

‘বাজারে মুলা তোলার আগেই সব শেষ হইয়া গেল। জমিতে এখন শুধু পানি আর পানি’— জমির সামনে দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলছিলেন রাজশাহীর পবা উপজেলার শিয়ালবেড় গ্রামের কৃষক রাব্বানী মণ্ডল। রাব্বানীর চোখের কোণে পানি; পায়ের নিচেও হাঁটুসমান পানি। একসময় যে জমিতে ভরে উঠেছিল মুলা গাছ, সেই জমি এখন ডুবে আছে বৃষ্টির পানিতে।
নভেম্বরের শুরুতেই অপ্রত্যাশিত বৃষ্টিতে এখনো এমন দৃশ্য দেখা যাচ্ছে— রাজশাহীর পবা, মোহনপুর, বাগমারা, তানোর ও গোদাগাড়ী উপজেলার ফসলের মাঠজুড়ে। কৃষকরা বলছেন, ১৯৮৬ সালের পর এমন বৃষ্টি আর কখনো দেখেননি তারা।
টানা দুদিনের ওই বৃষ্টিতে জেলার হাজারো কৃষক এখন বড় ক্ষতির মুখে। শাকসবজি, ঢ্যাঁড়স, মুলা, পেঁয়াজ থেকে শুরু করে আমন ধানসহ সব ফসলই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
কৃষি বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১০ কোটি ২৭ লাখ টাকা। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ৪ হাজার ২০০ জন। দুদিনের বৃষ্টিতে জেলার ২ হাজার ১৫০ বিঘা ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে বাস্তবে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সরেজমিন পবা উপজেলার শিয়ালবেড় গ্রামে গিয়ে কথা হয় কৃষক রাব্বানী মণ্ডলের সঙ্গে। মুখে বিষণ্নতা নিয়ে তিনি বলেন, ‘আষাঢ় মাসেও এমন বৃষ্টি হয় না। এখনো পানি নামেনি। পাঁচ বিঘা জমি পানির নিচে। চারপাশে পুকুর, পানি নামারও পথ নাই।’
রাব্বানী আরও বলেন, ‘আমাদের মতো গরিব কৃষকের জন্য প্রণোদনাই এখন একমাত্র ভরসা। সরকার যদি পাশে থাকে, তাহলে আমরা আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারব। তা না হলে কঠিন হবে।’
পবা উপজেলার শিয়ালবেড়, পাইকপাড়া, দাদপুর ও মুরারীপুর গ্রামের মাঠজুড়ে একই চিত্র। যেদিকে চোখ যায়—শুধু পানি আর পানি। কোথাও ধান হেলে পড়েছে, কোথাও শাকসবজি ডুবে আছে পানির নিচে।
পাইকপাড়া গ্রামের কৃষক শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘১২ কাঠা জমিতে শাকসবজি করেছিলাম, বৃষ্টিতে সব শেষ হয়ে গেছে। এমন সময় তো বৃষ্টি হয় না।’
একই এলাকার কৃষক আব্দুর রাজ্জাক এক বিঘা জমিতে বি-৮৭ জাতের ধান চাষ করেছিলেন। ধান কাটার আগেই নভেম্বরে অসময়ের বৃষ্টিতে জমিতে পানি উঠেছে, বাতাসে ধানের গাছ হেলে পড়েছে। মাঠে দেখা গেল, কৃষকরা কাদামাটি মাড়িয়ে হেলে পড়া ধান কেটে নিচ্ছেন।
সেখানে তার ছেলে সোহানুর রহমান বলেন, ‘এই বৃষ্টিতে অর্ধেক ধান নষ্ট হয়ে যাবে। শ্রমিক খরচও বেশি হবে। মনে হচ্ছে খরচের টাকাও উঠবে না। তিন দিন পরে বৃষ্টি হলে এ সর্বনাশ হতো না।’
পবা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এম এ মান্নান কালবেলাকে বলেন, ‘নভেম্বরের শুরুতেই যে বৃষ্টি হয়েছে, সেটি মূলত নিম্নচাপজনিত। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় বিনামূল্যে সার ও বীজ বিতরণ করা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি, যেন জমি শুকিয়ে দ্রুত নতুন ফসল লাগাতে পারেন। এরই মধ্যে সরিষা, গম, পেঁয়াজসহ বিভিন্ন ফসলের বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন কালবেলাকে জানান, বৃষ্টিতে জেলার ২ হাজার ১৫০ বিঘা জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১০ কোটি ২৭ লাখ টাকা। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তথ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রণোদনা এলে তা বিতরণ করা হবে।
মন্তব্য করুন