

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির উদ্যোগে বর্ণাঢ্য বিজয় র্যালি ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় পুরাতন রেলস্টেশন চত্বর থেকে র্যালি শুরু হয়। র্যালিটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে লালদীঘির পাড়ে গিয়ে শেষ হয়।
র্যালি পূর্বক সমাবেশে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব নাজিমুর রহমানের সভাপতিত্বে এবং যুগ্ম আহ্বায়ক মঞ্জুরুল আলম মঞ্জু’র সঞ্চালনায় আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।
তিনি বলেন, মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে দেশবাসী ও প্রবাসী বাংলাদেশিসহ সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই। আজকের এই দিনে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি স্বাধীনতার ঘোষক, মুক্তিযুদ্ধে জেড ফোর্সের অধিনায়ক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীর উত্তমকে— যার আহ্বানে ১৯৭১ সালে গোটা জাতি মরণপণ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। একই সঙ্গে শ্রদ্ধা জানাই সকল জাতীয় নেতৃবৃন্দ ও বীর শহীদদের, যাদের ত্যাগ ও আত্মদানের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ।
ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ১৯৭১ সালে যে আশা ও আকাঙ্ক্ষা নিয়ে জনগণ স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নিয়েছিল, বিজয়ের দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও তা আজও পূরণ হয়নি। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে বিপন্ন করতে দেশি-বিদেশি চক্রান্তকারীরা এখনও সক্রিয়। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হাত ধরে যে বহুদলীয় গণতন্ত্রের যাত্রা শুরু হয়েছিল, তা বারবার ধ্বংসের ষড়যন্ত্র হয়েছে। গুম, হত্যা, নির্যাতন ও মিথ্যা মামলায় লাখো মানুষকে হয়রানি করে রাষ্ট্রকে কার্যত দমনপীড়নের যন্ত্রে পরিণত করা হয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, আজও বাংলাদেশকে তাবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করার গভীর চক্রান্ত অব্যাহত রয়েছে। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র রক্ষায় এখনই ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সময়। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে তিনি দেশপ্রেমিক সকল মানুষকে দলমত নির্বিশেষে ইস্পাতদৃঢ় জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলে গণতন্ত্রবিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান এবং সাম্য, মানবিক মূল্যবোধ ও সামাজিক ন্যায়বিচারভিত্তিক একটি কল্যাণমূলক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণের প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার প্রকৃত সুফল জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে হলে গণতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে। ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে পরমতসহিষ্ণুতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ এবং ঐক্যের সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে।
মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেন, স্বাধীনতা আমাদের শ্রেষ্ঠ অর্জন। দীর্ঘ শোষণ, বঞ্চনা ও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের এই দিনে আমরা স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অর্জন করি। বিজয়ের এই দিনে আমরা গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি বীর শহীদ, যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা, সম্ভ্রমহারা মা-বোন, শহীদ পরিবারের সদস্য এবং স্বাধীনতা আন্দোলনে আত্মনিয়োগকারী সকল সংগ্রামী মানুষকে।
জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ঐতিহাসিক ভূমিকার কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যার পর ২৭ মার্চ কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ ও মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার সাহস জুগিয়েছিল।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, বিজয়ের ৫৪ বছর পেরিয়ে গেলেও দেশে প্রকৃত গণতন্ত্র এখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি। জনগণের ভোটাধিকার ও গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে আনতে হলে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের বিকল্প নেই। আগামী নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে জনগণের হারানো গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে।
বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন সাবেক চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম-৯ আসনের ধানের শীষের প্রার্থী আবু সুফিয়ান, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আব্দুস সাত্তার, কাজী বেলাল উদ্দিন, নিয়াজ মোহাম্মদ খান, হারুন জামান, শাহ আলম, আর ইউ চৌধুরী শাহীন, শওকত আজম খাজা, ইয়াসিন চৌধুরী লিটন, আহম্মেদুল আলম চৌধুরী (রাসেল), শিহাব উদ্দিন মোবিনসহ মহানগর বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন নেতাকর্মীরা।
মন্তব্য করুন