২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য বেশ কিছু ইতিবাচক প্রস্তাবনা এসেছে। পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট অংশীজনের দীর্ঘদিনের দাবিগুলোর প্রতিফলন হওয়ায় পুঁজিবাজারের প্রতি প্রাতিষ্ঠানিক ও সাধারণ বিনিয়োগকারীসহ সব পক্ষের আস্থা বাড়বে। যদিও পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের সময়টা ভালো যাচ্ছে না। টানা পতনে নিঃস্ব হচ্ছেন হাজার হাজার বিনিয়োগকারী। এতে প্রতিদিনই কমছে বাজার মূলধন ও কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর। ফলে পুঁজিবাজারে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের আস্থা তলানিতে নেমেছে। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রস্তাবিত বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য যেসব প্রস্তাবনা এসেছে, এতে আস্থাহীন পুঁজিবাজারে আস্থা ফিরবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পুঁজিবাজারে প্রাণ ফেরাতে নেওয়া হয়েছে কয়েকটি সাহসী ও সময়োপযোগী উদ্যোগ। এতে সরাসরি উপকৃত হবেন দেশের প্রায় ১৭ লাখ বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) অ্যাকাউন্টধারী বিনিয়োগকারীসহ সংশ্লিষ্ট সব অংশীজন। এতে বাজারের প্রাণ কিছুটা হলেও ফিরবে। সাম্প্রতিক সময়ে পুঁজিবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের যে অনাস্থা তৈরি হয়েছে, তা কিছুটা হলেও কাটবে। এ ছাড়া বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্ত করতে পারলে বাজার আরও গতিশীল হবে।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এবং অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর ব্যবধান ৫ শতাংশ থেকে ২ দশমিক ৫ শতাংশ বাড়িয়ে তা সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে। মার্চেন্ট ব্যাংকের করহার ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে সাড়ে ২৭ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। ব্রোকার হাউসগুলোর উৎসে কর দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ করা হয়েছে। ব্যক্তির করমুক্ত আয়সীমা ২৫ হাজার টাকা বৃদ্ধি করে ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। কর পরিপালন সহজ করার জন্য লিস্টেড কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে ২ দশমিক ৫ শতাংশ কর হার সুবিধা প্রাপ্তির শর্ত শিথিল করে আয়, ব্যয় ও বিনিয়োগের পরিবর্তে কেবল সব ধরনের আয় ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমে সম্পন্ন করার শর্ত আরোপ করা হয়েছে।
পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বাজারে দরপতন অব্যাহত রয়েছে। ফলে এ সময়ে বিনিয়োগকারীদের হাজার হাজার কোটি টাকা পুঁজি কমেছে। লেনদেন কমে ২০০ কোটি টাকার ঘরে দাঁড়িয়েছে। আস্থা ও তারল্যসংকটে থাকা বাজারে এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়ন হলে দেশের প্রায় ১৭ লাখ বিও বিনিয়োগকারী, ব্রোকারেজ হাউস, মার্চেন্ট ব্যাংক এবং স্টক এক্সচেঞ্জসহ দেশের পুঁজিবাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। ব্রোকার হাউস এবং মার্চেন্টগুলোর আর্থিক সক্ষমতা বাড়বে। তারা নতুন করে লেনদেন করতে সক্ষম হবেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক মো. আল-আমিন কালবেলাকে বলেন, বাজেটের সময় আমরা দেখি প্রতিবারই অনেক প্রস্তাবনা রাখা হয়, কিন্তু তা বাস্তবায়িত হয় না। এবার আমরা দেখছি পুঁজিবাজারে অনেক ইতিবাচক সিদ্ধান্ত এসেছে। এবার মার্চেন্ট ব্যাংকের করহার কমেছে, ব্রোকার হাউসের উৎসে কর কমেছে। এ ছাড়া তালিকাভুক্ত ও অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহারও কমেছে। আগে সরকারের কাছে অংশীজনরা অনেক দাবি করে আসছিল, কিন্তু বাস্তবায়ন হয়নি। এবার বাস্তবায়ন হয়েছে। এর আগে পুঁজিবাজার নিয়ে কেউ এতটা সোচ্চার ছিলেন না। এবার আমরা দেখতে পাচ্ছি প্রধান উপদেষ্টা থেকে শুরু করে অর্থ উপদেষ্টা সবারই পুঁজিবাজারের প্রতি নজর রয়েছে। ফলে আশা করা যায় এবারের প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়ন হলে পুঁজিবাজারের জন্য ইতিবাচক হবে।
অর্থ উপদেষ্টা তার বাজেট বক্তব্যে বলেছেন, পুঁজিবাজারে সার্বিকভাবে সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং এই বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে সরকার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি দেশি-বিদেশি লাভজনক ও নামিদামি কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহিত করার উদ্দেশ্যে তালিকাভুক্ত এবং অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহারের ব্যবধান ৫ শতাংশ থেকে ২ দশমিক ৫ শতাংশ বাড়িয়ে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করেন।
বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) প্রেসিডেন্ট মাজেদা খাতুন বলেন, এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য যেসব প্রস্তাবনা এসেছে তাতে আমরা আশাবাদী। আমাদের প্রস্তাবের মধ্যেই ছিল এগুলো।
মন্তব্য করুন