

‘আমাকে পুরোপুরি বলা হয়েছে নির্বাচক প্যানেল ও বোর্ড থেকে, আমাকে যে দলটা দেওয়া হবে; সেই দল নিয়েই কাজ করতে হবে। আমার এখানে কথা থাকবে না যে, আমি কোন খেলোয়াড়কে চাই, কোন খেলোয়াড়কে না চাই’—লিটন দাসের এই অল্প কথাতেই তো অনেক কিছুর ইঙ্গিত মিলে যাচ্ছে। টি-টোয়েন্টি দলের নিয়মিত অধিনায়ক তিনি। লম্বা সময়ের জন্যও দলের নেতৃত্ব তার কাঁধে। অথচ দল নির্বাচনে নাকি তার মতামতেরই কোনো মূল্য নেই! আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তাইতো সিরিজ শুরুর আগের দিনেই স্রেফ বোমা ফাটালেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। সাহসের সঙ্গে সতীর্থের পাশেও দাঁড়ালেন তিনি। রীতিমতো বোর্ড, নির্বাচক প্যানেলকে বড় প্রশ্নের মুখেই ফেললেন লিটন।
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজটি স্রেফ বিশ্বকাপ সামনে রেখে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। এখানে পাওয়ার কিংবা হারানোর কিছুই নেই। তবে টুর্নামেন্টের আগে দলের ভারসাম্য খুঁজে নিতে অধিনায়কের এটাই হয়তো মোক্ষম সময় হতে পারে। কেননা, এর পর আর কোনো সিরিজ খেলা হচ্ছে না বাংলাদেশের। সরাসরি বিশ্বকাপে লড়তে হবে ইংল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো দলগুলোর বিপক্ষে। সেই চ্যালেঞ্জটা আপাতত তোলাই থাক না। লিটনের আক্ষেপটা মূলত আগের সিরিজে পারফর্ম করতে ব্যর্থ হওয়া শামীম হোসেন পাটোয়ারিকে দলে ধরে রাখতে না পারার হতাশা। তিনি সোজাসাপ্টাই বললেন, ‘আমি এতদিন জানতাম যে, একটা দল যখন মানুষ হ্যান্ডল করা হয়, অন্তত অধিনায়ক জানে যে কোন খেলোয়াড়টা ঢুকবে, কোন খেলোয়াড়টা বাদ পড়বে।’ প্রসঙ্গটা স্পষ্ট হয় এ কথাতেও, ‘দেখেন, শামীম থাকলে অবশ্যই ভালো হতো। এটা আমার সিদ্ধান্ত নয়, পুরোপুরি নির্বাচকদের সিদ্ধান্ত। আমি জানি না কেন! কিন্তু নির্বাচকরা আমাকে কোনো কিছু অবহিত করা ছাড়াই শামীমকে বাদ দিয়ে দিয়েছেন দল থেকে।’
শ্রীলঙ্কা সফরে শামীম ছিলেন দলের ম্যাচ জয়ের নায়ক। কিন্তু পরের দু-একটা টুর্নামেন্ট বা সিরিজে তার পারফরম্যান্স নির্বাচকদের সন্তুষ্ট করতে ব্যর্থ হয়েছে। তার পরও শামীমকে রাখা হবে কি হবে না—এ ব্যাপারে উভয়ের মধ্যেই আলোচনা ছিল বটে। লিটন শামীমকেই দলে চেয়েছিলেন, সেটার কারণটাও ব্যাখ্যা করলেন, ‘আমরা চেষ্টা করেছি এতদিন ধরে দলটা গোছানোর জন্য। শামীম কিন্তু একটা সময় ছিল যে, দু-তিনটা সিরিজে এক্সট্রা অর্ডিনারি ক্রিকেট খেলেছে, যেটা আমাদের দরকার ছিল। সেখান থেকে যদি শামীম বাদ পড়ে, শামীমের জন্য হতাশাজনক।’
অধিনায়ক হয়েও নিজের প্রয়োজনীয় খেলোয়াড়কে স্কোয়াডে রাখতে না পারায় দুঃখ প্রকাশকেই বেছে নিলেন লিটন। শামীমকে সরি সম্বোধন করে তিনি বলেন, ‘অধিনায়ক হিসেবেও আমি সরি ছাড়া আর কিছু বলতে পারব না তাকে।’ আক্ষেপ নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি এতদিন জানতাম, যখন অধিনায়ক হয় মানুষ, তার দল গোছানোর একটা পরিকল্পনা থাকে। কিন্তু সম্প্রতি জানতে পারলাম, যে দলটা আমাকে দেওয়া হবে, আমার কাজ হচ্ছে সেই দলটাকে নিয়ে ভালো কিছু দেওয়া মাঠে।’ তাহলে দল নির্বাচনে অধিনায়কের ভূমিকা কোথায়! বলা হয়ে থাকে, নির্বাচক, কোচ ও অধিনায়ক মিলেই হয় দল। এবার কেন ভিন্ন কিছু! লিটন রীতিমতো বোর্ডকে প্রশ্নের কাঠগড়ায় তুললেন, ‘আমাকে পুরোপুরি বলা হয়েছে নির্বাচক প্যানেল ও বোর্ড থেকে, আমাকে যে দলটা দেওয়া হবে, সেই দল নিয়েই কাজ করতে হবে। আমার এখানে কথা থাকবে না যে, আমি কোন খেলোয়াড়কে চাই, কোন খেলোয়াড়কে না চাই।’ এমনকি বিশ্বকাপের মতো টুর্নামেন্টের ক্ষেত্রেও এমন কিছু হলে কী করবেন প্রশ্নে লিটন বললেন, ‘আমাকে যে দলটা দেওয়া হবে, আমি সেই দল নিয়ে চেষ্টা করব একাদশ খেলানোর।’
মন্তব্য করুন