গণঅভ্যুত্থান থেকে সৃষ্ট রাজনৈতিক দল হওয়ায় দেশের নীতিনির্ধারণী সভায় যেমন ডাক পাচ্ছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), তেমনি কূটনৈতিকপাড়ায়ও তাদের যাতায়াত বাড়ছে। বিগত দুই মাসে বেশ কয়েকজন হাইকমিশনারের সঙ্গে বসেছেন এনসিপির নেতারা। দলটি প্রভাবশালী এবং উন্নত রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কোন্নয়নে মনোযোগী হয়েছে। গঠন করার কথা ভাবছে কূটনৈতিক সেল।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্বাচন সামনে রেখে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সম্মুখ সারিতে নেতৃত্ব দেওয়া নেতাদের নিয়ে গড়ে ওঠা এনসিপিকে নিয়ে কূটনৈতিক মহল বেশ আগ্রহ দেখাচ্ছে। দেশের বৃহৎ দুই দল বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর মতো করেই গুরুত্বপূর্ণ সভায় এনসিপিকে ডাকছে বিদেশি হাইকমিশনগুলো। গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী রাষ্ট্র সংস্কার, রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আগামী নির্বাচনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে এনসিপির মতামত শুনছেন তারা। দলটির সঙ্গে দেশে অনেকবার বৈঠক করেছেন বিদেশি কূটনীতিকরা।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মতে, গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া দল হিসেবে কূটনৈতিক মহলে এনসিপির যাতায়াত স্বাভাবিক বিষয়। দল গঠনের পর তাদের পরিকল্পনা কী, দেশের রাজনীতি নিয়ে তারা কী ভাবছেন, বিশেষ করে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে তাদের ভাবনাটা জেনে নেওয়াও গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন কূটনীতিকরা।
গত সপ্তাহে দুটি গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক সভায় আমন্ত্রণ পেয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি। গত সোমবার ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) এবং তার কয়েকদিন আগে অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার সুসান রাইলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন এনসিপির প্রতিনিধিরা। এর আগে চীনা রাষ্ট্রদূত হুয়াও ওয়েনসহ বেশ কয়েকজন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গেও সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন এনসিপি নেতারা। এনসিপির ইফতার মাহফিলে ভারত, পাকিস্তান, সুইডেন, নরওয়ে, সিঙ্গাপুর, সাউথ কোরিয়া, জার্মানি, চীন. ভিয়েতনাম, রাশিয়াসহ ২৭টি দেশের মিশনপ্রধান উপস্থিত ছিলেন।
সর্বশেষ গত সোমবার ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন এনসিপি নেতারা। ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতের বাসভবনে এ বৈঠক হয়। বৈঠকে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এনসিপির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
বৈঠকে এনসিপির চার নেতা অংশ নেন। তারা হলেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্য সচিব আখতার হোসেন, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারা ও যুগ্ম সদস্য সচিব আলাউদ্দীন মোহাম্মদ। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসনের সঙ্গে দূতাবাসের পলিটিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কাউন্সিলর এরিক গিলান, পলিটিক্যাল অফিসার জেমস স্টুয়ার্ট ও পলিটিক্যাল স্পেশালিস্ট ফিরোজ আহমেদ অংশ নেন।
তার আগে বাংলাদেশে নিযুক্ত অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার সুসান রাইলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন এনসিপির প্রতিনিধিরা। এক বিবৃতিতে হাইকমিশন জানায়, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার অংশ হিসেবে অস্ট্রেলিয়া হাইকমিশন এনসিপি নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে। আমরা অস্ট্রেলিয়া-বাংলাদেশের সম্পর্ক শক্তিশালী করার পাশাপাশি এনসিপির নীতিগত অগ্রাধিকার নিয়ে আলোচনা করেছি।
এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব কালবেলাকে বলেন, জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী রাজনৈতিক দল হিসেবে এনসিপি শুধু কুটনৈতিক মহল নয়, সব জায়গায় গুরুত্ব পাচ্ছে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে হাইকমিশনগুলো আমাদের ডাকছে। আমরা মতামত প্রদান করছি। সর্বশেষ মার্কিন রাষ্ট্রদূতও বিএনপি, জামায়াতের পর এনসিপিকে ডেকেছেন। কূটনৈতিক অঙ্গন ছাড়াও সব অংশীজনের সঙ্গে আমাদের ভালো যোগাযোগ হচ্ছে।
কূটনৈতিক সেল নিয়ে ভাবছে এনসিপি: কূটনৈতিক সভাগুলোতে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামই নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এর সঙ্গে সদস্য সচিব আখতার হোসেন এবং সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারা, যুগ্ম সদস্য সচিব আলাউদ্দিন মোহাম্মদসহ কয়েকজনকে উপস্থিত থাকতে দেখা গেছে। কূটনৈতিক গুরুত্ব বাড়ায় দলটি এখন সেল গঠন নিয়ে পরিকল্পনা করছে বলে দলীয় সূত্রে জানা যায়। শিগগির সেটি গঠন করা হতে পারে। এই সেলের দায়িত্বে থাকতে পারেন সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম যারা, যুগ্ম আহ্বায়ক সুলতান মোহাম্মদ জাকারিয়া, যুগ্ম সদস্য সচিব আলাউদ্দীন মোহাম্মদ, যুগ্ম সদস্য সচিব আবু সাঈদ মোহাম্মদ সুজা উদ্দিন।
এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব আলাউদ্দীন মোহাম্মদ কালবেলাকে বলেন, স্বাভাবিকভাবেই গণঅভ্যুথানের দল হিসেবে বৈশ্বিক মহলে গুরুত্ব পাচ্ছে এনসিপি। কূটনৈতিক মহলের গুরুত্ব বিবেচনায় দল সেল গঠনের বিষয়ে ভাবছে। সেল গঠন না হওয়া পর্যন্ত প্রতিনিধিরা বৈঠকগুলোতে অংশ নেবেন।
মন্তব্য করুন