সার উৎপাদনে গ্যাসের সরবরাহ কমিয়েও নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না লোডশেডিং। রমজান শুরুর আগে গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিং হতো। এখন রাজধানীতেও হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দিন দিন তাপমাত্রা বাড়ছে। এ ছাড়া চলছে সেচ মৌসুম ও রমজান। বছরের এই সময়টা বিশেষ করে মার্চ থেকে জুলাই পর্যন্ত বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা থাকে। এর বিপরীতে উৎপাদন সক্ষমতা থাকলেও জ্বালানির অভাবে কেন্দ্রগুলো চালানো যাচ্ছে না। শিগগিরই প্রয়োজনীয় জ্বালানির সংস্থান করা না গেলে গ্রাহকদের আরও বেশি লোডশেডিংয়ের কবলে পড়তে হবে।
পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন এ প্রসঙ্গে কালবেলাকে বলেন, ট্রান্সমিশন ও জ্বালানির সীমাবদ্ধতার কারণে লোডশেডিং হচ্ছে। সামনে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।
জানা গেছে, গত ১৩ মার্চ বিদ্যুৎ ভবনে আসন্ন গ্রীষ্মকাল ও সেচ মৌসুমে বিদ্যুৎ ও শিল্প শ্রেণিতে গ্যাস বরাদ্দ নিয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রীর সভাপতিত্বে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় সারে কমিয়ে লোডশেডিং মোকাবিলায় বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়তে গ্যাস সরবরাহ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর ওইদিন সারে গ্যাস সরবরাহ করা হয় ১৬৯ দশমিক ৫ মিলিয়ন ঘনফুট। পরদিন ১৪ মার্চ সরবরাহ করা হয় ১৪৫ মিলিয়ন ঘনফুট। আর ১৫ মার্চ সরবরাহ করা হয় ৮৯ মিলিয়ন ঘনফুট। অন্যদিকে ১৩ মার্চ বিদ্যুৎ গ্যাসের সরবরাহ ছিল ৯১৪ দশমিক ৪ মিলিয়ন ঘনফুট। পরদিন ১৪ মার্চ সরবরাহ করা হয় ৯৩৭ মিলিয়ন ঘনফুট এবং ১৫ মার্চ সরবরাহ করা হয় ৯৪০ দশমিক ৫ মিলিয়ন ঘনফুট।
পিডিবির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, বিদ্যুতে গ্যাসের চাহিদা আড়াই হাজার মিলিয়ন ঘনফুটের মতো। সেখানে বিভিন্ন খাত রেশনিং করে এখন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুটের কম সরবরাহ করা হচ্ছে। তাই চাহিদার অর্ধেকের চাইতে কম সরবরাহ করায় পরিস্থিতি তেমন একটি উন্নতি হবে না। কারণ সামনে তাপমাত্রা আরও বাড়বে। পাশাপাশি বিদ্যুতের চাহিদাও বাড়বে। তারা বলছেন, গ্যাস সংকটের মধ্যেই রক্ষণাবেক্ষণের নিয়মিত কাজের জন্য একটি তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) টার্মিনাল বন্ধ রয়েছে। এ কারণে গ্যাসের সরবরাহ বাড়াতে পারছে না পেট্রোবাংলা। বন্ধ টার্মিনালটি চালু হবে মার্চের শেষ দিকে। তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু রাখলে উৎপাদন খরচ অনেক বাড়বে। আবার বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার্য কয়লা ও গ্যাস আমদানি করতে বিপুল পরিমাণ ডলার দরকার; কিন্তু দেশে এখন ডলার সংকট চলছে।
পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) দৈনিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছেÑ গত শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় ১৫৮ মেগাওয়াট, ৭টায় ৯১ মেগাওয়াট, সাড়ে ৭টায় ৯৬ মেগাওয়াট, ৮টায় ৭৯ মেগাওয়াট, ৯টায় ৮০ মেগাওয়াট, ১০টায় ৭৮ মেগাওয়াট, রাত ১১টায় ১৪৩ মেগাওয়াট এবং ১২টায় ১১৩ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গতকাল রাজধানীর মিরপুর, মোহাম্মদপুর, রামপুরা, গোড়ান, মুগদা এলাকায় দিনে ও রাতে লোডশেডিং হয়েছে। এসব এলাকায় দিন-রাত মিলিয়ে দুই থেকে তিন ঘণ্টা লোডশেডিং হয়েছে।