বৃদ্ধ নানার ওষুধ ভুল করে খেয়ে ফেলে ছোট এক শিশু। এরপর তাকে দ্রুত নেওয়া হয় যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ধৌত করা হয় ওই শিশুর পাকস্থলী। এরপর দেওয়া হয় বেডে। মধ্যরাতে অসুস্থ শিশুটির জননাঙ্গে ক্যাথেটার লাগিয়ে দেন হাসপাতালের আয়া ফারজানা খাতুন। কিন্তু তিনি সঠিকভাবে ক্যাথেটার না লাগিয়ে জোরে জোরে চাপ দিয়ে পাইপ ঢোকান ছোট্ট শিশুটির জননাঙ্গের ছিদ্রপথে। এতে ছিঁড়ে যায় তার জননাঙ্গের একাধিক রগ।
ভুল পদ্ধতিতে ক্যাথেটার লাগানোর ফলে রক্ত বের হতে শুরু করে ওই শিশুর জননাঙ্গ থেকে। এরপর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আশরাফ শিশুটিকে দেখে আবারও ক্যাথেটার লাগান। পরেরবার ক্যাথেটার লাগানোর ফলেও থামছিল না শিশুটির রক্তপাত। শিশুটির রক্তপাত যখন কোনোভাবেই থামছিল না, তখন ওই চিকিৎসক ক্যাথেটার খুলে ফেলেন। এতে রক্তপাত আরও বেড়ে যায়। অবস্থা বেগতিক দেখে ফের ক্যাথেটার পরিয়ে দিয়ে শিশুটিকে দ্রুত ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দেন ওই চিকিৎসক।
ঘটনাটি ঘটেছে গত মঙ্গলবার যশোর ২৫০ শয্যা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ঘটনার পর পরের দিন রক্তাক্ত ক্যাথেটার পরানো অবস্থাতেই ছোট্ট শিশুটিকে বাবা-মা নিয়ে আসেন ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে। তবে যা ক্ষতি হওয়ার তা হয়ে গেছে ততক্ষণে। ভুলভাবে ক্যাথেটার পরানোর কারণে চিরতরে পুরুষত্বহীন হওয়ার পথে শিশুটি। এমন কথাই জানিয়েছেন ঢাকার চিকিৎসক। পরিবারের অভিযোগ, বারবার নিষেধ করার পরও বড় সাইজের একটি ক্যাথেটার লাগিয়েছেনে ওই আয়া।
চিকিৎসকের বরাত দিয়ে পরিবারের সদস্যরা বলছেন, ৪২ দিন পরে আরও কিছু পরীক্ষা করা হবে শিশুর। এরপর জানা যাবে আসলে সে পুরুষত্ব ফিরে পাবে কি না। তবে চিকিৎসক বলছেন, পুরুষত্ব ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। ভুক্তভোগী শিশুর মা কালবেলাকে বলেন, ‘আমার ছোট শিশুর পুরো জীবন নষ্ট করে দিয়েছে ওই চিকিৎসক ও আয়া। একজন আয়া কীভাবে ক্যাথেটার লাগায়। তখন হাসপাতালে ইন্টার্ন ডাক্তারেরাও ছিলেন। কিন্তু কোনো ডাক্তারই এগিয়ে আসেনি আমার ছেলের কাছে। দুবার ক্যাথেটার লাগানোর পর রক্ত পড়া যখন বন্ধ হচ্ছিল না, তখন তারা তাড়াহুড়ো করে আমাদের হাসপাতাল থেকে ছুটি দিয়ে দেয়। বলে ঢাকায় নিয়ে আসতে। এখন ডাক্তার বলছে ছেলের পুরুষত্বহীনতা হয়ে যেতে পারে। আমি ওই ডাক্তার ও আয়ার বিচার চাই।’
ভুক্তভোগী শিশুর ভাই বলেন, ‘আমার ভাইয়ের এই ক্ষতির কারণ ওই ডাক্তার ও আয়া। আমরা যশোর কোতোয়ালি থানায় তাদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছি। আমরা আমার ভাইয়ের এই অবস্থার জন্য দায়ীদের বিচার চাই।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত আয়া ফারজানা খাতুন কালবেলাকে বলেন, ‘বড় স্যারের (ডা. আফছার আলী) কথামতো আমি ক্যাথেটার পরিয়েছি। রোগীর স্বজনরাই কিনে এনে দিয়েছে। ক্যাথেটার পরানোর আগে আমি ডাক্তারের সঙ্গে ফোনে কথাও বলেছি। ডাক্তার আমাকে লাগাতে বলেছিল, তাই আমি লাগাইছি। আমার দোষ কী এখানে।’
অভিযোগের বিষয়ে যশোর ২৫০ শয্যা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. আফছার আলী কালবেলাকে বলেন, ‘আমি তো বলি নাই আয়াকে ক্যাথেটার লাগাতে। আমার পেপারসেও সেটা লেখা নাই। এই আয়া হাসপাতালে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে বাইরে থেকে এসে কাজ করে। আমি বলি নাই তাকে ক্যাথেটার লাগাতে, সে কেন লাগিয়েছে সেটা তদন্ত করা হচ্ছে।’
ক্যাথেটার লাগানো ভুল ছিল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, কিছুটা ভুল হইছে। ক্যাথেটার লাগানোর সময় এমন অ্যাক্সিডেন্ট ঘটে। সে কারণে ওই আয়াকে বরখাস্ত করা হয়েছে।’
যিনি হাসপাতালে চাকরিই করেন না তাকে কীভাবে বরখাস্ত করলেন জানতে চাইলে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি ওই চিকিৎসক। তবে বিষয়টি নিয়ে হাসপাতালে তদন্ত চলমান রয়েছে বলে জানান তিনি।