

দীর্ঘ ফ্লাইট, রাতভর ট্রেনযাত্রা কিংবা টানা সড়কভ্রমণ—গন্তব্যে পৌঁছানোর আনন্দ থাকলেও পথে ভোগান্তি কম নয়। সংকুচিত আসন, সীমিত পা মেলার জায়গা আর ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকার কারণে অনেক ভ্রমণকারীকেই পিঠ শক্ত হয়ে যাওয়া, পা ভারী লাগা কিংবা অস্বস্তিতে ভুগতে হয়। অনেকেই এসব ভোগান্তি কমাতে নেক পিলো, আই মাস্ক কিংবা কমপ্রেশন সকস সঙ্গে রাখেন।
তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, ভ্রমণের সময় ব্যাগে রাখা একটি ছোট, হালকা ও সাধারণ জিনিসই দিতে পারে বড় স্বস্তি। অভিজ্ঞ ভ্রমণকারী ও ফিজিওথেরাপিস্টরা বলছেন, একটি টেনিস বল দীর্ঘ যাত্রায় শরীরের অস্বস্তি কমাতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে—যা জায়গা নেয় না, চোখে পড়ে না, অথচ প্রয়োজনের সময় হয়ে ওঠে দারুণ সহায়ক।
দিল্লিভিত্তিক ফিজিওথেরাপিস্ট ডা. আকাশ দীপ শর্মা বলেন, দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা ও নড়াচড়া কম হওয়ার কারণেই ভ্রমণে শরীরব্যথা বাড়ে। এক্ষেত্রে সহজ কিছু মোবিলিটি টুল বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে।
কেন দীর্ঘ যাত্রা শরীরে চাপ ফেলে
দীর্ঘ সময় একই ভঙ্গিতে বসে থাকলে পেশিগুলো এক অবস্থানে স্থির থাকে এবং রক্তসঞ্চালন ধীর হয়ে যায়। এতে জয়েন্ট শক্ত হয়ে পড়ে, কোমর ও নিতম্বে বাড়তি চাপ পড়ে। জায়গা কম থাকায় ঠিকমতো স্ট্রেচ করা যায় না—ফলে ঘাড়, কাঁধ ও পায়ে টান জমে, গন্তব্যে পৌঁছানোর আগেই শরীর ক্লান্ত ও ব্যথাতুর হয়ে ওঠে। এখানেই টেনিস বল হতে পারে সহজ সমাধান।
টেনিস বল যেভাবে যাত্রা সহজ করে
১) যাত্রাপথেই কোমর ও নিতম্বের অস্বস্তি কমায়
দীর্ঘ ফ্লাইট বা ট্রেনযাত্রায় কোমরব্যথা ও হিপ স্টিফনেস খুবই সাধারণ। টেনিস বল একটি সহজ প্রেসার টুল হিসেবে টান ধরা পেশি ঢিল করতে সাহায্য করে। ডা. আকাশ দীপ বলেন, ‘একটি নিতম্বের নিচে টেনিস বল রেখে এক মিনিটের মতো হালকা বৃত্তাকারে নড়াচড়া করুন, তারপর পাশ বদলান, এতে শক্তভাব কমে।’
২) সংকুচিত আসনে ঘাড় ও ওপরের পিঠের শক্তভাব কমায়
ঘণ্টার পর ঘণ্টা একই ভঙ্গিতে থাকলে ঘাড়-কাঁধ শক্ত হয়ে যায়। সিটে সামান্য হেলান দিয়ে ওপরের পিঠ ও সিটের মাঝখানে টেনিস বল রেখে ধীরে ওপর-নিচ বা ডানে-বামে নড়াচড়া করলে জমে থাকা টান কমতে পারে—বিশেষ করে দীর্ঘ ফ্লাইটে যখন ঘন ঘন দাঁড়ানো সম্ভব হয় না।
৩) পা ও পায়ের পাতা ভারী ও অবশ হওয়া কমায়
দীর্ঘক্ষণ বসে থাকলে পা ভারী লাগে। ফলে পায়ের নিচে টেনিস বল রেখে সামনে-পেছনে বা ছোট বৃত্তে গড়িয়ে নিলে পায়ের শক্তভাব কমে এবং আরাম মেলে।
৪) রক্তসঞ্চালন ভালো রাখতে সহায়ক
ভ্রমণে নড়াচড়া কম হলে রক্তসঞ্চালন ব্যাহত হয়। পা বা পিঠে টেনিস বলের হালকা চাপ পেশির টিস্যু ঢিল করে রক্তপ্রবাহ বাড়াতে সাহায্য করে। ফলে ক্লান্তি কমে।
৫) ছোট নড়াচড়ায় ট্রাভেল ফ্যাটিগ কমায়
টেনিস বল ব্যবহার করলে স্বাভাবিকভাবেই ভঙ্গি বদলাতে হয়। ডা. আকাশ দীপ বলেন, ‘এ ধরনের হালকা চাপ সংবেদনশীল পেশিবিন্দু মুক্ত করে অস্বস্তি ও অস্থিরতা কমায়।’ তবে প্রতি ৩০ মিনিটে ভঙ্গি বদলানো ও সুযোগ পেলে অল্প হাঁটার পরামর্শও দেন তিনি।
নিরাপদে ব্যবহার করবেন যেভাবে
হালকা চাপ দিন : ব্যথা নয়, আরাম পাওয়াই লক্ষ্য।
চোট বা প্রদাহযুক্ত জায়গায় ব্যবহার নয়।
ধীরে ও নিয়ন্ত্রিত নড়াচড়া করুন।
ব্যথা বাড়লে সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ করুন।
স্ট্রেচ বা ছোট হাঁটার সঙ্গে মিলিয়ে নিন।
কারা উপকৃত হবেন
ঘন ঘন ভ্রমণকারী, দীর্ঘ ফ্লাইটে সংকুচিত আসনে বসে থাকা যাত্রী, রাতভর ট্রেনযাত্রী কিংবা দীর্ঘ সড়কভ্রমণকারীদের জন্য টেনিস বল দারুণ সহায়ক হতে পারে। বিশেষ করে যাদের কোমর, নিতম্ব বা পায়ে শক্তভাব হয়—তাদের জন্য এটি একটি সহজ, জায়গা-সাশ্রয়ী সমাধান।
তাই পরের বার ভ্রমণে বেরোনোর সময় ক্যারি-অন ব্যাগে একটি টেনিস বল রাখতে ভুলবেন না। ছোট্ট এই জিনিসটাই দিতে পারে বড় স্বস্তি।
সূত্র : এনডিটিভি
মন্তব্য করুন