কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ১৭ আগস্ট ২০২৫, ০৪:১২ পিএম
আপডেট : ১৭ আগস্ট ২০২৫, ০৪:৩৫ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

ভালো স্বামী বানাতে খোলা হলো বিশেষ স্কুল, যা শেখানো হয়

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

পুরুষদের ভালো স্বামী বানাতে সেনেগালে বিশেষ স্কুল খুলেছে জাতিসংঘ। ‘স্কুল ফর হাসবেন্ড’ নামের এই স্কুলে আক্ষরিক অর্থেই শেখানো হয় কীভাবে একজন পুরুষ ভালো স্বামী হতে পারেন।

পুরুষদের কেন গৃহস্থালি কাজে আরও বেশি সাহায্য করা উচিত। পঞ্চাষোর্ধ্ব ইব্রাহিম ডায়ান বলেন, এমনকি নবীজি (সা.)ও বলেছেন, যে পুরুষ তার স্ত্রী-সন্তানকে কাজে সাহায্য করে না, সে ভালো মুসলিম নয়।

পশ্চিম আফ্রিকার অনেক দেশের মতো সেনেগালেও যে কোনো কিছুতে পুরুষের কথাই শেষ কথা। এমনকি পরিবার পরিকল্পনাসহ জীবন বদলে দেওয়ার মতো বড় বড় সিদ্ধান্তেও নারীদের কোনো মতামত নেওয়া হয় না।

নারীর জীবনের একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়গুলোর জন্যও পুরুষ সদস্যের ‘অনুমতি’ নিতে হয় তাদের। সেই দৃশ্যপটে কিছুটা পরিবর্তন আনতে দেশটিতে বিশেষ এই কর্মসূচি চালু করেছে জাতিসংঘ।

এই কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য সমাজের পুরুষ সদস্যদের মধ্যে স্বাস্থ্য, অর্থনীতি এবং বিভিন্ন সামাজিক ইস্যুতে ‘ইতিবাচক পুরুষত্ব’ (পজিটিভ ম্যাসকুলিনিটি) জাগিয়ে তোলা।

আরও পড়ুন: স্বাধীনতা দিবসে দীর্ঘতম ভাষণ দিয়ে মোদির রেকর্ড

ইমাম ইব্রাহিম জানান, ইতিবাচক পুরুষত্ব শেখাতে ধর্মীয় প্রেক্ষাপট টানেন তিনি। কারণ, এই অঞ্চলের মানুষ ধর্মের প্রতি প্রচণ্ড সংবেদনশীল। জেন্ডার এবং প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কেও পুরুষদের সচেতন করার চেষ্টা করেন তিনি। লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা থেকে শুরু করে এইচআইভির মতো রোগ নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেন তিনি।

শুক্রবার জুমার নামাজের পরের খুতবায়ও এসব নিয়ে আলোচনা করেন ইব্রাহিম। তিনি বলেন, অনেক নারী আমার খুতবার প্রশংসা করেন। তারা আমাকে জানান, তার খুতবা এবং স্কুল ফর হাসবেন্ডের ক্লাসগুলো করার পর তাদের স্বামীদের আচরণে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। এমনকি পুরুষরাও তাকে জানিয়েছেন যে তারা এখন একজন স্বামী এবং বাবা হিসেবে নিজেদের আরও উন্নত করতে চান।

হাবিব ডিয়ালো নামের ৬০ বছর বয়সী এক পুরুষ জানান, ইমামের খুতবা আর জাতিসংঘের কর্মসূচির ক্লাস করার পর তিনি বুঝতে পেরেছেন বাড়িতে সন্তান জন্মদান কতটা ঝুঁকিপূর্ণ।

তিনি বলেন, আমার ছেলের বউ যখন অন্তঃসত্ত্বা ছিল, তখন আমি তাদের হাসপাতালে ডেলিভারি করাতে উৎসাহিত করি। যদিও প্রথমে আমার ছেলে একটু আপত্তি করছিল। হাসপাতালে খরচ কেমন হবে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল সে। কিন্তু আমি যখন তাকে বুঝিয়ে বলি যে এটা তার স্ত্রী ও সন্তানের জন্য কতটা জরুরি, তখন যে বুঝতে পারে এবং রাজি হয়।

২০১১ সাল থেকেই সেনেগালে এই কর্মসূচি চালিয়ে আসছে জাতিসংঘ। তবে, সম্প্রতি দেশটির নারী, পরিবার, লিঙ্গ ও শিশু সুরক্ষা মন্ত্রণালয়ের নজরে এসেছে এটি।

বর্তমানে দেশটির সরকার এই কর্মসূচিকে মাতৃত্বকালীন মা ও শিশু মৃত্যুর হার কমানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল হিসেবে বিবেচনা করছে। শুধু সেনেগাল নয়, নাইজার, টোগো, বুরকিনা ফাসোসহ আফ্রিকার আরও কয়েকটি দেশে চলছে জাতিসংঘের এই ‘স্কুল ফর হাসবেন্ড’ কর্মসূচি। জাতিসংঘ বলছে, এই দেশগুলোতে নারী স্বাস্থ্যের বেশ উন্নতি হয়েছে।

শুধু মাতৃত্বকালীন স্বাস্থ্য নয়, এই কর্মসূচিতে নারী অধিকার, সমতা, নিরাপদ যৌনতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা করা হয়।

সেনেগালজুড়ে এই প্রকল্পের প্রায় ২০টি স্কুল রয়েছে। এসব স্কুলে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০০ পুরুষকে প্রশিক্ষিত করা হয়েছে। এই ৩০০ পুরুষ এখন নিজের জনবসতিতে তার অর্জিত জ্ঞান ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ করছেন।

তবে, এই প্রকল্পে কাদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে, তা বাছাই করে জাতিসংঘই। সামাজিকভাবে যারা নিজ এলাকায় সম্মানিত, নারী অধিকার সম্পর্কে সচেতন, নেতৃত্বের গুণ রয়েছে- এমন পুরুষদেরই বাছাই করা হয়। যেহেতু নিজ নিজ এলাকায় তারা সম্মানিত, তাই সমাজে তাদের একটা আলাদা গ্রহণযোগ্যতা থাকায় সেটি কাজে লাগিয়ে প্রশিক্ষণে যা শিখেছেন, উপলব্ধি করেছেন, তা বাকিদের মধ্যে ছড়িয়ে দেন তারা।

খারি নডেয়ে নামের ৫২ বছর বয়সী এক নারী জানান, তার স্বামী আগে কোনো কাজেই হাত লাগাতেন না, কিন্তু এখন তিনি রান্নাও করেন।

২০২৩ সালে প্রতি ১ লাখ শিশুর জন্ম দিতে গিয়ে ২৩৭ জন মা মারা গেছেন। একইভাবে, নবজাতকের ক্ষেত্রেও পরিস্থিতি ভালো ছিল না- প্রতি ১ হাজার জন শিশুর মধ্যে ২১ জনই জন্মের প্রথম মাসেই মারা যায়। এই পরিস্থিতিতে জাতিসংঘ একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

অধ্যাপক বারকাতের মুক্তি দাবি ১১৯ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-বুদ্ধিজীবীর

নির্বাচন নিয়ে এখনই পরীক্ষা-নিরীক্ষা নয় : আলাল

মার্কিন প্রতিনিধিদের ভারত সফর বাতিল

মহাখালীতে পেট্রল পাম্পে ভয়াবহ আগুন

ইরানের পাশে রাশিয়া-চীন, ইউরোপের তিন দেশের সঙ্গে উত্তেজনা চরমে

কক্সবাজার বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চলাচল শুরু অক্টোবরে

ছোট্ট যে আমলে মাফ হয় ১০০ গোনাহ

আসন ভাগাভাগি নিয়ে কী বললেন নজরুল ইসলাম খান

অঙ্কনকে অধিনায়ক করে চারদিনের ম্যাচের দল ঘোষণা

ভরাডুবি হবে বলেই কিছু খুচরা পার্টি নির্বাচন চাচ্ছে না : দুদু

১০

আয়কর রিটার্ন নিয়ে এনবিআরের নতুন নির্দেশনা জারি

১১

দুই অধিদপ্তরে নতুন ডিজিসহ প্রশাসনিক পদে রদবদল

১২

ক্রিকেট ব্যাটে ইয়াবা বহন, বিমানবন্দরে আটক দুই যুবক

১৩

আম কি ডায়াবেটিসের জন্য ভালো? গবেষণায় উঠে এলো নতুন তথ্য

১৪

জবি রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি জাহাঙ্গীর, সাধারণ সম্পাদক জাহিদ

১৫

দুদিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কমেছে ১৫ টাকা

১৬

পৃথক বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব প্রধান বিচারপতির

১৭

ফারুকীর শারীরিক অবস্থা জানিয়ে মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তি

১৮

তারকারা অজান্তেই নিজস্ব সত্তা হারিয়ে ফেলেন : সোনাক্ষী সিনহা

১৯

মেট্রোরেল লাইন-১ / খরচ বেড়েছে ১০ হাজার কোটি টাকা, ব্যাখ্যা দিল কর্তৃপক্ষ 

২০
X