সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে দেশের ২৪তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে সরকার।
মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: গোলাম সারওয়ার স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, শপথ গ্রহণের দিন থেকে তার নিয়োগ কার্যকর হবে। বর্তমানে তিনি প্রধান বিচারপতির কার্যভার পালন করছেন।
সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসন জানায়, বর্তমান প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী প্রধান বিচারপতি হিসেবে আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন। বয়স ৬৭ বছর পূর্ণ হওয়ায় তিনি অবসরে যাচ্ছেন। তার অবসরগ্রহণ উপলক্ষে শেষ কর্মদিবস হিসেবে গত ৩১ আগস্ট বিদায় সংবর্ধনা জানানো হয়। বর্তমানে সুপ্রিমকোর্টে শরৎকালীন অবকাশ চলছে। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ছুটিতে রয়েছেন। তিনি ছুটিতে থাকায় ১১ সেপ্টেম্বর থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রধান বিচারপতি দায়িত্বভার দেওয়া হয়েছে বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে।
এরই মধ্যে মঙ্গলবার ওবায়দুল হাসানকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি করে আইন মন্ত্রণালয়। প্রধান বিচারপতির নিয়োগসংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৫(১) অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে মহামান্য রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান-কে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করিয়াছেন। এই নিয়োগ শপথ গ্রহণের তারিখ হইতে কার্যকর হইবে।’
আপিল বিভাগে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন ছাড়াই দেশের ২৪তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পাওয়া বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসএস, এমএসএস ও এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর ১৯৮৬ সালে আইনজীবী হিসেবে জেলা আইনজীবী সমিতির সনদ প্রাপ্ত হন। তিনি ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের এবং ২০০৫ সালে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন।
বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এবং ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে ২০০৯ সালের ৩০ জুন যোগদান করেন। ২০১১ সালের ৬ জুন একই বিভাগে স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান।
মুক্তিযুদ্ধের সময় সংগঠিত মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িতদের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর একজন সদস্য হিসেবে ২০১২ সালের ২৫ মার্চ যোগদান করেন। একই বছরের ১৩ ডিসেম্বর তিনি যুদ্ধাপরাধ বিচার ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত হয়ে ২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ কর্মরত থাকাকালীন ১১টি মামলার রায় প্রদান করেন। তিনি ২০২০ সালের ৩ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন।
বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ১৯৯১ সালে হংকং এ অনুষ্ঠিত একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে সিঙ্গাপুরে একটি আইন সম্মেলনে যোগদান করেন এবং বুয়েন্স আয়ার্স, আর্জেন্টিনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ বিষয়ক একটি কনফারেন্সে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন।
এছাড়াও ২০১৫ সালের আগস্ট মাসের শেষ দিকে নেদারল্যান্ডস এর হেগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, তৎকালীন যুগোস্লোভিয়ার বিচারকদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় যোগদান করেন। ‘অবর্ণনীয় নির্মমতার চিত্র: একাত্তরের বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড ও অন্যান্য’ এবং ‘বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ: একজন যুদ্ধশিশুর গল্প ও অন্যান্য’ নামক দু’টি গ্রন্থ রচনা করেছেন তিনি।
এর আগে সকালে এক প্রজ্ঞাপনে ওবায়দুল হাসানকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
মন্তব্য করুন