাপারে সমস্যা হওয়ায় সমস্যা নিরসনে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।      পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী রেলওয়ে বিভাগের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন জানান, জামতৈল স্টেশনে ডিজিটাল টিকেটিং সিস্টেম চালু করতে রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বুকিং সহকারী সংকটের কারণে জামতৈল স্টেশনে একজন বুকিং সহকারী দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে। নতুন করে নিয়োগ দিলে বুকিং সহকারীর সংকট কেটে যাবে।
১১ অক্টোবর, ২০২৩

রাজবাড়ীতে পরিত্যক্ত রেলস্টেশন
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ বাজার রেলওয়ে স্টেশন এখন পরিত্যক্ত। লোকবল ও ট্রেনসংকটে ঐতিহ্যবাহী এই রেলস্টেশন আজ বেহাল। গোয়ালন্দ বাজার রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার পূর্ববর্তী পাঁচুরিয়া রেলস্টেশনে প্রেষণে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি শুধু পরিত্যক্ত স্টেশনটিতে থাকা সরকারি ট্রেনের টিকিটগুলো দেখভাল করেন। এ ছাড়া রেলওয়ের কোনো কার্যক্রম নেই এখানে।  সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্টেশনের ঘরটি তালাবদ্ধ জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে।  জানা গেছে, দক্ষিণাঞ্চলের এ রেলপথে চলাচল করে দুটি আন্তঃনগর এক্সপ্রেস ট্রেন ও চারটি মেইল ট্রেন, আন্তঃনগর এক্সপ্রেস দুটি ও মেইল ট্রেন দুটি প্রত্যাহার করে নিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। এতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে এ রেলপথে যাতায়াতকারী যাত্রী ও ব্যবসায়ীদের।  এদিকে পুনরায় আন্তঃনগর এক্সপ্রেস ট্রেনসহ মেইল ট্রেন চালু করার দাবি স্থানীয়দের।  ব্রিটিশ আমল থেকে ভারতবর্ষের রেল যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ রুট হিসেবে পরিচিত গোয়ালন্দ ঘাট রেলওয়ে স্টেশন। তৎকালীন ভারতবর্ষের রাজধানী মুর্শিদাবাদ, কলকাতার সঙ্গে ঢাকায় যাতায়াতের জন্য সদরঘাট, নারায়ণগঞ্জ, চাঁদপুর নৌপথ হয়ে গোয়ালন্দ ঘাট রেলস্টেশন ছিল যাতায়াতের জন্য অন্যতম। গোয়ালন্দ থেকে সরাসরি ট্রেন চলত পশ্চিমবঙ্গের শিয়ালদহ স্টেশনে। পদ্মার রুপালি ইলিশ মাছসহ বহু পণ্য রপ্তানি হতো এ রেলপথ দিয়ে। দেশ ভাগের পর এই যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৮৪ সালে রেলওয়ের পরিধি বাড়িয়ে গোয়ালন্দ বাজার থেকে গোয়ালন্দঘাট পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার নতুন করে বৃদ্ধি করা হয়। এতে দক্ষিণ ও উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে রেল যোগাযোগের অন্যতম রুট হয় গোয়ালন্দ ঘাট রেলস্টেশন। খুলনা থেকে নকশীকাঁথা মেইল ও আন্তঃনগর তিতুমীর এক্সপ্রেস, লালন শাহ এক্সপ্রেস, রাজশাহী থেকে আন্তঃনগর যমুনা এক্সপ্রেস, সৈয়দপুর থেকে পণ্যবাহী শিলিগুড়ি চলাচল করত এই রেলপথে। বর্তমানে এ রুটে কোনো আন্তঃনগর এক্সপ্রেস ট্রেন নেই। প্রথমে খুলনগামী আন্তঃনগর তিতুমীর ও ২০২০ সালে রাজশাহীগামী যমুনা এক্সপ্রেস ট্রেন প্রত্যাহার করে নিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। পণ্যবাহী শিলিগুড়ি লোকাল ট্রেনটিও বন্ধ রয়েছে দীর্ঘদিন। এদিকে খুলনা ও রাজশাহীগামী যাত্রীদের সরাসরি যাতায়াতের ট্রেন বন্ধ থাকায় এই রেলপথে যাতায়াতকারী যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। গোয়ালন্দ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আ. সামাদ মোল্লা, বীর মুক্তিযোদ্ধা আ. রব মিয়া, জেলা আওয়ামী লীগের নেতা নির্মল কুমার চক্রবর্তী জানান, গোয়ালন্দ বাজার রেলওয়ে স্টেশনটি বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত। বঙ্গবন্ধু এই রেলওয়ে স্টেশনে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। এমনকি ভারতবর্ষের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মহাত্মা গান্ধী কুমিল্লার দাঙ্গার সময় এ গোয়ালন্দ ঘাট দিয়ে যাতায়াত করেছেন। দুঃখের বিষয় রেলওয়ে স্টেশনটি এখন পরিত্যক্ত। গোয়ালন্দ ঘাট থেকে আন্তঃনগর এক্সপ্রেস ট্রেনও প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। আন্তঃনগর এক্সপ্রেস ট্রেন পুনরায় চালু করার দাবি জানান তারা। ব্যাংক কর্মকর্তা সাদেকুল্লা মোবারক বলেন, গোয়ালন্দ ঘাট থেকে আগে সরাসরি রাজশাহী যাতায়াত করতে পারতাম। রাজশাহীগামী ট্রেনটি প্রত্যাহার করে নেওয়ায় অনেক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। রেলওয়ে স্টেশনের ব্যবসায়ীরা জানান, খুলনা ও রাজশাহীগামী ট্রেন প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর ওই রোডে যাতায়াতকারী যাত্রী না থাকায় ব্যবসায়ীরা লোকসানের মুখে পড়েছেন এবং পণ্যবাহী ট্রেন না থাকায় ব্যবসায়ীদের সড়কপথে মালামাল আনতে কয়েকগুণ খরচ বেশি হচ্ছে। গোয়ালন্দ বাজার রেলওয়ে স্টেশনের সহকারী স্টেশন মাস্টার বর্তমান পাঁচুরিয়া রেলওয়ে স্টেশনে প্রেষণে দায়িত্ব পালন করছেন সুজাত শেখ।  তিনি বলেন, গোয়ালন্দ বাজার রেলওয়ে স্টেশনটি জনবল সংকটের কারণে কর্তৃপক্ষ বন্ধ করে রেখেছে। এখানে রেলওয়ের কোনো কার্যক্রম নেই। শুধু স্টেশনটিতে কিছু সরকারি টিকিট থাকায় ওগুলো দেখার জন্য আমি দায়িত্ব পালন করছি। দৌলতদিয়া রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার সিএম আক্তার হায়দার বলেন, খুলনাগামী তিতুমীর এক্সপ্রেস ও রাজশাহীগামী যমুনা এক্সপ্রেস ট্রেনটি এখান থেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে। গোয়ালন্দ ঘাট থেকে কোনো আন্তঃনগর এক্সপ্রেস ট্রেন নেই। সৈয়দপুর থেকে পণ্যবাহী শিলিগুড়ি ট্রেনটি ব্রিটিশ আমল থেকে এ রেলপথে চলাচল করত। এখন এ রেলপথ পথে নকশীকাঁথা মেইল ও একটি লোকাল ট্রেন যাতায়াত করছে।
২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
X