নোয়াখালীতে চলছে ভয়াবহ লোডশেডিং
নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে চলছে ভয়াবহ লোডশেডিং, দিনের বেলায় ঘণ্টাখানিক থাকলেও রাতে বিদ্যুৎ ছাড়া থাকতে হচ্ছে। এর ফলে জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করছে। ২৪ ঘণ্টায় এক-দুই ঘণ্টার বেশি বিদ্যুৎ থাকছে না। একদিকে প্রচণ্ড দাবদাহ আরেক দিকে বিদ্যুৎ না থাকার কারণে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে গ্রাহকদের। এ ছাড়া ব্যবসায়ীদের বিক্রি নেই বললেই চলে, কল-কারখানাগুলোতে উৎপাদন পৌঁছেছে শূণ্যের কোটায়। পল্লী বিদ্যুৎ সমীক্ষায় জানা যায়, নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী, চাটখিল, বেগমগঞ্জ, সেনবাগ, সদর, কোম্পানীগঞ্জ, কবিরহাট ও সুবর্ণচর উপজেলাসহ নোয়াখালী পল্লী বিদুতের গ্রাহক রয়েছে ছয় লাখের অধিক। এসব গ্রাহক পড়েছে ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের কবলে। সোনাইমুড়ীর মতো একই অবস্থা অন্য উপজেলাগুলোতেও রাত দিন মিলে ২৪ ঘণ্টায় চলছে লোডশেডিং সমানভাবে। যখন দেশব্যাপী তীব্র তাপপ্রবাহে মানুষ হাফিয়ে উঠছে এবং হিটস্ট্রোকে মানুষ মারা যাচ্ছে, ঠিক তখনই নজিরবিহীন লোডশেডিং মানে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। এদিকে টানা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকায় বেগমগঞ্জের একমাত্র ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান ডেল্টা জুট মিল, বেগমগঞ্জ বিসিক শিল্প নগরী ও নোয়াখালী বিসিক শিল্প নগরীসহ জেলা উপজেলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ছোট বড় তিন শতাধিক এর বেশি শিল্প প্রতিষ্ঠানে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। তার পাশাপাশি কাজ বন্ধ থাকায় শ্রমিকদের মুজরি এবং মাস শেষে বিদ্যুৎ বিল দিতে গিয়ে মালিকদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। বেগমগঞ্জ বিসিক শিল্প নগরীর মালিক সমিতির সেক্রেটারি নজরুল ইসলাম বলেন, বিদ্যুতের অভাবে কলকারখানাগুলো বন্ধ হওয়ার পথে। বিদ্যুৎ ব্যবহার না করে ডিমান্ড চার্জ ও মিটার ভাড়া দিতে হচ্ছে। এ দিকে চৌমুহনীতে প্রায় ৪০ হাজার ও মাইজদীতে প্রায় ৭৬ হাজার গ্রাহক রয়েছে পিডিবির। এসব গ্রাহক লোডশেডিংয়ের কবলে পড়ে। লোডশেডিংয়ের কারণে জেলার প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্র চৌমুহনী ও জেলা শহর মাইজদীতে ব্যবসা পরিচালনায় বিঘ্ন ঘটছে। ব্যবসায়ীরা জেনোরেটর দিয়ে সমস্যার সমাধান করছে। পাশাপাশি সোনাইমুড়ীসহ জেলার অন্যান্য উপজেলাগুলোতে স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের লেখা পড়া বিঘ্ন ঘটছে। লোডশেডিং বিষয়ে সোনাইমুড়ী পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএম আলতাফ এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের করার কিছু নেই, যা পাচ্ছি তাই দিচ্ছি। নোয়াখালী পল্লী বিদ্যুতের জি এম জাকির হোসেনের নম্বরে একাধিক বার ফোন দেওয়া হলে তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
০১ মে, ২০২৪

‘গরমে হাঁসফাঁস, খামারিদের সর্বনাশ’
বৈরী আবহাওয়ায় কঠিন সময় পার করছে নরসিংদীসহ সারা দেশ। তাপপ্রবাহে হাঁসফাঁস করছে মানুষসহ সকল প্রাণিকুল। গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে লোডশেডিং। এতে ঘরে বাইরে কোথাও শান্তি মিলছে না সাধারণ মানুষের। বিশেষ করে বিপাকে পড়েছেন খামারিরা। তাপপ্রবাহে খামারের পশুকে দিনে তিনবার গোসল করানোসহ বেশ কয়েকবার পানি ছিটিয়েও কাজ হচ্ছে না। গরু-ছাগল বাঁচাতে খামারিদের জেনারেটরের পেছনে অতিরিক্ত টাকা খরচ করতে হচ্ছে। এতে কোরবানির পশুর দাম বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।  এদিকে পরিস্থিতি সামাল দিতে নানা পরামর্শ দিচ্ছে জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস। খামারিরা গরুকে ঠান্ডা রাখার জন্য ২ থেকে ৩ বার করে গোসল করাচ্ছেন। পাশাপাশি গরু রাখার ঘরের চালে পানি ছিটাচ্ছেন যাতে করে ঘর ঠান্ডা থাকে। সেই সঙ্গে গরুকে পানির সঙ্গে মিশিয়ে গ্লুকোজও খাওয়াচ্ছেন কেউ কেউ। তা ছাড়া শুধু যে গরমের কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন এমনটি নয়, দিনরাত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জেলার অনেক এলাকায় ৭ ঘণ্টাও বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ খামারিদের। জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের তথ্যমতে, জেলায় ৬টি উপজেলায় হৃষ্টপুষ্টকরণ গবাদিপশুসহ কোরবানিযোগ্য গবাদিপশুর ৮ হাজার ৩৮০টি খামার রয়েছে। এর মধ্যে নরসিংদী সদর উপজেলায় ৭৮০টি, রায়পুরা উপজেলায় ১ হাজার ৭৩২টি, বেলাব উপজেলায় ১ হাজার ২৮৫টি, পলাশ উপজেলায় ৬৮৩টি, শিবপুর উপজেলায় ১ হাজার ২৬৬টি এবং মনোহরদী উপজেলায় ২ হাজার ৬৩৪টি। এস খামারে ষাঁড় গুরু রয়েছে ৩২ হাজার ৫৫২টি, বলদ গরু রয়েছে ৬ হাজার ৩৩১টি, গাভি রয়েছে ৫ হাজার ৬৫২টি, মহিষ রয়েছে ১ হাজার ৯৮৭টি, ছাগল রয়েছে ৩৫ হাজার ৪১০টি, ভেড়া রয়েছে ১৩ হাজার ৬৬৭টি এবং অন্যান্য পশু রয়েছে ৬৯টি। জেলায় মোট চাহিদা রয়েছে ৭৭ হাজার ৯৩৬টি। বর্তমানে প্রাপ্যতা রয়েছে ৯৫ হাজার ৬৬৮টি, যা চাহিদার মিটিয়ে ১৭ হাজার ৭৩২টি উদ্ধৃত্ত রয়েছে।  জেলার শিবপুর উপজেলার মোহরপাড়া গ্রামে প্রতিষ্ঠিত সালমা সুলতানা ডেইরি ফার্মের মালিক সালমা সুলতানা জানান, এই গরমে খামারে থাকা গরুর অবস্থা খুবই খারাপ। প্রতিদিন তিনবার গোসল করালেও গরুগুলো সর্বদা অসহ্য যন্ত্রণা ভোগ করছে। গরমে সারাক্ষণ ছটফট করছে। অপর দিকে বিদ্যুৎবিভ্রাটের কারণে খামারে গরুগুলোকে সময়মত গোসল করানোও যাচ্ছে না। প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৬ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। বিদ্যুতের সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে আমি একটি জেনারেটর কিনেছি। ডিজেলের দাম অত্যাধিক বৃদ্ধি পাওয়ায় জেনারেটরও সবসময় চালানো সম্ভব হচ্ছে না। এতে করে আমি দিশেহারা হয়ে পড়েছি। আর এত গরমে গরু খুব কম খাবার খায়, আর এ কারণে গরুর ওজনও বাড়ছে না।  নরসিংদী সদর উপজেলার বীরপুর এলাকার সাইফ অ্যাগ্রো ফার্মের মালিক সাইফ আহমেদ জানান, তার খামারে ৭০টি গরু আছে। এই গরমে গরুগুলো ঠিকমত খাবার খাচ্ছে না। ঈদুল ফিতরের আগেও প্রতিদিন সাড়ে তিনশত লিটার দুধ উৎপাদন হতো। এখন ২০০ থেকে ২৫০ লিটার দুধ উৎপাদন হচ্ছে। তা ছাড়া গরুর ওজনও কমে যাচ্ছে। চলমান লোডশেডিংয়ের কারণে খরচ ১০-২০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যাচ্ছে। গরমে অনেক গরু অসুস্থ হয়ে পড়ছে। তাই চিকিৎসা ব্যয় বেড়ে গেছে। রায়পুরার চরাঞ্চলের চরমধুয়া গ্রামের গ্রিন অ্যাগ্রো ফার্মসের মালিক আহসান শিকদার জানান, ঈদ ঘিরে খামারে গরু মোটাতাজা করা হচ্ছে। অথচ গরমের তীব্রতায় গরু-মহিষ খাবার কমিয়ে দিয়েছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই শুকিয়ে যাচ্ছে। এ ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা খুব কঠিন।  নরসিংদী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. ছাইফুল ইসলাম জানান, আমাদের নরসিংদী যেহেতু শিল্প এলাকা এখানে একটু তাপমাত্রা সব সময় বেশিই থাকে। এই গরমে যাতে পশু পালনে তাদের কোনো ধরণের সমস্যায় পড়তে না হয় সে জন্য আমরা খামারিদের কাছে যাচ্ছি, তাদের সঙ্গে কথা বলছি, পরামর্শ দিচ্ছি। তা ছাড়া বিদ্যুতের সমস্যার জন্যও খামারে পশু পালনে সমস্যা হচ্ছে। গরম বেশি হওয়ায় গরুর মুখে রুচি কমে যাচ্ছে, যার কারণে পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার খাচ্ছে না। যাতে করে গরুর ওজন কমে যাচ্ছে। তা ছাড়া দুধ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় গরুর শ্বাসকষ্টও দেখা দিচ্ছি। তিনি আরও বলেন, খামারিদের বলে থাকি, টিনের চালে পাটের বস্তা দিয়ে কিছুক্ষণ পর পর পানি ছিটিয়ে ভিজিয়ে রাখতে, এতে করে ঘরের পরিবেশটা একটু ঠান্ডা থাকে। গরুর পানিশূন্যতা কমাতে বারবার বিশুদ্ধ পানি পান করানোসহ পরিমাণমত স্যালাইন বা খনিজ লবণযুক্ত করে পানি খাওয়াতে। তবে এখনো জেলায় হিটস্টোকে কোনো গরু মারা গেছে বলে আমাদের কাছে তথ্য নেই।
৩০ এপ্রিল, ২০২৪

 তাপপ্রবাহ কমে গেলে লোডশেডিং থাকবে না : বিদ্যুৎ সচিব
তাপপ্রবাহ কমে গেলে লোডশেডিং আর থাকবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব হাবিবুর রহমান। বুধবার (২৪ এপ্রিল) দুপুরে জামালপুরের ইসলামপুরে সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জায়গা পরিদর্শনে গিয়ে এ কথা বলেন তিনি। বিদ্যুৎ সচিব বলেন, চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম থাকার কারণে লোডশেডিং হচ্ছে। তবে তাপপ্রবাহ কমে গেলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। বোরো আবাদের অঞ্চল ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ছাড়া সব জায়গায় সমানভাবে লোডশেডিং হচ্ছে বলেও জানান তিনি।  এ সময় হাবিবুর রহমান বলেন, দেশের বিভিন্ন চরের মধ্যে সোলার পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপন হলে আগামীতে লোডশেডিং আরও কমবে।  এ সময় বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুৎতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান অজয় কুমার চক্রবর্তী, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমানসহ পল্লী বিদ্যুতের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। 
২৪ এপ্রিল, ২০২৪

তাপপ্রবাহের সঙ্গে বেড়ে চলেছে লোডশেডিং
দেশব্যাপী এক সপ্তাহ ধরে বইছে তীব্র তাপপ্রবাহ। কোনো কোনো জেলায় তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি ছাড়িয়েছে। এ পরিস্থিতিতে সারা দেশে জারি করা হয়েছে হিট অ্যালার্ট। আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী, এই তাপপ্রবাহ ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। এদিকে প্রচণ্ড গরমে যখন বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে, তখন সক্ষমতা থাকার পরও চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছে না বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। অর্থাভাবে জ্বালানি জোগান নিশ্চিত করতে না পারায় বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না। গরমে নাকাল হয়ে মানুষ যখন বিদ্যুতের ওপর নির্ভর করে স্বস্তি পেতে চাইছে, তখনই ভোগান্তি কয়েকগুণ বাড়িয়েছে লোডশেডিং। রাজধানীতে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ তুলনামূলক কম হলেও ঢাকার বাইরের অবস্থা ভয়াবহ। রাজধানীর বাইরে দিনে-রাতে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। প্রায় সব জেলাতেই কমবেশি লোডশেডিং হচ্ছে। এর মধ্যে ময়মনসিংহ, রংপুর ও কুমিল্লায় লোডশেডিং হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। রাজধানীতে দিনে গড়ে তিন থেকে পাঁচ ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। প্রচণ্ড গরমের মধ্যে লোডশেডিংয়ের কারণে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন মানুষ, বিশেষ করে শিশু, নারী এবং বৃদ্ধরা সীমাহীন কষ্ট পাচ্ছেন। অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনেকেই। হাসপাতালগুলোতে দিন দিন গরমজনিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। পিডিবি বলছে, চাহিদা অনুযায়ী জ্বালানির সংস্থান করতে না পারার কারণে চাহিদামতো বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না। প্রতিটি জ্বালানির সংকট রয়েছে। এ অবস্থায় লোড ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে চলমান পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে পিডিবির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। পিডিবির সদস্য (উৎপাদন) খন্দকার মোকাম্মেল হোসেন এ প্রসঙ্গে কালবেলাকে বলেন, জ্বালানি নেই; তাই চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন করা যাচ্ছে না। প্রক্ষেপণ অনুযায়ী জ্বালানি তেল থেকে ৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করার কথা। কিন্তু তেলের সংকটের কারণে দেড় হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন করা হচ্ছে। একইভাবে গ্যাস ও কয়লার জোগান চাহিদা অনুযায়ী পাচ্ছি না। তিনি বলেন, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা ও রংপুর অঞ্চলে লোডশেডিং বেশি হচ্ছে। তবে আমরা লোড ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে পরিস্থিতি সহনীয় রাখার চেষ্টা করছি। সংশ্লিষ্টরা জানান, জ্বালানির অভাবে গত দুই বছর গরমের সময় লোডশেডিং বেড়েছিল। তবে এবার বেশি। কারণ, এবার চাহিদাও বেড়েছে। চলতি বছরের শুরু থেকে অর্থ সংকটের কারণে পর্যাপ্ত তেল-গ্যাস ও কয়লা আমদানি করা যায়নি। এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে বিদ্যুৎ উৎপাদনে। অর্থ সংকট না কাটলে সামনে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা। জানা গেছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে বিদ্যুতের চাহিদা ১৭ থেকে ১৮ হাজার মেগাওয়াট। এর বিপরীতে মিলছে সাড়ে ১৫ হাজার মেগাওয়াট। আড়াই থেকে তিন হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি থাকছে। তবে সরকারি হিসাবে এ ঘাটতির পরিমাণ ১ হাজার মেগাওয়াট। পিডিবি জানায়, গত রোববার সারা দেশে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১৫ হাজার ৬৬৬ মেগাওয়াট। এদিন রাত ১২টায় ৭৮০ মেগাওয়াট লোডশেডিং করা হয়েছে। আর গতকাল বিকেল ৩টায় বিদ্যুতের ন্যাশনাল ডেসপাচ সেন্টারের তথ্যানুযায়ী, ওই সময় দেশে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১৫ হাজার ২২০ মেগাওয়াট। বিপরীতে উৎপাদন হয়েছে ১৪ হাজার ১৭৭ মেগাওয়াট। লোডশেডিং হয়েছে ৯৯৬ মেগাওয়াট। এই সময় গ্যাস থেকে ৭ হাজার ৫০০, তরল জ্বালানি (ফার্নেস অয়েল ও ডিজেল) ১ হাজার ৫০৫, কয়লা থেকে ৩ হাজার ৫৭৯, জলবিদ্যুৎ ৩০, সৌরবিদ্যুৎ ২৬৩ ও বায়ুবিদ্যুৎ থেকে ৩৮ মেগাওয়াট উৎপাদন হয়। এ ছাড়া ভারত থেকে ১ হাজার ৫২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি হয়। সবচেয়ে বেশি লোডশেডিং হচ্ছে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) এলাকাগুলোতে। এই সংস্থাটি মূলত গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহের দায়িত্বে রয়েছে। এর গ্রাহক সংখ্যাও সবচেয়ে বেশি। প্রচণ্ড গরমের এই সময়ে আরইবির নিয়ন্ত্রিত এলাকায় বিদ্যুতের চাহিদা ৯ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট। বিপরীতে আরইবি পাচ্ছে ৭ হাজার ২০০ মেগাওয়াট। ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট ঘাটতি। ঘাটতির এ বিদ্যুৎই লোডশেডিং করতে হচ্ছে। আরইবির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, পিডিবি থেকে চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে না। পাশাপাশি সঞ্চালন লাইনেরও ক্যাপাসিটি বাড়াতে হবে। এখন যে ১৩২ কেভি সঞ্চালন লাইন রয়েছে, এগুলো আপগ্রেড করে ২৩০ বা ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন করতে হবে। বিশেষ করে ময়মনসিংহ ও কুমিল্লা অঞ্চলে। আরইবির পরিচালক (কারিগরি) রফিকুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিং বেশি। কারণ, পিডিবি থেকে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুতের সরবরাহ পাচ্ছি না। দেড় থেকে ২ হাজার মেগাওয়াট আমাদের ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। জানা গেছে, বর্তমানে পিডিবির কাছে সরকারি-বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং জ্বালানি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর পাওনা দাঁড়িয়েছে ৪২ হাজার কোটি টাকার বেশি। এ দেনা সময়মতো পরিশোধ করতে না পারায় এখন জ্বালানির সংস্থান করা যাচ্ছে না। পাশাপাশি বিদ্যুৎও কিনতে পারছে না। জানা গেছে, মোট বকেয়ার মধ্যে সরকারি-বেসরকারি ও দেশি-বিদেশি যৌথ কোম্পানির পাওনা ৩৭ হাজার ৬৪১ কোটি টাকা। আর পেট্রোবাংলার অধীন গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোর পাওনা ৩ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা। বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মধ্যে রেন্টাল ও ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রোডিউসারের (আইপিপি) পাওনা ১৫ হাজার ২৫৪ কোটি টাকা। দেশের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো পাবে ৬ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা। ভারতের ঝাড়খণ্ডে অবস্থিত আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পাবে ৪ হাজার ১৪০ কোটি টাকা। আর দেশের সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো পিডিবির কাছে পাবে ৯ হাজার ৬৪৮ কোটি টাকা। এ ছাড়া ভারত থেকে পিডিবি সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে যে বিদ্যুৎ আমদানি করে, সেখানেও ১ হাজার ৯৪৮ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। জানা গেছে, আদানির টাকা সময়মতো পরিশোধ না করায় তারা একটি ইউনিট বন্ধ রেখেছিল। বাকি একটি ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ আসছিল। তবে বিদ্যুৎ বিভাগের দৌড়াদৌড়ির কারণে শেষ পর্যন্ত ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা ছাড় করাতে পেরেছে। তারা আবার ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দেওয়া শুরু করেছে। পাওয়ার সেলের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, দেশে এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ৩০ হাজার ৬৭ মেগাওয়াট। এটি ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ। গত বছরের ১৯ এপ্রিল সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় ১৫ হাজার ৬৪৮ মেগাওয়াট। দেশে বর্তমানে গ্রাহক সংখ্যা ৪ কোটি ৬৬ লাখ। বিদ্যুৎ সুবিধাপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠী শতভাগ।
২৩ এপ্রিল, ২০২৪

লোডশেডিং থাকবে, বাড়ছে ছুটিতেও
গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গ্রামাঞ্চল, বিভাগীয় শহরের পাশাপাশি এবার রাজধানীতে লোডশেডিং শুরু হয়েছে। বিভাগীয় শহর ও গ্রামাঞ্চলের কোথাও কোথাও দিনে-রাতে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং হচ্ছে। আর রাজধানীতে কোনো কোনো এলাকায় তিন থেকে চার ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। চাহিদার সঙ্গে সমন্বয় করে উৎপাদন করতে না পারায় এই লোডশেডিং হচ্ছে। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, জ্বালানি সংকটের কারণে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না। অন্যদিকে, গ্রীষ্মের প্রচণ্ড গরমের মধ্যে দিন যত এগোবে, লোডশেডিংয়ের পরিমাণ তত বাড়বে এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। বর্তমানে গড়ে দেড় হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং হচ্ছে। সামনে এটি বেড়ে দুই হাজার মেগাওয়াট হবে। ফলে ঈদের ছুটিতেও গ্রাহকদের লোডশেডিং পোহাতে হবে। সংশ্লিষ্টরা জানান, গ্যাস সংকটের কারণে প্রায় তিন হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র অচল হয়ে পড়েছে। ৩ এপ্রিল সামিটের ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল চালুর কথা থাকলেও হয়নি। আজ সোমবার ফের চালুর চেষ্টা করা হবে। টার্মিনালটি চালু হলে গ্যাসের সরবরাহ বাড়বে। তখন লোডশেডিং কিছুটা কমে আসবে। গত বৃহস্পতিবার সচিবালয়ের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ লোডশেডিং নিয়ে বলেন, সামিটের এলএনজি টার্মিনাল শিগগির আবার গ্যাস সরবরাহ শুরু করবে। এতে বিদ্যুতের ঘাটতি কমে যাবে। তেলভিত্তিক কেন্দ্রগুলো বেশি সময় চালাতে চাই না। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যয় বাড়ে। গ্রীষ্মের প্রস্তুতি নেওয়া আছে। আশা করি সংকট হবে না। পিডিবির সদস্য (উৎপাদন) খন্দকার মোকাম্মেল হোসেন কালবেলাকে বলেন, চাহিদামতো বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও কিছুটা হিমশিম খেতে হচ্ছে। কয়লা থেকে সর্বোচ্চ উৎপাদন করা হচ্ছে। এলএনজি টার্মিনাল চালু হলে গ্যাসের সরবরাহ বাড়বে বিদ্যুৎ খাতে। তেলচালিত কেন্দ্রগুলোকে উৎপাদন বাড়াতে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। শিগগির পরিস্থিতির উন্নতি হবে। ঢাকার বাইরে বিভিন্ন বিভাগীয় শহর ও মফস্বল শহরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিটি বিভাগীয় শহরে লোডশেডিং হচ্ছে। কোনো কোনো বিভাগীয় শহরে দিনে রাতে প্রতি ঘণ্টায় লোডশেডিং হচ্ছে। এমনকি ইফতার, তারাবি ও সেহরির সময় বিদ্যুৎ থাকছে না। গ্রামের পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। এক সপ্তাহ ধরে রাজধানীতে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ বাড়ছে। রাজধানীর রামপুরা, মিরপুর, গ্রিন রোড, পুরান ঢাকার প্রায় সব এলাকাতে লোডশেডিংয়ের খবর পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঈদের ছুটিতেও লোডশেডিং থাকবে। তবে তা কম হবে। পিডিবির তথ্যমতে, শনিবার রাত ১২টায় লোডশেডিং হয় এক হাজার ৭৫২ মেগাওয়াট। এ সময় বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১৪ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট। রাত ১টায় চাহিদা কিছুটা কমে দাঁড়ায় ১৪ হাজার ১০০ মেগাওয়াট। সে সময় লোডশেডিং হয়েছে এক হাজার ৬৩৬ মেগাওয়াট। রাত ২টায় চাহিদা একই থাকলেও উৎপাদন কিছুটা বাড়ায় লোডশেডিং কমে দাঁড়ায় এক হাজার ৫৩৭ মেগাওয়াট। রাত ৩টায় চাহিদা আবার বেড়ে হয় ১৪ হাজার ২০০ মেগাওয়াট। সে সময় লোডশেডিং হয় এক হাজার ৫৬১ মেগাওয়াট। রাত ৪টায় লোডশেডিং হয় এক হাজার ৩৩৫ মেগাওয়াট। এরপর কিছুটা উঠানামা করলেও সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত কখনোই এক হাজার ১০০ মেগাওয়াটের কম লোডশেডিং হয়নি। এর মধ্যে সকাল ৭টায় সর্বনিম্ন এক হাজার ১৩০ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়। আর বিকেল ৩টায় তা এক হাজার ৪০০ মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যায়। এরপর আবারও লোডশেডিং কিছুটা কমে। এর আগে ৫ এপ্রিল শুক্রবারও একই ধরনের চিত্র ছিল। ওই দিন রাত ১২টায় চলতি বছরের সর্বোচ্চ এক হাজার ৮৯০ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়েছে। রাত ১টায় এক হাজার ৬৪৬ মেগাওয়াট, ২টায় এক হাজার ৬৩৪ মেগাওয়াট ও ৩টায় এক হাজার ৩৭৮ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়। সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় শুক্রবার দিনে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ কিছুটা কম ছিল। ওই দিন সকাল ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত হাজার মেগাওয়াটের নিচে ছিল লোডশেডিং। রাত ১১টায় তা এক লাফে দেড় হাজার মেগাওয়াট ছাড়ায়। ৪ এপ্রিল রাত ১২টায় এক হাজার ৫৫০ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়। ওই দিন রাত ১টায় এক হাজার ৫২৬ মেগাওয়াট, ২টায় এক হাজার ৩৫৪ মেগাওয়াট ও ৩টায় এক হাজার ৩৭৮ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়। ওই দিন শুধু সকাল ৮টায় ও সন্ধ্যা ৭টা থেকে সাড়ে ৭টা পর্যন্ত লোডশেডিং হাজার মেগাওয়াটের নিচে নামে। দুপুর ৩টায় তা দেড় হাজার মেগাওয়াট ছাড়ায়। একই ধরনের চিত্র ছিল ৩ এপ্রিল। ওই দিন রাত ১২টায় এক হাজার ৮২৬ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়। এ ছাড়া রাত ১টায় এক হাজার ৬৪৫ মেগাওয়াট, ২টায় এক হাজার ৪৩৬ মেগাওয়াট ও ৩টায় এক হাজার ২৫৫ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়। যদিও ২ এপ্রিল দিনে বেশি লোডশেডিং হয়েছে। ওই দিন দুপুর ৩টায় সর্বোচ্চ লোডশেডিং হয় এক হাজার ৭৩২ মেগাওয়াট। তবে ১ এপ্রিল সারাদিনই লোডশেডিং হাজার মেগাওয়াটের নিচেই ছিল। ওই দিন রাত ১১টায় তা হাজার মেগাওয়াট ছাড়ায়। ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির (ডেসকো) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. কাওসার আমীর আলী বলেন, রাজধানীতে এসির ব্যবহার বাড়ছে। এতে আমাদের বিতরণ এলাকায় বিদ্যুতের চাহিদাও বেড়েছে। ঢাকায় চাহিদার পুরোটাই আমরা সরবরাহ করতে পেরেছি। কিছু কিছু এলাকায় সরবরাহে কিছু সমস্যা থাকতে পারে।
০৮ এপ্রিল, ২০২৪

লোডশেডিংয়ে নাটোরে বোরো ধানের আবাদ নিয়ে শঙ্কা
আশঙ্কাজনক হারে নামছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর। বিগত ৫ বছরে নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ১১.২৬ মিটার নিচে নেমেছে। ফলে শুষ্ক মৌসুমের শুরুতে গভীর নলকূপে পানি উঠলেও প্রয়োজনীয় পানি মিলছে না শ্যালো মেশিনে। এতে করে ফসলের খেতে সুবিধামতো সেচ দিতে পারছেন না কৃষকরা। কৃষকরা বলছেন,শুস্ক মৌসুমের শুরুতেই কৃষকের সেচ দেওয়ার প্রধান উৎস বৈদ্যুতিক লোডশেডিং শুরু হয়েছে। তা ছাড়া পানির উৎসের সংখ্যা কমে আসাসহ নানা কারণে কৃষকরা বোরো খেতে সেচ দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। ফলে মাটির অন্তত ৮-১০ ফুট গর্ত করে ডিজেলচালিত শ্যালো বসিয়ে পানি তুলে সেচ সচল রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। এতে পরিশ্রমের পাশাপাশি বাড়ছে সেচ খরচ। প্রয়োজনীয় বৃষ্টিপাত না হলে এবং লোডশেডিং না কমলেও শুষ্ক মৌসুমজুড়েই এই অবস্থা বিরাজের শঙ্কায় পড়েছেন কৃষক।  উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ৫ বছরের গড় তথ্য মতে, ২০১৯ সালে এই স্তর ৭.১৮ মিটার, ২০২০ সালে ৮.২৩ মিটার, ২০২১ সালে ৯.৫৯ মিটার, ২০২২ সালে ১০.৪৪ মিটার এবং ২০২৩ সালে ১১.২৬ মিটার পানির স্তর নিচে নেমেছে। উপজেলায় ফসলি জমিতে সেচ দিতে প্রায় ১৪ হাজার সেচ যন্ত্র ব্যবহার হচ্ছে। আশঙ্কাজনকভাবে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার কারণে বোরো চাষিরা ৮ থেকে ১০ ফুট পর্যন্ত মাটি গর্ত করে শ্যালো মেশিন ও মোটর বসিয়ে পানি তোলার চেষ্টা করে যাচ্ছে। এতে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত কয়েক দিন ধরে তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারনে গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে মানুষ। সেই সঙ্গে বিদ্যুৎতের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। এরইমধ্যে শুরু হয়েছে লোডশেডিং। এতে করে সেচ পাম্পগুলো ঠিকমতো চালাতে পারছেন না কৃষকরা। অন্যদিকে চলতি মৌসুমে উপজেলায় ৮ হাজার ৭৫০ হেক্টর ফসলি জমির বোরো ধান নিয়ে শঙ্কায় পড়েছে কৃষক। এই উপজেলায় পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহকসংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার আর ট্রান্সফরমার রয়েছে প্রায় ৩ হাজার। সরেজমিনে উপজেলার হালতিবিল বিস্তীর্ণ মাঠে বোরো আবাদের জমিতে দেখা যায়, অনেক বোরো চাষি গভীর নলকূপ স্থাপনের পরও জমিতে সেচ কাজে আশানুরূপ পানি পাচ্ছে না। তারা গর্তের মধ্যে মেশিন ও মোটর বসিয়ে পানি তোলার চেষ্টা করছে। বোরো চাষি শিলন মৃধা, জালাল হেসেনসহ অনেকে বলেন, গভীর পাইপ বসিয়ে আগের মত সেচ কাজের জন্য ঠিকমতো পানি পাওয়া যাচ্ছে না। শ্যালো মেশিনে বা মোটরে পানি কম ওঠায় বোরো চাষাবাদে জ্বালানি খরচ বেড়ে গেছে। লোডশেডিংয়ের কারণে সেচ কাজে সময় বেশি লাগছে। এদিকে নলডাঙ্গা উপজেলার হালতি গ্রাম থেকে সোনাপাতিল হয়ে মহিষমারি পর্যন্ত খাল পুনঃখনন শুরু করে বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। ৪ দশমিক ৪ কিলোমিটার খালের প্রায় অর্ধেক কাটা শেষ হয়েছে গত শুস্ক মৌসুমে। এ বছর শুস্ক মৌসুমে অবশিষ্ট খাল খননে দেখা দিয়েছে বিপত্তি। সেখানে কৃষকরা দাবি করছেন সেগুলো তাদের সম্পত্তি। এ নিয়ে অবস্থায় অনেকটা মুখোমুখি দাঁড়িয়ে গেছে বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় কৃষকরা। নাটোর বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের উপ সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল মতিন বলেন, কৃষকরা দাবি করছেন এগুলো তাদের সম্পত্তি, কিন্তু এক সময় এখানে খাল ছিল। জলাবদ্ধতা নিরসন ও পানির স্তরের সঠিকতা রাখার জন্য খাল খনন জরুরি। নাটোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর নলডাঙ্গা সাব-জোনাল অফিসের সহকারী জেনারেল ম্যানেজার মো. আল ইমরান আহমেদ বলেন, উপজেলায় লোডশেডিং খুবই সামান্য। সরকার কৃষিকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কারণে সব সময় নিরবিছিন্ন বিদ্যুৎ দেওয়ার জন্য চেষ্টা করছে। এ প্রসঙ্গে নলডাঙ্গা উপজেলা অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা মো. কিষোয়ার হোসেন বলেন, গত কয়েক দিন খরার কারণে কৃষকরা উদিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন। বিলে, ডোবা, নালা ও খালে পানি থাকলে বোরো চাষিদের সেচ কাজে অসুবিধা হতো না। কিন্তু ২ থেকে ৩ দিন যাবৎ নলডাঙ্গায় ৩ থেকে ৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। যার কারণে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর কিছুটা ওপরে উঠবে। সেচ নিয়ে আর সমস্যা হবে না।
০৬ এপ্রিল, ২০২৪

সারে গ্যাস কমিয়েও লোডশেডিং কমছে না
সার উৎপাদনে গ্যাসের সরবরাহ কমিয়েও নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না লোডশেডিং। রমজান শুরুর আগে গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিং হতো। এখন রাজধানীতেও হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দিন দিন তাপমাত্রা বাড়ছে। এ ছাড়া চলছে সেচ মৌসুম ও রমজান। বছরের এই সময়টা বিশেষ করে মার্চ থেকে জুলাই পর্যন্ত বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা থাকে। এর বিপরীতে উৎপাদন সক্ষমতা থাকলেও জ্বালানির অভাবে কেন্দ্রগুলো চালানো যাচ্ছে না। শিগগিরই প্রয়োজনীয় জ্বালানির সংস্থান করা না গেলে গ্রাহকদের আরও বেশি লোডশেডিংয়ের কবলে পড়তে হবে। পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন এ প্রসঙ্গে কালবেলাকে বলেন, ট্রান্সমিশন ও জ্বালানির সীমাবদ্ধতার কারণে লোডশেডিং হচ্ছে। সামনে পরিস্থিতির উন্নতি হবে। জানা গেছে, গত ১৩ মার্চ বিদ্যুৎ ভবনে আসন্ন গ্রীষ্মকাল ও সেচ মৌসুমে বিদ্যুৎ ও শিল্প শ্রেণিতে গ্যাস বরাদ্দ নিয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রীর সভাপতিত্বে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় সারে কমিয়ে লোডশেডিং মোকাবিলায় বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়তে গ্যাস সরবরাহ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর ওইদিন সারে গ্যাস সরবরাহ করা হয় ১৬৯ দশমিক ৫ মিলিয়ন ঘনফুট। পরদিন ১৪ মার্চ সরবরাহ করা হয় ১৪৫ মিলিয়ন ঘনফুট। আর ১৫ মার্চ সরবরাহ করা হয় ৮৯ মিলিয়ন ঘনফুট। অন্যদিকে ১৩ মার্চ বিদ্যুৎ গ্যাসের সরবরাহ ছিল ৯১৪ দশমিক ৪ মিলিয়ন ঘনফুট। পরদিন ১৪ মার্চ সরবরাহ করা হয় ৯৩৭ মিলিয়ন ঘনফুট এবং ১৫ মার্চ সরবরাহ করা হয় ৯৪০ দশমিক ৫ মিলিয়ন ঘনফুট। পিডিবির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, বিদ্যুতে গ্যাসের চাহিদা আড়াই হাজার মিলিয়ন ঘনফুটের মতো। সেখানে বিভিন্ন খাত রেশনিং করে এখন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুটের কম সরবরাহ করা হচ্ছে। তাই চাহিদার অর্ধেকের চাইতে কম সরবরাহ করায় পরিস্থিতি তেমন একটি উন্নতি হবে না। কারণ সামনে তাপমাত্রা আরও বাড়বে। পাশাপাশি বিদ্যুতের চাহিদাও বাড়বে। তারা বলছেন, গ্যাস সংকটের মধ্যেই রক্ষণাবেক্ষণের নিয়মিত কাজের জন্য একটি তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) টার্মিনাল বন্ধ রয়েছে। এ কারণে গ্যাসের সরবরাহ বাড়াতে পারছে না পেট্রোবাংলা। বন্ধ টার্মিনালটি চালু হবে মার্চের শেষ দিকে। তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু রাখলে উৎপাদন খরচ অনেক বাড়বে। আবার বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার্য কয়লা ও গ্যাস আমদানি করতে বিপুল পরিমাণ ডলার দরকার; কিন্তু দেশে এখন ডলার সংকট চলছে। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) দৈনিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছেÑ গত শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় ১৫৮ মেগাওয়াট, ৭টায় ৯১ মেগাওয়াট, সাড়ে ৭টায় ৯৬ মেগাওয়াট, ৮টায় ৭৯ মেগাওয়াট, ৯টায় ৮০ মেগাওয়াট, ১০টায় ৭৮ মেগাওয়াট, রাত ১১টায় ১৪৩ মেগাওয়াট এবং ১২টায় ১১৩ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গতকাল রাজধানীর মিরপুর, মোহাম্মদপুর, রামপুরা, গোড়ান, মুগদা এলাকায় দিনে ও রাতে লোডশেডিং হয়েছে। এসব এলাকায় দিন-রাত মিলিয়ে দুই থেকে তিন ঘণ্টা লোডশেডিং হয়েছে।
১৭ মার্চ, ২০২৪

ব্যয় বাড়িয়ে লোডশেডিং সামলানোর চেষ্টা
আজ রমজান মাসের চাঁদ দেখা গেলে আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে শুরু হবে রোজা। এরই মধ্যে গরমকাল শুরু হয়ে গেছে। পাশাপাশি চলছে সেচ মৌসুম। সাধারণত এ সময়ে দেশে বিদ্যুতের চাহিদা থাকে সবচেয়ে বেশি। দিন যত যাবে ততই বাড়বে চাহিদা। এ অবস্থায় রোজার মাসে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ ঠিক রাখতে তেলভিত্তিক কেন্দ্রগুলো চালু রাখার পরিকল্পনা করছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। এতে ব্যয় ও লোকসান অনেকটা বাড়লেও লোডশেডিং সামাল দেওয়া সম্ভব হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তাদের মতে, রমজানে ইফতার, তারাবি ও সেহরির সময় বিদ্যুৎ সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন করতে হলে তেলভিত্তিক কেন্দ্রগুলো চালানোর বিকল্প নেই। বিদ্যুৎ বিভাগ ও পিডিবির তথ্যমতে, এবারের রমজানে বিদ্যুতের সম্ভাব্য চাহিদা ধরা হয়েছে ১৬ হাজার থেকে ১৭ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট। গতকাল রোববার ১২ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে বিদ্যুতের উৎপাদন ছিল প্রায় একশ মেগাওয়াট কম। এজন্য ঢাকা ও ময়মনসিংহে লোডশেডিং করতে হয়েছে। মূলত জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত না হওয়ায় এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ফলে গত বছরের মতো এবারও রমজানে লোডশেডিং থাকছে। এ বিষয়ে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন কালবেলাকে বলেন, ‘প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। জ্বালানি সরবরাহের স্বল্পতা তো রয়েছেই। তার পরও লোডশেডিং যাতে না হয়, বিশেষ করে ইফতার, তারাবি ও সেহরির সময় যাতে বিদ্যুৎ থাকে, সেই প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘ট্রান্সমিশন সীমাবদ্ধতার কারণে লোডশেডিং হচ্ছে। এবার সর্বোচ্চ চাহিদার সময় ফার্নেস অয়েলনির্ভর কেন্দ্রগুলো চালানো হবে।’ পিডিবির সদস্য (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) পল্লবী জামান কালবেলাকে বলেন, ‘ফুয়েল ম্যানেজমেন্ট করে রোজার মাসে গ্রাহকদের কমফোর্ট রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। এজন্য আমাদের তেলভিত্তিক কেন্দ্রগুলো সর্বোচ্চ চাহিদার সময় চালাতে হবে। এতে করে খরচ বাড়বে, লোকসান বাড়বে। তার পরও চালাতে হবে।’ এর আগে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রমজানে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার আশ্বাস দিয়ে বলেন, ‘তারাবি ও সেহরিতে লোডশেডিং হবে না। তবুও যদি সংকট হয়, তবে দিনের কোনো একটি নির্দিষ্ট সময়ে লোডশেডিং করা হতে পারে।’ এর পরই গত ৫ মার্চ নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক দিন ধরে ঢাকা ও ময়মনসিংহে লোডশেডিং হচ্ছে। গত শনিবার ময়মনসিংহে ৭৬ মেগাওয়াট ও ঢাকায় ২০ মেগাওয়াট লোডশেডিং করা হয়েছে। এ সমস্যা আরও কয়েকমাস থাকবে। এখন কুমিল্লাতে বিদ্যুতের সমস্যা হচ্ছে। ফেনীতে নির্মিত সোলার বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পরীক্ষামূলক উৎপাদন চলছে। সেখান থেকে ৭৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্ভব হলে কুমিল্লায়ও সমস্যা থাকবে না। এ ছাড়া মার্চ মাসের মাঝামাঝি দেশে এলএনজির কার্গো এলে, তখন বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের সরবরাহও বাড়ানো হবে। বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, মার্চ-এপ্রিলে বিদ্যুতের সম্ভাব্য চাহিদা ধরা হয়েছে ১৭ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট। সে অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য গ্যাসের চাহিদা ধরা হয়েছে ১ হাজার ৭৬০ মিলিয়ন ঘনফুট, যা ন্যূনতম ১ হাজার ৫৪০ মিলিয়ন ঘনফুট হতে পারে। এ ছাড়াও ফার্নেস অয়েলের চাহিদা ১ লাখ ৫৪ হাজার ৯৫০ টন এবং ডিজেলের চাহিদা ১৫ হাজার ৬০০ টন হতে পারে। বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলোতে ন্যূনতম দুই মাসের উৎপাদন অব্যাহত রাখার জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানি তেলের মজুত নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে পেট্রোবাংলা এবং বিপিসির সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে পিডিবির নিজস্ব বিদ্যুকেন্দ্রগুলোর মধ্যে গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রগুলোর গড় উৎপাদন ব্যয় ছিল ইউনিটপ্রতি ৫ টাকা ১৩ পয়সা, কয়লায় ১১ টাকা ৫১ পয়সা, ফার্নেস অয়েলে ২৩ টাকা ৪২ পয়সা এবং ডিজেল ৩৯ টাকা ৭২ পয়সা। আর পিডিবির প্রক্ষেপণ অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গ্যাসে ৫ টাকা ৮৩ পয়সা, ফার্নেস অয়েলে ৩৯ টাকা ৩ পয়সা এবং ডিজেল ৮৯ টাকা ২৩ পয়সা ইউনিটপ্রতি উৎপাদন খরচ হবে। মূলত দেশে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন ব্যয়ও বেড়েছে। বর্তমানে দেশের বিদ্যুতের মোট উৎপাদন সক্ষমতা হচ্ছে ২৫ হাজার ৪৮১ মেগাওয়াট। এর মধ্যে ১০ হাজার ৭১২ মেগাওয়াট গ্যাসনির্ভর, ফার্নেস অয়েল নির্ভর ৬ হাজার ১৯১ মেগাওয়াট, কয়লাভিত্তিক ৪ হাজার ৪১১ মেগাওয়াট, ডিজেলে ৮২২ মেগাওয়াট, নবায়নযোগ্য ৬৮৯ মেগাওয়াট এবং আমদানি করা হয় ২ হাজার ৬৫৬ মেগাওয়াট। শতাংশ হিসেবে মোট বিদ্যুতের ৪২ শতাংশ গ্যাস, ২৪ শতাংশ ফার্নেস অয়েল, ১৭ শতাংশ কয়লা, তিন শতাংশ ডিজেল, তিন শতাংশ নবায়নযোগ্য এবং আমদানি ১১ শতাংশ। এদিকে, রমজানে গত ২০ ফেব্রুয়ারি বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন দপ্তর, সংস্থা ও কোম্পানির প্রতিনিধিদের মাসিক সমন্বয় সভায় রমজান মাসে বিশেষ করে সেহরি, ইফতার ও তারাবি নামাজের সময়ে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিতকরণের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এ সময় সেহরি, ইফতার ও তারাবি নামাজের সময়ে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিতকরণের জন্য বিতরণ সংস্থাগুলোকে বেশ কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে ৬টি বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থাকে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে মনিটরিংয়ের জন্য নিজস্ব নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা এবং নিয়ন্ত্রণ কক্ষে ব্যবহৃত ফোন ও মোবাইল ফোন নম্বর ও হটলাইন নম্বর ওয়েবসাইটে প্রকাশসহ সংশ্লিষ্টদের অবহিত করা। বিতরণ সংস্থাগুলোর হটলাইন নম্বর হলো: পিডিবি-১৬২০০, পল্লী বিদ্যুৎ-১৬৮৯৯, ডিপিডিসি-১৬১১৬, ডেসকো-১৬১২০, ওজোপাডিকো-১৬১১৭ ও নেসকো-১৬৬০৩। এ ছাড়া বিদ্যুৎ ভবনে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে—যার টেলিফোন নম্বর: ০২-৪৭১২০৩০৯, মোবাইল নম্বর: ০১৭৩৯০০০২৯৩ ও হটলাইন নম্বর: ১৬৯৯৯। এই নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে চলতি সেচ মৌসুম, রমজান মাস ও ঈদুল ফিতরের সময় সেচ পাম্পসহ সারা দেশে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ কার্যক্রম সমন্বয় ও তদারকি করা হবে।
১১ মার্চ, ২০২৪

রোজায় লোডশেডিং নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সুখবর
রমজানে তারাবি ও সেহরির সময় লোডশেডিং হবে না। তবে সংকটে পড়লে দিনের কোনো একটা নির্দিষ্ট সময়ে লোডশেডিং করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি এ মন্তব্য করেন। বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সরকার কাজ করছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রমজানে বিভিন্ন পণ্যের শুল্ক ছাড়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। খুব শিগগিরই মূল্যস্ফীতিও নিয়ন্ত্রণে আসবে। তিনি আরও বলেন, রমজান তো কৃচ্ছ্রসাধনের মাস। কিন্তু আমাদের এখানে যেন সংযম না করে খাওয়া বেড়ে যায় মানুষের। ইদানীং দেখবেন, বাজারে কিছু পণ্যের মূল্য কমতে শুরু করেছে। সরকারপ্রধান বলেন, প্রতিবছর চাল-গম-চিনিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য নির্দিষ্ট পরিমাণে ভারত থেকে আমদানি করতে দেশটির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সইয়ের প্রস্তুতি চলছে।  মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে তিনি বলেন, মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে গুজবে কান দেবেন না কেউ। সবাই সতর্ক থাকলে যারা গুজব ছড়াচ্ছে, তারা খুব একটা সুবিধা করতে পারবে না। 
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪
X