শফিকুল ইসলাম
প্রকাশ : ০৫ আগস্ট ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ০৫ আগস্ট ২০২৫, ১২:৫২ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ

গ্রাফিতি হয়ে ওঠে প্রতিবাদ ও ঘৃণার ভাষা

গ্রাফিতি হয়ে ওঠে প্রতিবাদ ও ঘৃণার ভাষা

বাংলাদেশের ইতিহাসে ’২৪-এর জুলাই আন্দোলনের এক শক্তিশালী সচিত্র উপস্থাপনের নাম ‘গ্রাফিতি’ বা দেয়ালচিত্র। যার মাধ্যমে উপস্থাপিত হয়েছে ভয়ানক বাস্তবতা, জনগণের স্পষ্ট অবস্থান, আগামীর বাংলাদেশের স্বপ্ন। তৎকালীন আওয়ামী সরকারের অপরাজনীতি চর্চার প্রতিবাদ ও ঘৃণার ভাষা হিসেবে ব্যবহৃত শহরের দেয়ালে দেয়ালে ছেয়ে এসব গ্রাফিতি। বিশেষ করে দেশের খেটে খাওয়া অক্ষরজ্ঞানহীন মানুষের অংশগ্রহণ ও সংযুক্ত হওয়ার জন্য যা ছিল এক দৃশ্যমান অনুপ্রেরণা।

মূলত ৫ আগস্টের পর থেকে এসব সমন্বিতভাবে ঢাকাসহ সারা দেশেই গ্রাফিতি অঙ্কন শুরু হয়। কিন্তু এরও আগে আন্দোলন চলাকালীন শিক্ষার্থীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেয়াল লিখন ও গ্রাফিতি অঙ্কন শুরু করে। বিশেষ করে আন্দোলন চলাকালে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ ও রাজধানীতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ গুলিতে নিহত হওয়ার পর অন্যতম প্রতিবাদের ভাষা হয়ে ওঠে গ্রাফিতি। তাদের দুজনের অবয়বে আঁকা সবচেয়ে পরিচিত, জনসম্পৃক্ত দেয়াল লিখন ও গ্রাফিতি ছিল—‘বুকের ভেতর দারুণ ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর’।

এ সময় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পক্ষ থেকে গত বছর ২৯ জুলাই প্রথম সারা দেশে গ্রাফিতি অঙ্কন কর্মসূচি দেওয়া হয়। স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া ছেলেমেয়েরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেয়াল লিখন আর গ্রাফিতির কাজ শুরু করেন। বাংলা, ইংরেজি ও আরবি ক্যালিগ্রাফিতে করা এসব গ্রাফিতি সড়কে আসে নান্দনিকতা। আন্দোলন চলাকালীন সবচেয়ে জনসম্পৃক্ত কয়েকটি গ্রাফিতি ও দেয়াল লিখনের মধ্যে ছিল—‘পানি লাগবে, পানি’, ‘আমিই বাংলাদেশ’। দেয়ালে দেয়ালে উঠে আসে বহু কালজয়ী গান ও কবিতার পঙক্তি। আছে নবীনদের নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নের কথাও। যদিও বর্তমানে এসব গ্রাফিতির অনেক প্রায় মুছে গেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মাধ্যমে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর একটি জাতির সৃজনশীল বিস্ফোরণ হলো দেশজুড়ে গ্রাফিতি অঙ্কন। ২০২৪ সালের আগস্ট এবং সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশে তরুণ প্রজন্ম তথা ‘জেন-জি’ সারা দেশে অসংখ্য গ্রাফিতি এঁকে শিল্প এবং আত্মসংযমের শক্তি প্রদর্শন করে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাফিক ডিজাইন বিভাগের চেয়ারম্যান ইস্রাফিল প্রামাণিক রতন কালবেলাকে বলেন, বাংলাদেশে জুলাই বিপ্লবের আগে কিন্তু গ্রাফিতি সম্পর্কে কেউ জানত না। তবে বুয়েটের ছাত্র আবরার হত্যার পর বুয়েটের বিভিন্ন দেয়ালে আমরা সীমিত পরিসরে গ্রাফিতি দেখি। শেখ হাসিনার সরকার পতনের আন্দোলনেও সীমিতভাবে গ্রাফিতি অঙ্কন হচ্ছিল। তিনি আরও বলেন, সীমাহীন ক্ষোভ, রক্তাক্ত স্মৃতি, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের প্রত্যয় এবং নতুন সমাজ কাঠামোর আহ্বান—এসব প্রতিফলিত হয় দেওয়াল চিত্রে। আন্দোলনের মূল আদর্শ ও ভাবনা যেমন ‘স্বাধীনতা এনেছি, সংস্কার আনব’ ইত্যাদি স্লোগানে স্পষ্ট হয় যে, রাষ্ট্র কখনো কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়; বরং তা জনগণের অংশীদারত্ব, মুক্ত ভাবনা ও মানবাধিকারের শ্রদ্ধায় প্রতিষ্ঠিত হওয়া উচিত।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ইভ্যালির রাসেলের কারাদণ্ডসহ অর্থদণ্ড

সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানসহ আটক ৪

ঝুঁকি নিয়ে খেয়া পারাপার

আ.লীগ নেতার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পড়ে ছিল ৯ রাউন্ড গুলির খোসা

উত্তরায় যুব-স্বেচ্ছাসেবক ও ছাত্রদলের অবস্থান

জবি ছাত্রী হলে ছাত্রদলের উপহার সামগ্রী বিতরণ

চাঁদাবাজ-সন্ত্রাসমুক্ত সমাজ গড়ার অঙ্গীকার কফিল উদ্দিনের

বরগুনায় জুলাই স্মৃতিস্তম্ভে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ

কক্সবাজারে মার্কেটে আগুন

৮ দলের কর্মসূচি নিয়ে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর পোস্ট

১০

চট্টগ্রামে বিজিবি মোতায়েন, সর্বোচ্চ সতর্কতায় পুলিশ

১১

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে নদীগুলোর নাব্যতা পুনরুদ্ধারে উদ্যোগ নেবে : বাচ্চু

১২

নিক্সনের গানম্যানের নেতৃত্বে তৈরি হচ্ছিল পেট্রোল বোমা ও ককটেল : পুলিশ

১৩

দাঁড়িয়ে থাকা বাসে আগুন

১৪

অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীর পাশে ছাত্রদল নেতা দয়াল

১৫

একজন উপদেষ্টা ধানমন্ডিতে ভোটার হতে মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছেন : ব্যারিস্টার অসীম

১৬

‘গণভোটের চেয়ে আলুচাষিদের ন্যায্যমূল্য পাওয়া বেশি প্রয়োজন’

১৭

খতমে নবুওয়তের মহাসম্মেলন সফলে ঢাকায় গণমিছিল

১৮

চলন্ত পিকআপ থেকে ককটেল বিস্ফোরণ

১৯

ইস্তানবুল হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট লিমিটেড মিরপুর শাখার উদ্বোধন

২০
X