শ্রমিক অধ্যুষিত গাজীপুর যেন মশার কারখানা
গাজীপুর মহানগরীসহ আশপাশের এলাকায় রয়েছে শত শত পোশাক কারখানা। এসব কারখানায় কাজ করেন লাখ লাখ শ্রমিক। শ্রমিক অধ্যুষিত এ গাজীপুরে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মশার প্রজনন। বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ গাজীপুরবাসী। বাসাবাড়ি, দোকানপাট, অফিস-আদালত, ধর্মীয় উপাসনালয়সহ সর্বত্র মশার রাজত্ব। অপ্রতুল ড্রেনেজ ব্যবস্থা, যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনার স্তূপ, জলাবদ্ধতা, মজা পুকুর ও মানুষের অসচেতনতায় এবারও ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে পারে গাজীপুরে। এ ছাড়া এ জেলার হাজার হাজার মানুষ বিভিন্ন কারণে প্রতিদিন ঢাকায় যাতায়াত করেন। ফলে ডেঙ্গুর সরাসরি প্রভাব এসে পড়ে এ জনপদে। সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ডেঙ্গু মোকাবিলায় তাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, শ্রমিক অধ্যুষিত এ নগরীতে দিন দিন মশার যন্ত্রণা যেন বেড়েই চলছে। গাজীপুরের বাসিন্দারা যেন মশার কাছে অসহায়, জিম্মি। রাতে তো বটেই; দিনেও চলছে মশার অত্যাচার। মশারি টানিয়ে, কয়েল জ্বালিয়ে, ইলেকট্রিক ব্যাট কিংবা মশানাশক ওষুধ স্প্রে করেও সুফল মিলছে না। বিকেল থেকে শুরু হয়, সন্ধ্যার আজান পড়লেই মশার উৎপাত তীব্র আকার ধারণ করে। বিভিন্ন এলাকার ড্রেন, পুকুর, ডোবা, নালা-নর্দমার কচুরিপানা ও ময়লা পরিষ্কার না করায় সেগুলো এখন মশা উৎপাদনের খামারে পরিণত হয়েছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার নগরীতে মশার উপদ্রব তাই বেশি। বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমে কিউলেক্স মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ নগরবাসী। ঘরে বাইরে বাসা কিংবা অফিসসহ সব জায়গায় মশা। কিন্তু মশক নিধন কর্মীদের মাঠে তেমন দেখা যায় না।
এদিকে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্ষা মৌসুমে আশঙ্কাজনকভাবে বাড়তে পারে এডিস মশার উপদ্রব। প্রতি বছর এডিস মশার কারণে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ও মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। তাই বর্ষা মৌসুমের আগেই মশক নিধনে কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে। এ ছাড়া মশক নিধন কার্যক্রমের পাশাপাশি জনসচেতনতাও বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন তারা।
টঙ্গী, গাজীপুরা, বোর্ডবাজার, জয়দেবপুর, কোনাবাড়ী এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সব জায়গাতেই মশার উপদ্রব বেড়েছে। অনেকেই ফ্ল্যাটের জানালায় নেট ব্যবহার করা সত্ত্বেও মশার অত্যাচার থেকে রেহাই পাচ্ছে না। নিচতলা থেকে শুরু করে ১০ তলা পর্যন্ত সবখানেই মশার সমান উপদ্রব।
স্থানীয় ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন বলেন, মশার যন্ত্রণায় দিন-রাত অসহনীয় অবস্থায় রয়েছি। দিনের বেলাও মশার উপদ্রব থাকে, বিকেলে তা বেড়ে যায় বহুগুণ। অথচ এমন পরিস্থিতিতে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে একবারও মশার ওষুধ প্রয়োগ করতে দেখছি না।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, শীতের শেষে আবহাওয়া উষ্ণ হতে শুরু করেছে। এ সময় মশা বংশবিস্তার ঘটায়। ফলে মশার উপদ্রব অনেক বেশি এখন। মশার কামড়ে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, চিকনগুনিয়া, গাদসহ নানা রোগে আক্রান্ত হতে পারে। বিশেষ করে শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। সামনে বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে পারে। তাই মশা নিধনের জন্য সিটি করপোরেশনকে এখন থেকেই ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে বড় ধরনের কোনো সংকট তৈরি না হয়।
এ ব্যাপারে টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক আফজালুর রহমান বলেন, এ হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডে এখন একজন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন। গত মৌসুমে এখানে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ কছিল। প্রতিদিন ডেঙ্গু ওয়ার্ডে ৪০ থেকে ৫০ রোগী ভর্তি হয়েছিলেন। এবার আগে ভাগে প্রস্তুতি না নিলে ডেঙ্গুর প্রকোপ ভয়াবহ হতে পারে।
শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক আমিনুল ইসলাম বলেন, এ হাসপাতালে বর্তমানে কোনো ডেঙ্গু রোগী নেই। তবে মশার প্রকোপ রয়েছে। গত মৌসুমে এ হাসপাতালে মোট ৩ হাজার ৯২৮ রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, সিটি করপোরেশনের ৫৭টি ওয়ার্ডে মশক নিধনের জন্য উন্নত প্রযুক্তির শতাধিক ফগার মেশিন কেনা হয়েছে। এ ছাড়া উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ‘ভেহিকেল মাউন্টেইন’ ফগার মেশিন রয়েছে। ২০১৯ সালে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন যখন ডেঙ্গু মোকাবিলায় হিমশিম খায়, তখন নিজ উদ্যোগে সিঙ্গাপুর থেকে পোল্যান্ডের তৈরি ২০০ টন মশার ওষুধ এনে সুনাম কুড়িয়েছিলেন গাজীপুর সিটির সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। ওই সময় ঢাকাসহ সারা দেশের বিভিন্ন পৌরসভায় বিনামূল্যে সেসব ওষুধ সরবরাহ করেন তিনি। কিন্তু এরপর থেকে মশক নিধন কার্যক্রম যেন খানিকটা ঝিমিয়ে পড়েছে।
এ ব্যাপারে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সহকারী প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা আরিফুর রহমান বলেন, ৫৭টি ওয়ার্ডে মশক নিধনের জন্য উন্নত প্রযুক্তির শতাধিক ফগার মেশিন রয়েছে। আমরা গত মৌসুমে হাজার হাজার টন ওষুধ ছিটিয়েছি।
১১ মে, ২০২৪