কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৮ জুলাই ২০২৪, ০১:১৯ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির যৌথসভা 

কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির যৌথ সভা। ছবি : সংগৃহীত
কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির যৌথ সভা। ছবি : সংগৃহীত

কোটা আন্দোলনকে সংঘাতে ঠেলে দিয়ে গৃহযুদ্ধ সৃষ্টির ষড়যন্ত্র চলছে বলে মন্তব্য করেছেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় নেতারা।

বুধবার (১৭ জুলাই) বিকাল সাড়ে ৩টায় একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

এতে কোটা আন্দোলনে জামায়াত-বিএনপি চক্রের অনুপ্রবেশ, রাজাকারদের পক্ষে স্লোগান এবং উদ্ভূত সংঘাতময় পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের সঙ্গে রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রপ্রতিনিধিদের এক জরুরি মতবিনিময় সভায় বক্তারা এ কথা বলেন।

‘নির্মূল কমিটি’র সভাপতি শিক্ষাবিদ শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টামণ্ডলীর সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক শহীদসন্তান আসিফ মুনীর।

সভায় কোটা সংস্কারের ন্যায্যতা, সংক্ষুব্ধ ছাত্রছাত্রীদের আবেগ ও অনুভূতিকে পুঁজি করে তাদের আন্দোলনে স্বাধীনতারিবোধী মৌলবাদী-সাম্প্রদায়িক অশুভ শক্তির অনুপ্রবেশ, মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে কটুক্তি করে ৭১-এ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সহযোগী গণহত্যাকারী, নারীধর্ষণকারী রাজাকারদের মহিমান্বিত করে স্লোগান দেয়া, ১৬ জুলাই ছাত্র-পুলিশ সংঘর্ষে ৬ জনের মৃত্যু এবং শত শত আহতের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে গৃহীত প্রস্তাবে বলা হয় ‘সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা সংস্কারের জন্য ছাত্রছাত্রীদের চলমান আন্দোলন শান্তিপূর্ণভাবে আরম্ভ হলেও সুযোগ বুঝে বিএনপি-জামায়াত চক্র বাইরে থেকে সমর্থনের কথা বলে তরুণদের একটি ন্যায়সঙ্গত ইস্যুভিত্তিক আন্দোলনকে সরকারবিরোধী আন্দোলনে পরিণতি করার জন্য পরিকল্পিতভাবে এতে অনুপ্রবেশ করে। জামায়াত-বিএনপির ছাত্রকর্মীরা দলনিরপেক্ষ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সুযোগে বিভিন্ন সময়ে সড়ক অবরোধ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বিরোধ ও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।

গত ১৫ জুলাই গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে আলোচনাকালে প্রধানমন্ত্রী রাজাকার ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে রাজাকারদের বিরুদ্ধে মন্তব্য করায় জামায়াত-বিএনপির ছাত্রকর্মীরা মধ্যরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ের বিভিন্ন ছাত্রাবাস থেকে বেরিয়ে এসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাদীপ্ত একটি ঐতিহাসিক স্লোগানকে বিকৃত করে ‘তুমি কে আমি কে রাজাকার রাজাকার’ স্লোগান দিয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে দেয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক বিভিন্ন সংগঠনের শিক্ষার্থী ও মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানরা শাহবাগ চত্বরে সমবেত হয়ে মিছিল করেছে।

১৬ জুলাই রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছাত্রলীগ ও পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ হয় এবং উভয়পক্ষের হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। এ দুর্ভাগ্যজনক ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রয়োজন। আমরা এধরনের সংঘাতে অত্যন্ত উদ্বেগ প্রকাশ করছি। আমরা কখনো ছাত্রদের হাতে অস্ত্র দেখতে চাই না। গত এক যুগেরও অধিক সময় আমরা লক্ষ্য করছি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় যেতে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি-জামায়াত চক্র সংঘাত ও সন্ত্রাসের মাধ্যমে গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি করে বিদেশি প্রভুদের সহযোগিতায় ক্ষমতায় যাওয়ার ষড়যন্ত্র করছে। বিভিন্ন সময়ে ছাত্র ও জনতার বিভিন্ন ন্যয়সঙ্গত ইস্যুভিত্তিক আন্দোলনে তারা অনুপ্রবেশ করে সেগুলোকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করে ’৭১-এ পরাজয়ের প্রতিশোধ গ্রহণের পাশাপাশি বাংলাদেশকে পাকিস্তানের মতো ব্যর্থ সন্ত্রাসী রাষ্ট্র বানাতে চাইছে।

‘কোটা সংস্কারের দাবিতে ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলনের নেতাদের প্রতি আমরা আহ্বান জানাচ্ছি' মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিনাশী অপশক্তি তাদের ন্যায়সঙ্গত ইস্যুভিত্তিক আন্দোলনকে যাতে কোনোভাবে দেশের অর্থনীতি ও জনজীবন বিপর্যস্ত করে সরকার পতনের উদ্দেশ্যে যেন ব্যবহার করতে না পারে সে বিষয়ে নেতৃবৃন্দকে অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে। ’৭১-এ মুক্তিযোদ্ধারা নিজেদের জীবন, পারিবারের নিরাপত্তা সব কিছু বাজি রেখে মরণপণ যুদ্ধ করে পাকিস্তানিদের ২৪ বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছেন বলেই এদেশ আজ আর্থসামাজিক উন্নয়নের সকল ক্ষেত্রে পাকিস্তানকে অনেক পেছনে ফেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দীপ্ত পদক্ষেপে এগিয়ে চলেছে। একজন দেশপ্রেমিক নাগরিক কোনও অবস্থায় যাদের কারণে বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে সেই মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান করতে পারেন না। সর্বস্তরের নাগরিকদের সমান সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে সমতাভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য কোটার প্রয়োজন হয়। দেশ যত উন্নত হবে কোটার প্রয়োজন তত কমতে থাকবে। বর্তমান সংকট সমাধানের লক্ষ্যে কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের জন্য আমরা মনে করি সুপ্রিম কোর্টের একজন বিচারকের নেতৃত্বে একটি বিশেষজ্ঞ কমিশন গঠন করে তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রেখে বৈষম্যমুক্ত সমতাভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নাগরিক সমাজ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দাবি নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করবে এটা স্বাভাবিক। সেই আন্দোলন যাতে জনজীবন বিপর্যস্ত করে দেশকে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে পরিচালিত না হয় সে বিষয়ে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।

‘প্রধানমন্ত্রীকে আমরা বলতে চাই' কোটা সংস্কার আন্দোলনে বিএনপি-জামায়াতের অনুপ্রবেশ ঘটলেও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের অংশগ্রহণ রয়েছে, যারা আপনার সন্তান, আমাদের সন্তান। আপনি অতীতে বহুবার নির্দলীয় নাগরিক আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। এবারও অনুরোধ করব আপনি তাদের ডাকুন, কথা শুনুন, আমাদের সন্তানদের কোনোভাবে স্বাধীনতাবিরোধীদের দ্বারা ব্যবহৃত হতে দেবেন না।’

সভায় কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, সমাজকর্মী কাজী মুকুল, শহীদসন্তান তানভীর হায়দার চৌধুরী শোভন, অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া, অধ্যাপক রতন সিদ্দিকী, ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল, লেখক ব্লগার মারুফ রসূল, চারুশিল্পী ফুলেশ্বরী প্রিয়নন্দিনী, চলচ্চিত্রনির্মাতা ইসমাত জাহান, সংস্কৃতিকর্মী শাহীন উদ্দিন আহমেদ, সমাজকর্মী কেশব রঞ্জন সরকার, সমাজকর্মী এ.বি.এম মাকসুদুল আনাম, সমাজকর্মী কামরুজ্জামান অপু, ছাত্রনেতা হারুণ অর রশিদ, চলচ্চিত্রনির্মাতা লুবনা শারমিন, চারুশিল্পী শেখ শাহনেওয়াজ আলী পরাগ, চলচ্চিত্রনির্মাতা সাইফ উদ্দিন রুবেল, ড. তপন পালিত, সমাজকর্মী হাসান আব্দুল্লাহ বিপ্লব, এডভোকেট রত্নদীপ দাস রাজু, সাংবাদিক সাইফ রায়হান, আবৃত্তিশিল্পী মো. শওকত আলী, এডভোকেট আসাদুজ্জামান বাবু, সমাজকর্মী পূর্ণিমা রানী শীল, ড. তানজীর মান্নান রূপন, অনলাইন এক্টিভিস্ট এ.এস.এম শরিফুল হাসান, চারুশিল্পী ইফতেখার খান বনি, সমাজকর্মী আলমগীর কবির, সমাজকর্মী মো. হেলালউদ্দিন, সংস্কৃতিকর্মী শামস রশীদ জয়, আবৃত্তিশিল্পী আরেফিন অমল, মানবাধিকারকর্মী ফয়সাল হাসান তানভীর, সমাজকর্মী প্রাণতোষ তালুকদার, সমাজকর্মী আবদুল হালিম বিপ্লব, সমাজকর্মী কাজী রেহান সোবহান ও সমাজকর্মী মো. আবদুল্লাহ।

এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন খোরশেদ আলম, এস এম লুৎফর রহমান, সান্দ্রা নন্দিনী, রাসেল খান নিলয়, নির্মূল কমিটি ঢাকা মহানগরের সদস্য মো. আলমগীর হোসেন ও দারুস সালাম থানার ভারপ্রপ্ত সাধারণ সম্পাদক আবু সালেহ সায়মন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

ঘটনাপ্রবাহ: কোটা সংস্কার আন্দোলন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

রাত ৮টার মধ্যে যেসব জেলায় হতে পারে ঝড়

সাবেক এমপি ফারুক চৌধুরীর ‘বডিগার্ড’ গ্রেপ্তার

পাকিস্তানকে পানি ও ভাতে মারবে ভারত

কুয়াকাটায় জমি নিয়ে দুপক্ষের সংঘর্ষ, আহত ১০

দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চলবে : হাসনাত আব্দুল্লাহ

ভারত-পাকিস্তান সংঘাত, ফেনী সীমান্তে বিজিবির টহল জোরদার

জুলাইয়ের নতুন সংগঠন ‘আপ বাংলাদেশ’-এর আত্মপ্রকাশ

রাজধানীর ৫ হাজার শিক্ষার্থীকে পুরস্কার দিল বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র

আ.লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে শাহবাগ অবরোধ

আ.লীগ নিষিদ্ধে কী আইন আছে, জানালেন আসিফ নজরুল

১০

মেগা প্রকল্পের নামে লুটপাট হয়েছে : উপদেষ্টা ফাওজুল কবির

১১

সরকারি আদেশে ভারতে বন্ধ ‘দ্য ওয়ার’ নিউজ সাইট

১২

রাতে ৬০ কিমি বেগে বজ্রবৃষ্টির পূর্বাভাস

১৩

চুয়াডাঙ্গায় মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা, গরমে হাঁসফাঁস

১৪

পাকিস্তানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ভিডিও প্রকাশ

১৫

আ.লীগ নিষিদ্ধের সমাবেশে স্প্রে ক্যানন দিয়ে ছিটানো হচ্ছে পানি

১৬

কলা বাগান থেকে ২২ ককটেল উদ্ধার

১৭

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নতুন দাবি

১৮

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ভর্তি পরীক্ষার তারিখ পরিবর্তন

১৯

মানবতার শত্রু আ.লীগকে দ্রুত নিষিদ্ধ ও বিচার করতে হবে : হেফাজতে ইসলাম

২০
X