আর কয়েক দিন পরই ঈদ। ঈদ আনন্দময় করতে কেনাকাটার দৌড়ে ক্লান্তিহীন ছুটছে নগরবাসী। নতুন পোশাক, জুতার পর এখন ভিড় গহনা ও প্রসাধনীর দোকানগুলোতে। কেউ নিজের জন্য, আবার কেউ প্রিয়জনের জন্য কিনছেন স্বর্ণ ও ইমিটেশনের গহনাসহ বাহারি সব প্রসাধনী। ঈদের দিন নতুন পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে গহনা পরতে পছন্দ করেন নারীরা।
হালকা ও ভারী দুই ধরনের গহনাই বিক্রি হচ্ছে। পোশাকের সঙ্গে মানানসই এসব গহনা নারীকে নান্দনিক করে তোলে। রাজধানীর প্রতিটি মার্কেটে স্বর্ণ, গোল্ড প্লেটেড ও ইমিটেশনের গহনার দোকানে কিশোরী, তরুণীসহ নানা বয়সী নারীরা ভিড় করছেন। আর ঈদ সামনে রেখে দোকানগুলোতে ঝলমল করছে নতুন নতুন ডিজাইনের গহনা। রাজধানীর তাঁতীবাজার, বায়তুল মোকাররম জুয়েলারি মার্কেট, নিউমার্কেট, চাঁদনী চক মার্কেট, নূর ম্যানশন ঘুরে দেখা যায় এমন চিত্র।
জুয়েলার্স সমিতির তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ১ লাখ ১৪ হাজার ৭৪ টাকা। প্রতি ভরি ২১ ক্যারেট স্বর্ণের দাম ১ লাখ ৮ হাজার ৮৮৩ টাকা। এ ছাড়া ১৮ ক্যারেট স্বর্ণের দাম হয়েছে ভরিপ্রতি ৯৩ হাজার ৩১২ টাকা। আর প্রতি ভরি সনাতন পদ্ধতির ৭৭ হাজার ৭৯৯ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর স্বর্ণের বাজারের জন্য পরিচিত তাঁতীবাজার ঘুরে ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতি বছর পবিত্র ঈদুল ফিতর কেন্দ্র করে যে বিক্রি হয়, তা এ বছর তুলনামূলক কম। তাঁতীবাজারের দুর্জয় জুয়েলার্সের পরিচালক শিমুল দেবনাথ বলেন, প্রতি বছর ঈদের আগে অনেক ক্রেতার চাপ থাকত। কিন্তু এবার সেটা নেই। ময়ূরী জুয়েলার্সের স্বত্বাধিকারী উত্তম বলেন, ঈদ এলে প্রতি বছর নতুন গহনা বিক্রি বেড়ে যায়। বড় বড় শপিংমলের গহনার দোকানে ভিড় বাড়লেও আমাদের এখানে এ বছর তেমন বিক্রি হচ্ছে না। তবে গত এক মাসে অনেকে পুরোনো স্বর্ণ বিক্রি করতে এসেছেন, যা অতীতের এই সময়কে হার মানিয়েছে।
বায়তুল মোকাররম মার্কেটের নিচতলায় আননি জুয়েলার্সে কানের দুল দেখছিলেন ক্রেতা মোহম্মদ মুরাদ ও তার স্ত্রী আয়েশা। দরদাম করে ৬০ হাজার টাকায় কিনলেন তিনি। বিক্রয়কর্মী সোহেল ফকির কালবেলাকে বলেন, বিক্রি মোটামুটি। তবে এবার ঈদ উপলক্ষে আশানুরূপ বিক্রি হচ্ছে না। বাজারে সব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে মার্চে স্বর্ণের দাম বৃদ্ধি এই দুটির প্রভাব পড়েছে এবার ঈদবাজারের স্বর্ণের গহনায়। বায়তুল মোকাররম মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় কল্পনা জুয়েলার্সের পরিচালক বশির আহমেদ বলেন, সোনার দাম বেড়ে যাওয়ায় ঈদের কেনাকাটায় জামা-কাপড়, ইমিটেশন, কসমেটিকস থাকলেও তালিকা থেকে বাদ পড়ছে স্বর্ণের গহনা।
এদিকে নিউমার্কেটের জুয়েলারি দোকানগুলোতেও ঘুরে দেখা যায়, এখানে তেমন ক্রেতার চাপ নেই। তবে টুকিটাকি করে বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। স্বর্ণের দাম বেড়ে যাওয়ার ফলে বিক্রি কমায় বিপাকে পড়েছেন স্বর্ণের দোকানি ও ক্রেতারা।
এদিকে রাজধানীর চাঁদনী চক, নিউমার্কেট, নূর ম্যাশনের কসমেটিকসের দোকানগুলোতে ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। ক্রেতা টানতে দোকানিরা বাহারি রঙের নানা ডিজাইনের কাঠের পুঁতি, কাচের পুঁতি, বিভিন্ন মেটাল ও বড় বড় রঙিন পাথরের তৈরি ইমিটেশনের গহনা, সিলভার ও গোল্ডেন অ্যান্টিক গহনার পসরা সাজিয়ে রেখেছেন। পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে ইমিটেশনের গহনা কিনতে এখনে ভিড় করছেন তরুণীরা।
নিউমার্কেটে ইমিটেশনের গহনা, সিলভার ও গোল্ডেন অ্যান্টিক গহনা বিক্রি করে ঝুমকা নামের একটি গহনার শোরুম। কালবেলার সঙ্গে কথা হয় শোরুমটির সেলসের দায়িত্বে থাকা মো. রাব্বির। তিনি বলেন, আমাদের বেচাকেনা শুরু হয় মূলত ঈদের সপ্তাহখানেক আগে। যখন জামা-কাপড় কেনা শেষ হয়ে যায় তখন মানুষ গহনার দোকানে আসে। এবার এখনো আশানুরূপ বিক্রি হয়নি। ঝুমকায় সিলভার, গোল্ডেন ও অ্যান্টিক গহনা কিনতে আসা কর্মজীবী নারী তাসনিম জানান, ঈদে নিজেকে একটু আলাদা করে সাজাতে চাই। তাই কিছু গহনা কিনতে এলাম। এ বছর সবকিছুর দাম অনেক বেশি। তার পরও সাধ্যের মধ্যে কিছু গহনা কিনব।