দুর্নীতি দমন কমিশনের কাছে স্থায়ী প্রসিকিউশন ইউনিট গঠনে অনুরোধ জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি মো. ওবায়দুল হাসান। শনিবার (৯ ডিসেম্বর) জাতীয় শিল্পকলা একাডেমির নাট্যশালা অডিটরিয়ামে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবসের আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় তিনি এই অনুরোধ জানান।
অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে দুদকের চেয়ারম্যান মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহসহ প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা বক্তব্য রাখেন।
প্রধান বিচারপতি তার বক্তৃতায় বলেন, এটা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক যে, দুদক কর্তৃক মামলা দায়ের যেমন পূর্বের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে, তেমনি মামলায় সাজার হারও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ২০২২ সালে বিশেষ জজ আদালতে নিষ্পত্তিকৃত ৩৪৬টি মামলার মধ্যে ২১১টি মামলাতেই সাজা প্রদান করা হয়েছে। দেশের সার্বিক ফৌজদারি মামলার সাজার হার বিবেচনায় নিলে এটি প্রশংসার দাবিদার।
প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, ‘এ প্রসঙ্গে একটি বিশেষ বিষয়ে আমি দুর্নীতি দমন কমিশন-এর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। বিদ্যমান আইনে স্থায়ী প্রসিকিউশন (দুদকের পক্ষের আইনজীবী) ইউনিটের মাধ্যমে আদালতে মামলা পরিচালনার বিধান রয়েছে। তাই দুর্নীতি দমন কমিশনের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে আপনারা যত দ্রুত সম্ভব নিজস্ব স্থায়ী প্রসিকিউশন ইউনিট গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করুন। তাহলে দেশের আদালতসমূহে চলমান দুর্নীতির মামলাসমূহ আরও দ্রুত নিষ্পত্তি সম্ভব হবে।’
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রদত্ত বঙ্গবন্ধুর ভাষণ উদ্ধৃত করে প্রধান বিচারপতি বলেন, দুর্নীতি কেবল সেবার বিনিময়ে ঘুষ নেওয়া নয়, অর্থ আত্মসাৎ নয়। রাষ্ট্রের একজন কর্মচারী হিসেবে হোক, কিংবা দেশের একজন নাগরিক হিসেবে হোক- নিজেদের ওপর দায়িত্ব আমরা যদি যথাযথরূপে পালন না করি- সেটাও এক প্রকারের দুর্নীতি।
অনেক ক্ষেত্রেই দুর্নীতি ও দুর্নীতিলব্ধ অর্থ দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশ পাচার হয় উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘এর ফলে জন্ম নেয় আন্তঃরাষ্ট্রীয় অপরাধ। এ ধরনের অপরাধ মোকাবিলায় বাংলাদেশ ইতোমধ্যে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গৃহীত ইউনাইটেড ন্যাশনস কনভেনশন অ্যাগেইনস্ট করাপশন (আনকাক)-এ স্বাক্ষরকারী দেশ হয়েছে।
এ ছাড়া, বিদেশি রাষ্ট্র থেকে সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহ ও দুর্নীতিলব্ধ অর্থ পুনরুদ্ধার এবং এতদ্বিষয়ে আন্তঃরাষ্ট্রীয় সহযোগিতা গ্রহণ ও প্রদানের জন্য ইতোমধ্যে ‘অপরাধ সম্পর্কিত বিষয়ে পারস্পরিক সহায়তা আইন-২০১২’ প্রণয়ন করা হয়েছে। দুর্নীতির মামলাসমূহ দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য দেশের সব জেলায় বিশেষ জজ আদালত প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এ ছাড়া, বর্তমানে হাইকোর্ট বিভাগের একাধিক বেঞ্চ দুর্নীতি দমন আইন ও মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন এর মামলাসমূহ শুনানি করছেন। তাই বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি হিসেবে আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে পারি যে, দেশের অধঃস্তন আদালত ও উচ্চ আদালতে দুর্নীতির মামলাসমূহ যত দ্রুত সম্ভব নিষ্পত্তির জন্য বিচার বিভাগ সচেষ্ট রয়েছে।’
দুদকের একার পক্ষে দুর্নীতি দমন সম্ভব নয় উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, দুর্নীতি যেমন বৈষম্য, সামাজিক অনৈক্য এবং অস্থিতিশীলতার সৃষ্টি করে, তেমনি তা অর্থনৈতিক উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে। দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণের গুরুদায়িত্ব দুর্নীতি দমন কমিশনের হলেও এককভাবে কমিশনের পক্ষে দুর্নীতি নির্মূল করা সম্ভব নয়। বিচার বিভাগ, নির্বাহী বিভাগ এবং আইন বিভাগের সম্মিলিত প্রচেষ্টা এবং জনগণের সক্রিয় উদ্যোগই পারে সমাজ থেকে দুর্নীতি নামক বিষবৃক্ষকে নির্মূল করতে।’ ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার স্বার্থে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি ধারণ করে আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ করে দুর্নীতিবাজদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করারও আহ্বান জানান তিনি।
মন্তব্য করুন