কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৮ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ০৮ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:০৪ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সংলাপে বিশেষজ্ঞরা

ইসির ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা, একই দিনে গণভোট ও জাতীয় নির্বাচনের পরামর্শ

ইসির ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা, একই দিনে গণভোট ও জাতীয় নির্বাচনের পরামর্শ

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে আয়োজন করতে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) আরও জোরদার ও শক্ত ভূমিকা পালনের পরামর্শ দিয়েছেন নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা। একই সঙ্গে ইসি কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়াসহ বেশকিছু পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

সংলাপে বিশেষজ্ঞরা বলেন, শুধু আইন ও নির্দেশনা জারি করে ক্ষান্ত হলে চলবে না। স্বচ্ছতার সঙ্গে ইসির কার্যক্রম চালাতে হবে। নির্বাচনী কর্মকর্তাদের যথেষ্ট সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে। এ সময় জুলাই সনদ ইস্যুতে গণভোট ও সংসদ ভোট একই দিনে করার পরামর্শও দেন তারা। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে ইসি আয়োজিত নির্বাচনী সংলাপে এসব পরামর্শ দেন নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা। এতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দীন, চার কমিশনার ও ৯ জন সাবেক নির্বাচন কর্মকর্তা এবং একজন পর্যবেক্ষক অংশ নেন।

সংলাপে ভোটের সময় নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে প্রথম থেকেই শক্ত অবস্থানে থাকার পরামর্শ দেন নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা। এ ছাড়া ভোটকেন্দ্র পাহারা কমিটি গঠন, ইসি কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া, দলীয় সংশ্লিষ্টতা আছে—এমন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের নির্বাচনী দায়িত্ব না দেওয়া, নির্বাচনী এলাকায় একাধিক রিটার্নিং অফিসার রাখা, গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন একই দিনে করা, বিগত তিন নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারীদের এবার নির্বাচনী দায়িত্ব না দেওয়া এবং কালো টাকা, অর্থ পাচারকারী ও ঋণখেলাপিদের নিয়ন্ত্রণ করার পরামর্শ আসে সংলাপে।

গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন একই দিনে করার জন্য সিইসিকে পরামর্শ দেন নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থা ফেমার সভাপতি মুনিরা খান। তিনি বলেন, ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোটের আলোচনা হচ্ছে। গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন একই দিনে করতে পারেন। আলাদা করলে বিশৃঙ্খলা তৈরি হতে পারে। অনেকেই আলাদা চাইতে পারে। কিন্তু আপনারা চেষ্টা করেন একই সঙ্গে দুটি নির্বাচন করতে।’

তপশিলের আগেই আচরণবিধি পর্যবেক্ষণে রাখার পরামর্শ দেন সাবেক নির্বাচন কর্মকর্তা মাহফুজা আক্তার। তিনি বলেন, ‘এখনই বিভিন্ন দল, ব্যক্তিপর্যায়ে বিভিন্ন কার্যক্রম চলছে। এটি ইসি একটি কমিটি করে মনিটর করে, যা তপশিলের পরে হয়। এটাকে নির্বাচনের আগে থেকে মনিটর করা যায় কি না। মনিটর করতে পারলে নির্বাচনী পরিবেশ ভালো থাকে এবং নির্বাচনী কার্যক্রমও সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয়।’

নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের নির্বাহী ক্ষমতা দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন মাহফুজা আক্তার। তিনি বলেন, ‘এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং এটা গুরুত্ব দিয়ে ভাবার জন্য আমি কমিশনকে অনুরোধ করব। যাতে আমরা মাঠে আচরণবিধিমালা সেভাবে পরিচালনা করতে পারি।’

নির্বাচন কমিশনেরও আরও জোরদার ও শক্ত ভূমিকা পালন করতে হবে বলে উল্লেখ করেন সাবেক এ নির্বাচন কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘শুধু আইন করে দিয়ে আর আইনের নির্দেশনা জারি করে দিয়ে খ্যান্ত হলে হবে না। আমাদের নিজস্ব কর্মকর্তাদের সেটা পরিচালনা করার বিষয়ে যথেষ্ট সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে।’

নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের সাবেক মহাপরিচালক খন্দকার মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমাদের আরপিওতে আছে সহকারী রিটার্নিং অফিসার একের অধিক কনস্টিটিউন্সিতে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। কিন্তু রিটার্নিং অফিসার একাধিক নির্বাচনী এলাকায় থাকতে পারবেন। এক্ষেত্রে ছোট জেলায় খুব বেশি সমস্যা হয় না। কিন্তু বড় এলাকায় সমস্যা হয়। তাই আমার মনে হয়, নির্বাচন কমিশনার যদি মনে করেন, তাহলে একটি জেলায় একাধিক রিটার্নিং অফিসার রাখতে পারেন।’

আচরণবিধি প্রসঙ্গে খন্দকার মিজানুর রহমান বলেন, ‘যে কোনোভাবে নির্বাচন সুষ্ঠু করতে হবে। কোনো ব্যত্যয় নির্বাচন কমিশন প্রশ্রয় দেবে না।’

জাতীয় নির্বাচন করতে প্রায় ১০ লাখ লোকবল দরকার বলে উল্লেখ করেন সাবেক নির্বাচন কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ জাকারিয়া। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের লোকবল আড়াই হাজার। ইসির বাইরে সরকারি, বেসরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান থেকে লোকবল নিয়োগ করা হয়। এসব লোকবল নিয়োগে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। বেসরকারি পর্যায়ে এমন প্রতিষ্ঠান আছে, যেগুলো দলীয় প্রতিষ্ঠান যেমন ইসলামী ব্যাংকসহ এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের বিষয়টি মাথায় রেখে লোকবল নিয়োগ করতে হবে। বিগত তিন নির্বাচনে যারা দায়িত্ব পালন করেছেন, তাদের নিয়োগ এড়ানো যেতে পারে।’

মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেন, ‘সন্ত্রাস দমন ও সন্ত্রাসীদের কার্যকরভাবে আইনের আওতায় আনা, কালো টাকা, অর্থ পাচারকারী ও ঋণখেলাপিদের নিয়ন্ত্রণ করা এবং কেন্দ্র থেকে মাঠপর্যায় পর্যন্ত সর্বস্তরের বেসামরিক প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে।’ এ সময় ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া এবং কম সংখ্যক ভোটার নিয়ে ভোটকেন্দ্র নির্ধারণের পরামর্শও দেন তিনি।

বিগত সাতটি জাতীয় নির্বাচনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে ইসির সাবেক উপসচিব মিহির সারওয়ার মোর্শেদ বলেন, ‘পোস্টার যত্রতত্র ব্যবহার হচ্ছে, এখনই এটা বন্ধ করতে হবে। প্রতি ইউনিয়নে আচরণবিধি প্রতিপালন যদি এখনই করা যায়, তাহলে নির্বাচন অনেকটা সহজ হবে।’

বিশেষজ্ঞদের বক্তব্যের শেষে সমাপনী বক্তব্যে গত তিন নির্বাচনে ভোটের দায়িত্বে থাকা সবাইকে বাদ না দেওয়ার যুক্তি তুলে ধরেন সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দীন। তিনি বলেন, ‘গত তিনটি নির্বাচনে যারা দায়িত্বে ছিলেন, তাদের নিয়ে সবাই তো সন্দেহ পোষণ করে। তবে ভালো-খারাপ তো সবখানেই আছে। কিন্তু একদম অনেকে বলছেন, গত তিন নির্বাচনে যারা কাজ করেছেন, তারা যেন ধারে-কাছে না আসতে পারে। এখন ১০ লাখ লোকের (ভোটের দায়িত্বে নিয়োজিত থাকে সাধারণত) মধ্যে বাদ দিতে গেলে, কম্বলই উজাড়। লোম বাছতে গিয়ে কম্বল উজাড়—আমার অবস্থা হয়েছে সে রকম। সুতরাং তাদের কিছু নিতে হবে। তবে তাদের নজরদারির মধ্যে রাখা হবে। মানুষ তো মানুষই। বিবেক আছে তো।’

সিইসি বলেন, ‘আমরা ব্যাংক থেকে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নেওয়ার কথা বলছি। আমাদের কাছে নানা কারণে অভিযোগ আসছে, রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিষয়ে। আমরা বিষয়টি লক্ষ রাখব, যা করার আমরা করব মোটামুটি।’

তিনি বলেন, ‘দলীয় দলদাসের মতো কাজ করতে পারবেন না, সেটা আমরা নিশ্চিত করব। কারও যদি রাজনৈতিক অভিলাস থাকেও, সেটা বাস্তব কাজে প্রতিফলিত হবে না, সেটা আমরা নিশ্চিত করব। কোনো পক্ষে কাজ করলে অ্যাকশন হবে। এখন কারও পক্ষে কাজ করলে অ্যাকশন হবে।’

নির্বাচন আয়োজনের দায়িত্ব শুধু ইসির না উল্লেখ করে সিইসি বলেন, ‘এটা জাতীয় দায়িত্ব। ভোটের সময় ইসির ক্ষমতা ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা পায়। আগে তো রাতে গিয়ে মোটিভেটেড করে, কায়দা করে ভোটটা আদায় করে নেওয়া হয়েছে। এখন যত রকমের কার্যক্রম গ্রহণ করা সম্ভব আমরা নেব, যাতে দলীয় আচরণ না করতে পারে।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

তারেক রহমানের নেতৃত্বে আগামীর রাষ্ট্র পরিচালিত হবে : তানভীর

তাইওয়ানে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে চীন!

হাজারো বন্দিকে মুক্তি দিলেও এক ফিলিস্তিনিকে ছাড়তে নারাজ ইসরায়েল

যোগ করা সময়ে গোল খেয়ে লিড হারাল বাংলাদেশ

বাংলাদেশকে বড় ‘সুখবর’ দিল যুক্তরাজ্য

বিসিএস পরীক্ষার্থীদের জন্য বাসের ব্যবস্থা করল জবি প্রশাসন 

অর্থবছর শেষে কমেছে জিডিপি প্রবৃদ্ধি

মধুমতীতে বিলীন ১৪ ব্যারাক, আরও ৩টি অতিঝুঁকিতে

ভাঙার দুই দিনেও মেরামত হয়নি বেড়িবাঁধ, তলিয়েছে ঘরবাড়ি

শহীদ মীর মুগ্ধের জন্মদিনে ভাই স্নিগ্ধের আবেগঘন পোস্ট

১০

ঢাকায় ১০ লাখ শিশুকে টাইফয়েড টিকাদানের লক্ষ্যমাত্রা, নিতে পারবে নিবন্ধন ছাড়াও

১১

২৮ বছরের ক্রিকেট ইতিহাস নতুন করে লিখলেন ভারতীয় ওপেনার

১২

হামাস-ইসরায়েলের সংলাপকে স্বাগত জানিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তি

১৩

‘আইয়া দেখি মা-বাবাকে মাইরা খাটের ওপর বইসা রইছে’

১৪

নওগাঁর সাবেক এমপি ওমর ফারুক কারাগারে

১৫

হামজাদের খেলা দেখতে গেট ভেঙে স্টেডিয়ামে ঢুকলেন দর্শক

১৬

শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আমদানিকালে ৭৫ হাজার কেজি সুতা জব্দ

১৭

মায়ের লাশ আটকে সম্পত্তি ভাগ-বাটোয়ারা, ২০ ঘণ্টা পর দাফন

১৮

ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের বাড়িতে অগ্নিকাণ্ড

১৯

সন্ত্রাসবিরোধী আইনে বাংলাদেশে নতুন করে দমন-পীড়ন : এইচআরডব্লিউ

২০
X