২১ বছর পর বন্ধ থাকা ঠাকুরগাঁও রেশম কারখানা চালু হলেও আবারও বন্ধ হয়ে গেছে কারখানাটি। দীর্ঘদিন পর কারখানাটি চালু হওয়ায় শ্রমিক-কর্মচারীরা যে স্বপ্ন বুনেছিল, সেই স্বপ্ন বিষাদে পরিণত হলো। গত বছর ৩ আগস্ট বেসরকারি উদ্যোগে ঠাকুরগাঁও রেশম কারখানা চালু করা হয়। তবে কয়েক মাসের মাথায় এ বছর ফেব্রুয়ারিতে বন্ধ হয় কারখানাটি।
ঠাকুরগাঁও জোনাল রেশম সম্প্রসারণ কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত সহকারী পরিচালক মো. মাহবুব-উল-হক বলেন, সুপ্রিয় গ্রুপের মালিক শর্ত ভঙ্গ করে কারখানার উৎপাদন হঠাৎ করে বন্ধ করে দেয়। এ বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে।
রেশম বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আরডিআরএস ১৯৭৫-৭৬ সালে ঠাকুরগাঁওয়ের গোবিন্দনগর বিসিক এলাকায় ৩ দশমিক ৩৪ একর জমির ওপর এই রেশম কারখানাটি স্থাপন করে। লাভজনক প্রতিষ্ঠান হওয়ায় ১৯৮১ সালের ৩০ জুন কারখানাটি রেশম বোর্ডের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ১৯৯৭ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ১ কোটি ৬৩ লাখ টাকার নতুন যন্ত্রপাতি কিনে কারখানাটির আধুনিকায়ন করে। লোকসান থাকলেও কোম্পানিটি তখন ভালোই চলছিল। কিন্তু মূলধন না থাকার কথা বলে ২০০২ সালের ৩০ নভেম্বর কারখানাটি বন্ধ করে দেয় বিএনপি-জামায়াত চারদলীয় জোট সরকার।
ঠাকুরগাঁও রেশম কারখানায় বর্তমানে ২০টি রুলিং মেশিন, ১৬টি হ্যান্ডলুম, ২০টি পাওয়ার লুমসহ প্রায় সব যন্ত্রাংশ সচল রয়েছে। ঠাকুরগাঁও রেশম কারখানায় বর্তমানে ২০টি রুলিং মেশিন, ১৬টি হ্যান্ডলুম, ২০টি পাওয়ার লুমসহ প্রায় সব যন্ত্রাংশ সচল রয়েছে।
ওই সময় কারখানায় কর্মরত ১৩৪ স্থায়ী শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েন। পাশাপাশি বিপাকে পড়েন আরও প্রায় পাঁচ হাজার পলু পোকা চাষি (সুত উৎপাদনের জন্য তুঁতগাছ চাষ করেন যারা)। সে সময় আন্দোলন করেও কারখানাটি চালু করতে পারেনি ঠাকুরগাঁওবাসী। বাজার না পেয়ে এ অঞ্চলের পলু চাষিদের অনেকেই চাষ কমিয়ে দিতে বাধ্য হন। এরপর বিভিন্নভাবে উদ্যোগ নেওয়া হলেও কারখানাটি আর চালু হয়নি।
২০১৭ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো. আবদুল আওয়াল কারখানাটি চালুর যৌক্তিকতা দেখিয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেন। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের ১১ সদস্যের একটি দল ২০১৭ সালের ৩ এপ্রিল কারখানাটি পরিদর্শন করেন। তারা কারখানার যন্ত্রপাতি পরিদর্শন করে কারখানা চালুর উপযোগী কি না, তা ঘুরে দেখেন। পরবর্তী জেলা প্রশাসক কে এম কামরুজ্জামান সেলিমও মন্ত্রণালয়ে কারখানা চালুর যৌক্তিকতা তুলে ধরে চিঠি দেন।
২০১৯ সালের জেলা প্রশাসক সম্মেলনে তিনি বিষয়টি উপস্থাপনও করেন। পাশাপাশি সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করে কারখানাটি চালু করার ব্যাপারে পদক্ষেপ নেন। রেশম কারখানাটি চালু করার বিষয়ে ২০২১ সালের ২২ মার্চ জেলা প্রশাসকের সভা কক্ষে এক মতবিনিময় সভা হয়। সেখানে রেশম বোর্ডের তৎকালীন মহাপরিচালক মু. আবদুল হাকিম বলেন, বোর্ডের জনবল সংকট রয়েছে। যত দিন জনবল নিয়োগ না হবে, তত দিন কারখানাটি চালাতে পারবেন না। এ জন্য তারা মাসিক বা বার্ষিক ফি নিয়ে ব্যক্তি খাতে দিতে চান। এই আলোচনার পর স্থানীয়ভাবে কয়েকজন কারখানাটি পরিচালনার আগ্রহ দেখান। কিন্তু পরে সেই উদ্যোগ থেমে যায়। অবশেষে কারখানাটি বেসরকারি পর্যায়ে বরাদ্দের জন্য দরপত্র আহ্বান করে রেশম বোর্ড। অবকাঠামো ও যন্ত্রপাতি ব্যবহারের জন্য ৫ বছর মেয়াদে ৮ লাখ ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে কারখানা পরিচালনার সুযোগ পায় ঠাকুরগাঁওয়ের সুপ্রিয় গ্রুপ।
কারখানা বন্ধ প্রসঙ্গে সুপ্রিয় গ্রুপের ডিজিএম মেহেদী হাসান বলেন, উৎপাদিত কাপড় বিক্রি হলে আবার চালু করা হবে।
মন্তব্য করুন